জান্নাহ্,পর্বঃ৬৩,৬৪
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি
পর্বঃ৬৩
চারপাশে মৃদুমন্দ হিমেল বাতাসে আজকের বিকেলটা অন্য বিকেল থেকে আলাদা।জৈষ্ঠ্য মাসের প্রভাকরের প্রখর রশ্মি জানান দেয় এইতো মধু মাস।
বাগানের দোলনায় বসে আছে সারহান।নিরুঙ্কুশ ভেবে চলা অতীত হাতড়ে খুঁজে চলছে বর্তমানের ছোঁয়া।মোবাইলের রিং অনবরত বেজে যাচ্ছে।অনিচ্ছা সত্ত্বেও রিসিভ করলো সারহান।মোলায়েম গলায় প্রশ্ন করলো—
“কেমন আছো শায়িখ?
এপাশ থেকে শীতল শ্বাস ফেললো শায়িখ।নির্মল গলায় প্রত্যুক্তি করে বললো—
“ভালো আছি স্যার।আপনি কেমন আছেন?
সারহান হেয়ালি গলায় হতাশ শ্বাস ফেলে বললো—
“ভালো।কী মনে করে কল করলে?
শায়িখ চুপ করে রইলো।আচমকা বলে উঠে—
“ভাবীজান কেমন আছেন?
স্বশব্দে হেসে উঠে সারহান।অনেকটা অবিশ্বাস নিয়ে বললো—
“ধোঁকা দেওয়ার জন্য তুমিই বাকি ছিলে।”
মুহূর্তেই ধক করে উঠে শায়িখের হৃদয়টা।নিভে গেলো তার গলার ক্ষীন স্বর।আমতা আমতা করে আধ ভাঙা গলায় বললো—
“আমিইইইই….।”
মলিন হাসলো সারহান।বাঁধাহীন সুরে বললো—
“জান্নাহ্কে তুমি থামাতে পারতে ইচ্ছে করলে।”
তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো শায়িখ।তার বুকটা ভার হয়ে এলো অপরাধবোধে।অনুযোগের সুরে বললো—
“আমি আসলে স্যার….।”
“জান্নাহ্ তোমাকে ভাই বলে ডেকেছে।অন্তত সেই কারণেই তাকে থামাতে পারতে।আমার অন্যায়ের শাস্তি সে কেন পাবে!
ত্রস্ত গলায় বলে উঠে শায়িখ—
“বিশ্বাস করুন স্যার,জান্নাহ্ তেমন মেয়েই নয়।কী থেকে কী হয়ে গেলো।আমি…।”
সারহান একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে প্রসঙ্গ পাল্টে বললো—
“তোমার মা কেমন আছে?
শায়িখ ক্ষণকাল চুপ থেকে শঙ্কামুক্ত হয়ে বললো—
“মা ভালো আছে স্যার।জান্নাহ্ কেমন আছে?
অধর কোণে হাসলো সারহান।তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত লোক তার সাথে থেকেই এতবড় একটা খেলা খেললো তার কিছুই সে বুঝতে পারলো না।সাবলীল গলায় বললো—
“জান্নাহ্ ভালো আছে।”
স্বস্তির শ্বাস নিলো শায়িখ।মৃদু হাসলো সারহান।শায়িখ ব্যগ্র হয়ে আবার প্রশ্ন করে—-
“আপনি কেন নিজেকে আড়াল করেছেন স্যার?
সারহান শঙ্কিত গলায় বললো—
“আমার অতীত যে আমায় ছাড়ছে না শায়িখ।”
“কিন্তু স্যার,জান্নাহ্ তো সব জানে।আপনাকে কিছু লুকাতে হবে না।”
নিজের জীবনের উপর বিদ্রুপাত্মক হাসলো সারহান।থমথমে গলায় বললো—
“এখনো সব জানা হয়নি শায়িখ।জানি না আমার সেই অতীত আদৌ আমার রজনীগন্ধা মেনে নিবে কিনা!
শায়িখ অবগত নয় সেই মেহনাজ সম্পর্কে।হয়তো শায়িখ জানলে অনেক আগেই জান্নাহ্ এর সামনে চলে আসতো এই সত্য।চট করেই অদ্ভুত কথা বলে ফেললো শায়িখ—-
“এই জন্য আপনি জান্নাহ্কে সবার কাছ থেকে আড়াল করে রেখেছেন?
