জীবনের_চোরাবালি part 1

0
2327

জীবনের_চোরাবালি part 1
#লেখিকাঃসীমা

সালেহা বেগম ফজরের আযান দিলে ওঠে নামাজ আদায় করে।নামাজ পড়ে তার স্বামী আনিস রহমানকে ডেকে দেয় মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ার জন্য।
আনিস রহমান মসজিদে চলে গেলে সালেহা বেগম তার মেয়ে তিশা আর লিয়াকে নামাজ পড়ার জন্য ডাকতে তাদের রুমে যায়।তিশা অনার্সে ২য় বর্ষে আর লিয়া দশম শ্রেণিতে পড়ে।আনিস রহমান একজন স্কুলের শিক্ষক লিয়া ওর বাবার স্কুলে পড়ে।
সালেহা বেগম দরজায় নক করে।তিশা ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলে দেয়।
সালেহা বেগমকে দেখে খুব বিরক্তির সাথে তাকায়।
সালেহা বেগমঃমা নামাজ পড়ে নাও সকাল বেলা আল্লাহর কাজ করে দিন শুরু করো।দেখবে তোমার সারাদিন ভালভাবে কাটবে।
তিশাঃহয়েছে ভাষণ দেওয়া এবার চলে যান।আপনাকে কতো বলব সকালে আপনার এই মুখটা আমাদের দেখাবেন না তারপর আপনি কেনো বারবার আসেন?আর হ্যা লিয়াকে ডাকবেন না লিয়া সারারাত জেগে বই পড়েছে এখন একটু ঘুমাচ্ছে।
,
তিশা সালেহা বেগমের মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেয়।সালেহা বেগম চোখের পানি শাড়ির আচল দিয়ে মুছে কিচেনে চলে যায়।তিশা আর লিয়ার আসল মা সালেহা বেগম না।সালেহা বেগম তাদের সৎ মা।তিশা আর লিয়ার মা মানে আনিস রহমানের প্রথম স্ত্রী নিশা রোড এক্সিডেন্টে মারা যায় তখন লিয়ার বয়স ছিলো পাঁচ বছর আর তিশার বয়স দশ বছর।আনিস রহমান তাদের দেখাশুনার জন্য বোনদের পরামর্শে আবার বিয়ে করেন।কিন্তু বিয়ের পর থেকে তিশা বা লিয়া কেউ তাকে মা বলে মানে না।আনিস রহমানের সাথে সালেহা বেগম কলেজ জীবনে এক অপরকে খুব ভালবাসতো কিন্তু সালেহার বাবা গরিব হওয়ায় নিশার সাথে আনিস রহমানের বিয়ে হয়।আনিস রহমান মধ্যবিত্ত হলেও নিশার পরিবার খুব ধনী।নিশার সাথে বিয়ে হলে নিশার বাবা আনিস রহমানকে একটা কোম্পানির এমডি করে দেয়।আনিস রহমান একসময় নিশাকেও মেনে নেয় আর তাদের কোল জুড়ে আসে তিশা আর লিয়া।সুখে চলছিল তাদের দিন একদিন নিশা ওর বাবার বাড়িতে যাওয়ার পথে গাড়ি ব্রেকফেল করে এক্সিডেন্ট করে।লিয়া সেদিন ওর মায়ের সাথে ছিলো আর তিশা বাড়িতে ওর দাদু দাদিমার কাছে আনিস ছিলো অফিসে।নিশা নিজের মেয়েকে বাচাতে গাড়ির দরজা খুলে একটা তুলোর ভ্যান দাড়িয়ে ছিলো নিশা সেখানে লিয়াকে ছুড়ে দেয়।লিয়া ভাগ্য ক্রমে ভ্যানের উপর গিয়ে পড়ে বেচে যায় কিন্তু ভ্যানের উপর একটা রড লেগে লিয়ার মাথায় আঘাত লাগে।নিশা বাচেনি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগে মারা যায়।
সালেহা বেগমকে বিয়ে করলে নিশার বাবা আনিস রহমানকে কোম্পানি থেকে বের করে দেয়ও।নিশা আর ইশা দুইবোন ছিলো নিশা ছোট।নিশা মারা যাওয়ার পর তিশা আর লিয়াকে ওদের নানা নানি নিয়ে যেতে চাইলে দেয় আনিস রহমান দেয় না।
