জ্বীনকন্যা_২,পর্বঃ১৩

0
2813

জ্বীনকন্যা_২,পর্বঃ১৩
লেখিকাঃ আস্থা রাহমান শান্তনা

মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে যায় মুনতাহার। উঠে দেখে পাশে হাসনাত নেই, কোথায় গেল হাসনাত! মুনতাহার মনে কু ডাকতে থাকে। ওয়াশরুম, ছাদ সব চেক করে হতাশ হল মুনতাহা। এত রাতে কোথায় গেল হাসনাত। রুমের মেঝেতে হতাশ হয়ে বসে পড়ে মুনতাহা। দেয়ালের দিকে তাকাতেই দেখে রক্ত দিয়ে সেখানে কিছু লেখা আছে।

” জ্বীনকন্যা মুনতাহা, তোমার ধ্বংসের সময় আগত। তোমার প্রাণপ্রিয় স্বামী আমার কাছে, শীঘ্রই কালপাহাড়ে এসে আত্মসমর্পণ করো। নতুবা তোমার স্বামীর অবস্থা তোমার মা-বাবার মত হবে। শেষবারের মত দেখার সুযোগ টুকুও পাবেনা।”

মুনতাহার বুকটা ভয়ে কেপে উঠল। এক মিনিট ও দেরী করা যাবেনা, এক্ষুনি প্রস্তুত হয়ে কালপাহাড়ে যেতে হবে। ভেবেই ড্রায়ারটা খুলে মুনতাহা। একি তার তলোয়ারটা কোথায় গেল।এখানেই তো রেখেছিল সে। তাহলে কি কেউ সেটা সরিয়ে ফেলেছে, আল্লাহ এখন আমি হাসনাতকে কি করে রক্ষা করব? কি করে শয়তানটা শেষ করব?
কাদতে কাদতে চিৎকার করে মুনতাহা নিষ্পাপকে ডাকতে থাকে। দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে মুনতাহা বসে রইল। এমনসময় অনুভব কেউ তার সামনে এসে দাড়াল।
মুখ তুলে দেখে নওশিন তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মুনতাহা কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই নওশিন বলে উঠল, “কিছু খুজছো? দেখোতো এটা খুজছো নাকি?”
নওশিন তার পিছনে লুকিয়ে রাখা হাতটি বের করে দেখাল মুনতাহাকে। নওশিনের হাতেই মুনতাহার তলোয়ার। মুনতাহা ধরতে গেলে নওশিন সেটা সরিয়ে নেয়।
হেসে হেসে বলতে থাকে, “এটা তো তুমি পাবেনা ডিয়ার আপু।”
— প্লীজ বোন আমার। ওইটা আমাকে দিয়ে দাও।
— খুব দরকারী এটা তাই না? এটা তোমার যতটা দরকারী ততটা হাসনাত ও আমার কাছে দরকারী। কিন্তু তুমি সেটাই আমার কাছ থেকে কেড়ে নিলে, এবংকি আমার মাম্মা-পাপাকেও তুমি তোমার হাতের মুঠোয় রেখে দিয়েছো। কেউ ই আমাকে নিয়ে ভাবেনা, মাম্মা ও আগের মত আমার সাথে কথা বলেনা। তার একটাই কারণ সেটা হলে তুমি। জাস্ট ইউ, এখন তোমার যেমন কষ্ট হচ্ছে, রাগ হচ্ছে এমনটা আমারো হয়েছে। মুনতাহা হাত জোড় করে বলল,
— ওটা আমাকে দিয়ে দাও বোন। তার বিনিময়ে তুমি যা বলবে, তা আমি মাথা পেতে মেনে নিব। দেখ, হাসনাতের খুব বিপদ। পুরো বাসার কোথাও ওকে পাওয়া যাচ্ছেনা।
মুনতাহার কথা শুনে নওশিন চমকে উঠল। পুরো রুমটায় একবার চোখ বুলিয়ে নিল, সত্যিই হাসনাত নেই। মুনতাহা নওশিনের পায়ে পড়ে বলল,
— বোন আমার শত্রুরা হাসনাতকে নিয়ে গেছে, ওকে উদ্ধার করতে হলে তলোয়ারটা আমার দরকার। নাহলে যে ওই শয়তান শেষ করতে পারবনা, ওরা আমার হাসনাতকে টুকরো টুকরো করে ফেলবে। এসব শুনে নওশিন স্তব্ধ হয়ে গেল, কি করা উচিত সেটা যেন ও ভুলে গেছে। নিষ্পাপ এসে নওশিনের হাত থেকে তলোয়ারটা ছিনিয়ে নিয়ে মুনতাহার হাতে দেয়। মুনতাহার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
