জীবনসঙ্গী-১৫
Chhamina_Begam
এলাকার মসজিদের ইমাম সাহেব অপেক্ষা করছেন কনের সম্মতির । ইতিমধ্যে বারদুয়েক তিনি জিঞ্জেস করেছেন এই বিয়েতে কনের সম্মতি আছে কিনা ? কান খাড়া করে সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে আদিলার দিকে তাকিয়ে আছে কাঙ্খিত শব্দটি শোনার জন্য । অথচ যাকে ঘিরে এত উচ্ছ্বাস , এত আনন্দ ,এত সমাগম তার মনের জানালায় কেউ উকি দেওয়ার প্রয়োজন মনে করছে না ।
আদিলার ভেতরে ভাঙচুর শুরু হয়ে গেছে । মুখে কোনো শব্দ জোগাচ্ছে না । ভাবতেই অবাক লাগে একটা মাত্র শব্দের এত ক্ষমতা দেখে যার প্রভাব এতটাই শক্তিশালী যা ওর অতিত, বর্তমান আর ভবিষ্যতে বিস্তর পার্থক্য ঘটানোর ক্ষমতা রাখে । হ্যাঁ , অস্বীকার করবে না সে কখনো , ওই মানুষটিকে সে অনেক– অনেক পছন্দ করে । হয়তো মনের খুব গভীরে তার জন্য হাজার হাজার অনুভূতিরা রঙিন পসরা সাজিয়ে বসে আছে । থাক , তাতে কি ? সব পছন্দের জিনিস পেতে হবে এমন তো কোথাও লেখা নেই । এই মানুষটিকে সে কখনোই নিজের করে পেতে চায়নি । আসলে মন সায় দেয়নি । ভেবেছিল জীবনের পথে চলতে চলতে ওই সল্প সময়ের স্মৃতি একসময় ঝাপসা হতে হতে মুছে যাবে । কিন্তু না ওই মানষটা ওর সিদ্ধান্তকে সম্মান জানায় নি । আব্বুর মতো সেও এই বিয়েটাকে ওর ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে । ক্ষণে ক্ষণে এই বিষয়টা ওকে হতবিহ্বল করে তুলছে আবার কখনো চাপা বিদ্বেষে বিদ্বেষী করে তুলছে । আবার কখনো মন সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে পাড়ি দিচ্ছে । নিজে না চাইলেও পরিবারের জন্য একসময় ওকে এই বিয়ে নামক সম্পর্কের ভেতর জড়াতেই হতো । তাহলে সেই মানুষ টা যদি নিজের পছন্দের মানুষটা হয় তাতে ক্ষতি কি ? বরং তখন মনটা অদ্ভুত এক তৃপ্তিতে থইথই করে নেচে উঠতে চাইছে । আদিলা মনের এই দ্বিমুখী দৌরাত্ম্যে অসহায় বোধ করে । নিজের প্রতি বিতৃষ্ণা জাগে । নিজের দূর্বলতার জন্য নিজেকে ধিক্কার জানাতে ইচ্ছে করে ।ইমাম সাহেবের প্রশ্নে চিন্তার সুতো ছিড়ে যায় আদিলার । তিনি আবার জানতে চাইছেন । আদিলা চোখ তুলে একবার বাবার দিকে তাকায় । তিনি একটু দুরে ভীড়ের মাঝে ভয় , উৎকন্ঠার সঙ্গে একবুক আশা নিয়ে তাকিয়ে আছেন । আদিলা ঘোরগ্ৰস্থের ন্যায় সম্মতি জানিয়ে দেয় । সঙ্গে সঙ্গে চারিদিকে খুশির বন্যা বয়ে যায় । ইমাম সাহেব বাকি কার্য সমাধা করে ফিরে যায় হবু বরের কাছে ।
বেশ কিছুক্ষণ হলো বিয়ে পর্ব শেষ হয়েছে । আত্মীয়রা কেউ কেউ গল্পগুজব করছে । কেউ বা নতুন জীবনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে । ইতিমধ্যেই নব বর-বধুকে পাশাপাশি বসিয়ে একপশলা ফটোসেশন ও সম্পন্ন হয়েছে । রাহাত আশেপাশে চোখ বুলিয়ে আদিলার দিকে ঝুঁকে ফিসফিস করে বলে , কংগ্ৰাচুলেশন বৌ ।
আদিলা তৎক্ষণাৎ ফিরে তাকায় । চোখে চোখে শুভদৃষ্টি হয় । আদিলার কান ঝা ঝা করে ওঠে । ভীষণ লজ্জায় লুকিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে কোথাও। কিন্তু তা সম্ভব নয় । ঝা চকচকে আলোর বন্যায় ভাসছে চারিদিক ।
-আমাকে উইস করবে না ?
