জ্বীনবর৩,পর্বঃ৩০,৩১শেষ পার্ট

0
3304

জ্বীনবর৩,পর্বঃ৩০,৩১শেষ পার্ট
লেখিকাঃ আস্থা রাহমান শান্ত্বনা

তাওহীদ অফিসের উদ্দেশ্যে বের হতে হতে বলল, আমার আসতে লেট হতে পারে। বেশি খারাপ লাগলে ফোন দিও। বুয়া এসে রেধে দিয়ে যাবে, আগ বাড়িয়ে কিছু করতে যেওনা। ওয়াফাহ মুচকি হেসে বলল,
— তোমার টাই বাধা হয়নি!
— উফ! এত তাড়াহুড়ো করি আমি। বেধে নিচ্ছি।
— দাড়াও আমি বেধে দিচ্ছি।
তাওহীদ হ্যাসূচক মুচকি হাসি দিল। ওয়াফাহ যত্নসহকারে টাই বেধে দেয়। ওয়ালেট আর রুমালটা তাওহীদের হাতে দিয়ে দেয়। তাওহীদ ওয়াফাহর দিকে তাকিয়ে বলে, তুমি আবার রান্নাঘরে ঢুকেছো?
— কই না তো।
— তোমার গালে হলুদ লাগল কি করে?
ওয়াফাহ তক্ষুনি গালে হাত দিয়ে মুছার চেষ্টা করে। তাওহীদ হেসে বলল,
— এভাবে মুছবেনা! ওয়েট করো।
তাওহীদ টিস্যু দিয়ে মুছে দেয়। নাক টিপে দিয়ে বলে, গুন্ডিটাহ।
ওয়াফাহ হেসে লুটিয়ে পড়ে তাওহীদের গায়ে। দুজন ই একসাথে হাসতে থাকে। হঠাৎ তাওহীদের চোখ যায় দরজার দিকে। সেখানে মুসকান আর মুহিব একসাথে দাঁড়িয়ে তাদের দিকে অপলকদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তাওহীদকে চুপ হয়ে যেতে ওয়াফাহও তাকে অনুসরণ করে দরজার দিকে তাকায়। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। এটা নিজের কল্পনা নয় তো! প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাওহীদের মুখের দিকে তাকায়। নিজেকে তাওহীদের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ছুটে যায় মুহিবের কাছে। জড়িয়ে ধরতে চায় মুহিবকে, মুহিব হাত দিয়ে বাধা দেয়। এমন করতে দেখে ওয়াফাহর চোখ ছলছল করতে থাকে। মুসকান শান্তভাবে তাওহীদের সামনে দাঁড়ায়। তাওহীদ খুশি হয়ে কিছু বলতে চাইলে মুসকান কষে একটা চড় দেয়। তাওহীদ এমন আকস্মিক ঘটনায় অবাক হয়ে যায়, ওয়াফাহ ছুটে এসে বলল,
— তুমি ওকে মারলে কেন বোন?
মুসকান অগ্নিদৃষ্টিতে ওয়াফাহর দিকে তাকায়। তারপর বলে,
— কষ্ট হচ্ছে ওকে মেরেছি বলে?
যদিও চড়টা তোমার ই প্রাপ্য। কিন্তু তুমি আমার বয়সে বড় আর আমার ভাইয়ের বউ। তাই নিজের স্বামীকে শাসন করার চেষ্টা করছি। আমাদের মাঝে তুমি এসোনা, তাহলে আমি ভুলে যাব তুমি আমার ভাবী।
ওয়াফাহ এমন কথা শুনে প্রচন্ড কষ্ট পায়। মুহিবের কাছে গিয়ে তার হাত চেপে বলল,
— মুসকান এমন করে কেন বলছে?
মুহিব হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, তুমি আমার ভালোবাসাকে অসম্মান করলে ওয়াফাহ। তারপর ভিতরের রুমে চলে যায় মুহিব। ওয়াফাহ নীরবভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকে। মুসকান তাওহীদের হাত টেনে রুমে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।
হাত ছুড়ে মারে ঢুকেই। রাগান্বিত গলায় বলল,
— এ তোমার ভালোবাসা? বউ চোখের আড়াল হতেই অন্য বিবাহিত মেয়ের সাথে পরকিয়া করছো! ছিঃ! তাওহীদ।
— এসব বাজে কথা বলবানা মুসকান।
আমি ভাবীর সাথে কোনোরকম পরকিয়া করিনি। তুমি ভুল বুঝছো।
— এখন ভাবী হয়ে গেছে? এতক্ষণ তো স্বামীর মত আচরণ করছিলে!