নিজের কথায় নিজের জীভ কাটে শায়িখ।বৃহৎ ঢোক গিলে মিনমিনে গলায় আবার বললো—
“আসলে স্যাআআর,…..।”
অত্যন্ত স্বাভাবিক গলায় বললো সারহান—
“ঠিক বলেছো তুমি।তাকে আমি কোনো কিছুর বিনিময়ে হারাতে পারবো না।”
দুই পাশে নিরবতার বাতাস বইতে লাগলো।মৌনতা কাটিয়ে শায়িখ বললো—
“ইহতিশাম স্যার পাগর হয়ে খুঁজছে আপনাকে।আমাকেও বার কয়েক আপনার কথা জিঙ্গেস করেছিলো।আমি বলেছি আপনার সাথে আমার কন্টাক্ট নেই।”
স্মিত হাসলো সারহান।খসখসে গলায় বললো—
“তোমার কী মনে হয় ইহতিশাম আদৌ তোমার কথা বিশ্বাস করেছে?
খলখল করে হেসে উঠে শায়িখ।রসালো গলায় বললো—
“আমি আপনার একমাত্র অনুজ্ঞাবহ সহচর স্যার।এতো বোকা নই আমি।রাফাত গত দুই মাস ধরে আমাকে চুষে খাচ্ছে শুধু আপনার ঠিকানা জানার জন্য।”
“তো এখন কী করবে তুমি?
“এই মাত্র সিমটা অন করলাম।কথা শেষ করে এই যে হাতির ঝিল দাঁড়িয়ে আছি।সিমটা ডেসট্রয় করে এখানেই ফেলে দিবো।”
ম্লান হাসে সারহান।মখমলে গলায় বললো—
“রাফাত ছেলেটা কিন্তু খারাপ না।”
“অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ স্যার।সেদিন আমার কলার চেপে ধরলো।ইচ্ছে করছিলি ওর নাকটা ফাটিয়ে ওকে ওর বাবার পেশেন্ট বানাই।ছেড়ে দিলাম শুধু জান্নাহ্ এর জন্য।”
সরস গলায় বললো সারহান—
“রাফাতের চিন্তা কারণবিহীন নয়।আমার মতো একজনের সাথে সে তার ভালোবাসার মানুষকে কল্পনা করতে পারছে না।আর তা হওয়ারই কথা।আমি ভালো লোক নই শায়িখ।”
শায়িখ মুখ বিকৃত করে তীর্যক গলায় বললো—
“কিন্তু জান্নাহ্ তো আপনাকে ভালোবাসে।রাফাত এমন কোন দুধে ধোওয়া পুরুষ নয় যে জান্নাহ্কে তার ভালোবাসতে হবে।দীর্ঘ বারো বছরেরও যখন আম খেয়ে আঁটি গুনতে পারলো না ওই ছেলের কোনো অধিকার নেই জান্নাহ্ এর পেছনে আঠার মতো লেগে থাকার।”
সারহান নির্লিপ্ত হাসে।শায়িখ আগ্রহী হয়ে বললো—
“একটা কথা বলবো স্যার?
“হুম।”
“আমার মনে হয় আপনার জান্নাহ্কে সব বলে দেওয়া উচিত।ও যেহেতু সব মেনে নিয়েছে ও নিশ্চয়ই আপনাকে বুঝবে।আর আমার বিশ্বাস আমার স্যার জেনে বুঝে কখনো কোনো ভুল করবে না।”
সারহান দীপ্ত গলায় বলে উঠে—-
“মানুষ মাত্রই ভুল শায়িখ।এখনো সময় হয়নি তার সবটা জানার।জানোতো ক্ষুধার্ত পুরুষ বাঘ নিজের সন্তান কে ভক্ষন করতেও দ্বিধা করে না।।রাখছি আমি।বাই।”
,
,
,
মুখভর্তি বমি করতেই শ্বাসে টান পড়ে জান্নাহ্ এর।অধর চেপে ধরে বার কয়েক বদ্ধ শ্বাস টেনে চোখের পাতা প্রশ্বস্ত করে তাকায়।আজকাল কিছু মুখে দিলেই এমনটা হয়।তা নিয়ে বিচলিত নয় জান্নাহ্।একটু ধাতস্থ হয়ে গ্লুকোজ গোলা পানি পান করে মুক্ত শ্বাস নেয় জান্নাহ্।পাশে রাখা ফালুদা ভর্তি আইসক্রীম এর বাটির ট্রে টা হাতে নেয় জান্নাহ্।গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসে বাগানে।সারহানের দিকে ট্রে এগিয়ে দিয়ে স্বাভাবিক গলায় বললো–
“নিন।খেয়ে ঠান্ডা হোন।”
সারহান শান্ত গলায় বললো—-
“আপনাকে তো রান্নাঘরে যেতে নিষেধ করেছি।”
জান্নাহ্ স্মিত হেসে ঝলমলে গলায় বললো—
“তাহলে ফ্রিজটা বেডরুমে এনে দিন।”
গম্ভীর মুখে চোখে হাসে সারহান।ছোট্ট করে বললো—
“বসুন।”
সারহানের পাশে বসেই তার কাঁধে মাথা রাখে জান্নাহ্।বাটি থেকে আইসক্রীম মুখে দিয়ে নির্বিকার দৃষ্টিতে তাকায় সামনে সারহান।জান্নাহ্ কাতর গলায় প্রশ্ন করে—
“শুভ্রা আপু কেমন আছে সারহান?
