জান্নাহ্,পর্বঃ৫১,৫২

0
1591

জান্নাহ্,পর্বঃ৫১,৫২
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি
পর্বঃ৫১

কোলাহল মুক্ত রেস্তোরাঁয় বসে আছে ইহতিশাম আর সারহান।স্বচ্ছ কাঁচ গলিয়ে দিনের শেষ সূর্যের লালিমা রশ্মির একটা তীক্ষ্ম ফলা এসে হানা দিয়েছে তাদের টেবিলে।একটু পরেই ম্রিয়মান দিনের আলো গোধূলির মায়ায় জড়াবে।রেস্তোরাঁর পাশে থাকা কদম গাছটা নিরাক।তার নিচেই বেড়ির মধ্যে বসে আছে এক জোড়া কাপল।
রেস্তোরাঁর দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা আছে গোলাপ,বেলি আর চাঁপা ফুলের গাছ।বেলীর ফুলের তীব্র গন্ধে যেনো সরব হয়ে আছে সেই জায়গাটা।বসে থাকা সেই কাপলের মেয়েটি উন্মুখ দৃষ্টি দিয়ে অবলোকন করছে আর মুখ ফুলিয়ে নিঃশ্বাসের সাথে নিয়ে নিচ্ছে বেলি ফুলের সেই ঘ্রাণ।

স্থির চাহনি চাপা আক্রোশ একে অপরের প্রতি।বিন্দু বিন্দু করে জমে থাকা রাগ যেনো অথৈ সাগরে রূপ নিয়েছে ইহতিশামের।ইহতিশামের ঘাড়ের রগ টানটান হয়ে আছে।সামনের ব্যক্তিটাকে এতো দিন হৃদয়ে স্থান দিলেও আজ ইচ্ছে করছে সেখান থেকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে পদধূলিত করতে।নিজের ভেতরকার রাগকে নিজের মধ্যেই দমিয়ে নিলো ইহতিশাম।কোনোরকম চিন্তা ছাড়াই নির্ভয়চিত্তে বসে আছে সারহান।একটা তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে সামনের ফাইল থেকে একটা স্কেচ এগিয়ে দেয় ইহতিশাম।চোখের পাতা ঝাঁকিয়ে তা দেখার জন্য বলে সারহানকে।সারহান বেখেয়ালিভাবেই নাক কুঁচকে স্কেচটা হাতে নেয় ।দপদপ করে উঠে তার শিরা উপশিরা।চোখের পাল্লা দুটো প্রশস্ত করে শ্বাসের গতি বাড়িয়ে দেখতে থাকে।ইহতিশাম গভীর দৃষ্টিতে সারহানের প্রতিক্রিয়া দেখে।মুহূর্তেই বিগলিত হাসে সারহান।স্কেচটা হাতে নিয়ে খামখেয়ালি করে বললো—

“তো?

ইহতিশাম চেয়ার থেকে পিঠ আলগা করে ভারি গলায় শুধায়—

“তুই জানিস উনি কে?

মুখটা ফুলিয়ে জীভ নাড়ে সারহান।কোনো ধরনের ভাবাবেশ হলো না তার।শান্ত চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে আবার তাকায় ইহতিশামের দিকে।সরস গলায় বললো—

“আমি কী করতে পারি তোর জন্য?

খলবলিয়ে উঠে ইহতিশাম।রাগে ফেটে যাচ্ছে তার মস্তিষ্ক।গনগনে গলায় বললো—

“বুঝতে পারছিস না কী করবি!জান্নাহ্ এর মামা উনি।”

ফোঁস করে দম ফেললো সারহান।নির্ভীক গলায় বললো—

“তো?

রেস্তোরাঁর অনেকেই চেয়ে আছে তাদের দিকে।সারহানকে শান্ত মনে হলেও ঝড় বয়ে এনেছে ইহতিশাম।তার দারাজ গলার আওয়াজে কেঁপে উঠে বদ্ধ রেস্তোরাঁ।

ইহতিশাম জমাট গলায় বললো–

“ওই খুনগুলোর সাথে জান্নাহ্ এর মামা জড়িয়ে আছে।”

সারহান বিক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে বললো —-

“জানি।”

ইহতিশাম অধর ছড়িয়ে শ্বাস ফেলে সংক্ষুব্ধ গলায় বললো—-

“তাহলে নিশ্চয়ই এইটাও জানিস ওই খুনগুলো জান্নাহ্ ই করেছে।”

সেকেন্ডে ধরা কাঁপিয়ে ক্ষেপে উঠে সারহান।রেস্তোরাঁয় রাখা প্লাস্টিকের টেবিলটা সারহানের হাতের জোরালো ধাক্কায় কোথায় গিয়ে ঠেকেছে তা জানে না।কলকল শুরু হয় রেস্তোরাঁয়।ভীতসন্ত্রস্ত বাকি কাস্টমাররা হকচকিয়ে উঠে।সারহান ইহতিশামের কলার ঝাপটে ধরে প্রশ্বস্ত গলায় বললো—

“এইসবের মধ্যে আমার রজনীগন্ধাকে টানবি না।আমি সব জানি।আর জানি বলেই তোকে এই কেস দিয়েছি।”

ইহতিশামের বুক হাপড়ের উঠানামা করছে।মেঘের মতো গর্জন করে বললো—

“কী বলতে চাস তুই?