— তুমি একটু শান্ত হও। তারপর আমার কথাটা শুনো।
— তোমার কাছে আমার আর কিছুই শোনার নেই।
বলে কাদতে কাদতে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল মুসকান। তাওহীদ এতবার ডাকল, দরজায় কড়া নাড়ল। কিন্তু মুসকান কোনো সাড়া ই দিলনা। হতাশ হয়ে তাওহীদ ছাদে এসে বসে রইল। কাদতে শুরু করল হাটুতে মুখ গুটিয়ে। কেউ তার কাধের উপর হাত রাখল। চমকে উঠে পিছু ফিরে তাকাল।
শুকনো মুখে ওয়াফাহ তার দিকে তাকিয়ে আছে। ওয়াফাহকে দেখে তাওহীদ চোখের পানি মুছে স্বাভাবিক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
— তুমি এখানে? মুহিবের কাছে যাওনি?
— তাওহীদ, আমার জন্য তোমার আর মুসকানের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। আমার জন্য তোমরা কষ্ট পাচ্ছো। বলে কাদতে শুরু করল।
তাওহীদ ওয়াফাহকে শান্ত্বনা দিয়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
— ও কিছুনা। অনেকদিন দূরে থাকলে এমন অভিমান হতেই পারে।
তোমাকেও তো মুহিব ভুল বুঝে আছে। দেখবে কিছুদিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে। ওরা দুজন সুস্থভাবে ফিরে এসেছে এর চেয়ে বড় খুশির কথা কি হতে পারে বলো!
দেখবে এবার ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিবে।
ওয়াফাহ কেদে কেদে বলল,
— তাই যেন হয়। আল্লাহ যেন এবার সব ঠিক করে দেন।
মুহিব মনে মনে অনুশোচনা করতে লাগল। এভাবে ওয়াফাহকে বকাবকি করাটা ঠিক হয়নি। সবকিছু ভুলে ওকে কাছে টেনে নিব। আমি তো কেবল ওর জন্য ই ফিরে এসেছি। ও ছাড়া তো এই পৃথিবীতে আমার আর কোনো আকর্ষণ নেই।
গুন্ডি বউটা নিশ্চয়ই এখন ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে।
গুন্ডিটা এখন অনেক ইমোশোনাল হয়ে গেছে। যাই ওকে কাছে টেনে সব ঠিক করে ফেলব। ভাবতে ভাবতে পুরো বাসায় মুহিব ওয়াফাহকে খুজতে লাগল।
অবশেষে ছাদে গিয়ে দেখে ওয়াফাহর মাথায় হাত বুলাচ্ছে তাওহীদ। তাওহীদের কথা শুনে ওয়াফাহ হাসছে। দুজনের মুখে রাঙা হাসি।
দৃশ্য টা দেখে মুহিব থমকে গেল।
কাদতে কাদতে রুমে চলে আসে। মুসকান মুহিবকে এভাবে কাদতে কাদতে রুমে ঢুকতে দেখে ডাক দেয়। কিন্তু মুহিব সাড়া না দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।
মুসকান বুঝতে পারে ঘটনা। সে নিজেও দৌড়ে ছাদে চলে আসে। তাওহীদ ওয়াফাহর চোখের পানি মুছে দিয়ে হাসতে বলছে। মুসকান এসে ওয়াফাহকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। ওয়াফাহ ফুলের টবের সাথে হোচট খেয়ে পড়ে যায়।
তাওহীদ রেগেমেগে মুসকানের দিকে তাকায়।
— এটা কি করলে তুমি?
— শুনো ভাবী, তুমি আজ থেকে আমার বরের আশেপাশেও আসবেনা।
তোমার নিজের ও তো একটা সংসার আছে। সেটা সামলাও, আমার ভাইটাকে কষ্ট দিচ্ছো। এতদিন পর ভাইটা সবকিছু ছেড়ে তোমার কাছে এলো। আর তুমি অন্যের স্বামীকে নিয়ে ব্যস্ত।
তোমার কাছে হাত জোড় করছি। আমার সংসারে আগুন লাগিওনা।
ওয়াফাহর চোখ থেকে টপটপ করে পানি ঝড়তে থাকে। উঠতে চেষ্টা করে, তাওহীদ এগিয়ে আসতে চাইলে মানা করে। উঠে চুপচাপ নিচে চলে যায়।

তাওহীদ বলল, তুমি কি এটা ঠিক করেছো?
