জীবনসঙ্গী_১৯(শেষ পর্ব)
Chhamina_Begam
সুখ জিনিসটা বড়ো অস্থায়ী । এই ধরা দেয় তো এই নেই । আদিলাকে হোস্টেলে নামিয়ে দেওয়ার জন্য ফিরছিল ওরা , এমন সময় ফোন বেজে উঠল রাহাতের । কল রিসিভ করে স্পিকারে রাখলে অপর পাশ থেকে ক্রন্দনরতা তিতলির কন্ঠস্বর শুনে চমকে গেল দুজনেই । কথার সারমর্ম থেকে যা বোঝা গেল তা হলো , মাগরিবের নামাজ পড়ে জায়নামাজে বসে যিকির করছিলেন সাবিহা । মিজান সাহেব মসজিদ থেকে ফিরে ড্রয়িং রুমে বসে খবর দেখছেন । এই সময় তার চা না হলে চলে না । তিতলিকে বললে সে বলল ওর পড়তে বসতে হবে । তাই সে সাবিহাকে ডাকতে আসে ।
সাবিহা রোজ মাগরিবের নামাজ পড়ে ছাদে হাটতে আসেন । বয়স জনিত সমস্যার কারণে ডাক্তার তাকে রোজ দু বেলা নিয়ম করে হাটতে বলেছেন । তাই সাবিহা ফজরের পর আর মাগরিবের নামাজের পরের সময়টাকে বেছে নিয়েছে । এই সময় আবহাওয়া বেশ মনোরম থাকে । রোজকার মতো সাবিহা মাগরিবের নামাজ পড়ে ছাদে গেছেন হাটতে , মটরের সুইচ চালু করে ছাদের ফুলের গাছ গুলোতে জল দিচ্ছিলেন । ছাদের জল বেশি হয়ে কখন সিড়ির কাছে পৌঁছে গেছে তিনি খেয়াল করেনি । তাই নামার সময় পা পিছলে গড়িয়ে পড়েন নিচে । তিতলি আম্মুকে ডাকতে এসে তার আর্তনাদ শুনতে পায় । মিজান সাহেব ও স্ত্রীর চিৎকার শুনে দৌড়ে আসেন । এরপরের ঘটনা দ্রুত ঘটে যায় । অ্যাম্বুলেন্স আসে , সাবিহাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয় । এখন তার পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে । তিতলি রাহাতকে দ্রুত পৌঁছতে বলল ।
রাহাত কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে । ওর মাথাতেই আসে না একদিনে এত এত বিপদ একের পর এক আসছে কেন ?
– চলো ,তোমায় নামিয়ে দিয়ে আসি ।
– আমিও যাবো আপনার সাথে ।
রাহাত একপলক তাকায় আদিলার দিকে , তারপর দ্বিরুক্তি না করে গাড়ি ঘোড়ায় । ঘন্টা দেড়েকের মধ্যে পৌঁছে যায় হসপিটালে । রাহাতদের দেখে তিতলি দৌড়ে আসে ।
– ভাইয়া !
– আম্মু এখন কেমন আছে ?
– আম্মুকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে ।আর আব্বু ডাক্তারের সাথে কথা বলতে গেছে ।
– আমিও যাই । তোমরা এখানেই অপেক্ষা করো ।
রাহাত চলে গেলে আদিলা তিতলিকে ধরে বসিয়ে দেয় চেয়ারে । ওকে আশ্বস্ত করে ধৈর্য ধারণ করতে বলে । আসার পথে আদিলা বাড়িতে ফোন করেছিল শাশুড়ির অসুস্থতার খবর জানিয়ে, তাই সাকিব আর আরাফাত সাহেবও রওনা দিয়েছেন ।
ডাক্তারের চেম্বার থেকে রাহাত আর মিজান সাহেবকে শুষ্ক মুখে বেরোতে দেখে তিতলি আর আদিলা এগিয়ে যায় সেদিকে। মিজান সাহেব ধপ করে চেয়ারে বসে পড়েন ।
– ডাক্তার কি বলছে আব্বু ?
আদিলার প্রশ্নে আদ্র চোখে তাকায় মিজান সাহেব । রাহাত জবাব দেয় ,
– কোমড়ের আর পায়ের গোড়ালিতে হাড় ভেঙেছে ।
-ইন্নালিল্লাহ !
