জান্নাহ্,পর্বঃ৫৩,৫৪

0
1551

জান্নাহ্,পর্বঃ৫৩,৫৪
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি
পর্বঃ৫৩

হসপিটালের করিডোরে চিৎকার চেঁচামেচিতে হুলস্থুল পরিবেশ।একটা অ্যাকসিডেন্ট পেশেন্ট আনা হয়েছে।কিন্তু কর্তব্যরত ডক্টটরা পেশেন্টকে এডমিট করতে অস্বীকৃতি জানান।আর তাতেই ক্ষেপে গিয়ে পেশেন্টকে নিয়ে আসা যুবকটি বর্তমান শিফটের মেডিসিন ডক্টর অতনুর গলা চেপে ধরেছে।রাগে অগ্নিশর্মা ছেলেটির এমন নির্ভীক কাজে হসপিটালের বাকিরা ভড়কে যায়।তারা বোবা দর্শকের মতো চেয়ে আছে।
ডক্টর অতনু রুদ্ধ গলায় ভাঙা ভাঙা শব্দে আওড়ালেন—

“দেখুন মি.আআপনি কিইন্তু বাড়াবাড়ি করছেন!

ছেলেটি চোয়াল শক্ত করে খেমটি মেরে বললো—

“আমি যা বলেছি তাই করুন।যদি মেয়েটার কিছু হয় তাহলে পুরো হসপিটাল আমি সিজ করে দিবো।”

ডক্টর অতনু কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন—

” এটা পুলিশ কেস।পুলিশ না আসা পর্যন্ত আমরা পেশেন্টকে এডমিট করতে পারবো না।”

ছেলেটি ডক্টর অতনুর কাঁধের দুই পাশে চাপড় মেরে ধরে থমথমে গলায় বললো—

“হিট এন্ড রান কেস।আই নো।পুলিশ আসলে তাদের সাথে আমি বুঝবো।কিন্তু ততক্ষন অপেক্ষা করলে মেয়েটি মরে যাবে।ওর ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করুন।”

তৎক্ষণাৎ হার্ট স্পেশালিস্ট ডক্টর রিফাত ত্রস্ত পায়ে এসে চকিত গলায় বললেন—

“হোয়াট ইজ দিস?হচ্ছেটা কী এখানে?

ছেলেটি তার হাতের বাঁধন শিথিল করে ডক্টর রিফাতের দিকে তাকায়।শান্ত গলায় জানায় সবটা।ডক্টর রিফাত আশ্বস্ত করলেন ছেলেটিকে।ডক্টর অতনুকে বললেন মেয়েটার ট্রিটমেন্ট শুরু করতে।তিনি তাই করলেন।ছেলেটি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।ডক্টর রিফাতের কাছে গিয়ে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সরস গলায় বললো—

“আই এম রিয়েলী সরি।আসলে মেয়েটার অবস্থা ভালো নেই।যত দেরী হবে তার মৃত্যু ঝুঁকি বাড়বে।তাই বাধ্য হয়েই…।”

ডক্টর রিফাত চোখ দিয়ে আশ্বস্ত করলেন।একজন নার্স একটা ফর্ম নিয়ে এলেন।ছেলেটি তা পূরণ করে।নার্স যখন কৌতূহলী হয়ে ছেলেটিকে জিঙ্গেস করে মেয়েটির আপনার কী হয়,ছেলেটি স্মিত হাসলো।বললো,”রক্তের সম্পর্কের ঊর্ধ্বেও সম্পর্ক হয়।মনুষ্যত্বের সম্পর্কে।”

জান্নাহ্ এর কাছে কথাটা বেশ লাগলো।যেনো তার বাবা বললো কথাটা।একটু দূরে দাঁড়িয়েই পুরো ঘটনা অবলোকন করলো জান্নাহ্।শীতল নিঃশ্বাস ফেলে সেখানে দাঁড়িয়ে রইলো।ছেলেটি কিছুক্ষন কথা বললো ডক্টর রিফাতের সাথে।এরপর কাউন্টারে গিয়ে কার্ডের মাধ্যমে পুরো বিল পরিশোধ করে।রিসিপশনের সামনে থাকা ওয়েটিং চেয়ারে বসে থাকার সময় খেয়াল করে দুইজন বৃদ্ধ আর তার সাথে একটা ছেলে হন্য হয়ে হসপিটালের ভেতরে ঢুকছে।তাদের ব্যস্ততা আর উদ্বেগ দেখে বুঝলো যে মেয়েটিকে সে হসপিটালে নিয়ে এসেছে এরা তারই পরিবার।ছেলেটির মধ্যে কোনো ভাবাবেশ হলো না।পুলিশ আসার অপেক্ষায় সে বসে রইলো।ছেলেটির আপাদমস্তক রক্তের জমাট দাগ।মেয়েটিকে হসপিটালে আনতে গিয়েই এই অবস্থা।আচমকা মুখ বিকৃত করে ছেলেটি।গলাটা শুকিয়ে আসে তার।কেঁশে উঠতেই কেউ তার সামনে পানির বোতল ধরে।ছেলেটি বিনা দ্বিধায় তা নিয়েই চুমুক লাগায়।কে দিলো তাতে ভ্রুক্ষেপ করলো না।পানি পান করেই আবার বোতলটা তার দিকে এগিয়ে দিয়ে মোবাইলে চোখ রেখেই বললো–