সারহান তার মোবাইল বের করে কিছু একটা করে।ইহতিশামের মেসেজ টোন বেজে উঠে।সারহান নির্বিঘ্ন গলায় বললো—

“একটা এম.এম এস. সেন্ট করেছি দেখ।তারপর বল কী করবি।”

ইহতিশাম তড়িৎ বেগে নিজের মোবাইল হাতে নেই।এম.এম.এস.দেখে যেনো তার পায়ে তলার মাটিই সরে গেলে।কোনো উপায়ন্তরের ধার সে ধারলো না। সারহানের চোয়ালে এক সজোরে ঘুসি লাগায়।বেকায়দায় সারহান দাঁড়িয়ে থাকলো না।সেও এক পাল্টা ঘুসি মেরে বসে ইহতিশামের নাক বরাবর।দস্তদস্তি শুরু হয় দুই বন্ধুর মধ্যে।রেস্তোরাঁর সার্ভিস বয়রা ভয়ে কাঁচুমাচু হয়ে যায়।ম্যানেজার কল করে পুলিশকে।ততক্ষনে একে অপরের রক্তে গোসল করে নিয়েছে দুইজন।ইহতিশামে সাদা শার্ট রক্তে মেখে গেছে।সারহানের কপাল আর ঠোঁট কেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।তার পোলোশার্টের বুকের মাঝে চাপড় বসায় ইহতিশাম।এক ঝটকায় নিজের মুখের সামনে টেনে ধরে বললো—

“তোর পাপের ঘড়া পূর্ণ হয়েছে সারহান।এইবার তোর প্রায়শ্চিত্তের পালা।হারানোর যন্ত্রণা কী এইবার বুঝবি তুই।”

সারহান উন্মত্ত হাসে নিজের ঠোঁটের রক্ত হাত দিয়ে স্লাইড করে নিয়ে আবার মুখ পুরে দেয়।সাবলীল গলায় বললো–

“আমাকে নিয়ে তোর ভাবতে হবে না।তুই নিজেকে নিয়ে ভাব।জান্নাহ্ আর তার মামা কেউই এই কেসে ইনভল্ব থাকবে না।তুই ওদেরকে এই কেস থেকে মুক্ত করবি।নাহলে মেহনাজের এই ভিডিও শুধু তুই কেন আম জনতা দেখবে।”

ইহতিশাম নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে পাঞ্চ করে সারহানের কানের একটু নিচে।ধপাস করে পেছনের চেয়ারের উপর গিয়ে পড়ে সারহান।উন্মাদের মতো হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়ায় সারহান।দুই রক্ত মাখা হাত দিয়ে নিজের জামা ঝাড়তে থাকে।শান্ত কিন্তু ভারি গলায় বললো–

“কষ্ট হচ্ছে তোর?আমারও হয়েছে।তোর কারণে রোজ এক ঘন্টার রাস্তা পায়ে হেঁটে আমাকে কোচিং করতে যেতে হতো।কলেজের টিচাররা আমাকে পড়াতে চাইতো না।আর যদি কোনো টিচার রাজীও হতো তাহলে কলেজের কোনো না কোনো স্টুডেন্ট আসতোই সেই কোচিংএ।ওই যে আমার দুর্ভাগ্য !তোর মতো বন্ধু পেয়েছি।সারাটা জীবন যাদের মা,বাবা জেনে এসেছি তারাও আমায় ধোঁকা দিলো।যেই বোনকে সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করেছি সেই আমার জীবনটা নষ্ট গলির বানিয়ে দিলো।আর তুই!
তোর আর আমার হিসেব শেষ।তুই এই কেস থেকে মামা আর জান্নাহ্কে ক্লিয়ার করবি।আর আমি মেহনাজকে।”

ইহতিশাম বজ্র কন্ঠে বললো–

“আরে গাধা,তুই যাকে বাঁচানোর কথা বলছিস মেহনাজ তারই মেয়ে।জান্নাহ্ এর আপন মামাতো বোন মেহনাজ।”

সারহানের বিস্ময় যেনো আকাশ ছুঁলো।গা গুলিয়ে উঠলো তার।যেনো এখনই সব বেরিয়ে আসবে ভেতর থেকে।কাঁপতে থাকে সারহান।মিহি গলায় বললো—

“কী বলছিস তুই?
এটা হতে পারে না।”

চেয়ারের উপর ধপাস করে বসে পড়ে ইহতিশাম।চিৎকার করে পুরো দুনিয়া উল্টে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে তার।নিজের চুলগুলো টেনে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বললো—

“আমি ঠিকই বলছি।মেহনাজ জান্নাহ্ এর ই বোন।কী করে পারলি এইসব করতে তুই!কী করবি এখন তুই!জান্নাহ্ যদি জানতে পারে!

