জীবনের_চোরাবালি part 4

0
3650

জীবনের_চোরাবালি part 4
#লেখিকাঃসীমা

হিমেল লিয়ার দিকে একপা দুপা করে এগিয়ে যায় তখন সালেহা বেগম রুমে ঢোকে নাস্তা নিয়ে।লিয়া সালেহা বেগমকে দেখে বিরক্তবোধ করে।
সালেহা বেগমঃমা তোমাদের জন্য নাস্তা বানিয়ে আনলাম খেয়ে নিও।
লিয়াঃনিয়ে যান এসব আমরা খাবোনা।বাবাকে বলবেন আমার বিশ হাজার টাকার দরকার কালকে যেন টাকা পাই।
সালেহা বেগমঃএত টাকা কোথায় পাবো?(অবাক হয়ে)
লিয়াঃওহ নয়নের জন্য আপনাদের কাছে টাকা থাকে আমার জন্য নেই।
সালেহা বেগমঃমা তুমি এসব কি বলছো মানছি নয়ন আমার সন্তান কিন্তু ওকে আমরা টাকা দেই না।
লিয়াঃএসব কথায় আমার মন গলবে না আমার টাকা চাই তো চাই নয়তো মামলা তুলে নিন আমি নানাভাইয়ের কাছে চলে যাবো।
হিমেলঃলিয়া শান্ত হও।
সালেহা বেগমঃঠিক আছে আমি তোমার বাবাকে টাকার কথা বলব।
সালেহা বেগম চলে গেলে হিমেল লিয়াকে পড়াতে বসে।লিয়া মনযোগ সহকারে বই পড়ে আর হিমেল লিয়াকে দেখাতে ব্যস্ত।লিয়া বুঝতে পেরে বলে,
লিয়াঃআমাকে এতো দেখতে হবে না আমি ওতো সুন্দর না।
হিমেল লিয়ার কথা শুনে চোখ নিচে নামিয়ে নেয়।
পরদিনেই সালেহা বেগম নিজের গহনা বেচে বিশ হাজার টাকা দেয়।লিয়া টাকাটা এতিমখানায় দিয়ে দেয়।
প্রতিদিন লিয়াকে হিমেল পড়াতে আসে।তুলি, নদী ও নূপূর হিমেলকে দেখে ফিদা হয়ে গেছে।লিয়াকে পড়াতে বসালে কোনো না কোনো অজুহাতে লিয়ার রুমে আসে।
হিমেল সেটা বুজতে পেরে তিশাকে বলে দেয়।তিশা ওর বাবাকে বলে সব লিয়ার পড়াশুনার ক্ষতি হবে বলে আনিস রহমান ওর বোনদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
লিয়ার এস,এস,সি পরীক্ষায় হিমেল সেন্টারে নিয়ে যায়।তিশা আর জিসান এখন অনেকটা ঘনিষ্ট।লিয়া রুমে গিয়ে নিজের সীটে বসে পরে।লিয়ার পাশে একটা ছেলে বসেছে।ছেলেটা বলে,”আমি ইমন তুমি কে?”
লিয়াঃলিয়া নাম আমার।
ইমনঃতুমি আমাকে পরীক্ষায় একটু দেখাইও আসলে আমি তেমন একটা পারিনা।
লিয়া পরীক্ষায় ছেলে যতটুকু পারলো হেল্প করে পরীক্ষা শেষে রুম থেকে বের হয়।আনিস রহমান আগে থেকে লিয়াকে নেওয়ার জন্য সেন্টারে আসে।লিয়াকে দেখে এগিয়ে আসে।
আনিস রহমানঃমা কেমন পরীক্ষা হয়েছে?
লিয়াঃভালো হয়েছে আমি আমার নানাভাইয়ের সম্মান রাখব।
আনিস রহমান লিয়ার কথা শুনে দুঃখ পায় লিয়া তার সম্মানের কথা ভাবে না ভাবে তার নানাভাইয়ের সম্মানের কথা।
লিয়া প্রত্যেকটা পরীক্ষা ভালভাবে দেয়।লিয়ার পরীক্ষা যতদিন ছিলো সালেহা বেগম লিয়ার জন্য ততদিন রোযা রেখেছিল যাতে লিয়ার যেন পরীক্ষা ভালো হয়।
লিয়া সবসময় সালেহা বেগমকে ইগনোর করে চলে।
রেজাল্ট বের হলে লিয়া গোল্ডেন A+ পায়।লিয়ার নানিমা আর নানাভাই খুব খুশি হয়।সালেহা বেগম নিজের জমানো টাকা দিয়ে হাফিজিয়ার কিছু ছাত্রদের খাওয়ায়।
লিয়ার বান্ধবীর সাথে আড্ডা দিয়ে বাড়িতে ফিরে কিছু মানুষদের দেখতে পায়।তিশাও ছিলো সেখানে।একটা মহিলা লিয়াকে সস্নেহে পাশে বসিয়ে নেয়।
মহিলাঃবাহ খুব সুন্দর তো তুমি ঠিক তোমার আপুর মতো।তুমি নাকি গোল্ডেন পেয়েছো।
লিয়াঃহুম কিন্তু আপনারা কে আপনাদের তো চিনলাম না।
সালেহা বেগমঃতিশাকে দেখতে এসেছে।