“থ্যাংকস।”

সামনের ব্যক্তি মিষ্টি করে বললো—

“ইটস মাই প্লেজার।”

একটা মেয়েলী মিষ্টি কন্ঠ শুনে ভ্রু কুঁচকে আসে ছেলেটির।সামনে তাকাতেই দেখে চৌদ্দ কী পনেরো বছরের একটা কিশোরী মেয়ে নরম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।ছেলেটি এক পলক দেখে আবার বললো–

“থ্যাংকস।”

কিশোরী মেয়েটি মিষ্টি করে হাসলো।ছেলেটি তার মোবাইলে আবার অভিনিবেশ করে।জান্নাহ্ বামদিকের করিডোরের অভিমুখে দাঁড়িয়ে নির্নিমেখ তাকিয়ে থাকে ছেলেটির দিকে।কাঁধে কারো হাতের স্পর্শে সচকিত হয় জান্নাহ্।জাফিন মোলায়েম গলায় প্রশ্ন ছুঁড়—

“কী ব্যাপার ডল?তোমাকে তো আমি চেম্বারে থাকতে বলেছি।এখানে কেন?

জান্নাহ্ তার বাবার ক্লান্ত মুখটা দেখে বললো—

“তুমি কী খুব টায়ার্ড বাবা?

“হোয়াই ডল?

জান্নাহ্ স্মিত হাসলো।তার বাবাকে চোখের ইশারায় ছেলেটিকে দেখায়।জাফিন ঘুরে তাকায়।সাতাশ,আটাশ বছরের একটা যুবক বসে আছে আনমনে।তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্তের ছড়াছড়ি হলেও সে আঘাত প্রাপ্ত নয় তা জাফিন বুঝতে পারে।জাফিন মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন—-

“আমি কী করতে পারি?

জান্নাহ্ আদুরে গলায় বললো—

“তুমি কী তার সাথে একবার কথা বলবে?

জাফিনের পুরু ভ্রু জোড়া মুহূর্তেই কুঁচকে এলো।গম্ভীর হলো মুখ।জান্নাহ্ একটু আগের ঘটনা খুলে বললো।আমোদিত হলেন জাফিন।আজকালও এমন মানুষ হয়!

ছেলেটির সামনে গিয়ে দাঁড়ায় জাফিন।সংক্ষিপ্ত সুরে বললেন—

“হ্যালো ইয়াং ম্যান!

ছেলেটি সরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালো।গাঢ় চাহনিতে জাফিনকে দেখে ছোট্ট করে বললো—

“আপনি?

জাফিন চমৎকার হাসলেন।হ্যান্ডশেকের জন্য হাতটা বাড়িয়ে স্বাভাবিক গলায় বললেন–

“আই এম জাফিন।জাফিন চৌধুরী।একজন নিউরো সার্জন।অবশ্য আরেকটা পরিচয় আমার আছে।এই হসপিটালটা আমারই।”

ছেলেটির অতি আনন্দে হাতটা বাড়িয়ে ঝলমলে হেসে বললো—

“আমি সারহান।সারহান জেইদি।একজন ক্রাইম স্পেশাল জার্নালিস্ট।”

“ওও,ইটস সাউন্ড গুড।”

“থ্যাংকস।”

নামটা শুনতেই দুইবার আওড়ালো জান্নাহ্।মানুষটার মতো নামটাও তার পছন্দ হলো।সে উচ্ছল দৃষ্টিতে সেই অপরিচিত মানুষটিকে দেখতে লাগলো।জাফিন খুশ মেজাজে গল্প করতে লাগলেন।আর জান্নাহ্ সেই মানুষটাকে দেখতে লাগলো।তার কোমল কিশোরী মনে এক অদ্ভুত অনুভূতির সৃষ্টি হলো।তার নাম সে দিতে পারছে না।এমনটা আগে কখনো হয়নি।সারহান যতবার তার ঠোঁট নাড়াচ্ছে জান্নাহ্ গুনে গুনে দেখছে তা।তার চোখের পলক গুনছে সে।কথার ফাঁকে সারহান কতবার স্মিত হাসলো তাও সে ঠাওর করলো।কতবার লজ্জায় সারহান তার মাথানত করে হাসলো তাও।জান্নাহ্ এর কাছে ব্যাপারটা ভালো লাগলো না।এমন করে কেউ কাউকে দেখে!ছিঃ! কী বিশ্রি ব্যাপার!

