জীবনের_চোরাবালি part 3
#লেখিকাঃসীমা
তিশা অন্য একটা স্যাভলন নিয়ে আসে।
বড় ফুপিঃসবে তো শুরু সালেহা বলেছিলাম না তোকে সুখে সংসার করতে দিবো না দেখ এবার কি করি?খুব ভালবাসিস না ওদের এবার দেখ এরা কিভাবে তোকে অপমান করে।
লিয়াকে রুমে নিয়ে গিয়ে তিশা বেডে শুয়ে দেয়।
তিশাঃতুই এখানে থাক আমি তোর জন্য সুপ বানিয়ে আনছি।
তিশা চলে গেলে বড় ফুপি আর ছোট ফুপি লিয়ার কাছে আসে।
বড় ফুপিঃখুব লেগেছে মা?
লিয়াঃনা একটু কেটে গেছে।
ছোট ফুপিঃআজ যদি তোর মা বেঁচে থাকত তবে এমন হতে দিতো না।কত কষ্ট পেতো? সালেহা তো তোদের দেখতে পারেনা মা সৎ মা ও তোদের তোর মা তো ওর নজর থেকে বাচতে পারল না তাই তোরা সবসময় সাবধানে থাকবি।
লিয়াঃকি বলতে চাইছো তোমরা?মাকে কেউ ইচ্ছে করে মেরেছে?
বড় ফুপিঃকি আর বলব তোকে সত্যিটা এতদিন গোপন করে রেখেছিলাম আজ না বললে এরা তোদের মেরে ফেলবে।
লিয়া অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে কি বলতে চাইছে এরা কিছুই তার মাথায় ঢুকছে না।
ছোট ফুপিঃতোর মা তোকে নিয়ে যেদিন তোর নানাভাইয়ের বাড়িতে যাচ্ছিল যে গাড়িতে করে সেটার ব্রেকফেল করিয়ে দেওয়া হয়েছিল যাতে নিশা আর তুই মারা যাস আর তিশাকে বিষ দিয়ে মারতো।কিন্তু তুই বেচে গেলেও নিশা বাচেনি।(আচলে চোখ মুছে)
লিয়াঃমাকে ওনি কেনো মারবেন?
বড় ফুপিঃভালবাসার জন্য মা তোর বাবাকে সালেহা ভালবাসতো। নিশার সাথে আমরা বিয়ে দিয়েছিলাম তাই মানতে পারেনি।তোর বাবা সব জেনেও সালেহাকে কিছু বলেনি বরং এক্সিডেন্ট বলে চালিয়ে দেয়।নিশা মারা যাওয়ার পর জানতে পারে যে তোর মা মারা গেলে বিশ কোটি টাকা তার পরিবার পাবে।টাকা তোলার জন্য ব্যাংকে আনিস আর সালেহা যায় কিন্তু তোর মা এটা উইল করে গেছে তোর বয়স আঠারো না হলে টাকা ব্যাংকের লোকেরা দিবে না।
ঐ টাকা পাওয়ার জন্য তোদের এখন বাচিয়ে রেখেছে।
লিয়া চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে।
ছোট ফুপিঃশুধু কি তাই ওরা টাকা পেলে তোদের মেরে ফেলবে?
লিয়াঃঐ মহিলার তো কোনো সন্তান নেই?
বড় ফুপিঃকে বলেছে নেই সালেহার আগে একবার বিয়ে হয়েছিল সেখানে একটা ছেলে হয়েছে।তোর বাবাকে পাবার জন্য ওকে তালাক দিয়ে এখানে আসে।নয়ন নাম এই নে ঠিকানা।
লিয়াঃএটা তো কলেজের নাম।
বড় ফুপিঃঐ কলেজের হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করে।তোর বাবা মাসে মাসে টাকা পাঠায়।
লিয়াঃওহ এজন্য এতদিন পড়ালেখার জন্য টাকা চাইতাম বাবা বলতো অভাবের সংসার।নানাভাই মাসে মাসে আমাদের জন্য টাকা পাঠায়।
বড় ফুপিঃআমরা তাহলে আসি এখন তুই বিশ্রাম নে।
ফুপিরা চলে গেলে লিয়া ভাবতে থাকে কি করবে ও।
,
,
পরদিন লিয়া কাউকে না জানিয়ে ওর নানাভাইয়ের বাড়িতে একা চলে যায়।আনিস রহমানের মতো ছোট বাড়ি নয়।লিয়া কলিং বেল বাজালে এক মধ্যবয়সী নারী দরজা খুলে দেয়।মহিলাটা দেখতে মোটামুটি সুন্দর লিয়া লুকিয়ে লুকিয়ে ওর নানাভাইয়ের দেখা করতে অফিসে যেতো বাড়িতে আসেনি।কখনো কখনো লিয়ার নানিমাও যেতো স্কুলে দেখা করতে।আজ লিয়া অফিসে গিয়ে জানতে পারে ওর নানাভাই আজ অফিসে আসেনি তাই ম্যানেজারের কাছ থেকে বাড়ির ঠিকানা নিয়ে চলে আসে।
লিয়াকে দেখে মহিলাটা অবাক হয়ে যায়।মায়াবি মুখ দেখে এক নিমিষে ভালবেসে ফেলে।
মহিলাঃকাকে চাই?
