জ্বীনবর ৫?,পর্বঃ২০,২১
লেখিকাঃ আস্থা রাহমান শান্ত্বনা
পর্ব-২০
চোখে-মুখে পানির ছিটে পড়ায় চোখ মেলে তাকালাম আমি। টের পেলাম আমি কারো কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছি সে আমাকে পানির ছিটে দিচ্ছে। ভালো করে তাকাতেই দেখলাম এনি একজন পুরুষ। লাফিয়ে উনার কোল থেকে মাথা সরিয়ে উঠে বসলাম। গায়ের ওড়নাটা ঠিক করে বললাম, “আপনি কে?”
— শান্ত হন। আপনার অসুস্থতার ঘোর এখনো কাটেনি।
আপনার বিশ্রাম প্রয়োজন। আসুন, আপনাকে বাসায় নিয়ে যাই। উনি আমার ধরে উঠাতে চাইলে আমি বাধা দিয়ে বললাম,
— আমি একা যেতে পারব। ধন্যবাদ।
কিন্তু উঠার মত শক্তি আমার একবিন্দু ও নেই। সারাদিনের ক্লান্তি, স্ট্রেস নেওয়ার ফলে শরীর অত্যাধিক দূর্বল হয়ে গেছে, তার উপর না খেয়ে ছিলাম। উনি বুঝতে পেরে বললেন,
— আপনি একা পারবেননা। আমি আপনাকে সামান্য সাহায্য করে আপনার রুম পর্যন্ত পৌছে দিব। আপনার বাসার সবাই বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছে, তাই ডাকার সাহস করিনি।
— কিন্তু আপনি কে? আমাদের বাসায় ঢুকলেন কি করে! আপনি কোনো চোর না তো।
ছেলেটা অট্টহাসি হেসে বললাম, চোর হলে মানবতা দেখাতাম বুঝি! নিজের প্রয়োজন সেরেই পালাতাম। ওসব কথা পরে হবে, আপনি আমার হাতটা ধরুন।
অনেকটা অস্বস্তিকর মনোভাব নিয়ে উনার বাড়ানো হাতটা ধরে উঠে দাড়ালাম। উনি আমার হাত ধরে ধরে বাসায় ঢুকে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসিয়ে দিয়ে বললেন,
— এখানে একটু বসুন। তারপর রুমে যাবেন। আমি বরং আপনার বাসার বাকিদের ডাকি।
— নাহ! সবাইকে এখন বিরক্ত করার প্রয়োজন নেই, আমি ঠিক আছি।
— কতটা ঠিক আছেন? নিজের রুমে একা হেটে যেতে পারবেন? নিজেকে ঠিক প্রমাণ চেষ্টা না করে সুস্থ হওয়ার চেষ্টা করা বেটার নয়!
— আপনার পরিচয় এখনো দিলেননা! এত রাতে আপনি আমাদের বাড়ীর বাগানে কি করছিলেন? যদি অন্য কোনো মতলবে ঢুকে থাকেন, এক্ষুণি কেটে পড়ুন।
আমার বোন জানলে আপনাকে আস্ত রাখবেনা।
— কেন উনি বুঝি মানুষ খায়!
— আমি মোটেও আপনার সাথে মজা করছি না। সাহায্য করার জন্য ধন্যবাদ, আপনি এখন আসুন।
— আপনারা মেহমানদেরকে খালি মুখে বিদায় দেন?
আমি অবাক হয়ে ছেলেটার দিকে তাকালাম। একটুও ভয় নেই ছেলেটার মধ্যে, কি জানি কি উদ্দেশ্যে এখানে ঢুকেছে। বোন জানলে উনার যে কি হাল হবে!
ছেলেটা মোটামুটি শ্যামলা-ফর্সা, উচ্চতা মাঝারি লম্বা। চুলগুলো হালকা কোকড়ানো, সামনে হালকা সোনালি বর্ণের। পড়নে টি-শার্ট আর থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট। দেখে চোর মনে হচ্ছে না, ভদ্র ছেলে ই লাগছে।
আমি চুপ থেকে বললাম, আপনার ভালোর জন্য ই বলছি এখান থেকে চলে যান।
ছেলেটা হাসতে হাসতে আমার পাশে বসে বলল, আপনারা অতিথিদের এভাবে অ্যাপায়ন করেন? ভারী অদ্ভুত তো!
