ছায়া হয়ে থাকবো পাশে,Part_06

0
1738

ছায়া হয়ে থাকবো পাশে,Part_06
Ariyana Nur

মানুষের জীবন বড় অদ্ভুত।জীবন কেন এই দুনিয়ার মানুষই বড় অদ্ভুত।কেউ পরের সন্তানকে আগলে বুকে জরিয়ে নিচ্ছে।আবার কেউ নিজের সন্তানকেই দুরে ঠেলে দিচ্ছে।কেউ পরের সন্তানকে এমন ভাবে লালন-পালন করছে বাইরের কেউ দেখলে বুঝবেই না এটা তার নিজের সন্তান না।আবার কেউ নিজের সন্তানকেই কুকুরের মত দূর দূর করে তাড়িয়ে দিচ্ছে।তাদের সাথে এমন ব‍্যবহার করছে যা মানুষের ধারনার বাইরে।

নুহা মিঃ খান এর অফিস থেকে বাসায় ফেরার পর আসফিয়া বেগম ওকে ইচ্ছে মত কথা শুনিয়েছে।সে কিভাবে যেনো জানতে পেরেছে নুহা মিঃখান এর অফিসে গিয়েছিলো।ব‍্যাস তাতেই সে রেগে মেগে আগুন হয়ে নুহাকে ইচ্ছে মত বকা-ঝকা করে।নুহা আর কি করবে চুপচাপ দাড়িয়ে তার কথা হজম করে রুমে এসে তারাতাড়ি করে ওয়াসরুমে গিয়ে শাওয়ারের নিচে বসে চিৎকার করে কান্না করতে থাকে।নুহার কান্নাগুলো চারদেয়ালে বাড়ি খেয়ে আবার তার কাছেই ফিরে আসছে।তার কান্না দেখা বা শুনার কোন লোক নেই।

একটা মেয়ের কাছে তার মা তার বেষ্ট ফ্রেন্ড,মা,বড় বোন সবকিছু।বাবার কাছে যে আবদারগুলো করতে জরতা কাজ করে সেই আবদারগুলো মা এর কাছে খুব সহজে করা যায়।কেউ বকা দিলে বা খারাপ ব‍্যবহার করলে অথবা মন খারাপ থাকলে মা এর কোলে মাথা রাখলে মা তার মমতার হাত মাথায় রাখতেই সব কষ্ট দূর হয়ে যায়।আর সেই মায়ের কাছ থেকে যদি কেউ প্রতিনিয়ত অপমানিত হয়,অবহেলা পায় তাহলে তার কেমন লাগবে???

?????

বাড়িতে ঢুকেই সাইফ গটগট করে হেটে নিজের রুমে চলে গেলো।রুমে গিয়ে গলার থেকে টাইটা টেনে খুলে বিছানায় ফেলে দিল।দু’হাত দিয়ে নিজের চুল টানতে টানতে বিছানায় বসে পড়ল।চোখ বন্ধ করে কয়েকটা বড় করে নিশ্বাস নিল।কিন্তু তাতে কোন লাভ হল না।বার বার চোখের সামনে নুহার মুখটা ভেসে উঠছে।সাইফ নুহার উপর রাগ করতে চেয়েও কেন যেন পারছেনা।এতেই তার সব থেকে রাগ বেশি রাগ হচ্ছে।একটা মেয়ে ওকে এতোগুলো কথা শুনানোর পর তো তার তুরকালাম বাধিয়ে দেওয়ার কথা।তাহলে কেন সে সেটা পারছে না।কেন রাগ করতে গিয়ে নুহার চেহারাটা সামনে ভেসে উঠে ঠোটের কোনে হাসি চলে আসে???

(আরে…বেচারাকে কেউ বলে দেও সে নুহাকে…..
থাক আর বললাম না?)

?????

বিকেল বেলা আশু স্কুল থেকে এসে দেখে নুহা কপালে হাত দিয়ে শুয়ে রয়েছে।আশু তাড়াতাড়ি স্কুল ব‍্যাগটা কাধ থেকে রেখে নুহার মাথার সামনে বসে ওর মাথায় হাত দিয়ে বলল….

—কি হয়েছে আপি???এভাবে শুয়ে রয়েছো কেন???

নুহা আশুর গলার অওয়াজ পেয়ে কপাল থেকে হাত সরিয়ে তাকাতে আশুর চেহারার রং পাল্টে যায়।কেননা নুহার দু’চোখ পুরো লাল হয়ে রয়েছে।চেহারাও কেমন ফুলে গেছে দেখেই মনে হচ্ছে কান্না করেছে।আশু কাপা কাপা গলায় বলল….

—কি… হয়েছে তোমার???

নুহা মুখে হাসির রেখা টেনে বলল…
—কিছু হয়নি???তুই যা ফ্রেস হয়ে আয়।

—মা তোমাকে আজকেও বকেছে???

আশুর প্রশ্নে নুহা মুচকি হেসে বলল….
—আরে না….মা বকবে কেন???

—তাহলে কান্না করেছো কেন???

—আশ্চর্য তো কান্না করবো কেন???

—তাহলে তোমার চেহারা এমন কেন???চোখ- মুখ ফুলে রয়েছে কেন???

নুহা উঠে বসে অন‍্য দিকে তাকিয়ে বলল….
—আরে কান্না করিনি।অনেকক্ষন শাওয়ার নিয়েছিতো তাই।

—কেন মিথ‍্যা বলতে যাও যদি নাই পারো???

—তুই ফ্রেস হয়ে আয়। আমি খাবার রেডি করছি???
কথাটা বলেই নুহা উঠে চলে যেতে নিলে আশু পিছন থেকে হাত ধরে কাপা কাপা গলায় বলল….

