জ্বীনবর_২,পর্বঃ ০৯,১০
লেখিকাঃ আস্থা রাহমান শান্ত্বনা
এ্যালার্মের শব্দে ঘুম ভাঙ্গল, উঠতেই ইচ্ছে হচ্ছিলনা। ভাবলাম আরো একটু ঘুমাব, এ্যালার্ম অফ করার জন্য ফোন হাতে নিতেই উনি আমার জন্য চা নিয়ে এসে বলল, চা খেয়ে নাও ঘুমটা কেটে যাবে। তারপর নামায পড়ে নাও।
— এত সকালে আপনি চা বানালেন?
— হ্যাঁ, আমি বানিয়েছি। এখন রান্নাঘরে কেউ নেই, একটু পর সবাই নামায পড়তে উঠে পড়বে। ধরো, খেয়ে নামায পড়ো। টেবিলে জায়নামায,খিমার, অসবীহ সব রাখা আছে।
বলে টুপি হাতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমি চায়ে চুমুক দিলাম, খুব ভাল চা বানাতে পারেন উনি। চা শেষ করে ফ্রেশ হয়ে নামায পড়ে নিলাম। রুম থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরে আসতে দেখি মেয়েগুলো কাজে লেগে পড়েছে। এই বাড়ির সবাই দেখছি খুব পানচুয়্যাল। যতটা সহজে মানিয়ে নিতে পারব ভেবেছি ততটা সহজ বোধহয় হবেনা। আমি এসে হাত লাগাতেই তাদের একজন বলল,
— ভাবী, আপনি আবার কষ্ট করে রান্নাঘরে আসলেন কেন? আপনার চা আমরা পাঠিয়ে দিতাম। মুখ ফসকে বলতে যাব, আমি চা খেয়েছি। বলতে গিয়ে নিজেকে সামলে নিলাম। এটা নিশ্চয়ই ভাল দেখাবেনা, আমি আরামে ঘুমিয়েছি আর আমার স্বামী আমার জন্য হাত পুড়িয়ে চা বানিয়েছে। আমি ওদেরকে বললাম,
— আজকের নাস্তাটা আমি বানাব। কি কি বানাতে হবে বলো?
— আপনি কেন বানাবেন ভাবী? আমরা কেন আছি!
— কেন বানাতে পারবনা?
— হ্যাঁ, পারবেন তো। কিন্তু বাকিরা জানলে রাগারাগি করবে নতুন বউ আসতে না আসতে রান্নাঘরে ঢুকেছে জানলে। আচ্ছা ভাবী আপনি চা টাই বানান শুধু।
উনি এসে রান্নাঘরের সামনে দাড়ালেন। হেসে হেসে বললেন,
— চা বানাতে জানো তো? সেটা খাওয়া যাবে তো?
— আপনার কি আমাকে অকর্মা মনে হয়? কাল ও বললেন গুছিয়ে রাখতে অনেক কষ্ট হয়, এসব বলে কি মিন করেন আপনি? রান্নাবান্না না হয় একটু কম জানি, তাই বলে সব কাজে অপটু আপনাকে কে বলল?
— শাকি তোর ভাবীকে ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি বের করে দে তো। নাহলে কখন ব্লাস্ট হয়ে যাবে বলা যায়না। এ কথা শুনে মেয়েগুলো মুখ টিপে টিপে হাসতে লাগল। শাকি রুটি বেলতে বেলতে বলল,
— ভাইয়া এটা ঠিক হচ্ছেনা, সকাল সকাল কেন ভাবীর পিছনে লেগেছো বলো তো। ভাবী মোটেও রাগী না, অনেক ভালো।
— সেই গুনগান ই কর। আমার জানা হয়ে গেছে।
— আপনি এখান থেকে যাবেন নাকি……. কথা না শেষ করে হাতে থাকা চায়ের জন্য নেওয়া পানি তার গায়ে ছুড়ে মারলাম। এইবার আর মিস হলোনা, একদম কাকভেজা হয়ে গেল বেচারা।
নিষ্পলকভাবে তাকিয়ে বলল, আপনার মত জংলী মেয়ে আর একটাও নেই।
— কি বললেন?
