জোনাকি_পোকার_বাতি শেষ পার্ট

0
997

#জোনাকি_পোকার_বাতি
কলমে : #ফারহানা_কবীর_মানাল
শেষ পার্ট

মনিরুল চলে গেল। আমি নির্বিকার হয়ে বিছানায় বসে রইলাম। কনে পক্ষের লোকজন চলে এসেছে। তবে খুব বেশি কেউ আসেনি। হাতে গোনা পাঁচজন লোক, ব্যাপারটা কেমন অদ্ভুত লাগছে আমার কাছে। কিন্তু বলার মতো কেউ নেই। কনের সাজে সুন্দরী এক যুবতী বসে আছে, পৃথিবীর সবটুকু সৌন্দর্য যেন তাঁর। এতো সুন্দরী মেয়ে কি করে এমন লোককে বিয়ে করতে পারে? আগেকার দিনে হলে মানা যেত কিন্তু আজকালকার যুগে এসব কি করে সম্ভব!

শশুর আব্বু সাদা রঙের পাঞ্জাবী পরেছে, তার চেহারার কাছে বয়স হার মানতে বাধ্য। শাশুড়ি মা’য়ের কথা না-ই বা বললাম, ঘরের এক কোণে পড়ে আছেন। সকাল থেকে কারো সাথে কথা বলছেন না, ঘর থেকেও বের হতে দেখা যায়নি।
বাড়িতে বিশেষ আত্মীয়-স্বজনও নেই। সব মিলিয়ে ২০-২৫ জন হবে। তবুও কেমন দম বন্ধ লাগছে আমার, নিঃশ্বাস আটকে আসতে চাইছে। না এ কষ্ট শাশুড়ি মা’য়ের জন্য নয় বরং শাশুড়ি মা’য়ের জায়গায় নিজেকে দেখতে পাচ্ছি। এ যেন আমার অঘোষিত ভবিষ্যৎ! মনকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছি না, বিশ্বাস রাখতে পারছি না নিজের ভালোবাসার উপর!

ঠান্ডা পানিতে মুখ ভিজিয়ে নিলাম, যদি কিছুটা স্বস্তি মেলে। খাওয়াদাওয়ার পর্ব প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, একটু পরেই বিয়ে। আগেই বিয়েটা শেষ করার ইচ্ছে ছিল সকলের কিন্তু শশুর আব্বু বাঁধা দিলেন। উনার মতে খাওয়া শেষে বিয়ে কাজ শুরু হলে বেশি ভালো হবে।

বিরক্ত হয়ে এক পাশে দাঁড়িয়ে আছি। এসব ঢং আমার ভালো লাগছে না। এই অনুষ্ঠান থেকে বের হওয়ার উপায় খুঁজেছি, এমন সময় কয়েকজন পুলিশ বাড়ির ভিতর প্রবেশ করলো।

” এখানে কার বিয়ে হচ্ছে? ”

বিষন্নতায় ঘেরা পরিবেশ হঠাৎ আতঙ্কিত হয়ে উঠলো। কনে পক্ষ থেকে শুরু করে ছেলে পক্ষের সবাই বিচলিত হয়ে পড়ছে। কিন্তু শশুর আব্বু একদম শান্ত। স্বাভাবিক ভাবে পুলিশদের কাছে এগিয়ে গেলেন।

” জ্বি আমার বিয়ে। কোন সমস্যা? ”

” কিসের বিনিময়ে বিয়ে করছেন আপনি?”

” আনার সম্পত্তির ৭৫ ভাগ কনের নামে লিখে দেবার কথা দিয়েছি। সে-ই সাথে দশ লাখ টাকার দেনমোহর। ”

” মশাই আপনি কি পা’গ’ল?”

” আমি পা’গ’লা’মি না করলে আপনারা কি এদের ধরতে পারতেন?”