জান্নাহ্ তার চোখ সরাতে চাইলো।সাথে তার অবচেতন মস্তিষ্কের ওলট পালট চিন্তা।কিন্তু পারলো না।সে আবারো দেখলো ওই মানুষটাকে।তার পিচ কালারের ওষ্ঠাধর অনুরণিত হচ্ছে।ওই গম্ভীর কিন্তু মায়াবী দুই চোখ যেনো জান্নাহ্কে দেখেই হাসছে।
জান্নাহ্ এর মনে হলো সে কোনো নদীর মাঝে চরে দাঁড়িয়ে আছে।এখান থেকে ফেরার জন্য একটাই উপায় তাহলো ছোট্ট ডিঙি নৌকা।কিন্তু মাঝির সাথে বেজায় ঝগড়া জান্নাহ্ এর।এখন সে বাড়ি ফিরবে কী করে?
তাই বাধ্য হয়েই মাঝির সাথে ভাব করতে হলো তার।জান্নাহ্ এর এমনটাই মনে হলো।এই মানুষটাকে তার সেই দুষ্ট মাঝি মনে হলো।যে তাকে পাড়ে
ভিড়াবে।জান্নাহ্ তার দুষ্ট মাঝির একটা নাম দিলো।প্রাণ।

জান্নাহ্ এর সম্বিৎ ফিরে তার বাবার মৃদু কন্ঠে।

“ডল,এখন কী আমরা যেতে পারি?

চমকে উঠে জান্নাহ্।সে তার প্রাণকে দেখায় ব্যস্ত ছিলো।আনম্র গলায় বললো–

“হ্যাঁ,বাবা।”

সারহান তার মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত।তার সামনে দিয়ে হেঁটে যায় জাফিন আর জান্নাহ্।সেদিকে তাকালো না সারহান।সারহানের কাছে থেকে অনেকটা দূরে গিয়ে পেছন ফিরে তাকায় জান্নাহ্।বা’হাতে সে তার বাবার হাত ধরে রেখেছে।জরুরি একটা কল আসতেই ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠে দাঁড়ায় সারহান।মোবাইল কানে চেপে ধরেই বেখেয়ালিভাবে তাকায় হসপিটালের এক্সিটে।যেখান থেকে চেয়ে আছে জান্নাহ্।সারহান গভীর দৃষ্টিতে দেখে সে কিশোরীকে এইবার।ঘন পল্লবের নিচে দুই হাসি হাসি চোখ।কিশলয়ের মতো পাতলা অধরপল্লব।কোমর পর্যন্ত ছড়ানো চুল।একটা হাঁটু অব্দি লম্বা ফ্রক।সাথে চুরিধার।পায়ে লাইট পিংক কালারের স্ক্যাকার্স।সারহানের কিছু একটা হলো।সে কিশোরী মেয়েটির চোখের দিকে অনিমেখ চেয়ে রইলো যেনো ওই চোখ থেকে নিঃসৃত অমৃতের বাণ তার হৃদপিন্ডে বিঁধে গেলো।

আলতো চোখের পলকে জান্নাহ্কে দেখে সারহান।চোখ সরায় সে।মনোযোগ দেয় মোবাইলের ওপাশের ব্যক্তিটির প্রতি।জানলো না সারহান।তার এই গম্ভীর চোখের চাহনি এক কিশোরী মনে ঝড় তুলে দিলো।প্রাণ নামের সেই ঝড়।যা সম্পর্কে সেই কিশোরীও অবগত নয়।
,
,
,
ল্যাপটপের হোল স্ক্রীন জুড়ে রাফাতের হাস্যোজ্জ্বল চেহারা।টুকটুক করে একে অপরের সাথে কথা বলছে দুইজন।

“জান্নাহ্,কী করছো তুমি?

জান্নাহ্ একগাল হেসে বললো—

“ইটস সিক্রেট।”

রাফাত কপাল ভাঁজ করে বললো—

“পেইন্টিং করছো?

স্মিতহাস্য অধরে ভ্রু নাচিয়ে জান্নাহ্ বললো—

“কী করে বুঝলে?

“রেড চেরি,তোমার অস্থিমজ্জাকে আমি চিনি।”

জান্নাহ্ ঝুমঝুম করে হাসে।সেন্টার টেবিলের উপর ল্যাপটপ রেখে মেঝেতে বসে কথা বলছে রাফাতের সাথে অনলাইনে।হাতে থাকা পেইন্টিং টা উঁচু করে ধরে।লাইট পিংক আর রেডের সমন্বয়ে চেরি গাছ আঁকা।পাশেই এইটি মেয়ে বসে চেরি খাচ্ছে।রাফাত গা দুলিয়ে হেসে উঠে।জান্নাহ্ ঠোঁট উল্টে রাগি রাগি গলায় বললো—

“হাসলে কেন?

রাফাত সরব গলায় বললো–

“চেরি গার্ল।একবার আমাকে আসতে দাও তোমাকে চেরির সাগরে ডোবাবো।”

“ইশ!তোমায় বেঁধে রাখবো।”

হা হা করে হেসে উঠে রাফাত।জান্নাহ্ উৎসুক গলায় বললো—

“খেয়েছো?

