জ্বীনবর,পর্ব: ০৩

0
3634

জ্বীনবর,পর্ব: ০৩
Writer: Asstha Rahman

মোমের আলো নিভে যাওয়ায় বারান্দাটা অন্ধকারে ঢেকে গেল। ভয় লাগছিল। তাড়াতাড়ি দরজাটা লক করে ঘরে পালাতে পারলেই বাচি। দরজা টেনে আনতে গিয়ে দেখি বারান্দার কোনে কারো প্রতিমূর্তি। অন্ধকারে কিছু তেমন দেখতে না পেলেও বুঝলাম সেখানে কেউ ঠায় বসে আছে। ভালো করে বুঝার জন্য হাতড়ে হাতড়ে কোণের দিকে গেলাম। হাতটা কোণের দিকে বাড়াতেই কারো নিঃশ্বাস আমার হাতে পড়ল। ভয় পেয়ে দুপা পিছিয়ে গেলাম। জোরে জোরে চিৎকার করতে লাগলাম, “কে ওখানে? সাড়া দাও বলছি।”
একটা মিহি সুন্দরকন্ঠে উত্তর এল, ” এত জোরে চিৎকার করবেননা। এতে আমার ইবাদতে বিঘ্ন হচ্ছে। আপনাকে ভেতরে চলে যান।”

আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। আমাদের বাসায় ছেলে এলো কি করে? এখানে ইবাদত করছে মানে কি? কাপা কাপা কন্ঠে বললাম, কে আপনি? এখানে এলেন কি করে?
আবারো শান্ত ভাবে উত্তর এল, “ভয় পাবেননা। শান্ত হোন!” আমার রাগ উঠে গেল, একে তো বেগানা পুরুষ। তাও আমার বাসায় সংগোপনে বসে আমাকে বলছে শান্ত হতে। একটু ধমকে উত্তর দিলাম, “শান্ত হব মানে কি! আপনি কে সেটা বলুন? একে তো একজন অচেনা পুরুষ আবার অন্যের বাসায় চুরি করে ঢুকতে লজ্জা করেনা। বেরিয়ে আসুন বলছি।” তখনি পিছন থেকে ডাক এলো, “বুবু আপনি চিৎকার করছেন কেন?”
তাকিয়ে দেখি মুমিন চোখ ডলতে ডলতে মোম নিয়ে আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি বারান্দায় কোণ ইশারা করে বললাম, “দেখ ভাই, একটা ছেলে আমাদের বারান্দায় চুরি করে ঢুকে পড়েছে। নিজের পরিচয় ও দিচ্ছেনা।” মুমিন এগিয়ে এসে অইকোণ মোমের আলো দিয়ে চেক করে। পরে আমার দিকে তাকিয়ে বলে, বুবু এখানে তো কেউ নেই। আমি অবাক হয়ে কোণে তাকাই। সত্যিই তো কোণে কেউ নেই, তাহলে আমার সাথে এতক্ষন কথা বলল কে! আমিতো ভুল শুনিনি।
— ভাই এখানে কেউ ছিল। মুমিন আমাকে ভেতরের দিকে টেনে নিয়ে বলল,
— বুবু চলুন এখান থেকে। কেউ নেই এখানে। আপনি বোধহয় ভয় পেয়েছেন।আমি দরজা লক করে দিচ্ছি।

