জান্নাহ্,পর্বঃ৯,১০
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি
পর্বঃ৯
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চললো।পশ্চিমাদেশ কমলা রঙের আভায় রাঙানো।প্রভাকর যেনো এখন জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ড।তার চারপাশে লাল আভা ছড়াতে শুরু করলো।ধীরে ধীরে কমলা রঙের আভা রক্তিম আভায় লীন হয়ে যায়।বেশ কিছুক্ষন গনগনে উনুনের মতো জ্বলতে থাকা সূর্য ধীরে ধীরে কালচে নীলাভ আকাশে প্রলীন হতে থাকে।ঢেকে যেতে থাকে দিনের মায়া রাতের ছায়ায়।
ছাদের দড়িতে নেড়ে দেওয়া কাপড়গুলো রোদে শুকিয়ে কড়কড়ে হয়ে আছে।জান্নাহ্ তার বা’হাতের উপর একটা একটা করে কাপড় নিচ্ছে।কাপড় নেওয়া শেষে ঘুরে তাকাতেই তার সামনে জাবিনকে দেখতে পায়।স্থির জাবিনকে হঠাৎ দেখে চকিত হয় জান্নাহ্।জাবিনকে পাশ কাটিয়ে আসতে গেলেই জান্নাহ্ এর হাত চেপে ধরে জাবিন।জান্নাহ্ শিউরে উঠে।ঝাঁমটা মেরে হাত সরিয়ে তপ্ত গলায় বললো–
“জাবিন!
কতোবার বলেছি না এমন করবে না।একদম স্পর্শ করবে না আমাকে।”
জাবিন থমথমে গলায় বললো–
“কেন শুনছো না তুমি আমার কথা!কেন চলে যাচ্ছো না সারহানকে ছেড়ে?
জান্নাহ্ শাসিয়ে উঠে বললো–
“ছিঃ!বড় মানুষের নাম ধরে বলতে লজ্জা করে না তোমার?সে তোমার মামা হয় জাবিন।”
জাবিন তাচ্ছিল্য গলায় বললো–
“ওই সারহানকে নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না।তুমি চলে যাও এখান থেকে।সারহান তোমার যোগ্য নয়।তুমি এর চেয়েও ভালো ডিজার্ব করো।”
জান্নাহ্ ফোঁস ফোঁস করে।বিয়ের আগে যখন জান্নাহ্দের বাড়িতে যায় জাবিন তখন থেকেই দুইজনের একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়।কিন্তু জাবিন কিছুতেই চায়নি সারহানের সাথে জান্নাহ্ এর বিয়ে হোক।সারহানকে ছোট বেলা থেকেই সহ্য করতে পারে না জাবিন।এই বাড়িতে আসার পরও জান্নাহ্ এর সাথে খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো জাবিনের।কিন্তু একদিন এমন কিছু হলো যা জান্নাহ্কে বলার পর থেকে দুই জনের কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়।জাবিন মনেপ্রাণে চায় জান্নাহ্ এই বাড়ি ছেড়ে,সারহান থেকে অনেক দূরে চলে যাক।
জাবিনের কথার প্রত্যুত্তরে ক্রোশভরা কন্ঠে জান্নাহ্ বললো–
“এতোদিন সারহানকে আমি কিছুই বলিনি।কিন্তু এইবার বাড়ি আসলে আমি ঠিক বলবো।তুমি তার নামে আমাকে বাজে কথা বলছো।”
“আমি যা বলেছি সব সত্যি জান্নাহ্।চলে যাও তুমি সারহানকে ছেড়ে।”
“একদম চুপ।আরেকটা কথাও বলবে না তুমি।”
সিড়ি বেয়ে দৌড়ে নামে জান্নাহ্।অন্তরা সামনে পড়তেই পায়ের গতি শিথিল করে সে।অন্তরা মুখ বিকৃত করে তীর্যক গলায় বললেন–
“এইভাবে দৌঁড়াইতেছো কেন!ভূতে ধরছে তোমারে?