“ইয়েস রেড চেরি।একজন ভবিতব্য ডক্টর অবশ্যই তার স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হবে।অলরেডি টুয়েলভ এ.ম।”

জান্নাহ্ চোখে হাসে। রাফাত কপালে তর্জনী দিয়ে চুলকে পাল্টা প্রশ্ন করে—

“আজ তোমাকে খুশি খুশি লাগছে?

জান্নাহ্ ঠোঁট চিপে বললো—

“ইটস সিক্রেট।বলা যাবে না।”

“তোমার আমার মাঝে সিক্রেট আসলো কোথ থেকে?

“রাফাত,আই এম আ বিগ গার্ল নাউ।ওকে বাই।নয়টা বেজে গেছে।বাবা আমার জন্য অপেক্ষা করছে।”

“ওকে,লাভ।বাই এন্ড টেক কেয়ার।”

“টা টা।”
,
,
,
খাওয়ার টেবিলে চুপ চাপ বসে আছে জান্নাহ্।জাফিন মেয়ের মতিগতি খানিকটা আঁচ করে বললেন—

“তুমি কী কিছু ভাবছো ডল?

জান্নাহ্ অস্ফুট সুরে বললো–

“হুম।”

“আমি কী তা জানতে পারি?

জান্নাহ্ চটপটে গলায় বললো—

“ছেলেটা ভালো না বাবা?

জাফিন চমকে হাসলেন।তার মেয়ে আজ প্রথম কোন ছেলের প্রশংসা করেছে।এই বয়সের মেয়েদের মধ্যে ফ্যান্টাসি কাজ করে।মুভির হিরোদের নিয়েও তারা সংসার সাজিয়ে বসে।লাইফ পার্টনারকে কল্পনা করে কোরিয়ান কোনো হিরোর মতো।কিন্ত জান্নাহ্ তা নয়।সে সবার থেকে আলাদা।বাবার মতো বাস্তব প্রিয় মানুষ।নিজের বাবাকে সে নিজের আদর্শ মানে এবং জীবনসঙ্গী হিসেবে সে তার বাবার মতো কাউকে চায়।
জাফিন সরস গলায় বললেন—

“ডল,তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো ইউ আর অনলি ফোরটিন।”

জান্নাহ্ সহজ গলায় বললো–

“আই নো বাবা।আই এম নট আ কিড।”

মেয়ের কথায় হা হা করে হাসির বর্ষণ করলো জাফিন।জান্নাহ্ গুমোট গলায় বললো—

“মাম্মা এখনো ফিরেনি বাবা?

জাফিন মৃদু স্বরে বললেন–

“নাহ।”

“আজও মাম্মা ক্লাবে গিয়েছে?

“হয়তো।”

“বাবা,তুমি মাম্মাকে কেন কিছু বলছো না?

“কী বলবো?

জান্নাহ্ রাগাম্বিত গলায় বললো–

“মাম্মা তোমাকে ভালোবাসে না বাবা।”

জাফিন শীতল নিঃশ্বাস ফেললেন।যুক্তি দাঁড় করিয়ে বললেন—-

“এমনটা নয় ডল।ভালোবাসলেই যে তা মুখের স্বীকার করতে হবে তা নয়।ভালোবাসা সুপ্ত অনুভূতি।তোমার মাম্মা আমাকে তার অবচেতন মনে ভালোবাসে তাই সে তার সজ্ঞানে তা প্রকাশ করতে চায় না।সে নিজেকে কঠোরভাবে।কিন্তু আসলে সে তা নয়।আমার প্রতি তার যে রাগ তা তোমার জন্মের সাথে সাথে ঢলে গিয়েছে।কিন্তু তার সাথে হওয়া অন্যায়টা সে আজও মেনে নিতে পারেনি।দ্বিতীয়বার কাউকে নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভালোবাসা যায় তা মানতে সে নারাজ।তোমার মামা তার বোনের ভালোর জন্যই আমার সাথে তার বিয়ে দিয়ে ছিলো।হয়তো মৃণালের সাথে আমার বয়সের ডিফারেন্টটাকে ও অনেক বড় করে দেখেছে।তার কারণ সেম এইজ রিলেশন।কিন্তু আমাকে সে নেগলেট করেনি কখনো।”

“কারণ তুমি তাকে তার চেয়ে বেশি ভালোবেসেছো।”

“হতে পারে।আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি।তার ফলে আমি তোমায় পেয়েছি।”

“আই ডোন্ট থিংক সো।”

“ওকে,সময় হলে বুঝবে।এখন খাও।সাড়ে ন’টা বেজে গেছে।এইটা ঠিক নয়।”