সারহান ঝটকা মেরে বলে উঠে—
“জানি না।”
সারহানের কাঁধ থেকে মাথা উঠায় জান্নাহ্।ক্ষীণ গলায় বললো—
“তিতি খুব কাঁদছিলো।আপু নাকি খুব অসুস্থ।কারো সাথে কথা বলে না।শুধু তাকিয়ে থাকে।এমনটা কেন করলেন সারহান?
সারহান চুপ করে রইলো।গুমোট যন্ত্রণা বিক্ষিপ্ত হতে লাগলো।জল ছেপে আসে চোখের কোণে।রুষ্ট গলায় ঘোষণা করে—
“পাপের শাস্তি সবার প্রাপ্য।তার একটা মিথ্যে আমার পুরো জীবনটা অথৈ সাগরে তলিয়ে দিয়েছে।সেদিন যদি ওই বাড়ি থেকে আমি বেরিয়ে না আসতাম তাহলে ইহতিশামের সাথে কখনো দেখা হতো না আমার।না এমন হতো আমার জীবনটা।”
সারহানের কথার পিঠেই বেখেয়ালিভাবেই বলে উঠে জান্নাহ্—-
“তাহলে আপনার সাথেও আমার কখনো দেখা হতো না সারহান।”
সারহান ঘাড় বাকিয়ে তাচ্ছিল্য চোখে তাকিয়ে নিষ্প্রভ গলায় বললো–
“তাহলে আপনার জীবনটাও এমনভাবে নষ্ট হতো না রজনীগন্ধা।আপনি মানেন বা না মানেন এইটা সত্য যে আমি আপনার যোগ্য নই।”
জান্নাহ্ অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো।বিষয় বদলাতে সারহান বলে উঠে—-
“আপনাকে এমন লাগছে কেন?ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করেন না?দিনদিন শুকিয়ে যাচ্ছেন।খাওয়ার কষ্ট দিচ্ছি আপনাকে আমি?
জান্নাহ্ ঝট করেই বললো—-
“আমি কী আপনাকে বলেছি!
অধর কোণে সংকীর্ণ হাসে সারহান।আচমকা মাথা চক্কর দিয়ে উঠে জান্নাহ্ এর।মুখে আইসক্রীম দিয়ে তাকাতেই হেলে পড়তে গেলে ব্যতিব্যস্ত হয়ে জান্নাহ্কে বুকের সাথে চেপে ধরে সারহান।উদ্বেলিত গলায় ডেকে উঠে—
“রজনীগন্ধা,রজনীগন্ধা!
,
,
,
ফট করে উঠেই সারহানকে ধাক্কা মারে জান্নাহ্।মেকি রাগ দেখিয়ে বললো—
“সরুন,অসভ্য লোক!
সারহান মৃদু ছন্দে হাসে।ফিচেল গলায় বললো—
“কী সমস্যা আপনার!এখনো হাত লাগাতেই ছ্যাত করে উঠেন!এতো সুড়সুড়ি কোথায় পান!
“আপনার মাথায়।”
সারহান জান্নাহ্ এর কপালে কপাল ঠেকিয়ে অভিমানি গলায় বললো—-
“আগে বলেন নি কেন আমাকে?
জান্নাহ্ প্রতিক্রিয়াহীন সুরে বললো—
“আমি কেন বলবো!আপনি বুঝে নিতে পারেন না।”
প্রাণখোলা হাসে সারহান।কৃতজ্ঞতার সুরে বললো—
“থ্যাংকস।”
“ভ্যা।”
ভেঙচি কাটে জান্নাহ্।খলখলিয়ে হেসে উঠে সে।সারহান জান্নাহ্ এর গালের উঁচু জায়গায় কামড় বসায়।অতর্কিত এই ভালোবাসার অত্যাচারে জান্নাহ্ নাক ফুলিয়ে বললো—
“অসভ্য লোক।”
সারহান ফিচেল হেসে চাপা গলায় বললো—
“অসভ্য বলেই তো এখন বাবা হবো।নাহলে তো সালমান খান হতাম।”
ঝুমঝুমিয়ে হেসে উঠে জান্নাহ্।তার হাসিতে সারহানের রুক্ষ বুকে প্রশান্তির হাওয়া বইতে লাগলো।দুই হাতে জান্নাহ্কে আলিঙ্গন করে বললো—
“আমার জানপাখি।”
সারহান জান্নাহ্ এর গলায়,গালে অধর ছোঁয়াতে থাকে।সারহানের হাত ধরে আনম্র গলায় জান্নাহ্ বললো–
“আপনি খুশি সারহান?
