জ্বীনবর (সিজন-৬),পর্বঃ০৩,০৪

0
1436

জ্বীনবর (সিজন-৬),পর্বঃ০৩,০৪
আস্থা রাহমান শান্ত্বনা
পর্ব-০৩

যে-ই আমি অবয়বটার মাথায় আঘাত করতে যাব, তখন ই সে একহাত দিয়ে রড টাকে শক্ত করে ধরে ফেলল তাও পিছনে না ঘুরে। আমি রডটাকে তার হাত থেকে ছাড়ানোর জন্য টানাটানি করতে থাকলাম, সে কিছুতেই ছাড়ছিলনা। আমিও হাল ছাড়ছিলামনা, রেগে গিয়ে বলতে লাগলাম,

— ইডিয়ট, একই বাড়ীতে দ্বিতীয়বার চুরি করতে আসতে লজ্জা করেনা। চোর হলেও মিনিমাম কমনসেন্স থাকা উচিত, এভাবে চোরজাতির সম্মান নষ্ট করার জন্য আপনাকে চোর কমিটি থেকে বহিষ্কার করা উচিত!
কথাগুলো শোনার পর অবয়বটা রড ছেড়ে দিল, আমি তখনো টানাটানি করতে থাকায় টাল সামলাতে না পেরে ছিটকে ছাদের কিনারায় পড়তে নিলাম। অবয়বটা দ্রুত আমার হাতের রডটা টেনে আমাকে নিশ্চিত পড়ার হাত থেকে বাচাল। সোজা হয়ে দাড়িয়ে মুখ বাকিয়ে বললাম,

— চোর হলেও মানুষ ভাল। কিন্তু আপনার পরিচয় কি? কি চুরি করতে এসেছেন এখানে?
বলতে বলতে ফোনের ফ্ল্যাশ অন করে দিলাম। ধারণা করেছিলাম, এক্ষুনি সে পালানোর চেষ্টা করবে। তাই ফন্দি করে পালানোর আগে চেহারা দেখে নেওয়ার চেষ্টা করলাম।
ফ্ল্যাশ অন করতেই সে উল্টো দিকে ফিরে দাড়াল। আমি দ্রুত তার সামনে দাড়িয়ে গেলাম, ফ্ল্যাশের আলোয় চেহারা দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম। কাপা কন্ঠে বললাম,

— দুলাভাই আপনি! আপনি এত রাতে ছাদে এলেন, আমি ভাবলাম….

— আমাকে চোর কমিটির সদস্য বানিয়ে দিলে! আমার রাতে ছাদে আসার অভ্যাস আছে, আর তুমি এইসময় বাহিরে কেন? যাও বাসায় যাও।
দুলাভাইয়ের কন্ঠ এই প্রথম ঝাঝালো মনে হল। যদিও আগে থেকেই উনার সাথে আমার খুব বেশী কথা হতনা, যতবার হয়েছে শান্তগলায় কথা বলেছেন। আমি আর কথা বাড়ালামনা, ধীর পায়ে হেটে রুমে চলে এলাম। একটু রাগ কাজ করল, উনি প্রথমে আমাকে বললে পারতেন। তাহলে এত কাহিনী হতনা। তাছাড়া সেদিনও যদি অবয়বটা তিনি হয়ে থাকেন, তবে অদ্ভুতভাবে পালিয়ে গেলেন কেন!
টেবিলের উপর থাকা পানিভর্তি গ্লাসটা ফাকা করে শুয়ে পড়লাম। বুঝতে পারছিলামনা, এর আগের দিন ও কি উনি ছিলেন নাকি! কাল জিজ্ঞেস করে নেওয়া যাবে ভেবে এসব চিন্তা বাদ দিয়ে ঘুমের প্রস্তুতি নিলাম।

চোখ ডলতে ডলতে নাস্তার টেবিলে এসে বসলাম, আপু আমার দিকে পাউরুটি আর ওমলেট এগিয়ে দিল। তাতে কামড় বসাতে বসাতে বললাম,

— দুলাভাই কোথায়? নাস্তা করতে ডাকিসনি?

— সে তো একটু আগে নাস্তা করে বেরিয়ে গেল। তোকে বেলা করে ঘুমাতে দেখে আর জাগাতে দিলনা। শরীর ঠিক আছে তোর? এত দেরী করে উঠলি?

