জান্নাহ্,পর্বঃ২৭,২৮
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি
পর্বঃ২৭
মৃদুমন্দে চলছে রোমান্টিক গান।পুরো বার জুড়ে টিমটিমে রঙিন আলো।নেশায় মত্ত চারপাশের নরনারী।কোলাহলের মাঝেও নেশার্ত মানুষগুলো অদ্ভুত শান্তি খুঁজে নেয়।কেউ বিলাসীতা আর কেউ নিজেকে ভুলতে বেছে নেয় এই পথ।কারো কারো স্বভাবেও খামতি থাকে।
ওয়েষ্টার্ন ড্রেস পড়া মেয়েগুলো সার্ভ করে যাচ্ছে একের পর এক ড্রিংস।তাদের চেহারার জৌলুসে কুপোকাত নেশায় মত্ত পুরুষ।একটু খানি ছোঁয়া পেতে হিড়কি দেয় টাকার বর্ষণ।তবুও আকাঙ্ক্ষিত নারীকে একটু কাছ থেকে ছোঁয়া চাই,তাকে দেখা চাই।
সেখানের একটি টেবিলে নেশায় টালমাটাল হয়ে টেবিলের উপর মাথা এলিয়ে বসে আছে একজন সুন্দরী রমনী।শিপনের শাড়ির সাথে স্লিভলেস ব্লাউজ।ঘাড় পর্যন্ত বব কাট করা চুল।ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক।তার দিকে অনিমেষ চাহনি দিয়ে তাকে গিলে নিচ্ছে ত্রিশ উর্ধ্ব ভদ্রলোক।চোখে তার ভারি চশমা।মুখভর্তি খোঁচা খোঁচা দাড়ি।হাতে ভারি সিলভার রঙের হাতঘড়ি।গ্রে কালারের স্যুট।বারের কাউন্টারের সামনে উঁচু টুলে বসে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে গলায় ঢালছে শতবছর পুরোনো ওয়াইন।কিন্তু ওয়াইনের চেয়ে বেশি নেশাতো ওই মেয়ের চোখে।
বারের ম্যানেজার বিচক্ষন দৃষ্টিতে তা পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।বেশ কিছুসময় পর লোকটির সামনে এসে চাপা গলায় বললো–
“স্যার কী আরো কিছু চাচ্ছেন?
গুমোট হাসলো লোকটি।ওয়াইনের গ্লাসে আরো ওয়াইন ঢেলে গটগট করে গিলে নিলো।বৃহৎ শ্বাস ফেলে মেয়েটির দিকে কামুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তেরছা গলায় বললো—
“আপনাদের ওয়াইনে নেশা কেন হচ্ছে না বলুন তো?
ম্যানেজার দাঁত কেলিয়ে বললো–
“স্যার কী আজ নতুন?
লোকটি বিগলিত হেসে বললো—
“এখানে নতুন হলেও স্বভাব পুরোনো।”
চমৎকার হাসলো ম্যানেজার।খিলিখিলিয়ে বললো–
“এর চেয়ে দারুন কিছু আছে।ব্যবস্থা করবো?
লোকটি গম্ভীর সুরে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললো–
“এর চেয়ে খাসা না হলে কিন্তু আমি কেস করবো।”
ম্যানেজার দন্তপাটি বের করে বিশ্রি হাসলো।নিচু গলায় বললো–
“তাহলে চলুন,আপনাকে জান্নাতের সেহের করিয়ে আনি।”
লোকটি দুর্বোধ্য হাসলো।মেয়েটির দিকে আরেকবার তাকিয়ে ম্যানেজারের সাথে হাটা ধরলো।মেয়েটি ঢুলে পড়ে আছে টেবিলে।
ম্যানেজার লোকটিকে বারের উপর তালায় নিয়ে গেলো।সেখানে একটা দরজার সামনে দুটো শক্ত সামর্থ্য লোক দাঁড়িয়ে আছে।লোকটিকে ইলেকট্রিক ডিভাইস দ্বারা চেক করা হলো।রেড লাইট জ্বলতেই বিগলিত হেসে লোকটি তার হাতের সিলভার রঙরে ভারি হাতঘড়িটি দেখালো।দরজার ভেতরে আসতেই আবছা আলোপূর্ণ এক ঘর।তা দিয়ে সোজা বের হয়ে এলো।সামনে দুটো লিফ্ট।একটার দরজা দেখেই মনে হবে অকেজো।কিন্তু লোকটিকে অবাক করে দিয়ে সেই লিফ্টের পাশে থাকা একটা সামান্য কমদামি দেয়াল ঘড়ি সরিয়ে বাটন পুশ করে ম্যানেজার।কিন্তু সেই লিফ্টের দৃশ্যমান সুইচ অকেজো যাতে করে যেকোন সাধারণ মানুষের মনে হবে এই লিফ্ট অচল।লিফ্টে ঢুকেই আরো আশ্চর্য হয় লোকটি।কারণ লিফ্টটি শুধু নিচের দিকেই যাবে এর উপরের দিকে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই।লিফ্ট থেকে বের হতেই একটা সুসজ্জিত ঘর।সেখানে দেশি বিদেশি মদ,বিয়ার,ওয়াইন সহ আরো অনেক ধরনের জিনিস।একটা বিখ্যাত পেইন্টিং লাগানো যা একজন সূক্ষ্ম নগ্ন নারীর।বাঁকা হাসে লোকটি।সেই রুম থেকে বের হতেই একটা লম্বা করিডোর।তা দিয়ে সামনে এগিয়ে যেতেই সারিবদ্ধ কতগুলো রুম।তার একটাতে লোকটিকে ঢুকিয়ে ম্যানেজার ওয়েট করতে বলে।