বিপদ কখনো কখনো নেয়ামত হিসেবে আসে । এই কথাটাই যেন বাস্তবে পরিনত হলো। হয়তো এভাবেই সমস্ত দূরত্ব ঘুচিয়ে দিতে চাইলো অদৃশ্য কেউ । সাবিহাকে বাড়িতে আনার পর তিতলির ব্যস্ততা তিনগুণ বেড়ে গেল। হসপিটালে তবুও আদিলা আর আর নার্সদের সাহায্যে সাবিহার খাওয়াদাওয়া , বাথরুমে নিয়ে যাওয়া , হাতপা মুছে দেওয়া ইত্যাদি সম্পন্ন করলেও বাড়িতে একা হাতে তিতলিকে হিমসিম খেতে হচ্ছে । এদিকে আর মাত্র দিন পনেরো বাকি ওর তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হবে । আব্বুকেও রোজ নিজের অফিসে হাজিরা দিতে হচ্ছে । আবার সাবিহাকে দেখতে রোজ দলে দলে আত্মীয়রা আসছে । তাদের আপ্যায়ন , মায়ের দেখাশোনা , বাড়ির রান্নাবান্না আবার নিজের পড়াশোনা সব মিলিয়ে নাভিঃশ্বাস উঠে গেছে তিতলির । অবশেষে মিজান সাহেব সিদ্ধান্ত নিলেন পুত্রবধূকে বাড়িতে নিয়ে আসবেন । বিয়ে যেহেতু হয়ে গেছে তাই আনতে সমস্যা নেই । পরে সাবিহা সুস্থ হয়ে গেলে না হয় বড়ো করে একটা অনুষ্ঠান রাখা যাবে । ফলস্বরূপ মিজান সাহেব নিজের প্রস্তাব রাখলেন আরাফাত সাহেবের সামনে । আরাফাত সাহেব দ্বিমত করলেন না । পরিবারের বাকি সদস্যদেরও এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে হলো । তারপর সন্ধ্যা হতে হতেই মিজান সাহেব রাহাতকে নিয়ে নিজে উপস্থিত হলেন বরকত ভিলায় । অল্প কয়েকজনের উপস্থিতিতে কন্যার সম্প্রদান করলেন আরাফাত সাহেব । বাসার পরিবেশ ভারী করে চোখের জলে অত্যন্ত অনাড়ম্বর ভাবে বিদায় পর্ব সম্পন্ন হলো আদিলার ।
*****
আরাফাত সাহেব নিজে এসেছেন মেয়েকে শশুর বাড়ি পৌঁছে দিতে আর তার সঙ্গে লেজ হিসেবে রহিদও দাদুর সঙ্গে সঙ্গে চলে এসেছে ফুপির শশুর বাড়ি ।আজ রাতের খাবার হোটেল থেকে আসবে জন্য তিতলি নিশ্চিন্ত মনে রহিদকে সাথে করে ঘুরে ঘুরে বাড়ি দেখাচ্ছে আর গল্প করছে । আদিলা রাহাত দুজনেই মায়ের রুমে গল্প করছে । সাবিহা আদিলার হাত নিজের হাতে নিয়ে বললেন ,
– ইচ্ছে ছিল আমি তোমাকে হাতে ধরে সব কিছু শিখিয়ে পড়িয়ে নিব । অথচ দেখো আমি তোমাদের ওপর বোঝা হয়ে গেলাম । কত শখ ছিল পুত্রবধূকে নিজে বরণ করে ঘরে তুলবো ! একটু একটু করে এই সংসার গুছিয়ে দেব তোমার হাতে । অথচ কি থেকে কি হয়ে গেল ! আজ আমি বিছানায় পড়ে আছি । নিজে ওঠার ক্ষমতা টুকুও নেই । আর এসেই তোমাকে এত বড়ো সংসারের ভার নিতে হলো । আমি তোমার কাছে ঋণী হয়ে গেলাম । আমাকে মাফ করে দিও মামনি ।
কান্নাভেজা আদ্র কন্ঠে সাবিহার কথা শুনে আদিলার চোখজোড়াও ভিজে উঠল । সাবিহার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বললো,
– এভাবে বলবেন না আম্মু । যা হবার হয়ে গেছে । এতে আপনার কোনো হাত ছিল না । নিয়তিকে তো আমরা বদলাতে পারব না । আম্মু , আমাদের তো আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা উচিত , তাই না বলুন ? এর থেকেও খারাপ কিছু হতে পারত । কিন্তু হয়নি । আল্লাহর রহমতে আপনি এখন সুস্থ আছেন । তিনি চাইলে একমাসের মধ্যে আপনি নিজে হাটাহাটিও করতে পারবেন । তাই মন খারাপ করবেন না ।
– হুম , আলহামদুলিল্লাহ । দোয়া করো তাই যেন হয় ।
– ভাবি একদম ঠিক বলেছে আম্মু । এই সংসারের জন্য তো অনেক করলে তুমি । কখনোই তোমাকে দুদন্ড বসে থাকতে দেখলাম না। অসুস্থতার বাহানায় না হয় এই একমাস বেডরেস্ট করলে । ততদিনে আমরা দুই আনাড়ি মিলে তোমার সাজানো সংসারটাকে একটু এলোমেলো করি । সুস্থ হলে তারপর নাহয় বকেটকে বুঝিয়ে দিও । কি বলো ভাবি ?
