জ্বীনবর_২,পর্বঃ ১৩,১৪

0
2571

জ্বীনবর_২,পর্বঃ ১৩,১৪
লেখিকাঃ আস্থা রাহমান শান্ত্বনা

আমি অবাক হয়ে চাচ্চুর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। চাচ্চু কি বুঝে ফেলল মেহরাব যে জ্বীন। সাধারণ দৃষ্টিতে কারোর ই মেহরাবকে জ্বীন মনে হওয়ার কথা নয়। তার নূরানী আর মায়াবী চেহারাটা আট-দশটা মানুষের মতই। চাচ্চুর বুঝে ফেলাটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। কেননা বাবার মত চাচ্চু ও একজন আলেম, খুব সুন্দর ওয়াজ করেন। তবে তার চেয়ে বাবার জনপ্রিয়তা ই বেশি ছিল। বাবাকে সবাই খুব সম্মান করত। বলতে দ্বিধা হচ্ছে তাও বলাটা দরকার। কেননা, চাচ্চু ছাড়া কেউ বাবাকে মানাতে পারবেনা। ছোটভাইকে বাবা অসম্ভব ভালোবাসেন। আমি হেসে বললাম,
— চাচ্চু উনিই আমার স্বামী। ফুপিই আমাদের বিয়ে দিয়েছিলেন মাসখানেক আগে। তার পরিবারে দাদীমা ছাড়া কেউ ছিলনা, কিছুদিন আগে তিনিও মৃত্যুবরণ করেছেন। এমন সময় চাচীমা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগলেন। জিজ্ঞেস করলেন, এতদিন কোথায় ছিলি মুশু?
— কেদোনা চাচীমা, আমি ফুপির কাছে ছিলাম। সেখান থেকে বিয়ে করে শ্বশুড়বাড়িতে। তোমাদের জামাইয়ের সাথে এলাম বাবাকে দেখতে!
— বিয়ে করে নিলি আর আমাকে একবারো জানালিনা!
— সবকিছু হুট করেই হয়ে গেল চাচীমা।
— আমাদের জামাই কই?
— রুমে একা বসে আছে, যাও দেখা করে এসো।
— মুশুর জামাই এসেছে!!? হ্যা দেখবোই তো তার আগে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করি। হ্যাঁ গো, আপনি যান জামাইয়ের কাছে। এই প্রথমবার এলো, একটু অস্বস্তি বোধ করবে। আর ভালো করে আপ্যায়ন ও তো করতে হবে।
–আমি যাচ্ছি, তুমি যাও সালেহা। চাচীমার কোনো সন্তানাদি নেই। মা মারা যাওয়ার পর আমাকে আর শিরিন কে চাচীমাই দেখাশুনা করত। বাবার বকার হাত থেকে বাচাতে চাচীমা সবসময় এক পা এগিয়ে থাকত। মায়ের শূন্যতা উনি বুঝতে দেননি কখনো। নিজের মেয়ের মত আগলে রেখেছেন সবসময়।
— চাচীমা, শুনো।
— হ্যা বল মা
— বাবা কোথায় গো? অনেকক্ষণ হল এসেছি, দেখতে পেলামনা তো। কোথাও বেরিয়েছেন নাকি? বাবা তো নামায পড়েই ফিরে সবসময়। মাগরিবের আযান তো কত আগে দিয়ে দিল। চাচীমা ব্যস্ততা দেখিয়ে গলার সুর ক্ষীণ বলল,
— হ্যা আছে। তুই জামাইয়ের কাছে যা, আমি আসছি।