লোকটি ভেতরে ঢুকতেই আচম্বিত হয়।কী নিঁখুত করে সাজানো।শুভ্র বিছানা।ঝিলমিলে আলো।নাকের মধ্যে দুম করে খেলো গেলো এক মিষ্টি সুগন্ধ।লোকটি বিছানায় আয়েশ করে বসলো।তার অসহিষ্ণু নজর বারবার ঘড়ির দিকে।একটু পর কট করে দরজা খুলে একটা মেয়ে ঢুকে পড়ে।মেয়েটির রেশম কালো চুল ছড়িয়ে আছে।নিঁখুত চোখ জোড়া কাজলে আবৃত।কাটা কাটা নাক,পাতলা ঠোঁট যা দেখে যেকোন পুরুষের মস্তিষ্কে আলোড়ন সৃষ্টি হবে।কিন্তু লোকটির কিছু অনুভূত হলো না।সে ঠাঁই বসে রইলো।তার মোবাইলে অনবরত কল বেজে যাচ্ছে।রজনীগন্ধা।মেয়েটি তার কোমল পা জোড়া দিয়ে এগিয়ে এসে লোকটির পাশে বসলো।মিষ্টি করে হেসে তার কানের কাছে মুখ নিয়ে কাঁধে হাত ছোঁয়াতেই ঝট করে থাপ্পড় পড়ে মেয়েটির সেই তুলতুলে গালে।সেকেন্ডে সে ছিটকে পড়ে ফ্লোরে।হতভম্ব হয়ে তাকাতেই দারাজ গলায় বলে উঠে সারহান–
“আরেকবার গায়ে হাত দিবি জানে মেরে ফেলবো।শালি স্লাট।”
মেয়েটি চোখের পাতা প্রশ্বস্ত করে ভীত চোখে তাকায়।বিড়বিড় করে বলে উঠে সারহান,”গাধার বাচ্চাগুলো এতো দেরি করছে কেন কে জানে!
দরজায় করাঘাত পড়তেই সারহান সপ্রতিভ হয়।কিন্তু ততক্ষনে মেয়েটি সারহানকে ধাক্কা মেরে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।হুড়মুড় করে জন পাঁচেক হাট্টাগোট্টা লোকসহ ম্যানেজার এসে ঢুকে।মেয়েটি অধৈর্য হয়ে ভয়ার্ত গলায় বললো—
“আরে এ কোনো কাস্টমার না।শালা মনে হয় পুলিশের লোক।”
সারহান দাম্ভিক গলায় বললো–
“পুলিশ না তোদের বাপ।”
ম্যানেজার তার লোকগুলোকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সারহান তার কলারের ভাঁজ থেকে একটা ছোট্ট কাঁচের শিশি বের করে ফ্লোরে ছুঁড়ে মারে।মুহূর্তেই পুরো রুম ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়।সেই সুযোগে সারহান তার পকেটে থাকা ইলেকট্রিক ডিভাইসের সুইচ অন করে।তাতে করে চুম্বকীয় পদার্থের বিপরীত শক্তি দ্বারা তৈরিকৃত সেই ডিডাইসের শক লাগতেই সারহানের ঘড়িতে থাকা ছোট্ট পাতলা চাকুটা তার হাতে এসে পড়ে।আর তা দিয়েই ধোঁয়ার মধ্যেই ম্যানেজারকে টেনে ধরে তার গলায় চাকুটা ঠেসে রাখে।ধোঁয়ার আচ্ছনতা কাটতেই শায়িখ আর শ্রীজা এক ফোর্স পুলিশ নিয়ে ঢোকে সেখানে।মুহূর্তেই পুরো পরিবেশ সারহানের কন্ট্রোলে চলে আসে।পুলিশ সবাইকে ধরে নিয়ে যায়।সারহান ভেতরে আসার সময় তার হাতের তর্জনী সূঁচ দিয়ে ফুটো করে তার আসার রাস্তার সকল দেয়ালে সন্তর্পনে রক্তের দাগ লাগিয়ে শায়িখ আর শ্রীজার জন্য সংকেত রেখে আসে।স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সারহান।
শ্রীজার মাথার উইগটা ঠিক করে হেসে হেসে বললো—
“সাবধান।ছদ্মবেশ নেওয়ার পরও যদি কেউ তোমায় চিনে ফেলে তখন কিন্তু আমার কোনো দোষ নেই।”
শ্রীজা মজার ছলে বললো–
“তুমি বাঁচাবে না আমাকে?