তিতলির কথায় হেসে সম্মতি জানালো আদিলা ,
-একদম ।
মলিন মুখখানাতে হাসি ফুটে উঠল সাবিহার । খুশিতে কয়েক ফোঁটা আনন্দাশ্রু গড়িয়ে পড়ল বালিশের কভারে ।তিনি বললেন ,
– এতদিন এক পাগলিকে ধরেবেঁধে কিছু শেখাতে পারলাম না । আজ আর একজন তার সঙ্গ দিচ্ছে । ঠিক আছে, তোমরা তোমাদের মতো যা খুশি করো । আমি তাহলে আজ থেকে একজন চৌকিদার নিযুক্ত করি তোমাদের ওপর নজরদারি করার জন্য । কি আব্বু , পারবে না ?
শেষের কথাটা রাহাতকে উদ্দেশ্য করে বলল সাবিহা । বিছানার অন্য প্রান্তে বসে এতক্ষণ ওদের খুনসুটি দেখছিল রাহাত । আলতো হেসে মায়ের হাতে হাত রেখে বললো ,
– কেন পারব না আম্মু ! আলবত পারব । শুধু তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠো । এরপর আমার পুরষ্কার স্বরূপ আমাকে ফিরনি বানিয়ে খাওয়াতে হবে কিন্তু । না হলে কিন্তু আমি রাজি নই ।
রাহাতের আবদার শুনে হাসলো সাবিহা , বললো ,
-ইন শা আল্লাহ । শুধু ফিরনি কেন ? তোর সব পছন্দের খাবার গুলো রান্না করব আমি ।
– আর আমার ?
তিতলির কথায় স্ফিত হাসলেন সাবিহা । বললো ,
– তোদের সবার জন্য রাঁধব আমি । ঠিক আছে ?
অল্পসময়ের খুনসুটি ঘরের পরিবেশটাই বদলে দিল । সাবিহা মনে মনে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলো । রাহাত বললো ,
– আচ্ছা আম্মু , তোমরা গল্প করো আমি বাইরে যাচ্ছি ।
-হুম যাও ।
– আম্মু ,আমরাও যাই । ভাবিকে আমাদের ঘর গুলো দেখাই ।
– ঠিক আছে । আর তোমার তাহোইকে জিজ্ঞেস করো তার কিছু লাগবে কি না ?
-ঠিক আছে । চলো ভাবি ।
তিতলি আদিলাকে সঙ্গে নিয়ে বাইরে বেরোতে নিলে সাবিহার ডাকে পিছন ফিরে তাকায় । তিতলি আদিলাকে বলে ,
– ভাবী, তুমি এগোও , আমি আসছি ।
আদিলা মাথা নাড়িয়ে চলে যায় । সাবিহা জিজ্ঞেস করে ,
-তোর তাহোই তো আজ থাকবে মনে হয় । ওনাদের জন্য গেস্টরুম খুলে দিয়েছিস ?
– হ্যাঁ , আমি আগেই খুলে ঝাড়পোছ করে দিয়েছি । আর একটা কথা আম্মু , ভাবীর জন্যেই কি গেস্টরুম খুলে দেব ? নাকি আমার সঙ্গে থাকবে ?
– তোর সঙ্গে থাকবে কেন !রাহাতের রুমে ওর লাগেজ দিয়ে আয় ।
-ভাইয়ার রুমে ? কিন্তু ….
– কিন্তু কি ? ..…তিতলি , ওরা দুজনেই এখন স্বামী স্ত্রী । কাবিন তো হয়েই গেছে । শুধু আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘরে তোলা বাকি ছিল । কিন্তু তার আগেই যে এমন হবে কে জানত ? যাক , সে কথা । যে বলছি সেটা কর । আর একটা কথা, আদিলাকে বেশি প্রেসার দেবে না কিন্তু । ও নতুন মানুষ । তাছাড়াও বাড়িতে আত্মীয়রা আসছে ,যাচ্ছে। অপরিচিত জায়গায় ও অল্পতেই ঘাবড়ে যেতে পারে । তুই একটু সচেতন থেকে ওকে সবকিছু বুঝিয়ে দিস । ওর যেন কোনো অসুবিধা না হয় ।
আলতো হেসে তিতলি বলল ,
-তুমি একদম চিন্তা করো না আম্মু । আমরা দুজনে মিলে সবটা ঠিক সামলে নেব , দেখো ?