সারহান এক সমুদ্র হৃদয় ভেজা ভালোবাসা নিয়ে বললো—-
“আমার প্রাণ ফিরিয়ে দিলেন আর আমি খুশি হবো না!
সোনালী রোদের মতো চকচক করে উঠে জান্নাহ্ এর দুই চোখ।তার মনে খুশির হাওয়া পালতোলা নৌকার মতো ফড়ফড় করে বইতে লাগলো।সারহানের উজ্জ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে একটু উঁচু হয়ে ঠোঁট ছোঁয়ায় তার কপালে।বিমুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে সারহান।দুষ্টুমির ছলে বললো—
“পড়লেখা তো সব চাঁন্দের দেশে পাঠালেন।”
জান্নাহ্ চটপটে গলায় বললো—
“তা হবে কেন!বাবু আসলে আবার ভর্তি করিয়ে দিবেন।আমি পড়বো।আর বাবুকে আপনি সামলাবেন।বাবুর ন্যাপি চেঞ্জ করবেন,বাবুকে খাওয়াবেন,ওকে গোসল করাবেন।পারবেন না?
সারহান কিছুক্ষন চুপ থেকে রসালো গলায় বললো—
“পারবো না কেন!না পারলে শিখে নিবো।আর দরকার হলে একটা সুন্দরী আয়া রেখে দিবো।মেয়েরও সুবিধা,বাবারও সুবিধা।”
জান্নাহ্ চোখ মুখ খিঁচে সারহানের কলার চেপে ধরে।খরখরে গরায় বললো—-
“এরপর যদি কোনো মেয়ের দিকে তাকিয়েছেন তাহলে আপনার চোখ তুলে ফেলবো আমি।”
সারহান শ্বাসবন্ধ করে মৃদু হাসে।জান্নাহ্ এর কোমরের দুই পাশে সুড়সুড়ি দিতেই অকস্মাৎ বিছানায় গড়িয়ে পড়ে জান্নাহ্।সারহান তার উপর ঝুঁকে জান্নাহ্ এর অধরে ভয়ংকর,দম বন্ধকর চুমু খায়।মোহবিষ্ট গলায় বললো—
“মাই লাভ বার্ড।”
“তোর পরাণে বাঁধিয়াছি ডোর
তোর হৃদয়ে জীবনের ঘোর
তোর শ্বাসেই আমার বাস
তোর ভালোবাসায় আমার সর্বনাশ।”
চলবে,,,
#জান্নাহ্
#পর্বঃ৬৪
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি
স্নিগ্ধ সকালের এক ঝাঁক উল্লাসিত রোদ এসে ঘুম কেড়ে নেয় জান্নাহ্ এর।জানালার পর্দা কাঁপিয়ে ফিনফিনে বাতাস ঢুকে চোখের পাল্লা নাচিয়ে দিচ্ছে।অগোছালো ঘুম ভেঙে যেতেই জান্নাহ্ আবিষ্কার করে সে জড়িয়ে আছে সারহানের বক্ষস্পন্দের সাথে।যেখান থেকে স্পষ্টত তার উষ্ণ প্রাণশ্বাস আর বুকের ছোট্ট প্রাণপাখির পাখা ঝাঁপটানোর আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে।নিমিঝিমি অক্ষিপুট মেলে তাকায় জান্নাহ্।সারহানের স্নিগ্ধ,নিষ্পাপ আদুরে মুখচ্ছবি দেখে আলতো হাসে।নিজেকে একটু ঘুরিয়ে সারহানের মুখ পানে সমান্তরাল করে।নিজের নরম আদর মাখা হাতের ছোঁয়া দেয় সারহানের ঘুমন্ত মুখে।প্রগাঢ় ভালোবাসায় ডান হাতের তর্জনীর মৃদু স্পর্শ আঁকে সারহানের পুরু পিচ রঙা অধরে।আড়মোড়া ভেঙে নিজের হাতের বলয় আরো জোড়ালো করতেই জান্নাহ্ এর সম্পূর্ণ ভর গিয়ে পড়ে সারহানের বুকে।জান্নাহ্ মৃদু কম্পনে বললো—
“সারহান!
সাবধান!
মুদিত চোখেই স্মিত হাসে সারহান।মাথাটা হালকা নিচে নামিয়ে জান্নাহ্ এর গলায় মুখ গুঁজে দেয়।সারহানের বুকের কাছে আনমনে বলয় আঁকতে থাকে জান্নাহ্।
একটা পাখি এসে বসেছে জানালার গ্রীলে।ছোট্ট চড়ুই পাখি।রোজ আসে।জান্নাহ্ মন ভরে দেখে তাকে।একা আসে না সে।সঙ্গী নিয়ে আসে।অনেক কথা বলে তারা।জান্নাহ্ আড়ি পেতে শোনে।এক ছোট্ট ভালোবাসার ঘরের কথা।দুই জন প্রেমেমত্ত কপোত-কপোতীর কথা।শোনে তাদের সুন্দর আগামীর কথা।
জান্নাহ্ ভাবে,আচ্ছা পাখির কথা কেউ বোঝে?