জান্নাহ ফাঁকা ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বললো–
“না আম্মা মানে,রাত হয়ে যাচ্ছে তাই কাপড়গুলো তাড়াতাড়ি নিয়ে আসলাম।”
“সারাটা দিন করোকি!এই ভর সন্ধ্যাে বেলায় ছাদে যাও!জওয়ান মাইয়াগো এতো রাইতে ছাদে যাওন ঠিক না।যাও,ঘরে যাও।”
“জ্বী,আম্মা।”
জান্নাহ্ দ্রুত পা চালায়।কিন্তু এখন যদি জাবিনকে দেখতে পায় তাহলে অন্তরা আবার কিছু একটা বলবে তাকে।তাই ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে থম মেরে বসে থাকে সে।জাবিন তখন আর নিচে নামলো না।অন্তরা সিড়িধার থেকে রান্না ঘরের দিকে গেলে নরম পায়ে ছাদ থেকে নেমে আসে জাবিন।
,
,
,
মোবাইলের স্ক্রীন জুম করে জান্নাহ্কে দেখছে সারহান।আজকাল বড্ড মনে পড়ে মেয়েটাকে।শরীরের চেয়ে মনটাই তাকে টানে বেশি।হাতের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে জান্নাহ্ এর ঠোঁট,গলা বুক ছুঁয়ে যাচ্ছে সারহান।নির্নিমেখ চাহনি তার।বিপরীত দিকের কাউচে বসে আছে শ্রীজা।সারহানকে এমন গম্ভীর দেখে বললো–
“কিছু ভাবছো?
সারহান বেখেয়ালিপনায় অস্ফুটভাবে বললো–
“হুম।”
“জান্নাহ্কে ভাবছো?
রহস্য হাসে সারহান।তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায় শ্রীজা।সারহানকে বোঝা দুঃসাধ্য।সরল গলায় শ্রীজা বললো–
“এতো মনে পড়লে ওকে নিয়ে আসো এখানে।সবসময় তোমার কাছে থাকবে।”
মোবাইলটা নামিয়ে শ্রীজার দিকে গাঢ় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সারহান।শ্রীজা এনজিও তে একটা ফাংশন করবে বলে তার অ্যারেঞ্জমেন্ট দেখছে।সারহান উঠে গিয়ে শ্রীজার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।সারহানকে কাছে আসতে দেখে উঠে দাঁড়ায় শ্রীজা।এক ঝটকায় শ্রীজার কোমর চেপে ধরে তাকে নিজের বুকে নিয়ে নেয় সারহান।গভীর চুম্বনে লিপ্ত হয় দুজন।একে অপরের মাঝে গভীরভাবে মত্ত হতেই দরজায় করাঘাত করে শায়িখ।দাঁতে দাঁত চেপে ক্ষেপে উঠে দাঁড়ায় সারহান।নিজেকে ঠিক করে নেয় শ্রীজা।দরজা খুলেই প্রদৃপ্ত গলায় সারহান বললো–
“হোয়াট দ্যা হেল?
এখন কেন এসেছো?
সারহানের ধমকে রুদ্ধবাক হয়ে যায় শায়িখ।তার কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে।হাঁপাচ্ছে সে।ভীতসন্ত্রস্ত শায়িখ ভয়াতুর গলায় বললো–
“স্যার একটা জরুরি কথা ছিলো।”
সারহান কাঠখোট্টা গলায় বললো–
“ভেতরে এসো।”
সারহান থমথমে গলায় প্রশ্ন ছুঁড়ে–
“তুমি কী করে জানলে আমি এখানে?