– গুড গার্ল । এবার যাহ ।
*****
রাহাতের ঘরে ঢুকে ঘুরে ঘুরে চারপাশটা দেখছে আদিলা ।ঘরটা বেশ বড়ো , একপাশের দেয়াল জুড়ে শুধু বইয়ে ভর্তি । বেশিরভাগ গুলোকেই ইকোনমিক্সের , কিছু বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্যের উপন্যাস আর বাকি গুলো ইসলামিক আদলের । একপাশের দেয়ালের প্রায় পুরোটাই ওয়াড্রোব , সঙ্গে বিশালাকার আয়না অ্যাটাচড্ করা । ঘরটা খুব পছন্দ হলো আদিলার । সবথেকে যেটা ভালো লাগলো তা হলো উত্তরমুখী জানালাটা । তার পাশেই একটা স্টাডি টেবিল , পাশে লাগোয়া কিং সাইজের বিছানা । তিতলি একটু আগেই লাগেজসহ ওকে পৌঁছে দিয়ে গেছে । তিতলি বলছিলো, আজ থেকে এই ঘরটা নাকি আদিলারও । কথাটা এক অদ্ভুত অনুভূতির জন্ম দিয়েছিল আদিলার মনে। কিছু ভালো লাগা , কিছুটা কষ্ট। যার কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই ওর কাছে । বরকত ভিলার নিজের ঘরটাকে খুব মনে পড়ছে , ফুলগাছ গুলোকে কি আম্মু যত্ন নেবে ? হয়তো ঘর গুছিয়ে রাখতে গিয়ে আম্মু কান্নাও করবে !সায়ন ও হয়তো চাইবে ঘরটাকে নিজের দখল করতে । বরাবরই ওই নিরিবিলি ঘরটা ওর পছন্দ ছিল কিনা ! মলিন হাসলো আদিলা । ঠিকানা গুলো এত দ্রুত কেন বদলালো ? অভিযোগ করতে চাইল নিজের ভাগ্যের ওপর। কেন ওর জীবনে সবকিছু এত দ্রুত ঘটে যাচ্ছে ? প্রথমে হুট করে রাহাতের সাথে দেখা , দশ দিনের ভিতর তার সাথে নিকাহ হয়ে গেল ।তারপর আবার একমাস পেরোতে না পেরোতেই চলে আসতে হলো শশুর বাড়ি ।সব মেয়েদেরই মানসিক প্রস্তুতির একটা ব্যাপার থাকে ।কিন্তু সে সেই সময়টাও পেল না । শুরু থেকেই সব কিছু যেন ঝড়ের বেগে ঘটে চলেছে !আনমনে এসব ভাবতে ভাবতেই দরজা খোলার মৃদু শব্দ হলো , রাহাত এসেছে । রাহাত ওকে দেখে হালকা হাসলো । দুজনের ভেতরেই এক অজানা ঝড় বয়ে যাচ্ছে , অস্বস্তিতে কাঠ হয়ে রইল । আদিলা মিছেমিছি নিজের লাগেজের হাতল ধরে খুটতে লাগল । রাহাত টেবিলের ওপর মোবাইল রেখে আদিলাকে দেখল । আদিলা তখনো হাতল নিয়ে নাড়াচাড়া করছে । অস্বস্তি যে রাহাতের হচ্ছে না তা নয় তবে এভাবে তো চলতে দেওয়া যায় না । এমন চলতে থাকলে তো রাত শেষ হয়ে যাবে অথচ কথা হবে না আর না হবে ঘুম । রাহাত নিজের অস্বস্তিকে একপাশে সরিয়ে রেখে বলল ,
– তিতলিটা এত অলস না জামাকাপড় গুলো গুছিয়ে দিয়ে যেতে পারত । আমি ওয়াড্রোব খালি করে দিচ্ছি , জামাকাপড় গুলো গুছিয়ে রাখো ।
এতক্ষণে নিজেকে ব্যস্ত রাখার একটা কৌশল খুঁজে পেয়ে মাথা নাড়ালো আদিলা । লাগেজ খুলে জামাকাপড় গুলো গুছিয়ে রাখতে লাগল এক পাশে । রাহাত বললো ,
-দাও , আমি হেল্প করি ,
প্রথমে আদিলা সম্মতি দিলেও পরক্ষণে ধা করে সামনে এসে লাগেজ আগলে দাড়াল । মুখে কাষ্ট হাসি । রাহাত সপ্রশ্ন তাকাল ,
– কি হলো ?