— ঠিক-ভুল আমি আর বুঝতে চাইনা। এতদিন পর আমি সবকিছু ছেড়ে তোমার কাছে এসেছি সারাজীবন কাটাব বলে। আর তুমি ওই ওয়াফাহকে নিয়ে ব্যস্ত।
এটা নিয়ে আর কোনো কথা বলবানা।
আর যদি তুমি ওর আশেপাশে ঘুরঘুর করেছো তাহলে আমি ওয়াফাহকে বাসা থেকে বের করে দিব, সেইসাথে আমার ভাইয়ের জীবন থেকেও। গড়গড় করে কথা গুলো বলে মুসকান নিচে নেমে গেল।
রাতের খাবারের পর হঠাৎ ওয়াফাহ বমি করতে চলে গেল। করার পর নিস্তেজ হয়ে মেঝেতে পড়ে গেল। মুহিব ওয়াফাহকে কোলে নিয়ে রুমে নিয়ে আসল। শুইয়ে দিয়ে তাকিয়ে রইল অপলক। নিজের মধ্যে কেমন অস্থিরতা কাজ করতে লাগল। মেয়েটার শরীর খারাপ তাও একবারো জানাল না। ওয়াফাহর মাথায় হাত বুলাতে লাগল মুহিব। এমনসময় মুসকান তাওহীদের হাত ধরে মুহিবের কাছে আসল। মুহিব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
— তুই ওকে এভাবে টেনে আনলি কেন?
মুসকান কাদতে কাদতে বলল, আমি আগেই বুঝেছিলাম ভাবীর বমি করা, মাথা ঘুরে পড়া স্বাভাবিক রোগ না। ভাবী সন্তানসম্ভবা।
তাওহীদের ওয়্যারড্রোবে এই রিপোর্টগুলো পেলাম, তাতে স্পষ্ট লেখা, ” ভাবী ২মাসের অন্তর্সত্ত্বা। মুহিব রেগে তাওহীদের দিকে তাকাল।
— ভাইয়া, বিশ্বাস করুন। এমন কিছুই না যেটা আপনারা ভাবছেন।
মুহিব তাওহীদের গালে একটা ঘুষি মারে। তাওহীদ ব্যথা পেয়ে নিচে বসে পড়ে।
মুসকান মুহিবকে থামিয়ে বলে, ভাইয়া, শান্ত হও।
ও আমার স্বামী, এভাবে মারতে পারোনা ওকে।
ড্রয়িংরুমে তাওহীদ, ওয়াফাহ, মুহিব আর মুসকান গোল হয়ে বসে আছে।
সবাই নিশ্চুপ। ওয়াফাহ কিছু বলতে চাইলে মুহিব বাধা দেয়। তারপর কাছে এসে ওর হাত ধরে বলে, আমি তোমার সুখটাই চাই বউ। আমার অনুপস্তিতিতে তুমি তাওহীদকে আকড়ে ধরে নতুন জীবন শুরু করতে চেয়েছো, এতে তোমার কোনো দোষ নেই। আমি সেদিন তোমাকে যে অবস্থায় ফেলে চলে গিয়েছিলাম, তাতে তুমি কেন তোমার জায়গায় যে কোনো মেয়ে হলে নতুন করে বাচতে চাইত।
মুসকান তোর যদি আপত্তি না থাকে, তাওহীদ আর ওয়াফাহ নিজেদের সংসার গুছিয়ে নিক।
মুসকান নীরবিভঙ্গিতে বলল, আমার কোনো আপত্তি নেই ভাইয়া। যে আমার না, সে আমার হবেনা। এতে আমার কোনো আফসোস নেই।
বলে তাওহীদের দিকে তাকাল। তাওহীদ কিছু বলার আগেই মুহিব বলে উঠল,
তাহলে তালাকের ব্যাপারটা সেরে নিই।
শুনে ওয়াফাহ আতকে উঠল।
.

(চলবে)

জ্বীনবর৩
পর্বঃ৩১শেষ পার্ট
লেখিকাঃ আস্থা রাহমান শান্ত্বনা

ওয়াফাহ মুহিবের হাত চেপে বলল, এমন কথা বলোনা। সন্তানটা তোমারই। তুমি যা ভাবছো তার কিছুই নাহ।
তাওহীদ বলে উঠল, হ্যা ভাইজান। ওয়াফাহ ভাবী মিথ্যে বলছেনা।
মুহিব আশার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, কিন্তু….