— জংলী বলছি।
— আমি জংলী, দাড়ান আপনি…. এদিক ওদিক কিছু একটা খুজতে লাগলাম।
আর দাড়ালনা উনি, ছুটে চলে গেলেন। মেয়েগুলো খিলখিল করে হাসতে লাগল। এবার মনে হচ্ছে কাজটা মোটেও ঠিক হয়নি আমার। লজ্জায় চুপ হয়ে গেলাম। বাড়ির নতুন বউ কিনা আসামাত্রই দুষ্টুমি শুরু করল। কি লজ্জার ব্যাপার! দাদীমা-আন্টি জানলে কি ভাববে? আমার আর দুষ্টুমির স্বভাব টা গেলনা। পরিবেশ বুঝে চলিনা। মেয়েগুলো হেসে হেসে বলল,
— কেউ তোমায় বকবেনা ভাবী। ভাইয়া তো এমনি, তাকে নিয়েই তো সারাক্ষণ বাসায় দুষ্টুমি, খুনসুটি চলে। যেদিন বাসায় থাকেনা, বাসাটা ফাকা ফাকা মনে হয়। এখন আর লাগবেনা, আরেকটা দুষ্টু ভাবী চলে এসেছে।
— কিন্তু উনি যদি দাদীমার কাছে নালিশ করে? তাহলে তো দাদীমা আমাকে খারাপ ভাববে।
— আরেহ না ভাবী। কেউ কিচ্ছু ভাববেনাহ। আমি নতুন করে চায়ের পানি বসিয়ে দিচ্ছি। তুমি ভয় পেয়োনা তো আর।
ভয় টা তাও কাটলনা, ডাইনিং টেবিলে নাস্তা করতে বসতেই দেখি উনি চলে এসেছেন। ভয় পাচ্ছিলাম কখন না এসব বলে বসেন। কিন্তু কিচ্ছু বললেন না, উলটো দাদিমার সাথে মজা করতে লাগলেন। যাক পোলাটা ভাল আছে।
— দাদিমা, জানো আজ কি হয়েছে? তোমার নাতবউ কি করেছে?
এইবার ভয় পেয়ে গেলাম, ব্যাটাকে ভাল বলতে না বলতেই ইজ্জতের ফালুদা বানাইতে ব্যস্ত হয়ে গেছে। শয়তান পোলা একটা। তার চোখের তাকিয়ে ইশারা করলাম যেন না বলে। দাদিমা খেতে খেতে বলে,
— নাতবউ আবার কি করল? সে আমার দিকে তাকাল গম্ভীরমুখে। আমি যে কতবার ইশারায় ক্ষমা চাইলাম, কান ধরলাম পাত্তাই দিলনা।
— সে আজ…. লজ্জায় চোখ বুজে নিলাম। এইবার নিশ্চয়ই দাদীমা আমাকে বকবেন।
— দাদীমা, সে আজ সকাল সকাল উঠে সবার জন্য চা বানিয়েছে। খেয়ে দেখো তো খাওয়ার মত হয়েছে কিনা! আলসে মেয়ে তো।
যাক বাবা বাচলাম, বলেনি তাহলে। আমি সবার জন্য চা ঢেলে দিয়ে বললাম,
— দাদীমা, যার খেতে এত ভয়। সে বরং আজ চা না খাওয়াই ভাল।
— দিস না এই বাদরটাকে চা।
সে আমার দিকে তাকাতেই আমি ভেংচি কেটে দিলাম। সে দাদীমাকে আবার বলতে লাগল, “দাদীমা, আরেকটা কথা বলতে ভুলে গেছি। আজ মুশায়রা……
— এই নিন আপনার চা। ঠিক আছে কিনা দেখুন তো।
হাসতে হাসতে চুমুক দিয়ে বলল, চায়ে চা পাতা এত কম দিলা কেন? চিনিটা দুই-তৃতীয়াংশে রাখবা। দুধ স্কয়ারিং এ দিবা, তাহলে পারফেক্ট হবে। চাপাতা টেবিল চামুচের অর্ধেকের ব্যাসার্ধে দিবা যদি কম রাখতে চাও। আর যদি কড়া করতে চাও গোল চামুচের এক- তৃতীয়াংশের অধের্কের তুলনায় বেশি ব্যাসার্ধে নিয়ে তার দুই স্কয়ার বেশি দিবা।
উনার এসব গাণিতিক হিসাব শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। এই পোলা বলে কি? বাপের জন্মেও এমন চা বানানো শুনিনি। আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
— বুঝোনি? বুঝবে কি করে? নিশ্চয়ই অংকে কখনোই ডিম ছাড়া কিছু পাওনি।
সব উনার কথা শুনে হাসতে লাগল, আমি তো মনে মনে রাগে ভীষণ ফুসছি। একবার সুযোগ পাই, ব্যাটার ১২টা বাজাব। আন্টি হাসি থামিয়ে বলল,
— না রে মা, চা টা ভীষণ ভালো হয়েছে। ওর কথা শুনোনাহ তো, সবার পিছনে লাগাটাই ওর অভ্যাস।
মুচকি হাসলাম আমি। অভ্যাসের উত্তর যদি আমি না দেই তবে আমিও…..