“আপনার ফ্ল্যাটে গিয়েছিলাম স্যার।আর আজ তো বৃহস্পতিবার।তাই ভাবলাম আপনি এখানেই আছেন।”
শ্রীজা উঠে দাঁড়িয়ে বললো–
“তোমরা কথা বলো আমি তৌহিদের সাথে কথা বলে আসছি।”
“হুম।”
শ্রীজার যাওয়ার পানে গভীর দৃষ্টিতে তাকায় শায়িখ।মেয়েটাকে তার ভদ্র আর সুশীল মনে হয়।কিন্তু সারহানের সাথে সুশীল মেয়েদের আনাগোনা কম।বড় কথা সুশীল মেয়েরা সারহানের সান্নিধ্যেই সুশীলতাহীন হয়ে যায়।তবে তার খটকা ছিলো এতোদিন।কিন্তু আজ শ্রীজাকে দেখে শায়িখ নিশ্চিত হলো বদ্ধদ্বারের ভেতর কিছু তো একটা চলছিলো।
শায়িখ ফোঁস করে এক শ্বাস ফেলে।সারহানকে সে বুঝতে পারে না।একদম ই না।সারহানের কঠিন গলায় হুশ ফিরে শায়িখের।উষ্ণ গলায় সারহান বললো-
“বলো কী বলবে।”
শায়িখ ঘনঘন কয়েকটা শ্বাস নিলো।তারপর অতি উৎকন্ঠার সাথে বললো–
“স্যার,তিথি আর সামিরা ম্যামের কেসটা সিবিআই কে হস্তান্তর করেছে।”
বিগলিত হাসলো সারহান।তীর্যক গলায় বললো—
“সে তো পুরোন খবর।নতুন কী সেইটা বলো।”
শায়িখ ভীত গলায় বললো–
“স্যার,এইবার সামিরা ম্যামের বাবা পার্সোনাল ডিটেকটিভের কাছে কেসটা দিয়েছে।”
সারহান তাচ্ছিল্যপূর্ণভাবে বললো–
“তো?
“সেই ডিটেকটিভ আর কেউ নয় বিখ্যাত ডিটেকটিভ ইহতিশাম।”
খলখল করে হেসে উঠে সারহান।রসালো গলায় বললো–
“ইহতিশাম!রিয়েলী!
“স্যার,আপনি হাসছেন?আজ পর্যন্ত একটা কেসও ফল করে নি তার।
আপনার মনে আছে কয়েকবছর আগে উত্তরার নিজ বাড়িতে বিশিষ্ট ব্যবসায়ি আলফাজ খান খুন হয়েছিলো।সেই কেসটাও ইহতিশাম সলভ করেছে।বেচারা আলফাজ নিজের মেয়ের হাতেই খুন হয়েছিলো।”
সারহান মৃদু হাসলো।শায়িখ ভোলা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।এই লোকটাকে সে কিছুতেই বুঝে না।উদ্বেগভরা কন্ঠে শায়িখ আবার বললো–
“স্যার,যদি ইহতিশাম জানতে পারে তারা আপনার গার্লফ্রেন্ড ছিলো।তাহলে তো…।”
সারহান দারাজ গলায় বললো–
“বাঘ দেখোছো?পুরুষ বাঘ নাকি খিদের জ্বালায় নিজের সন্তানকেও খেয়ে ফেলে!
সারহানের কথায় হতভম্ব শায়িখ আহত নয়নে তাকিয়ে থাকে।সে কিছুই বুঝতে পারলো না।শায়িখের ভয় কমানোর জন্য বললো—
“ডোন্ট ওয়ারি শায়িখ। জাস্ট রিলেক্স।”
“বাট স্যার..।”
“সরফরাজ মাহমুদের কোনো খোঁজ পেলে?
“ওপস!ভুলেই গেছি।তিনি আপনাকে দেখা করতে বলেছেন।”
“তাই নাকি!কবে?
“জ্বী কালই।”
“ওকে।”
শায়িখ এখনো আশ্বস্ত হতে পারলো না।তার মস্তিষ্ক জুড়ে খেলছে সারহানের কথা।ক্ষুধার্ত বাঘ নিজের সন্তানদের ভক্ষন করে।এই কথায় কী বুঝাতে চায় সে?
