ছায়া হয়ে থাকবো পাশে,Part_18শেষ

0
3412

ছায়া হয়ে থাকবো পাশে,Part_18 শেষ
Ariyana Nur

রাতের আকাশে মেঘরা লুকোচরি করছে।মেঘদের লুকোচুরির জন‍্য চাদটাও আজ ঢাকা পরে আছে।
অন্ধকার বেলকানিতে দাড়িয়ে নুহা আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলছে ।তার মনেও আজ মেঘ জমেছে।হয়তো দূরের ঐ আকাশের থেকে বেশি অথবা কম।

নুহা আকাশের দিকে তাকিয়ে উদাস মনেই ভাবতে লাগলো, মা তো সব সময়ই আমাকে এমন বকা ঝকা করে এসেছে।কখনো এর থেকেও বেশি করেছে।তখন তো আমি তার উপর দিয়ে কথা বলি নি।তাহলে আজ কেন তাকে এতোগুলো কথা শুনিয়ে আসলাম।কেন আজ এতোটা রেগে গেলাম??উনাকে নিয়ে বাজে কথা বলেছে দেখেই কি আমি এমন রিয়েক্ট করলাম?ছোট থেকে শুনে এসেছি স্ত্রী সামনে স্বামীকে কেউ কিছু বললে সে বিড়াল থেকে বাঘীনী হয়ে যায়।তাহলে এটাই কি প্রবিএ বন্ধনের আবদ্ধ হওয়ার জোর???

ফ্লাসব‍্যাকঃ

নুহা ক্লাস শেষ করে বের হতেই দেখে সামনে আসফিয়া দাড়িয়ে আছে।নুহা কথা না বলে পাস কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই আসফিয়া ওকে বাধা দিল। নুহাকে তার দিকে ফিরিয়ে কোন কথা না বলেই ঠাস করে গালে চড় বসিয়ে দিল।তার এমন কাজে আশেপাশের সবাই তাদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।

আর নুহা কোন কথা না বলে ছলছল চোখে নিচের দিকে তাকিয়ে রইল।

আসফিয়াঃঅপায়া,অলক্ষি,কালনাগীনি আমার এক ভাইকে খেয়ে তোর শান্তি হয়নি??এখন আবার আসলাম এর পিছনে পরেছিস??আসলামকে কেন তোর ঐ গুন্ডা,মদমাস জামাই জেলে পাঠিয়েছে??কি করেছে আমার ভাই যে তোর ঐ লম্পট জামাই আমার ভাইকে জেলে পাঠিয়েছে।কিছুদিন আগে তোর ঐ লম্পট জামাই এর লোকেরা ইচ্ছে মত মেরেছে ওকে এখন আবার মিথ‍্যে কেসে ফাসিয়ে জেলে পাঠিয়েছে।তোর জামাইকে বলিস কেস উঠিয়ে নিতে তা না হলে তার খবর আছে।

(নুহার বিয়ের দিন রাতেই সাইফ লোক দিয়ে আসলামকে ইচ্ছে মত কেলিয়েছে।তারপর কিছুদিন হাসপাতালের হাওয়া খেয়ে সুস্থ হয়ে বাসায় যাবার পর নারি পাচারের কেসে ফাসিয়ে জেলে পাঠায়।আসফিয়া আসলাম এর সাথে দেখা করতে গেলে আসলাম তাকে জানায় এই সব নাকি নুহার বর ইচ্ছে করে করেছে।তার লোকেরা নাকি আসলামকে বলেছে। আসলাম আরো কতক্ষন আসফিয়া কান ভরে মাগুর মাছের কান্না করে।তাতেই আসফিয়া রেগে ফায়ার হয়ে যায়।আসফিয়া দুদিন ধরে কলেজে খোজ নিচ্ছে নুহা কলেজে আসে কিনা।আজ যখন জানতে পারলো নুহা কলেজে এসেছে তখন দেরি না করে কলেজে চলে আসলো।)

নুহা মাথা উচু করে নিজেকে সামলিয়ে বলল…..