উনি আমার উঠে দাঁড়িয়ে আমার কানে ফিসফিস করে বললেন,
–মুশায়রা নয় তাই তো!
আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে। সব বুঝে ফেলার ক্ষমতা আছে নাকি উনার! সারাটা দিন ভীষণ ভালো কাটল আমার, একবারের জন্য ও মনে হলনা আমি একা। এত মিশুক আর ভাল এই বাড়ীর মানুষগুলা শুধু ওই হনুমানটা ছাড়া!
সারাটাদিন ই আমার পিছনে লেগে থাকেন। পরেরদিন সকালে ড্রয়িংরুমে এসে দেখি ফুপি, সীমা, স্বপ্না আর জনাব সিদ্ধান্ত এসেছেন আমাকে দেখতে। ফুপিকে সালাম দিতেই জড়িয়ে ধরে বললেন, কেমন আছিস মা? আমি হেসে বললাম,
— ভালো আছি ফুপি। তোমরা কেমন আছো?
— হ্যাঁ রে ভালো আছি।
আমি তাদের দেখে অবাক হলাম। ভাবতে পারিনি এরা আমাকে দেখতে আমার শ্বশুড়বাড়িতে আসবে। ভাবার কথা ও না, ফুপি তো নিজের দায় সারতে আমার বিয়ে দিয়েছিল, ভাইয়ের মেয়েকে যে নিজের খরচে বিয়ে দিয়েছে তাও অনেক।
খানিকবাদে উনিও নেমে এসে ফুপিকে সালাম করে জনাব সিদ্ধান্তের সাথে হাত মিলিয়ে বললেম, আপনার সংসার কেমন চলছে দুলাভাই?
জনাব সিদ্ধান্ত শুকনো মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন,
— আপনাদের দোয়ায় কি খারাপ চলে? আপনাদের কি অবস্থা!
উনি খানিকটা ফিসফিস করে বললেন, কি আর বলব দুঃখের কথা? আপনি তো ওকে বিয়ে না করে বেচে গেলেন, ফেসে গেলাম তো আমি কি কষ্টে যে দিন যাচ্ছে বলে বুঝাতে পারবনা।
— কেন কি হয়েছে ভাই?
— আপনার ভাবি সারাদিন ফরমায়েশের উপর রাখে, কাল রাতে অদ্ভুত আবদার করল তাকে নাকি এক সপ্তাহের মধ্যে টুইন বেবি দিতে হবে! ভাই বেবি দেওয়া কি আমার হাতে? আর সবেমাত্র বিয়ে করলাম এত তাড়াতাড়ি কি বেবি নেওয়া যায়? বুঝেও না একটু।
— বলেন কি ভাই?
— জ্বি ভাই, কথা না শুনলে হাতের কাছে যা পায় তাই ছুড়ে মারে। কখনো লোশনের ডিব্বা, কখনো পানি। পুরো লাইফ টা তেজপাতা আমার।বিয়ে করে কি ভুল টাই না করলাম।
— ওকে দেখে তো কখনো এমন মনে হয়নি।
— আরেহ ভাই, সুন্দরী মেয়েদের চেহারা আর মন একি কথা বলে নাকি! সীমা
আপুকে তো দেখলেই বুঝা যায় উনি অনেক ভালো। সত্যি বলছিনা ভাই?
— হ্যাঁ, আমাকে অনেক মান্য করে, যা বলি তাই শুনে।
— আর আমারটার কথা কি বলব, আমাকে উলটো তার কথা শুনে চলতে হয়। দেখেন কি লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে। পারছেনা শুধু কাচা চিবিয়ে খেয়ে নিতে।
আমার কানে সব কথাই আসছে, মনে মনে রাগে ফুসছি।কি মিথ্যে কথাটাই না বলল আমার নামে! সত্যিই পারলে কাচা ই চিবিয়ে খেয়ে নিতাম।
সীমাকে নিয়ে উপরে আমার রুমে চলে এলাম গল্প করতে। সীমা রুমটা দেখে বলল, দুলাভাইয়ের রুচি আছে বলতে হয়, বেশ সুন্দর রুমটা।
— হুহ আর রুচি! গুছিয়ে রাখে নাকি!
— হিহিহি, তা তোর বাসর কেমন হল মুশু?
— অই ফাজলামি করবিনা বলে দিচ্ছি তোর কি খবর সেটা বল? উনি তোকে মেনে নিয়েছে?
— না মেনে যাবে কোথায়? মাইনকা চিপায় পড়ছে না!