আমার মাথায় টেনশন ঘুরছে, বাবা এখনো কেন আসছেন না? এসে মেহরাবের বিস্তারিত জানতে পারলে জানিনা কি হবে। এর আগেই চাচ্চুকে ম্যানেজ করতে হবে। চাচ্চুর হাত ধরে বললাম, চাচ্চু তোমাকে একটা কথা বলার ছিল।
— হ্যা বল।
— তুমি বাবাকে এটা নিয়ে ম্যানেজ করে নিও প্লীজ। হয়ত বাবা এটা নিয়ে রাগ করতে পারে।
— কি ব্যাপার বল!
— আমার স্বামী মেহরাব একজন জ্বীন। আমি জ্বীনকে বিয়ে করে ফেলেছি। বাবা জানলে জানিনা ব্যাপারটা কেমন ভাবে নিবে! তুমি একটু ম্যানেজ করে নিও প্লীজ। তুমি দ্বিমত করোনা অন্তত, তাহলে বাবাকে আমি কিছুতেই মানাতে পারবনা।
— তুই মেহরাবকে বিয়ে করেছিস? চাচ্চু অবাক হয়ে আমাকে প্রশ্ন টা করল।

খানিকবাদে চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়া পানি মুছে বলল, মুশু তোকে একটা কথা বলিনি। ভাবলাম বলবনা, কিন্তু এখন না বলে উপায় ও নেই। তোর বাবা আর নেই মুশু।
শুনে আমার পায়ের নিচের মাটি সরে গেল। চাচ্চু এসব কি বলছে! আমার বাবা সত্যিই আর নেই!
— মুশু, তুই পালিয়ে যাওয়ার পরই তোর বাবাকে কেউ নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। এতটাই বিভৎসভাবে মেরেছে যা কোনো সুস্থ ভাবে করতে পারেনা। আমি আর চুপ থাকতে পারলামনা। বোবা চোখ-মুখ টা কঠিনতা কাটিয়ে জোরে কান্নার রোল উঠাল। আমি এত আশা নিয়ে এই বাড়ীতে এসেছি বাবাকে দেখার জন্য, সেই দেখার সুযোগটাও পেলামনা।
— চাচ্চু, কে করল এমন কাজটা? আমড় ফেরেশতার মত বাবাকে কে মারল! বাবা কার কি ক্ষতি করেছিল যে আমার কাছ থেকে আমার শেষ আপনজনকেও কেড়ে নিল। কিভাবে হলো এসব চাচ্চু? কে এতবড় সর্বনাশ করল আমার! বলোনা চাচ্চু।
— তোর জ্বীনবর মেহরাব। শুনে আমার কান কে বিশ্বাস করতে পারলামনা। কিসব বলছে চাচ্চু!
— চাচ্চু তুমি এসব কি বলছো? আমার স্বামী এমন কাজ করতে পারেনা। উনি তো বাবাকে চিনেও না, কখনো দেখেওনি। উনি কেন মারবে? উনার সাথে বাবার কি শত্রুতা থাকবে! এমন অপবাদ দিওনা চাচ্চু।
চাচ্চু কাদতে কাদতে বললেন,
— মুশুমা, এটাই সত্যি। পুরোটা শুনলেই তুই বুঝতে পারবি মেহরাব আসলেই তোর বাবার খুনি কিনা!