আদিলা মুখ ফিরিয়ে নেয় অভিমানে । মৃদু স্বরে বলে ওঠে কিছু কঠিন শব্দ,
-” কেন ? বিয়ের খুশিতে ? ওহ হ্যাঁ , কংগ্ৰাচুলেশন মিস্টার রাহাত । আপনার তো আজ ইচ্ছেপূরণের দিন , তাই না ? আমার তো ইচ্ছেরা বলি হয়েছে আজ । এই দেখুন না, আমি নিজ হাতে তাদের বিসর্জন দিয়েছি ”
আদিলা হাতে লেগে থাকা কলমের কালির দিকে ইঙ্গিত করে । আদিলার রুক্ষ্ম স্বরে কষ্ট পায় রাহাত । তবুও হাসে সে । আদিলার এগিয়ে দেওয়া হাতটা আলতো করে ধরে বলল,
-হাতের মেহেন্দির রঙটা দেখছো ? টকটকে লাল । এর মানে বোঝ তো? দাদি বলতো , বিয়ের দিন কনের হাতের মেহেন্দি যত গাঢ় হয় তার বর তাকে তত বেশী ভালো বাসে । আচ্ছা ,তুমি কি এই কথাটা বিশ্বাস করো ?
রাহাতের কন্ঠে দুষ্টুমির আভাস । আদিলা প্রশ্নটা এড়িয়ে যায় । শ্লেষ্মা মিশিয়ে বলে ওঠে ,
– হয়তো ! তবে দাদি তো আর জানত না যে সময় বদলানোর সাথে সাথে সব কিছুই বদলে যায় । এই মেহেদীর রঙটা যেমন ফেইক তেমনি আজকাল মানুষের অনুভূতিও ভেজাল থাকে । বোঝাই যায় না মিষ্টি কথার আড়ালে কতোই না কাঁটার চাষ হয় সেখানে!
ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে রাহাত । আপাতত চুপ করে থাকাই শ্রেয় মনে হয় । ভাবতে চেষ্টা করে ঠিক কতটুকু উষ্ণতা পেলে আদিলার মনের বরফ গলানো যাবে ।
******
এরমধ্যে দিন তিনেক পেরিয়ে গেছে । আদিলার নিস্তরঙ্গ জীবনে রাহাতের আগমনে এক বিশাল ঢেউয়ের জন্ম দিয়েছে । যার রেশ এখনো বিদ্যমান । রোজ নিয়ম করে দুবেলা শশুর শাশুড়ির সাথে কথা বলতে হয় । তিতলির দুষ্টু মিষ্টি কথায় মনের রোগ অনেক টাই সেরে গেছে । ও বাড়ির মানুষদের স্বতস্ফূর্ত আচরণে ওর ভেতরের জড়তা অনেকটাই কাটিয়ে দিয়েছে । শুধু রাহাতের সাথেই ওর যত শীতলতা । যেন দুজনের মাঝে এক ঠান্ডা লড়াইয়ের সূচনা হয়েছে । রাহাত আদিলার সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে আদিলা হু হা করে জবাব দেয় আবার কখনো নিস্পৃহ আচরণ রাহাতকে ফোন রাখতে বাধ্য করে ।
তবে এই তাল কেটে যেতে সময় লাগল না । কারণ আদিলার ক্যাম্পাস শুরু হয়ে যাচ্ছে কয়েকদিনের মধ্যে । আদিলাকে ফিরতে হবে হোস্টেলে। আবার নতুন জামাইকে এখনো নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানো হয়নি । সেই কারনে ‘ বরকত ভিলা’ য় জোরকদমে আয়োজন শুরু হয়ে গেছে । অবশেষে সন্ধ্যা নাগাদ এলো নতুন জামাই । রাহাতকে দেখে আদিলার হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেল । ফারিহার সাথে কথা বলতে বলতে রাহাত ওর দিকেই দেখছিল আড়চোখে । আদিলা দৃষ্টি লুকিয়ে ফেলে, রাহাতের সামনে যাতে পড়তে না হয় সেই চেষ্টার কোনো কমতি নেই তার । ছোট্ট বাচ্চার মতো মায়ের আঁচল ধরে ঘুরে বেড়ালে রেহনুমা কষে ধমক লাগায় মেয়েকে ,
– কি তখন থেকে আমার পেছনে ঘুরঘুর করছিস !বাচ্চা নাকি তুই ? বাইরে জামাই বসে আছে একা একা । সায়নটাও নেই । সাকিব তো রাত করে ফিরবে । আর তুই এখানে আমার আচঁল ধরে ঘুরছিস ।
– বকছো কেন ? আমি ওখানে গিয়ে কি করব ?