,
,
,
বারে বসে মদ গিলছে রাফাত।আজ সে অনেক খুশি।আজ রাতের বারোটা পর্যন্ত যত কাস্টমার আসবে সবাইকে ট্রিট হিসেবে ফ্রি তে ড্রিংক করার অফার করেছে সে।পুরো খরচ সে দিবে।ইশাক শুধু অবাক পানে চেয়ে আছে রাফাতের দিকে।সেদিন জান্নাহ্ এর সাথে ধাক্কা খাওয়ার পর থেকে রাফাত অদ্ভুত আচরণ শুরু করেছে।ইশাক অনেকবার জিঙ্গেস করার পরও মুখ খুলে কিছু বলে নি।মাতাল অবস্থায়ও ভুলভাল বকে রাফাত।তবুও শেষ চেষ্টা হিসেবে ইশাক প্রশ্ন করে–
“তুই কী তোর রেড চেরির দেখা পেয়েছিস?
রাফাত উদ্ভ্রান্তের মতো হাসলো।তারপর একদমে চুপ হয়ে যায়।চাপা গলায় বললো–
“মাই লাভ কুইন,মাই জানেমান।মাই রেড চেরি।এইবার তোমাকে আমার কাছে আসতেই হবে।”
ইশাক বিরক্ত হয়।কী জিঙ্গেস করেছে আর কী বলছে!ইশাক অস্বস্তিকর গলায় বললো–
“চলতো,একদম ভালো লাগছে না আমার।”
রাফাত ড্রিংসের গ্লাস হাতে নিয়ে হেলেদুলে বললো–
“আমার লাগছে।এই,এই দেখ আমার রেড চেরি।কী সুন্দর ওর ঠোঁট দুটো!কী সুন্দর হাসি!ওর চোখগুলো দেখ,একদম ফোঁটা পদ্মের মতো।আর ওর চুল।একদম রেশম কালো।”
রাফাত তার গ্লাসের দিকে তাকিয়ে আবোলতাবোল বলে যাচ্ছে।ইশাকের অস্বস্তি বাড়তে থাকলো।রাফাত আগে মদ খেতো না।কিন্তু যখন থেকে তার রেড চেরি তাকে ছেড়ে চলে গেছে তখন থেকে রোজ মদ গিলে।হয় বারে না হয় ঘরে।রাফাত আবার বলতে শুরু করে।
“কেন হারিয়ে গেলো ও বলতো!আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করলে কী এমন ক্ষতি হতো।আমি যে আজোও ওকে ঠিক তেমন করেই ভালোবাসি।আমার ভালোবাসার প্রথম ফোঁটা পদ্ম সে।কী করে আমি তাকে ভুলি!
রাফাতের গলা ধরে আসে।ইশাক রাফাতের এইসব শুনতে শুনতে অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছে।ড্রাংকড হওয়ার পর সব আবোলতাবোল বললেও এই একটা কথা একদম ঠিক বলে।তার রেড চেরির কথা।”
চলবে,,,
#জান্নাহ্
#পর্বঃ১০
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি
ঠাস করে এক চড় মারে অন্তরা জান্নাহ্ এর গালে।নির্বাক হয়ে যায় জান্নাহ্।কঁকিয়ে উঠে সে।অন্তরা খেঁকিয়ে উঠে বললেন–
“শরম করলো না!আমার ওই চান্দের লাহান নাতিডারেও বশ করলি!
প্রথমে তো আমার পোলাডারে কাইরা নিলি নাগিন।এখন আবার আমার নাতিডারেও জাদু করলি!এক নাগরে হয় না তোর?
জান্নাহ্ মৃদু ধরা গলায়–
“আম্মা,এইসব কী বলছেন আপনি?
“চুপ।একদম কথা কবি না।তুই কী ভাবছোস আমি কিচ্ছু বুঝিনা!