— ঠিক আছে, একটু ক্লান্ত ছিলাম। আর আসার পর নতুন জায়গায় হিসেবে ঘুম হয়নি।
আচ্ছা আপু, দুলাভাইয়ের রাতে ছাদে যাওয়ার অভ্যাস আছে?

— সে তো খানিকটা আছে। বেশ বাতাস আর জ্যোৎস্না থাকলে আমাকে নিয়ে ঘুরে আসে। এই বাসায় এসে ভেবেছিল রাতে একবার ছাদ ঘুরে আসবে, কিন্তু সেদিন এত ক্লান্ত ছিল যে ঘুমিয়ে পড়েছিল।
আপুর কথা শুনে ভাবলাম, তাহলে পরশুদিন যাকে দেখেছিলাম সে আসলেই চোর ছিল। কালকে হয়ত সত্যিই দুলাভাই ছাদে ছিল।

আর কিছুদিন এসব নিয়ে ঘাটাঘাটি করলামনা, সেদিনের পর খানিকটা লজ্জায় দুলাভাইয়ের সাথেও খুব বেশী কথা বাড়াতামনা। কিন্তু দুলাভাই আমার সাথে স্বাভাবিক আচরণ ই করছিল।
সন্ধ্যাবেলা আপু আর আমি বসে মুভি দেখছিলাম, হঠাৎ বাহিরের গেটে কারো নক করার শব্দে আমি বাসার বাহিরে এসে গেইট খুললাম। মাঝে মাঝে মনে হয় যে গেইটে একটা দারোয়ান থাকলে ভালো হত, বাসা থেকে এসে বাহিরের গেইট খোলা ঝামেলা লাগে। গেইট খুলে দেখি কেউ নেই, কিন্তু এতক্ষণ খুব শব্দ করেই নক হচ্ছিল। গেইটের বাহিরে বেরিয়ে এপাশ ওপাশে চোখ ঘুরালাম, কাউকেই দেখতে পেলামনা। কোন উড়নচণ্ডী পোলাপান ফাজলামী করল কে জানে!

ঢুকে গেইট লক করতেই ভিতর থেকে আপুর আত্মচিৎকার ভেসে আসল। কিছু না ভেবে দৌড়ে ভিতরে এসে দেখি আপু মেঝেতে শুয়ে কাতরাচ্ছে, তার পেটের একপাশে ছোট্ট ভারী টেবিলটা পড়ে আছে। সেই সাথে আপুর কোমড়ের নিচের অংশে রক্ত ঝরছে। তাড়াতাড়ি টেবিলটা উঠিয়ে ফেললাম। এরমধ্যে আপু অসাড় হয়ে পড়েছে।
আপুর এই অবস্থা দেখে আমি দিশেহারা হয়ে পড়লাম, দুলাভাইয়ের নাম্বারে কল দিলাম। কিন্তু আমার ফোনের সিগনাল উঠানামা করায় রং হওয়ার আগেই কেটে যাচ্ছে।
কি করব বুঝতে পারছিলামনা, আশেপাশে কোনো প্রতিবেশী ও নেই যে সাহায্য চাইব।
এই দেশের কোনো এ্যাম্বুলেন্স নাম্বার আমি জানিনা, কোথায় হেল্প চাইব বুঝতে পারছিনা।

গুগল থেকে নাম্বার কালেক্ট কাছের হসপিটালে কল দিলাম, সিগনাল উঠানামা করায় সেখানেও কল গেলনা। নিরুপায় হয়ে রাস্তায় এসে ট্যাক্সি ক্যাব খুজতে লাগলাম, কিন্তু কোনো ক্যাব দাড়াচ্ছেনা। দাড়ালেও কেউ আমার ইংলিশ বা ভাঙ্গা ভাঙা উর্দু বুঝতে পারছেনা, কেউ বা আপুকে বাহির করে আনার ব্যাপারে হেল্প করতে চাইছেনা।
শেষমেষ একটা পারসোনাল গাড়ির মালিক আমাকে সাহায্য করল। বাসার ভিতর থেকে আপুকে কোলে তুলে বের করে গাড়ীতে উঠাল। খুব দ্রুত হাসপাতালে পৌছে আপুকে এডমিট করলাম, দুলাভাইকেও ফোন করে জানালাম।