—ভদ্র ভাবে কথা বলুন।কারো সম্পর্কে কিছু না যেনে বাজে মন্তব‍্য না করাই ভাল।আর আপনার ভাই যদি সাধু হত তাহলে আইনের লোকেরা তাকে এমনি এমনি জামাই আদর করতে নিয়ে যেত না।

নুহার কথা শুনে আসফিয়া তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলল….

—কি!! তুই আমাকে কথা শুনাচ্ছিস??দুদিনেই অনেক কথা ফুটেছে মুখে না।তোর কথা বলা আমি বের করছি।তোকে আমি…..

কথাটা শেষ করেই ২য় বার থাপ্পড় দেবার জন‍্য হাত উঠালো।কিন্তু তার আগেই নুহা তার হাত ধরে ফেলল।নুহা তার হাত ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে বলল…..

—এক ভুল বার বার করার চেষ্টা করবেন না।এখন আমি আপনার মেয়ে রুপি চাকরানী নই যে,আপনার সব অন‍্যায় মাথা পেতে সহ‍্য করবো।

—বাহ বাহ রাস্তার মানুষের সাথে দুদিন থেকেই ব‍্যবহারে এতো পরিবর্তন।

—মাইন্ড ইউও লেঙ্গুয়েজ মিসেস খান।আপস্ সরি মিস.খান।আপনি তো আবার মিসেস লাগানো অনেক আগেই বাদ দিয়ে দিয়েছে।আর আপনি যাকে রাস্তার লোক বলছেন সে মোটেও রাস্তার লোক না।চৌধুরী গ্রুপ অফ কম্পানির মালিক সে।মিঃসাইফ চৌধুরী।নাম সুনেছেন নিশ্চই।না সুনলেও আপনার ঐ হিটলার ভাইকে জিগ্গেস করবেন তাহলে পেয়ে যাবেন।আর কি যেন বলছিলে আপনার ভাইকে আমার হাজবেন্ড জেলে পাঠিয়েছে???যদি পাঠিয়েও থাকে তাহলে তাকে বলল,এমন ব‍্যবস্থা করতে যাতে মরার আগে ঐখান থেকে বের হতে না পারে।জীবনে তো আর পাপ কম করেনি দুনিয়াতে কিছু ক্ষয় করে যাক।তাহলে মরার পরে আল্লাহ্ সাস্তি কিছুটা কম দিলেও দিতে পারে।

কথাগুলো বলে হনহন করে নুহা চলে গেল।আর আসফিয়া অবাক হয়ে তার যাওয়ার দিকে চেয়ে রইল।তার কাছে নুহার বলা মিস খান কথাটা বুকে তীরের মত বিধছে।

বর্তমানঃ

সাইফ এর আজ অফিস থেকে ফিরতে অনেক রাত হয়ে গেল।রুমে ঢুকে পুরো রুম অন্ধকার দেখে রুমের লাইট অন করলো।পুরো রুমে চোখ বুলিয়েও কোথাও নুহাকে দেখতে পেল না। বেলকানির দিকে চোখ পরতেই একটা ছায়া চোখে পড়ল।সাইফ হাতের ব‍্যাগ আর কোটটা বেডে রেখে সেদিকে পা বাড়ালো।

রুমের লাইটের হালকা অলোতে সাইফ এর নুহাকে চিনতে ভুল হল না।সাইফ নুহাকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ওর কাধে হাত রেখে নরম গলায় বলল….

—কি হয়েছে তোমার???তুমি ঠিক আছো???

সাইফ এর এতোকুটু কথায় নুহার মনে ঝড় বয়ে গেলো।সে সাইফ এর দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে রইল।

সাইফ পুনরায় কিছু জিগ্যেস করার আগেই নুহা সাইফ এর উপর জাপিয়ে পরে।নুহার এমন কান্ডে সাইফ বোকার মত দাড়িয়ে রইল।

?????