– আ .. আমি একাই করে নেব । আপনার কোনো কাজ বাকি থাকলে করে ফেলতে পারেন ।
– নাহ , এখন আমার আর কোনো কাজ নেই ।
-নেই ?
– নাহ!নাও , সরো । আমি সাহায্য করছি ।
আদিলা আরো সরে এসে লাগেজ আড়াল করে দাড়াল । বড়ো বিষন্ন দেখাল ওর মুখখানা।যেন এই মুহূর্তে কাজ না থাকাটা বড়ো অন্যায় হয়ে গেছে । তারপর মাথা নিচু করে বলল ,
– এখানে আমার ইনার ওয়্যার গুলো আছে । ……আপনি একটু ঘুরে দাড়ান না ।
আদিলার কথায় বিব্রত হয়ে গেল রাহাত । কি বলবে ভেবে পেল না । ইতস্তত করে সরে দাড়াল সে । বললো ,
– আমি চেঞ্জ করে আসি । তুমি ততক্ষণে গুছিয়ে নাও ।
বলেই আর একমুহূর্ত দাড়াল না রাহাত । ওয়াড্রোব থেকে একটা ট্রাউজার আর টিশার্ট নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল । আদিলা ঝটপট গুছিয়ে ফেলল পোশাক গুলো । রাহাত বাথরুম থেকে বেরোলে আদিলাকে বলল পোশাক পাল্টে নিতে । আদিলাও দেরি করল না । আগেই একটা চুড়িদার বের করে রেখেছিল সেটা নিয়ে ঢুকে পড়ল বাথরুমে ।
– তুমি কোন সাইডে ঘুমাবে ?
বাথরুম থেকে বেরিয়েই রাহাতের এহেন প্রশ্নে ঘাবড়ে গেল আদিলা । মিনমিন করে বললো ,
– একদিকে হলেই হলো ।
-ঠিক আছে , তুমি ডানদিকে শুয়ে পড়ো । আজ এমনিতেই অনেক ধকল গেছে ।
আদিলা তবুও জায়গা থেকে নড়ল না দেখে রাহাত আবার তাকাল ওর দিকে । চোখ মুখ শঙ্কিত । হেসে ফেলল রাহাত । বললো ,
-ডোন্ট ওরি । আমি তোমাকে ওইভাবে টাচ করব না । জানো নিশ্চয়ই ,মোহরানা পরিশোধ না করা অব্দি নিজের স্ত্রীকে স্পর্শ করাও হারাম । আর আমার কাছে এই মুহূর্তে এতটাকাও নেই । আব্বু দিতে চেয়েছিল কিন্তু আমি নিতে চাইছি না । কারণ মোহরানার সব টাকা আমি আমার নিজের উপার্জিত অর্থ দিয়ে পরিশোধ করতে চাই । তাই তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারো , ততদিনে আমরা না হয় প্রেম করি , কি বলো ?
প্রচণ্ড লজ্জায় আদিলার চিবুক বুকে ঠেকলেও মনে মনে স্বস্থি পেল সে । আজ আবার এই মানুষটার প্রতি শ্রদ্ধায় ভরে গেল মন । আজ সত্যিকার অর্থেই মনে হলো না চাইতেই আল্লাহ তায়ালা ওকে দুহাত ভরে দিয়েছেন । মনে মনে তাই সৃষ্টিকর্তার শুকরিয়া আদায় করল সে । রাহাত সামনে এসে দাড়ালে তাই আর লজ্জা লাগল না । রাহাত আদিলার কপালে হাত রেখে বিরবির করে দোয়া করল ।
******
শশুর বাড়িতে দুটো দিন নির্বিঘ্নে কেটে গেল আদিলার । আরাফাত সাহেব পরদিন সকালেই নাস্তা করে চলে গিয়েছিলেন । কিন্তু মিজান সাহেব , তিতলি সহ বাড়ির প্রত্যেকটা সদস্যের আন্তরিক ব্যবহারে আদিলার মনে হলো না সে এখানে নতুন । তবুও হঠাৎ হঠাৎ করে কখনো বাড়ির কথা মনে পড়লে চোখ ভিজে উঠত ।
বিকেলে প্রতিবেশী কয়েকজন মহিলা এলো সাবিহাকে দেখতে , সঙ্গে নতুন বৌকেও । তিতলি আদিলাকে সাহায্য করল নাস্তা বানাতে । আদিলা সবার জন্য চা বানাচ্ছে । তিতলি বলল ,
-ভাবি , তোমার তো ক্লাস মিস যাচ্ছে এখন । ক্লাস নোটস গুলো কালেক্ট করেছ ? তোমার ও তো মনে হয় জুনে পরীক্ষা ?