আমি কপাল কুচকে ছেলেটার দিকে তাকালাম, এত গায়ে পড়া ভাব কেন ছেলেটার! যা থাকে এর কপালে, সাহায্যের মর্যাদা দিচ্ছি জান বাচিয়ে সেটা নিতে আপত্তি।
এমনসময় ভেতরের ঘরের আলো জ্বলে উঠল। নিশ্চয়ই কোনো কারণে বোন উঠেছে। ড্রয়িংরুমের আলো জ্বলতে দেখলে তো এদিকে অবশ্যই আসবে। আমার সাথে এই ছেলেটাকে যদি উলটাপালটা কিছু ভেবে বসে কিংবা চোর সন্দেহে ছেলেটার ক্ষতি করে।
মনে মনে যা ভয় পাচ্ছিলাম তাই হল, বোন এদিকেই আসছে। আমি উনাকে কনুইয়ের গুতো দিয়ে বললাম,
— পালান এখান থেকে!
— কেন?
— দূর ব্যাটা! পালাতে বলসি পালা। বোন এসে আমাদের দেখে কপাল কুচকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করল, তুই এখানে কি করছিস?
আমি কিছু বলার আগে ছেলেটাই বলল,
— বাগানে জ্ঞান হারিয়েছেন উনি। আমি দেখে নিয়ে আসলাম ভেতরে।
আমি ভয়ে ঘামতে লাগলাম। এই কেলো করেছে! এই পাকনা ছেলেটাকে এত কথা বলতে কে বলে? সেধে এখন বড় বাশ আমাকেও খাওয়াবে আর নিজেও খাবে। বোন ছেলেটার দিকে একনজর তাকিয়ে আমাকে বলল,
— এত রাতে বাগানে কি করছিলি তুই?
— বাড়ী থেকে বেরিয়ে যেতে চাচ্ছিলাম। তোদের বোঝা হয়ে থাকতে চাচ্ছিলামনা।
— আমি তোকে বলেছি তুই বোঝা! রাগের মাথায় কিছু বললে সেটাই তোর করা লাগবে, করতে গিয়ে উলটাপালটা কাজ করবি পরে মানুষের চোখে অপরাধী হব আমি তাই তো।
— বোন, আমাকে ভুল বুঝিসনা। একটু আপসেট হয়ে গিয়েছিলাম, তাই যা মাথায় এসেছে তাই করেছি।
উনি আমার জ্ঞান ফিরেছেন এবং বাসা অবধি এগিয়ে দিয়েছেন।
— ধন্যবাদ তোমাকে।
আমি অবাক হলাম, ছেলেটাকে দেখে বোন তেমন কোনো এক্সপ্রেশন দিলনা। স্বাভাবিকভাবে নিল যেন ছেলেটার এতরাতে এখানে থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
— তুই এখানে বস, আমি তোর জন্য কিছু খাবার নিয়ে আসছি। খেয়ে ঘুমাতে যা।
— বোন, উনাকে…..
— এত বিচলিত হবার কিছু নেই। ওর নাম ফারহান। আমাদের বাড়ীতে ভাড়াটে হিসেবে থাকে এবং পাশাপাশি আমার কাজের সহকারী। এতক্ষণ বাসায় ছিলনা তাই তুই দেখিসনি। ফারহান, তুমি তাহলে ঘুমাতে চলে যাও।
— আমি উনাকে রুম পর্যন্ত এগিয়ে দিয়েই যাচ্ছি।
বোন আর কিছু না বলে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল।
ফারহান আমার পাশে বসে বললেন, এখন কেমন বোধ করছেন ম্যাম? ভয় কেটেছে তো!
— আপনি এটা আগে বললেন না কেন?
— আপনি সুযোগটা দিলেন কই! চলুন আপনাকে রুম পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে নিজের দায়িত্ব শেষ করি।
ছেলেটা আমাকে রুমে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে ফ্যানের সুইচ অন করে দিল। ততক্ষণে বোন খাবার নিয়ে এসে আমার সামনে রেখে বলল, খেয়ে নে। আর আমার রাগের মাথায় বলা কথাগুলো ধরিসনা, অভিমান থেকেই বলেছি।
— আমি জানি বোন।
— আচ্ছা আমি আসছি। ফারহান?
