জীবনতরী #পর্ব৮

1
776

#জীবনতরী
#পর্ব৮
Hasin Rehana-হাসিন রেহেনা

সাদিয়ার ভর্তি পরীক্ষা হয়ে গেছে। মেডিকেল ছাড়া অন্য কোথাও ফর্ম তোলেনি দেখে পরীক্ষা শেষ করেই বাসায় চলে এসেছে ও। তমাল কয়েকবার বলেছিল এট লিস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফর্ম তুলতে। কিন্তু সাদিয়া ওর জেদ থেকে সরে আসেনি। ওর ভাষ্যমতে, “অপশন থাকলে মনযোগ কমে যাবে”। শেষের দিনগুলোতে দিনরাত এক করে ফেলায় ভালই স্বাস্থ্যহানি হয়েছে সাদিয়ার। বাবার সাথে বাড়িতে পা রাখতেই, মেয়েকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলেন সাদিয়ার মা।

” এ কি চেহারা হয়েছে তোর?”

” ও কিছু না মা, কয়েকদিন বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাবে৷ ”

” আমার মেয়ে যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে তোমার কপালে দুঃখ আছে সাদিয়ার বাবা।”

স্ত্রীর কথায় মৃদু হাসলেন সিদ্দিক সাহেব। তারও তো কষ্ট লাগছে মেয়েকে দেখে। নিজের স্বপ্নের বোঝা মেয়ের জন্য কি বেশি ভারি হয়ে গেল কি না চিন্তা করছেন তিনি।

“আহ সাদিয়ার মা, মেয়েটা কত দূর থেকে আসছে। ক্ষিধা লাগছে না? ভাত বাড়ো। যা মা, হাতমুখ ধুয়ে আয়।”

স্বামীর কথায় সম্বিত ফিরে পেলেন সাদিয়ার মা। ছুটলেন রান্নাঘরে।

সাদিয়াও মায়ের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে আজন্ম বড় হওয়া ঘরটার দিকে পা বাড়ালো।

প্রায় আধাঘন্টা পরেও কোনও সাড়া না পেয়ে মেয়েদের ঘরে ঢুকলেন সাদিয়ার মা। মেয়েটা হাতমুখ না ধুয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে। পরনের জামাকাপড়ও বদলায় নি। ডাকতে গিয়েও মেয়ের ক্লান্ত মায়াময় চেহারা দেখে ফিরে আসলেন তিনি।

সাদিয়া ঘুম থেকে উঠে দেখল সন্ধ্যা হয়েছে অনেক আগেই। অন্য সময় হলে সন্ধ্যাবেলার ঘুম এই বাড়িতে নিষিদ্ধ। অথচ আজ বাবা মা কেউ ডাকেনি একবারও। ফ্রেশ একটা গোসল দিয়ে মায়ের ঘরে গেল সাদিয়া। পিচ্চিটা পড়ছিল, বোনকে দেখে ঝাপিয়ে পড়ল, যেন কত কালের হারানো সম্পদ ফিরে পেয়েছে।

“আম্মা ডাকো নি ক্যান? ঘুমায়ে গেছিলাম একদম।”

“একদম ছোটবেলার মত জড়সড় হয়ে ঘুমাচ্ছিলি। মায়া লাগল খুব।”

” ক্ষুধা লাগছে মা।”

” একটু বস, আমি প্লেটে করে ভাত নিয়ে আসি।”

ঝটপট খাবার নিয়ে আসতেই সাদিয়া আবদার করল,

“আম্মা কতদিন তোমার হাতে খাই না।”

“আম্মা আমিও”, ফোড়ন কাটল সামিয়া।

এর পরের দৃশ্যটা সহজেই অনুমেয়। মায়ের দুইপাশে বসে গোগ্রাসে খেতে লাগল দুই বোন। অবশ্য দুইতিন লোকমা খাওয়ার পরেই সামিয়ার পেট ভরে গেল। ভর সন্ধ্যাবেলায় ক্ষুধা ছিলনা আসলে, বোনের সাথে খাওয়ার লোভে বসে পড়েছিল।

খাওয়াদাওয়া করে সাদিয়া আবার ঘুমাতে চলে গেল। বিছানায় শুয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো অনেকগুলো মিসড কল। আর একটা টেক্সট।

“মানুষ পৌঁছে একটা ফোন তো করে বুড়ি।”

কথা বলতে ভাল লাগছে না। ছোট্ট একটা ম্যাসেজ লিখল সাদিয়া।

“ঘুমায়ে পড়ছিলাম ভাইয়া, সরি।”

সেন্ড অপশনে চাপ দিয়ে আবার দুচোখ বন্ধ করল ও। ঘুমে দুচোখ ভেঙে আসছে। কতকালের বকেয়া ঘুম।

চলবে..

1 COMMENT

  1. অনুমতি ছাড়া গল্প কপি করতে লজ্জা করে না? জীবনতরী সবগুলো পর্ব ডিলিট করুন। অন্যথায় ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here