“আমার আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই।”
শ্রীজার মন খারাপ হয়।তবুও হেসে বললো—
“তুমি ঠিক আছো তো?
“হুম।আই এম ফাইন।”
সারহান তার আঙুলে স্ট্রিপ লাগিয়ে নেয়।শায়িখকে ডেকে বললো–
“শ্রীজাকে এনজিওতে দিয়ে এখনই আমার বাসায় যাও।জান্নাহ্ সে কখন থেকে কল করে যাচ্ছে।আমি এখন রিসিভ করতে পারছি না।”
শায়িখ আনুগত্যের সুরে বললো—
“ওকে স্যার।”
সারহান মৃদু হেসে বললো—
“যাওয়ার আগে এই দাড়ি মোচ খুলে যেও।নাহলে জান্নাহ্ দরজা খুলবে না।”
“জ্বী স্যার।আপনি যাবেন না?
সারহান গম্ভীর গলায় বললো–
“থানায় যাবো আমি।ফিরতে সকাল হবে।জান্নাহ্কে বলবে সে যেনো চিন্তা না করে।যাও শ্রীজা।”
,
,
,
বুকে হাত ভাঁজ করে মেরুদণ্ড দৃঢ় করে সেলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সারহান।ভেতর থেকে আসা আর্তনাদে পৈচাশিক আনন্দ পাচ্ছে সে।ভোরের আলোয় মিশে যাচ্ছে কতিপয় লোকের ভয়ংকর গগনবিদারী চিৎকার।ধরে আনা লোকগুলো বেধড়ক পেটাচ্ছে তিনজন কনস্টেবল।এই সময় মহিলা কনস্টেবল না থাকায় মোটা ভুড়িওয়ালা সেই ভারি মেকাপওয়ালা মহিলার এ যাত্রায় রক্ষে।কিন্তু তা কতক্ষন তা জানা নেই।কারণ সকাল হলেই ব্যস্ত থানায় শুরু হবে দৈনন্দিন অফিসারদের আনাগোনা।আর তখন!
ভাবতেই বাঁকা হাসে সারহান।সেলের দরজা খুলে বেরিয়ে আসে নাদাপেটা কনস্টেবল রহিম।ঘাম চুইয়ে পড়ছে তার শরীর থেকে।শার্টের বোতাম পেট পর্যন্ত খুলে আছে।শ্যামলা চেহারাটা ঘামে,ক্লান্তিতে কালো বর্ণ ধারণ করেছে।তার পেছন পেছন বেরিয়ে আসে বাকি দুইজন।হাঁপাতে থাকে তারা।সারহান সরে দাঁড়ায়।রহিম ফ্যাসফ্যাসে গলায় বললো–
“সেই কেলাইছি ছার।হসপিটালে ভর্তি করাইয়া টেস্ট করলে দেখবে দুইশ ছয়খানা হাড়ের দুইশখানাই ভোগে।”
ফিচেল হাসে সারহান।দৃঢ় গলায় বললো–
“গুড।যান এইবার রেস্ট নিন।বাকিটা একটু পড়ে।যতক্ষন না শরীরের সব কয়টা হাড় ভাঙবে ততক্ষন পেটাবেন।বাকিটা আমি দেখবো।”
“জ্বী ছার।”
তারা যেতেই সেলের ভেতরে আসে সারহান।লোকগুলোর দিকে তাকিয়ে চোয়াল শক্ত করে।সারসানকে দেখেই ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে পড়ে মহিলাটি।একে দিয়েই বারের মেয়েদের ঠ্যাটিয়ে রাখা হয়।সারহান হাঁটু ভেঙে বসে।মোলায়েম তার দৃষ্টি।কিন্তু তাতেই মহিলাটির অন্তরাত্না শুকিয়ে যায়।সারহান বিগলিত হাসলো।কোমল গলায় বললো—
“তোর ভাগ্য ভালো।থানায় কোনো মহিলা কনস্টেবল নেই।নাহলে এতোক্ষনে..।”
সারহান কথা শেষ না করে পেছনে আধমরা লোকগুলোর দিকে তাকায়।আর তাতেই মহিলাটি বারকয়েক ঢোগ গিলে।তার শিড়দাঁড়া বেয়ে নেমে আসে শীতল ধারা।ঝট করে সারহানের পা চেপে ধরে বললো–
“তুমি আমার ধর্মের ভাই।আমারে বাঁচাও।এই মাইর আমার শরীরে পড়লে আমি সত্যিই মইরা যামু।”
পা টান দিয়ে মহিলাটির গালে কোনো কিছু না ভেবেই সজোরে চড় বসায় সারহান।দাঁত কিড়মিড় করে বললো–
“একদম ছুঁবি না আমায়।নাহলে সারা জীবনের মতো এইখানেই পুঁতে রেখে যাবো।”