জান্নাহ্ এর মনে হয় সে বোঝে।সে স্পষ্ট শুনতে পায় তারা কী বলছে।সেদিন যখন জান্নাহ্ একা বাগানে বসে ছিলো তখনও এরা দুইজন সেখানে এসেছিলো।কথা বলছিলো।পাশে জান্নাহ্ তার বাবাকেও দেখতে পায়।সেও শুনছিলো।বর পাখিটি তাদের ফ্যামিলি প্ল্যানিং এর কথা বলছিলো।বউ পাখিটি রেগে গিয়ে বললো,সে এখন বেবি প্ল্যানিং এ একদম প্রস্তুত নয়।ঝগড়া বেঁধে যায় তাদের মধ্যে।জান্নাহ্ কৌতূহলী দৃষ্টিতে ঝুমঝুমিয়ে হাসে।তার বাবা এসে তার পাশেই বসে।মুগ্ধ হাসে সে।জাফিন আলগোছে মেয়ের মাথায় হাত বোলায়।বুক ভরে দোয়া করে তাকে।জান্নাহ্ নরম চোখে তার বাবাকে দেখে।নিগূঢ় মমতা,পরম স্নেহ আর বুক ভরা ভালোবাসা নিয়ে চেয়ে থাকে জাফিন।তারপর ধীরে ধীরে প্রলীন হতে থাকে বাতাসে সে।জান্নাহ্ ফের একা হয়ে যায়।নিজের পেটের উপর হাত রাখতেই চোখে পড়ে তার মাকে।মৃণালিনী বিস্মিত নয়নে ক্ষোভ নিয়ে তাকিয়ে আছে।জান্নাহ্ দোলনা থেকে উঠে দাঁড়ায়।মাকে ছোঁয়ার জন্য একটু একটু করে পা বাঁড়ায় জান্নাহ্।মৃণালিনী ইশারায় অতলস্পর্শী মায়ায় ডাকতে থাকে জান্নাহ্কে।জান্নাহ্ খেয়ালই করেনি কখন তার সামনে একটা বড় ইটের টুকরো এসে পড়েছে।আর এক পা বাড়ালেই ইটের সাথে লেগে সোজা গিয়ে পড়তো জান্নাহ্ সেই ইটের ভাঙা টুকরোর উপর।যাতে করে ওই ভাঙা টুকরোটা গেঁথে যেতো জান্নাহ্ এর উদরে।কিন্তু তার আগেই চড়ুই পাখি দুটো ফুড়ুৎ করে জান্নাহ্ এর চোখের সামনে দিয়ে উড়ে যায়।আকস্মিক ঘটনায় থমকে যায় জান্নাহ্।বেঁচে যায় তার অনাগত সন্তান,প্রাণের শ্বাস নেয় জান্নাহ্।দিকভ্রান্তের মতো তাকাতে থাকে জান্নাহ্।তার মায়ের চোখে ভরা জল।কাতর চোখে তাকিয়ে আছে মৃণালিনী মেয়ের দিকে।জান্নাহ্ ভেজা গলায় ডেকে উঠে—
“মাম্মা,মাম্মা।”
চকিতে থেমে যায় বাতাস।থমথমে পরিবেশ।কিচকিচ করে ডেকে উঠে সেই চড়ুই দুটো।জান্নাহ্কে ডেকে বলছে—
“মিথ্যের মায়ায়,সত্যের জয়
চোখে দেখা সত্য,কভু মিছে হয়
এপারে লেনদেন,ওপারে হিসেব
তাই যত চাই,বেড়ে যায় দায়,
হিসেব মিলেতে প্রাপ্তির খাতায়
তবুও গড়মিল চোখে পড়ে রয়।
যত কষে অঙ্ক,জীবনের হিসেব
হয়ে যায় শূন্য,অন্তিম শয্যায়।”
চোখ সরায় জান্নাহ্।একা থাকলেই সে অনুভব করে তার বাবা মাকে।তার মা কখনো কথা বলে না।তার বাবা তার সাথে কথা বলে।তাকে আশ্বাস দেয়।যেমনটা সারহান দেয়।
গম্ভীর শ্বাস ফেলে সারহানের দিকে তাকায় জান্নাহ্।বেচারা কাল ঘুমাতে পারে নি।বার কয়েক বমি করায় জান্নাহ,তাকে বুকে জড়িয়েই বসে থাকে সারহান।শেষ প্রহরেই ঘুমিয়েছে সারহান।জান্নাহ্ অনিমেষ চেয়ে থাকে তার প্রাণের দিকে।কোমল স্পর্শ করে তার ঠোঁটে।আদুরে গলায় বললো—
“সারহান!