আমি মুমিনের ঘরে চলে আসলাম। ও পিছু পিছু এসে বলে, “বুবু আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন। আমারো ঘুম পাচ্ছে খুব। দরকার হলে ডেকে দিবেন।” আমি মাথা নাড়িয়ে সায় দিলাম। ও ঘুমিয়ে পড়ার পরও আমি বিছানায় হেলান দিয়ে আধশোয়া রইলাম। চোখে ঘুম কিন্তু ঘুমোতে চাচ্ছিনা। কেউ তো নিশ্চয়ই আছে। মুমিনকে দেখে হয়তো পালিয়ে গেছে। বাসায় যখন আছে, তখন তো আবার টের পাব। এই ভাবনায় ঘুমোচ্ছিনা। হঠাৎ মোমের আলো নিভু নিভু করতে লাগল। উঠে গিয়ে ওটা ধরার আগেই নিভে গেল। পুরো রুমটা অন্ধকার হয়ে গেল। বদ্ধ রুমে হাওয়া এলো কোথা থেকে? এমনসময় কারো গলা কেশে নেওয়ার শব্দ শুনলাম। এক লাফে আবার বিছানায় উঠে বসলাম।অনুভব করলাম কেউ যেন আমার পাশে এসে বসল। সেই মিহিকন্ঠটা বলল,
— ঘুমোচ্ছেন না যে? কাঁদোকাঁদো গলায় বললাম,
— আপনি কে হুম? এভাবে আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন। ভালো হবেনা বলে দিচ্ছি। আসুক বাবা আপনার নামে নালিশ জানাব। একটু হেসে বলল,
— আপনি ভীতু জানতাম এত ভীতু জানতামনা।
আমাকে ভীতু বলায় রেগে গেলাম। ধমক দিয়ে বললাম,
— আপনার সাহস তো কম না, আমায় ভীতু বলছেন। আসুন একবার আলোয় মাইর একটাও মাটিতে পড়বেনা।
— আমায় মারতে হলে অন্ধকারেই মারতে হবে। দেখি কত সাহসী আপনি! আমি আপনার পাশেই বসে আছি নিন শুরু করুন। এইবার কেঁদেই দিলাম ভয়ে। সে একটু নরমগলায় বলল, “আহা, কাঁদছেন কেন? আমি কি বকেছি নাকি?”
— উমহু।
— তাহলে কি ভয়ে কাঁদছেন ভীতুনী?
— আপনি আমাকে ভীতুনী বলছেন কেন?
— আপনি ভীতু তাই। কান্না থামিয়ে বললাম,
— দেখুন ভালো হচ্ছেনা কিন্তু। আপনি কে বলুন তো?
— যাকে দেখার এত শখ আপনার আমি সেই।
আমি থম মেরে গেলাম। আমার তো জ্বীন দেখার খুব শখ। ওরে বাবাগো, স্বয়ং উনি আমার সামনে। এইবার ভয় পেয়ে হাত দিয়ে ভাইকে ধাক্কা দেওয়া শুরু করলাম। ও ধড়পড়িয়ে উঠে পড়ল। উঠেই বলল, ” কি হয়েছে বুবু?” ভাই উঠার সাথে সাথে আমার পাশের ভারীভাবটা কমে গেল। তার মানে ভাইকে ডাকায় উনি চলে গেছেন। আমার নীরবতা দেখে মুমিনকে আমার শরীর নাড়া দিয়ে বলল, ” ও বুবু, ডেকেছেন কেন?”
— না কিছুনা। ঘুমো তুই।
— এভাবে আর গভীর ঘুম ভাঙাবেন না কিন্তু। বলে মুমিন আবার শুয়ে পড়ল। কি বোকামীটাই না করলাম আমি!

সকাল ৬টায় উঠলাম। মুখ ধুতে ধুতে ভাবছি, কাল রাতে চলে যাওয়ার পর উনি আর একবার ও আসলেননা।উনি কি অভিমান করলেন! সারারাত এতকষ্ট করে ঘুম আটকে রাখলাম উনি আরেকবার আসবেন এই আশায়। এতদিন অপেক্ষার পর সুযোগ হল জ্বীনের সাথে কথা বলার।নিজের বোকামীর জন্য সব শেষ।
তাড়াতাড়ি নামায পড়ে নাস্তা বানালাম। সারাটা দিন সেই ভাবনায় কাটল। বিকেলে বাবা ফিরে এলেন। ভাবলাম বাবাকে একবার জানাব ব্যাপারটা। পরে ভাবলাম, “না থাক।জানলে হয়তো বাবা রেগে যাবেন। এক বোকামীর জন্য উনি চলে গেলেন, এখন যদি আরেক বোকামী করি তবে উনি যদি আর না আসেন। ”
বাবা আমাকে আনমনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন,
— কিছু বলবে মুশায়রা মা?
— না বাবা….মানে হ্যা বাবা।
— আমতা আমতা করছো কেন? কি বলতে এসেছো বল।
— না মানে, তোমার কি কিছু প্রয়োজন?
–না এখন কিছু লাগবেনা। প্রয়োজন হলে ডেকে নেব।
— আচ্ছা বাবা। আমি এখন আসি।
কোনোরকমে পালিয়ে এলাম বাবার সামনে থেকে। আমি বাবার সাথে মিথ্যা একদম বলতে পারিনা। তাছাড়া বাবাও মুখ দেখে অনেককিছু বুঝে যান। তাই এভাবে চলে আসলাম।
নিজের ঘরে বসে বসে তাকে মিস করছি। কিচ্ছু ভাললাগছেনা। আজ রাতে কি সে আবার আসবে নাকি অভিমান করে আর আসবেনা! উনি সত্যিই বলেছেন আস্ত একটা ভীতুনী আমি।
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here