ছায়া হয়ে থাকবো পাশে,Part_14

0
1505

ছায়া হয়ে থাকবো পাশে,Part_14
Ariyana Nur

সাইফ আর নীলাভ দুজন দুজনের নতুই বউকে কোলে নিয়ে চৌধুরী বাড়ির দরজায় দাড়িয়ে আছে।একে অপরের মুখের দিকে চেয়ে আছে।কিন্তু কেউ কলিং বেল বাজানোর সাহস পাচ্ছে না।সাইফ নীলাভের দিকে রাগি চোখে তাকাতেই নীলাভ কাপা কাপা হাতে কলিং বেল চাপ দিল।

কলিং বেলের শব্দে রুনা গিয়ে দরজা খুলে দিল।দরজা খুলতেই সাইফ আর নীলাভকে এভাবে দেখে গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিয়ে বলল…..

—খালাম্মা গো…..
দেইখা যান।বড় দাদা আর ছোড দাদারে…..

রুনার এমন ব‍্যবহারে নীলাভ বিরক্ত হয়ে বলল….

—সামনে থেকে সব।ভিতরে যেতে দে।এই ময়দার বস্তাকে কোলে নিয়ে আমি চেগভেগা হয়ে গেলাম।

সাইফ নীলাভ এর দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে ভিতরে ঢুকে বলল….

—রুনা ডাঃ কে ফোন করে তাড়াতাড়ি আসতে বল।

রুনার এমন চিৎকার শুনে মিসেস চৌধুরী তাড়াতাড়ি করে এসে বলল….

—ঐ এভাবে চিৎকার করছিস কেন???বাড়িতে কি ডাকাত পরে….

কথাটা শেষ করার আগেই সাইফ আর নীলাভ কে এমন অবস্থায় দেখে সে স্টেচু হয়ে দাড়িয়ে রইল।

সাইফ মিসেস চৌধুরীকে দেখে বলল….

—মা…ডাঃ কে ফোন করে ইমিডিয়েটলি আসতে বল। তোমাকে একটু পর আমি সব বলছি।কথাটা বলে আর এক মুহূর্ত দেড়ি না করে উপরে যাবার জন‍্য পা বাড়ালো।

নীলাভ চেচিয়ে বলল….

—ভাই আমি তোমার মত হিরো না।আমি এই ময়দার বস্তাকে কোলে নিয়ে উপরে যেতে পারবো না।

সাইফ পিছন দিকে না তাকিয়েই বলল….

—নীল বেশি কথা না বলে তাড়াতাড়ি আয়।আমার যেন ২য় বার আর বলতে না হয়।

নীল হতাস হয়ে নিশ্বাস ছেড়ে সামনের দিকে পা বাড়িয়ে বিরবির করে বলল….

—নিচে কি রুমের অভার পরেছে যে,শাহরুখ খানের মত এদের কোলে করে সিড়ি বেড়ে উপরে নিতে হবে।

সাইফ আর নীলাভ উপরে চলে যেতেই মিসেস চৌধুরী বলল….

—রুনা আমি যা দেখছি তা কি সত‍্যি!!আমার ছেলেরা বউমা নিয়ে এসেছে???

—খালাম্মা আপনে যা দেখতাছেন তা সত‍্যি ঠিক।কিন্তু বউ মা কিনা কইতে পারলাম না।

মিসেস চৌধুরী রাগি গলায় বলল….

—তোর কিছু কওন লাগবে না। বেশি কথা না বলে ডাঃ কে খবর দে।

সাইফকে নুহা কে নিয়ে নিজের রুমে ঢুকতে দেখে পিছন থেকে নীলাভ বলল….

—ভাইয়া তোমার বউকে তো তোমার রুমে নিয়ে যাচ্ছ।আমারটাকে কি আমার রুমে নিয়ে যাব???

—তোকে না বেশি কথা বলতে না করেছি।চুপচাপ আমার সাথে ভিতরে আয়।

নীলাভ বেচারা আর কোন কথা না বলে চুপচাপ রুমে চলে গেল।

?????

রুমের মধ‍্যে থমথমে পরিবেশে বিরাজ করছে।কারো মুখেই কোন কথা নেই।একটু আগে ডাঃ এসে নুহা আর আশুকে চেকআপ করে নুহাকে ঘুমের ইনজেকশনের দিয়ে গেছে।ডাঃ কিছু ঔষধ লিখে দিয়ে বলেছে স্টেস আর শরীর দূর্বলের জন‍্য নুহার এই অবস্থা হয়েছে।ডাঃ চলে যেতেই সাইফ একে একে মিঃ আর মিসেস চৌধুরীকে সব বলে।সব সুনে তারা বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছে।

নিরবতা ভেঙে মিসেস চৌধুরী বলল…..

