জ্বীনকন্যা,পর্বঃ ০৮ শেষ

0
3830

জ্বীনকন্যা,পর্বঃ ০৮ শেষ
Writer: Asstha Rahman

২দিন টা খুব ভালোই কাটলো। মি.ছ্যাঁচড়া অনেক হাসাতে জানে, খুব ভালোই লেগেছে ওর আর গ্রামের মানুষের সাথে কাটানো সময়গুলো। এখন আমাকে আমার পথেই ফিরতে হবে। বোরকা পড়ে,ব্যাগ গুছিয়ে নেওয়া মাত্রই মি. হাসনাত আমার সামনে চলে এলেন। গম্ভীরকন্ঠে বললেন, “চলে যাবেন?”
— জ্বী, ফেরার সময় হয়ে এল। নিজের কাজে এমনিতে অনেকটা বিঘ্ন ঘটেছে।
— আপনাকে আমার কিছু কথা বলার ছিল, যেটা এই মূহুর্তে বলা জরুরীবোধ করছি।
— জ্বী বলুন। কিছুক্ষণ নীরব থেকে বলল,
— জানিনা ব্যাপারটা আপনি কেমনভাবে নিবেন। তবে আমি সরাসরি বলে দিচ্ছি আমাদের এই অভিনয়ের স্বামী-স্ত্রী চরিত্র বাস্তবতায় রুপান্তর করা যায়না? আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই।
— এসব আপনি কি বলছেন? হুট করে চিনেন না জানেন না একটা মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছেন। বিপদে পড়েছিলাম আপনি আমাকে যথেষ্ট সাহায্য করেছেন তার জন্য আমি আপনার কাছে যথেষ্ট কৃতজ্ঞ।কিন্তু তার মানে এই না যে আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাব। এমন বাজে আচরণ আপনার থেকে আশা করিনি। ভালো থাকবেন, আসি। ব্যাগটা নিয়ে তাড়াতাড়ি করে উনার বাসা থেকে বেরিয়ে এলাম। গ্রামটা পার হয়ে শেষসীমানায় যেতে আরো আধঘন্টার মত প্রায় লাগবে। বিকালের পড়ন্ত রোদে প্রচুর গরম লাগছে। ১৮বছর বয়স হয়ে যাওয়ার পর তো আমার শক্তি ফিরে আসার কথা। এটার কথা একদমি ভুলে গেছি।সেটা মনে থাকলে এত ঝামেলা পোহাতে হত না। যাই হোক, অদৃশ্য হওয়ার চেষ্টা করলাম পারলামনা।
বারবার চেষ্টা সত্ত্বেও বিফল হলাম। হঠাৎ হাসনাতের কথা মনে পড়ল এই গ্রামে কোনো অলৌকিক শক্তি দ্বারা কিছু করা যাবেনা।
নিরুপায় হয়ে পথ চলতে লাগলাম। শেষসীমানায় পৌছে গেছি, এখানে মাম্মার বলামতই পাহাড় আছে। সবচেয়ে বড় পাহাড়টাই কালপাহাড়। কালপাহাড়ের নিচেই গুহাটা আছে। দেখে মনে হল না কেউ আছে। পিছন থেকে ডাক এলো নূরজাহান, এটা তো নিষ্পাপ মাম্মার কন্ঠস্বর। পিছনের পথটায় এগিয়ে কাউকে পেলামনা, একিভাবে ডান এবং বামপাশের পথ থেকে ছ্যাঁচড়া এবং মায়ের গলাস্বরে কেউ আমাকে ডাকলো। মনে হচ্ছে আমার চারপাশটা ঘুরছে। গুহার পথটা আমি হারিয়ে ফেলছি। বুঝলাম এভাবে আমাকে আটকাতে চাইছে ওই শয়তানি। আমাকেও তো চিনোনা তুমি। ভেবেছো তোমার এমন ফাদে পা দিয়ে আমি হার মানব। তা তো হবেনা, আল্লাহ বলে মনে মনে আসল গুহার পথ খুজার চেষ্টা করলাম।
ব্যস! চারপাশটা স্থির হয়ে গেল। গুহাটা আগের জায়গায় ই আছে। গুহার ভেতরে ঢুকলাম, কিসের একটা চোখ ধাধানো আলো গুহাটাকে আলোকিত করে রেখেছে।
এক মহিলার উচ্চস্বরে হাসি শুনলাম এবং সে আমায় বলল, স্বাগতম নুরজাহান ওরফে মুনতাহা। সামনে তাকিয়ে দেখি অসম্ভব বাজে দেখতে একটা মহিলা বিরাট সিংহাসনে বসে আমাকে দেখে কুৎসিতভাবে হাসছে।
— এসো। তোমার আসার অপেক্ষায় ছিলাম আমি। খুব নাম শুনেছি তোমার, অনেক আগে থেকেই। তুমি আসবে আমাকে ধবংস করতে, জ্বীন আর মানুষজাতিকে শান্তি ফিরিয়ে দিতে। শুনতে শুনতে কানে তালা লেগে গিয়েছিল, চেয়েছিলাম তোমার মা আর বাবাকে শেষ করে তোমার নামটাই মুছে দিতে।
কিন্তু না তুমি অত সহজে হার মানলেনা।কায়দা করে ঠিক আমাকে মারার জন্য জন্ম নিলে। চাইলাম গ্রামবাসীদের দিয়ে তোমাকে আঘাতে আঘাতে শেষ করতে তাতেও তুমি পার পেয়ে গেলে। পথ ভুলিয়ে তোমাকে অন্ধকার জগতে পাঠাতে চেয়েছিলাম তাতেও তুমি জিতে গেল।কিন্তু দুঃখের বিষয় কি জানো? ভাগ্য সবসময় সবার সহায় হয়না।যেমন এখন তোমার সহায় থাকবেনা। আজই তোমার খেলা শেষ।
বলে আমাকে দূরে ছুড়ে ফেলল,গুহার বাহিরে। নিচে পড়ে গিয়ে হাতে ব্যথা পেলাম।
আবার উঠে দাঁড়িয়ে আল্লাহর নাম নিলাম। ততক্ষনে সেও গুহার বাহিরে এসে পড়েছে। আমি হেসে বললাম,
— সব সময় খারাপ রা জিতবে সেটা কোথায় লেখা আছে নানুজান। অনেকদিন তো রাজত্ব করলেন, ইচ্ছেমতো নিজের শক্তির অপচয় করলেন। এখন না হয় মরার আগে কালেমাটা পড়ে নিন। কেননা, এটাই আপনার শেষমুহুর্ত।
— আমাকে ভয় দেখাস? এত সাহস তোর! দেখ তোর কি হাল করি। বলেই অনেকগুলো আগুন গোলা ছুড়ে মারল। নিজের শক্তি তা ওর দিকেই ফিরিয়ে দিতে চাইলাম। আগুনের গোলাগুলো তার দিকে চলে গেল। তার মানে আমার শক্তি কাজ করছে। মহিলা উড়ে পাহাড়ের উপরের অংশে উঠে হাসতে লাগল।