ঘুম জড়ানো গলায় আওয়াজ করে সারহান—
“হুম।”
“আমি রাফাতের সাথে কথা বলবো।”
সময় ব্যয় না করেই সারহান বললো—
“মোবাইল ওখানেই আছে।কথা বলুন।”
জান্নাহ্কে ছেড়ে পাশ ফিরে শোয় সারহান।পেটের উপর হাত রেখে অত্যন্ত সাবধানে বিছানা থেকে পা নামায় জান্নাহ্।বেড সাইড টেবিল থেকে মোবাইল নিয়ে ধীরে ধীরে ছোট ছোট পা ফেলে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়।রাফাতের নাম্বারে ডায়াল করে এক পশলা উচ্ছ্বাস নিয়ে।
ওপাশ থেকে কল রিসিভ হতেই মুক্ত শ্বাস ফেলে খুশি খুশি গলায় বলে উঠে জান্নাহ্–
“কেমন আছো রাফাত?
রাফাত যেনো দুনিয়া কাঁপিয়ে ফেললো।ভয়ংকর অনুভূতি নিয়ে আঁতকে উঠে বললো—
“জান্নাহ্!তুমি!কোথায় আছো তুমি?কেমন আছো তুমি?এতোদিন কোথায় ছিলে?তোমার নাম্বার বন্ধ কেন?
ঝুমঝুমিয়ে হাসে জান্নাহ্।হেসে হেসে বললো—
“শ্বাস নেও রাফাত।এত্তো প্রশ্ন!আমি কোনটা রেখে কোনটার উত্তর দিবো!
উচ্চকিত কন্ঠে রাফাত বললো–
“কোথায় তুমি?
জান্নাহ্ ফিক করে হেসে বললো—
“আমি আকাশে,আমি সাগরে,আমি মাটিতে আর আমি তোমার রেড ওয়াইনে।”
খিলখিল করে আবার হাসে জান্নাহ্।ওপাশ থেকে স্বস্তির শ্বাস ফেলে আশ্বস্ত হাসে রাফাত।তার রেড চেরি ঠিক আছে।জান্নাহ্ অনুসন্ধানী গলায় বললো—
“এই,তুমি এখনো রেড ওয়াইন পান করো নাকি?
মৃদুহাস্য অধরে উত্তর করে রাফাত।দৃঢ় হয়ে বললো–
“আই হেট রেড।”
আওয়াজ করে হেসে উঠে জান্নাহ্।মিইয়ে গলায় বললো—
“ইউ হেট মি?
রাফাত দ্বিধাহীন হয়ে সহজে বলে ফেললো—
“আই লাভ ইউ।
বলা হয়নি কখনো।ভেবেছিলাম বুঝবে তুমি।কিন্তু আমার ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো।বড্ড দেরি করে ফেললাম আমি।”
জান্নাহ ধুম ধরে থাকে বর্ষণের আগ মুহূর্তের মেঘলা আকাশের মতো।যেনো এখনই ভারী বর্ষণ হবে।হলোও তাই।তবে তা মেঘের আড়ালে।মৃদু গলায় বলে উঠে জান্নাহ্—
“তোমাকে যে আরো একজনকে ভালোবাসতে হবে রাফাত।আই এম প্রেগন্যান্ট।ফাইভ মানথ রানিং।”
ধপ করে জ্বলে উঠে রাফাত।রুষ্ট কন্ঠে বললো—
“এইসব কী বলছো তুমি?পাগল হয়ে গিয়েছো?
জান্নাহ্ ক্ষীণ সুরে বললো—
“আমি সত্য বলছি রাফাত।আমি মা হতে চলেছি।”
দাঁতে দাঁত নিষ্পেষণ করে খটমটিয়ে বললো রাফাত—
“এইসব কেন করছো তুমি?মাত্র সিক্সটিন তুমি।এখনই এইসব!
জান্নাহ্ প্রসন্ন গলায় বললো—
“সারহান চায় আমাদের সম্পর্ক আরো স্ট্রং হোক।আজ প্রথমবার সে আমার কাছে নিজ থেকে কিছু চেয়েছে।আমি সারহানকে ভালোবাসি রাফাত।”
রাফাত ঝামটা মেরে বললো–
“ভালোবাসলেই ওর সব কথা শুনতে হবে!নিজের কথা ভাববে না তুমি?