– কি করবি মানে ! সেটাও তোকে শিখিয়ে দিতে হবে ! আশ্চর্য মেয়ে তো !দেখ রহিদকে । অতটুকুন একটা বাচ্চা কি সুন্দর কথা বলছে সদ্য পরিচিত একটা মানুষের সাথে । আর তুই …
ফারিহা শাশুড়ি কে থামিয়ে দিয়ে বলল ,
-আম্মু , আস্তে বলেন । বাইরে শুনতে পাবে ।
বিরক্তি চেপে রেহনুমা শান্ত কন্ঠ বলেন ,
– যা, বাইরে গিয়ে কথা বল ওর সাথে ।
মুখটা কাচুমাচু করে প্রশ্ন করে আদিলা ,
– আমি ! কি কথা বলব ?
ফিক করে হেসে ফেলে ফারিহা । রেহনুমা রেগে অগ্নিশর্মা হয়ে যায় । হাতের কাছে খুন্তি পেয়ে সেটা নিয়েই তেড়ে আসেন ,
-এত্তো বড়ো মেয়ে ! এখনো সবকিছু শিখিয়ে দিতে হবে তোকে ? যাহ , বেরো বলছি । বেরো এখান থেকে । গাধা একটা ।
– আম্মু , গাধার ফিমেল ভার্সনকে গাধী বলে ।
রেহনুমা বিরক্তি নিয়ে তাকায় ফারিহার দিকে । সে তখনো মিটমিট করে হাসছেই।আদিলা সরু চোখে ফারিহাকে দেখেই বেরিয়ে আসে সেখান থেকে । আদিলা যেতেই ফারিহার হাসিতে যোগ দেয় রেহনুমা ।
*****
সন্ধ্যার একপ্রস্থ মায়ের বকাবকির জেড়ে রাতে খাওয়ার সময় আর টু শব্দটি করেনি আদিলা । লক্ষ্মী মেয়ের মতো খাবার টেবিলে ভাবিকে এটাসেটা এগিয়ে দিয়ে সাহায্য করেছে । কিন্তু আম্মু যেন পণ করে রেখেছে আদিলাকে জব্দ করার । ঘড়ির কাটা এগারো’টা ছুই ছুই । রেহনুমা হাক ছাড়লেন ।
– আদিলা , রাহাতকে গেস্টরুমে নিয়ে যা । কি কি লাগবে দেখে নিস ।
রেহনুমা যেন আদেশ জারি করলেন । আদিলা মুখ চুন করে বসে থাকে নিজের ঘরে । চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে , আমাকে কেন ডাকছ ? তোমাদের জামাই হয় , তোমরা তাকে সোনার পালঙ্কে বিছানা করে দাও । আমাকে ডাকবে না । কিন্তু বলা হয় না । কথা গুলো মনের ঘরেই আটকে থাকে । বেজার মুখে বেরিয়ে এসে রাহাতকে গেস্ট রুমে নিয়ে যায় ।
– এখানে আপনি থাকবেন । আর যদি কোনো কিছু দরকার হয় তাহলে আমাকে ডাকবেন ।
– তোমার রুম কোনটা ?
– পাশের টা ।
কথা শেষ করেই আর একমুহূর্ত দেরি করে না আদিলা । নিজের ঘরে এসে হাফ ছেড়ে বাঁচে ।কিন্তু মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই দরজায় টোকা পড়ে । দরজা খুলে রাহাতকে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে ওঠে সে ,
-আপনি ? এখানে কেন ?