এদিকে নীল আশুকে সাস্তি দিতে এসে নিজেই এখন সাজা ভুগছে।

একটু আগে নীল আশুর রুমে এসেছে সকালের ঐ ব‍্যবহারের জন‍্য সাস্তি দিতে।এসে দেখে আশু ফুপিয়ে ফুপিয়ে বেডে বসে কান্না করছে।আশুকে এভাবে কান্না করতে দেখে নীলের বুকে অজানা এক কষ্ট হতে লাগলো।নীল আশুর সামনে গিয়ে কোমল সুরে বলল….

—কি হয়েছে এভাবে কান্না করছো কেন???

আশু ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলল….

—বাহিরে কেমন অন্ধকার হয়ে আছে।একটু পর পর মেঘ ডাকছে।মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে।আমার বৃষ্টি অনেক ভয় লাগে।
ভ‍্যা…ভ‍্যা…..

নীল আশুর কথা শুনে হাসতে হাসতে বলল….

—পিচ্ছির কান্ড দেখ।ঝড় নেই কিছু নেই সুধু বৃষ্টি হবে মনে হয়।তা দেখেই কিভাবে কান্না করছে।আর ওগুলো মেঘ ডাকার সব্দ না অন‍্য সব্দ।

আশু ওড়না দিয়ে চোখ মুখ মুখে বলল….
—আপনি বৃষ্টি ভয় পান না???

—আমি কি তোমার মত পিচ্ছি নাকি যে বৃষ্টি দেখে ভয় পাবো।

আশু শুয়ে কম্বল গলা পযর্ন্ত জরিয়ে বলল….

—তাহলে আমার মাথার সামনে বসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিন।আমি ঘুমোব।

নীল হালকা চেচিয়ে বলল….

—হোয়াট!কি যা তা বলছো?আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিব?এই তুমি ভয়ে আবার পাগল হয়ে যাও নি তো?

আশু শোয়া থেকে লাফ দিয়ে উঠে বলল….

—আপনি পাগল আপনার বৌ পাগল।আসছে আমাকে পাগল বলতে।আমি আপনার ভালোর জন‍্য বললাম তা আপনার ভালো লাগলো না।হুহ….
এজন‍্যই লোকে বলে ভালো করলে ভালো নেই সালাম করলে দোয়া নেই।আশু এবার কথার ঝুলি খুলে বকবক করতে লাগলো।

নীল বিরক্ত হয়ে বলল….
—রাত দুপুরে কি শুরু করলে। তোমার সাথে কথা বলাই বেকার।

নীল চলে যেতে নিলে আশু ভ‍্যা ভ‍্যা করে কান্না করতে লাগলো।

নীলাভ আশুর দিতে তাকিয়ে রাগি গলায় বলল….
—এমন ভ‍্যা ভ‍্যা করে কান্না করছো কেন???

—আপনি আমাকে একা রেখে চলে যাচ্ছেন আমার অনেক ভয় করছে।আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিন দেখবেন একটু পর আমি ঘুমিয়ে যাব।তখন আপনি চলে গিয়ে সান্তিতে ঘুম দিতে পারবেন।আর যদি এখন আপনি চলে যান তাহলে কান্না করে আমি সবাইকে এখানে জরো করে তারপর বলল,আপনি আমার কথা শুনেনি।আমাকে একা রেখে চলে গেছেন।ভ‍্যা….ভ‍্যা….

নীলাভ পরেছে এবার ফেসাদে।এখন যদি চলে যায় তাহলে এই মেয়েকে দিয়ে বিশ্বাস নেই।যা বলছে তা করতেও পারে।নীলাভ কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল….

