জান্নাহ্,পর্বঃ৪১,৪২
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি
পর্বঃ৪১
বিছানার উপর এক পা হাঁটু ভেঙে অন্য পা ঝুলিয়ে মাথার নিচে দুই হাত দিয়ে শুয়ে আছে সারহান।তার সাবলীল দৃষ্টি ওই ফ্যানের দিকে।কেমন করে ঘুরছে!ভনভন,ভনভন।আচ্ছা,ফ্যানের কী তিনটা পাখা!ঘুরলে বোঝা যায় না কেন?ছোটকালে যখন মাথার উপর এমন ফ্যান ঘুরতো মনে হতো এই যা এখনই মাথার উপর ঠুস করে পড়লো বুঝি।কিন্তু না,পড়লো না কখনো।আচ্ছা ফ্যানটা মাথায় পড়লে কী আমি মারা যেতাম!আমার মাথাটা থেঁতলে যেতো!যদি থেঁতলে যাওয়ার পরও বেঁচে যেতাম।ছিঃ!কী বিচ্ছিরি হতো ব্যাপারটা।
এমনটা ভাবতে ভাবতেই সারহানের চোখ বুজে আসে।আজ সন্ধ্যায় সে বাংলাদেশ ব্যাক করেছে।বাড়ি আসার কোনো প্ল্যান ছিলো না।কিন্তু অন্তরার মুখে জান্নাহ্ এর কথা শুনে বিনা সময় ব্যয়ে বাড়ির পথ ধরে সারহান।
সারহানের পায়ের কাছেই এক সমুদ্র দ্বিধা নিয়ে কাঁচুমাচু হয়ে বসে আছে জান্নাহ্।তার চোখের পাঁপড়িগুলো ভেজা।সারহান আসার পর থেকে একটা কথাও বলেনি।বিছানায় শুয়ে আছে নিস্তব্ধ হয়ে।নৈঃশব্দ কাটিয়ে মুগ্ধ কন্ঠে বলে উঠে সারহান—
“এতোবড় একটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেললেন আমাকে না জানিয়েই?
জান্নাহ্ মৃদু আওয়াজে কেঁদে উঠে।ফুঁপিয়ে যাচ্ছে সে।সারহান আবারো নির্বিকার গলায় শুধায়–
“কাজটা কী ভালো করলেন আপনি?
জান্নাহ্ ভেজা গলায় বললো–
“প্লিজ সারহান,আমার কথা শুনুন।”
সারহান উঠে বসে।ভাঁজ করা হাঁটু নিচে নামিয়ে দু পা ঝুলিয়ে দিয়ে দুলাতে থাকে।পা দুলাতেও একটা আর্টের প্রয়োজন হয়।সারহান যখন ক্লাস সেভেনে পড়তো তখন এক স্যারকে প্রশ্ন করলে স্যার বলে এতো দুঃচিন্তা দূর হয়।
তখন না বুঝলেও এখন সারহানের মনে হয় কথাটা সবার ক্ষেত্রে না হলেও তার পক্ষে ঠিক।ঘাড়টা দু’পাশে হেলিয়ে আবার সোজা করে।নরম গলায় বললো–
“বলুন,কী বলবেন।”
জান্নাহ্ সারহানের দিকে সিক্ত চোখে তাকায়।জান্নাহ্ এর দুই চোখ লালিমা ধারণ করেছে।নাকের ডগাও লালচে।ফর্সা মুখটাও কেমন ফিকে।সারহান থমথমে ভাব ধরে তাকিয়ে রইলো।সরু ভ্রু দুটো কপালের মাঝ থেকে উঁচিয়ে ইশারা করলো।জান্নাহ্ কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো–
“প্লিজ সারহান।আই এম সরি।”
অধর ছড়িয়ে শ্বাস ফেললো সারহান।চোখে হেসে বললো—
“কীসের জন্য সরি?আপনি এইসব মায়ের কথায় করেছেন।আমার কথার কোনো মূল্য নেই আপনার কাছে?
কাতর গলায় অনুনয় করে বললো জান্নাহ্—
“প্লিজ,সারহান।এইভাবে বলবেন না।আম্মা বলেছে তাই..।”
“আপনার এমন কেন মনে হলো!বাচ্চার জন্য আমি আবার বিয়ে করবো!
ঝমঝমিয়ে কাঁদে জান্নাহ্।মেকি কৌতুকপ্রদ হয়ে সারহান বললো–
“আরে কাঁদছেন কেন আপনি!আপনার তো খুশি হওয়া উচিত।পড়ালেখার কোনো দরকার নেই আপনার।ইচ্ছে হয়েছে পনেরো বছর বয়সেই বিয়ে করে ফেললেন।ইচ্ছে হলো ষোলো বছর বয়সেই মা হয়ে যাবেন।ক্যায়া জিন্দেগি হ্যায়!
ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে সারহানকে দেখে জান্নাহ্।যেনো তার কোনো আগ্রহ নেই এই বিষয়ে।খুশি হওয়ার বদলে যেনো ঘোর অমাবস্যা নেমে এলো জান্নাহ্ এর খুশির দুয়ারে।সারহান উঠে দাঁড়ায়।দুই হাত উঁচু করে আড়মোড়া ভাঙার মতো আচরণ করে খেয়ালিপনায় বললো–
“ভালোই করেছেন।আমার চেয়ে আপনার শাশুড়ি আপনার কাছে বেশি আপন।তাই আমাকে না জানিয়ে এতোবড় একটা স্টেপ নিয়ে নিলেন।ওয়েল বি হ্যাপি।”
সারহানের এই একেক টা শব্দ যেনো বিষের ফলা হয়ে বিঁধতে থাকে জান্নাহ্ এর কোমল মনে।তার সকল খুশি যেনো বিষাদে রূপ নেয়।সারহান দুই হাত পকেটে পুরে দৃঢ় হয়ে দাঁড়ায়।তেতো কন্ঠে ফিচেল হেসে বললো–
“ভাবুন তো একবার,যদি আপনার মেয়ে হয়।যেই শাশুড়ি আপনাকে মাথায় নিয়ে নাচ্ছে সেই এই বাড়ি থেকে বিদায় করে দিবে আপনাকে।তখন কী হবে বলুন তো?
জান্নাহ্ ভীত সুরে বলে উঠে–
“সারহান!এইসব কী বলছেন?
ফুরফুরে হাসে সারহান।জান্নাহ্কে টেনে নিয়ে বুকের সাথে চেপে ধরে।স্নিগ্ধ কন্ঠে মিষ্টি করে বললো–
“এতো বড় পাগলামি কেন করলেন?আপনার বয়স মাত্র ষোলো।তার উপর সামনে আপনার বোর্ড এক্সাম।এতো বড় রিস্ক কেন নিলেন?
জান্নাহ্ দুই হাতে খামচি মেরে ধরে সারহানকে।মোলায়েম গলায় বললো–
“পরীক্ষা সামনের বছর দিবো। এই বছর মা হবো।”
সারহান দুই হাতের বাঁধনে শক্ত করে আড়ষ্ট করে জান্নাহ্কে।নরম কন্ঠে শুধালো–
“এতো ভালোবাসা কোথায় রাখবো আমি?
জান্নাহ্ দুষ্টমির ছলে বললো—
“জানি না।”
জান্নাহ্কে ছেড়ে নিচে বসে সারহান।তার নরম পেটে টপাটপ কয়েকটা চুমু খেয়ে বললো—
“এখানে আছে আমার ছোট্ট পরী।দেখে রাখতে পারবেন তো?
জান্নাহ্ মিষ্টি হেসে বলল–
“হুম।”
ডিভানে বসে সারহান।মাথাটা ঠেকিয়ে দেয় ডিভানের উঁচু বোর্ডের দিকে।তার পাশেই জান্নাহ্ সারহানের দিকে নরম দৃষ্টি দিয়ে রেখেছে।
মখমলে গলায় বললো—
“এইবার থেকে আমরা বাড়িতেই থাকবো।আপনি এখানেই চলে আসুন।”
অধর কোণে বাঁকা হাসে সারহান।জান্নাহ্ এর দিকে মুখ করে তার গালে হাত রেখে সরব গলায় বললো—
“নাহ।আমার স্ত্রী আর সন্তানকে চালানোর মতো যোগ্যতা আমার আছে।তাদের জন্য কারো দারস্থ আমাকে হতে হবে না।”
“কিন্তু..।”
জান্নাহ্কে কথা বলতে না দিয়ে রসালো গলায় সারহান বললো–
“আপনাকে অনেকদিন চুমু খাই না।”
হতবুদ্ধি জান্নাহ্ কিছু বুঝে উঠার আগেই তার অধরপল্লব আঁকড়ে ধরে সারহান।
“মামা।”
তিতির বাচ্চা কন্ঠে সারহানকে এক ধাক্কা মারে জান্নাহ্।লজ্জায় কুপোকাত সে।নিজের ঠোঁটে স্লাইড করে ফিচেল হাসে সারহান।তিতিকে কোলে টেনে নেয়।
নম্র গলায় বললো–
“এখনো ঘুমায় নি কেন আমার প্রিন্সেস?
তিতি আমুদে গলায় বললো–
“বাবু কোথায়?