আঁতকে উঠে মহিলাটি।ভয়াতুর গলায় বললো—
“মাফ করেন স্যার।”
তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে সারহান।গাঢ় গলায় বললো–
“আমি না চাইলে ওই তোদের মন্ত্রী বাপও তোদের বের করতে পারবে না।”
ব্যগ্র গলায় বলে উঠে মহিলাটি—
“আমারে কী করতে হবে বলেন।শুধু এখান থেকে বের করেন আমারে।”
“ওকে।দেখ তাহলে।”
সারহান তার মোবাইল থেকে সেই মেয়ের ছবি দেখায়।মহিলাটি উৎসাহের সাথে বললো—
“এই মাইয়ারে লাগবো।এর চেয়ে ভালোগুলা আছে আমার সন্ধানে।”
সারহান তার রাগ চেপে রাখতে না পেরে ঠাটিয়ে আরেক চড় বসিয়ে দেয় মহিলাটির গালে।ভড়কে যায় মহিলাটি।বজ্রকঠোর গলায় বলে উঠে সারহান–
“শালি স্লাট!আমাকে দেখে তোর কী মনে হয়!আমি তোকে ভালো করে ছবিটা দেখতে বলেছি।”
মহিলাটি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে তার ঝাপসা চোখ দুটো দিয়ে ভালো করে ছবিটি দেখতে থাকে।সারহান ধীর গলায় বলতে থাকে—
“এইটা আজ থেকে ঊনত্রিশ কী ত্রিশ বছর আগের ছবি।বর্তমানে এর বয়স পঁয়তাল্লিশের ওসপার।”
ভ্রু কুঁচকায় মহিলাটি।নির্বিকার গলায় বললো–
“তাইলে এরে দিয়া কী করবেন?
“তোর জেনে কাজ নেই।কোথাও দেখেছিস একে?
“নাতো।আর এর তো মেলা বয়স।বাঁইচা থাকলেও এই কাম কী তার দ্বারা আর হইবো!
সারহান বিক্ষিপ্ত গলায় বললো–
“তোকে এতো কিছু বলতে বলি নি।”
মহিলাটি কন্ঠে নমনীয়তা এনে বললো—
“তবে আপনি খোঁজ চালাইতে চাইলে ইন্ডিয়া যাইতে পারেন।মন্ত্রী সাহেবের আরো অনেক জায়গায় এই ব্যবসা আছে।”
সারহান ঠোঁট চিপে মাথা ঝাঁকায়।উঠে দাঁড়ায় সে।মহিলাটি ব্যস্ত হয়ে বললো–
“স্যার আমারে ছাড়বেন না?
সারহান বাঁকা ঠোঁটে বললো—
“কয়েকদিন শশুরবাড়ির আপ্যায়ণ তো হজম কর।”
শ্রান্ত,পরিশ্রান্ত,বিনিদ্র রজনী কাটিয়ে ফিরে আসে সারহান তার ফ্ল্যাটে।কিন্তু সেখান দাঁড়িয়েই চটে যায় সারহান।ভেতর থেকে খিলখিল হাসির আওয়াজ বেরিয়ে আসছে জান্নাহ্ এর সাথে পুরুষালী কন্ঠ।সারহানের মস্তিষ্ক ফেঁপে উঠে।টগবগিয়ে উঠে তার রক্তকণিকা।তুমুল বর্ষণের মতো ডোর বেল বাজাতে থাকে।দরজা খুলে একগাল হেসে তার সামনে দাঁড়ায় জান্নাহ্।সেই মোহনীয়,স্নিগ্ধ,ঐশ্বরিক চেহারায় চোখ পড়তেই সারহানের সমস্ত রাখ,ক্ষোভ,ক্লান্তি নিমিষে কর্পূরের মতো মিলিয়ে যায় বাতাসে।
চলবে,,,
#জান্নাহ্
#পর্বঃ২৮
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি
ইহতিশামকে দেখে হাসলো না সারহান।সরাসরি নিজের ঘরে গিয়ে ঢুকে।ঘামার্ত শার্টটা খুলেই ক্ষুব্ধ হয়ে বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে।সারহানের এই জিনিসটা জান্নাহ্ এর একদম পছন্দ না।এখানে সেখানে জিনিস ছুঁড়ে ফেলা।কিন্তু ভালোবাসার মানুষের সব কিছুই হয়তো ভালো লাগে।
শাওয়ার থেকে বের হতেই দেখে হাস্যোজ্জ্বল মুখে দাঁড়িয়ে আছে জান্নাহ্।ধূসর রঙের পাতলা টিশার্ট টা গায়ে গলিয়ে নিলো সারহান।কোমল গলায় প্রশ্ন করে জান্নাহ্—
“কাজ শেষ আপনার?