— তোকে কিন্তু বেশ সুন্দর লাগছে।
ফুপি জুস এর গ্লাস হাত নিয়ে রুমে ঢুকে বলল, তোকেও তো কম সুন্দর লাগছেনা, যা ই হোক বড়লোকের বাড়ীর বউ তুই এখন। আমরা তো ভাবি ই নি এমন শ্বশুড়বাড়ী পাবি তুই! আমি উত্তরে মুচকি হাসলাম।
— হ্যারে মুশু, তোর শ্বশুড়বাড়ি থেকে কি কি দিল ফুপিকে দেখা একটু। আমরাও দেখি আমাদের বাড়ির মেয়েকে তারা কেমন ভরিয়ে রেখেছে। আমার ফুপির এমন কথা শুনে মোটেও অইসব দেখাতে ইচ্ছে করছেনা। আমি ওদের থেকে কম কিছু পাইনি, যে বেশি পেয়েছি তা হল ভালবাসা। ওইসবের মূল্য ফুপি বুঝবেনা।
এখন না দেখালে আমার শ্বশুরবাড়ির নিন্দে করবে, যাদেরকে আমি এত ভালবাসি তাদের নামে নিন্দে আমি করতে দেই কি করে।
আলমিরা থেকে একে একে সব শাড়ি আর গয়না নামিয়ে দেখালাম। ফুপির মুখ দেখে বুঝলাম তার সবি পছন্দ হয়েছে। হঠাৎ ফুপির হাতে জুসের গ্লাসটা সীমার শাড়ির উপর পড়ে পুরো শাড়িটা ভিজে ভিজে হয়ে গেল। ফুপি বলল,
— ইস! পুরো শাড়িটা ভিজে গেল, আমি যে কি করিনা!
— ঠিক আছে মা, আমি মুছে নিচ্ছি।
— মুছে নিবি কি করে সীমা? ভিজা শাড়ি পড়ে থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে। আর শাড়ি আনিসনি?
— উফ মা, আমি তো আনতে চেয়েছিলাম। তুমিই তো বারণ করে বললে আমরা ওখানে থাকতে যাচ্ছিনা।
— মুশু তোর একটা শাড়ি সীমাকে আপাতত পড়ার জন্য দে, ভিজা শাড়ি পড়ে থাকলে মেয়েটার ঠান্ডা লেগে যাবে।
— মা, শুকিয়ে যাবে তো।
— তুই চুপ থাক তো।
আমি সবচেয়ে সুন্দর আর দামী শাড়ি আর ভারী গয়না সীমার হাতে দিয়ে বললাম, এইগুলো তোর। তোর বিয়েতে আমি কিছু দিতে পারিনি, এখন এইগুলো দিলাম। ফুপি ওর হাত থেকে নিয়ে বলল, খুব সুন্দর তো।
— মুশু এসবের দরকার ছিলনা, তোর দোয়াটাই বেশি আমার কাছে।
— ভালোবেসে মুশু এসব দিচ্ছে, তুই না করছিস কেন? মেয়েটা কষ্ট পাবেনা।
— সীমা, তুই শাড়ি চেঞ্জ করে নে। ফুপি আমি যাই তোমাদের খাবারের ব্যবস্থা করি।
— যা মা।
আমি রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই শুনলাম সীমা ফুপিকে বলছে, তুমি এসব ইচ্ছে করে করেছো তাইনা মা?
— চুপ থাক তুই, ও কত বড়লোক স্বামী পেয়েছে দেখেছিস। তাও আমাদের জন্য, তাই এসব নেওয়া অন্যায় কিছুনা। ওকে বিয়ে দিতেও তো আমাদের খরচ হয়েছে কিছু টাকা। ওইসব পুষিয়ে নিবনা।
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিচে নেমে এলাম।
.
(চলবে)
জ্বীনবর_২
লেখিকাঃ আস্থা রাহমান শান্ত্বনা
পর্বঃ ১০
ফুপিদের দেখে মেহরাবের কথা আরো বেশি মনে পড়তে লাগল। সত্যি বলতে মেহরাবকে আমি জীবন সঙ্গী হিসাবে চেয়েছিলাম, আস্তে আস্তে ওর প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ছিলাম। পুরোপুরি দূর্বল হওয়ার আগেই আমি ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করে ওকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছি। এখন তো আমি অন্যের স্ত্রী, চাইলেও ওর সাথে কোনো সম্পর্কে জড়াতে পারবনা। আর ও তো আমাকে কখনো ভালোবাসেই নি, যদি বাসত এতগুলো দিনে একবার হলেও আমার সামনে আসত। আচ্ছা একবার ফুপির বাসায় গেলে কেমন হয়? যদি একবার তার দেখা পাই। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে এসব কথা ভাবছিলাম, কখন যে উনি রুমে ঢুকলেন আমি বুঝতে পারলামনা। হালকা আলোর ল্যাম্প জ্বালিয়ে দিয়ে বললেন,
— রাতে খেলেন না যে? আমি বাহিরের দিকে তাকিয়েই বললাম,
— ইচ্ছে করেনি।
— কারো জন্য কি মন খারাপ করছে?