ওয়েটিং রুমে বসে মনে মনে আল্লাহকে ডাকছি, ভিতরটা বারবার অনুশোচনা এবং আতঙ্কে কেপে উঠছিল। চোখ-মুখ শক্ত করে বসে আছি। অপরিচিত সাহায্যকারী আমার পাশের সিটে এসে বসলেন, আমি তার দিকে না তাকিয়ে ইংরেজীতে ধন্যবাদ জানালাম। উনি আমার দিকে পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বললেন,

— চোখেমুখে পানি দিয়ে নিন। আমি এবার তারদিকে তাকিয়ে পানির বোতল নিলাম। তখনকার পরিস্থিতিতে তার দিকে তাকানোর সুযোগ হয়নি, এখন একনজর দেখলাম অপরিচিত সাহায্যকারী একজন সুঠাম তরুণ। দেখে মনে হচ্ছে, খাস পাকিস্তানী। পরনের কাঠালি রঙ্গের টি-শার্ট আর থ্রি-কোয়ার্টারে আবছা রক্ত, বা হাতে রোলাক্স ঘড়িটা উল্টো হয়ে ঝুলছে। একসাইডে রাখা পরিপাটি চুলগুলো ভিজে এলোমেলো হয়ে আছে, নাকে বিন্দু বিন্দু ঘামের কণা। তার ধূসর ঘোলাটে চোখের দিকে দ্বিতীয়বার তাকানোর সাহস পেলামনা। ভিন্নদেশী ছেলেগুলো আমার কাছে আতংকস্বরুপ। আমি উঠে করিডোরের দিকে এসে চোখে-মুখে পানির ছিটে দিলাম।

দুলাভাই দৌড়ে এসে হাপাতে হাপাতে আমার সামনে দাড়ালেন, এর মধ্যে ডাক্তার অটি থেকে বেরিয়ে আসায় দুলাভাই তার কাছে ছুটে গিয়ে কথা বললেন।
আমি এগোতে তিনি চোখ দিয়ে ইশারা করলেন ওখানেই দাড়াতে। কথা শেষ করে এগিয়ে এসে বললেন,

— তোমার আপু ঠিক আছে, অল্পের জন্য বাচ্চার বড়ধরণের কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে আল্লাহ না করুন, এই এক্সিডেন্টে বেবির কোনো অংশ বিকালাঙ্গ হতে পারে। উনারা এই ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত নয়। আরো দুমাস পর স্পষ্ট বুঝা যাবে।

কথাটা শুনে মাথা ঘুরছিল, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছিলাম এমন কিছু যাতে না হয়। দুলাভাই আবার বললেন,

— চলো তোমায় বাসায় দিয়ে আসি। কাল হয়তবা তোমার আপুকে রিলিজ করে দিবে।

— আমি এখানে থাকতে পারি?

— আমি আছি, তুমি বাসায় গিয়ে রেস্ট নাও। বাহিরে দাড়াও, আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলে আসছি।

চুপচাপ হসপিটালের বাহিরে দাড়িয়ে আলোয় সাজানো ব্যস্ত শহরটা দেখতে লাগলাম। চারদিক লোকারণ্য, দুইলেনের রাস্তা দিয়ে ঘন ঘন গাড়ী শা শা করে ছুটে যাচ্ছে। আশেপাশে ফল-খাবারের দোকান থেকে বিভিন্ন কথা ভেসে আসছে। প্রত্যেকে ভীষণ ব্যস্ত নিজেদের নিয়ে।
পাশ থেকে অপরিচিত মানুষটার প্রশ্ন,

— আপনার রোগী এখন কেমন আছেন?
আমি ছোট্টশ্বাস ছেড়ে বললাম,
— ভালো আছে, বেবির বড় কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে বিকালাঙ্গ হওয়ার আশঙ্কা আছে।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সহযোগিতা করার জন্য। আমি এই পরিবেশের সাথে পরিচিত নই, তাই এইসব হ্যান্ডেল করা অসম্ভব ছিল। দুলাভাইকে বেরোতে দেখে উনাকে বিদায় জানিয়ে চলে এলাম।

(চলবে)

জ্বীনবর (সিজন-৬)
পর্ব-০৪
আস্থা রাহমান শান্ত্বনা

আপুর জন্য চিকেন স্যুপ বানিয়ে নিয়ে তার রুমের দিকে যাচ্ছিলাম, দরজার কাছে আসতেই আপু-দুলাভাইয়ের কিছু টুকরো কথোপকথন কানে ভেসে এল। পার্সোনাল কথা বলছে সেটা ভেবে ফিরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াব অমনি কানে এল দুলাভাই বলছে,