কালবৈশাখী ঝড়ের মতো তেড়ে এসে ইহতিশামের কলার ধরে তাকে ঝাঁকাতে থাকে সারহান।তীব্র রোষ নিয়ে বললো—

“কে বলবে তাকে!তুই?ভুলে যাসনা ওই ভিডিও এখনো আমার কাছে।জান্নাহ্ ছাড়া কারো কোনো মূল্য নেই আমার কাছে।যদি তুই জান্নাহ্কে এইসব বলিস তাহলে আমি..।”

দুই হাতে সারহানের বুকে ধাক্কা মারে ইহতিশাম।প্রদৃপ্ত গলায় বললো—

“কতোদিন লুকিয়ে রাখবি তুই? একদিন না একদিন তো জান্নাহ্ জানবেই যে ওর বোনের জীবনটা যে নষ্ট করেছে সে আর কেউ নয় তারই প্রাণপ্রিয় স্বামী।তখন কী হবে ওই মেয়েটার?

সারহান ভয় আর আবেগ নিয়ে বললো–

“কিচ্ছু হবে না।আমি তার কিছু হতে দিবো না।সব হারিয়ে আমি জান্নাহ্কে পেয়েছি।ওই একজনই আছে যাকে আমি সত্যিই ভালোবাসি।যে আমাকে ভালোবাসে।ছাড়বো না আমি তাকে।পৃথিবীর কোনো কিছুর বিনিময়েও না।আমার রজনীগন্ধা আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারে না।কোথাও না।”

শেষের কথাগুলো বলতে বলতে গলা ধরে আসে সারহানের।তার সমস্ত পৃথিবী যেনো শূন্য হয়ে গেলো এক নিমিষে।সে তার রজনীগন্ধাকে ছাড়া বাঁচবে না।সত্যিই বাঁচবে না।
,
,
,
দরজা খুলতেই ভ্যালভ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মেহনাজ।ইহতিশামের সাদা শার্ট রঙিন হয়ে আছে।তটস্থ হয়ে বললো–

“এই অবস্থা কী করে হলো তোমার?

ইহতিশাম কোনো জবাব দিলো।ব্যস্ত পা দুটো চালিয়ে বেডরুমে গিয়ে বিছানায় বসলো।মেহনাজ দরজা লক করে উদ্বেলিত গলায় বললো—

“বসলে যে!চলো হসপিটালে যাই।”

ইহতিশাম খাপছাড়া সুরে বললো—

“এইটুকুর জন্য হসপিটালে যেতে হলে তোমাকে বিয়ে করেছি কেন?

মেহনাজ কোনো প্রত্যুক্তি করলো না।ওদের বিয়ে হয়েছে আজ দুই দিন।কোনোরকম আড়ম্বর ছাড়াই বিয়েটা করে ইহতিশাম।রাগে ইহতিশামের জ্বলন্ত চোখ দিয়ে যেনো অগ্নিনালা বিচ্ছুুরিত হচ্ছে।হাঁটু গেড়ে তার সামনে বসে মেহনাজ।নরম হাতে ইহতিশামের শার্টটা খুলে প্রশ্ন করে—

“কার সাথে মারামারি করলে?

ইহতিশাম নিরুত্তেজ গলায় বললো—

“সারহানের সাথে।আহ!আস্ত ইয়ার।মেরে ফেলবে নাকি?

মেহনাজ অনুযোগের সুরে বললো—-

“সরি,সরি।”

ইইতিশামের কাঁধের দিকটায় কাচ গেথে আছে।সেইটা বের করতেই ব্যথামিশ্রিত আওয়াজ করে সে।মেহনাজ পরম যত্নে তা ড্রেসিং করতে থাকে।ভাগ্যিস ইহতিশামের বাবা,মা বাসায় নেই।থাকলে হৈ হুল্লোড় করে ফেলতো।মেহনাজ স্বাভাবিক গলায় শুধায় —

“মারামারি করলে কেন?