“কে বললো ভাবি নি!আমি ভালো আছি রাফাত।সারহান আমার সম্পূর্ণ খেয়াল রাখে।ঘরের সমস্ত কাজ নিজের হাতে করে।বাবার মতো আমাকে খাইয়েও দেয়।তোমার মতো প্রায়ই আমাকে ঘুরতে নিয়ে যায়।মাম্মার মতো কঠোর যত্নে রাখে আমায়।তোমাদের সবার কম্বিনেশন আমার সারহান।সে বলেছে,সে তার পরীর বেস্ট বাবা হবে।তাহলে কেন আমি তাকে সেই সুযোগ দিবো না?
রাফাত দাম্ভিক শ্বাস ফেলে দাঁতখামটি মেরে বললো—
“পাগল হয়ে গেছো তুমি।কার সাথে কার কম্পেয়ার করছো ?
জান্নাহ্ সরস হেসে বললো—
“ঠিক।আমার সারহান সবার থেকে আলাদা।ভালো থেকো রাফাত।আমি ভালো আছি।ডোন্ট ওয়ারি ফর মি।”
লাইন ডিসকানেক্ট হতেই তা সজোরে নিক্ষেপ করে রাফাত জানালার থাই এ।পুরু থাই গ্লাসে কিঞ্চিৎ ফাটল দেখা দিলেও মোবাইল ভেঙে ছড়িয়ে পড়ে সারা ঘরে।চুল টেনে ধরে নিচে বসে পড়ে রাফাত।গনগনে সূর্যের মতো টগবগ করছে তার মস্তিষ্ক।
ঘুরে দাঁড়াতেই জান্নাহ্ এর নাক ঠেকে সারহানের বক্ষস্থলে।দুর্বোধ্য হাসে সারহান।কোমল গলায় বললো—
“আপনার ব্রেকফাস্ট রেডি।যান ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিন।”
জান্নাহ ভ্রু কুঁচকে শুষ্ক গলায় বললো—
“আপনাকে কে বলেছে এইসব করতে?
“তাহলে কে করবে মাই লাভ বার্ড!
অকস্মাৎ জান্নাহ্ এর অধরযুগল নিজ ওষ্ঠাধরে লুফে নেয় সারহান।জান্নাহ্ ঝাড়া মেড়ে অসহিষ্ণু গলায় বললো—
“ছিঃ!খবিশ।আপনি আসলেই একটা অসভ্য লোক!
ফিচেল হাসে সারহান।জান্নাহ্ ঠোঁট চিপে চোখের পাতায় নমনীয়তা আনে।সারহান বিমুগ্ধ গলায় প্রশ্ন করে—
“কথা বলেছেন?
জান্নাহ্ নির্জীব চোখে তাকিয়ে হালকা হাতে আঁকড়ে ধরে সারহানকে।তার বুকে সন্তর্পনে মাথা রাখে।সারহান দুই হাতের বেঁড়ে বাঁধে জান্নাহ্কে।সারহানের হৃদপিন্ডের স্পন্দন ঝংকার তোলে জান্নাহ্ এর সারা অঙ্গে।জান্নাহ্ এর ছড়ানো চুলে আঙুল হাতড়ে নরম গলায় সারহান বললো—-
“আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড রেগে আছে তাই না?
জান্নাহ্ অস্পষ্ট আওয়াজে বললো—
“হুম।”
সরস গলায় বললো—-
“তাকে বলবেন চিন্তা না করতে।আমি আপনার খেয়াল রাখবো।”
আকাশে গুমোট মেঘ ডেকে উঠে।চকিতে জান্নাহ্ সপ্রতিভ হয়ে বাইরের দিকে তাকায়।বাতাসে ঠান্ডা ঠান্ডা ভাবের উন্মেষ হলো।জান্নাহ্ চোখের পাতা প্রশ্বস্ত করে বললো—
“আজ বৃষ্টি হবে মনে হচ্ছে?
,
,
,
ঝুম বৃষ্টিতে রাতের আকাশ নেচে উঠেছে উল্লাসে।বেলি ফুলের সৌরভে ভরে আছে বারান্দা।ঝুলন্ত টবে জানালার সাথে ঝুলছে মানি প্ল্যন্ট।বারান্দায় সারি বিছানো বেলি,গাঁদা আর গোলাপের গাছ।তার সাথেই পাথর কুচি।বেলি ফুলের গাঢ় সুবাসের সাথে বাতাসে দোল খেলছে গোলাপের মিষ্টি সুপ্ত ঘ্রাণ।হাত বাড়িয়ে বিমুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে মেহনাজ।বৃষ্টির তাল তার মনেও স্বপ্নচূড়ার ডাক দিয়েছে।গাঢ় নিঃশ্বাসের ছন্দ আসে মেহনাজের কানে।পাশ ফিরতেই চমকে উঠে বিদ্যুৎ সেই সাথে মেহনাজের শুষ্ক অধর।কম্পিত হয় মেহনাজ।তার দেহপিঞ্জরে উঠে ঝড়।বেসামাল ঝড়।বিদ্যুৎ চমকানোর সেই তীক্ষ্ম,সংক্ষিপ্ত আলোতে মেহনাজ দেখতে পায় তার স্বামী নামের প্রিয় মানুষটিকে।আলতো হাসে হৃষ্ট গলায় বললো ইহতিশাম—-
“কী দেখছো এমন করে?