— আমিও যাচ্ছি। বোন চুপচাপ চলে গেল। তারপর ফারহান আমার সামনে বসে খাবারের প্লেট আমার হাতে দিল।
ক্ষিধের চোটে আমার নাড়িভুড়ি মোচড় দিচ্ছিল। তাই খাবার হাতে পেয়ে গপাগপ খেতে শুরু করলাম। অনেকটা খেয়ে লক্ষ্য করলাম ফারহান আমার এই অবস্থা দেখে মুখ টিপে হাসছে। এটাতে লজ্জাবোধ করলাম, এমনসময় আমার খাবার গলায় আটকে গেল। কাশতে কাশতে অবস্থা খারাপ, ফারহান তাড়াতাড়ি পানির গ্লাস নিয়ে হাতে দিল এবং আমার মাথায় কয়েকটা টোকা দিতে লাগল।
আমি স্বাভাবিক হওয়ার পর বললাম, ধন্যবাদ।
উনি মুচকি হেসে গ্লাস হাত থেকে নিয়ে ট্রেতে রেখে বলল,
— আচ্ছা তাহলে এখন শুয়ে পড়ুন। ঘুমালে শরীর ঠিক হয়ে যাবে। আমি আলো নিভিয়ে দিয়ে যাচ্ছি, শুভ রাত্রি।
বলে ট্রে নিয়ে আলো নিভিয়ে চলে গেল।
আমি শুয়ে পড়লাম এবং ভাবতে লাগলাম,
— বোন খুব ভালো একটা ছেলে পেয়েছে। এতদিন পুরুষবিহীন বাড়ীটায় বোনকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম, এখন একটা ভালো ছেলেও থাকছে বোনের দেখা-শুনা করার জন্য। ভিতরে ভিতরে অনেকটা স্বস্তি পেলাম।
শরীর বেশ ক্লান্ত ছিল তাই শোয়ার সাথে সাথে ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলাম।
মাঝরাতে টের পেলাম, কেউ খুব যত্নে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। স্পর্শটা এতটাই যত্নের সাথে যেন বড্ড গভীর টান আমার প্রতি তার।
বোন কি এতরাতে আমার রুমে এসেছে নাকি……
মেহরাব এসেছেন? ভাবতেই ঘুম ঠেলে একলাফে উঠে বসে ঘাড় ঘুরিয়ে কাউকে দেখতে পেলামনা। তবে অনুভব করলাম জানালা দিয়ে খুব দমকা হাওয়া রুম থেকে বেরিয়ে গেল। এটা কি মেহরাব চলে যাওয়ার সংকেত!
উনি কি সত্যিই আমার কাছে এসেছিলেন নাকি এসব কেবল আমার মনের ভুল! আমি উনার কথা এত কেন ভাবছি? উনি তো আমাকে ঠকিয়েছেন। আমার পবিত্র ভালোবাসা আর অনুভূতি অবমাননা করেছেন।
আর ভাবব না উনার কথা। আমি ভুলে যাব মেহরাব নামের কেউ আমার জীবনে ছিল। দ্বিতীয়বার উনাকে আমি আবার আমাকে ঠকানোর সুযোগ দিবনা।
দেখা হলেই এই মিথ্যা সম্পর্ক শেষ করার দাবি জানাব। মুক্ত করে দিব সম্পর্কের বেড়াজাল থেকে।
ভাবতে ভাবতে চোখে পানি চলে এল।
আমি আগের মত স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করলাম। খুব সকালে উঠে নামায পড়ে রান্নাঘরে চলে গেলাম চা-নাস্তা বানাতে। চা বানানোর সময় ফারহান রান্নাঘরের দরজায় টোকা দিলেন। আমি উনাকে দেখে বললাম,
— আপনি এত তাড়াতাড়ি উঠে পড়েছেন?
— আমার খুব সকালে উঠে পরার অভ্যাস।
— রান্নাঘরে এলেন যে? কিছু প্রয়োজন?
— চায়ের সুগন্ধের টানে চলে এলাম। এক কাপ চা হবে?
— হ্যা অবশ্যই। এক্ষুনি দিচ্ছি। চুলা থেকে চা নামিয়ে কাপে ঢেলে উনাকে দিলাম। উনি চুমুক দিয়ে বললেন,
— খুব ভাল চা বানান তো আপনি। কি নাস্তা বানাচ্ছেন?
— লুচি আর ডিমের কারি। আমার বোনের খুব পছন্দ।
— নাম শুনেই তো জিভে জল চলে আসল।
— এই তো লুচি ভেজেই আপনাদের নাস্তা দিয়ে দিচ্ছি।
— আপনার কপালে বোধহয় ময়দা লেগে আছে।
— হিহিহি, এটা আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। ময়দা দিয়ে কাজ করতে এলে চুল সামনে চলে আসে, সরাতে গেলে কপালে ময়দা লেগে যায়।
আর কথা না বাড়িয়ে লুচি ভাজা শুরু করলাম। ফারহানের একটা কথায় মনোযোগ দিতে গিয়ে খানিকটা তেল ছিটকে আমার হাতে পড়ল। ফারহান খুব দ্রুত ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি বের করে আমার হাতে ঢেলে দিল তাতে জ্বলুনিটা কমে গেল।
— জ্বালা কমেছে?
— হ্যা এখন ঠিক আছে। বাকি লুচিগুলো ভেজে নিই।
— এরপর ও লুচি ভাজবেন?