ইহতিশাম ক্ষোভ নিয়ে তাচ্ছিল্য করে বললো—

“ওই শালা একটা গাধা।এতো জেদ!জেদের বসে কখন কী করে কিচ্ছু বুঝতে পারে না।আস্তে ইয়ার।”

ড্রেসিং করতে গিয়ে জ্বালা হয় ইহতিশামের।মুখবিকৃত করে সে।মনোযোগ সহকারে নিজের কাজ করছে মেহনাজ।মিহি গলায় প্রশ্ন করে ইহতিশাম—-

“তোমার বাবাকে বিয়ের কথা বলেছো?

মেহনাজ নমনীয় গলায় প্রত্যুত্তর করে—

“বলেছি।”

“কী বললো?

“খুশি হয়েছেন।বললো,জান্নাহ্ নাকি তোমার কথা বাবাকে বলেছিলো!

ইহতিশাম তাল মিলিয়ে বললো—

“চার বছর আগে যখন জান্নাহ্ এর ছবি তুমি আমাকে দেখিয়েছিলো তখন তো ও অনেক ছোট।সারহানের বাসায় দেখে কেন যেনো মনে হলো ওকে আমি কোথাও দেখেছি।তাই কায়দা করেই কার্ডটা দিয়েছিলাম।”

মেহনাজ মিচকি হেসে রসালো গলায় বললো—

“যদি অন্য কেউ হতো তাকে বিয়ে করে নিতে?

ইহতিশাম স্বাভাবিক চোখে তাকিয়ে কড়া গলায় বললো—

“একজনকে ভালোবেসে আরেকজনকে বিয়ে করি কী করে!

ভালো করে রক্ত মুছে তা পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিয় মেহনাজ।অধৈর্য হয়ে উঠে ইহতিশাম।কাভার্ড থেকে একটা অফ হোয়াইট রঙের শার্ট বের করে তা গলিয়ে নেয় গায়ে।ফাইলগুলো হাতে নিয়ে ক্ষীন গলায় প্রশ্ন ছুঁড়ে—

“সারহান কে ক্ষমা করতে পারবে তো?

ভ্রু কুঞ্চি করে মেহনাজ।একটা পিচাশকে কী করে ক্ষমা করা যায়!

ইহতিশাম শান্ত পায়ে মেহনাজের কাছে এসে দাঁড়ায়।তার কপালে গাঢ় চুমু খেয়ে বলে—

“সারহান ভুল করেছে।ওর আজকের এই জীবনের জন্য কোথাও না কোথাও আমিই দায়ী।ও জীবনে অনেক কিছু সয়েছে মেহনাজ।একদম একলা ও।জান্নাহ্কে নিয়ে নতুন করে বাঁচতে চায় ও।তোমার সাথে যা করেছে সেই জন্য আমি ওকে ক্ষমা করবোনা।কিন্তু একজন মানুষ হিসেবে,বন্ধু হিসেবে আমার দায়িত্ব ওকে এই জীবন থেকে বের করে আনা।তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা সেই প্রথম দিনের মতো যার একবিন্দুও কমে নি।আশা করবো তুমি আমার কথা বুঝতে পারছো।”

শশব্যস্ত হয় পা বাড়ায় ইহতিশাম।উদ্বিগ্ন কন্ঠে মেহনাজ বললো—

“কোথায় যাচ্ছো?

“স্যারের কাছে।সারহান আমার কাছে একটা জিনিস চেয়েছে।আজ এতো বছরে আমি আমার ভুলের মাশুল দিতে যাচ্ছি।তা যেনো দিতে পারি।খেয়ে নিও তুমি।ফিরতে লেট হবে আমার।বাই।”

চলবে,,,

#জান্নাহ্
#পর্বঃ৫২
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি

নিকষকালো আকাশে চোখ মেলে আছে কুসুম রঙের চাঁদ।ফুরেফুরে বাতাস বইছে।জমাট কালো আঁধার ঘনিয়ে আরো আঁধারে পরিণত হচ্ছে।রাস্তায় দুই একটা কুকুর লেজ নাড়িয়ে দৌঁড়াচ্ছে।জনমানবশূন্য রাস্তায় ভূতগ্রস্তের মতো দাঁড়িয়ে আছে সোডিয়ামের বাতি।

ফ্ল্যাটের লক খুলে ভেতরে ঢুকে সারহান।তার কপালের আর ঠোঁটের রক্ত শুকিয়ে কালসে হয়ে আছে।হাত বেয়ে গড়িয়ে পড়া রক্তের স্মিত ধারা কেমন লেপ্টে আছে।গলায়,চিবুকে লেগে আছে শুষ্ক লহু।

