জীবনতরী #পর্ব_৪

0
411

#জীবনতরী
#পর্ব_৪
Hasin Rehana – হাসিন রেহেনা

রাত আটটার মধ্যেই বাকি রুমমেটরা ফিরল। সিমি সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল সাদিয়ার। চারজনের মধ্যে সিনিয়র জেবিন। একটা প্রাইভেট ফার্মে ইন্টার্নশিপ করছে। দুয়েক মাসের মধ্যে হয়ত পার্মানেন্ট হয়ে যাবে। সিমির পরিচয় তো ইতোমধ্যেই জানা হয়ে গেছে। আরেকজোন হচ্ছে নাফিসা, সাদিয়ার মতই ভর্তি পরীক্ষার্থী, খুবই হাসসোজ্জল একটা মেয়ে। খুব সহজেই ভাব জমিয়ে ফেলল সাদিয়ার সাথে। ঠিক হল কাল সকালে একসাথেই কোচিং সেন্টারে যাবে। সাদিয়া কিছুটা সাহস পেল একা চলাফেরা করতে হবে না ভেবে।

রাতের খাওয়াদাওয়া সেরে টেবিলে বইখাতা গুছিয়ে ফেলল সাদিয়া। বিছানায় আধশোয়া হয়ে আনমনে একটা বই টেনে নিল কোলের মধ্যে। তবে খুব একটা লাভ হলোনা তাতে। শরীর কিংবা মন কোনটাই বইএর পাতায় আটকে থাকতে চাচ্ছে না। চিন্তা করে, বাবাকে একটা ফোন করা দরকার, কতদুর গেল কে জানে।

বাবার সাথে কথা বলে মা আর সামিয়ার সাথেও কথা বলে নেয়। তারপর জোর করে শরীরটাকে টেনে চেয়ারটেবিলে নিয়ে যায়। পাশের বিছানা থেকে নাফিসা বলল,

“আজকে এসেই বই নিয়ে বসে পড়লে? তোমার তো সেই স্ট্যামিনা।“

“আসলে আমি তো অনেক পিছিয়ে গেছি। একটু ভয়ে আছি।“

“আমি তো এসে দুইদিন খালি ঘুমাইছি।“

“হা হা। আচ্ছা কাল কোনো টিউটোরিয়াল আছে? কি পড়তেছো তুমি?”

“ফেসবুক পড়তেছি।“

হাসতে হাসতে সাদিয়ার পাশে এসে দাড়ালো নাফিসা। সাদিয়ার বইটা হাতে নিয়ে উলটে পালটে একটা চ্যাপ্টার বের করে দিল।

“কাল এই চ্যাপ্টারের উপর টিউটোরিয়াল। অবশ্য আজকে সারারাত পড়লেও শেষ হবে না।“

“তা তো বটেই। তাও একটু দেখে রাখি।“

“আচ্ছা।“

সাদিয়ার সিরিয়াসনেস দেখে নাফিসাও বোটানি বইটা টেনে নিয়ে বিছানায় গিয়ে বসল। একপাতা পড়ল। কিছুক্ষন বাদে বইটা সামনে নিয়ে উপুড় হয়ে শুলো।

আরো কিছুক্ষন বাদে পাশে তাকিয়ে সদিয়া খেয়াল করল বইটার উপর মোবাইল রেখে অতি মনযোগী ভঙ্গিতে কিছু পড়ছে নাফিসা। নিজে নিজেই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। মনযোগ বইয়ের পাতায় ফিরিয়ে আনে ও। অন্য কারও দিকে তাকিয়ে সময় নষ্ট করার বিলাসিতা সম্ভব না ওর পক্ষে। বাবার স্বপ্নপুরন করতে হবে যেকোন মুল্যে।

ঘন্টাদুয়েক একটানা পড়ল ও। তারপর মনে হলো আজকের জন্য এখানেই ক্ষান্ত দেওয়া যাক। বইটা বন্ধ করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিল সাদিয়া।

সেটা দেখে নাফিসা বলে উঠল,
“কি লেডি বিদ্যাসাগর… পড়া শেষ?”

নাফিসার কথা শুনে হেসে ফেলল সাদিয়া।

“হুম… আজকের মত শেষ।“

“কাল সকাল আটটায় বের হব কিন্তু আমরা। লেইট করলে টিউটোরিয়াল মিস। অবশ্য এমনিতেও খুব পারব এমন না।“

“ইনশাআল্লাহ… আমার থেকে তো বেশি পাবা।“

“কে জানে। ঘুমাও তুমি।“

সাদিয়া চোখ বন্ধ করল। কিন্তু অনেক্ষন এপাশ ওপাশ করে এই প্রথম আবিষ্কার করল আলোতে ঘুমাতে পারে না ও। কখন রুমের লাইট অফ হয় কে জানে।

খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠা সাদিয়ার অভ্যাস। কিন্তু গতরাতে ঘুমাতেই বেজেছে তিনটা। অভ্যাসবসত ভোরবেলাই ঘুম থেকে উঠল ও। বাকি সবাই ঘুমে কাদা। আবছা আলোয় ওজু করে এসে নামাজ পরে লাইটটা জালালো পড়তে বসার জন্য। কাঁচা ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায় বিরক্ত চোখে তাকালো জেবিন।

“একটু ঘুমাতে দাওনা প্লিজ। সারারাত ঘুমাই নি।”

“এক্ষনি বন্ধ করছি আপু।“

একটা টেবিলল্যাম্প কিনতে হবে। মনে মনে চিন্তা করল সাদিয়া। অগত্যা বিছানায় শুয়ে এপাশ অপাশ করতে থাকল। ঘুম আসবে না এখন আর। তাই বারান্দায় গিয়ে বসল। দেখতে দেখতে ভোরের আলো ফুটলো কিছুক্ষনের মধ্যেই। মনঅটা ভাল হয়ে গেল ওর। আরো কিছুক্ষন বসে ঘরে গেল। ভারি পর্দা টানা থাকায় ঘরে এখনো আলো প্রবেশ করেনি। কালকের বইটা আর একটা হাইলাইটার টেবিল থেকে নিয়ে আবার

বারান্দায় ফিরে গেল সাদিয়া। আটটা বাজতে এখনো অনেক দেরি। একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক পুরো চ্যাপ্টারে।

ঠিক সাড়ে সাতটায় খালা আসলো রুটি আর আলুভাজি নিয়ে। নতুন আরেকজন আসছে সেটা সিমি জানিয়ে দিয়েছিল, তাই নাশতা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হল না সাদিয়ার। দুইটা রুটি আর আলুভাজা দিয়ে গেলেন ওকেও। কিন্তু খেতে গিয়ে আসল সমস্যায় পড়ল। রুটিগুলো একপাশ ভাজা, আর আলুভাজিটাও কেমন জানি। ক্ষুধার তাড়নায় পেটের ভেতর চু চু করলেও একটার বেশি রুটি খেতে পারল না কিছুতেই।

নাফিসার ঘুম ভাংলো ঠিক পৌনে আটটায়। সাদিয়া তৈরি হয়ে অপেক্ষা করছে নাফিসার জন্য। তড়িঘড়ি হাতমুখ ধুয়ে খেয়ে ফেলল নাফিসা। তৈরি হতেও সময় নিলনা খুব বেশি। ঠিক আটটায়ই বের হয়ে গেল দুজনে। একটা রিকশা নিয়ে পৌঁছে গেল কোচিং এ। সাড়ে আটটায় একটা টিউটোরিয়াল হলো আধা ঘন্টার। স্বভাবতই খুব একটা ভাল দিল না সাদিয়া। আশা ও করেনি অবশ্য। কিছুটাতো সময় লাগবে সব গুছিয়ে নিতে। ক্লাসগুলো করল যথাসম্ভব মনোযোগ দিয়ে।

ক্লাস শেষে নাফিসাকে বলল ওর কিছু কেনাকাটা আছে। নাফিসার বাজার ঘুরতে ভালই লাগে। টুকটাক কেনাকাটা ওরও আছে। তাই রাজি হয়ে গেল সাচ্ছন্দে।

“বল তো কি কি কেনাকাটা করবা?”

“একটা বালতি কিনতে হবে। একটা টেবিলল্যাম্প। আর টুকটাক কিছু জিনিস।“

“আচ্ছা বালতিটা সব শেষে কিনি। ওটা নিয়ে ঘোরা যায়না। আগে অন্য কেনাকাটা সেরে নেই। আমি একটু কাপড়ের দোকানে যাবো। দুইটা ম্যাচিং ওড়না কিনতে হবে।“

“আচ্ছা চলো।“

সাদিয়া ভেবেছিল ম্যাচিং ওড়না কেনাটা খুব সহজ কাজ। কিন্তু মোটেই এমন না। সারা মার্কেট চক্কর কেটে একটা ওড়না কিনতে পারল ওরা।

বিরক্ত হয়ে নাফিসা বলল,
“আজকে একটাই থাক। আরেকদিন আসবো। নাহলে দুপুরে আর খাওয়া হবে না।“

এত গরমের মধ্যে ঘোরাঘুরি করে মাথা টনটন করছে সাদিয়ার। লজ্জায় কিছু বলতে পারছিল না, কারন ওর দরকারেই তো আসা। নাফিসা নিজেই ক্ষান্ত দেওয়ার হাফ ছেড়ে বাচল ও।

টেবিলল্যাম্প আর বালতি কিনে একটা রিকশা নিয়ে মেসে ফিরল দুজনে। কোনমতে গোসল করে ভাত খেতে বসল। অবশ্য প্লেটে নেওয়া বস্তুগুলো ভাত নাকি ছোট ছোট রাবারের টুকরা, সেটা নিয়ে দ্বিধায় পরে গেল সাদিয়া।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here