জান্নাহ্ ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে।বাড়ির সবাই সেখানে উপস্থিত হলেও অন্তরার কথার উপরে কেউ কথা বললো না।আজ জান্নাহ্ স্কুল থেকে ফেরার সময় দেখে জাবিন দাঁড়িয়ে আছে।সে কোনোভাবেই জান্নাহ্কে এই বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার জন্য রাজী করাতে পারছে না।জান্নাহ্ এর প্রাণ সংশয়ে উৎকন্ঠিত জাবিন।দুই জনের কথার মাঝখানে এলোমেলো হাঁটতে গিয়ে একটা চলন্ত গাড়ির সাথে ধাক্কা লাগে জান্নাহ্ এর।পায়ের অনেকখানি কেটে যায়।তাই তাকে ধরে বাসায় নিয়ে আসে জাবিন।আর তা দেখেই খটমটিয়ে উঠে অন্তরা।
অন্তরার কথায় ফুঁসলে উঠে জাবিন।প্রতিবাদ করে বললো–
“নানুমা,আর একটা বাজে কথা বলবে না জান্নাহ্কে।”
শুভ্রা ছেলের গালে ঠাস করে এক চড় বসিয়ে দেয়।রাগী গলায় বললো–
“বড়দের মুখে মুখে তর্ক!এইসব শিখেছিস?
জাবিন বিদ্রুপপূর্ণ হাসে।উপহাসমিশ্রিত গলায় বললো–
“বড়দের সম্মান!সম্মান তাদের করতে হয় যারা সম্মানের পাত্র।তোমার মা আর তার ছেলে কোন সম্মান পাওয়ার যোগ্যতাই রাখে না।”
জ্বলন্ত চোখে জাবিনের দিকে তাকায় অন্তরা।গমগমে গলায় বললো–
“বেদ্দপ পোলা।নিজের মামার নামে এইসব কইয়া বেড়াস।যা এখান থেকে।দুর হ।”
শুভ্রা নিজের ছেলেকে টেনে নিয়ে যায়।জমির নিরুত্তাপ।শীতল গলায় বললেন–
“অন্তরা,এখন এইসব বাদ দাও।তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে।”
“কী কন আপনি!কিসের ভুল!এই মাইয়া আমার পোলার ভাত খাইবো না।এর এক নাগরে অয় না।তার আরো লাগবো।”
জমির বিরক্তি নিয়ে বললেন–
“সেরাজ এখানে অন্তরা।একটু তো সম্পর্কের লেহাজ করো।”
অন্তরা শক্ত গলায় বলে উঠে–
“জামাই,তুমি যাও এইহান তে।”
সেরাজ তাকিয়ে ছিলো জান্নাহ্ এর সরু নিতম্বের দিকে।শাশুড়ির ধারালো কন্ঠে সম্বিৎ ফিরে পায় সেরাজ।ধীর পায়ে সেখান থেকে সরে আসে।অন্তরা ফুঁসে উঠে বললেন–
“এর লাইগাই তুমি বাচ্চা লও না।বাচ্চা লইলে এই রঙ ঢঙ করবা কেমনে!
“আহ!অন্তরা।কী বলছো এইসব?
“ঠিক ই কইতাছি আমি।এইবার সারহান আসুক বাড়ি।এই মাইয়ারে আমি বিদায় কইরা ছাড়ুম।”
জমির সবটা সামলে নেওয়ার জন্য বললেন–
“হয়েছে।যা করার সারহান আসলে করো।এখন ওকে যেতে দাও।
জান্নাহ্ তুই ঘরে যা মা।”
জান্নাহ্ হালকা হাতে চোখের পানি মুছে নেয়।নিঃশব্দে বেরিয়ে আসে ঘর থেকে।নিজের ঘরে এসে ঝুমঝুমিয়ে কাঁদতে থাকে জান্নাহ্।আর কতো সহ্য করবে সে!সব কী তার দোষ!সারহান চায় না এখন কোন সন্তান।তাহলে সে একা কী করবে!পুরুষবিহীন একজন নারী কী করে সন্তান জন্ম দিতে পারে?
জান্নাহ্ এর মোবাইল বেজে উঠে।রিসিভ করেই ফুঁপাতে থাকে জান্নাহ্।তার ফর্সা মুখটা নীল হয়ে আছে।চোখগুলোও ফুলে গেছে।ওপাশ থেকে মোহনীয় গলায় সারহান বললো–
“কাঁদছেন রজনীগন্ধ্যা?