– একটা দরকার ছিল ।
আদিলা স্বপ্রশ্ন তাকিয়ে থাকে ।
– ভেতরে আসতে বলবে না ? তোমার ঘরটা তো এখনো আমাকে দেখালে না ।
দুরুদুরু বুকে আদিলা দরজা থেকে সরে দাড়ায় । রাহাত মুচকি হেসে বলল,
– না , থাক । কাল দেখে নেব । শোনো , একটা হেল্প লাগবে আমার । আমি শটস আনিনি । যা আছে সব গুলোই ফুল প্যান্ট । এসব পরে তো আর ঘুমুতে পারব না ।
– তো আমি কি করব ?
– একটা লুঙ্গি-ঠুঙ্গির ব্যবস্থা করে দাও না ।
-আমি ! ,
আদিলা অতিবিস্ময়ে প্রায় আর্তনাদ করে ওঠে ।
-আদু, বোকার মতো প্রশ্ন করো না । তোমাকে না তো কাকে বলব ? এখন আমি তো আর শশুরমশাইকে গিয়ে বলতে পারি না যে আব্বু আমাকে একটা লুঙ্গি দিন তো । বিষয়টা কেমন হয়ে যায় না ?
দৃশ্যটা কল্পনা করেই ফিক করে হেসে ফেলে আদিলা ।
– একটু দাড়ান । আনছি ,,,
*****
– আদিলা তুই আসছিস কবে ? আগামী কাল থেকে ক্লাস শুরু হবে । আমার একা একা ভালো-ই লাগছে না রুমে ।
– একটা দিন অ্যাডজাস্ট কর । আমি কালকেই যাচ্ছি সকালে । কিন্তু মনে হয় ক্লাস করতে পারব না । পৌছতেই তো অনেক দেরি হয়ে যাবে । আচ্ছা সেতু , রিপন-মৌমিতারা এসেছে ?
– রিপন আর আমি তো একসাথেই এসেছি । কিন্তু মৌ আসেনি । শুনেছিস, মৌয়ের বোধ হয় এবার বিয়েট হয়েই যাবে । কাল রাতে বলল আমাকে । পাকা কথা নাকি চলছে । সেই কারণেই নাকি ওর বাবা মা কয়েক দিন পরে আসতে বলছে ওকে ।
একটু অন্য মনস্ক হয়ে পরে আদিলা । নিজের হাতের অনামিকায় জ্বলজ্বল করছে আংটিটা । আচ্ছা কাল কি এটা খুলে রেখে যাবে সে ?
– কি রে চুপ হয়ে গেলি কেন ? কিছু তো বল ? এক মিনিট , আদি , তুই আজ একটু বেশি শাইন করছিস মনে হচ্ছে ! কারণ টা কি বলতো ? এক সেকেন্ড , ভালো করে দেখতে দে , তুই নাকফুল পড়েছিস ? ইস ! ভীষণ সুন্দর লাগছে তোকে !
– ধ্যাত, কি যে বলিস না !
নিজের প্রশংসা শুনে সহজাত ভাবে আদিলা লজ্জা পায় । ফারিহার চাপাচাপিতে বাধ্য হয়েই রাহাতের সঙ্গে ঘুরতে বেরিয়েছিল সে । কিন্তু বেশি দুরে যেতে ইচ্ছে করেনি । বাড়ির পেছনে পুকুর পাড়ে এসে বসেছে ওরা । ইচ্ছে করেই রহিদকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিল আদিলা । যাতে একটু হলেও অস্বস্তি কম হয় । কিন্তু অস্বস্তি কাটাতে রহিদ নয় বরং সেতুর ভিডিও কলটা যেন আশির্বাদ হয়ে এসেছিল । রাহাতকে এড়িয়ে যেতেই একটু দুরে এসে বসেছিল সে। অদূরে রাহাত তখন রহিদের সাথে খেলছে ।
বিকেলের ম্লান হয়ে যাওয়া হলদে আলোয় বসন্তের ছোয়া লেগেছিল যেন । পুকুরের জলের উপরিভাগের মতোই আদিলার নাকফুলটার হিরের ওপর আলোক রশ্মি পড়ে চিকচিক করছিল । সেতু তাই দেখে ফেলেছে । আদিলা কথার মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে ,
– মৌয়ের সাথে তো আমার অনেক দিন থেকে কথাই হয় না । তাই ওর বিষয় টা জানতাম না ।
– ওহ হ্যাঁ , কই ছিলিস তুই এত দিন । না কোনো কল , না মেসেজ । একেবারে ভ্যানিস হয়ে গেছিলি !