লিয়াঃমানে কি এসবের(দাড়িয়ে)আপনার সাহস তো কম না? ভুলে যাবেন না আদালতের রায় অনুসারে আপুনির উপর আপনাদের কোনো হক নেই।ওর ভালমন্দ দেখার দায়িত্ব এখন নানাভাইয়ের।
মহিলাঃএসব কি হচ্ছে মেয়ে মায়ের সাথে এমন ব্যবহার করছে?
লিয়াঃআন্টি আপনারা চলে যান ওনি আমার মা নন সৎ মা যে কিনা আমার বাবাকে পাবার লোভে আমার মাকে খুন করেছে।
মহিলাঃছি ছি ছি আমরা কত ভালো মনে করেছিলাম আর সালেহা কিনা এমন না জানি এই অনাথ মেয়েদের উপর কতো অত্যাচার করে।
ছেলেপক্ষ চলে গেলে তিশার হাত ধরে টেনে লিয়া রুমে নিয়ে যায়।আনিস রহমান লিয়াকে বকতে গেলেও সালেহা বেগম মানা করে।
সালেহা বেগমঃলিয়াকে বকো না ভুলে যাবে না ডক্টর ওকে হাসিখুশিতে রাখতে বলেছে।
আনিস রহমানঃওদের এতো ভালবাসো তুমি আর ওরা?
সালেহা বেগমঃআমি ওদের মা এটা ওরা মেনে নিবে কিনা ওদের ব্যাপার আমি আমার মেয়েদের খুব ভালবাসি ওদের কিছু হলে আমি বাচব না।(কাঁদতে কাঁদতে)
আনিস রহমানঃএটা যদি ওরা বুজতো।
লিয়া তিশাকে রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা লক করে দেয়।
লিয়াঃআপুনি তুমি ওদের কথা শুনে ছেলের সামনে কেনো গিয়েছিলে জিসান ভাইয়াকে ধোকা দিবে?
তিশাঃলিয়া আমি শুধু….
লিয়াঃবলো আপুনি ওই ডাইনিটাকে মা তুমি মেনে নিয়েছো?
তিশাঃনা মানি নি?
লিয়াঃতাহলে কেনো তুমি ওদের কথা শুনেছিলে?জিসান ভাইয়ার কি হত ভেবে দেখেছিলে?(চিল্লিয়ে)
তিশাঃকি হতো জিসানের বাবা আমাদের মায়ের খুনি। আমাদের অনাথ করেছে।যে এখন জেলে আছে।জিসান আর হিমেলের সাথে কথা হয়েছে ওরা কি ওদের বাবার ব্যাপারে কোনোদিন বলেছে কোথায় ওদের বাবা থাকে?
লিয়া তিশার কথা শুনে অবাক হয়ে যায়।এজন্য সেদিন ওর নানিমা আর খালামনি বিষয়টা এড়িয়ে গিয়েছিলো।
লিয়া মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে।তিশা রাগের মাথায় এসব বলে নিজের মুখে হাত দেয়।
লিয়ার মাথা ব্যথা বেশি শুরু হলে হাসপাতালে ভর্তি করায়।
হাসপাতালে সিঙ্গাপুর থেকে লিয়ার নানাভাই ডক্টর এনে লিয়ার অপারেশন করায়।
লিয়ার রক্তের গ্রুপের সাথে কারো গ্রুপ মিলে না শুধু সালেহা বেগমের ছাড়া।
সালেহা বেগমঃআমার রক্ত নিন যত দরকার।
ডক্টরঃএতো রক্ত দিলে আপনার প্রান চলে যেতে পারে আমরা নিবো না।
সালেহা বেগমঃআমার মেয়ে না বাচলে আমি বাচব না(ডক্টরের পা ধরে)আপনি নিন রক্ত।
ডক্টর সালেহা বেগমের কথা ফেলতে না পেরে বলে,
ডক্টরঃঠিক আছে চলুন।
সালেহা বেগম রক্ত দিলে লিয়ার অপারেশন হয়।
ডক্টর ওটি থেকে বের হয়ে সবাইকে জানায় অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে।সবাই খুব খুশি হয়।কিন্তু কেউ জানে না কে রক্ত দিয়েছে লিয়াকে।
লিয়ার জ্ঞান ফিরে আসলে একজন নার্স বলে,
নার্সঃভাগ্য গুণে মা পেয়েছো তুমি এমন মা আর কয়জনের আছে?তোমাকে রক্ত দিতে গিয়ে তোমার মা মৃত্যু বরণ করেছে।
লিয়াঃএসব কি বলছেন আমার মা বেঁচে নেই অনেক আগেই মারা গেছে।
নার্সঃলিয়া আমি সালেহা বেগমের কথা বলছি।
লিয়া নিস্তব্ধ হয়ে বসে থাকে নিজের কানকে সে বিশ্বাস করতে পারছে না এটা কি করে সম্ভব।
লিয়াঃওনি কোথায়?
তিশাঃমা আর নেই লিয়া???