— কার জন্য করবে?
— না মানে, ফুপিরা চলে যাওয়ার পর থেকে তোমাকে কেমন যানি মনমরা দেখাচ্ছে। কি হয়েছে বলতে পারো! টলমল চোখে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,
— আমাকে একবার ফুপির বাসায় বেড়াতে নিয়ে যাবেন?
উনি নিশ্চুপ হয়ে কিছু একটা ভাবলেন। তারপর আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললেন, তুমি জানো তোমার ফুপি কেমন? আমার থেকেও বেশি ভাল জানো। উনারা যদি সত্যি তোমাকে আপন ভাবত, তাহলে কি একটা বুড়োবয়সী লোকের সাথে তোমার বিয়ে ঠিক করতে পারো? নিজের মেয়ের ভালোর জন্য ভাইয়ের মেয়ের খারাপ চাইতে পারো বলো। আমি চাইনা তুমি ওই বাড়ীর সাথে আর কোনো সম্পর্ক না রাখো।
— কিন্তু…
— স্বামী হিসেবে এটা আমার আদেশ নয় নিতান্ত অনুরোধ। জনাব সিদ্ধান্তকে আমি আজ অনেক মিথ্যে বলেছি, কৌতুক করে নয়। যাতে উনি সীমা আপুকে নিয়ে সুখে থাকেন, তোমার উপর আর নজর না দেন। তার জন্য তোমার কাছে আমি ক্ষমা চাচ্ছি বৌ।
— আচ্ছা, আপনি যা বলেন তাই হবে। কিন্তু আমার বাবার কাছে তো নিয়ে যেতে পারেন, বাবা এখনো জানেন না আমি বিয়ে করেছি। জানিনা উনি ক্ষুব্ধ হবেন নাকি খুশি হবেন?
— কোনো বাবাই তার মেয়ের সুখে অখুশি হননা, তবে তুমি যদি অখুশি হউ সেটা ভিন্ন কথা। আর বুঝোই আমাদের বিয়ে হয়েছে এক সপ্তাহ ও হয়নি, এই সময় যদি আমরা হুটহাট বেড়াতে চলে যাই। কেউ সেটা ভালোভাবে নিবেনা, তুমি আরো কিছুদিন এই পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নাও। সংসার করো মন দিয়ে, তারপর আমরা বাবার কাছে যাব।
আমি মন খারাপ করে ফেললাম। উনি আমার হাত স্পর্শ করে বললেন,
— কথা দিচ্ছি বউ। আমি চমকে উঠলাম উনার স্পর্শে, স্পর্শটা আমার খুব চেনা লাগছে। এর আগে তো উনি আমাকে স্পর্শ করেননি, তবে কি সেটা আমার মনের ভুল! জানিনা কিছু। উনি আমাকে হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে দিলেন,
— দুপুরে যে খেয়েছিলে, আর কিছুই খাওনি। এখন একটু না লেগে শরীর খারাপ লাগবে। আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে এসেছি।
— আপনি কেন আনতে গেলেন? আমার ক্ষিধে পেলে আমি নিজেই নিচে গিয়ে খেয়ে আসতাম।
— তুমি কেমন সেটা আমার জানা হয়ে গেছে বউ। বুক ফেটে যাবে তাও মুখ ফুটবেনা তোমার। নাও খা কর, আমি খাইয়ে দেই।
— আমার খেতে ইচ্ছে করছেনা।
— বউ!!!!