সারহান অস্ফুট আওয়াজে বললো–
“হ্যাঁ।”
“তারা কোথায় এখন?
“থানায়।”
“আর মেয়েগুলো?
স্থির দৃষ্টিতে তাকালো সারহান।নির্বিকার গলায় বললো–
“যারা বাড়ি ফিরে যেতে চেয়েছে তাদের বাড়ি পাঠানো হয়েছে।আর বাকিদের পূনর্বাসন কেন্দ্রে আর বিভিন্ন এনজিওতে।”
কোমল হাসে জান্নাহ।সারহান নরম গলায় আবার বললো–
“কল রিসিভ করতে পারি নি আপনার।সেই জন্য সরি।”
জান্নাহ্ মৃদু হেসে বললো–
“সমস্যা নেই।”
সারহান কিছু একটা খুঁজছে।বিছানায় হাতড়াতে হাতড়াতে বললো—
“রাতে খেয়েছেন আপনি?
জান্নাহ্ কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো—
“হুম।”
সারহান হেয়ালি গলায় বললো—
“আজকাল মিথ্যে কথা বলতে শিখে গেছেন রজনীগন্ধা।যা পারেন না তা করেন কেন?
জান্নাহ্ ছোট্ট দম ফেললো।অনুযোগের সুরে বললো—
“একা খেতে ইচ্ছে করছিলো না।”
সারহান মৃদু গলায় বললো–
“আপনার মেডিসিন চলছে তা নিশ্চয়ই আপনার অজানা নয়।”
“সরি।”
সারহান গম্ভীর গলায় বললো—
“নিজের ক্ষতি করে সরি বললে কী হবে!আপনি জানেন আমি ব্যস্ত থাকি।অপনাকে নিজের খেয়াল রাখতে হবে।”
সারহান দৃঢ় হয়।গভীর দৃষ্টিতে তাকায় জান্নাহ্ এর দিকে।স্নিগ্ধ,মায়াময় মুখ।একদম সরল চাহনি।সারহান স্বাভাবিক গলায় বললো—
“সকালে খেয়েছেন?
জান্নাহ্ মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বোধক সম্মতি দেয়।ফের প্রশ্ন করে সারহান–
“কী খেয়েছেন?
“ফ্রুট জুস।”
অধর ছড়িয়ে হতাশ শ্বাস ফেললো সারহান।আহত গলায় বললো–
“ফ্রুট জুসে পেট ভরে?তার উপর রাতে খান নি।”
জান্নাহ্ সরু চোখে তাকিয়ে রইলো।সারহান এখনো কিছু খুঁজে যাচ্ছে।উৎসুক গলায় প্রশ্ন করে জান্নাহ্—
“কী খুঁজছেন?
সারহান খেয়ালিপনায় বললো–
“আমার ব্রেসলেট টা কোথায়?
জান্নাহ্ খুশি খুশি গলায় বললো—
“ওটা আপনার ড্রয়ারে।”
সারহান নিজের ড্রয়ার থেকে ব্রেসলেট টা নিয়ে হাত পড়ে নেয়।শক্ত গলায় প্রশ্ন করে–
“ইহতিশাম কখন এসেছে?
জান্নাহ্ সরস গলায় বললো—
“সকালে।বললো আপনার সাথে জরুরি কথা আছে।”
“কিছু খেতে দিয়েছেন ওকে?
“নাহ।”
“যান ওকে কিছু খেতে দিন।আমি আসছি।”
“আচ্ছা।”
জান্নাহ্ ঘুরে দাঁড়ালেই পেছন থেকে ডেকে উঠে সারহান–
“রজনীগন্ধা।”
জান্নাহ্ ঝট করে পেছন ফিরে।সারহান তার কাছে এসে জান্নাহ্ এর গালে লেগে থাকা হলুদের দাগ নিজের বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে মুছে দেয়।মসৃন গলায় বললো—
“পড়ালেখা না করে কী শুধু রান্নাবান্নাই করেন!
জান্নাহ্ একগাল হেসে বললো–
“করি তো।”
চোখে হাসে সারহান।
কাউচে এসে আয়েশিভঙিতে বসে সারহান।তার দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থমথমে গলায় প্রশ্ন করে ইহতিশাম—
“কেমন আছিস?
সারহান কাট কাট গলায় প্রত্যুক্তি করে বললো–
“মরি নি এখনো।”
ফোঁস করে এক দম ছাড়ে ইহতিশাম।নিজের হাতে থাকা একটা ফাইল থেকে শব্দবিহীনভাবে একটা পেপার এগিয়ে দিয়ে নির্বিঘ্ন গলায় বললো—
“সামিরার সাথে তোর কী সম্পর্ক?
সারহান বাঁকা হেসে সোজা বললো—
“আমার বেড পার্টনার ছিলো।”
ধমকে উঠে ইহতিশাম।বলল–
“সারহান!