—আমার ভাবতেই অবাক লাগছে কোন মা এমন করতে পারে।এরা তো মা নামের কলংক।একজন মা কি করে নিজের সন্তানের সাথে এমন করতে পারে।এদের মত মা দের জন‍্য মা জাতীর বদনাম হয়।এদের কে মা না বলে ডাইনী বলা উচিত।আমার সামনে যদি কোন দিন ঐ মহিলা পরে দেখিস সেদিন তোদের শাশুড়ি মাকে আমি ডিটারজেন ছাড়াই ওয়াস করে দিব।ডাইনী মহিলা।আমার তো এখনি তার চুল ছিড়তে মন চাচ্ছে।

রুনাঃখালাম্মা আপনের খালি চুল ছিড়তে মন চাইতাছে??আমার তো মন চাইতাছে তারে পচা পানিতে চুবাইতে, ছিটকির ডাইল দিয়া বাইরাইয়া মাথার থিকা ভূত নামাইতে।হেরে তো ডাইনী কইলেও ডাইনীতে কইবো আমারে গালি দিতাছে।হেরে তো পাইলে আমি……

মিঃচৌধুরীঃ মারে তোর কিছু করতে হবে না।এবার এখান থেকে যা।আর আমার জন‍্য কড়া করে চা বানিয়ে নিয়ে আয়।তোদের কথা শুনে আমার মাথা ধরে গেছে।

মিসেস চৌধুরী রাগি গলায় বলল…..
—কি বললে তুমি????

—যা বলেছি বেস বলেছি।এমন একটা সিরিয়াস ব‍্যপারে কথা হচ্ছে তার মধ‍্যেও তোমার ছেলেমানুষী কথা।আমি মাঝে মাঝে ভুলেই যাই তোমার দুটো বিয়ের বয়সের ছেলে আছে।

—ভুল বললে আমার ছেলেরা বিয়ে করে ফেলেছে।আ….

সাইফঃ মা,পাপার সাথে ঝগড়া পড়ে কর।আগে আমার কথা শোন।আশু অনেক ছোট।এদিকে নীল এর ও কেরিয়ার পরে আছে।আমি চাচ্ছি ওদেরকে কয়েকটা বছর সময় দিতে।এবার তোমরা বল তোমরা কি করবে।

মিঃচৌধুরীঃআল্লাহ যা করে ভালোর জন‍্যই করে। আমাদের ভাগ‍্যে যা লেখা আছে তা তো কেউ মুছতে পারবে না।আমাদেরকে সেই বাস্তবতা মেনেই চলতে হবে।আল্লাহ আশু আর নীল এর বিয়েটা এভাবে লিখেছিলেন তাই এটা হয়েছে।তুমি ভাল একটা কথা বলেছ।এবার সিধান্ত নীল নেক।ও কি করবে।

নীলঃআমি ভাইয়ার কথায় রাজি আছি।আমার কোন প্রবলেম নাই।

মিসেস চৌধুরীঃতাহলে আশু মা কোথায় থাকবে???

সাইফঃ আমারর পাশের রুমটা রুনাকে গুছিয়ে দিতে বল।আজ থেকে আশু ঐ রুমেই থাকবে।আর হ‍্যা সবাই ওদের সাথে নরমাল ব‍্যবহার করবে।ঐ বাড়ির কোন কথা যেন ওদের সামনে না তোলা হয়।

?????

আশুর জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করল।মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে।কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে থেকে কিছু মনে হতেই ফট করে চোখ খুলে ফেলল।রুমের হাকলা আলোতে নিজের উপস্থিতি বুঝার চেষ্টা করল। পাশে তাকাতেই দেখল ও নুহার পাশে শুয়ে আছে।হালকা আলোতে নুহাকে চিন্তে তার সমস‍্যা হল না।আশু বড় করে একটা নিশ্বাস ফেলে নুহাকে জরিয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে বলল…..

—tnx god আমি স্বপ্ন দেখছিলাম।জানো আপি আজ একটা মারাত্মক ভয়ংকর স্বপ্ন দেখেছি।আমি কি দেখেছি জানো,দেখেছি তোমার আর আমার বিয়ে হয়ে গেছে।তোমার বিয়ে অবস‍্য রাজপুএের সাথেই হয়েছে।কিন্তু আমার বিয়ে হয়েছে একটা ড্রাকুলার সাথে।আমি ড্রাকুলার চেহারাটা দেখি নি।কিন্তু চোখ দুটো যা ছিল।ওহ্… আমি তো ঐ চোখ দেখেই ক্রাশ খেয়েছি।মানুষের চোখ যে এতো সুন্দর হয় আমার জানা ছিলো না।ধুর আমিও যে কি বলছি ওটা তো ড্রাকুলা ছিল।তাই মনে হয় চোখ দুটো অতো মায়াবী আর সুন্দর ছিল। জানো আপি,তারা না আমাদের পঙ্খিরাজ ঘোড়ায় না নিয়ে গাড়িতে তুলে নিয়েছিল।তারপর…..

আর কিছু বলার আগেই একটা শব্দ কানে আসতেই ও চোখ খুলে তাকায়।আর তাকাতেই রুমের ভিতরে একটা ছায়া দেখতে পেল।আশু মনে মনে বলল…..

—এতো রাতে কে এল!নিশ্চই চোর বাবাজি এসেছে।একে আজ চুরি করার মজা আমি হাড়ে হাড়ে টের পাইয়ে দিব।
(চোর মনে করে আশু কার তেরোটা বাজাবে?)

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here