আলতো হাসে জান্নাহ্।তিতির গাল টিপে বললো–
“বাবু তো আল্লাহর কাছে।”
মুখটা চুপসে যায় তিতির।চোখ দুটি টিমটিম করে ঠোঁট গুঁজ করে বললো—
“আনো।”
সারহান তিতির গাল টেনে সরস গলায় বললো–
“আনবো তো।আগে আমার তিতিপাখি বড় হোক।বাবুকে কোলে নিতে হবে তো।”
“আমি পারি।”
“তাই নাকি।ওকে নিয়ে আসবো।”
,
,
,
ঘরে ঢুকেই চড়ুই পাখির মতো মাথা নাড়াতে থাকে লুবনা।আজ সকালেই সারহানের ছোট চাচার বউ আর তার মেয়ে এসেছে।সারহানের ছোট চাচার তিন মেয়ে।বড় দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে।তারা তাদের স্বামীর সাথে একজন দেশের বাইরে থাকে আরেকজন গৃহস্থ পরিবারের বউ।সারহান বর্তমানে তাদের বংশের একমাত্র ছেলে।
লুবনা এদিক ওদিক তাকায়।ঘরে কেউ নেই।এইবার এইস.এস.সি দিয়েছে সে।তার ছড়ানো চুলগুলো পুরো পিঠ দখল করে আছে।ওয়াশরুম থেকে পানির আওয়াজ পেয়েই বুঝতে পারে সারহান ওয়াশরুমে।ছোট ছোট পায়ে বেড সাইড টেবিলের দিকে এগিয়ে আসে লুবনা।সেখানে একটা ফটো ফ্রেম।যেখানে সারহান আর জান্নাহ্ এর একটা বাঁধানো ছবি।ঠোঁট দুটো গুঁজ করে চোখ দুটো ক্ষীন করে লুবনা।নাক কুঁচকে তীব্র আক্রোশ প্রকাশ করে সারহানের ওই হাস্যোজ্জ্বল মুখটার দিকে।মুখে চিবানো চুইংগামটা হাতে নিয়ে তা ছবিটায় থাকা সারহানের মিষ্টি মুখটার উপর সেঁটে দেয়।এক পৈচাশিক আনন্দ পায় লুবনা।ফিক করে হেসে চোখে টিপ্পনী কাটে।আচম্বিত হয় নিজের হাতে বলিষ্ঠ কোনো কিছুর চাপে।দুরুদুরু করতে থাকে লুবনার বুক।গলা শুকিয়ে কাঠ।তার হাত শক্ত করে ধরে আছে সারহান।
পাতলা টিশার্টের সাথে ফোর কোয়ার্টার প্যান্ট পরা।চোখ দুটো বড় বড় করে ধমকে জিঙ্গেস করে সারহান—
“কী করছিলি তুই?
বুকটা কেঁপে উঠে লুবনার।ছোটবেলা থেকেই সারহান আর লুবনার সাপে নেঁউলে সম্পর্ক।ছবিটা উল্টো করে টেবিলের উপর রাখে।হালকা চেপে দাঁড়ায় যেনো তা সারহানের নজরে না আসে।সারহান আবারও ধমকে উঠে–
“কথা বলছিস না কেন লবণ!কী করছিলি এইখানে?
লুবনা ভীত গলায় কথা আটকে আটকে বললো—
“কককইই কিইইইইছুছুছু নাআআআ তো।”
সারহান সরু ভ্রু জোড়া কুঞ্চি করে সন্দিহান চোখে তাকায়।অধর কোণ চিপে ধরে সন্দিগ্ধ কন্ঠে বললো—
“কিছুই করিস নি?
লুবনা দ্বিধা ও ভয় নিয়ে মিনমিনে গলায় বললো—
“ননননাআআ।”
সারহান লুবনাকে হালকা টান দিয়ে সরিয়ে দেখে তার আর জান্নাহ্ এর ছবিটা উপুর করা।ডান হাতে লুবনার হাত চেপে ধরাতে তাকে ডিঙিয়ে বা’হাত দিয়ে ছবিটা সিধা করে দেখে লুবনার অকাজ।দমদমে গলায় বলে উঠে সারহান—
“লবণের বাচ্চা কী করেছিস এইটা!
লুবনার যেনো শক্তি সঞ্চার হলো।খেমটি মেরে উঠে দম্ভ করে বললো—
“বেশ করেছি।তোমার মতো টারজানকে জান্নাহ্ এর মতো মিষ্টি মেয়ের সাথে একদম মানায় না।তাই ব্ল্যাঙ্ক করে দিলাম।না থাকবে বাঁশ,না বাঝবে বাঁশুরী।”
কথা শেষ করে পাত্তাহীনভাবে নিজের ঠোঁট বাঁকায় লুবনা।সারহানের চোখ দিয়ে যেনো তপ্ত আভা নির্গত হয়।হাতের চাপ বাড়াতেই আর্তনাদ করে উঠে লুবনা।
“ও মা আমার হাত!
সারহান ফিচেল হেসে দৃঢ় গলায় বললো–
“দেখ এইবার তোর কী অবস্থা করি।”
লুবনার বুঝতে দেরি হয় না।তার সাথে ভয়াবহ কিছু হতে চলেছে।সারহানের মস্তিষ্ক চলছে মিচকিগিরি।চুইংগামটা নিয়ে সোজা লুবনার চুলে লাগাবে।সারহানের সাথে কখনো পারে না লুবনা।তবুও দুইজন যেনো এক বনে বাস করা দুই বাঘ।একজন আরেক জনকে সহ্য করতে পারে না।সারহানকে পছন্দ হলেও তার কার্যকলাপে অতিষ্ঠ লুবনা।ছোটবেলা থেকেই লুবনাকে লবণ বানিয়ে ফেলা সারহান বাইরে এতো মেয়ের সাথে সম্পর্ক রাখলেও কখনো ঘরের মেয়েদের দিকে তার দৃষ্টি ছিলো না।যা ছিলো অপরিমেয় মায়া আর ভালোবাসা।জান্নাহ্ অন্তঃসত্ত্বা সেই খুশিতেই সারহানের চাচাকে আসতে বলা হয়।কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তিনি আসেন নি।
কাঁদো কাঁদো হয়ে লুবনা বললো–
“সারহান ভাইয়া ছাড়ো।লাগছে আমার।”
সারহান ঝট করে ঠোঁট দুটো গোল করে কৃত্রিম বিস্ময় প্রকাশ করে বললো–
“ও,,লাগছে লবণের।”
“তুমি আমাকে লবণ বলো কেনননননন?