দরজা লক করেই কাউচে ধপ করে বসে সারহান।পুরো শরীরটা ছেড়ে দেয় সারহান।বিষন্ন দুই চোখ নিমীলিত করে মাথাটা পেছন দিকে হেলিয়ে দেয়।জীবন চলার পথে ভুল করতে করতে আজ ভীষণ ক্লান্ত সারহান।আপন মানুষের ধোঁকায় জর্জরিত তার দেহপিঞ্জর।বধির হয়ে আসছে তার কান।সে কিছু শুনতে চায়,চায় না দেখতে এই বিদঘুটে পৃথিবী।চকিতে সারহান একটা বাচ্চার খলখলানি শুনতে পায়।আচম্বিত হয় সে।অমিলীত চোখ জোড়া দিকভ্রান্তের মতো এদিক ওদিক ঘুরিয়ে একটু ধাতস্থ হয়ে শব্দটা খুঁজে।তড়াক করে উঠে সারহানের মস্তিষ্ক।তার সামনে কিছুদূরে একটা বাচ্চা বসে আছে।ঝাঁকড়া চুলে ঢেকে আছে বাচ্চাটির কপাল।একপাশের চুল একটু বড় হওয়ায় চোখের একপাশ ঢেকে আছে।গাঢ় লাল দুটো ঠোঁট ছড়িয়ে সে খিলখিল করে হাসছে।তার হাসিতেই যেনো দমকা হাওয়া বয়ে গেলো সারহানের শরীরে।ধীম ধীম করে উঠে দাঁড়ায় সারহান।বিড়ালপায়ে দ্বিধা নিয়ে সামনে এগুতে থাকে।সারহানের ভেতরকার সত্তা কী যেনো বলছে।বাচ্চাটি এক হাতের উপর অপর হাত দিয়ে চাপড় মেরে চোখ বন্ধ করে হাসছে।সারহান মন্ত্রমুগ্ধের মতো চেয়ে আছে সেই ছোট্ট প্রাণটির দিকে।মুহুর্তেই খলখল করে উঠে বাচ্চাটি।কেঁপে উঠে সারহান।হাঁটু গেড়ে বাচ্চাটির সামনেই বসে।বাচ্চাটি হাসি থামায়।চোখ দুটো স্বাভাবিক রেখে হালকা ভ্রু কুঁচকায়।যেনো সে অবাক করা কিছু দেখেছে।

সারহান দুই হাঁটু মেঝেতে ঠেকিয়ে তার উপর হাত ঠেসে রেখেছে।তার মাথাটা সামনের দিকে ঝুঁকানো।বিমুগ্ধচিত্তে দেখে যাচ্ছে বাচ্চাটিকে।সারহানকে হতভম্ব করে দিয়ে বাচ্চাটি হঠাৎ করে ঝুমঝুম করে হেসে উঠে।হকচকিয়ে যায় সারহান।দ্বিধান্বিত হয়ে সত্য মিথ্যের প্রভেদ করতে ধীরেসুস্থে নিজের হাতটা বাচ্চাটির খুব কাছে নিয়েও আবার পিছিয়ে নেয়।অত্যন্ত শান্ত,নরম আর আবেগী গলায় বললো—

“সারজান!

বাচ্চাটি উচ্ছলিত হাসে।দাঁতের সাথে দাঁত চেপে নিজেকে এপাড় থেকে ওপাড় ঘুরাতে থাকে যাতে করে তার পেটের উপরিঅংশ নড়ছে।মুখ দিয়ে অস্ফুট আওয়াজ করে বাচ্চাটি,”ব্বা,ব্বা।”

খুশিতে ভরে যায় যেনো সারহানের হৃদপিন্ড।তার থমকে যাওয়া শ্বাস বেগতিক হারে ছুঁটতে থাকে।ঘোড়দৌঁড় শুরু হয়েছে তার মস্তিষ্কে।হৃদয়ের সুপ্ত অনুভূতিগুলো গুটগুট করে বেরিয়ে আসতে চাইলো।তরতর করে এই অদ্ভুত শিহরণ আবিষ্ট করে ফেললো সারহানকে।বাচ্চাটি আবারো বললো,”ব্বা,ব্বা।”

চোখে হাসে বাচ্চাটি।এই হাসিতেই যেনো পৃথিবীর সমস্ত সুখ খুঁজে পেলো সারহান।আদুরে গলায় বললো—

“সারজান,পরী আমার।”

বাচ্চাটি আবার হাসলো।এইবার বাচ্চাটি তার চোখের উপর চুলগুলো রেগে গিয়ে দুই হাত দিয়ে সরালো।বাবাকে ভালো করে দেখলো সে।ডেকে উঠে,”ব্বা,ব্বা।”