” হা হা, বড্ড রসিক মানুষ আপনি। এই কনেসহ কনে পক্ষের সবাইকে গাড়িতে তোলার ব্যবস্থা করো। আগে মামার বাড়ি দিয়ে ঘুরে আসুক। তারপর না হয় বিয়েতে অংশগ্রহণ করবে। ”

পুলিশের কথায় কনে দৌড়ে এলো। ব্যস্ত হয়ে বললো, ” আমি সাবালিকা। আমি কাকে বিয়ে করবো না করবো আমার ব্যাপার। আপনাদের কি সমস্যা? ”

” পনেরো বার বিয়ে করেও বিয়ে শখ মেটেনি তোমার? এই ওকে নিয়ে যাও। ”

পুলিশরা চলে গেল। খুব স্বাভাবিক ভাবে ব্যাপারটা মিটে গেল যেন পূর্ব পরিকল্পিত। কনে পক্ষে সকলকে পুলিশ ধ”রে নিয়ে গেল। হাতেগোনা কয়েকজন বর পক্ষ তখনও উপস্থিত। তাদের ভিতর নানান রকম আলোচনা হচ্ছে। সবকিছুর মাঝে আমি হতভম্ব হয়ে বসে আছি। কিছু বুঝতে পারছি না।

” কি বউ মা কিছুই তো বুঝতে পারলে না!”

” সত্যিই কিছু বুঝতে পারছি না। ”

” তোমার জন্যই না হয় সম্পূর্ণ ঘটনাটা খুলে বলি। এ ক’দিন বেশ দুশ্চিন্তায় কাটিয়েছ তুমি। ”

” ঠিক বুঝলাম না। ”

” আসলে আমার এক বন্ধু পুলিশ অফিসার। বেশ কয়েকদিন ধরে ও একটা কে”স নিয়ে সমস্যায় ছিল। কয়েকজন লোক মেয়ে বিয়ে দেওয়ার নাম করে লোকজনের সম্পত্তি হাতিয়ে নিচ্ছে। ”

” মেয়ে বিয়ের নাম করে মানে?”

” যেসব লোক আমাদের বাড়িতে কনে পক্ষ সেজে এসেছিল ওরাই এ দলের সদস্য। ওদের প্রধান কাজ হলো একটু ধনী আর ভীমরতি আছে এমন লোক খুঁজে বের করা। তারপর সুন্দরী মেয়ের সাথে বিয়ের প্রলোভন দেখানো। যারা ওদের ফাঁদে পা দিয়েছে তাদের থেকে দেনমোহরের নামে লাখ লাখ টাকা নিয়েছে, আবার কারো কারো কাছ থেকে মেয়ের নামে সম্পত্তির অংশ লিখে নিয়েছে। তারপর বিয়ে, বিয়ের মাস খানেক পর ডি”ভো”র্স। এছাড়া ওদের সব থেকে বড় হাতিয়ার ছিল গোপন ভিডিও। বাসর রাতের সবকিছু ওরা ভিডিও করে রাখতো, তাছাড়া কিছু ব্যক্তিগত ছবিও তুলতো। সেগুলো দিয়েও পরে ব্লা”ক”মে”ল করে টাকা আদায় করতো। এভাবেই ওদের ব্যবসা চলছিল। সম্মানের ভয়ে কেউ কোন একশান নিতে পারতো না। সেজন্যই এ নাটকটা করতে হলো। ”

” তা-ই বলে আপনি মা’কে কষ্ট দিবেন? ”

” তোমার শাশুড়িকে দুইদিন আগে সবকিছু বলে দিয়েছি। মনিরুল সম্পূর্ণ ব্যাপারটা জানতো। ”

” ঠিকই তো আপনাদের পরিবারের কেউ হই না আমি। আমাকে কেউ কিছুই জানালো না। ”

” আমি জানতে চেয়ে ছিলাম কিন্তু মনিরুল নিষেধ করলো। বললো তুমি নাকি অভিনয় করতে পারবে না। আর চো’র পু’লি’শের ব্যাপার তাই একটু গোপন ছিল বিষয়টা। ”

” জ্বি। ”