-হ্যাঁ , ক্লাস মিস করলেও আমার ফ্রেন্ডসদের বলা আছে । ওরা আমাকে নোটসের কপি পাঠিয়ে দেবে । আর ক্লাসে উপস্থিত থাকব না জানিয়ে এইচ.ও.ডি কে মেইল করে দিয়েছি । না করলে অ্যাটেনডেন্সের মাকস্টা কাটা যেত ।
– হুম , ভালো করেছ । আমার তো ক্লাস অফ এখন । তাই চিন্তার কারণ নেই ।
স্ফীত হাসলো আদিলা । তিতলি বলল ,
– নাস্তা রেডি । চলো, নিয়ে যাই ।
-হুম ।
– সাবিহা ভাবি , তোমার ছেলের বৌ তো দেখি কালো । আর কি মেয়ে পেলে না ভাবি ? তখন আমার বোনের মেয়েটাকে দেখালাম । তোমাদের পছন্দই হলো না ! মানা করে দিলেন । অথচ নীলিমার সাথে রাহাতকে কি সুন্দর মানাত !
আফসোস ঝড়ে পড়ল প্রতিবেশী ফরিদার কন্ঠে । যেন রাহাতের সাথে নিলীমার বিয়ে হয়নি বলে কত বড়ো ভুল হয়ে গেছে । নাস্তার ট্রে হাতে ঘরে প্রবেশ করতে করতে কথাগুলো শ্রুতির অগোচর হলো না আদিলার । মুহূর্তে একটা পুরোনো ব্যাথা কাঁটার মতো খচ করে উঠল । এখানেও ! আর কতদিন এই শব্দটা পিছু নেবে ওর !চোখের কোণে আসা জল টুকু সযত্নে আড়াল করে হাসি মুখে ঘরে প্রবেশ করল আদিলা । পেছন পেছন তিতলিও ঢুকল । সাবিহা কিছু একটা বলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন , আদিলাকে দেখে দমে গেলেন । চায়ের কাপ হাতে তুলে দিয়ে তিতলি হাসি মুখে ফরিদাকে বললো ,
– সেদিন রাস্তায় মিরাজুল চাচার সাথে দেখা হল চাচি । সঙ্গে নতুন চাচিও ছিল । শপিং করতে গিয়েছিল মনে হয় । সাথে অনেক ব্যাগপত্তর দেখলাম । আমাকে একটা আইসক্রিম কিনে দিয়েছিল চাচা । আচ্ছা চাচি , চাচার সাথে এখন যোগাযোগ হয় আপনার ?
এই কয়েকটা বাক্য যেন সপাটে চড় বসাল ফরিদা চাচির গালে । পাশে বসা মহিলারা মুখ টিপে হেসে ফেলল । আদিলা কথার অর্থ বুঝতে না পারলেও দেখল ওই মহিলা মুখ খানা অন্ধকার করে ফেলেছে । সাবিহা কড়া চোখে চাইলেন মেয়ের দিকে । তিতলি চোখ নিচু করে ফেলল । সবাই জানে মিরাজুল চাচার প্রথম স্ত্রী ফরিদা । অসম্ভব সুন্দরী হওয়া সত্ত্বেও ফরিদাকে বাড়ি ছেড়ে দিয়ে আবার বিবাহ করেছেন মিরাজুল চাচা । শোনা যায়, পেশায় প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক মিরাজুল চাচার প্রথম স্ত্রী ফরিদা বেশ বাচাল এবং চরিত্রে দোষ আছে । তার ওপর মহিলা প্রতিবেশী সবার চুকলি করে বেড়ায় । মিরাজুল চাচা অনেক বোঝানোর পরেও যখন তার স্ত্রীকে হার মানাতে পারলেন না , উপরি স্ত্রীর কারণে ভাইয়েদের সাথে ঝগড়া লেগেই থাকত । বাধ্য হয়ে তিনি বাড়ি ছেড়ে চলে যান । এরপর বছরখানেক বাদে আবার বিবাহ করেন । শোনা যায় দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে তিনি সুখেই আছেন । তবে ফরিদা চাচির খরচ চালাতে তার আপত্তি নেই । মাসে মাসে তাই টাকা পাঠিয়ে দেন । কিন্তু টাকা পয়সা দিলেও স্ত্রীর সাথে হৃদ্যতা নেই তার ।
******
মাগরিবের নামাজের পর সাবিহা ডেকে পাঠালেন পুত্রবধুকে । আদিলাকে পাশে বসিয়ে বললেন , অনেক দিন থেকে কোরআন তেলাওয়াত করা হয় না তার । তাই তিনি আদিলাকে বললেন পড়ে শোনাতে । আদিলা অযু করে কোরআন হাতে নিয়ে সাবিহার পাশে বসলো ।
– প্রথম পারা থেকে পড়ব আম্মু ?