লিয়াঃএটা আশরাফুল রহমানের বাড়ি না?
মহিলাঃহ্যা তুমি কে?
লিয়াঃআমি লিয়া ওনার সাথে দেখা করতে চাই।
মহিলাঃওনি তো বাড়িতে নেই।
লিয়াঃবাড়িতে নেই ওনার স্ত্রী তো আছে ওনার সাথে দেখা করলেও হবে।
মহিলাঃএসো ভিতরে।
লিয়া ভিতরে ঢুকে ওর নানিমা দেখে জরিয়ে ধরে।মহিলাটা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।
নানিমাঃলিয়া এসেছো নানুভাই তোমাদের জন্য খুব চিন্তা হয়।
লিয়াঃনানিমা কেমন আছো?
নানিমাঃভালো তোমরা কেমন আছো তিশা কই?
লিয়াঃআপুনি বাড়িতে আমি একা কাউকে না জানিয়ে চলে এসেছি।অফিস গিয়ে জানতে পারলাম নানাভাই অফিসে যায়নি তাই ঠিকানা নিয়ে চলে এলাম।
নানিমাঃতোমার নানাভাই জরুরী কাজে সিঙ্গাপুর গেছে আর তুমি একা আসতে গেলে কেনো পথে যদি বিপদ হতো?হাতে কি হয়েছে?
লিয়াঃএকসাথে এত প্রশ্ন করলে কোনটার উত্তর দিবো বলোতো নানিমা? কালকে স্কুল যাওয়ার পথে আমি আর আপু রিক্সা থেকে পরে গিয়েছিলাম একটা গাড়ি এসে ধাক্কা মারলে তখন কেটে গেছে।
নানিমাঃএজন্য একা বের হতে মানা করি। বেশি লাগেনি তো?
লিয়াঃনা নানিমা একটু কেটে গেছে।
মহিলাঃমা এই মেয়ে তোমাকে নানিমা কেনো ডাকছে কে ও?
নানিমাঃনিশার ছোট মেয়ে লিয়া।লিয়া তোমার খালামনি ইশা।
খালামনিঃলিয়া(খুশি হয়ে)তিশাকে দেখেছিলাম কিন্তু লিয়াকে তো দেখেছিলাম যখন নিশা মারা যায়।এরপর আমরাও বিদেশে চলে যাই দুদিন হলো ফিরেছি।
এমন সময় দুটো ছেলে বাড়িতে ঢোকে।লিয়া দেখে চিনতে পারে এরা কালকের সেই বেয়াদব ছেলে।
লিয়াঃনানিমা এই সেই ছেলেগুলো যাদের গাড়ি ধাক্কা দিয়ে আমাদের এই অবস্থা হয়েছিলো নানাভাইকে বলে এদেরকে মেরে তক্তা বানিয়ে দাও।
নানিমাঃআচ্ছা এদের কান মলে দিবো এরা তোমার খালামনির ছেলে জিসান আর হিমেল।
খালামনিঃওদের মাফ করে দাও মামনি আমি ওদের বকে দিবো।
হিমেলঃমা এ…
খালামনিঃলিয়া তোমার নিশা খালামনির ছোট মেয়ে।
জিসানঃওহ তাহলে ওর সাথে কাল তিশা ছিলো।
লিয়াঃহুম আমার আপুনি ছিলো।
নানিমাঃলিয়া তোমার বাবা তোমার এখানে আসার কথা জানলে তোমাদের তিন বছরের জায়গায় সারাজীবন নিজের কাছে রেখে দিবে। আদালতের রায় ছিলো এটা তোমার বাবা হওয়ার অধিকারে তোমাদের নিজের কাছে রাখতে পারবে।কিন্তু তিশা আমাদের কাছে তোমাকে নিয়ে থাকতে চাইত, এজন্য আদালত তোমাদের বয়স আঠারো হলে আমাদের কাছে থাকতে পারবে এটা রায় জানায়।আমরা তোমাদের সাথে এমনি দেখা করতে পারব কিন্তু আমাদের বাড়িতে তোমরা কেউ আসলে তোমাদের উপর থেকে আমাদের সব অধিকার চলে যাবে।
লিয়াঃনানিমা আমি জানি সব। নানিমা তোমরা আমাকে এটা কেনো বলোনি গাড়ি কেউ ব্রেকফেল করিয়ে মাকে ফেরে ফেলেছে জানতে তুমি?
লিয়ার কথা শুনে সবাই আতকে উঠে।
খালামনিঃএসব তোমাকে কে বলেছে?
লিয়াঃফুপিরা বলেছে।
খালামনি কাছে এসে লিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
খালামনিঃএসব এখন থাক মামনি এখন সে সময় আসেনি এসব বলার সময় হলে সব বলবো আমরা এখন চুপ করে থাকবে।বলো এখন কি খাবে?