যাই হোক
সালেহা বেগম তিশা আর লিয়াকে নিজের সন্তান মনে করে হাজার অপমান সহ্য করে ওদের ভালবাসে।
সালেহা বেগম চা বানিয়ে আনিস রহমানকে দেয়।আনিস রহমান মুচকি হেসে চা হাতে নেয়।
আনিস রহমানঃতিশা লিয়া ওরা উঠেছে?(চা খেতে খেতে)
সালেহা বেগমঃনা রাত জেগে বই পড়েছে তো তাই।
আনিস রহমানঃওহ শোনো আজ আমার বোনেরা আসবে।
আনিস রহমানের কথা শুনে সালেহা বেগমের মুখ শুকিয়ে গেলো।কারণ তিশার ফুপিরা সালেহার বিরুদ্ধে তিশা আর লিয়াকে ভড়কে দেয়।আনিস রহমানের বোনেরা চেয়েছিল আনিস রহমানের বিয়ে তাদের পছন্দের মেয়ের সাথে হোক কিন্তু আনিস রহমান সালেহাকে বিয়ে করে।
প্রতিবার এসে তিশা আর লিয়াকে ক্ষেপাবে না জানি এবার কি করে?
,
,
লিয়ার ঘুম ভাঙ্গে ফোনের রিংটনে।লিয়া দেখে তিশার ফোন বাজছে।
লিয়াঃআপুনি তোর ফোন?(চিল্লিয়ে)
তিশাঃআমি ওয়াশরুমে তুই ফোনটা ধর।
লিয়া ফোন হাতে নিয়ে দেখে ওর নানাভাইয়ের নাম্বার।
লিয়াঃনানাভাই কেমন আছো?(খুশি হয়ে)
নানাঃভালো নানুভাই তুমি কেমন আছো আর তোমার তিশা আপু কেমন আছে?
লিয়াঃকিভাবে ভালো থাকবো নানাভাই মা ছাড়া কেউ কি ভালো থাকে?ঐ ডাইনিটা খুব খারাপ বাবাকে পর্যন্ত হাত করে রেখেছে।
নানাঃআমি বুজতে পারছি তোমরা কি কষ্টে আছো ওখানে কিন্তু নানাভাই তোমার বয়স আঠারো নাহলে আমরা তোমাদের ওখান থেকে আনতে পারব না এটা আদালতের রায়।এজন্য তোমার জন্য তিশাকেও আনতে পারছি না।
লিয়াঃতারমানে আরো তিন বছর(অবাক হয়ে)নানাভাই আমার এখানে দম বন্ধ হয়ে আসে তুমি প্লিজ নিয়ে যাও নানিমা কই?(কাঁদতে কাঁদতে)তুমি নানিমাকে ফোন দাও।
নানাঃনানাভাই কেঁদো না আমি তোমাদের ঠিক সময়ে নিয়ে আসবো।
লিয়া কোনোকথা না শুনে কেঁদে যাচ্ছে।তিশা লিয়ার কান্নার শব্দ শুনে তাড়াতাড়ি রুমে আসে।
লিয়াকে তিশা বুকে জড়িয়ে নেয়।
তিশাঃলিয়া কি হয়েছে তুমি কাঁদছো কেনো?
লিয়াঃদেখো না আপুনি নানাভাই বলছে আমাদের এখানে আরো তিন বছর থাকতে হবে।
তিশাঃতিন বছর দেখতে দেখতে কেটে যাবে ফোনটা আমার হাতে দাও।
তিশা ফোন কানে নেয়।
নানাঃতিশা লিয়ার খেয়াল রেখো তার সাথে তোমারও সৎ মা কখনো ভালো হয়না।লিয়াকে বলো ওর স্কুলে চকলেট বক্স আমি পাঠিয়ে দিবো।
তিশাঃওকে নানাভাই এখন রাখছি।(ফোন কেটে দেয়)লিয়া তোর জন্য নানাভাই চকলেট পাঠাবে। (মুচকি হেসে)
লিয়াঃসত্যিইইইই(খুশি হয়ে)
তিশাঃহুম তাড়াতাড়ি রেডি হয়েনে তোকে স্কুলে দিয়ে আমি ভার্সিটি যাবো।
লিয়াঃআপুনি তুমি তো আমাকে প্রতিদিন রেডি করিয়ে দাও আজ দেবে না?(মন খারাপ করে)
তিশাঃওরে ফাজিল এত কথা বলতে পারিস?চল রেডি করিয়ে দিচ্ছি আমি তোকে কোনোদিন মায়ের অভাব বুজতে দিবো না।