তাওহীদ গড়গড় করে বলতে লাগল, ” শয়তানটাকে মেরে ফেলার কিছুদিন পর যখন জ্বীনদাদু আপনাদেরকে জ্বীনরাজ্যে চলে যেতে বলেন, তখন ওয়াফাহ ভাবী হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ডাক্তারের কাছে নিলে জানায় ভাবী প্রেগন্যান্ট।
ভাবী যতটা খুশি হয়েছিল তার থেকে বেশি ভেঙ্গে পড়েছিল। যদি আপনি জ্বীনরাজ্য থেকে আর না ফিরেন, তাহলে বাচ্চাটার কি হবে?
কে দেখবে তাদেরকে? এসব চিন্তায় ভাবী মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে যান। আমি ভাবীকে অনুরোধ করি আমার কাছে থাকার জন্য। সে তা না শুনে তার মায়ের কাছে ফিরে যায়, সেখানে গিয়ে শুনে ভাবীর মা নাকি কিছুদিন আগেই মারা গেছে!
নিরুপায় হয়ে ভাবী আবার আমার কাছেই ফিরে আসে। মুসকানের চিন্তায় আমিও হতাশ হয়ে পড়েছি। আদৌ জানতে পারছিলামনা আপনারা ফিরে আসবেন কিনা? জ্বীনজাতি আপনাদেরকে এখানে ফিরতে দিবে কিনা! তখন ভাবীর মানসিক অবস্থা বুঝে আমি তার সকল দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ করি। ভাবী রাজি হতে চায়নি, পরে আপনাদের বাচ্চার কথা ভেবে রাজি হয়। আপাততদৃষ্টিতে আমাকে আর ওয়াফাহ ভাবীকে অন্য কিছু মনে হলেও আমরা ভাই-বোনের মতই ছিলাম। আমার কোনো বড়বোন নেই, তাই ওয়াফাহ ভাবীকে নিজের বোনের জায়গায় বসিয়েছিলাম। তার আর তার বাচ্চার দায়িত্ব নিয়েছি। আচ্ছা মুসকান ভাই কি বোনের মাথা কোলে রেখে হাত বুলাতে পারেনা? চোখের পানি মুছিয়ে হাসাতে পারেনা?
বোন ভাইকে টাই পরিয়ে দিতে পারেনা?
তোমার দৃষ্টিতে যদি এটা নোরাংমি হয় তবে পৃথিবীর সব ভাই-বোনের সম্পর্ক ই নোংরা। মুসকান এটা শুনে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে। না জেনে কি না বলে ফেলেছে ভাবী আর তাওহীদকে। তাওহীদ একটু থেমে বলল,
— আচ্ছা মুসকান তুমি ২মাস আগে সেদিন রাতে যখন বললে, তাওহীদ আমি জ্বীনরাজ্যে যাচ্ছি। নিজের খেয়াল রেখো। আমি কি একবারো জিজ্ঞেস করেছি কেন? ফিরবে কিনা? বাধা দিয়েছি?
কারণ তোমাকে আমি ভীষণ বিশ্বাস করি। কিন্তু তুমি আমাকে, আমার কথা বাদ দাও আমার ভালোবাসাকে বিশ্বাস করলে না! মুহিব ভাইয়া নাহয় আমাকে চিনেনা, তুমি তো আমাকে চিনো।
মুহিব শক্ত করে ওয়াফাহকে জড়িয়ে ধরে কাদতে শুরু করল।
— স্যরি বউটাহ। আমাকে ক্ষমা করে দিও।
ওয়াফাহ মুহিবের পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলল, এভাবে কাদে কেউ? আমার পিচ্চি জ্বীনবরটাহ। কান্না থামাও। আমাদের বাবুহ কি বলবে বলো তো! লজ্জা দিবেনা তার বাবাকে?