অত্যন্ত শীতল গলায় সারহান বললো–
“তুই কী অন্য কোনো উত্তর আশা করছিলি?
ইহতিশাম কঠোর গলায় বলে উঠে–
“তিথির সাথে কী সম্পর্ক ছিলো তোর?
চোখে হাসে সারহান।স্বশব্দে বললো–
“সেম।”
চোয়াল শক্ত করে ইহতিশাম।তপ্ত গলায় বললো–
“কী বলছিস এইসব!পাগল হয়ে গেছিস?
সারহান নরম চোখে তাকায়।ফোঁস ফোঁস করছে ইহতিশাম।তার কন্ঠনালিতে আটকে আছে কথা।ইহতিশাম খলবলিয়ে উঠে।কাটখোট্টা গলায় বললো—
“তুই এখনো এই অভ্যাস ছাড়িস নি।তাহলে বিয়ে কেন করেছিস?ছেড়ে দে জান্নাহ্কে।ইউ ডোন্ট ডিজার্ব হার।”
দাঁতখামটি মেরে নাকের পাল্লা ফুলিয়ে সেন্টার টেবিলে থাকা ফ্রুট জুসের গ্লাসটা ছুঁড়ে মারে সারহান ইহতিশামের দিকে।ইহতিশামের কান ছুঁয়ে বেরিয়ে যায় তা।দৌঁড়ে রান্নাঘর থেকে আসে জান্নাহ্।অসহিষ্ণু গলায় বললো–
“কী হয়েছে?
জান্নাহ্ দেখতে পায় ফ্লোর মেখে আছে জুসে।তার চোখে প্রশ্নেরা খেলা করছে।বিগলিত হাসে ইহতিশাম।ধীর গলায় বললো–
“তেমন কিছু না।দুই বন্ধু কাড়াকাড়ি করে খেতে গিয়ে এই অবস্থা।”
জান্নাহ্ এর হজম হলো না।কারণ গ্লাসটা যেখানে পড়েছে আর যেভাবে পড়েছে তাতে এমনটা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।সারহান শক্ত এবং কড়া গলায় বলে উঠে–
“রজনীগন্ধা,রান্না শেষ করুন।আমার খিদে পেয়েছে।”
জান্নাহ্ কিছু বলতে গেলে সারহান জ্বলন্ত চোখে তাকায়।তাই বিনাবাক্য ব্যয়ে রান্নাঘরের দিকে ফিরে যায় জান্নাহ্।কিন্তু তার মনে একদলা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে।একটু ধাতস্থ হয়ে ইহতিশাম বললো–
“কেন করছিস এইসব!ছেড়ে দে দোস্ত।”
সারহান ফুঁসলে উঠে টেবিলে থাকা পিরিচ থেকে কাটা চামচ নিয়ে একদম ইহতিশামের চোখের সামনে ধরে।তার শার্টের কলার আবদ্ধ সারহানের মুষ্টিতে।গনগনে গলায় সারহান বললো–
“দোস্ত!কীসের দোস্ত!সেইদিন কোথায় ছিলো তোর দোস্তি?যখন তোর সামনে আমাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছিলো।কোথায় ছিলো তোর বন্ধুত্ব?যখন সারহান জেইদির গায়ে নষ্ট গলির ট্যাগ লাগিয়ে দিলো।আর কেউ না জানুক তুই তো জানতি আমি কাউকে খুঁজতে গিয়েছিলাম।কিন্তু তুই!কী করে ছিলি!ওই খারাপ মানুষগুলোর সাথে পুলিশ যখন আমাকেও নিয়ে যাচ্ছিলো তুই কেন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলি!কোথায় ছিলো তোর দোস্তি তখন?
অনুরণন হচ্ছে ইহতিশামের চোখের পাতা সেই সাথে কম্পিত হচ্ছে তার গলা।সেই কম্পিত কন্ঠে নির্বিকারভাবে ইহতিশাম বললো–
“দেখ সারহান,তুই কেন বুঝতে পারছিস না।সেদিন আমি কিছু বললে পুলিশ আমাকেও সাথে নিয়ে যেতো।আমি মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির ছেলে।বাবা জানলে মরে যেতো।মায়ের কী অবস্থা হতো।সমাজ!
সারহান কপাল কুঁচকে ক্ষীপ্ত গলায় বললো–
“বাহ!নিজের কথাই ভাবলি।আর আমি!আমি না তোর বন্ধু!তোর জন্য আমি সেই মানুষটাকে হারিয়েছি যার কাছে আমার প্রশ্নের জবাব ছিলো।আমার কথা শুনে আমার দাদু হার্ট অ্যাটাক করে।আমার বাবা হসপিটালাইজড হয়।আমার মা তিনদিন বিছানায় অবচেতন হয়ে শুয়ে ছিলো।আর পুলিশ কী করেছে জানিস!সারারাত আমাকে মেরেছে।শুধু এই কথা স্বীকার করাতে যে আমিও ওই নষ্ট গলির লোক।কী হতো তোর একবার সত্যি বললে!কী হতো!