সারহান মুখ ফুলিয়ে হাসে।তার গা ভর্তি খুশি ঝনঝন করছে।কোনো কিছু না ভেবেই বাচ্চাটিকে জড়িয়ে ধরতে গিয়ে থমকে যায় সারহান।নিজের হাতকে দেখে।ঘন কালো রক্ত।সারহানের নাক বেয়ে ঘাম পড়লো তার হাতে।সংকীর্ণ দৃষ্টিতে তা দেখে সারহান।দুধে আলতা গায়ের রঙের বাচ্চাটির ঠোঁট ঠিক তার রজনীগন্ধার মতো।আর চোখগুলোও তার মতো করেই হাসে।চুলগুলো সারহানের মতো।বেপরোয়া।আর ওই যে নাকটা,চিকন বাঁশির মতো।মায়ের নাক পেয়েছে।তাহলে কী এই তার সারজান! রজনীগন্ধা আর তার ভালোবাসার প্রতীক।

বাচ্চাটি সারহানের দিকে কিঞ্চিৎ গম্ভীর চাহনি দেয়।সারহানের হাতে,মুখে লেগে থাকা রক্তে সে কিছু একটা আঁচ করতে পারে।রক্তিম ঠোঁট দুটো ফুলিয়ে নিমিঝিমি করে তাকায়।আবার টানটান করে ঠোঁট।তা ছড়িয়ে মিষ্টি করে বললো,”ব্বা,ব্বা।”

সারহান আন্দোলিত হয় তার ছোট্ট সারজানের আধো বুলিতে।ভরাট চোখে চেয়ে রয় সে।ঘরের কোথাও জান্নাহ্ এর অস্তিত্ব নেই।একে অপরকে দেখছে সারজান আর সারহান।সারহান গাল ভর্তি খুশি নিয়ে আসন পেতে বসে।তার ছোট্ট সারজান তাকে বারবার ছুঁতে চায়।সারহান নিজের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দেয় এইবার।একবার ছুঁয়ে দেখবে সে তার সারজানকে।কিন্তু সারহানের ভেতরকার অপরাধি সত্তার টনক নড়ে উঠে।
নাহ,সে ছোঁবে না সে সারজানকে।এই পবিত্র প্রাণটাকে সে অপবিত্র করবে না।সারহান করুন গলায় অনুযোগের সুরে বললো—

“সারজান,পাপাকে ক্ষমা করবে না?

মিটিমিটি করে তাকায় সারজান।চোখে হাসে সে।সারজান হাসতেই তার দু’চোখ বন্ধ হয়ে চোখের দুই কোণে তারকার মতো হয়।সারহান আপ্লুত গলায় বললো—

“ভালোই করেছো সারজান।তোমার পাপা ভালো না।একদম পঁচা।তাই বুঝি চলে গেছো তাকে ছেড়ে?পাপা একটুও ভালো না।”

সারজান গম্ভীর হয়ে যায়।সে তার বাবাকে দেখে।তার বাবার চোখে অথৈ জল খেলছে।সারজান বিক্ষিপ্ত চোখে তাকায়।নিচের ঠোঁট টা উল্টে ভ্যা ভ্যা করে চোখ কুঁচকে কাঁদতে থাকে।সারহান অধৈর্য হয়ে পড়ে।উদ্বেলিত গলায় বললো–

“কাঁদে না পরী।দেখো পাপাকে।কাঁদে না আমার সোনা।পাপা লাভস ইউ।ইউ আর মাই এঞ্জেল।”

সারহানের শ্বাস রোধ হয়ে আসে।এতো কাছে পেয়েও সে তার মেয়েকে ছুঁয়ে দেখতে পারছে না।এর চেয়ে বিষাক্ত যন্ত্রণা আর কিছু হতে পারে না।ডুকরে কেঁদে উঠে সারহান।আচমকা সারহানের ভেতরকার সুপ্ত মানব বেরিয়ে আসে। রুষ্ট গলায় বললো–

“কীরে কাঁদছিস?

সারহান ঝাপসা চোখে পেছন ফিরে তাকায়।কাউচের দক্ষিন পাশে থাকা ক্যাবিনেটের সাথে হেলে দাঁড়িয়ে আছে সেই মানব।তার চোখে মুখে একরাশ তাচ্ছিল্য।পৈচাশিক হেসে আবার বললো—

“কষ্ট হচ্ছে তোর?এই তো সবে শুরু সারহান জেইদি।”

সারহান বিক্ষিপ্ত গলায় বলে–

“কিসের শুরু?