— আরেহ এটা ব্যাপার না। জ্বলুনি কমে গেছে, রান্না শেষে মলম লাগিয়ে নিব। একদম সেরে যাবে।
বোন এসে বলল, ফারহান তুমি এখানে?
— চা খেতে এলাম। মুশু ম্যাম চা খুব ভাল বানায়।
ডিমের কারির সুগন্ধে আর রান্নাঘর ছাড়তে মন চাইলনা।
— বোন তুই ফ্রেশ হয়ে নে, আমি নাস্তা দিচ্ছি।
ফারহান ভাইয়া, আপনিও ডাইনিং টেবিলে যান। আমি এক্ষুনি আসছি।
ফারহান চলে যাওয়ার পর বোন আমার পাশে এসে বলল,
— তুই কি তোর বরের সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দিয়েছিস? আর তার সাথে সংসার করবিনা।
এই কথা শুনে আমি হাতের কাজ থামিয়ে চুপ হয়ে গেলাম। তারপর স্বাভাবিক হয়ে বললাম, এই সম্পর্কটা বোধহয় কপালে ছিলনা। একপ্রকার জোর করে হয়ে গেছে, জোর করে তো আর সম্পর্ক টিকানো যায়না। তাই বিচ্ছেদ টা হয়েই গেছে।
তুই যা ফ্রেশ হয়ে নে, লুচি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
— কাল তুই সাথে করে কিসব প্যাকেট এনেছিস, ওগুলোতে কি আছে? আমি কাজ করতে করতে বললাম,
— আমি ঠিক জানিনা। বড্ড ভালোবেসে দিয়েছে শ্বশুড়বাড়ির লোকেরা, তাই না করতে পারিনি। তুই খুলে দেখে নিস।
খাওয়া-দাওয়া শেষে বোন আমাকে রুমে ডাকল। আমি কাজ সেরে বোনের রুমে ঢুকে দেখি বোন প্যাকেটগুলো খুলে দেখছে। আমাকে দেখে ভিতরে ডেকে বলল,
— এতসব দামী শাড়ি-গয়না, প্রসাধনী এবং মিষ্টি কেন পাঠিয়েছে তারা?
— ওদের বাড়ির বউদেরকে খালি হাতে বাপের বাড়ী পাঠায়না। তাছাড়া এমনি তো নিয়ম আছে বউয়ের আত্মীয়স্বজন দের উপহার দিতে হয়।
— তোর শ্বশুড়বাড়ি কোথায়? আর তুই ওদের ছেড়ে এখানেই বা ফিরে এলি কেন?
— আমার শ্বশুড়বাড়ি জ্বীনরাজ্যে।
— মজা করছিস? এখন মজা করার সময়?
— সত্যিই বলছি। আমি আমার জ্বীনবরকে বিয়ে করেছি।
সে জ্বীনরাজ্যের সম্ভ্রান্ত বংশউদ্ভুত একজন জ্বীন।
জ্বীনদের সাথে হয়ত মানুষের মিল হয়না, তাই বোধহয় সম্পর্কটা ভেঙ্গে গেছে। তুই এসব রেখে দে, বড্ড ভালোবেসে দিয়েছে তাই ফেলতে পারবনা।
আমি রান্না বসিয়ে এসেছি, আসছি।
একপ্রকার পালিয়ে চলে এলাম বোনের সামনে থেকে। ওকে এত কিছু ভেঙ্গে বলতে চাইনা, এতে হয়ত মেহরাবের অপমান করা হবে। আর নিজের স্বামীর অপমান করার মত মেয়ে আমি নই। উনি আমার সাথে যা ই করে থাকুক, সবসময় চাইব উনি যাতে সুখে থাকেন। আল্লাহ উনাকে ভালো রাখুন।
(চলবে)
জ্বীনবর_৫?
পর্বঃ২১
লেখিকাঃ আস্থা রাহমান শান্ত্বনা
স্বাভাবিক হয়ে রান্নাঘরের কাজে লেগে পড়লাম। ব্যস্ত থাকলে কিছুটা ভাল থাকি। তাও মনটা মাঝে মাঝে উদাসীন হয়ে যায়, মেহরাবের সুন্দর মায়াবী চেহারাটা মনে পড়ে যায়। অজান্তেই চোখের পানি চলে আসে, ওর দুষ্টুমি গুলো মনে পড়লে নিজে নিজেই হাসি।
কখনো ভাবিনি মেহরাব দেখতে এত সুন্দর হবে, যা দেখে মনে হবে সৃষ্টিকর্তা সব রুপ দিয়ে উনাকে সৃষ্টি করেছে। যেদিন উনাকে শেরওয়ানি পরিহিত অবস্থায় দেখলাম টাল খেয়ে গিয়েছিলাম। বড়-ঘন পাপড়িওয়ালা গোল গোল চোখগুলো আমাকে খুব টানত, হালকা খোচা খোচা দাড়িতে উনাকে আরব্য দেশের রাজকুমার মনে হচ্ছিল। যখন উনি আমার কাছে আসত আমি উনার হাতের দিকে লক্ষ্য করতাম, উনার হাতের সোনালী বর্ণের লোমগুলো চিকচিক করত সবমিলিয়ে উনি ছিলেন আমার দেখা সেরা সুপুরুষ।
এসব ভাবতে ভাবতে কফির কাপে চুমুক দিচ্ছি আর বাহিরে এসে বসলাম। এমনসময় দেখলাম ফারহান জানালা দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি ভ্রু নাচিয়ে বললাম, কিছু বলবেন?