মেহনাজ ঘোর লাগা চোখে বললো—
“তোমাকে।এতো দেরি করলে কেন?
ইহতিশাম কোমল হাসে।মেহনাজের চোখের উপর পড়ে থাকা চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে মোহনীয় গলায় প্রত্যুত্তর করে—
“স্যারের কাছে গিয়েছিলাম।স্যার জান্নাহ্ এর কেসটা আমারই এক জুনিয়রকে দিয়েছে।”
ত্রস্ত হয়ে মেহনাজ বললো—
“এখন কী হবে?
মেহনাজের গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে ইহতিশাম নরম সুরে বললো—
“কী আর হবে!আমি তো অলরেডী কেস ক্লোজ করে দিয়েছি।প্রুভ সব ভ্যানিশ করেছি।বাকিটা আই ডোন্ট নো।”
মেহনাজ ব্যস্ত হয়ে বললো—
“তোমার জুনিয়র তো তোমার মতোই হবে।জান্নাহ্ এর কিছু হবে নাতো?এই সারহানটা জান্নাহ্ এর জীবনটা হেল করে দিলো।”
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো ইহতিশাম।বৃষ্টি ভেজা স্নিগ্ধ,শীতল পবনে মিশে গেলো তার তপ্ত নিঃশ্বাস।মিইয়ে গলায় ইহতিশাম বললো—-
“ক্যারিয়ারে আজ প্রথমবার কেস হেরেছি আমি।স্যারের সাথে ঝগড়াও হয়েছে।আমার যতটুকু করার আমি করেছি।বাকিটা জান্নাহ্ এর ভাগ্য।ভাগ্য পরম সত্য।”
একটা দমকা হাওয়ায় মেহনাজের ঘন অরন্যের মতো চুল ছড়িয়ে পড়ে ইহতিশামে মুখে।এক পশলা বৃষ্টির শীতলতা কাঁপিয়ে দেয় দুজনকে।দুর্বল হাতে মেহনাজের কোমর জড়িয়ে তাকে চেপে ধরে নিজের সাথে ইহতিশাম।ইহতিশামের গলায় মুখ গুঁজে দেয় মেহনাজ।মিনমিনে গলায় বললো—
“বাবা,মা সত্যিটা জানলে আমাকে মেনে নিবে তো?
ইহতিশাম আশ্বস্ত গলায় বললো—
“আমি সব জেনেশুনে তোমাকে বিয়ে করেছি।বাবা,মাকে আমি বোঝাবো।”
মেহনাজ শঙ্কিত গলায় বললো–
“যদি বাবা,মা মেনে না নেন?
ইহতিশাম সরব গলায় বললো—
“পৃথিবীতে এমন অনেক পরিবার আছে।এইটা নতুন কিছু নয়।
মেহনাজ বিষন্ন গলায় বললো—
“আমি তোমাকে সেই সুখ কখনো দিতে পারবো না ইহতিশাম।”
ইহতিশাম আশ্বাস দিয়ে বললো–
“একটা সম্পর্ক শক্ত থাকার জন্য প্রয়োজন বিশ্বাস,ভরসা,ভালোবাসা আর একে অন্যকে বোঝার ক্ষমতা।তোমার নিশ্চয়ই আমার উপর সেই আস্থা আছে।”
মেহনাজ অস্পষ্ট গলায় বললো—
“হুম।”
আচমকা মেহনাজের ঠোঁটে গাঢ় চুম্বন করতে গেলে তার চশমা লেগে যায় ইহতিশামে নাকে।বিরক্তি নিয়ে ইহতিশাম বললো—
“তোমার গ্লাসের সাথে আমার কোন জনমের শত্রুতা বলো তো!সবসময় রোমান্সের বারোটা বাজায় আমার।”
মেহনাজ মুচকি হাসে।হাতেল তালুতে ইহতিশামের চিবুক আবদ্ধ করে তার দুই গালে,কপালে চুমুর বর্ষণ ঘটায়।ইহতিশাম বন্দি পিঞ্জিরার পাখির মতো ব্যস্ত হয়ে মেহনাজকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে।মেহনাজ নিজেকে ছাড়াতে চাইলে ধমকে উঠে ইহতিশাম।
“একদম নড়াচড়া করবে না।এই রোমান্টিক ওয়েদার মিস করা যাবে না।”
চলবে,,,