“তোর দহনের।জ্বলে,পুড়ে নিঃশেষ হবি তুই।”

সারহান কাঁপা গলায় বললো—

“নিঃশেষ তো হয়ে গেছি আমি।সব হারিয়েছি আমি।আমার সন্তানকেও হারিয়েছি আমি।”

সুপ্ত মানব খিক খিক করে হেসে বললো—

“এখনো অনেক বাকি।তোর রজনীগন্ধা।”

সারহান চিৎকার করে উঠে—

“নাহ।আমার রজনীগন্ধা আমাকে ছেড়ে যেতে পারে না।”

সুপ্ত মানব বাঁকা হাসলো।দুই হাত পকেটে পুরে শিষ বাজিয়ে উল্লাস প্রকাশ করে বললো—

“কী করে আটকাবি তাকে?জান্নাহ্ যখন জানবে তুই ওর বোনের সাথে নোংরামি করেছিস তখন কী তোকে ও ক্ষমা করবে?

সারহান অনুযোগের সুরে ক্ষীন গলায় বললো—

“আমি ভুল করেছি।না জেনে ভুল করেছি আমি।অতীতে করা ভুলের কারণে আমি আমার রজনীগন্ধাকে হারাতে পারবো না।”

সুপ্ত মানুষ ফোঁস করে দম ফেলে বললেন—

“হায়রে,ভাবিয়া করিয়ো কাজ করিয়া ভাবিয়ো না।গুনীজন বলে।আর মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে অপদার্থ চিজ।ভালো কথা কানে নেয় না।তিন বছর আগে যদি নিজের রাগকে দমন করতি তাহলে আজ এতো বড় বাঁশটা খেতি নি।এখন কী হবে রে সারহান পাগলা!

সারহান বড় বড় শ্বাস ফেলতে থাকে।রুদ্ধ কন্ঠে বললো—

“আমি কিচ্ছু জানি না।আমার রজনীগন্ধা আমাকে ছেড়ে যেতে পারে না।কোথাও যেতে দিবো না আমি তাকে।কোথাও না।আমার নিঃশ্বাস থাকতে সে আমাকে ছেড়ে যেতে পারে না।ভুল করেছি আমি।তার শাস্তিও পেয়েছি।সব হারিয়েছি আমি।কিছু নেই আমার।ওই রজনীগন্ধাই আমার সব।আমার আত্না,আমার প্রান,আমার হৃদমোহিণী।”

সারহানের কানে বেজে উঠে সারজানের খলখলানি।সামনে তাকায় সে।সারজান অস্ফুট শব্দ করে,”উুঁ,উুঁ।
আমোদিত হয় সারহান।সেই সুপ্ত মানুষ উসহাস করে বলে উঠে—

“সন্তান হারিয়েছিস,এইবার অস্তিত্ব হারাবি।তুই সারাজীবন একাই রয়ে যাবি রে সারহান।একা।
কথায় আছে না,
“এসেছি একা,যেতে হবে একা
কেন এতো মিছে মায়া?
মায়ার পৃথিবী বেঁধেছে মায়ায়
ছিন্ন হবে তার ছায়া।”

সারহান স্বশব্দে বলে উঠে—

“নাহ,নাআআআ।এ হতে পারে না।আমার রজনীগন্ধা শুধুই আমার।আমার প্রাণদেবী।আমার হৃদস্পন্দন।আমার অন্ধকার জীবনের চন্দ্রকিরণ।”

সারহানের ভেতরকার সেই বিদ্বেষী মানব বেখেয়ালিভাবে পুরো ঘরে হাঁটতে থাকে আর বাঁকা হেসে আনমনে শিষ বাজাতে থাকে।সেই আওয়াজ গরম লোহার মতো বিঁধে যাচ্ছে সারহানের কানে।সারহান উদ্ভ্রান্তের মতো তাকাতেই হালকা হতে থাকে তার অবয়ব।সারহান ব্যস্ত হয়ে সারজানের দিকে তাকায়।অধর ছড়িয়ে মুক্ত শ্বাস টেনে নিয়ে হাত বাড়াতেই সারজানের ছোট্ট শরীর হাওয়ায় একটু একটু করে মিলিয়ে যেতে থাকে।চিৎকার করে ডেকে উঠে সারহান—

“সারজান,পরী আমার।”
,
,
,
দরজা খুলেই আকাশ গুড়ুম রাফাতের মা রিতার।তার সামনেই বরফমূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে জান্নাহ্। অবাক বিস্ময় বলে উঠে–

“জান্নাহ্!

জান্নাহ্ ধীর গলায় বললো—

“কেমন আছো আন্টি?ভেতরে আসতে দেবে না?

রিতা যেনো হাতে চাঁদ পেলো।সাদরে গ্রহণ করে নেয় জান্নাহ্কে।কিন্তু চাঁদের চোখে যে জল!
জান্নাহ্ এর কোমল,শুষ্ক,জীর্ণ চেহারা দেখে কষ্ট পেলেন রিতা।গরগর করে বললেন—

“এই কী অবস্থা তোর?কোথায় ছিলি এতোদিন?