— একাই কফি খাচ্ছেন? একবার সাধলেন ও না!
— আসলে আপনি দেখলাম বোনের সাথে কাজ নিয়ে কথাবার্তায় ব্যস্ত। তাই আর খাবেন কিনা জিজ্ঞেস করে বিরক্ত করলামনা।
— কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছি, এক কাপ কফি হলে খারাপ হবেনা। সাথে সস দিয়ে কাবাব বা চপ দিলে আমি মাইন্ড করবনা।
আমি উনার কথায় হেসে বললাম, আচ্ছা নিয়ে আসছি।
কাবাব বানিয়ে কফিসহ রুমে দিয়ে আসতে দেখি উনি নেই। বোনকে নিয়ে আবার বের হলেন নাকি! খেয়াল করলাম উনি বাহিরে থেকে আমাকে ডাকছেন।
অবাক হয়ে ভাবলাম, উনি বাগানে কি করছেন?
গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আপনাকে এসব দেওয়ার জন্য খুজছি আর আপনি এখানে! কি করছেন?
— বাগানটা পুরো মরেই গেছে। তাই কিছু গাছ এনে রেখেছিলাম পুতে দেব বলে, তাই সেটাই করছি।
বাগানটা আপনার ই ছিল তাইনা?
— হ্যা, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। এসে বাগানটা না দেখে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেছে। এই যে নিন আপনার কফি আর কাবাব।
— পুকুরের সিড়িতে রাখুন। এখানে বসে প্রকৃতি দেখতে দেখতে খেতে ভালোই লাগবে।
— বোন কোথায় আপনি জানেন?
— রুমেই তো ছিল। আচ্ছা আমি ডেকে আনি, উনাকে না দিয়ে খেলে যদি আমার চাকরি নট করে দেয়।
ফারহান চলে যাওয়ার পর আমি ঘুরে ঘুরে বাগানটা দেখতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। হঠাৎ পায়ের কাছে একটা গোলাপ পড়ে থাকতে দেখে তুলে নিলাম। এটা তো সেই গোলাপ, যেটা সেদিন মেহরাব আমাকে দিতে চেয়েছিলেন। এটা তো আমি নিইনি, তাহলে এখানে কি করে এল! তবে কি মেহরাব কাল সত্যিই এসেছিল?
গোলাপটা অভিমান করে ফেলে দিতে পারলামনা, বুকের মাঝে জড়িয়ে রাখলাম। জানিনাহ উনার সাথে আমার আর কখনো দেখা হবে কিনা! তবে যেখানে যেভাবেই থাকুক ভালো থাকুক।
সন্ধ্যায় বোনের রুমে গিয়ে দেখলাম ও ব্যাগের জিনিসপত্র গুলা নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে। তারপর ব্যাগ থেকে একটা শাড়ি নিয়ে গায়ের উপর জড়িয়ে দেখছে। আমি বললাম,
— শাড়ি পছন্দ করছিস? কোথাও যাবি!