জান্নাহ্ এর আজ কিছু হলো।সে একটুও ভয় করলো না সারহানের।তপ্ত গলায় বলে উঠে–
“যাবো না আমি স্কুলে।পড়বো না আমি আর।আপনি আমাকে বাচ্চা দিন।”
স্মিত হাসে সারহান।তার রজনীগন্ধ্যা ক্ষেপেছে।সারহান নরম গলায় বললো-
“মা আবার বকেছে আপনাকে?নাকি গায়েও হাত তুলেছে?
জান্নাহ্ রেগে বললো–
“কিচ্ছু না,কিচ্ছু না।এইবার বাড়ি এলে আপনি আমাকে বাচ্চা দিবেন।”
জান্নাহ্ এর বোকা বোকা কথায় হেসে ফেলে সারহান।মৃদু গলায় বললো–
“এক বাচ্চা আরেক বাচ্চা দিয়ে কী করবে!আগে বড় তো হয়ে নিন।”
“কে বললো আমি ছোট!আমি ছোট না।”
সারহান বিগলিত হাসে।কোন কথা বললো না সে।এপাশ থেকে জান্নাহ্ও নিশ্চুপ।একে অপরের নিঃশ্বাস গুনছে তারা।নিস্তব্ধতা ভেঙে কাতর গলায় ডেকে উঠে জান্নাহ্–
“সারহান!
“বলুন।”
“আম্মা বলেছে,বাচ্চা না হলে সে আপনাকে আবার বিয়ে করাবে।”
সারহান স্বশব্দে হেসে উঠে।নিজের হাসিকে প্রশমিত করে বললো–
“মানুষের জীবনে বিয়ে একবারই হয় রজনীগন্ধ্যা।আর আমার বিয়ে তো হয়ে গেছে।”
“সারহান!
“শাড়ি পড়েন।আমি আসছি রজনীগন্ধ্যা।”
লাইন কেটে দেয় সারহান।ল্যাপটবে অক্ষি নিবদ্ধ তার।সারহান তার রুমে হিডেন ক্যামেরা লাগিয়েছে।যা দিয়ে এখান থেকে সে তা কন্ট্রোল করতে পারে।জান্নাহ্কে দেখছিলো সে।কেঁদে চোখ,মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে।মেয়েটা একদম চিনির দলা।তাপ লাগলেই গলে যায়।আর এই চিনির দলাই সারহানের প্রাণপাখি।জান্নাহ্কে কাছে পাবার তীব্র বাসনা জাগে সারহানের মনে।সেই মুহুর্তেই সেখানে উপস্থিত হয় শায়িখ।চোখে মুখে অবসাদ।কপালে চিন্তার ভাঁজ।সারহানের সামনে বসেই বললো–
“স্যার,কাল সকালেই সরফরাজ মাহমুদ আপনাকে দেখা করতে বলেছে।ফেনীতে নাকি একটা ইয়াবা চক্র ঢুকেছে।”
সারহান খানিক ভেবে উঠে দাঁড়ায়।সরস গলায় বললো–
“তাকে বলে দিও আমার এক সপ্তাহ সময় লাগবে।বাড়ি যাচ্ছি আমি।”
শায়িখ উদ্বেগ নিয়ে বললো–
“স্যার!
এখন বাড়ি!