— রেহজানের উপর আমার পুরো আস্থা ছিল, সে অন্তত তোমার প্রতি যত্নশীল থাকবে। কালকের ঘটনার পর আমি অনেকটা হতাশ।
আপু কন্ঠে করুণ একটা সুর এনে বলল,

— কালকের ঘটনার জন্য রেহজান কোনোভাবেই দায়ী ছিলনা। ও আমার অনেক খেয়াল রাখে, তুমি না থাকাকালীন আমাকে সর্বক্ষণ সঙ্গ দেয়। কালকে হঠাৎ গেইটে নক পড়ায় ও দেখতে বেরিয়েছিল, এর মধ্যে আমি উঠতে গিয়ে মেঝেতে পড়া পানির উপর পিছল খেয়েছি।

আপুর কথায় দুলাভাই আশ্বস্ত হতে পারলেননা। আমার প্রতি ভরসাটা উনি হয়ত হারিয়ে ফেলেছেন।
— হুম.. আমি তোমার জন্য একজন অভিজ্ঞ মহিলা সার্ভেন্ট এর ব্যবস্থা করব।
— তুমি রেহজানকে আর ভরসা করতে পারছোনা?
দুলাভাই ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
— আমি আর কোনো ঝুকি নিতে চাচ্ছিনা।
আমি কিচেনে ফিরে এলাম। একটা চাপা খারাপলাগা কাজ করছে, মনে হচ্ছে কালকের ঘটনার জন্য আমি সত্যি দায়ী।

ফোনের ওপাশ থেকে বাবার ক্ষিপ্ত আওয়াজ, ” তোকে আমি সেখানে কেন পাঠিয়েছিলাম? তুই থাকতে এত বড় ক্ষতি হতে যায় কিভাবে!”
বাবার পাশ থেকে মায়ের কথা শোনা গেল, ” ও হয়ত বুঝতে পারেনি, এত বকবেননা মেয়েটাকে। আমাকে ফোনটা দিন।”
বাবা রাগ দেখিয়ে মায়ের হাতে ফোন দিলেন,

— তোর বাবার কথায় মনে কষ্ট নিসনা, জানিস ই তো রেনুকে নিয়ে কত চিন্তিত থাকেন। শোন, এখন থেকে রেনুকে কখনোই একা ছাড়বিনা। কখন কি লাগবে সব খেয়াল রাখিস, টুকটাক উর্দু ভাষা শিখে নিস। মাঝেমাঝে বেরিয়ে চারপাশে কোথায় কি আছে চিনে রাখবি, প্রতিবেশীদের সাথে মিশবি।
আমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম,
— ঠিক আছে। তুমি সবার খেয়াল রেখো।

ফোন রেখে বারান্দার চেয়ারে বসলাম, আপু গুটি গুটি পায়ে আমার দিকে এগিয়ে এসে মুখোমুখি বসে বলল,

— আমার জন্য অনেক বকা শুনেছিস তাইনা? কেন জানাতে গেলি বাবা-মাকে?
— জ্ঞানী ভাব ধরবি না একদম। এইবার থেকে আমাকে ছাড়া এদিক সেদিকে এক পা ও দিবিনা, একা একা বারান্দায় এসেছিস কেন!
আপু দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিল বাগানের গাছগুলোর দিকে। উদ্দেশ্য তার চোখের পানি আমার থেকে আড়াল করা। আমি বুঝতে পেরে আপুর পেটের উপর আলতো করে হাত রাখলাম,

— পুচকো টা, বেরিয়ে যেন অভিযোগ করতে না পারে তার খালামনি তার এবং মায়ের যত্নে ক্রুটি রেখেছে। আমি কিন্তু তার আধো আধো আদর পেতে চাই, ঝুড়ি ঝুড়ি অভিযোগ নয়। আপু ফিক করে হেসে উঠে আমাকে কাছে টেনে জড়িয়ে নিল।