— তুই কি ভুলে গেছিস কাল হালিম চাচা এসে তার মেয়ের বিয়ের দাওয়াত দিয়ে গেল! হঠাৎ করে শাড়ি পরার ইচ্ছে হল। আমার কোনো শাড়ি নেই, তুই তো বিয়ের পরও শাড়ি পরিসনা যে তোর থেকে নিব। তোর আনা ব্যাগের কথা মনে পড়ল, সেখানকার শাড়ি ঘাটাঘাটি করছি। আপাতত কোনোটাই মনে ধরছেনা। আচ্ছা দাড়া অন্য ব্যাগটা দেখি।
বোন আলমিরা থেকে অন্য ব্যাগটা বের করে শাড়ি বাছতে ব্যস্ত হয়ে গেল। আমি বিছানার এক কোণায় বসে বের করে রাখা শাড়িগুলো অতি যত্নে ভাজ করে রাখতে লাগলাম।
খানিকবাদে বোন বলে উঠল,
— এই শাড়িটা তো বেশ। এত সুন্দর জামদানী শাড়ি আমি আর দেখিনি, বেশ হালকা শাড়িটা। পড়লে সামলাতে সমস্যা হবেনা, গাঢ় নীল রঙ্গটা আসলেই সুন্দর।
তোর শ্বশুড়বাড়ির লোকের পছন্দ আছে বলতে হয়।
গাঢ় নীল রঙ শুনে আমি চমকে উঠলাম। মূহুর্তেই বোনের হাত থেকে শাড়িটা কেড়ে নিলাম, এই তো সেই শাড়িটা যেটা মেহরাব আমাকে উপহার দিয়েছিল।
অনেক পছন্দ করে বাসর রাতের উপহার হিসেবে উনি এই শাড়িটা এনেছিলেন। কিন্তু আমি সেরাতে অভিমান করে শাড়িটা বিছানায় ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলাম।
এটা ব্যাগের মধ্যে রেখে দিল কে!
বোন রেগে গিয়ে বলল, তুই শাড়িটা এভাবে কেড়ে নিলি কেন?
— বোন এই শাড়িটা আমার কাছে অতি মূল্যবান। তুই অন্য শাড়িগুলো দেখ, সেখান থেকেই পছন্দ করে একটা পরে নে।
— আমার এটা পছন্দ হয়েছে। তুই এমন অদ্ভুত আচরণ করছিস কেন? আমি কি শাড়িটা খেয়ে ফেলব?
তুই ই ত কাল বললি এসব শাড়ি যেন আমি রেখে দিই। সেই হিসেবে তো এই শাড়ি আমার, দিয়ে দে।
— এটা আমি দিতে পারব না।
আমাকে ভুল বুঝিসনা, এটা তোকে দিতে আমার আপত্তি থাকতনা। কিন্তু আমার জন্য ভালোবেসে আমার বর এটা এনেছে, আমি এটা ঠিকমত খুলেও দেখিনি। উনার ইচ্ছা ছিল শাড়িটা আমি পরি।
বোন শাড়িটা আমার কাছেই থাক।
— বাহ, তুই যে এত হিংসুটে তা তো আমার জানা ছিলনা। জ্বীনরাজ্যে গিয়ে স্বার্থপরতা শিখে এসেছিস? কই তুই তো এমন ছিলিনা। আমি যা চাইতাম তা দিতে কখনো দ্বিমত করতিনা! আজ একটা শাড়ির জন্য তুই আমার সাথে এমন ব্যবহার করছিস!
তোকে বোন ভাবতেও আমার লজ্জা করছে। এই ব্যবহার দিয়ে তুই আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছিস এসব দামী জিনিস কেবল তোর। তুই এসব অর্জন করেছিস, করুণা করে আমাকে দান করতে চেয়েছিলি।
— বোন তুই আমাকে ভুল বুঝছিস। আমি মোটেও সেসব বুঝাইনি। আমি তো শুধু শাড়িটা….
আর কিছু বলার আগে বোন আমাকে চড় মারল।
— তুই আর একটা কথাও বলবিনা।
এভাবে আমাকে অপমান না করলেও পারতিস, খুব ভালো প্রতিদান দিয়েছিস আমাকে।
তুই জ্বীনরাজ্যের বধূ, এসব পাওয়ার যোগ্যতা তোর ই আছে। আমি এসব ভুলে গিয়ে অকারণেই অধিকার ফলাচ্ছিলাম। সেটা খুব ভাল করে আমাকে বুঝিয়ে দিলি।
আমি চুপ করে শাড়িটার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমার আল্লাহ ই ভালো জানেন আমার মনে কি আছে! বোন তুই অকারণেই আমাকে ভুল বুঝলি।
আমার কেন জানি এই শাড়িটা তোকে দিতে মন সায় দিচ্ছেনা। কেন জানি মনে হচ্ছে মেহরাব বলছে শাড়িটা কেবল আমার লাল টুকটুকে বউটা পরবে। এইজন্য ই শাড়িটা তোকে দিতে আমার খারাপ লাগছিল, আমাকে ক্ষমা করে দিস।
এমনসময় ফারহান এসে রুমে ঢুকল। আমি তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিলাম। ফারহান বোনের দিকে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলল,
— ম্যাম, এটা আপনার জন্য।
— এটা কি?