“হুম।এখনই।তুমি ফ্ল্যাটেই থেকো।আমি আসলেই তোমার ছুটি।
বাই।”
সারহান দ্রুতপায়ে বের হয়।এখন বাজে দুপুর তিনটা।সন্ধ্যে ছয়টার মধ্যেই সে বাড়ি পৌঁছে যাবে যদি কোনো বাঁধা না থাকে।
শায়িখ ইদানিং সারহানের ব্যবহারে কিছুই ধরতে পারে না।দীর্ঘশ্বাস ফেলে শায়িখ।
,
,
,
বইয়ে মুখ গুঁজে বসে আছে জান্নাহ্।কাল তার ইংরেজী ক্লাসটেস্ট।এরমধ্যে সারহান আসছে।মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে।সারহান আসলে না পড়া হবে না স্কুলে যাওয়া।ভাবতেই ঝিমঝিম করে উঠে জান্নাহ্ এর মস্তিষ্ক।তবুও যথাসাধ্য নিজেকে শান্ত রেখে পড়া চালিয়ে যাচ্ছে।আর ফাঁকে ফাঁকে ঘড়ি দেখছে।আজকাল স্কুলেও তাকে তটস্থ থাকতে হয়। প্রায় দুই ঘন্টা হতে চললো।জান্নাহ্ আবার কল করে সারহানকে।জানতে পারে তার আসতে একটু দেরি হবে।একটা কাজ এসে পড়েছে।স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে জান্নাহ্।এই সময়টুকুই সে চাইছিলো।আরো এক ঘন্টা লাগলো নিজের পড়া কভারআপ করতে।ঘর গুঁছিয়ে একটা লম্বা শাওয়ার নেয় জান্নাহ্।খুব খিদেও পেয়ে যায়।সারহান আসলে আর খাওয়াও হবে না।তাই আগেই কিছু একটা খেয়ে নেয়।
ঘড়িতে রাত আটটা।সারহান এখনো আসেনি।একটা গাঢ় নীল রঙের জামদানি পড়েছে জান্নাহ্।চুলে হাত খোঁপা করে চোখে কাজল দেয়।চুড়ি জান্নাহ্ এর পছন্দ হলেও এখন আর পড়ে না।সারহান রাগ করে।একবার চুড়িতে সারহানের বুকে আচড় লাগে।নিজেকে পরিপাটি করে আবারো পড়তে বসে জান্নাহ্।বিছানার কোণায় বসে পড়তে পড়তে কখন যে চোখ লেগে আসে বুঝতে পারে নি।
রাত দশটা।খেতে বসেছে সবাই।জাবিন এখনো বেজায় চটে আছে অন্তরার উপর।রাগ করে সারাদিন না খেয়ে ছিলো।জমির অনেক কষ্টে ধরে বেঁধে নিয়ে এসেছে।সেরাজ নির্লিপ্ত।এইসবে তার তেমন আগ্রহ নেই।সে অন্য ধ্যানে মগ্ন।
ডোরবেল বাজতেই সচকিত হয় সবাই।এতো রাতে কেউ তো আসার নেই।শুভ্রা দরজা খুলে হতবুদ্ধি হয়ে যায়।সারহান!
বিস্মিত গলায় প্রশ্ন ছুঁড়ে শুভ্রা–
“সারহান তুই?
সারহান মুখে গম্ভীরতা ধরে রেখে হেয়ালি গলায় বললো–
“কেন?
আমার বাড়িতে আমি আসতে পারি না?
ঘরে ঢুকে সোজা ডাইনিং এর চেয়ার টেনে বসে সারহান।তার ক্ষীপ্ত সরল দৃষ্টি অন্তরার দিকে।অন্তরা বুঝতে পারলেন হয়তো জান্নাহ্ কিছু বলেছে তাই আজ প্রথম তার ছেলে একই মাসে দুইবার বাড়িতে এসেছে।শান্ত ও শীতল গলায় সারহান বললো–
“কেমন আছেন মা?
অন্তরার মনটা ভার হয়ে আসে।আজ প্রায় বারো তেরো বছর ধরে সারহান তাকে আপনি সম্মোধন করে।যা অন্তরার মনটা বিষিয়ে তোলে।তবুও মুখে স্বাভাবিকতা ধরে রেখে বললো–
“আজ হঠাৎ…।”
“কেন!এই বাড়িতে আসার অধিকার আমার নেই নাকি!