মুসকান আস্তে আস্তে তাওহীদের পাশে এসে দাঁড়ায়। তারপর আলতো করে তাওহীদের কাধে মাথাটা এলিয়ে দেয়। তাওহীদ প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলে মুসকানের চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকে। মুসকান শান্তস্বরে বলল,
— ক্ষমা করে দাও তাওহীদ।
তাওহীদ মুসকানের কপালে ঠোটটা আলতো করে ছুয়ে দেয়। মুসকান তাওহীদের হাত জড়িয়ে বলে, জ্বীনদাদু চেয়েছিল জ্বীনরাজ্যটা আমরা পরিচালনা করি। কিন্তু আমাদের পক্ষে তোমাদের কে ছেড়ে থাকা সম্ভব নয়। তাই দাদু শর্ত আরোপ করল যোগ্য কাউকে দায়িত্বে বসিয়ে আমাদের সব জ্বীনিশক্তি ফেরত দিয়ে তবেই সাধারণ জ্বীন রুপে দুনিয়ায় ফিরে আসতে পারব। তোমাদের সাথে জীবন কাটাতে আর কেউ বাধা দিতে পারবেনা। তোমাকে যে বলেছিলাম জুহানীর কথা। ওকেই পরিচালনার দায়িত্ব এসেছি, আমাদের সব জ্বীনিশক্তি ওর কাছে। আর ও ভীষণ বুদ্ধিমান। কয়েকদিনেই রাজ্যভার সুনিপুন ভাবে বহন করছে।
এখন আর কোনো বাধা নেই আমাদের সংসারে।
শুনে সবার মুখে খুশির ছাপ ফুটে ওঠল। হঠাৎ রুমে কালো ছায়া ঘুরে ঘুরে উড়তে দেখা গেল। মুসকান অবাক হয়ে বলল,
— জ্বীনদাদু আবার কেন আসল?
মুহিব উৎকন্ঠা নিয়ে বলল, আবার কোনো সমস্যা হল না তো?
— এসো ভাইয়া, আয়নার কাছে যাই।
সবাই আয়নার সামনে দাড়াল। আয়নার প্রতিবিম্ব নড়ে উঠল। মূহুর্তের মধ্যে আয়নায় জ্বীনদাদুর প্রতিবিম্ব দেখা গেল। সবাই সালাম দিল একসাথে।
— আল্লাহ তোমাদের মঙ্গল করুক। আমি তোমাদের কিছু বলতে এসেছি মুহিব মুসকান। মুহিব বলল,
— কোনো সমস্যা হয়নি তো জ্বীনদাদু?
— না দাদাভাই। আমি বলতে এসেছি আগাম ভবিষ্যতের কথা।
ওয়াফাহর গর্ভে মুহিবের সন্তান ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে। যেহেতু মুহিব বিশেষ জ্বীন থাকা অবস্থায় এই সন্তান গর্ভে এসেছে তাই সেও বিশেষ জ্বীন হয়ে উঠবে।
মুসকান অবাক হয়ে বলল, কিন্তু আমরা তো সব শক্তি ত্যাগ করে এসেছি। তবে কি করে সে জ্বীন গোত্রের বিশেষ একজন হয়ে উঠবে?
— মুহিবের অনেকটা শক্তি ওর মাঝে স্থানান্তরিত হয়ে গেছে অনেক আগেই। এই সন্তান ই হবে জ্বীনরাজ্যের পরবর্তী সর্দার। ২১বছর বয়সে সে তোমাদের থেকে আলাদা হয়ে যাবে এবং জ্বীনরাজ্য শাসন করবে। তখন তোমরা সে কাজে কোনোরুপে বাধা সৃষ্টি করতে পারবেনা।
আর মুসকান তোমার অনাগত সন্তান মানুষ্যসন্তান ই হবে। সাধারণ মানুষের মতই তার জীবনযাপন হবে। সুখে থাকো তোমরা।
মুহিব আর ওয়াফাহ একে অপরের দিকে তাকাল।
জ্বীনদাদু একটু থেমে বললেন,
— আর তোমাদের মা-বাবার রুহ তোমাদের সাথে দেখা করতে এসেছে। তাদের সাথে দেখা করো। সাথে সাথে আয়নায় মেহরাব আর মুশায়রার চেহারা ভেসে উঠল। মুসকান মা বলে ডাক দিল।
মুশায়রা মিষ্টি করে বলল, সুখে থাক তোরা। আল্লাহ তোদের সহায় হন।
আমার নাতি-নাতনীদের ভালো রাখিস। ওয়াফাহ মা তুমি একটা জ্বীনবর পেয়েছো, জ্বীনসন্তান পাবে এই নিয়ে গর্বিত হও। মন খারাপ করে থেকোনা, বরঙ তাকে এমনভাবে তৈরী করো যাতে সে জ্বীনবংশের সেরা জ্বীনসর্দার হতে পারে।
মুসকান মা, সবাইকে সুন্দরভাবে আগলে রাখিস।
আল্লাহর উপর ভরসা রাখিস।
মেহরাব দূর থেকে সবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। তারপর সব উধাও।
জ্বীনদাদু এসে বলল, দাদুভাইরা, আমার রুহ ও এতদিনে শান্তি পেয়েছে। এখন আমাকে ফিরে যেতে হবে। ভালো থেকো তোমরা।

মুসকান ব্যালকুনিতে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখছে। তাওহীদ এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল, ভালোবাসি জ্বীনকন্যা।
মুসকান তাওহীদের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলল, ভীষণ ভালবাসি তাওহীদ।
তারপর জড়িয়ে ধরে বলল, আমি ভীষণ খুশি। সব পূর্ণতা আমাকে ধরা দিয়েছে। তোমার মত ভালো, মিষ্টি একটা মানুষসন্তান আমি পাব।
তাওহীদ একটু দুঃখের ভান করে বলল, তখন আমার আদর কমে যাবে। আমার আদরে ভাগ বসাবে আমার জ্বীনি রাজকন্যা কিংবা রাজপুত্র।
— বাচ্চাদের মত কি যে বলো তুমি?