চলবে,,,

#জান্নাহ্
#পর্বঃ৫৪
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি

রাতের আঁধার ঘুচে ঝলমলে সূর্যে অবগাহন করছে নিরাক পরিবেশ।থমথমে পরিবেশে হলদে আভা ছড়িয়ে দিচ্ছে তরতর করে তার আচ্ছাদন।শান্ত কিন্তু তেজী সূর্য তার মিষ্টি আলোয় মুড়িয়ে রেখেছে আজকের সকাল।জান্নাহ্ বসে আছে ছাদে।হালকা বাতাসে ছাদে রাখা ফুলের গাছগুলো দুলে যাচ্ছে হঠাৎ করে।গোলাপের মিষ্টি ঘ্রাণ এসে তার নাকে ঠেকে।শীতল নিঃশ্বাস ফেলে জান্নাহ্।

আজকাল নিজেকে কেমন খাপছাড়া মনে হয় তার।অকারণে সাজতে ইচ্ছে হয়।চোখে কাজল আঁকতে ইচ্ছে।চুলে আস্ত খোঁপা করে বউ সাজতে ইচ্ছে হয়।দু’চোখ ভরে তার প্রাণকে দেখতে ইচ্ছে হয়।কিন্তু তা তো সম্ভব নয়।জান্নাহ্ কোমল হাসে।এর একটি সমাধান সে বের করেছে।একটা পেইন্টিং সে বানিয়েছে তার প্রাণের যার সাথে সে কথা বলে রাতভর।ঘুমও হয় না তার।কীসব অদ্ভূতুড়ে স্বপ্ন আসে তার।
ভাবা যায়!ছিঃ!সলজ্জ চোখ দুটি দিয়ে নীলাভ ঝকঝকে আকাশ দেখে জান্নাহ্।তপ্ত নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসে তার বুক চিরে।তার মাম্মা কেন তার বাবাকে ভালোবাসে না!

ঘড়ির কাটা এগারোর ঘর ছুঁয়েছে।মৃণালিনী উঠে বসলেন।মাথাটা ঝিমঝিম করছে তার।এখনো হ্যাংআউট হয়নি।রাতের দ্বিপ্রহরে ফিরেছে সে।চোখের সামনে জান্নাহ্কে দেখে একটু অবাকই হলেন।জান্নাহ্ শক্ত চোখে তাকিয়ে আছে।ক্ষোভ নিয়ে জান্নাহ্ বললো—

“তুমি কালও ক্লাবে গিয়েছো মাম্মা!ড্রিংসও করেছো?

মৃণালিনী ক্লান্ত চোখে হাসলেন।মৃদু গলায় বললেন–

“সেটাতো তুমি জানো ডল।প্রশ্ন কেন করছো?

জান্নাহ্ অসহায় গলায় বললো—

“কেন এমন করো মাম্মা?বাবা তোমাকে এতো ভালোবাসে!

“বাট আই ডোন্ট লাভ হিম।”

অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় বললেন মৃণালিনী।জান্নাহ্ বিদ্রোহী গলায় বললো–

“তাহলে বিয়ে কেন করলে বাবাকে?

হতাশ নিঃশ্বাস ফেললেন মৃণালিনী।আক্ষেপ করে বললেন—

“ওইটা বিয়ে নয়।ওইটা একটা কমিটমেন্ট ডল।তোমার বাবার একজন সুন্দরী স্ত্রী দরকার ছিলো আর আমার লাক্সারী লাইফ।”

জান্নাহ্ আপত্তির সুরে বললো–

“বাবা সম্পর্কে তুমি এভাবে বলতে পারো না মাম্মা।”

মৃণালিনী তার কাঁধ পর্যন্ত ছড়ানো চুল মাথার মধ্যখানে নিয়ে খোঁপা করলেন।সামনের দিকে ঝুঁকে পড়া ক’গাছি চুল ঠোঁট উঁচু করে ফুঁ দিয়ে সরাতে চাইলেন।ক্লান্ত দেহখানি হালকা নাড়ালেন।স্লিভলেস টপসের গলাটা ছড়ানো হওয়ার ভেতরে জামার স্ট্রিপটা বাইরে বেরিয়ে আছে।বিছানায় দু’হাত দিয়ে হেলান দিয়ে বললেন—

“তুমি দেখতে আমার মতো হলেও স্বভাবটা তোমার বাবার পেয়েছো।এটা ঠিক নয় ডল।তোমাকে আমার মতো ওপেন মাইন্ডেড হওয়া উচিত।”

জান্নাহ্ নাক ফুলিয়ে ব্যগ্র গলায় বললো—

“যদি ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরে রাত বিরাতে ক্লাবে গিয়ে বিয়ার খাওয়া,নেশা করা,বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া ওপেন মাইন্ডেড হয়।তাহলে তার কোনো প্রয়োজন নেই আমার।আমি আমার বাবার মতো হওয়ায় গর্ববোধ করি।”

মৃণালিনী উদাস গলায় বললেন–

“ওকে,ইটস ইউর চয়েজ।”

অগোছালো টপস টা টান দিয়ে উদর ঢাকলেন মৃণালিনী।জান্নাহ্ নম্র চাহনিতে সন্দিহান গলায় বললো—

“ভালো যখন ভাসোই না তাহলে বাবাকে ছেড়ে যাচ্ছো না কেন?