– হুম । তার আগে বলো তর্জমাসহ সুরা ত্বীন মুখস্থ আছে তোমার ?
– এমনিতেই মুখস্থ আছে । মানেটা এখন মনে নেই । অনেকদিন আগে পড়েছিলাম তো । কেন আম্মু ? ওটা দিয়ে শুরু করব ?
– হুম , ওই সুরাটা পড়ে শোনাও তো ….
সুরা ত্বীন পড়তে পড়তে চার নম্বর আয়াতে এসে চোখ আটকে যায় আদিলার । কালো অক্ষরে জ্বলজ্বল করছে ,
“লাকাদ খালাকনাল ইনছা-না ফী আহছানি তাকবীম ”
[ আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি অতি উত্তম আকার আকৃতি দিয়ে (এবং জ্ঞান ও যোগ্যতা দিয়ে যার সুন্দরতম নমুনা হল নবী রসূলগন )]
আয়াতটি পাঠ করতে করতে আদিলার চোখ ভিজে ওঠে । বুঝতে পারে কেন আম্মু আজ তাকে কোরআন তেলাওয়াত করতে বলেছে ? সাবিহা আদিলার মাথায় হাত রেখে স্নেহের পরশ বুলিয়ে বলতে শুরু করেন ,
-আমি জানি , বিকেলে ফরিদার কথা গুলো তুমি শুনতে পেয়েছ এবং তোমার মন খারাপ হয়েছে । কিন্তু আম্মু , মানুষের এই বিবেকহীন বিচার করার প্রবণতা তো আজকের নয় । সেই আদি কাল থেকে মানুষ রং ,রূপ দিয়ে অন্যকে বিচার করে আসছে । কারণ তাদের ক্ষুদ্র চেতনা দিয়ে এর থেকে বড়ো কোনো ভাবনা তারা ভাবতে পারে না । তিতলিকে দেখো , ওর গায়ের রং আমাদের সবার মতো হয়নি । ও ওর দাদির রং পেয়েছে । তাই বলে আমি কি রাহাত আর ওর মাঝে পার্থক্য করতে পারব ? আমার করা কি উচিত হবে ? হবে না । কারণ উভয়ের আমার সন্তান । দুজনকেই আমি আমার ভেতর নয় মাস লালন পালন করেছি । তাদের স্নেহ, ভালোবাসা দিয়ে বড়ো করেছি । তাই তারা দুজনেই আমার কাছে শুধুই আমার সন্তান । তেমনি মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষকে রং ,রূপ দিয়ে ভিন্নতা দান করেছেন , তাদের আলাদা আলাদা ক্ষমতা দান করেছেন । কাউকে বুদ্ধিমান বানিয়েছেন , তো কাউকে সৃজনশীল বানিয়েছেন । সবার ভেতর এক আলাদা আলাদা সত্তা দান করেছেন তিনি । কিন্তু এত সব কিছুর পরেও আমরা সবাই কিন্তু তারই সৃষ্টি । আমাদের মধ্যে তিনি ভেদাভেদ করেননি । আমাদের সবাইকে তিনি সমান ভাবে ভালোবাসেন । আর তার দেওয়া সব থেকে বড়ো নেয়ামত কি জানো ? তিনি আমাদের আশরাফুল মাখলুক অর্থাৎ সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন । শুধু মাত্র এই একটা কারণ কি যথেষ্ট নয় তার শুকরিয়া আদায় করার জন্য ! আদিলা, তিনি , এই পুরো বিশ্বজগতের মালিক হয়ে নিজেই সাক্ষ্য দিয়েছেন যে তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন সুন্দরতম অবয়বে । তাহলে সামান্য মানুষের কথায় মনখারাপ করার মতো বোকামি তুমি কেন করছ আম্মু ?
ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে আদিলা । সাবিহা মানা করে না কাঁদতে। কাঁদুক মেয়েটা । যত খুশি কাঁদুক । কেঁদে কেঁদে মনে সমস্ত কুলুষতা দূর করে দিক । যত গ্লানি , যত হীনমন্যতাবোধ আছে সব ধুয়েমুছে সাফ হয়ে যাক । তবেই না সে নতুন করে ভাবতে পারবে । নতুন করে সব কিছু গ্ৰহন করার মানসিকতা তৈরি হবে ।
******
নিজের ঘরে ফিরে আজ আদিলা প্রান ভরে নিঃশ্বাস নিলো । আজ মনের যত ভয় , শঙ্কা ছিল সব দূর হয়ে গেছে । রাহাতকে নিয়ে সপ্নীল কল্পনায় ডুবে যেতে আর কোনো বাধা নেই । সাবিহার প্রতি কৃতজ্ঞতা , শ্রদ্ধা বহু গুন বেড়ে যায় । আদিলা চটপট অযু করে এসে মহান করুনাময়কে শুকরিয়া জানিয়ে দুই রাকায়াত শোকরানার নামাজ আদায় করে ।
যথা নিয়মে রাত গভীর হয় , রাহাত বাড়ি ফেরে, রাতের খাবার সাঙ্গ হয় । বাড়ির কথা মনে পড়লে উদাস হয়ে পড়ে আদিলা । এটো থালা বাসন পরিষ্কার করার ফাঁকে ওকে উদাস দেখে তিতলিকে কারণ জিজ্ঞেস করে রাহাত । তিতলি বিকেলের ঘটনার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ দিয়ে দেয় । রাহাত দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে । মানুষের স্বভাব কবে বদলাবে ? কবে তারা মানুষকে শুধু মাত্র মানুষ বলে বিচার করবে ? এই প্রশ্নের উত্তর জানা নেই রাহাতের । কেউ কি কখনো সত্যিই এই প্রশ্নের উত্তর বলতে পারবে ?
উত্তরমুখী জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরের বিশাল আকাশের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে আদিলা । রাহাত ঘরে প্রবেশ করলে একপলক দেখেই আবার চোখ ফিরিয়ে নেই সে । রাহাত শুধায় ,
– মনখারাপ ?
-নাহ ,
-তাহলে এভাবে কি দেখছ ?
রাহাত আদিলা পাশে দাড়ায় ।
-দেখুন না চাঁদটা আজ একদম গোল মনে হচ্ছে । পূর্ণচন্দ্র মনে হয় । দেখুন , মেঘগুলো কি সুন্দর দেখাচ্ছে !
রাহাত আকাশের দিকে তাকায় । সত্যিই ,আজ বুঝি ভরা পূর্ণিমা । চাঁদটাকে গোল থালার মতো লাগছে ।
-চলুন না , আজ আমরা জোৎস্না বিলাস করি ?
আচমকা আদিলার এমন আবদারে কয়েক পলক তাকিয়েই থাকে রাহাত । আদিলার স্বপ্নাতুর চোখের দিকে চেয়ে মৃদু হেসে বললো ,
-চলো , তোমাকে এক জায়গায় নিয়ে যাই । চোখ বন্ধ করো । করো …..
আদিলা চোখ বন্ধ করে । রাহাত ওকে কোলে তুলে নিয়ে যায় স্বপ্নের সন্ধানে । নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে রাহাত ওকে নামিয়ে দিয়ে বললো ,
-এবার চোখ খোলো…
আদিলা চোখ খুলে বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রয় । ছাদের লাইট না জ্বালিয়েও চাঁদের আলোর চারপাশে মায়াময় আলোআধারি পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে । চারিদিকে উচু উচু বিল্ডিং গুলোর আলোয় মনে হচ্ছে যেন আকাশের সাথে সাথে জমিনের তাঁরার মেলা বসেছে । আশ্চর্য সুন্দর সে দৃশ্য ! ঘোর লাগা দৃষ্টিতে আদিলা ঘুরে দাড়ায় রাহাতের দিকে । নরম সুরে বলে ওঠে ,
– আমি আপনার সাথে জান্নাতে যেতে চাই । নিয়ে যাবেন আমায় ?
রাহাত আলতো করে হাত রাখে আদিলার গালে । দুহাতের মাঝে আদিলার মুখখানা রেখে নরম সুরে জবাব দেয় ,
-ইন শা আল্লাহ । আমরা একসঙ্গে যাব সেখানে । সেখানে আমাদের একটা সুন্দর সংসার হবে । শুধু তোমার আমার ।
আদিলার চোখ বেয়ে নেমে আসে সুখের অশ্রু । আদিলা আলতো হেসে কপট বিরক্তির সুরে বলে ওঠে ,
-আজকাল চোখের জলও বড়ো অবাধ্য হয়ে গেছে । যখন তখন বিনা নোটিসে নেমে…….
কথা শেষ হয় না আদিলার । তার আগেই দুখানা পুরুষ্ট ঠোঁটের ভাঁজে বন্দি হয়ে কথা হারিয়ে ফেলে আদিলা । আদিলার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে , এই মানুষটি ব্যক্তিগত ভাবে শুধুই আমার । আমি ভালোবাসি তাকে
সমাপ্ত