—কেন মা তোমার সাথে এমন করে আপি???কেন মা আমাকে আদর করে তোমাকে করে না???বাবা থেকেও কেন আমাদের সাথে থাকে না???বাবা এখানে এই বাড়িতে আসে না???এতোদিন এই প্রশ্ন গুলো করলে আমাকে বলতে আগে বড় হ।তারপরে জানতে পারবি।এখন তো আমি বড় হয়েছি। এখন কেন আমাকে বল না???আমরা কেনো অন‍্য সবার মত বাবা মার সাথে থাকি না???অন‍্যদের মত সব সময় বাবার আদর পাই না???আমাদের দোষটা কোথায়???কেনো তোমরা আমাকে কিছু বল না।কি এমন হয়েছে যে আমাদের জীবন এমন এলোমেলো হয়ে রয়েছে।

কথাগুলো বলতে বলতে আশুর চোখ দিয়ে অস্রু ঝড়তে লাগল।

আশুকে কান্না করতে দেখে নুহার কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে।যার জন‍্য এতো কিছু করছে সেই যদি কষ্ট পায় তাহলে নিজেকে সামলাবে কি করে ও।নুহা নিজেকে আর ধরে রাখতে না পেরে ওকে জরিয়ে ধরে কাপা কাপা গলায় বলল….

—একদম কান্না করবি না।তুই জানিস না তোর কান্না আমি সহ‍্য করতে পারি না।তাহলে কেন কান্না করিস।নিজের কষ্ট সহ‍‍্য হয় আমার কিন্তু তোর কষ্ট যে আমি সহ‍্য করতে পারি না।কেন বুঝিসনা তুই তোর চোখে পানি দেখলে আমার কতোটা কষ্ট হয়।(কান্না করতে করতে)

আশু নুহাকে জরিয়ে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করতে করতে বলল….

—আমারো তো তোমার কষ্ট সহ‍্য হয় না।কেন তোমরা আমাকে কিছু বলো না।

—বলবো সব বলবো।সময় হোক তার পরে সব জানতে পারবি।

আশু কোন কথা না বলে নুহাকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে লাগল।আর অপেক্ষা করতে লাগলো শুভ সময়ের।

নুহা আশুকে জরিয়ে ধরে কান্না করছে আর মনে মনে বলছে….

—আমি যদি তোকে সত‍্যিটা বলি তাহলে তুই সহ‍্য করতে পারবি না বোন।আর না বলাতে যে তুই কষ্ট পাচ্ছিস সেই কষ্ট ও তো আমার সহ‍্য হচ্ছে না।আল্লাহ আমাকে শক্তি দাও ধর্য‍্য ধরার।আর আমদের সকল সমস‍্যা তুমি শেষ করে দাও।আমাদের পরিবারটাকে তুমি আগের মত বানিয়ে দাও।

?????

মিঃ চৌধুরীর বাড়িতে এসেই মিসেস চৌধুরিকে ডাকতে লাগল।মিসেস চৌধুরী কিচেন থেকে শাড়ির আচল ঠিক করতে করতে সামনে এসে বলল….

—কি হয়েছে অফিস থেকে ফিরে এভাবে ডাকছো কেন???

মিঃ চৌধুরী হাতের ব‍্যাগটা সোফায় রেখে মিসেস চৌধুরীকে নিয়ে ঘুরতে লাগল।তাতে মিসেস চৌধুরী চেচিয়ে বলল….

—আরে আরে কি করছ তুমি???পরে যাব তো।বুড়ো বয়সে কি তোমার ভিমরতীতে ধরেছে???ছাড়ো আমাকে।

মিঃচৌধুরী মিসেস চৌধুরীকে নিয়ে সোফায় বসে হাফাতে হাফাতে বলল….

—পেয়ে গেছি….পেয়ে গেছি।

মিসেস চৌধুরী দ্রুত পানির গ্লাস এনে সামনে ধরতেই মিঃ চৌধুরী ঢকঢক করে সব পানি খেয়ে ফেলল।তার পর আবার বলল….

—পেয়ে গেছি…. পেয়ে গেছি।

—কি হয়েছে তোমার???এমন করছো কেন???আর কি পেয়ে গেছো বলবে তো???

—চৌধুরী বাড়ির বড় বউ পেয়ে গেছি???

মিসেস চৌধুরী অবাক হয়ে বলল….
—মানে??

মিঃ চৌধুরী অফিসেরসব ঘটনা সব বলতেই তিনি খুশি হয়ে বললেন….

—মেয়েটা দেখতে কেমন???আমার না মেয়েটাকে অনেক দেখতে ইচ্ছে করছে।এমনি তো একটা মেয়ে খুজছিলাম আমার ঐ বাদর ছেলের জন‍্য যাতে বাদরটাকে একটু টাইট দিয়ে মানুষ করতে পারে।

—সবর কর।সব হবে।কিন্তু…

মিসেস চৌধুরী কপালে ভাজ ফেলে বলল….
—কিন্তু কি???

—তোমার ছেলেকে কে রাজি করাবে???ওকে রাজি না করিয়ে তো আমি মিঃখান এর সাথে কোন কথা বলতে পারছিনা।পরে যদি ও না করে দেয়।

—ঠিক কথা বলেছো তো।এখন কি হবে সাইফকে বলবে কে???আমি কিন্তু পারবো না বাবা।তোমার ছেলের যে রাগ।তার পর তার রাগ ভাঙ্গাতেই আমার খবর হয়ে যাবে।

—কি নিয়ে এতো কথা হচ্ছে???

কথাটা পিছন থেকে একজন বলে সামনে আসলো।তিনি এসেই মিঃচৌধুরী আর মিসেস চৌধুরীর…….

চলবে

(ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।কেমন হয়েছে জানাতে ভুলবেন না।ধন‍্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here