— আচ্ছা আমি নিজে খাচ্ছি।
— না আমার হাতে খাও, মানলাম স্বামী ভাবো না কিন্তু ঘৃণা করো তা জানতামনা।
— এসব কি বলছেন আপনি? দিন খাইয়ে দিন।
অতিযত্নে আমাকে খাইয়ে দিয়ে মুখ মুছিয়ে দিলেন। আমি শুইয়ে পড়ার পর উনি গায়ের উপর কাথা চাপিয়ে কপালে হাত বুলিয়ে চুলে বিলি কেটে দিলেন ঠিক মেহরাব যেমন দিয়েছিল। দুটো মানুষের মধ্যে আমি যেন একটু একটু মিল খুজে পাই, কিন্তু অমিলটাই বেশি। মেহরাবকে আমি কখনো দেখিনি তার উপর ও একজন জ্বীন, আমার চোখের সামনে থাকা মানুষটা তো জলজ্যান্ত একটা ছেলে। মেহরাবের কথা খুব মনে পড়ছে তো তাই সর্বত্র ওকে খুজে বেড়াচ্ছি আমি।
আচমকা একটা শব্দে মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল। মনে হল ভারী কিছু নিচে পড়ে ভেঙ্গে গেছে। উঠে বসলাম, লাইট নেভানো তাই চারিদিকেই অন্ধকার। হাত দিয়ে বিছানাটা হাতড়ালাম উনি আছেন কিনা দেখতে। কিন্তু পাশে উনি নেই, তবে কি উনি নিচে শুয়েছেন? বেডল্যাম্পটা জ্বালালাম, না রুমে আমি একা আর কেউ ই নেই। বিছানা থেকে নেমে ব্যালকুনির সামনে এসে দাড়ালাম। এখানে তো অনেক অন্ধকার, হঠাৎ পায়ের নিচে ভাঙ্গা কিছু টুকরো পড়ল। তার মানে ব্যালকুনির দরজায় যে ফুল এর টবটা ছিল সেটা ভেঙ্গে গেছে। আরেকটু এগিয়ে আসতে দেখলাম দুজোড়া জ্বলজ্বল করা চোখ। অন্ধকারের প্রতিবিম্বতে বোঝা যাচ্ছিল একজন আরেকজনের গলা চেপে ধরেছিল। অন্যজনের গলা থেকে ঘড়ঘড় আওয়াজ আসছিল, এই বুঝি মারা পড়ল সে জন! কিছু না ভেবেই চোখ বুযে চিৎকার করে উঠলাম।
একটু সময় পর রুমের আলো জ্বলল, উনি আমার পাশে এসে দাড়ালেন। আমি উনাকে জড়িয়ে ধরে বললাম, “দেখুন ব্যালকুনিতে কেউ একজন আরেকজনের গলা চেপে ধরেছে। লোকটা হয়ত বাচবেনা, ওকে বাচান অন্যজনের হাত থেকে।”
উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,
— রিলেক্স বউ। ওখানে কেউ নেই দেখো।
আমি উনাকে ছেড়ে দিয়ে ব্যালকুনির কোণায় তাকালাম। সেখানে কেউ নেই, তবে কি আমি ভুল দেখলাম। না ভুল দেখিনি, আমার পায়ের নিচে ভাঙ্গা টুকরো গুলো তো পড়েছিল।
— ফুলের টব ভাঙ্গার শব্দে আমি এখানে এসেছিলাম, এই দেখুন আমার পায়ের নিচে সেটার ভাঙ্গা টুকরো আছে।
— বউ তোমার পায়ের নিচে কিছু নেই দেখো।
আমি তাকালাম সত্যিই তো কিছু নেই। এমন সময় রুমের দরজায় নক করল কেউ। উনি দরজা খুলতে চলে গেলেন, আমি ব্যালকুনিতে টব টা খুজতে লাগলাম। না ভাঙ্গলে টবটা তো এইখানেই থাকবে, ঘুমানোর আগেও আমি টবটা এখানে দেখেছি।
দাদীমা রুমে ঢুকে বললেন, নাতবউ চিৎকার করছিলে কেন? ভয় পেয়েছিলে নাকি?
আমি মাথায় শাড়ির আচল দিয়ে মুখ নিচু করে কিছু বলার আগেই উনি বলে বসলেন, কি দেখে যেন ভয় পেয়েছে! ভীতুর ডিম তো। তুমি আবার এখন উঠে আসলে কেন? যাও ঘুমাও, চলো তোমায় আমি দিয়ে আসি।
— দাদীমা, ব্যালকুনিতে কেউ ছিল।
— ওহ বউ, এটা তোমার মনের ভুল ছিল। দাদীমা উনার দিকে হতাশচোখে তাকিয়ে বললেন, চল আমাকে দিয়ে আসবি।
— বউ তুমি শুয়ে পড়ো, আমি দাদিমা কে রুমে দিয়ে আসছি।
ভয়ে ভয়ে বেডে বসে পড়লাম। এভাবে চিৎকার করা উচিত হয়নি, দাদিমা কি না কি ভাবলেন! কিন্তু এটা তো মিথ্যে নয় আমি ওখানে দুজনের ছায়া দেখেছি, ওরা নিজেদের মধ্যে ধস্তাধস্তি করছিল।
কেউ যখন বিশ্বাস করছেনা, তবে এটা নিয়ে না ভাবাই ভাল।
সকালে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল বাধছিলাম। উনি এসে উবু হয়ে ড্রেসিংটেবিল থেকে তার ঘড়িটা নিচ্ছিলেন। চোখে পড়ল তার বা গালে কয়েকটা নখের আঁচড়। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
— আপনার গালে কি হয়েছে?