দুলাভাইয়ের আগ্রহে একজন মাঝবয়সী মহিলা সার্ভেন্ট রাখা হল। এখন সে ই সারাক্ষণ আপুর দেখাশোনা করে, রুটিনমাফিক সবরকম খেয়াল রাখে। বন্ধুর মত মিশে আপুর সাথে, এসব দেখে আমি অনেকটা নিশ্চিন্ত হই।
চিন্তা আসে, এখন আমি দেশে ফিরে যেতে পারব। দুলাভাইয়ের মনে কষ্টের কারণে আমারো থাকতে ইচ্ছে করছেনা, যতক্ষণ তার সামনে থাকি এক অজানা অপরাধীর মত অনুশোচনায় দগ্ধ হই।
আপুর কাছে ফিরে যাওয়ার কথাটা তুলতেই আপু এক ধমক দিয়ে বলল,

— আমাকে এই অবস্থায় এভাবে ফেলে ফিরে যাওয়ার জন্য তুই এসেছিস? এই তোর বোনের প্রতি ভালোবাসা! এমন ভালোবাসা শত্রুর ও যেন না থাকে।

— আপু আমি শুধু ভেবেছি, চলে তো যাচ্ছিনা।

— আমি চাই তুই আজীবন আমার কাছে থাক, আমার বাচ্চাকাচ্চা পালবি-বড় করবি আর আমি শরীর দুলিয়ে আরামে দিন কাটাব। ইস! আমার যদি একটা দেবর থাকত, তবে তোর সাথে বিয়ে দিয়ে দিতাম।
আপুর এমন কথায় আমার হাসি পায়, ফিরে যাওয়ার যে আগ্রহ গড়ে উঠেছিল সেটা আর খুজে পাইনি। নিজেকে একরকম স্বার্থপর আর অবিবেচক ও মনে হয়েছিল। আপুর এমন অবস্থায় অবশ্যই তার নিজের কাউকে প্রয়োজন।

গেইট খুলে সেদিনের অপরিচিত সাহায্যকারীকে দেখে খানিকটা ভড়কে গেলাম। উনি এখানে কেন এসেছেন প্রশ্নটা মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল। উনি উর্দু ভাষায় বললেন,

— কেমন আছেন? আরো বেশ কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করলেন যেগুলো আমার বোধগম্য হলনা। উর্দু না জানায় বেশ লজ্জা পড়ে যাচ্ছি। কোনোরকম জড়তা নিয়ে ইংরেজীতে বললাম,

— আমি উর্দু তেমন জানিনা। উনি স্যরি বলে ইংরেজীতে আবার জিজ্ঞেস করলেন, “আপনার রোগী কেমন আছেন?”

— জ্বী ভালো। আপনি এখানে কি করে?
ছেলেটা চোখের সানগ্লাস খুলে ফেলে ব্যাগ নিয়ে ভিতরে ঢুকে বলল, “এই বাসাটা আমার। আপনারা নিচের তলা ভাড়া নিয়েছেন। আর আমি মাঝে মাঝে এসে উপরতলায় থাকি।”
আমি হু-হা করে উনার কাছ থেকে কোনোরকম পালিয়ে চলে এলাম। উনাকে বিশেষ করে উনার ধূসর বর্ণের চোখগুলো দেখলে আমার কেমন একটা ঘোর কাজ করে। কথায় জড়তা চলে আসে, গুছিয়ে কিছু বলতে পারিনা।

আপুর কথায় সন্ধ্যার দিকে ছেলেটাকে চা দিতে গিয়ে দেখি দুলাভাই উপরতলায় যাচ্ছেন। পিছু পিছু যাওয়া ঠিক হবেনা ভেবে আমি বারান্দায় দুলাভাইয়ের নেমে আসার অপেক্ষা করতে লাগলাম।
অনেকটা সময় পর দুলাভাই নেমে এলেন, আমার চোখে চোখ পড়তেই দ্রুত ভিতরে চলে গেলেন। আমার কেমন একটা খটকা লাগল, দুলাভাইয়ের চোখ ভেজা ভেজা ছিল আর বারবার নাক টানছিল।

আমিও আর উপরতলায় না গিয়ে ফিরে এলাম, দুলাভাইকে কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস আমার নেই। তবে বেশ বুঝতে পেরেছি উপরতলায় গিয়ে দুলাভাই কান্না করেছিলেন। কিন্তু কি কারণে? ছেলেটা কি উনাকে কিছু বলেছে?
মাথায় হাজার প্রশ্ন নিয়ে উপরতলার দিকে পা নাড়ালাম। উদ্দেশ্য দুলাভাই আর ছেলেটার মধ্যে কি হয়েছে তা জানা।
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here