মৃণালিনী স্মিত হাসলেন।বিগলিত গলায় বললেন–

“ইউ নো হোয়াই?এর কারণটা তুমি।বিয়ের এতো বছর পরও যখন আমি কনসিভ করছিলাম না জাফিন আমার সব স্বাধীনতা কেড়ে নিলো।এক রকম বন্ধি করে ফেললো আমায়।ওর একটাই কথা,তোমাকে ওর চাই।গড নৌজ ওয়েল এট লাস্ট তুমি এলে আমাদের জীবনে।আমি আমার সব কিছু ফিরে পেলাম।কিন্তু তোমার মায়ায় পড়ে গেলাম বলে আর জাফিনকে ছাড়তে পারলাম না।অবশ্য আমার তাতে কোনো অসুবিধা নেই।জাফিন আমাকে সব স্বাধীনতা দিয়েছে যেভাবে আমি বাঁচতে চেয়েছি।”

জান্নাহ্ অনেকটা কষ্ট নিয়ে ধরা গলায় বললো—

“বাবা তোমায় এতো ভালোবাসে তবুও কেন তুমি তাকে মেনে নিতে পারো না?

মৃণালিনী নির্ভয়ে বললেন–

“কী করে মেনে নেই!তোমার বাবা আমার থেকে বারো বছরের বড়।আমি নিশ্চয়ই এর চেয়ে ভালো কিছু ডিজার্ব করি।”

“ভালোবাসা থাকলে বয়স কোনো ফ্যাক্ট নয় মাম্মা।”

“ডল,ভুল বললে।তোমার মতো বয়সে মনে হবে একটু গুরু গম্ভীর,ব্যস্ত,বাস্তবিক আর পোলাইট টাইপ মানুষ পার্ফেক্ট।কিন্তু আসলে তা নয়।বয়স বাড়ার সাথে সাথে তোমার আর তার বয়সের সাথে সাথে মতেরও অমিল হবে,পছন্দের অমিল হবে,ফিজিক্যাল নিড চেঞ্জ হবে,মুড চেঞ্জ হবে।তখন সবকিছু দূর্বিষহ মনে হবে।আমি নিশ্চয়ই তোমার বিয়ে সাত,আট এমনকি পাঁচ বছরের বড় ছেলের সাথে দিবো না।আমি তোমাকে আমার মতো সাফার হতে দেখতে চাই না।”

জান্নাহ্ সংক্ষোভ নিয়ে বললো—

“তাহলে তুমি যেতো পারো।”

মৃণালিনী চমৎকার হাসলেন।অত্যন্ত বিনয়ী গলায় বললেন—

“তুমি নিশ্চয়ই চাইবে না তোমার বাবা তার ফিজিক্যাল নীড বাইরে থেকে পূরণ করুক!আমি তো বলেছি আমি এখানে তোমার জন্য আছি।জাফিনের প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই,না আছে কোনো অনুভূতি।”

জান্নাহ্ থম মেরে রইলো।এইসবই তার জানা।তবুও আজ আবার তা শুনলো সে।মৃণালিনী শ্রান্ত গলায় বললেন—

“আজ এতো সকালে আমার ঘরে!তোমার কী কিছু চাই ডল?

জান্নাহ্ রাগ গিলে নিয়ে নির্বিঘ্নে বললো—

“হুম।আমার একটা শাড়ি চাই।তুমি কী আমাকে তা দিতে পারবে?

মৃণালিনী মনে করার চেষ্টা করলেন আদৌ তার কাছে শাড়ি আছে কিনা!মনে পড়তেই বললেন—

“হুম,দিতে পারি।ক্লোজেট এর থার্ড ড্রয়ারে আছে।ওটা তোমার বাবা আমাকে বিয়েতে দিয়েছিলো।তুমি জানো শাড়ি আমি পড়িনা।সেদিন শুধু একঘন্টার জন্য পরেছিলাম।”

জান্নাহ্ ক্লোজেট খুলে যথাস্থানে শাড়িটা পায় ঠিক যেখানে তার মা বলেছিলো।মানুষ বুঝি অপছন্দের জিনিসগুলো এতো খেয়াল করে রাখে!

“বাহ!শাড়িটাতো বেশ সুন্দর!

মৃণালিনী বিছানা থেকে গা ঝাড়া দিয়ে বললেন—

“কালারটা আমার একদম পছন্দ নয়।তুমি রেখে দাও।”

জান্নাহ্ দ্বিধা নিয়ে বললো—

“তোমার বিয়ের শাড়ি তুমি অন্য কাউকে দিয়ে দিবে?