—কান্না অফ কর।আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।

আশু সাথে সাথে কান্না থামিয়ে খুশি হয়ে শুয়ে পরলো।
নীলাভ আশুর মাথার সামনে বসে কাপাকাপা হাত ওর মাথায় রাখলো।

এদিকে আশু মনে মনে শয়তানী হাসি হাসতে লাগলো।কেননা সে নীলাভ কে ওর রুমে দেখেই বুঝে গেছিলো তাকে কোন সাস্তি দিতে এসেছে।কেননা বাড়িতে আসার পর নীলাভ ওকে ওয়ানিং দিয়েছিল।তাই ওকে সাস্তি দেবার আগেই নীলকে হেনস্তা করার জন‍্য সাথে সাথেই মাথায় এই খিচুড়ি পাকিয়েছে।

?????

নুহা সাইফ কে জরিয়ে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে।সাইফ এখনও স্টেচু হয়ে দাড়িয়ে আছে।তার ব্রেন মনে হয় কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।দৃষ্টির পানি সাইফ এর গা ছুয়ে দিতেই তার মস্তিষ্ক কাজ করতে লাগলো।সাইফ উওেজিত হয়ে নুহাকে নিজের থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল….
—কি হয়েছে তোমার?এভাবে কান্না করছো কেন???

কিন্তু নুহাকে নিজের থেকে ছাড়াতে ব‍্যর্থ হয়ে থেমে গেল।নুহা সেই আগের মত কান্নাই করছে।সাইফ এবার আলতো এক হাতে নুহাকে জরিয়ে ধরে আরেক হাত মাথায় রেখে কোমল শুরে বলল….

—কি হয়েছে আমার মায়াবী পরির??? এভাবে কান্না করছে কেন???

নুহা অস্পস্ট করে বলল….

—আমি কি এতোই খারাপ যে মা আমাকে একটুও আদর করে না।একটুও ভালোবাসে না।জানেন আজ প্রথম আপনার জন‍্য মার সাথে খারাপ ব‍্যবহার করেছি।কেন করেছি তা জানি না।সব মায়েরা তো সন্তানদের কে ছায়ায় মত আগলে রাখে তাহলে আমার মা এমন কেন???আমাকে একটু আদর করলে কি হয়???আমার না আর মার এমন ব‍্যবহার সহ‍্য হচ্ছে না।কষ্ট হয় খুব কষ্ট হয়।
কথাগুলো বলতে বলতে নুহা জ্ঞান হাড়ালো।

নুহার হাতের বাধন আলগা হতেই সাইফ নুহাকে দু হাতে জরিয়ে ধরল।দু’তিন বার ডাকার পরে যখন বুঝতে পাড়লো নুহা জ্ঞান হারিয়েছে তখন নুহাকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে মনে মনে বলল….

—তোমার সব দুঃখের দিন শেষ করবো আমি।তোমার চাওয়া পাওয়া সব পুরোন করার দায়িত্ব এখন আমার।আমিই তোমার হাসির কারন হব আর আমার জন‍্যই তুমি কাদবে।এ ছাড়া কারো জন‍্য তোমাকে কাদতে দিব না।প্রমিস করছি ছায়ার মত তোমার সাথে থাকবো।আল্লাহ চাহে তো জীবনের শেষ নিশ্বাস ত‍্যাগ করার আগেও#ছায়া_হয়ে_থাকবো_পাশে।শুধু তুমি একটু আমাকে গুছিয়ে নিয়।তাহলেই হবে।
কথাগুলো মনে মনে বলে নুহাকে কোলে করে রুমের দিকে পা বাড়ালো।

_______________সমাপ্ত_______________

(ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখীত পার্সোনাল প্রবলেমের জন‍্য গল্পটা সম্পূর্ণ শেষ না করেই ইতি টানতে হল।তার জন‍্য আবারো সরি বলছি।ইনশাআল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি সিজন২ নিয়ে আসার চেষ্টা করবো।আর সেখানে সিজন১ যেখানে শেষ হয়েছে তারপর থেকেই শুরু হবে।ধন‍্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here