জ্বীনবর,পর্ব: ০৪

0
3595

জ্বীনবর,পর্ব: ০৪
Writer: Asstha Rahman

চা খেতে খেতে জানালা দিয়ে চাঁদ দেখছি। কত সুন্দর জ্যোৎস্না, জানালার ফাক দিয়ে এসে আমার গায়ে লুটোপুটি খাচ্ছে। এমন সময়টা আমি দরজা বন্ধ করে আমার ঘরের সব আলো নিভিয়ে জোস্নাবিলাস করি। চোখ বন্ধ করে দখিনের হাওয়াটাও উপভোগ করছি। হঠাৎ সেই অপেক্ষিত কন্ঠের আওয়াজ শুনলাম, ” জোস্নাবিলাস করছেন বুঝি?” শুনামাত্রই পিছু ফিরে তাকালাম, আমার বিছানার উপর একটা প্রতিমূর্তি মাথা নিচু করে বসে আছে। বিছানাটা আমার জানালার বিপরীত কোণে, তাই জ্যোৎস্না অতদূরে গেলনা। এই অন্ধকারে তার মুখটাও দেখা হচ্ছেনা।
ওপাশ থেকে আবার জিজ্ঞাসা, “গভীর ভাবনায় হারিয়েছেন বুঝি?” আমি উত্তর দিলাম, “আপনি এসেছেন?”
মূহুর্তে উত্তর এল, “কি ভেবেছেন আর আসবনা?”
— চেয়েছিলাম তো আবার আসুন। কিন্তু ভাবলাম অভিমান করেছেন হয়তো।
— করার কথা কিন্তু করিনি। আমি অবাক কন্ঠে বললাম,
— কেন?
— আমি তো জানি আপনি একটা ভীতুনি। প্রথম প্রথম এমনটা করবেনই। তাই আর অভিমান এলোনা।
— আপনি আবার আমাকে ভীতুনি বলছেন?
— কি বলব বলুন! আপনি তো ভীতুই সেটা আপনি নিজেও ভালো করে জানেন।
আমি থতমত খেয়ে গেলাম। আরেহ বাবা এ তো মনের কথাও জানে। না একে বুঝতে দিলে হবেনা, স্বীকার করবনা বেটাকে। “মোটেও না, কি আপনি হুম! মনগড়া কিছু একটা বলে দিলেই হল” আমতা আমতা করে বলে দিলাম। অপরপাশ থেকে তার হাসি। কি সুন্দর হাসির শব্দ। ছেলেদের কি মুক্ত ঝরা হাসি হয়? অত জেনে কি হবে! এই হাসিটা তার চেয়ে বেশি মুগ্ধকর। হাসি থামিয়ে বলল, “আচ্ছা, আপনি ভীতু নন।অনেক সাহসী।”
আমিও এটা শুনে একটু ভাব নিলাম। শত হলেও একটা জ্বীন আমার প্রশংসা করছে। হঠাৎ উনি বলে উঠল, “মুশায়রা আপনার হাতের পাশে একটা তেলাপোকা।”

শুনেই হাতের কাপ ফেলে লাফিয়ে চিৎকার করে উঠলাম, “ওহ বাবাগো।” এক লাফে জানালা থেকে ৩পা পিছিয়ে এলাম। উনার সে কি হাসি! এই মুগ্ধকর হাসি যেন থামেই না। খোঁচা দিয়ে হাসতে হাসতে বললেন, “আসলেই আপনি এত্তগুলা সাহসী!” অভিমানে গাল ফুলিয়ে ফেললাম। গেল আমার সম্মানটা, যাও একটু ভাব নিলাম। সেটাও শেষ, কি যে লজ্জা লাগছে আমার।
এর মধ্যে আমার দরজায় কড়া পরল। “এইরে কেউ আবার চিৎকার শুনে ফেলল নাকি? কি বলব বাবাকে?” ভাবতে ভাবতেই দরজা খুললাম।
যাক বাবা না, ছোট ভাই এসেছে। দরজা খুলতেই প্রশ্ন ছুড়ে মারল, ” বুবু আপনি চিৎকার করছেন কেন?”
— ও কিছুনা। তেলাপোকা এসে পড়েছিল গায়ে।
মুমিন খানিকক্ষন হেসে নিয়ে বলল, “ভীতুর ডিম বুবু”
চোখ রাঙ্গিয়ে বললাম, ” গেলি এইখান থেকে!”
— গেলামনা। ক্ষিদে পেয়েছে খেতে দিন।
— বাবা মসজিদ থেকে ফিরেছে?
— এসে পড়বে। আমাকে আগে খেতে দিন।
— আচ্ছা তুই যা আমি আসছি।
মুমিন আচ্ছা বলে নিজের ঘরের দিকে চলে গেল। কয়েকবার “এই যে” বলে তার উপস্থিতি বুঝার চেষ্টা করলাম। সাড়া পেয়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল। আবার না বলে চলে গেল। ভাই ও আর আসার সময় পেলনা। আলো জ্বালিয়ে মেঝে থেকে চায়ের কাপটা তুলে নিয়ে রান্নাঘরে চলে এলাম।