— যা মা, হাসনাতকে উদ্ধার করে জয়ী হয়ে ফিরে আয়। আল্লাহ তোর সহায় হন।
মুনতাহাকে নিষ্পাপকে সালাম দিয়ে বলল, “দোয়া করো মাম্মা।”
নিষ্পাপ মুনতাহার কপালে চুমু দিয়ে বিদায় দিলেন। মুনতাহা মুহুর্তেই বের হয়ে যায়।
নিষ্পাপ নওশিনের গালে সজোড়ে দুটো চড় মেরে বলল,
— তোর কি একটুও লজ্জা করেনা! কি করতে গেলি এই মেয়েটার সর্বনাশ। তুই কি আদৌ কোন মেয়ে, যে কিনা অন্যের সংসার ভাঙ্গতে যাস। কতটা জানিস এই মেয়েটার ব্যাপারে, যে ওকে খারাপ ভাবতে দ্বিধা করিসনা। ছিহ, ভাবতেই ঘৃণা হচ্ছে তোকে আমি নিজের মেয়ে ভাবতাম। নওশিন চোখতুলে বলল,
— তুমি কি জানো মুনতাহার সম্পর্কে, যেটা আমি জানিনা।
— ওর সবটা জানলে তুই কখনোই ওর সম্পর্কে বাজে কথা বলতে পারতিনা।
এসব ব্যবহারের জন্য নিজের প্রতি নিজের ঘৃণা হত।
— আমায় বল সব, আমি জানতে চাই মাম্মা।
মুনতাহা কালপাহাড়ের সামনে এসে দাড়াল, এই সেই পাহাড় যে পাহাড়ে একবার মুশায়রা তার স্বামী মুস্তফা থেকে আলাদা হয়ে গেছিল, মুনতাহা ডাইনীটাকে শেষ করে নতুন সুন্দর জীবন পেয়েছিল। জানিনা আজ কি হতে চলেছে, আকাশটা ততক্ষণে ঘন কালো মেঘে ঢেকে গেছে, চারিদিকে বাতাস বয়ছে। যুদ্ধের ঘনঘটা বুঝি এক্ষুনি বেজে উঠল।
গুহার সামনে শয়তানের চেলাগুলো পাহাড়ায় আছে। এদের সাথে কি করে লড়াই করব আমি! অহহো, আমাকে তো জ্বীনহুজুর শক্তি দিয়েছিল, দেখি শক্তি ব্যবহার করে। তাদের সামনে এসে দাড়াতেই ওরা মুনতাহার উপর আক্রমণ করতে ধেয়ে এল।
মুনতাহা শক্তি দিয়ে সবগুলোকে ভস্ম করে দিল। এত সহজে লড়াই করে জিতে যাবে মুনতাহা ভাবেনি।
সাতপাচ ভাবতে ভাবতে মুনতাহা গুহার ভেতরে ঢুকল, ঘন অন্ধকার এখানে। কোথাও কিছু দেখা যাচ্ছেনা। হাসনাতের নাম ধরে কয়েকবার ডাকল মুনতাহা।
অন্ধকারের গভীর থেকে একটা ভয়ানক আওয়াজ আসল।
— আমার আস্তানায় আপনাকে স্বাগতম জ্বীনকন্যা।
— অন্ধকারে কি করছিস শয়তান? সাহস থাকলে সামনে এসে লড়াই কর, ইনশাআল্লাহ আজ তোকে শেষ করব আমি।
শয়তানটা ভয়ানক হাসি হেসে বলল, তুই করবি আমাকে শেষ? কিন্তু তুই হয়ত এটাই জানিসনা আজ ই তোর শেষদিন। চাইলে তোকে আমি তোর মা-বাবার সাথেই টুকরো টুকরো করে ফেলতে পারতাম, করিনি। কারণ ছোটখাটো খেলা খেলতে আমার মজা লাগেনা। চাইলে তোকে বাসায় ই মেরে ফেলতে পারতাম। কিন্তু মারিনি, আমি চেয়েছিলাম জ্বীনকন্যার সাথে লড়াই করে তাকে মারতে।
তাই তোকে এত কষ্ট করে এতটা দূর টেনে আনলাম। কিন্তু তোকে আর বাচিয়ে রাখবনা, বেচে থাকতে তো তোর খুব কষ্ট হচ্ছে তাইনা!
— বৃথা আশা করিসনা শয়তান, আজকের লড়াইয়ে তোকে শেষ করে তবেই আমি থামব। মরার আগে যত পারিস, বৃথা স্বপ্ন দেখে নে।
শয়তানটা আবার হেসে বলল, “আচ্ছা চল একটা সন্ধি করি, আজকের লড়াইয়ে যদি তুই জিতিস হাসনাত তোর কাছে ফিরে যাবে। তোর জ্বীনজগতের উপর আমি আর হানা দেবনা, কিন্তু তুই যদি হেরে যাস তবে তোর চোখের সামনে তোর হাসনাতকে তোর হাত দিয়ে টুকরো টুকরো করিয়ে নিব।”
— আমি শুধু তোকে হারাব না শয়তান, তোকে শেষ করে দিব।