— কই কি হয়েছে? ওহ তেমন কিছু না, কিসের সাথে মনে হয় আচড় লেগেছে কাল রাতে দাদীমার ঘরে। আমার মনে হল উনি মিথ্যে বলছেন, স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে এইগুলো নখের আঁচড়। আমি বললাম,
— আপনি বসুন, আমি ফাস্ট এইডের বক্সটা নিয়ে আসছি।
— প্রয়োজন হবেনা বউ, আমাকে এক্ষুনি বের হতে হবে। তাড়া আছে আমার।
— একটু দেরী হলে কিচ্ছু হবেনা, আপনি বসুন।
আমি উনার গালে ওষুধ লাগিয়ে দিলাম, কাছ থেকে লক্ষ করে বুঝলাম এইগুলো নখের ই আচড়। কেন উনি আমাকে মিথ্যে বলছেন বুঝতে পারলামনা।
উনার কোনো অবৈধ সম্পর্ক নেই তো? ছিহঃ এসব আমি কি ভাবছি! আমার মাথায় এত খারাপ চিন্তা আসে কি করে?
আচ্ছা উনার রিলেশান থাকলেও আমার কি! আমি তো তাকে স্বামী হিসাবে মানিনা। কখনো ভালো ও বাসিনি! তাহলে তার সামান্য কিছু আমাকে কেন কষ্ট দেয়? তাহলে কি আমি উনাকে……..
আমার মনের ভালোবাসাটুকু তো মেহরাবের জন্য। সেখানে কি করে উনার জায়গা হতে পারে?? অন্যমনস্ক হয়ে গেলাম এসব ভাবতে ভাবতে। উনি আমার নাক ছুয়ে দিয়ে বলল, বউ কি ভাবছো?
— কিছুনা তো।
— আমি যাচ্ছি।
— সাবধানে যাবেন, আল্লাহ হাফেজ।
দাদীমার রুমের সামনে দিয়ে যেতেই কিছু টুকরো কথা কানে ভেসে এল। আন্টিকে দাদীমা বলছিল, আমি একটা বড় ঝড়ের আভাস পাচ্ছি খানম।
— কিসের ঝড় বড় আম্মা?
— যে ঝড়ে আমার নাতি আর মুশায়রার সংসার ভেঙ্গে যেতে পারে। ওদের মধ্যে দূরত্ব বেড়ে যাবে, বুঝতে পারছিনা কি করব!
— বড় আম্মা সে কি সত্যি ই আসছে?
— হ্যাঁ খানম।
— তাহলে তো সত্যিই বড় অশান্তি হবে। তুমি টেনশান করোনা আম্মা। ওকে আমি বুঝিয়ে বলব, ও অশান্তি করবেনা।
এইটুকু শুনে আমি ভাবনায় পড়ে গেলাম, কে আসছে আমাদের মাঝে? কিসের ঝড়ের আশঙ্কা করছেন দাদীমা। দাদীমা আর আন্টি তবে সবটা জানে, কিছু একটা আমার কাছে লুকিয়ে যাচ্ছে।
বিকালে রান্নাঘরে সবার জন্য পাকোড়া বানাচ্ছিলাম। একজন বোরকাপড়া মেয়ে এসে দাড়াল আমার সামনে। বয়স আমার থেকে ১-২বছর বেশি হবে। চোখ ২টো ছা ড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছিলনা। মিষ্টিকন্ঠে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করল,
— দাদীমা কোথায়?
— তার রুমে আছে, আপনাকে তো চিনলাম না বোন।
দাদীমা পিছনে এসে বলল, তুই কখন এলি?
সে দাদীমার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে বলল, মাত্রই। তোমাকে তো জানিয়েছিলাম আমি আসব। কেমন আছো তুমি?
— হ্যা ভালো আছি উম্মে। তুই ভাল আছিস?
— একদম। বলে নিকাব আর বোরকা খুলে নিল। এত সুন্দর মেয়েটি, মনে হল চেহারায় জ্যেতি ঝলকাচ্ছে। মাশা আল্লাহ আল্লাহ তাকে যথেষ্ট রুপ দিয়েছে, হেসে হেসে কথা বলছে, বিহেভ ও অনেক ভালো।
দাদীমাকে জিজ্ঞেস করলাম, দাদীমা, কে উনি?