সারহান বিনয়ী দৃষ্টিতে আপাদমস্তক দেখে লুবনাকে।চিবুকের সাথে হাতের আঙুল ঠেকিয়ে তর্জনী দিয়ে গালের মাঝের কয়েকটা টৌকা মেরে কিছু ভাবার মতো অঙ্গভঙ্গি করে ফিচেল গলায় বললো—
“তোকে দেখে তো আমার মিষ্টির কথা একদম মনে পড়ে না,পাজি লবণাক্ত।”
সারহান তার গাল থেকে হাত সরিয়ে চুইংগাম নিয়ে যেই লুবনার মাথায় হাত দিবে তখনি সেন্টার টেবিলে থাকা পানির জগ হাতড়ে নিয়ে তা ঝপ করে পুরো ঢেলে দেয় সারহানের মাথায়।চমকে লাফিয়ে উঠে সারহান।হাতের বাঁধন শিথিল হতেই ভোদৌঁড় লাগায় লুবনা।সারহান চেচিয়ে বললো–
“লবণাক্ত,একবার হাতের কাছে পেয়ে নেই তোকে।”
রান্নাঘরে ব্যস্ত জান্নাহ্।তার সাথে আছে নিধি।আড়চোখে বারবার জান্নাহ্কে দেখছে সে।জান্নাহ্ বুঝতে পেরেও কোনো উচ্চবাচ্য করলো না।বাসায় মেহমান।অন্তরা মানা করার পরও শুধুমাত্র একটা আইটেম বানানোর অনুমতি পেয়েছে জান্নাহ্।গরুর মাংসের কালা ভূনা।জান্নাহ্ এর বাবা তাকে রান্না করে খাওয়াতো।এইটা খুব ভালো রান্না করতে পারে সে।চুপ্পি ভেঙে নিধি স্বশব্দে বললো–
“একটা কথা বলবো তোমাকে?
জান্নাহ্ অস্ফুট আওয়াজে বললো–
“হু।”
সাবলীল গলায় প্রশ্ন ছুঁড়ে নিধি–
“রাফাতকে তুমি আগে থেকেই চিনো?
চোখ বাকিয়ে তাকায় জান্নাহ্।তার চাহনি অদ্ভুত শান্ত।আলতো হেসে বললো–
“তোমার এমন মনে হলো কেন?
ভ্রু নাচিয়ে দ্বিধান্বিত গলায় বললো নিধি—
“মনে হলো।রাফাত যেভাবে…।”
তড়িৎ বেগে বলে উঠে জান্নাহ্—
“হ্যাঁ।চিনি রাফাতকে।সে আমাদের স্কুলের খন্ডকালীন শিক্ষক ছিলো।আপাতত নেই।এর বেশি কিছু না।”
আশ্বস্ত হতে পারলো না নিধি।ম্লাণ গলায় বললো–
“রাফাত ঢাকা চলে গেছে।জানো তুমি?
একটা বড় শ্বাস ফেললো জান্নাহ্।ত্রস্ত হয়ে রান্নাঘরে ঢুকে লুবনা।ব্যথায় মুখ ফুলিয়ে বললো—
“দেখো তোমার ওই শয়তান টারজানটা আমার হাতের কী অবস্থা করেছে!
জান্নাহ্ স্টোভটা নিভিয়ে লুবনার কাছে গিয়ে দেখে সারহান যেখানে ধরেছিলো জায়গাটা নীল হয়ে আছে।ব্যস্ত গলায় জান্নাহ্ বললো–
“এইসব কী করে হলো লুবনা আপু?
লুবনা তীর্যক গলায় রাগ নিয়ে বললো–
“ওই শয়তান সারহান করেছে।বিয়ে করলে কেন তুমি ওকে!শয়তানটা সারা জীবন আবিয়াত্তাই থাকতো।আবার বাবাও বানাচ্ছো!
ছোট্ট শ্বাস ফেলে জান্নাহ্।বিয়ের সময় এসেছিলো লুবনা।তখন থেকেই জান্নাহ্ এর প্রতি অনেক টান।নিজের বোনদের বিয়ের হয়ে যাওয়ায় এখানে এলেই সারাদিন প্রভু ভক্ত বিড়ালের মতো ঘুরতে থাকে জান্নাহ্ এর আশেপাশে।হয়তো সারহানকে অপছন্দ করে বলেই জান্নাহ্কে এতো পছন্দ লুবনার।
ঘরে এসে দেখে বিছানার উপর ভেজা টিশার্টটা ছুঁড়ে ফেলে রেখেছে সারহান।সারহানের এই অভ্যাস বদলানোর নয়।জামা কাপড় এখানে সেখানে ছুঁড়ে ফেলা।বিছানার উপর থেকে টিশার্টটা হাতে তুলে নিতে থমথমে গলায় প্রশ্ন করে জান্নাহ্–
“লুবনা আপুর সাথে এমন করলেন কেন?