লিয়াঃআজ কিছু খাবোনা খালামনি দেরী করে বাড়িতে গেলে সন্দেহ করবে।
নানিমাঃকিন্তু খালিমুখে যাবে?
লিয়াঃনানিমা যেদিন তোমাদের কাছে ওখান থেকে একেবারে চলে আসব সেদিন খাবো।
খালামনিঃঠিক আছে আর সেদিনে নিশাকে দেওয়া কথাআমি রাখবো।আমার পুত্রবধূ বানিয়ে।
লিয়াঃমানে?(অবাক হয়ে)
খালামনিঃকিছুনা না এমনি বললাম ওদিনে জিসান আর হিমেলের বিয়ে দিবো।
লিয়াঃওহ।
খালামনিঃএইরে এখনি মুখ ফসকে বেরিয়ে গিয়েছিলো আর মাত্র তিন বছর তারপর তিশাকে জিসানের সাথে আর লিয়াকে হিমেলের সাথে বিয়ে দিবো।জিসান আর হিমেল ছোটবেলা থেকে তিশা আর লিয়াকে পছন্দ করে এবার শুধু ওদের দুজনের মতামত জানলে হবে।(মনে মনে)
লিয়াঃআজ আমি আসি।
হিমেলঃচল আমি তোমাকে দিয়ে আসি।
লিয়াঃবাবা যদি দেখে?
হিমেলঃবাড়ির থেকে দূরে একটু নামিয়ে দিবো।
নানিমাঃলিয়া যাও হিমেলের সাথে পথে তাহলে বিপদ হবে না(হিমেলকে চোখ টিপ্পনী দিয়ে)
হিমেলঃচলো।
লিয়াঃওকে চলুন।আসি নানিমা আসি খালামনি।
জিসানঃলিয়া তোমার আপুর ফোন নাম্বার দাও।
লিয়াঃনানাভাইয়ের কাছ থেকে নিবেন ভাইয়া।
জিসানঃপিচ্চি একটা তোমাকে দেখে মনে হয়না তুমি সেই লিয়া।??
হিমেলঃচলো এবার।আজকে যে কার মুখ দেখে উঠেছিলাম???
লিয়া সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে।হিমেল ড্রাইভ করার ফাকে লিয়াকে দেখছিলো।লিয়ার কপালে আসা ছোট চুলগুলো হিমেল একহাত দিয়ে কানের পিছনে গুজে দেয়।
বাড়ির থেকে দূরে লিয়া নেমে পরতে চাইলে হিমেল হাত টেনে ধরে।
হিমেলঃলিয়া কালকের জন্য সরি।(লিয়ার যে হাত কেটে গিয়েছে ব্যান্ডেজের উপরে চুমু দেয়)
লিয়াঃইটস ওকে ভাইয়া।
হিমেলঃনো ভাইয়া তুমি আমাকে নাম ধরে ডাকবে।
লিয়াঃপারবো না (মুখ ভেংচি দিয়ে নেমে পড়ে)
হিমেলঃকাল থেকে তোমাকে আমি স্কুলে নিয়ে যাবো রেডি থেকো।
লিয়াঃশখ কতো?যাবো না আমি।
লিয়া চলে যায় হিমেল মুচকি হেসে চলে যায়।
লিয়া কোথায় গিয়েছিলো জানতে চাইলে লিয়া বলে ওর বান্ধবীর বাড়িতে গিয়েছিলো শুধু তিশাকে সব বলে।হিমেল আর জিসানের ব্যাপারেও বলে।তিশা আগে থেকে জানত ওর আর জিসানের বিয়ে ঠিক করে রেখেছে কিন্তু আদালতে মামলার রায় হওয়ার পর থেকে সব যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
বিকেলবেলা লিয়াকে ওর বাবা ডাকে।
আনিস রহমানঃলিয়া তোমার সামনে পরীক্ষা তিশা একা তোমাকে পড়াতে পারবে না তাই তিশার কথামত একজন টিচার তোমার জন্য রেখেছি যে তোমাকে ভালো পড়াবে।
লিয়া দেখে হিমেল।লিয়া হা করে তাকিয়ে থাকে।তিশার দিকে তাকালে তিশা ইশারায় চুপ থাকতে বলে।
আনিস রহমানঃহিমেল তুমি কবে থেকে পড়াবে?
হিমেলঃআজ থেকে আংকেল লিয়া চলো তোমার পড়ার রুমে।
লিয়া চলে যায়।তিশাকে একপাশে হিমেল ডেকে আনে।
হিমেলঃধন্যবাদ তিশা।
তিশাঃহয়েছে আগে ওর মন জয় করো মনে রেখো শুধু তিন বছর আছে আর খেয়াল রাখবে তোমার পরিচয় যেনো কেউ না জানে।
হিমেলঃওকে ??
হিমেল রুমে গিয়ে দেখে লিয়া বই নিয়ে পড়তে বসেছে চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া তাই চুলগুলো মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে লিয়ার সেদিকে মন নেই ও নিজের মত বই পড়ছে। হিমেল লিয়ার দিকে একপা দুপা করে এগিয়ে যায় তখন…..
চলবে