কয়েকবছর পর
লিয়া সালেহা বেগমের কবরের পাশে বসে আছে।
লিয়াঃমা আমি আজ একজন বড় ডক্টর বাবাকে ছেড়ে আমরা কেউ চলে যাইনি।মা তোমার নামে আমি হাসপাতাল খুলেছি মা তুমি উঠবে না ও মা উঠে দেখো না।আমি মানছি আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি আমাকে ক্ষমা করে দাও।লিয়াকে হিমেল জড়িয়ে ধরে।
হিমেলঃএই কয়েক বছর এমন কোনোদিন বাদ নেই তুমি এখানে আসো না।লিয়া তোমার মা উপর থেকে সব দেখছে।
লিয়াঃমাকে বলো না ফিরে আসতে আমি নিজে মায়ের চিকিৎসা করবো। তুমি জানো মায়ের দুইটা কিডনি নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো তবু চিকিৎসা না করে গহনা বেচে আমাকে টাকা দেয় আর আমি স্বার্থপর ছিলাম।নয়ন বলে কেউ ছিলো না মা মিথ্যা কথা বলেছে কারন আমাকে রাগাতে চায়নি।মাকে বলো ফিরে আসতে যা শাস্তি দিবে আমি মাথা পেতে নিবো।
হিমেল লিয়াকে বুকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে।দূরে তিশাও দাড়িয়ে চোখের পানি ফেলে।

****সমাপ্ত****
(এই গল্পটার আমি ছন্দ হারিয়ে ফেলেছি তাই ভালভাবে লিখতে পারলাম না)???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here