সারহান কালো রঙের পাতলা টিশার্ট গায়ে গলিয়ে নিয়ে কড়া গলায় বললো–
“হাতের কাছে একবার পাই লবণটাকে।ওকে যদি না গলিয়েছি আজ!
চোখ তুলে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকায় জান্নাহ্।এ নতুন কিছু নয়।
ঘরে এসেই জান্নাহ্কে খুঁজতে থাকে লুবনা।জান্নাহ্ সারহানের ভেজা টিশার্ট টা বারান্দায় মেলে দিয়ে সবেই ঘরের দিকে পা রেখেছে।
লুবনাকে দেখে কোনো উল্লেখ্য যোগ্য প্রতিক্রিয়া করলো না সারহান।মোবাইলে দিব্যি ফ্রি ফায়ার খেলছে।লুবনার অগোচরেই একবার তাকে দেখে নেয় সে।ডিভানে পা ছড়িয়ে কুশনের মাথা দিয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে আছে।
লুবনা তার পাতলা ঠোঁট দুটোকে এদিক ওদিক ঘুরিয়ে ভেঙচি কাটে সারহানকে।দম দম করে পা ফেলে জান্নাহ্ এর কাছে গিয়ে আনম্র গলায় বললো–
“জান্নাহ্,চাচী তোমাকে ডাকছে।”
জান্নাহ স্মিতহাস্য অধরে বললো–
“তুমি যাও আমি আসছি।”
“আচ্ছা।”
ঘুরে দাঁড়িয়ে আবারো সারহানের দিকে নজর দেয় লুবনা।এইবারও কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না সারহান।সে মশগুল তার কাজে।ছোট্ট শ্বাস ফেলে সামনে এগোতে থাকে।চকিতে ধুম করে সামনের দিকে হেলে পড়ে লুবনা।সারহান ডিভানের সামনে থাকা সেন্টার টেবিলটাকে হালকা ধাক্কা মারে পা দিয়ে।আর তাতেই আঘাতপ্রাপ্ত হয় লুবনা।আর্তনাদ করে উঠে লুবনা।
“ও মাগো আমার পা!
ভাবলেশহীনভাবে শুয়ে আছে সারহান।কৌতুকমাখা গলায় বলে উঠে–
“রজনীগন্ধা,জালে লবণাক্ত ইলিশ ধরা পড়েছে।”
জান্নাহ্ ব্যস্ত হয়ে এসে অসহিষ্ণু গলায় বললো-
“তুমি ঠিক আছো তো?
ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে ফেলে লুবনা।জান্নাহ্ তাকে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দেয়।কান্নার তোড় বাড়তে থাকে লুবনার।কেঁদে কেঁদে বললো—
“শয়তান টারজান।”
সারহান মিচকি হেসে ফিচেল গলায় বললো–
“এখন তো শুধু আঙুল ভেঙেছে আরেকটা কথা বললে তোর পা ভেঙে ফেলবো লবণাক্ত ইলিশ।জান্নাহ্ কীরে!ভাবি বল।”
লুবনা ঘোর আপত্তি করে বললো—
“বলবো না।”
“লবণ কী ডেকচি!জিহ্বা কেটে ফেলবো তোর আমি আরেকবার নাম ধরে ডাকলে।”
লুবনা জোর গলায় অসহায় হয়ে বললো—
“দেখলে,দেখলে কী বললো তোমার ওই শয়তান বর।কেন বিয়ে করলে ওকে?তুমি বিয়ে না করলে সারাজীবন আয়বুড়ো থাকতো।শিক্ষা হতো ওই টারজানের।”
মুচকি হাসে জান্নাহ্।সারহান মাথাটা হালকা কাত করে মজার ছলে বললো—
“আমাকে তো কেউ বিয়ে করেছে।তোকে যে বিয়ে করবে তার জীবনটা নোনতা সমুদ্র বানিয়ে ফেলবি লবণ কী বাচ্চি।বের হ আমার ঘর থেকে।”
“শয়তান টারজান।উহু!কী অবস্থা করেছে আমার পায়ের!
জান্নাহ্ মৃদু গলায় পরম যত্নে বললো–
“তুমি বসো,আমি ড্রেসিং করে দিচ্ছি।”
“দাও দাও।বর পা কেটে দিয়েছে এইবার বউ চিকিৎসা করে দাও।”
সারহান স্বাভাবিক গলায় বললো—
“তাহলে আর কী ফ্রি চিকিৎসা পাবি।আয় তোর পা ভেঙে দেই।”
লুবনা মেকি কান্না করে বলে উঠে—
“দেখলে শয়তানটা কী বলছে!
জান্নাহ্ স্বাভাবিক গলায় বললো–
“শান্ত হও।”
চলবে,,,
#জান্নাহ্
#পর্বঃ৪২
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি
জান্নাহ্ এর দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে বসে আছে সারহান।তার অধরে বাঁকা হাসি আর চোখে একরাশ প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে।সোজা হয়ে বসে অত্যন্ত সাবলীল কিন্তু দৃঢ়চিত্তে প্রশ্ন ছুঁড়ে সারহান—
“আপনাকে দেখে কেরানির মেয়ে মনে হয় না।মনে হয় কোনো ডক্টরের মেয়ে।সবকিছুই যেনো ছোটবেলা থেকেই আপনাকে শিখিয়ে পড়িয়ে দিয়েছে?