— সন্ধ্যা থেকে দেখছিলাম আপনি শাড়ি নিয়ে ঘাটাঘাটি করছিলেন, দেখে মনে হলনা একটাও আপনার পছন্দ হচ্ছে। তাই আমি শপে গিয়ে একটা পছন্দ করে নিলাম। উপহার হিসেবে নিলে আমি ধন্য হব।
বোন প্যাকেট থেকে শাড়ি বের করে উল্টেপাল্টে দেখে বলল,
— বাহ, তোমার পছন্দ তো বেশ ভাল। মেরুন রঙটা আমার ভীষণ পছন্দের। কাল আমি এটাই পড়ে যাব।
ধন্যবাদ তোমাকে।
— আপনি পছন্দ করেছেন এতেই আমি ধন্য হয়ে গেলাম।
আমি আর দাঁড়িয়ে না থেকে শাড়িটা হাতে নিয়েই আমার নিজের রুমে চলে আসলাম।
শাড়িটা থেকে মেহরাবের আতরের সুগন্ধ আসছে। সুগন্ধটা পৃথিবীর যেকোনো দামী পারফিউমকে হারিয়ে দেওয়ার মতই। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভাজ করা শাড়িটা দিয়ে ঘোমটা জড়িয়ে নিলাম যেভাবে মেহরাব সেদিন জড়িয়ে দিয়েছিলেন। নিজেকে নিজের কাছে অপূর্ব লাগছিল।
হঠাৎ দরজায় টোকা পড়ায় শাড়িটা সরিয়ে দিয়ে বললাম,
— ফারহান আপনি এখানে? কিছু প্রয়োজন?
ফারহান আমার দিকে কিছুক্ষণ আমার দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে থেকে বলল,
— এই শাড়িতে কেবল আপনাকেই মানায়।
আমি অস্বস্তিবোধ নিয়ে না শোনার ভান করে বললাম, কিছু বললেন!
— না তেমন কিছুনা। আপনার গালটা বেশ লাল হয়ে আছে, কি হয়েছে?
— কিছুনা।
— বরফ ঘষলে লালচে ভাবটা কমে যাবে।
সবসময় চুপ থাকার ফল কিন্তু ভালো হয়না। কিছু সময় অন্যায় সহ্য না করে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী হয়ে পড়ে।
আমি ফারহানের দিকে চোখ বড় করে তাকিয়ে বললাম,
— এইজন্য ই আপনি শাড়িটা এনেছিলেন?
ফারহান প্রতিউত্তরে জবাব না দিয়ে মুচকি হেসে চলে গেল।
এই ছেলেটার হাবভাব কেমন জানি! বোনকে কখনো এই ছেলেটার সামনে রাগান্বিত হতে কিংবা তার সাথে উচ্চস্বরে কথা বলতে দেখিনি।
ছেলেটার আসল পরিচয় টা কি! কে হয় সে বোনের। ফারহান আবার এসে বাটিভর্তি বরফ আমার পাশে রেখে বলল,
— আমাকে সন্দেহ হচ্ছে?
— কিহ!
— না মানে গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু চিন্তা করছেন, তাই ভাবলাম গোয়েন্দার মত আমাকে নিয়ে কিছু ভাবছেন।
— আপনি বড্ড কথা বলেন।
— সেটা আফরাহ ম্যাম ও বলেন।
— আমার সাথে এত কথা না বললে ই ভাল। আর আমার এত কেয়ারিং আপনাকে করতে হবেনা, অতিরিক্ত কিছুই আমি পছন্দ করিনা। আপনি বোনের কাজের সহকারী, তার প্রতি ই খেয়াল রাখুন সেইটুকু ই যথেষ্ট।
এসব শুনে ফারহান চুপচাপ চলে যাওয়ার সময় পিছনে ফিরে মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেল।
অদ্ভুত চরিত্রের মানুষ একটা। এখন উনার এসব আমার অসহ্য লাগছে, শুধু উনার নয় সবকিছুই অসহ্য লাগছে। শাড়িটা আরো গভীরভাবে আলিঙ্গন করে শুয়ে পড়লাম। হয়ত শাড়িটা মেহরাব ভেবে একটু শান্তি খুজছি।
সকালবেলা এসে বোন আমাকে জাগিয়ে বলল,
— রাতে দেখি শাড়ি জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছিস, ভেবেছিস রাতে যদি বোন চুপিচুপি এসে শাড়িটা চুরি করে নিয়ে যায়।
— বোন, এসব বলিসনা।
খুব খারাপ লাগে এসব শুনতে।
— হুম এখন বোনকে খুব খারাপ লাগে সেটা আমি জানি।
এসব ব্যাপারে কথা বলে নিজের মুড নষ্ট করতে চাচ্ছিনা।
তাড়াতাড়ি কাজ সেরে তৈরী হয়ে নে বিয়ের দাওয়াতে যেতে হবে।
— আমি যাবনা বোন।
— আমাকে ছোট করার কোনো সুযোগ পেলে তুই সেটা ছাড়তে চাসনা তাই তো!
