ছায়া হয়ে থাকবো পাশে,Part_04
Ariyana Nur
আকাশ আজ মেঘে ঢাকা।মেঘদের লুকোচুরির কারনে চাদটাও আজ ঢাকা পরে আছে।নুহা কিছুক্ষন বেলকানিতে দাড়িয়ে থেকে রুমে এসে দেখে আশু বিছানায় শুয়ে শুয়ে একা একাই হাসছে।নুহা বিছানায় বসে বলল….
—পাগলের মত হাসছিস কেনো???
—এমনি…..
—আজ আবার আমাকে মানুষের সামনে হাসির পাএ বানিয়ে এসেছিস তাই নারে???
নুহার কথা শুনে আশু চট জলদি শোয়া থেকে বসে অবাক হয়ে বলল…
—মানে???
নুহা আশুর কান ধরে বলল…
—তোর মানে মানে আমি বের করছি।কি বলছিলি গেডের সামনে দাড়িয়ে ঐ লোকদের???
(তখন আশু রুমে এসেই মন খারাপ করে বেলকানিতে চলে যায়।নিচের দিকে তাকাতেই দেখে আশু হাত নাড়িয়ে লোকদের সাথে কথা বলছে।আশু যে তাদের কে উল্টাপাল্টা কথা বলছে তা আর বুঝতে বাকি রইল না নুহার)
—আহহ…
লাগছে আমার।ছাড়ো আপি….
—লাগার জন্যই তো দিয়েছি।তারাতারি বল কি বলেছিস??
—বলছি বলছি আগে কান ছাড়ো।
নুহা আশুর কান ছেড়ে দিলে আশু কান ধরে বলল….
—আজ আমার কান শেষ।
নুহা মুখ ভার করে বলল….
—কেনো এমন করিস তুই???
—তাহলে কি করবো।মার ঐ সব পছন্দের ছেলেদের সাথে তোমার বিয়ে হতে দেখব।
নুহা কিছু না বলে মন খারাপ করে শুয়ে রইল।আশু বুঝতে পেরে নুহাকে জরিয়ে ধরে বলল….
—আমার ঐ ছেলেগুলোকে পছন্দ হয় না আপি। তাই তো আমি এমন করি।আমি চাই আমার আপির জন্য শিক্ষিত, সুন্দর,হ্যান্ডসাম ছেলে।যার সাথে আমার আপি দাড়ালে সবাই বলবে, মাশাল্লাহ্ ওদের দুজনকে মানিয়েছে খুব।মা কেন এমন করে তোমার সাথে??
নুহা কিছু না বলে চোখ বন্ধ করে চুপচাপ শুয়ে রইল।একটু পর সে ঘুমের দেশে চলে গেলো।আর এদিকে আশুও বকবক করতে করতে ঘুমের দেশে পাড়ি দিল।
___________________________
রাত ১২টাঃ
নীলাভ আজ দেরি করে বাড়িতে ফিরলো।তখন মায়ের সাথে রাগ করে বের হবার পর মুড ঠিক করার জন্য লং ড্রাইভে চলে গেছিলো।নীলাভ এর মন খারাপ থাকলে বেশির ভাগ সময় সে এই কাজটা করে থাকে।
নীলাভ দরজার সামনে এসে কলিং বেল চাপ দিতে নিয়েও হাত নামিয়ে ফেলল।কেননা এতো রাতে সবার ঘুমের তেরোটা বাজিয়ে সবাইকে ডিস্টাব করা ঠিক হবে না।তাই সে নিজের কাছে যে এক্সটা চাবি ছিল তা দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করল।নিজের রুমে ঢুকে লাইট অন করে সামনে তাকাতেই তার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।কেননা তার বিছায় বসে বসে মিসেস চৌধুরী কান্না করছে।নীলাভ তার সামনে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে উওেজিত বলল….
—কি হয়েছে তোমার???কান্না করছো কেনো???
তিনি তার এক হাত দিয়ে কান ধরে বলল….
—সরি বেটা আমার ভুল হয়ে গেছে আর কখনো ও কথা বলবো না।প্লিজ আর রাগ করে থাকিস না।আমার কষ্ট হয় তুই আমার সাথে রাগ করে থাকলে।
নীলাভ ছলছল চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে তার হাত কান থেকে ছাড়িয়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে কাপা কাপা গলায় বলল….
—সরি মা….
মিসেস চৌধুরী নীলাভের মাথায় হাত রাখতেই নীলাভ ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করতে লাগলো।মিসেস চৌধুরী তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল…..
—দেখো বোকা ছেলের কান্ড। মা বলেছি তো আর ঐ কথা বলবো না।তাহলে কেনো আবার কান্না করছিস???
নীলাভ কোন কথা না বলে আপন মনে কান্না করে যাচ্ছে।
—বাপরে আর বাচ্চাদের মত কান্না করিস না।এবার কান্না থামিয়ে খেতে আয়।ক্ষুধায় আমার জান যায় যায় অবস্থা।
রুমে প্রবেশ করে মিঃ চৌধুরী কথাটা বলল।
মিঃ চৌধুরীর গলার আওয়াজ পেয়ে নীলাভ কোল থেকে মাথা উঠিয়ে চোখের পানি মুছে বলল….
—বড় পাপা তুমি এখানে???ঘুমোও নি???
—না পাপা ঘুমিয়ে পরেছে।পাপার ভুত এখানে এসে কথা বলছে।
সাইফ এর কথা শুনে নীলাভ সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে সাইফ বেলকানির দরজার সামনে হেলান দিয়ে হিরো স্টাইলে দাড়িয়ে আছে।
নীলাভ অবাক হয়ে বলল….
—তুমিও আমার রুমে।
সাইফ সামনে এসে রাগি গলায় বলল….