জান্নাহ্ এর মধ্য কোনো ভাবাবেশ হলো না।বারান্দায় থাকা কিছু শুকনো কাপড় এনে তা ভাঁজ করতে করতে সরল গলায় নির্বিঘ্নে বললো—
“প্রাথমিক চিকিৎসা সবার জানা উচিত।তা ডক্টরের মেয়ে হোক আর কেরানির।”
সারহান প্রশ্রয়ের সুরে বললো–
“ওয়েল সেইড।আর আপনার ফোবিয়া?
ভাঁজ করা কাপড়গুলো আলমিরাতে গুঁছিয়ে রেখে স্বশব্দে বললো জান্নাহ্—
“প্রেগন্যান্সিতে ব্লিডিং এর ব্যাপার আছে।তাই আগে থেকেই ট্রিটমেন্ট নিচ্ছি।আপনি ইচ্ছে করলে শুভ্রা আপুকে জিঙ্গেস করতে পারেন।”
সারহানের হাতে একটা প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে দেয় জান্নাহ্।সন্দিগ্ধ দুই চোখ দিয়ে ভ্যাবলার মতো প্রেসক্রিপশন আদ্যোপান্ত দেখছে সারহান।মিচকি হেসে স্বগতোক্তি করে বললো—
“অস্কার তো আপনাকে দেওয়াই উচিত রজনীগন্ধা।ফুল প্রুভ প্ল্যাণ করেই নেমেছেন।আপনার বাবা না জানি আপনাকে কী খাইয়েছে!
পায়ের আঙুলের ব্যাথায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে লুবনা।তা দেখে হেসে কুটিকুটি জাবিন।হেসে হেসে বললো–
“কী হলো লবণ আন্টি!মামা বুঝি তোমার আঙুল ভেঙে দিলো!
লুবনা গর্জে উঠে বললো—
“এক থাপ্পড় মেরে দাঁত ফেলে দিবো।লবণ কিরে?
হা হা করে হেসে উঠে জাবিন।ভাইয়ের সাথে দাঁড়িয়ে ঠোঁটে হাত চেপে হাসে তিতি।পাশেই থমথমে মুখ নিয়ে দাঁড়ানো নিধি।জাবিন একগাল হেসে ফিচেল গলায় বললো–
“মামার সাথে লাগতে গেলে কেন!জানো না,তাকে ইটের টুকরো মারলে পুরো আস্ত ইট ছুঁড়ে মারবে তোমাকে।”
“জাবিন!
শুভ্রার ধমকানোতে ভ্রু ক্রুটি করে জাবিন।উষ্ণ গলায় শুভ্রা আবার বললো—
“এইসব কী ধরনের কথাবার্তা বড়দের সাথে?
জাবিন ভেঙচি কেটে হেয়ালি গলায় বললো—
“আমি কী করলাম!লবণ আন্টিইতো মামার সাথে লাগতে গেছে।”
শুভ্রা দাঁত কিড়মিড় করে বললো—
“আবার!
প্রাণখোলা হাসে জাবিন।হাঁটু ভেঙে বসে তিতিকে বললো—
“চল তিতি,পরীমা আর মামা আমাদের জন্য বাবু আনছে সেই খুশিতে আজ তোকে কুলফি খাওয়াবো।”
তিতি দাঁতের সাথে দাঁত পিষে ধরে অদ্ভুতভাবে হাসে।স্বশব্দে বললো–
“আচ্ছা।”
নিজের ঘরে অন্তরা তার জা এর সাথে খোশখল্পে মশগুল।জরুরি দরকার ছাড়া তেমন একটা মিল নেই তাদের।দরজায় দাঁড়িয়ে অনুমতি প্রার্থনা করে জান্নাহ্।
“ভেতরে আসবো আম্মা?
অন্তরা পান খাওয়া দুই ঠোঁট ছড়িয়ে বললো—
“আসো বউ।”
কোনোরকম ছন্দ পতন ছাড়াই অন্তরার পাশে গিয়ে বসে জান্নাহ্।লুবনার মা লতা অবাক গলায় বললেল—
“বাহ!পোয়াতি হইয়া তো বউমা আরো সুন্দরী হইছে।কী কও আফা?
অন্তরা মুখে একটা পাট ঠুসে নিয়ে ভজভজ করে বললেন—
“কেন!আমার বউমা এমনেই সুন্দরী।”
অন্তরার সাথে তাল মিলিয়ে লতা হেসে হেসে বললেন—
“কথা তো ঠিক আছে।কিন্তু বিয়ার সময় তো এই চিকন আছিলো।এহন তো গায়ে গতরেও বড় হইছে।আর কী ফর্সা হইছে দেখছো!চুলগুলানও মাশাআল্লাহ্!