“অন্য কাউকে দিচ্ছি নাতো।তোমাকে দিচ্ছি।তুমি তো অন্য কেউ নও।”

জান্নাহ্ পরম আশ্লেষে শাড়িটাতে হাত বুলাতে থাকে।অফ হোয়াইট শাড়ির খয়েরি পাড়।গোল্ডেন আর হোয়াইট স্টনের সাথে কারচুপির কাজ।জান্নাহ্ এর বেশ ভালো লাগলো।মৃণালিনী তাচ্ছিল্য গলায় বললেন–

“তোমার পছন্দ তোমার বাবার মতো।আই থিংক শাড়িটার তোমার পছন্দ হবে।”

জান্নাহ্ মুখে হাসি রেখে বেখেয়ালেই বললো–

“হুম।”

“জান্নাহ্!

“হ্যাঁ,মাম্মা?

“আলীকে বলো আমার জন্য অ্যাপেল জুস আর ফ্রুট স্যালাড করতে।আজ আর অন্য কিছু খাবো না।অনেকদিন হলো এক্সারসাইজ করা হয় না।মুটিয়ে যাচ্ছি।”

জান্নাহ্ মৃদু হাসলো।থার্টি সিক্স কোমরে তার মা নাকি মুটিয়ে যাচ্ছে!

মৃণালিনী একরাশ বিরক্তি নিয়ে ফট করে বললেন–

“উফ!মাথাটা শেষ আমার।গায়ে এখনো বিয়ারের গন্ধ।আমি শাওয়ারে গেলাম।তোমার যা ইচ্ছে নিয়ে নাও।”

ফোঁস করে দম ফেললো জান্নাহ্।তার মা একবারো জিঙ্গেস করলো না শাড়িটা দিয়ে সে কী করবে!আজ জান্নাহ্ তার প্রাণের জন্য প্রথম বারের মতো শাড়ি পরবে।মেয়েদের প্রথম শাড়ি নাকি তার মায়েরই হয়।জান্নাহ্ এর বেলাও তাই ঘটলো।কিন্তু সে বিষন্ন।তার মা একবারো কেন জিঙ্গেস করলো না।মন খারাপ হয় তার।ভীষণ মন খারাপ।
,
,
,
শাড়িরটা নিজের গায়ের সাথে জড়িয়ে নিজেকে দেখছে জান্নাহ্।ভীষণ লজ্জা লাগলো তার।এ কেমন পাগলামি!
সারহানের পেইন্টিংটা ড্রেসিং টেবিলের আয়নার ঠিক উপরের দিকটায় লাগানো।টেবিলের দুই পাশে দুটো পাল্লা।নিচের দিকটায় একটা ড্রয়ার।সেখানে বসার জন্য একটা ছোট্ট টুলও আছে।

জান্নাহ্ হাস্যোজ্জ্বল গলায় বললো—

“শাড়িটা সুন্দর না প্রাণ!এইটা আমার মাম্মার।আজ আমি এটাই পড়বো।শুনেছি ছেলেরা নাকি শাড়ি পড়া মেয়েদের পছন্দ করে।আপনিও কী করেন?

জান্নাহ্ এর মুখ ভার হয়।তার প্রাণের যদি তাকে পছন্দ না হয়।কই সেদিন তো একবারো ফিরে দেখলো না তাকে।জল ভরে আসে জান্নাহ্ এর চোখে।রাফাত বলে সে নাকি রেড চেরি।বাবা বলে সে নাকি ডল।আর তার মামা তাকে পরীজান বলে কারণ সে পরীর মতো সুন্দর দেখতে।তাহলে তার প্রাণ কেন তাকে ফিরে দেখলো না।
জান্নাহ্ আয়নার কাছে এসে দাঁড়ায়।গভীরভাবে সারহানের পেইন্টিং টা দেখে।অনুজ্জল গলায় বললো—

“আমাকে কী আপনার পছন্দ নয় প্রাণ?

জান্নাহ্ এর কিশোরী মন হঠাৎ ঝড়ের বেগে ঝনঝনিয়ে উঠে।তার কাঁদতে ইচ্ছে হয়।ঠোঁট কামড়ে ধরে জান্নাহ্।আচমকা ফিক করে হেসে ফেলে।চকচক চোখে তাকিয়ে ঝলমলে গলায় বললো—

“শাড়িতে নিশ্চয়ই ভালো লাগবে আমায়?

জান্নাহ্ ঝুমঝুম করে হাসে।তার কিশোরী মন হঠাৎ করে রঙধনুর সাত রঙে মুড়িয়ে যায়।জান্নাহ্ ভ্রু নাচিয়ে ঠোঁট উল্টে বললো–

“এভাবে কেন তাকান?আপনি এভাবে তাকালে আমি শাড়ি পরবো কী করে!বিয়ের আগে এইভাবে আমাকে দেখার অধিকার আপনার নেই।”