লিয়া আর তিশা দুজনে খুব সুন্দর। তিশা চুল কোমড় থেকে হলেও লিয়ার চুল পা পর্যন্ত।লিয়া একা চুল বাধতে পারে না তাই তিশাই বেধে দেয়।
তিশা লিয়াকে রেডি করিয়ে নিজে রেডি হয়ে ডাইনিং টেবিলে যায় নাস্তা করতে।
তিশাঃজরি(কাজের বুয়া)নাস্তা নিয়ে আসো আমাদের দেরী হচ্ছে।
আনিস রহমানও এসে বসে চেয়ারে।
আনিস রহমানঃলিয়াকে আমি আজ স্কুলে নিয়ে যাবো তিশা তুমি ভার্সিটি যাও।
লিয়া ভয়ে তিশার হাত চেপে ধরে।
লিয়াঃনা আমি যাবো না তোমার সাথে ফুপি বলেছে তুমি আর এই ডাইনিটা মিলে আমাকে মেরে ফেলবে। আপুনি আমি যাবো না।(কাঁদতে কাঁদতে)
সালেহা বেগমঃমামনি আমার তোমার বাবা মা আমরা তোমাদের কেনো মারব?(অবাক হয়ে)
লিয়াঃআপনি আমার মা নন,আপনি একটা ডাইনি।আমার বাবাকে বশ করে রেখেছেন।
আনিস রহমানঃলিয়ায়ায়ায়া সাবধানে কথা বলো ও তোমার মা।
লিয়াঃআমি মানি না ওনাকে আমার মা বেচে…. (লিয়া মাথা দুহাত দিয়ে চেপে ধরে)
তিশাঃআপুনি মাথা ব্যথা করছে?বাবা তোমাকে কত বলব মায়ের এক্সিডেন্টের সময় ও মাথায় যে আঘাত পেয়েছিলো সেটা এখনো ভালভাবে সারেনি তবু কেন ওকে বকো?
তিশা লিয়াকে ঔষধ খাইয়ে দেয়।
সালেহা বেগমঃকিছু খেয়ে যাও আমি তোমাদের জন্য আলুর পরোটা বানিয়েছি।
তিশাঃকোনোদিন আমরা আপনার হাতের রান্না খাবো না।প্রথমে বাবাকে দিয়ে লিয়াকে অসুস্থ করলেন এখন খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে আমাদের মারতেন চান?আপনি আপনার লিমিট ক্রস করবেন না, ভুলে যাবেন না যে আপনি আমাদের মা নন।লিয়া আর আমি বাইরে থেকে খেয়ে নিবো।লিয়া তুই ঠিক আছিস?
লিয়াঃহ্যা আপুনি আমাকে স্কুলে যেতে হবে সামনে পরীক্ষা।
তিশা লিয়াকে নিয়ে চলে যায়।
আনিস রহমানঃওদের কথায় কিছু মনে করো না ওরা ছোট।
সালেহা বেগমঃতুমি কি গো?ওরা আমার মেয়ে ওরা না মানলেও আমি মানি আমার লিয়ার জন্য চিন্তা হচ্ছে।ওর মাথা ব্যথা বেড়ে গেলে সমস্যা হবে তুমি তাড়াতাড়ি স্কুলে যাও।আমি লিয়ার টিফিন দিয়ে দিচ্ছি ওকে দিও বাইরের খাবার খেলে অসুস্থ হয়ে পড়বে।
,
তিশা ওর নানাভাইকে ফোন করে সব বলে,ওর নানাভাই লিয়াকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে বলে।তিশা লিয়াকে নিয়ে হাসপাতালে গেলে ওর নানাভাই আসে।ডক্টর কিছু পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেখে বলল তাতে তিশা আর ওর নানাভাইয়ের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।

চলবে

(গল্পটা যদি ভালো লাগে তো লিখব নয়তো আর লিখব না)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here