সত্যিই ভেবেই ভালোলাগছে, একটা মানুষ্য সন্তান আমার কোল আলো করে আসবে। ছোট ছোট পা ফেলে পুরো ঘর হেটে বেড়াবে। আধো আধো বুলিতে মা মা ডাকবে। খুব ভালো আর সাধারণ হবে তার বাবার মত।
তাওহীদ মুসকানের কানে নাক ঘষতে ঘষতে বলল, জ্বীনরাণী অনেক ভালোবাসি তোমায়। মুসকান চোখ বন্ধ করে ভবিষ্যতের স্বপ্নে বিভোর হয়ে গেল।
মুহিবকে আগের মত ওয়াফাহকে কোলে শুইয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলাতে লাগল। ওয়াফাহ হঠাৎ করে জিজ্ঞেস করল, কি ভাবছো?
— ভাবছি আমাদের সন্তান ২১বছরের পর আর আমাদের থাকবেনা। চলে যাবে জ্বীনরাজ্যে, শাসন করবে সে রাজ্য।
— আমার কিন্তু ভেবেই আনন্দ হচ্ছে।
— তোমার খারাপ লাগছেনা? ও আমাদেরকে ছেড়ে জ্বীনরাজ্যে চলে যাবে।
— সেটার জন্য একটু খারাপ লাগলেও আমি কিন্তু সত্যিই গর্বিত। একজন সাহসী বিশেষ জ্বীনবর পেয়েছি আর একজন দায়িত্ববান সেরা জ্বীনসন্তান পাচ্ছি। একজন মায়ের কাছে গর্ব কি জানো? যখন তার সন্তান বিশেষ কোনো স্থানে সম্মান লাভ করে। আমার সন্তান পুরো জ্বীনরাজ্য সুনিপুন আর সুন্দরভাবে পরিচালনা করবে এবং সেরা জ্বীনসর্দার হবে। এতেই আমার আনন্দ।
— গুন্ডি বউটাহ আমার।
— এই শুনোনা জ্বীনবর।
— হুম বলো।
— ক্ষিধে পেয়েছে।
— এত রাতে?
— হুম
— রান্নাঘরে বিরিয়ানি আছে, দাড়াও নিয়ে আসছি।
— না বিরিয়ানি খাবনা। যাও না একটা ডিম ভেজে দাও।
ডিমটা একটু হলুদ হলুদ রাখবা বুঝছো জ্বীনবর!
— আগের মত জ্বালানি শুরু হয়ে গেলনা তাইনা!
ওয়াফাহ হাসতে হাসতে মুহিবের বুকে মাথা গুজে। মুহিব হেসে হেসে জড়িয়ে ধরে ওয়াফাহর মাথায় আলতো চুমু খায়। ওয়াফাহ মিহিকন্ঠে বলে উঠল,
— জ্বীনবরটা আমার।
আর ভাবতে থাকে, আমি আসলেই সৌভাগ্যবতী। এমন জ্বীনবর পাওয়া সবার ভাগ্যে থাকেনা। জ্বীনবরের ভালোবাসায় যুগ যুগ বেচে থাকবে ওয়াফাহ, মুশায়রা। সবাই শুনে শুনে আক্ষেপ করবে, “ইস আমিও যদি একটা জ্বীনবর পেতাম।” হালকা ঈর্ষা ও করবে তাদের। ওরা ভীষণ ভাগ্যবতী বলে কথা!
.

(সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here