“তা হইবো কেন!এইটাতো তোরই বাড়ি বাপ।যহন মন চায় আসবি।”
অধর কোণে হাসে সারহান।জমিরের দিকে তাকিয়ে বললো—
“তোমাকে আরো শক্ত হওয়া উচিত ছিলো বাবা।তাহলে হয়তো তোমার ভাগ্যটা আরো ভালো হতো।”
সারহানের কথায় সবাই একে অন্যের দিকে তাকায়।তাদের এই ভূত দেখার মতো মুখভঙি দেখে সারহান ফস করে হেসে ফেলে।হেসে হেসে বললো–
“এতো সিরিয়াস হওয়ার কিছু নেই।
শুনলাম পাশের বাড়ির রজত ভাইয়ার মা নাকি সিড়ি দিয়ে পড়ে পা ভেঙে ফেলেছে।স্চু স্চু,আফসোস! এই বয়সে হাড় ভাঙলে কী জোড়া লাগে মা!
সকলের দৃষ্টি আবদ্ধ হয় অন্তরার দিকে।জাবিন ক্রুর হাসে।সে প্রসন্ন হয়েছে।ধুম করে উঠে দাঁড়ায় সারহান।শুভ্রা ব্যস্ত হয়ে বললো–
“খাবি না।”
“নাহ।খেয়ে এসেছি আমি।জান্নাহ্ খেয়েছে?
শুভ্রা দ্বিধান্বিত হয়ে বললো–
“সন্ধ্যায় একবার দেখেছিলাম।আরতো দেখিনি।ভাবলাম পড়ছে হয়তো।”
সারহান একটা প্লেট নিয়ে তাতে খাবার নিয়ে সোজা নিজের বেডরুমের দিকে হাঁটা ধরে।
সেরাজের চোখে ঘুম নেই।সারহান আসার পর থেকে তার শরীরে টান পড়েছে।তিতিকে বুকে জড়িয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে শুভ্রা।সেরাজ শুভ্রার কাঁধে হাত রাখতেই বিরক্তি নিয়ে তা সরিয়ে দেয় শুভ্রা।খসখসে গলায় বললো–
“কী শুরু করলে তুমি?আর একবার যদি গায়ে হাত দিয়েছো তো ধাক্কা মেরে ফেলে দিবো।অসহ্যকর!এখনো কুটকুটানি কমে না শরীরের।ছেলেটা বড় হয়েছে।একটু তো সামলাও নিজেকে।যত্তসব!
নিজেদের মধ্যে একফুটের মতো দূরত্ব রেখে ফের ঘুমে মগ্ন হয় শুভ্রা।সেরাজ ফোঁস করে এক শ্বাস ফেলে।চিত হয়ে শুয়ে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।তার চোখের সামনে ভেসে উঠে জান্নাহ্ এর অনাবৃত দেহ।যার প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিভোর হয়ে অবলোকন করছে সেরাজ।
সারহানের উন্মুক্ত বুকের সাথে জড়িয়ে আছে জান্নাহ্ এর অর্ধ বিবসনা দেহ।সারহান তার স্বভাবসুলভ কাজে ব্যস্ত।কিছুটা সংশয় নিয়ে ভীত গলায় জান্নাহ্ বললো–
“সারহান!
সারহান অস্ফুট আওয়াজ তোলে–
“হু।”
“কাল আমার ইংরেজি ক্লাসটেস্ট।”
“তো?
“আপনি?
“আমি কী আপনাকে স্কুল যেতে কখনো নিষেধ করেছি!
জান্নাহ্ এর ঠোঁটে ফুটে উঠে মসৃন হাসি।জান্নাহ্ এর সারাশরীরে বিচরণ চলছে সারহানের।তার শরীরের সৌরভে উন্মাদ হয়ে উঠে সারহান।জান্নাহ্ এর ঠোঁট,গলা,বুকে চুমুতে ভরিয়ে তোলে।জান্নাহ্ যখন পুরোই সারহানের দখলে তখনই সারহান জান্নাহ্ এর সেই পুরোনো ক্ষত জায়গায় একটা কামড় বসিয়ে দেয়।মৃদু গোঙানির আওয়াজ বের জান্নাহ্ এর মুখ থেকে।
চলবে,,,