সেইরাতে উনি আর এলেন না দেখা দিতে। কেমন জানি! এখনো অবধি দেখিনি তবুও তার আসার অপেক্ষায় ছটপট করি। যতটা সময় তার সাথে কথা বলি কেমন ভালোলাগায় কেটে যায়। তার যেন শুধু ভালোলাগে আমাকে রাগিয়ে ঝগড়া করতে।
এখন আর নিজেকে একা মনে হয়না। অনুভব করি আশেপাশেই সে আছে, আমি দেখতে পাচ্ছিনা।
সেইদিনের পর থেকে দুইদিন আর তার খোজ নেই। উনি কি বুঝেনা উনার ভীতুনি উনাকে খুব মিস করছে! ধুর মনটা একদম খারাপ। কিছুই ভালোলাগছেনা।
এত্ত পচা কেন জ্বীনটা! আসুক এইবার আর কথাই বলবনা। অন্যঘর থেকে বাবার ডাক, “মুশায়রা মা”
গিয়ে বাবার কাছে হাজির হলাম, “কিছু বলবা বাবা?”
— চা চেয়েছিলাম অনেকক্ষন আগে।
— দুঃখিত বাবা। মুমিনের জন্য নুডুলস করছিলাম। এক্ষুনি করে দিচ্ছি। একটু বসো।
— এখন আর খাওয়ার সময় নেই। এক জায়গায় ফতোয়া দিতে যেতে হবে। আমার পাঞ্জাবিটা এনে দাও তো।
— এনে দিচ্ছি। পাঞ্জাবি নিয়ে এসে দেখি বাবা কেমন জানি গম্ভীর মুখ করে আছেন।
— বাবা তুমি কি কিছু নিয়ে চিন্তিত?
— রহিছ ভাইয়ের নাকি পেটেপীড়া উঠেছে। এখন অতদূর আমি একা কি করে যাই! একজনকে পাশে থাকা দরকার।
— তো তুমি ভাইকে নিয়ে যাও।
— তুমি একা বাসায় কি করে থাকবে?
— বাবা একটা রাত ই তো। তুমি যাও ভাইকে নিয়ে। আমাকে নিয়ে ভেবোনা।
— আচ্ছা মা সাবধানে থেকো।
সন্ধ্যার মুখে বাবা ভাইকে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। পুরো বাসায় আমি একা। একা একা কি করব ভেবে না পেয়ে বিছানায় আধশোয়া হয়ে হাদিস শিক্ষার বই পড়ছি।
জানালা দিয়ে হঠাৎ দমকা বাতাস ঢুকল ঘরে। সাথে সাথে লাইট অফ হয়ে গেল। ভয় পেয়ে উঠে বসলাম।
মিহিকন্ঠে উনি বলে উঠলেন, “ভয় পাবেননা, আমি এসেছি।” মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বললাম,
— না আসলেও হত।
— অভিমান করেছেন?
— অভিমান করে কি হবে?
— ভীতুনির এত অভিমান হয় জানা ছিলনা।
— জানার ইচ্ছে থাকলে তো জানবেন!
— কানে ধরতে হবে নাকি এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকব?
— কোনোটাই না।
— অভিমান করে থাকবে?
— করলে আপনার কি!
— আচ্ছা আমি চলে যাচ্ছি। আমি ধড়পড়িয়ে বললাম,
— এই না, যাবেননা।
অপরপাশ থেকে কোনো সাড়া নেই। কাঁদোকাঁদো গলায় বললাম, “চলে গেছেন বুঝি?”
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here