ইহতিশাম করুণ চোখে তাকায়। ঊনিশ বিশ বছরের ইহতিশাম আর সারহানের জীবনে যে ধ্বস নেমে আসে তার সঠিক বিচার তারা কেউ করতে পারেনি।ইহতিশাম অনুযোগের সুরে বললো–
“আমি তোর কাছে ক্ষমা চাইছি দোস্ত।আমি ইচ্ছে করে কিছু করি নি।যা হয়েছে ভুলে যা।”
সারহান হিংস্র হাসে।ইহতিশামের কলার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।ক্ষুব্ধ গলায় বললো–
“ইচ্ছে করে করেছিস।কারণ কলেজে তোর থেকে আমি ভালো স্টুডেন্ট ছিলাম।তুই চাসনি আমি তোর চেয়ে ভালো রেজাল্ট করি।তোর ইচ্ছেই সফল হয়েছে।একরাত থানায় কাটিয়ে আমার নাম থানায় ডায়েরিতে লাল রঙে রাঙানো হয়।কলেজে আসার পর কেউ আমাকে দেখতে পারতো না।বলতো ওই যে নষ্ট পুরুষ যাচ্ছে।টিচাররা পর্যন্ত ঘৃণা করতো তাদের বেস্ট স্টুডেন্টকে।বাধ্য হয়ে কলেজ বদলেছি আমি।এরপরও বলবি তুই ইচ্ছে করে করিস নি?
ইহতিশাম শান্ত গলায় বললো–
“আমি সত্যি বলছি সারহান।ভয় পেয়ে গেছিলাম আমি।আমি তোকে আজও আমার বন্ধু ভাবি।”
সারহান ঘৃণার স্বরে বললো—
“আমি ভাবি না।সারহান জেইদি এখন আর সুপুরুষ নয়।তোর সাথে তার যায়না।নষ্ট পুরুষ সে।যা এখান থেকে।”
দূর্বল গলায় ধীরগতিতে বললো ইহতিশাম—
“ফিরে আয় দোস্ত এইসব পথ থেকে।তোর তো সব আছে।ক্ষমা করে দে আমাকে।”
জ্বলে উঠে সারহানের চোখ।তার প্রস্ফুরিত অক্ষিযুগল লাল হয়ে টলটল করছে।অধর ছড়িয়ে ভয়ংকর শ্বাস ফেললো সে।ক্ষীন গলায় বললো–
“কেউ নেই আমার।আমার রজনীগন্ধা ছাড়া কেউ আমার আপন নয়।কেউ না।”
সারহান বড় বড় তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলতে থাকে।তার বুক উঠানামা করছে সমান তালে।চোখ বুজে একটা লম্বা শ্বাস নেয়।অতি নরম গলায় বললো—
“আজ সারহান জেইদি খারাপ।কিন্তু দেখ কেউ তা জানে না।ব্যাপারটা হাস্যকর!
ইহতিশামের দিকে শান্ত দৃষ্টি রেখে আবার বললো–
“ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন,আমি খুন করি নি।আর জান্নাহ্কেও আমি ছাড়ছি না।আমার দেহে যতক্ষন প্রাণ আছে তাকে কেউ আমার থেকে আলাদা করতে পারবে না।আর সবচেয়ে জরুরি কথা,তুই যা আমার সাথে করেছিস তার জন্য তোকে চরম মূল্য দিতে হবে।তোর দেওয়া বিশ্বাসঘাতকতা দ্বিগুন করে ফিরিয়ে দেবো আমি।না পারবি গিলতে না পারবি উগরাতে। এখন যা তুই।তোর যা করার কর।আই ডোন্ট কেয়ার।”
সারহান আর দাঁড়ায় না।সিক্ত অক্ষিজোড়া নিয়ে নিজের রুমে গিয়ে তা লক করে দেয়।ইহতিশাম অনুতপ্ত।সেদিন যদি একটু সাহস করে সে পুলিশের কাছে গিয়ে সবকথা খুলে বলতো তাহলে হয়তো এমনটা নাও হতে পারতো।স্বগতোক্তি করে বললো–
“প্লিজ দোস্ত,ফিরে আয়।ফিরে আয় এই জঘন্য জীবন থেকে।”
রান্নাঘর থেকে অস্ফুটভাবে তাদের দুইজনের কথা শুনতে পায় জান্নাহ্।ঘটনার গভীরতা না বুঝলেও একটা বিশাল ভুল বোঝাবুঝির লড়াই চলছে দুই বন্ধুর মাঝে তা বুঝতে ভুল হলো না।কিন্তু!