চাচ্চু একটু থেমে চোখটা মুছে নিয়ে আবার বলতে লাগল,
— মেহরাব তোকে অনেক আগেই পছন্দ করেছিল। ওর কু-নজর পড়েছিল তোর উপর। তখন ও ভাইয়ের কাছে তোকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। ভাই সেটা সোজা না করে ওকে বের করে দেয় এবং শাসায় তোর আশেপাশে যেন ও না আসে। কারণ, ভাই জেনেছিল মেহরাব বদজ্বীনের সর্দার। ও তোকে যেমনটা দেখায় ও তেমন নয়। মানুষের ক্ষতিসাধন করাই ওর কাজ। জ্বীনরাজ্য দখলের জন্য অনেকবার ও ক্ষমতার অপব্যবহার করেছিল,এর জন্য সে জ্বীনজগত থেকে বিতাড়িত হয়েছিল। তখন সে ঠিক করে মানুষের মধ্যে বিশৃঙখলা সৃষ্টি করে জ্বীনজগতকে অস্থিরতায় ভরিয়ে তুলে সেটা নিজের আয়ত্বে আনবে।
এই জন্য সে মানুষবেশে দাদীকে নিয়ে এখানে পড়ে আছে। সে নাকি উম্মে নামক জ্বীন এর সাথে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত ছিল।
সেইদিনের ঘটনায় মেহরাব প্রচন্ড অপমানবোধ করে। একে একে তোর মা আর তোর বোন শিরিন করে হত্যা করে। তাদের মৃত্যু স্বাভাবিক ছিলনা মুশু। এতকিছুর পরও ভাই তার সিদ্ধান্ত এ অনড় থাকায় সে হুমকি দেয় তোর ক্ষতি করবে।কিছু মনে পড়ে কিনা দেখ?

চোখের সামনে সেইরাতের কাহিনী ভেসে উঠল। রাতের বেলা বাবা তার রুমে এসেছিল কাদতে কাদতে। এসে বলেছিল, মুশু তুই পালিয়ে যা এখান থেকে।
— বাবা তুমি কাদছো কেন? আর কেন পালাব আমি!
— তুই সবার চোখের আড়ালে এক্ষুণি পালাবি। ব্যাগ গুছিয়ে নে।
— বাবা কি বলছো এসব? পালাব কেন তোমাকে ছেড়ে!
— আমাকে ছেড়েই পালাবি। আমার কসম রইল আর কোনো প্রশ্ন না করে আমি যা বলি তাই করবি। ব্যাগ গুছিয়ে নে, এক্ষুনি বের হতে হবে।
— পালিয়ে কোথায় যাব বাবা?
— আমি তোকে একটা ঠিকানা দিচ্ছি সেখানে গিয়ে আমার নাম বলবি। আর সেখানেই থাকবি। আমি যতদিন না বলব তুই এখানে ফিরবিনা।
সেদিন রাতে সবার আড়ালে বাবা আমাকে বাসে তুলে দেয়। বাস ছাড়া অবধি সারাটা সময় বাবা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছিল। গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার আগমূহুর্তে আমাকে বলছিল,
— মুশু জানিনা মা তোর সাথে আমার আর দেখা হবে কিনা! তবে তুই ভালো থাকিস। সাবধানে থাকিস। আল্লাহর কাছে দোয়া করি উনি যেন তোকে যোগ্য স্থানে হেফাজতে রাখেন।
বাবার কথাগুলা বুকের তীরের মত বিধে ছিল। সারাটা পথ কেদেছিলাম। কসমের কারণে চুপচাপ কোনো প্রশ্ন না করে অজানায় পাড়ি দিয়েছিলাম। সবাই জানবে আমি পালিয়ে গেছি কিন্তু সেই আমিই জানিনা আমার পালিয়ে যাওয়ার কারণটা কি!

মনে পড়তেই বুক টা ফেটে যাচ্ছিল। তবে কি সত্যিই মেহরাব আমার বাবাকে হত্যা করেছে! তা না হলে চাচ্চুর ওর ব্যাপারে এত কিছু কি করে জানবে? পালিয়ে যাওয়ার পরই কিন্তু ওর সাথে আমার দেখা হয়েছিল। সব হিসাব মিলে যাচ্ছে, জটগুলো ও খুলে যাচ্ছে। চাচ্চু আমার নীরবতা দেখে বলল,
— তুই পালিয়ে গিয়েছিস শুনে ও তোর বাবাকে মেরে গেলে। ও বুঝে গেছে এর পিছনে তোর বাবা ছিল। এই হাতে ভআইকে কবরে নামাতে হয়েছিল আমার। এর থেকে কষ্টের কি হতে পারে বল! আর তুই সেই খুনিকেই বিয়ে করলি মুশু। আমার কান্নাটা রাগে পরিণতি হল। এমন জানলে আমি কখনোই মেহরাবকে পাশে জায়গা দিতামনা। এত নীচ ও! নিজের উপর ই ঘৃনা হচ্ছে এখন।
— এসব ভুলে যাওয়াই ভাল মুশু। বিয়ে হয়ে গেছে, ও এখন আমাদের জামাই। অতীতে যা হয়েছে সব ভুলে সুখে সংসার কর তোরা।
— একজন খুনির সাথে সংসার আমি কখনোই করবনা। এই মূহুর্তে ওর সাথে সব বিচ্ছেদ করব আমি। এমন কাউকে আমার জীবনে চাইনা।
আর একমূহুর্ত না দাঁড়িয়ে আমি মেহরাবের কাছে চলে গেলাম।
.
(চলবে)