নিজের শক্তি দিয়ে ওকে আঘাত করতে চাইলাম, কিন্তু কিছুই হচ্ছেনা। তার এতবছরের শক্তিশালী শক্তির কাছে আমার শক্তি খুব সামান্য। সে এইবার আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। আমি আল্লাহর নাম জপ করতে লাগলাম। জ্বীনদাদুর কন্ঠস্বর আমার কানে ভেসে আসলো।
“দাদু এভাবে ও শেষ হবেনা। তোর ব্যাগে একটা আল্লাহর কালামযুক্ত তলোয়ার আছে সেটা তুমি আল্লাহর কালাম পড়ে তাকে আঘাত করো। এই তলোয়ার কেবল তোমার হাতেই কাজ করবে।” দাদুর কথায় জোর পেলাম। ব্যাগের তলা থেকে সযত্নে কাপড়ে মুড়ানো তলোয়ারটা বের করলাম।ডাইনীটা এখনো হাসতে হাসতে আমার দিকে আসছে।
আল্লাহর কালাম মনে মনে জপতে জপতে লাফিয়ে ডাইনীর বুকে বসিয়ে দিলাম। শক্তি ব্যবহার করে। পাহাড়ের উপর তুলে নিয়ে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিলাম। শান্তি লাগছে প্রতিশোধ নিতে পেরে। মাম্মা আমার পাশে কান্নাভেজা চোখে দাঁড়িয়ে আছে। পাপার কথা ভেবেই কান্না পাচ্ছে। সবি হলো ,কিন্তু পাপাকে ফিরে পাওয়া হলোনা। কান্না করতে করতে মাম্মাকে জড়িয়ে ধরলাম। একটা মিষ্টি কন্ঠস্বর বলল,
— মুনতাহা মা! চমকে উঠলাম। পিছনে তাকিয়ে দেখি একজন সুশ্রী পুরুষ হাত বাড়িয়ে আমাকে ডাকছে। মাম্মা কাপা গলায় বলল, তোর বাবা!
পাপাকে জড়িয়ে ধরে কেদে কেদে বললাম, আমি তো ভেবেছি তোমাকে আর ফিরে পাবোনা।
— তোমাদের জন্য ই তো বেচে ছিলাম। ডাইনীটা আমাকে নিজের প্রতিপত্তি বৃদ্ধির প্রয়োজনে বাচিয়ে রেখেছিল ।সেদিন তোমার মাকে ভয় দেখানোর জন্য আমার বুকে সামান্য তীব্র ব্যথার সৃষ্টি করেছিল।চল মা আমরা জ্বীনজগতে ফিরে যাই।
এই জগত আমাদের জন্য নয়।

হঠাৎ দেখি মি. ছ্যাঁচড়া দাঁড়িয়ে আমার দিকে কান্নাভেজা চোখে তাকিয়ে আছে। তার কাছে তার হাত স্পর্শ করে বললাম, “খারাপ ব্যবহারের জন্য আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। আসলে আমিও আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। কিন্তু আমার শর্ত ছিল আমার লড়াই চলাকালীন কোনো প্রকার প্রণয়ে আমি জড়াতে পারবনা। তাহলে আমি আর জ্বীনকন্যা থাকবনা। কিন্তু আপনি এখানে এলেন কি করে?”
— আপনার পিছু নিয়ে চলে এসেছি। এখন তো আপনার লড়াই শেষ। এখনো কি আমাকে ফিরিয়ে দিবেন?
— আমাকে ক্ষমা করুন আমি আপনার প্রস্তাব কখনোই গ্রহণ করতে পারবনা। আমার কর্তব্য শেষ, এখন আমাকে আমার জগতে ফিরে যেতে হবে। আমার মাম্মা-পাপা আমার জন্য অপেক্ষা করছে।তবে সবসময় আপনি অনুভব করবেন আপনার ভালবাসা আপনার আশে পাশে কোথাও আছে। বিদায়☺
ফি-আমানিল্লাহ।
হাসনাতের চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে। ঝাপসা দৃষ্টি তে দেখছে মুনতাহা তার বাবা-মায়ের হাত ধরে ঘন ধোয়ায় মিলিয়ে গেল।
হয়তো আর দেখা হবে না কিন্তু অনুভব করতে তো পারব জ্বীনকন্যাটাকে।❤

সমাপ্তি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here