কিন্তু কারো গায়ে খারাপের ট্যাগ লাগানোর মানে এই নয় যে সে খারাপ।একটা ভুলের জন্য জরুরি নয় পুরোটা জীবনটা অতল সাগরে ভাসিয়ে দিবে।সেইদিক থেকে সারহান ভুল।হয়তো পরিস্থিতি তার অনুকূলে ছিলো না।কিন্তু তাই বলে ভাগ্যকে দোষ নিয়ে নিজেকে গড্ডলিকা প্রবাহে ভাসিয়ে দেওয়ার মানে হয় না।
,
,
,
চোখে ভারি চশমা আর ফোল্ড করা হাতা।কপালে জমেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম।মাথার ওপরে ঘূর্ণায়মান ফ্যান।আর নৈঃশব্দের মাঝে ঝড় তুলছে সারহানের আঙুলের দাপটতা।টুট টুট করে একের পর এক কীবোর্ডের বাটনে চলছে দামাল ছেলেদের মতো চঞ্চলতা।ক্লান্ত কীবোর্ড যেনো হতাশ হয়ে বলছে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি।তা কী আর সম্ভব।দুই দিনের মধ্য অ্যাসাইমেন্ট জমা দিতে হবে।
ভেজানো দরজা হালকা ফাঁক করে উঁকি দেয় জান্নাহ্।নম্র গলায় বললো–
“ভেতরে আসবো?
ল্যাপটপের স্ক্রিনে সরু দৃষ্টি রেখেই স্বশব্দে সারহান বললো–
“আসুন।”
জান্নাহ বিড়াল পায়ে সারহানের কাছে এসে দাঁড়ায়।মৃদু গলায় বললো–
“চা না কফি?
সারহান সরব গলায় বললো–
“কোনোটাই না।মেডিসিন নিয়েছেন আপনি?
“হুম।”
জান্নাহ্ ল্যাপটপের দিকে ভালো করে তাকিয়ে বললো–
“কী করছেন?
সারহান চোখ থেকে চশমাটা খুলে রাখে।একাধারে বেশ সময় ধরে ইলেকট্রিক ডিভাইসে তাকালে চোখ জ্বলে উঠে।তাই কাজের সময় চশমা ব্যবহার করা।সরস গলায় প্রত্যুত্তর করে সারহান—
“সেদিন যে গ্যাংটা ধরা পড়েছে তার অ্যাসাইমেন্ট টা তৈরি করছি।জমা দিতে হবে।”
মুচকি হাসে জান্নাহ্।জানালার দিয়ে হুরহুর করে বাতাস আসছে।ঝলমলে নীলাভ আকাশটা একদম শূন্য।কোথাও কোনো কিছু নেই।জানালা দিয়ে ভেসে আসছে কোথাও হতে কাকের কর্কশ ধ্বনি।জান্নাহ্ এর ডানহাত টা নিয়ে তাতে চুমু খায় সারহান।মোলায়েম গলায় বললো–
“বাড়িতে কথা বলেছেন?
জান্নাহ্ মৃদু ছন্দে বললো–
“হ্যাঁ।”
সারহান স্মিত হেসে স্বাভাবিক গলায় বললো—
“তিতি কী বলেছে?
জান্নাহ্ উচ্ছ্বসিত গলায় বললো–
“ওর জন্য লাল শাড়ি নিয়ে যেতে বলেছে।”
সারহান চোখে হাসে।নিরুদ্বেগ গলায় বললো—
“আজ আপনি ফ্রি?
ঝুমঝুম করে হেসে উঠে জান্নাহ্।আমোদিত গলায় বললো—
“নিয়ে যাবেন আমাকে?
সারহান চোখ দিয়ে ইশারা করলো।ফিকে গলায় বললো–
“চলুন,আপনার প্রিন্সেস গাউন নিয়ে আসবেন।”
আনন্দে আত্নহারা হয়ে জান্নাহ্ বললো—
“তাহলে আমি রাতের রান্না শেষ করে আসি।”
সারহান আপত্তি করে বললো–
“উঁহু।আজ বাইরে খাবো আমরা।”
উচ্ছল হাসে জান্নাহ্।সরস গলায় বললো–
“একটা কথা বলবো?
সারহান তার প্রিন্ট আউট করা পেপারগুলো গুঁছিয়ে নিয়ে ফাইলে পুরে নেয়।হেয়ালি গলায় বললো—
“বলুন।”
জান্নাহ্ নিষ্কম্প গলায় বললো–
“তিশাম ভাইয়ার সাথে আপনার কী হয়েছে?
সারহান ভ্রু ক্রুটি করে কন্ঠে গভীরতা টেনে বললো–
“ওইটা আমাদের প্রফেশনাল ম্যাটার।ওখানে আপনাকে জড়াবো না আমি।”
“কিন্তু আমি যে আপনার সাথে জড়িয়ে আছি।”
সারহান ভাবুক দৃষ্টিতে তার রজনীগন্ধার চোখের দিকে তাকায়।সেই চোখে হাজারো প্রশ্নকলি ধীরে ধীরে ডানা মেলছে।
চলবে,,,