খিলখিলিয়ে হাসে জান্নাহ্।সারহানের পেইন্টিংএর উপর একটা ওড়না ঝুলিয়ে দেয়। শাড়ি পরা শেষ করে আয়নায় নিজেকে দেখে জান্নাহ্।লজ্জায় টইটুম্বর চোখ দুটো চেপে ধরে নিজের হাত দিয়ে।হাতের ফাঁকে নিজেকে দেখেই অবাক হয় জান্নাহ্।তাকে একদম বউ বউ লাগছে।তার প্রাণের মিষ্টি বউ।নিজের ভাবনায় একগাল হাসে জান্নাহ্।কী লজ্জা!কী লজ্জা!
কাল সারারাত জেগে সে ইউটিউবে শাড়ি পরা দেখেছে।আজ পরেও নিলো।তার প্রাণের জন্য।

দরজায় করাঘাত পড়তেই চকিত হয় জান্নাহ্।দরজা খুলতেই অবিশ্বাস্য চোখে জাফিন দেখে তার ছোট্ট ডলকে।সে হতবাক।মুগ্ধ গলায় বললেন—

“হোয়াট আ সারপ্রাইজ ডল?

জান্নাহ্ ফিক করে হেসে বললো—

“আমাকে কেমন লাগছে বাবা।”

“জাস্ট লাইক ইউর মাম্মা।”

কথা শেষ করে জাফিন গম্ভীর অভিব্যক্তিতে মেয়েকে দেখে আবার বললেন–

“তুমি তোমার মায়ের মতো ততটা সুন্দরী নও।”

জান্নাহ্ নাক ফুলিয়ে বাবার হাত ধরে আহ্লাদী গলায় বললো—

“বাবা!

গা দুলিয়ে হাসলেন জাফিন।আহ্লাদ করে বললেন—-

“হঠাৎ শাড়ি পরলে ডল!অ্যানি স্পেশাল রিজন?

জান্নাহ্ এর ঘরে তার বেডের পাশেই ডিভান।আয়েশ করে বসলেন জাফিন।জান্নাহ্ বাবার সামনে দাঁড়িয় খুশি খুশি গলায় বললেন—

“ইচ্ছে হলো তাই।”

“তুমি কিছু লুকোচ্ছো ডল।”

জান্নাহ্ ট্রিপিক্যাল বাঙালী কিশোরীদের মতো নিজের নখ খুটে বললো—

“সারহানের খোঁজ পেয়েছো বাবা?

জাফিন মেয়ের এই আমূল পরিবর্তনে বিস্মিত হলেন,কিন্তু চিন্তিত নয়।তিনি মোলায়েম গলায় বললেন—

“রাফাতের সাথে এই বিষয়ে কথা হয়েছে তোমার?

জান্নাহ্ ম্লান গলায় বললো–

“নাহ।”

“তোমার তাকে জানানো উচিত।রাফাত তোমার প্রতি সিরিয়াস ডল।”

“উফ!বাবা।রাফাত ইজ মাই বেস্ট ফ্রেন্ড।হি ইজ মাই ওয়েল উইশার।বাট আই ডোন্ট লাভ হিম।”

ঝট করেই প্রশ্ন করে বসলেন জাফিন—

“ডু ইউ লাভ উইথ সারহান?

জান্নাহ্ সাবলীল কন্ঠে বললো–

“আই লাইক হিম।”

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন জাফিন।মেয়েকে আদুরে গলায় বললেন—

“তুমি মাত্র চৌদ্দ জান্নাহ্।সারহান অলরেডি টুয়েন্টি সেভেন আপ।আই থিংক তোমার দ্বিতীয়বার ভাবা উচিত।আমি অবশ্যই তোমাকে আন্ডার এইটিন বিয়ে দিবো না।”

জান্নাহ্ তার বাবার পায়ের কাছে বসলো।হাত দুটো বাবার পায়ের উপর রেখে স্বাভাবিক গলায় বললো—

“জানি বাবা।সারহানও নিশ্চয়ই এখন বিয়ে করবে না।আর আমি তো তোমায় শুধু কথা বলতে বলেছি,খোঁজ নিতে বলেছি।”

জাফিন মেয়ের কপালে আদুরে চুমু খেয়ে বললেন—

“তাকে পছন্দ করার যথাযোগ্য কোন কারণ।”

প্রসন্ন গলায় জান্নাহ্ বললো—

“সে তোমার মতো বাবা।একজন অপরিচিত মানুষের জন্য যদি সে এতোটা করতে পারে তাহলে ভাবো সে নিজের মানুষের জন্য কতোটা করতে পারে!আমি তার সেই নিজের মানুষটা হতে চাই।”

জান্নাহ্ সবসময় তার বাবার মতো কাউকে চেয়েছে।যেদিক থেকে সারহানের সব গুন তার বাবার মতো।তাই নিজেকে রুখতে গিয়ে পারে না জান্নাহ্।জাফিন চিন্তিত হলেন।জান্নাহ্ তার বাবার সাথে সবচেয়ে বেশি এটাচ।নারী আচরণের সুক্ষ্ম বিষয়গুলোও তার ডক্টর বাবা তাকে শিখিয়েছেন।তাই তো জীবনের প্রথম অনুভূতি অকপটে প্রকাশ করতে একটুও দ্বিধা হলো না তার।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here