— আমার আরেকটা ভালো নাতনী উম্মে। মেয়েটি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
— দাদীমা, উনি কে? আগে তো কখনো দেখিনি।
কথাটা শুনে দাদীমার মুখ কালো হয়ে গেল। আমি কে সেটা বলতে এত আমতা আমতা করছেন কেন দাদিমা? তক্ষুনি আন্টি এসে উম্মে কে জড়িয়ে ধরে কুশলাদি জিজ্ঞেস করল। উম্মে এদিক সেদিক উকি মেরে বলল,
— তোমার দুষ্টু নাতিটা কোথায় দাদীমা?
— কাজে গেছে একটু, চলে আসবে। তুই যা গিয়ে বিশ্রাম কর।
উনারা উম্মেকে নিয়ে উপরে চলে গেলেন। সন্ধ্যায় আমি ওর রুমে গেলাম ওকে কফি দেওয়ার জন্য। আমাকে দেখে বলল,
— বসো একটু গল্প করি। তোমার সাথে আলাপ ই তো হল না।
— আমি মুশায়রা, এই বাড়ীর বউ।
— কার বউ তুমি?
— দাদীমার নাতবউ।
এই কথা শুনে উম্মের চোখ-মুখে অবাকতা লক্ষ করলাম। কিছু বলার আগেই শাকি ডেকে বলল, ভাবী তোমার ফোন বাজছে রুমে। অনেকক্ষণ ধরেই বাজছে, গিয়ে দেখো।
— আমি আসছি একটু। বলে চলে এলাম। মেয়েটা ঠায় অবাক হয়ে বসে রইল।
উনি এসে আজ সোজা রুমে ঢুকলেননা, প্রথমে উম্মের রুমে গেলেন। ব্যাপারটা স্বাভাবিক হলেও আমার কাছে কেমন জানি খারাপ লাগল। আমি আসলেই একটু বেশি বেশি ভাবছি। বাসায় মেহমান এসেছে, তারপর উনার আত্মীয়। প্রথমে তো তার সাথেই দেখা করা উচিত। ১মিনিটের মধ্যেই উনি ওখান থেকে বেরিয়ে আসলেন দেখে স্বস্তি পেলাম।
রুমে এসে চুপচাপ বসে রইলেন ব্যালকুনিতে। প্রতিদিনের মত আমাকে জ্বালালেন না, বকবক করলেন না আমার সাথে। তেমন কথাও বলেননি। আমার ভিতরটা কেমন অস্থির লাগল উনার এই অবস্থা দেখে। আমি নিজে থেকে কথা বলতে গেলাম উনার ফোনটা বেজে উঠল।
উনি “১মিনিট আসছি” বলে ফোন নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। আমি চুপচাপ ব্যালকুনিতে দাঁড়িয়ে রইলাম। এমনসময় লোডশেডিং হয়ে গেল, অসময়ে এভাবে লোডশেডিং…. এখন আলো খুজব কি করে?
রুমের দিকে যাব এমন সময় সেই চিরপরিচিত কন্ঠ শুনতে পেলাম ব্যালকুনির অন্ধকার কোণ থেকে।
— কেমন আছো মুশু?
— মেহরাব?
— মনে আছে আমাকে?
— হ্যা মনে আছে। আপনার এত রাগ কেন? সেদিনের পর আর আমার সামনে এলেন না, আপনি একবারো বুঝলেন না ওইসব আমার রাগে বলা কথা ছিল। আমাকে ক্ষমা করে দিন, রাগের মাথায় কত কিছু বলে দিয়েছি।
মেহরাব কিছুটা কাছে এসে বলল, তোমার উপর আমার কোনো রাগ নেই মুশু। আমায় ভালোবাসো মুশু?
আমি হতবিহ্বল হয়ে গেলাম এই প্রশ্নে। কাপা কাপা কন্ঠে বললাম,
— মেহরাব আমার বিয়ে হয়ে গেছে। আমি এখন বিবাহিত।
সে তার হাত দিয়ে আমার গাল দুটো ধরে বলল,
— সব ছেড়ে আমার কাছে চলে আসতে পারবেনা মুশু? আমি তোমাকে নিয়ে আমার জগতে চলে যাব। সেখানেই আমরা ঘর বাধব।
— তা হয়না মেহরাব!
— কেন হয়না? চল আমার সাথে।
— কিন্তু…..
— তুমিও আমাকে ভালোবাসো আর আমিও তোমাকে…. তাহলে কিসের এত দ্বিধা মুশু? তুমি তো তাকে স্বামী হিসেবে মেনে নাওনি।
আল্লাহ তুমি আমাকে এ কেমন দ্বিধায় ফেললে? কোনটা বেছে নেব আমি! পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে আমার। মনে হচ্ছে এমন পরিস্থিতি আসার আগে কেন আমি মরে গেলাম না।
.
(চলবে)