—এতোক্ষন কোথায় ছিলি???ফোন বন্ধ কেন তোর???কোন ভদ্র ঘরের ছেলেকি এতো রাতে বাড়িতে ফিরে???
সাইফ মিসেস চৌধুরীর দিকে কাদো কাদো ফেস করে বলল…
—মা দেখছো ভাইয়া আমাকে বকছে???
মিসেস চৌধুরীঃআহ থামতো তুই।আসতে না আসতেই শুরু করে দিয়েছে।
সাইফঃতোমাদের আসকারা পেয়েই তো ও দিন দিন বাদর হচ্ছে।
নীলাভঃদেখলে মা ভাইয়া আমাকে বাদর বলল?
মিসেস চৌধুরীঃযাহ বাবা।এখন সব দোষ আমাদের।একটু আগে আমার উপর গলা ফাটিয়ে কে চিল্লিয়ে ছিলো শুনি।কে বলেছিলো,ও যা শুনতে পারে না কেনো তাহলে তোমরা ওকে সেটা বল ইত্যাদি ইত্যাদি।
(সাইফ যখন জানতে পারে মিসেস চৌধুরীর সাথে রাগ করে নীলাভ বাসা থেকে বের হয়ে গেছে তখন সাইফ তার সাথে রাগারাগি করে ঐ কথাগুলো বলেছিল।)
সাইফ কোন কথা না বলে চুপ করে গম্ভীর হয়ে দাড়িয়ে আছে।নীলাভ আস্তে করে সাইফ এর সামনে গিয়ে ফিসফিস করে কিছু একটা বলতেই সাইফ নীলাভের কান ধরে বলল….
—বেশি কথা বলতে তোকে নিষেধ করেছি না।
নীলাভঃভাই লাগছে আমার….
মিঃ চৌধুরীঃবাপরে তোরা এবার থাম।দিন দিন বুড়ো হচ্ছে আর এদের ছেলেমানুষী বাড়ছে।তোদের জন্য তোদের মা আমাকে এতোক্ষন ধরে না খাইয়ে রেখেছে।
মিঃচৌধুরীর কথায় সাইফ নীলাভের কান ছেড়ে দিল।মিসেস চৌধুরী কড়া গলায় বলল….
—এই তুমি আমার ছেলেদের বুড়ো বলছো কেন???বুড়ো তো তুমি হচ্ছ দিন দিন।
মিঃ চৌধুরীঃপ্লিজ এখন তুমি আবার শুরু করো না।এবার খেতে চল।কাল আমার কাজ আছে।
মিঃ চৌধুরী চোখ রাঙ্গিয়ে বলল…
—তোমাকে পরে দেখে নিব।চল….
মিঃ চৌধুরীঃঠিক আছে।এবার চল।
_____________________________
চারোদিক থেকে আযানের সুমধুর শুর কানে যেতেই নুহার ঘুম ভেঙ্গে গেলো।নুহা অলসতা না করে ওজু করে নামাজ পরে আশুকে ডেকে তুলল।অনেকক্ষন ডাকা ডাকির পর আশু উঠে নামাজ পরে আবার শুয়ে পরল।আর নুহা চলে গেলো বাগানে।এই সময়টায় তার বাগানে হাটাহাটি করতে ভীষন ভালো লাগে।
নুহা বাগানে কিছুক্ষন হাটাহাটি করে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো।কেননা তাকে সব কাজ শেষ করে তারপর কলেজে যেতে হবে।
নুহা কলেজের মাঠে বন্ধুদের সাথে বসে গল্প করছে।এমন সময় নুহার একটা কল আসতেই নুহা ফোন রেখে বন্ধুদের কে আসছি বলে তড়িঘড়ি চলে গেলো।
_______________________________
আফিসে নিজের রুমে একজন লোকের সাথে কথা বলছে মিঃ খান।এমন সময় একজন ঝড়ের গতিতে তার রুমে ঢুকে পরলো।মিঃ খান সামনের মানুষটাকে দেখে অবাক হয়ে বলল….
—মা তুই এখানে???
নুহা রাগি গলায় বলল….
—তুমি এখানে কেন???
—আরে আমার অফিসে আমি থাকব না তো কে থাকবে।তুই রাগ কেনো করছিস সেটাই তো বুঝতে পারছিনা।
—তুমি না অসুস্থ তাহলে অফিসে আসছো কেন???আর বড় কথা আমাকে জানাও নি কেনো???
—আরে কে বলেছে তোকে আমি অসুস্থ???
(তখন মিঃ খান এর বাড়ির কাজের লোক নুহাকে ফোন করে বলেছে যে তিনি অসুস্হ।আর তা নিয়েই অফিসে চলে গেছে।নুহা এটা শুনে তাড়াতাড়ি করে মিঃ খান এর অফিসে চলে আসে।)
—আবার….(চোখ বড় বড় করে)
—আসলে কাল একটু বিপি হাই হয়ে গিয়েছিল।আর কিছু না।
—তুমি এখন এই মুহূর্তে বাড়িতে যাবে।
–আরে বললেই হল।দেখ আমার ক্লাইন্ট বসে রয়েছে।তাদের সাথে কথা বলেই তারপর না হয় চলে যাব।
—তুমি…
নুহার কথা শেষ হবার আগেই একজন দরজা নক করে ভিতরে ঢুকলো।
নুহার কথার মধ্যে বা হাত ঢুকানোর জন্য নুহা বিরক্ত হয়ে লোকটাকে দু’চার কথা শুনানোর জন্য ঘুরে দাড়াতেই সামনের মানুষটাকে দেখে তার চেহারার রং পাল্টে গেলো।
চলবে
(ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ব্যস্ততার মধ্যে লিখেছি।রি-চেইক করি নি।ধন্যবাদ)