আমার এসব শুনতে খুব খারাপ লাগছিল। বোন আমাকে আবার ভুল বুঝার আগেই আমি বললাম,
— বেশ আমি যাব তাএ উল্টোপাল্টা ভেবে আমাকে এভাবে কটু কথা বলিসনা।
ফ্রেশ হয়ে নীল শাড়ি পরে নিলাম। বেশী সাজসজ্জা আমার করতে ইচ্ছে হলনা। তাই চোখে হালকা করে কাজল টেনে হালকা করে লিপস্টিক দিয়ে সাধারণ খোপা করলাম।
বোন এসে বলল, তোর গলা খালি কেন? হাতে চুড়ি কই?
— এসব পরতে ইচ্ছে হচ্ছেনা।
— গ্রামের সবাই জানে তুই পালিয়ে বিয়ে করেছিস। এটাও জানে কিছুদিনের জন্য এখানে বেড়িয়ে চলে যাবি। অতএব, নিজেকে সেইভাবে উপস্থাপন কর যেভাবে একজন নতুন বিবাহিতা করে থাকে।
না হলে এতে যেমন আমার সম্মান হানি হবে তেমন তোর বরের নিন্দে হবে।
এসব শুনে বাধ্য হয়ে হালকা গয়না পড়ে খোপায় মেহরাবের দেওয়া সেই গোলাপটা গুজে দিলাম। গোলাপটা সাথে থাকলে আলাদা স্বস্তি পাই। আগের বার বোন গোলাপ যেভাবে পুড়িয়ে দিয়েছিল সেটা ভেবে এখনো আতকে উঠি।
ফারহান এসে বলল, আপনারা তৈরি তো ম্যাম?
বোন বলল,
— আমরা তৈরী। বাহ, নীল রঙ্গের স্যুটে তোমাকে বেশ মানিয়েছে তো। চলো বেরোনো যাক।
বুড়িমাকে আগেই সেখানে পাঠিয়ে দিয়েছি। কয়েকদিন উনার বয়সী ওখানকার কারো সাথে থাকলে মন ভাল থাকবে।
বিয়েতে উপস্থিত হলাম সবাই মিলে। মেয়েটাকে ভীষণ মিষ্টি লাগছে। আমার বিয়ের কথাটা মনে পড়ে যাচ্ছিল, সেদিন এভাবে আমি কবুল বলে মেহরাবকে সারা জীবনের জন্য স্বামী হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম।
সেখানে গ্রামের কিছু মহিলারা আমাকে টিপ্পনী কেটছিল, খুব বাজে বাজে কথা বলছিল। একজন তো সরাসরি বলে বসল, কিরে মুশু, পালিয়ে মজা নেওয়া শেষ করে চলে এলি?
এত খারাপ লাগছিল এসব বাজে কথা শুনতে।
মুখের উপর বলে ফেললাম, ফুপু ঠিক করে কথা বলুন। আমি বিবাহিত এবং পালিয়ে হলেও আমার স্বামীকেই বিয়ে করেছি। এসব অশ্লীল মন্তব্য করার আগে ভেবে নিবেন আপনি নিজেকে কতটা ছোট করছেন!
— কি দেমাগ রে বাবা।
বিয়ে যখন করেছিস তখন তোর স্বামী কোথায়? বাপের বাড়ী তো মেয়েরা একা আসেনা, স্বামীকে নিয়েই আসে।
তো দেখা তোর স্বামীকে, আমরাও তোর স্বামীকে দেখি।
আমি কিছু উত্তর না দিয়ে সেখান থেকে চলে আসতে চাইলে তারা পথ আটকে বলল,
— পালাচ্ছিস কোথায়?
স্বামী পাবি কোথা থেকে! গিয়েছিস তো রাত কাটাতে। লজ্জা করেনা বড় বড় কথা বলতে। আবার আমাকে বলা হচ্ছে আমি নিচু মনের মানুষ।
এসব শুনে আমার চোখ থেকে পানি পড়ছে। বোন তাদের সাথে তর্কে জড়িয়ে গেল। ফারহান এগিয়ে এসে আমার কানে কানে বলল,
— দয়া করে আপনি কোনো রিয়েক্ট করবেননা।
ফারহান তাদের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,
— কাকে কি বলছেন আপনারা? মুশায়রা আসলেই বিবাহিত। দেখতে চান তার স্বামীকে। এই যে দেখুন।
আমি অবাক হয়ে ফারহানের কান্ড দেখছি, সে নিজের দিকে ইঙ্গিত করছে কেন? তবে কি সে নিজেকে আমার স্বামী হিসেবে উপস্থাপন করবে!
.
(চলবে)