চুপচাপ ঘরে চলে এলাম। কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। মনিরুলের উপর ভিষণ রাগ হচ্ছে, সবকিছু জেনে শুনে আমার কাছে লুকিয়ে গেছে। আর শশুর আব্বুই বা কেমন! বন্ধুর উপকার করতে গিয়ে নিজের ঘরে আ’গু’ন লাগাচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত শশুর দ্বিতীয় বিয়ে করেনি এই যা রক্ষা। ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লাম, মাথাটা বড্ড ধরেছে।

শশুরের উপর আমার রাগ নেই, শাশুড়ি মা নিজেই প্রথম থেকে কিছু জানতেন না। শশুর আব্বু হয়তো উনাকে বলতে নিষেধ করেছে। কিন্তু মনিরুল? ও কি করে আমাকে না বলে থাকতে পারলো। আমি কতটা দুশ্চিন্তা করেছি ও নিজের চোখে সবকিছু দেখেছে। কিছু ভালো লাগছে না। বড্ড অভিমান জমা হয়েছে মনের কোণায়।
মিনিট দশেক পর মনিরুল ঘরে আসলো।

” বউটা বুঝি আমার উপর অভিমান করেছে? ”

আমি কোন উত্তর দিলাম না। চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলাম। মনিরুল কাছে এসে বসলো। আমার গায়ে হাত দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে আমি অসুস্থ কি-না।

” ও বউ তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে?”

” ভালো লাগছে না। বিরক্ত করবেন না। ”

” উরি বাবা রে, কি হলো আমার চাঁদ পাখির?”

” আপনার এত্তো আহ্লাদ করার দরকার নেই। ”

” তাহলে কে আহ্লাদ করবে শুনি?”

” কেউ না। ”

” আরে এতো অভিমান করতে নেই। আসলে বিষয়টা গোপন ছিল, তাছাড়া থা’না পু’লি’শের ব্যাপার তাই তোমাকে জড়াতে চাইনি। ”

” হুম ভালো করেছেন৷ আমিও এমন কাবিন ব্যবসা শুরু করবো ভাবছি। ”

” হুম করো। আমাকে পার্টনার হিসাবে নিবে নাকি?”

” যত্তসব। আচ্ছা শশুর আব্বু শাশুড়ি মা’কে বোঝাবে কি করে এখন?”

” এই যেমন করে আমি তোমাকে মানিয়ে নিলাম। আসলে আব্বু মা’কে আগেই সবটা বলে দিয়েছে। এজন্য মা শেষ কয়েকদিন একটু স্বাভাবিক ছিল। ”

” আচ্ছা ওদের ধরতে এমন না”ট”ক করতে হলো কেন? পু”লি”শ তো এমনিতেই ওদের ধ”র”তে পারতো। ”

” ওদের নাগালের ভিতর পাচ্ছিলো না। আর যেহেতু ওদের কাছে গোপন ভিডিও, ছবি এসব রাখা ছিলো তাই লিখিত অভিযোগ দিতে ভয় পেত। লিখিত অভিযোগ না পেলে পুলিশ কিছুই করতে পারছিলো না। তাই আব্বুকে দিয়ে এমনটা করানো। ”

” নাটক তো তুমিও করতে পারতে, আব্বু কেন?”

” আমি করলে ওরা স’ন্দে’হ করতো, ওদের মূল টার্গেট ৫০+ লোক। যারা সুন্দরী বউ পাওয়ার জন্য লাখ লাখ টাকা খরচ করতে পারে। তবে বয়স হলেই সবাইকে এমন ভীমরতিতে ধরে না। ”

” যাক বুঝলাম। আমি তো ভেবেছিলাম শশুর আব্বু বিয়ে করছে। ”

” জানো আজকে এই অনুষ্ঠান করার আরো একটি কারণ আছে। আজ মা-বাবার বিবাহবার্ষিকী। সে জন্য বাবা হিসেব করে আজকের দিন ঠিক করেছে। সন্ধ্যাবেলা ছোটখাটো অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে। ”

” শশুর আব্বু তো অনেক রোমান্টিক!”

” একদম তাঁর ছেলের মতো। ”

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here