অন্তরা দাম্ভিকতার সাথে হাসলেন।যেনো তিনি এভারেস্ট জয় করলেন।উচ্ছ্বাসিত গলায় বললেন–
“তা তুই ঠিক ই কইছোস।বউমা আগের তোন মেলা সুন্দরী হইছে।”
ছোট্ট দম ফেলে জান্নাহ্।এছাড়া কী আর কথা নেই!জান্নাহ্ সংকীর্ণ গলায় বললো–
“আম্মা,ডাকছেন আমাকে?
অন্তরা মাথা নেড়ে বললেন—
“হয় ডাকছি তোমারে।তোমার কাকিমা তোমারে কিছু কইতে চায়।”
জান্নাহ্ প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে লতাকে বললো–
“কিছু বলবেন কাকিমা?
সরস হাসলেন লতা।ফিকে গলায় বললেন—
“তুমি কিছু মনে কইরো না বউ।তোমার চাচা আইতে পারে নাই তার জরুরি কাম আছিলো।তয় তোমার লাইগা কিছু পাডাইছে সে।”
লতা জান্নাহ্ এর দিকে এক জোড়া বালা এগিয়ে দেয়।বেশ পুরু আর ভারি মনে হলো জান্নাহ্ এর কাছে।জান্নাহ্ একটু না অনেক বেশিই চমকালো।সারহান আর জান্নাহ্ এর বিয়ের সময়ও তার কাকা শশুড় আসেনি।তবে গয়না তিনি ঠিকই পাঠিয়েছেন।আর আজও তাই হলো।লতা জান্নাহ্ এর দুই হাতে বালা পড়িয়ে বললেন —
“দেহতো পছন্দ হয় কিনা?
জান্নাহ্ মিষ্টি হেসে আলতো গলায় বললো–
“পছন্দ হবে না কেন?জিনিস ত বড় কথা নয় কাকিমা।এর মধ্যে যে আপনাদের ভালোবাসা আর দোআ আছে তা আমার জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ।এইসব গয়না তো টাকা দিয়ে কত পাওয়া যায়।কিন্তু ভালোবাসা কী টাকার বিনিময়ে পাওয়া যায়!
লতা দারুণভাবে হাসলেন।উচ্চ গলায় গদগদ হয়ে বললেন–
“”একখান সোনার টুকরা নিয়া আইছো গো আফা।”
অন্তরা গর্বিত হাসলেন।জান্নাহ্কে এই বাড়ির বউ করে তিনি ভুল করেন নি।এইবার তার ছেলে তার কাছে ফিরে আসলেই হয়।
,
,
,
পাশাপাশি একে অপরের গা ঘেঁষে বসে আছে জান্নাহ্ আর সারহান।মোবাইলে স্ক্রল করে একের পর এক বেবি স্যুট দেখে যাচ্ছে।ছেলে মেয়ে তফাৎ নেই।গভীর মনোযোগ সেই দিকে জান্নাহ্ এর।সারহান পাশেই বসে আছে।জান্নাহ্ এর শরীরের মিষ্টি সৌরভে ঘ্রাণেন্দ্রিয় ঝাঁঝিয়ে উঠে তার।জান্নাহ্ এর কাঁধের দিকটায় নাক ঘষতে থাকে।পরম আবেশে জান্নাহ্ বললো—
“এই ড্রেসটা দেখুন।”
সারহান মত্ত অন্য কাজে।বিরক্তিকর গলায় জান্নাহ্ বলে উঠে–
“দেখুন না!
সারহান কিছু না শোনার মতো চমকে বললো–
“হু।কিছু বললেন?
“হুম।এইটা দেখুন।”
“দেখার দরকার নেই।আপনার যা যা পছন্দ হয় সিলেক্ট করুন।”
সারহানের কথায় কোনো প্রতিক্রিয়া না করে জান্নাহ্ ব্যস্ত হলো দেখায়।হঠাৎ করে অত্যধিক উৎফুল্লতা নিয়ে উঠে দাঁড়ায় সারহান।হকচকিয়ে যায় জান্নাহ্।মুখ ভর্তি প্রাণখোলা হেসে সারহান বললো—
“ভাবুন তো বাবু আসলে কী হবে!ওকে প্রথম আমি কোলে নিবো।উঁহু।আপনি।আরে ধুর! একজন নিলেই হলো।ইশ!কবে যে আসবে!
ঝট করে উঠে সারহানকে জড়িয়ে ধরে জান্নাহ্।অধর ছড়িয়ে খোলা শ্বাস নেয় সারহান।দুই হাতে জান্নাহ্কে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে আবেগী গলায় প্রশ্ন করে—
“কবে আসবে আমাদের পরী?
জান্নাহ্ গভীর আশ্লেষে সারহানের বক্ষস্থলে নাক ঘষে দ্বিরূক্তি করে বললো—
“যদি ছেলে হয়?
সারহান হাতের বেড় শক্ত করে ফিচেল গলায় বললো—
“তাহলে নেক্সট টাইম ট্রাই করবো।”
“ধুর!