জ্বীনবর_২
লেখিকাঃ আস্থা রাহমান শান্ত্বনা

পর্বঃ ১৪

রুমে গিয়ে দেখি ও জানালায় মুখ রেখে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। সামনে দাড়াতেই দেখি ওর মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে আছে, কিছু একটা নিয়ে ভীত। আমি ডাকলাম, “মেহরাব!” ও চমকে উঠে আমার দিকে তাকাল। ওর ফ্যাকাশে মুখটা আরো ফ্যাকাশে হয়ে গেল। মুখে শুকনো হাসি ফুটিয়ে কাপা কন্ঠে বলল,
— এতক্ষণ কোথায় ছিলে বউ?
এই কথা শুনে আমার রাগ আরো বেড়ে যাচ্ছে। এতকিছু করার পরও ও কিভাবে আমাকে বউ বলে ডাকছে, এমন ভাব করে আছে মনে হচ্ছে ওর চেয়ে নিষ্পাপ কেউ নেই আর। আমি সোজা ওর শার্টের কলার টেনে ওকে উঠিয়ে কাছে টেনে আনলাম। ও পুরো ব্যাপারটায় অবাক হয়ে গেল। বিস্ফোরিত চোখে আমার দিকে তাকাল। আমি আরো শক্ত করে কলার চেপে ধরে বললাম,
— তোর কি ক্ষতি করেছিল আমার পরিবার? এভাবে কেন আমার পরিবারটাকে শেষ করে দিলি? তুই তো আমাকে চেয়েছিস তাইনা! আমাকে বলতে পারতি, আমি তোর নোংরা লালসা মিটাতাম। তুই আমার পরিবারকে কেন মারলি?
ও চমকে উঠে বলল, এসব তুমি বলছো বউ? আমি চোখ রাঙ্গিয়ে বললাম,
— একদম চুপ, কোন অধিকারে আমাকে বউ ডাকিস? আমি তোর বউ না, একজন খুনির বউ আমি কিছুতেই হতে পারিনা। কাদতে কাদতে বললাম,
— আমার মা-বাবা, বোন তোর ক্ষতি করেছিল রে? তুই তো জ্বীন, তুই ই তো আমাকে বুঝিয়েছিস তোদের ভালোবাসা পবিত্র, তোরা মানুষের ক্ষতি করতে পারিসনা। কিন্তু কাজে কি প্রমাণ দিলি? নৃশংস ভাবে আমার পরিবারের সবাইকে মেরে দিলি! পরে এসেছিলি আমাকে ভালোবাসতে? সবটাই তোর নাটক ছিল শুধু আমাকে আয়ত্বে আনার জন্য। তোর তো অবৈধ সম্পর্ক ছিল উম্মের সাথে। সেই সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও তুই আমাকে বিয়ে করেছিস, ভালোবাসা দেখিয়েছিস। কেন করলি এসব? কিসের এত চাওয়া তোর!
— বউ আমার কথা শুনো….. আমি হুংকার ছেড়ে বললাম,
— উহু, ওই নামে আমাকে ডাকবিনা। তুই আমার স্বামী নস, আমার পরিবারের খুনী। একটা বদজ্বীন, উহু শুধু বদজ্বীন তো না তুই তো বদজ্বীনের সর্দার। তোর সব সত্যি আমি জেনে গেছি, আর আমার কাছে ভালো সাজতে আসিসনা।

ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলাম আমি। বেডের সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে গেল ও। ব্যথা পেয়েছে, তাও উঠে দাড়াল। আমি চোখ মুছে বললাম,
— তুই এই মূহুর্তে আমাকে তালাক দিবি। এরপর থেকে আর কখনো আমার জীবনে ফেরার চেষ্টা করবিনা। যদি পারিস আমাকেও মেরে ফেল, যদি পারিস কি? তুই তো সব পারিস। তোর মনে খারাপ ছাড়া ভালো কি আছে!
তালাক দিয়ে এই বাড়ির ত্রিসীমানা ছেড়ে চলে যা..
কি হল? তাকিয়ে দেখছিস কি! তালাক দে।
ও কিছু বলতে চেয়েও আবার চুপ করে গেল। এই কাদো কাদো চেহারাটা দেখে বড্ড মায়া লাগছে। এমন চেহারার মানুষ কি করে এতটা নীচ হতে পারে।
ও মাথা নিচু করে বলল, আমি তালাক দিতে পারবনা বউ। তুমি আমাকে ভুল বুঝছো। আমি দরজা খুলে দিয়ে বললাম,
— বেরিয়ে যান। ও কান্নামাখা চোখে আমার দিকে অপলক তাকিয়ে রইল।।
— কি হল? বের হয়ে যেতে বলছি।
ও ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। আমি চাচ্চুকে ডাক দিতেই চাচ্চু চলে এল।
— চাচ্চু তুমি উনাকে চলে যেতে বল। আমি আর নিতে পারছিনা।
বলে ওখান থেকে চলে এলাম। পিছন থেকে ও কতবার বউ বলে ডাকল ফিরেও তাকালামনা। আর এই মায়ায় জড়িয়ে ফেলতে চাইনা নিজেকে। জানালা দিয়ে একবার বাহিরের দিকে তাকালাম চাচ্চু ওর কলার ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। যেতে যেতে ও বাসার দিকেই তাকিয়ে আছে অপলক। আমার কপালটা কেন এমন?