মৃদু হেসে আদিলা জবাব দেয় ,
– আসলে একটা আপুর বিয়ে ছিল । তাই ,,,,,
– ওহ , তাই বল ? আমি ভাবলাম বিয়েটিয়ে করে ফেললি বোধ হয় আমাদের লুকিয়ে ……
সেতুর কথা শেষ হয় না । কিন্তু আদিলা ভীষণ চমকে ওঠে । একটু বোধহয় ক্যামেরার ফোকাস সরে যায় , স্ক্রিনে ভেসে ওঠে রাহাত আর রহিদের খুনসুটির দৃশ্য । আচমকা প্রশ্ন করে বসে সেতু ,
– এই আদিলা , তোর পেছনের ছেলেটা কে রে ? প্রচণ্ড হ্যান্ডসাম দেখতে তো । তোর দাদা তো নয় । কে ওটা ?
আদিলা হতভম্ব হয়ে যায় । স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখে ক্যামেরার ফোকাস রাহাতের ওপর চলে গেছে। তাড়াতাড়ি করে ফোনটা নিজের দিকে নিয়ে এসে বলল,
– কোথায় কে ? আরে ওটা তো রহিদ খেলছে ওখানে ।
– আরে না , আমি স্পষ্ট দেখলাম একটা ছেলে ছিল । হালকা হলেও ট্রিম করা চাপদাড়ি বোঝা যাচ্ছিল । আমি ভুল দেখিনি ।
– না না , তুই একদম ভুল দেখিস নি কিন্তু তুই দিবাস্বপ্ন দেখছিস । বুঝলি ? আচ্ছা, এখন রাখি কেমন । অনেকক্ষণ হয়ে গেল আম্মু খুঁজছে বোধ হয় !
ফোনের এপার থেকেই দেখতে পায় আদিলা সেতু ওর জবাবে সন্তুষ্ট হয়নি । বরং ডান হাতের তর্জনীর নখ কামড়ে ধরেছে । এর মানে হল ও এখনো ভাবছে সে ভুল না ঠিক ।
– শোন না , এখন রাখি বুঝলি । পরে কথা বলব । বায় ।
– আচ্ছা , বায় ।
কল কেটে দিয়ে ফোনটা ঘাসের ওপর ফেলে রাখে আদিলা।তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে রাহাতের দিকে তাকায় । রাহাত ইশারায় জিঞ্জেস করে হয়েছে কি না ? আদিলা মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে । রহিদের সাথে কথা বলতে বলতেই রাহাত এগিয়ে আসে আদিলার দিকে । সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আদিলার মনে হতে থাকে অদ্ভুত কিছু কথা । আপনাকে এত সুন্দর হতে হবে কেন বলুন তো ?একটু কম সুন্দর হলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেত ?এই দু দিনেই নিজেকে কেমন গার্ড গার্ড মনে হচ্ছে । সবাই এতো প্রসংশা করছে আপনার ,মাঝে মাঝে তো ইচ্ছে করছে আপনাকে আলমারিতে লুকিয়ে রাখি ? বাইরে বেরোনো একদম বন্ধ , হুহ । কথা গুলো ভাবতেই ফিক করে হেসে ফেলে আদিলা । রাহাত কৌতুহলী হয়ে তাকায় । পাশে বসতে বসতে বলে ,
– হাসছ কেন ? আমাকে দেখে কিছু মনে পড়ল ? আমাকেও বলো , দেখি মজার কিনা !
-আপনাকে শুনতে হবে না । সব কথা শুনতে নেই বুঝলেন । কিছু কথা উহ্যই রাখতে হয় ।
রাহাত আদিলার দিকে তাকায় , গভীর দৃষ্টিতে । আদিলার শিরশিরে অনুভূতিতে পুরো গা কাঁটা দিয়ে ওঠে । রাহাত বলে ,
– কিন্তু আমি মনে করি , নিজের প্রিয় মানুষটার কাছে সচ্ছ আয়নার মতো হওয়া উচিত । যাতে সে অনায়াসে সেই আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বকে দেখতে পারে । আমি কবে নিজেকে দেখতে পাব আদু ?
চলবে