একে অপরের সাথে মিশে বেশ কিছু সময় স্থির হয়ে থাকে সারহান জান্নাহ্।জান্নাহ্ আলগোছে তার অধরের স্পর্শ আঁকতে থাকে সারহানের বুকে।বাঁকা হেসে সারহানের বুকের মধ্যে ছোট্ট কামড় বসিয়ে দেয় জান্নাহ্।সারহান আরো চেপে ধরে জান্নাহ্কে।ফিসফিসিয়ে বললো—
“বড্ড সাহস বেড়েছে আপনার!আপনা টাইম ভি আয়েগা।সুদসহ আসল উঠিয়ে নিবো।”
ঘরে ঢুকেই নিজের দুই চোখ হাত দিয়ে ঢেকে ফেলে লুবনা।ব্যস্ত হয়ে বললো—
“আমি কিছু দেখিনি,আমি কিছু দেখিনি।”
সলজ্জ চোখ নিয়ে সারহানের কাছ থেকে সরে দাঁড়ায় জান্নাহ্।সারহান চোয়াল শক্ত করে তীর্যক গলায় বললো—
“ম্যানারলেস লবণ,কারো ঘরে ঢুকতে হলে পারমিশন নিতে হয়।জানিস না?
লুবনা শাহাদাত আর অনামিকা আঙুলের ফাঁক গলিয়ে তাদের দুইজনকে দেখে। চোখের উপর থেকে নিজের দুই হাত সরিয়ে নিজের রেফারেন্সে বললো—
“আমি কী জানি দুইজন যে দরজা খোলা রেখেই জড়াজড়ি শুরু করেছো!
সারহান তিক্ত গলায় বলে উঠে—
“লবণ কী বাচ্চি!
রজনীগন্ধা এই লবণাক্ত পঁচা ইলিশ যতদিন এখানে থাকবে ততদিন দরজা লক করে রাখবেন।ছিঃ!গন্ধে আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।”
লুবনা ফুঁসলে উঠে বললো—
“জান্নাহ্,তুমি এই সারহান হনুমানের কথা একদম শুনবে না।জংলী টারজান।”
সারহান তেড়ে গিয়ে লুবনার চুল খাবলা মেরে ধরে।কড়া গলায় বললো—-
“ভাবি বল।”
লুবনা চিৎকার দিয়ে উঠে অস্বীকার করে।সারহান আরো জোরে টেনে ধরে চুল।লুবনা আর্তনাদ করে বললো—-
“আহ!ছাড়ো সারহান ভাইয়া।চুল ছিঁড়ে গেলো আমার।”
জান্নাহ্ হতভম্ব হয়ে যায় সারহানের এমন কান্ডে।লোকটা কীসব আচরণ করে!লুবনার চোখে পানি জমে গেছে।কেঁদে দেয় লুবনা।জান্নাহ্ ঝাড়া মেরে সারহানের হাত সরিয়ে দেয়।কপট রাগি গলায় বললো–
“ছাঁড়ুন।কী করছেন!
সারহানের কোনো মায়া হলো না।ডিভানে গিয়ে হাত পা ছড়িয়ে বসলো।বার কয়েক লুবনার দিকে তাকাতেই দেখে ফুঁপাচ্ছে লুবনা।সারহান কৌতুকপ্রদ হয়ে বললো—
“রজনীগন্ধা,তিতির জন্য আনা চকলেটটা লবণের মুখে দিয়ে দিন।এমনভাবে কাঁদছে যেনো ওর চকলেট কেউ নিয়ে নিয়েছে।ঢং!
জান্নাহ্ কোনো কথার তোয়াক্কা না করে সারহানের কাছে এসে তার ঝাঁকড়া চুলগুলো এক মুঠ নিয়েই একটা টান দেয়।ভড়কে যায় সারহান।নাকের ডগায় বিরক্তি নিয়ে বললো–
“এইটা কী হলো!
জান্নাহ্ ফিচেল হেসে ছোট্ট করে বললো–
“টিট ফর ট্যাট।”
“দিজ ইজ নট রাইট রজনীগন্ধা।”
“কেন!রাইট নয় কেন?এখন দেখুন কেমন লাগে।”
“আমার বিড়াল আমারেই বলে ম্যাও।”
জান্নাহ্ চোখ ছোট ছোট করে নাক কুঁচকে বললো–
“আই এম নট বিড়াল।”
সারহান স্বশব্দে ঘোষনা করে—-
“বিল্লি।”
তাদের দুইজনের কথা কাটাকাটিতে কান্না থামে লুবনার।জান্নাহ্ আড়চোখে সারহানকে ইশারা করে বোঝানোর চেষ্টা করে লুবনার জন্যই এইসব করা।জান্নাহ্ মিষ্টি হেসে লুবনার দিকে তাকিয়ে মৃদু গলায় জিঙ্গেস করে—
“তুমি কী কিছু বলতে এসেছিলে?
লুবনা দুই হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে নাক টানতে টানতে ধরা গলায় বললো—
“চাচা তোমাকে খেতে ডাকছে।”
থামে লুবনা।সারহানের দিকে রোষভরা চোখে তাকিয়ে হিনহিনে গলায় বললো—
“এই হনুমানটাকে নিয়ে আসবে না।এটাকে ঘরে আটকে আসবে।”
“তবে রে লবণাক্ত!
সারহান ডিভান থেকে উঠার আগেই হাওয়াই মিলিয়ে যায় লুবনা।খিলখিল করে হেসে উঠে জান্নাহ্।তার হাসিতে মুচকি হাসে সারহান।
চলবে,,,