বলতেই মুনতাহা গুহা থেকে ছিটকে পড়ল বাইরে। শয়তানটা আর ভয়ানক বিশাল রুপ নিয়ে মুনতাহার সামনে এসে দাড়াল। মুনতাহার দিকে অগ্নিশক্তি নিক্ষেপ করল, ততক্ষণে মুনতাহা অইস্থান থেকে সরে পড়ল। শয়তানটা আরো শক্তি দিয়ে মুনতাহাকে আঘাত করতে চেষ্টা করল, কিন্তু মুনতাহার শক্তির কাছে তার সব শক্তিই বিফলে যাচ্ছে। শয়তান এইবার ভয়ানক রেগে গেল, মুনতাহাকে ধেয়ে আক্রমণ করতে আসলে মুনতাহা তলোয়ারটা বের করতে শয়তানটার শরীরের কয়েকটা জায়গায় আঘাত করে। শয়তানটা মাটিতে বসে কোকড়াতে লাগল।
নওশিন কালপাহাড়ের সামনে আসতেই একজন নূরানী বয়স্ক চেহারার লোক তার পথ আটকাল। বাজখাই কন্ঠে বলল,
— কে তুমি? কোথায় যাচ্ছো?
— আমি ওই পাহাড়ে যেতে চাচ্ছি। সরে যান সামনে থেকে।
— তুমি ওই পাহাড়ে যেতে পারবেনা, সেখানে আমার মুনতাহার লড়াই চলছে। তুমি ওর কোনো শত্রু হতে পারো, তাই তোমাকে আমি সেখানে যেতে দিবনা।
— আপনি কে আমাকে আটকানোর। আমি যাবোই।
সরুন সামনে থেকে। জ্বীনহুজুর তার শক্তি দিয়ে নওশিনকে বেধে ফেলল,
— তুমি কোথাও যাবেনা, মুনতাহার যুদ্ধ শেষ হওয়া অব্ধি তুমি এখানে বাধা পড়ে থাকবে।
— আপনি কে? আর আপনার এত বড় সাহস হয় কি করে আমাকে আটকানোর।
— আমি মুনতাহার জ্বীনহুজুর ওরফে চাচ্চু। ওর কোনো ক্ষতি আমি হতে দেবনা।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here