রাত্রে চাচীমা আমার রুমে আসলেন খাবার নিয়ে। এসে আমাকে বলল, মুশু আসার পর থেকে তো কিছুই খেলিনা। এভাবে থাকলে তো অসুস্থ হয়ে পড়বি। একটু কিছু খেয়ে নে।
— আমার ইচ্ছে করছে না চাচীমা।
— দেখ মুশু যা হওয়ার তো হয়ে গেছে, সেটা নিয়ে ভেবে নিজেকে কেন কষ্ট দিচ্ছিস? সব ভুলে যা মা। এই বিয়েটা তোর জন্য ভালো ছিলনা।
চাচীমাকে জড়িয়ে ধরে বললাম, মেয়েদের জীবনে বিয়ে একবার আসে চাচীমা।আমার ক্ষেত্রে ও তাই। আমি তো কোনো দোষ করিনি তাহলে আমার সাথে কেন এমন হল! ফুপির অকথ্য অসহনীয় কথার চাপে পড়ে সীমার জন্য বিয়েটা করেছিলাম, সব তো ঠিকই চলছিল। ছোট্ট একটা সংসার করেছিলাম ওর সাথে। এত ভালোবাসত মেহরাব আমায় কখনো মনে হয়নি ও খারাপ হতে পারে! আমার সাথে ছলনা করতে পারে। সবসময় আমাকে আগলে আগলে রাখত, নিজের সবটুকু দিয়ে ওকে ভালোবেসেছিলাম। কিন্তু শেষে কিনা জানলাম সেই ই আমার পরিবারের সবাইকে খুন করেছে।
চাচীমা আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
— হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে, আমারো মনে হয়না ছেলেটা এমন।
এমন সময় চাচ্চু রুমে ঢুকল। চাচীমা আমাকে ছেড়ে এক কোণে দাঁড়িয়ে পড়ল। চাচ্চু উনার দিকে তাকিয়ে বলল, দেখে কি সবাই কে চেনা যায় কার ভেতর কি রয়েছে? আমার মেয়েটার জীবনটা শেষ করে দিল, আর তুমি ওকে এসব বলছো? মেয়েটার শোক কাটানোর চেষ্টা না করে তার মন বিক্ষিপ্ত করছো।
— আমি তো এমনিই বললাম।
— তোমার আর কিছু বলা লাগবেনা। এসব কথা আর মুশায়রা মায়ের সামনে বলবেনা। মুশু ছেলেটা ভালো ছিলনা, তার জন্য তুই নিজেকে কষ্ট দিসনা। ভুলে যা ওর কথা। জ্বীনের সাথে কখনো মানুষের মিল হয় বল?
ওরা মানুষের ক্ষতি ছাড়া আর কিছু করতে পারেনা। নে মা খেয়ে নে।
সালেহা তুমি ওর খেয়াল রাখো ঠিকমত।
এসব বলে চাচ্চু চলে গেল। আজ চাচ্চুর ব্যবহারে অনেকটা রুক্ষতা পেলাম। বাবার খুনি কে পেয়ে চাচ্চু বেশিই রেগে গেছে। মেহরাব কোথায় এখন? ও ও তো সারাদিন কিছু খায়নি। কোথায় চলে গেল? খেয়েছে কিনা সেটাও জানিনাহ।
সারারাত ছটফট করলাম ঘুম আসলোনা। দিন দিন শরীরটাও খারাপ হয়ে যাচ্ছিল।

আজ অনেকদিন পর বাবার রুমে ঢুকলাম। আগের মতই আছে সবকিছু, শুধু মানুষটাই নেই। কিছুটা ধুলো পড়েছে রুমে, চাচীমা আর একা কত করবেন! আমিই ভাবলাম পরিষ্কার করে দেই। বাবা একটুও অপরিষ্কার পছন্দ করতেননা। সবসময় আমিই বাবার ঘর গুছিয়ে দিতাম। বাবার জায়নামায, টুপি, পাঞ্জাবি ধুয়ে রোদে দিয়ে দিলাম। একটা পুরোনো রুমাল এনে বাবার শেলফ, ওয়ার ড্রব মুছলাম। এমন সময় একটা পুরোনো ধুলোমাখা ডায়েরী চোখে পড়ল।
বাবাত কাছে এমন টুকটাক ডায়েরী থাকা অবাক হওয়ার ব্যাপার নাহ।বাবা এসবে নিজের কাজের বিবরণ, দোয়া-মাছুরা লিখে রাখেন।
কিন্তু এমন ডায়েরী কখনো দেখিনি বাবার কাছে। যাই হোক মুছে নিলাম এটা।
তুলে রাখতেই ওটা থেকে একটা চিরকুট নিচে পড়ে গেল।
তাতে লেখা ছিল ” আমার শেষ আর্তনাদ যাতে আমার মেয়ের কানে না যায়!”
লেখাটা পড়েই বুকের মধ্যে কেমন জানি করে উঠল।
এতে বাবার কথা লেখা থাকতে পারে ভেবে খুললাম। এমন সময় চাচ্চুর ডাক এলো। ডায়েরীটা ওড়নার মধ্যে লুকিয়ে নিজের রুমের শেলফে রেখে দিলাম।
পরে সময় বের করে পড়ব।
ওইটায় কি লেখা আছে জানার জন্য মন ছটফট করছে।
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here