জীবনতরী #পর্ব৫

0
345

#জীবনতরী
#পর্ব৫
Hasin Rehana – হাসিন রেহেনা

প্রথম সপ্তাহটা খুব কষ্টে কাটল সাদিয়ার। একে তো নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারছে না। আর ওদিকে কোচিং এর পরীক্ষাগুলো আশানুরূপ হচ্ছেনা। আসলে বাসার পরিবেশে পড়াশুনা করে অভ্যস্ত সাদিয়া এখানে মন দিয়ে পড়তেই পারছেনা। এই যেমন এখন, চোখের সামনে প্রাণীবিদ্যা বইটা খুলে বসে আছে। কিন্তু মনোযোগ নেই বইএর পাতায়।

সিমির বান্ধবী এসেছে সন্ধ্যায়। গ্রুপস্টাডি করতে আসলেও আড্ডাটাই হচ্ছে মূলত। জেবিন চাপাস্বরে ফোনে কথা বলছে। ফোনের ওপ্রান্তে কে, সেটা অনুমান করা কঠিন নয়। নাফিসা শুয়ে শুয়ে ফেইসবুক স্ক্রল করছে। কি এমন আছে ফেইসবুকে, বোঝে না সাদিয়া। তাই বরং হিউম্যান এনাটমি বুঝতে মনোনিবেশ করল।

সাদিয়ার ফোনটা বেজে উঠল। স্ক্রিনে ভাসছে “বাবা”।

” হ্যালো আব্বা। কেমন আছো।”

“হ্যা, আমি ভাল আছি আব্বা।”

“পড়াশুনা হচ্ছে মোটামুটি।”

“হ্যা আব্বা, চেষ্টা করতেছি।”

“আম্মাকে দাও।”

ওপ্রান্তে কিছুক্ষনের জন্য নিরবতা নেমে এল। তবে সেটা দীর্ঘস্থায়ী হল না। সাদিয়ার মা আসেপাসেই ছিলেন।

” হ্যালো আম্মা।”

” আমি ভাল আছি আম্মা।”

“হ্যা খাওয়াদাওয়া করি ঠিক মত। এত চিন্তা করো না আম্মা।”

“ঈদের ছুটিতে আসবো। রাখি এখন।”

আরও কিছুক্ষণ পড়ার চেষ্টা করল সাদিয়া। একসময় বুঝল, লাভ হচ্ছে না। তাই বইটা বন্ধ করে দিল। বারান্দায় গিয়ে বসল কিছুক্ষন।

কিছুক্ষন বাদে ফোনটা হাতে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল সাদিয়া। এয়ারফোন কানে গুজে হালকা একটা স্লিপিং মিউজিক ছেড়ে দিল হাই ভলিউমে। রুমের পরিবেশ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করার একটা চেষ্টা বলা যায়। ভোর তিনটায় এলার্ম সেট করে ফোনটা বালিশের পাশে রেখে দিল। একটা ওড়না ভাজ করে কানামাছি খেলার মত চোখের চারপাশে ঘুরিয়ে নিল।

ঘুমাতে হবে। যে করেই হোক। তাহলে হয়ত ভোরবেলা বাকি পড়া শেষ করতে পারবে। কোচিংএর পরীক্ষাগুলো খারাপ করতে করতে মনোবল ভেংগে যাচ্ছে। এটা হতে দেওয়া যাবে না কিছুতেই। তাই এখন থেকে যেভাবেই হোক সিলেবাস শেষ করতে হবে প্রতিটা টিউটোরিয়ালের আগে। চিন্তা করে সাদিয়া।

মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল এখন থেকে রুমে সারাদিন যখন কেউ থাকে না সেই সময়টা মন দিয়ে পড়বে। রাতের জন্য কোন পড়া ফেলে রাখবে না। আস্তে আস্তে ঘুমের সময়টা বদলাতে হবে। ভোরবেলা যখন সবাই ঘুমায়, সেই সময়টা কাজে লাগাতে হবে। এসব চিন্তা করতে করতে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল সাদিয়া।

ভোরবেলা ভাইব্রেশন শুনে ঘুম ভাংল সাদিয়ার। সন্ধ্যারাতে ঘুমানোর কারনে উঠতে বেশি কষ্ট হল না। সন্তর্পণে বিছানা থেকে নেমে হাতমুখ ধুয়ে এসে চেয়ারটেবিলে বসে পড়ল। রুমের লাইট জ্বালালোনা এক মুহুর্তের জন্যও। গতকালই একটা টেবিলল্যাম্প কিনে এনেছে ও। ওটা জ্বালিয়ে নিয়ে পড়া শুরু করল।

ফজরের আজানের আগ পর্যন্ত বইএর পাতা থেকে মুখ তুলল না সাদিয়া। বাবা ঠিকই বলত, এসময় পড়া আতঃস্থ হয় খুব দ্রুত। আরও কিছুক্ষণ পড়ে চেয়ারটেবিল থেকে উঠল ও। নামাজ পড়ে এক মগ কফি বানিয়ে নিল ঝটপট। ওয়াটার হিটারটা ভাল কাজে দিচ্ছে।

মগ হাতে বারান্দায় গিয়ে বসল সাদিয়া। বারান্দার এ পাশটায় একটা জলার মত আছে। কাজেই ঢাকা শহরের এই ঘিঞ্জি এলাকায়ও এই বারান্দা থেকে আকাশ দেখা যায়।

একটানা পড়তে পড়তে মাথায় জট পাকিয়ে গিয়েছিল। ভোরের লালচে আকাশ, আর মৃদুমন্দ বাতাস ভোজবাজির মত সেই জটগুলো ছাড়িয়ে দিল যেন।

কফিতে শেষ চুমুক দিয়ে আবার গিয়ে বসল পড়াশুনায়। এখন থেকে টিউটোরিয়াল কীভাবে খারাপ হয় সেটা দেখেই ছাড়বে সাদিয়া।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here