জান্নাহ্ ঝাঁপটে ধরে রিতাকে।ঝমঝম করে বর্ষাতে থাকে তার চোখের নীর।জান্নাহ্ এর পিঠের উপর হাত বুলাতে থাকে রিতা।মখমলে গলায় বললেন—

“কী হয়েছে তোর?কোথায় ছিলি তুই?তোর রিফাত আঙ্কেল কতো খুঁজেছে তোকে।রাফাতও ফিরে এসেছে।”

জান্নাহ্ কান্নার তোড়ে কিছু বলতে পারলো না।রাফাতের বাবা রিফাত নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এলেন।আচমকা জান্নাহ্কে দেখে হতবুদ্ধি হয়ে গেলেন তিনি।মেয়েটা অনেক বদলে গেছে।মায়াবী মুখটা কেমন মলিন হয়ে আছে।শরীরটাও কেমন ভেঙে পড়েছে।চোয়াল দেবে হাড় দেখা যাচ্ছে।বিভ্রান্ত গলায় বললো—

“জান্নাহ্!

জান্নাহ বরফ ঠান্ডা গলায় বললো–

“আঙ্কেল!

“কোথায় ছিলি তুই?হঠাৎ করে কোথায় চলে গেলি?

জান্নাহ্ ধরা গলায় বললো–

“রাফাত কোথায়?আমি ওর সাথে দেখা করবো।”

জান্নাহ্ কিছু না বলেই রাফাতের ঘরের দিকে দৌঁড় লাগায়।এই বাড়ির সব চেনা জান্নাহ্ এর।শৈশবের অনেকটা সময় সে এখানে কাটিয়েছে।

রাফাতের দরজার সামনে গিয়ে থমকে যায় জান্নাহ্।সেই পরিচিত ঘর,সেই পরিচিত দেয়াল।সেই অতিপরিচিত মানুষ।কিন্তু তা আজ নতুন।নতুন করে চেনা হবে,জানা হবে।আলতো হাতে করাঘাত করে জান্নাহ্।বারকয়েক করাঘাত হলেও কেউ কথা বললো না।রিতা আর রিফাত উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে।কখন খুলবে এই বদ্ধ দ্বার।

কিছুসময় পর একটা কর্কশ কন্ঠ শুনতে পায় জান্নাহ্।

“বলেছি না কেউ আসবে না আমার কাছে।চলে যাও,চলে যাও তোমরা।”

জান্নাহ্ কান্না গিলে রাফাতের মা,বাবার দিকে তাকায়।তারা অসহায়ভাবে তাকিয়ে আছে।স্বাভাবিক গলায় মিহি সুর তুলে জান্নাহ্–

“রাফাত,আমি জান্নাহ্।ওপেন দ্যা ডোর প্লিজ।তোমার রেড চেরি এসেছে দেখো।”

ফট করেই দরজা খুলে যায় সেকেন্ডেই।ভরাট দৃষ্টিতে দমবন্ধ করে তাকিয়ে আছে রাফাত।জান্নাহ্ তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে।একটা বিদঘুটে গন্ধ এসে তার নাকে লাগে।এ কাকে দেখছে সে!
মনে হচ্ছে প্রাচীন যুগের কোনো আদিমানব! একটা হতপ্রায় জীব।রাফাতের পুরো মুখের মধ্যে শুধু তার মায়াভরা চোখ দুটোই বুঝা যাচ্ছে।বাকিসব এলোথেলো বাড়ন্ত চুল আর দাঁড়ি গোফে ঢেকে আছে। জীর্ণশীর্ণ দেহে একটা ডুলডুলে টিশার্ট পরে আছে রাফাত।মুখের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতের দাগ।হাতের কোথাও কোথাও এখনো তাজা রক্ত লেগে আছে।জান্নাহ্ স্থির দৃষ্টিতে তার বেস্ট ফ্রেন্ডকে দেখে।যাকে দেখলে তার ক্লাসমেটরা হা করে গিলে নিতো।রাফাতের সাথে কথা বলার জন্য তার সাথে বন্ধুত্ব করতো।

আর সেই বেস্ট ফ্রেন্ডকে দেখে জান্নাহ্ যেনো চোখের পলক ফেলতেই ভুলে গেলো।

জীবন বড় কঠিন।ক্ষণে ক্ষণে বদলায় তার রূপ।জীবন কাটানো হয়তো সোজা কিন্তু তাকে বোঝা মুশকিল।

চলবে,,,

(বিঃদ্রঃ
আগামী পর্বের শুরু থেকেই থাকবে জান্নাহ্ এর অতীত।তাই মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।হয়তো আপনাদের মনে উদ্ভুত সকল প্রশ্নের জবাব পাবেন।ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here