জ্বীনবর_৫?,পর্বঃ২২,২৩
লেখিকাঃ আস্থা রাহমান শান্ত্বনা
পর্ব-২২
এসব শুনে সবাই হা করে ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে। মহিলাটা বলল, তুমি মুশায়রার স্বামী?
ফারহান চটপটে উত্তর দিল,
— কেন? বিশ্বাস হচ্ছেনা, কাবিননামা দেখিয়ে প্রমাণ করতে হবে?
— স্বামী হলে এতক্ষণ বলছিলেনা কেন?
— আপনারা নিজেদেরকে কতটা নিচে নামাচ্ছিলেন সেটা দেখছিলাম। এত খারাপ মন্তব্য আপনারা কিভাবে পোষণ করেন। হতে পারে, আমাদের বিয়েটা পালিয়ে করতে হয়েছে। তার মানে এটা প্রমাণিত হয়না যে আমার বউ খারাপ। আমি ওর স্বামী।
আর কখনো কাউকে কিছু বলার আগে কয়েকবার ভেবে নিবেন তার সম্পর্কে সঠিক টা আপনি জানেন কিনা! আর আপনি কি এখানে বিয়ের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে এসেছেন নাকি অন্যের সমালোচনা করতে?
মনে রাখবেন যার চরিত্র যেমন সে অন্যকে সেই রকম ই দেখে।
— তুমি তোমার মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছো জামাই? আমি তোমার গুরুজন হই, শিক্ষা-দীক্ষার কোনো বালাই ই নেই তোমার মাঝে।
— আপনি যদি আপনার নির্দিষ্ট মাত্রায় থাকতেন তবে আমি আমার মাত্রা ছাড়তামনা। আপনাকে সেই শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্য হলে আমি অবশ্যি দিতাম। যাই হোক, দয়া করে এভাবে কটুকথা বলে আর কাউকে অপমান করবেননা।
মহিলাটা লজ্জায় তখন ছোট হয়ে যাচ্ছিল সবার সামনে। আর কিছু বলতে না পেরে চুপ করে রইল। ফারহান এসে আমার হাতটা ধরে সেখান থেকে বেরিয়ে এল।
বাহিরে এসে আমি উনার হাত থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে কষে একটা থাপ্পড় দিলাম।
ফারহান গালে হাত দিয়ে নির্জীব দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। বোন এসে বলল,
— তুই ওকে মারলি কেন?
— উনার সাহস কি করে নিজেকে আমার স্বামী হিসেবে পরিচয় দেওয়ার? আমি কি উনার করুণা চেয়েছি!
বলেছি আমাকে অপমানের হাত থেকে বাচানোর জন্য?
এসবের কোনো প্রয়োজন ছিলনা। আপনি আমাকে আমার বিবেকের কাছে ছোট করে দিলেন।
বোন রেগে গিয়ে বলল,
— তোর ভালোর জন্য ই করেছিল। তবে ফারহান, তোমার এটা উচিত হয়নি। নিজেকে এই পরিচয় দিয়ে এখন কত সমস্যা ডেকে আনছো!
ওর স্বামী যদি সত্যি কখনো ফিরে আসে তবে ও তখন তাকে কি পরিচয় দিবে? একদিনের অপমান থেকে বাচাতে গিয়ে তুমি ওকে সারাজীবনের জন্য চুপ করিয়ে দিলে!
ফারহান আমার সামনে এসে বলল,
— বুঝতে পারছি আমার ভুল হয়েছে। আমার এটা করা উচিত হয়নি। কিন্তু আমি আপনার অপমান টা মেনে নিতে পারছিলামনা, হয়ত আপনাদের বাড়ির নুন খেয়েছি বলেই।
এটা কে আমার করুণা ভেবে ভুল করবেননা।
আপনারা যদি চান তবে আমি এখান থেকে আজীবনের জন্য চলে যাব। আমার জন্য আপনার কোনো বিপদ হোক আমি চাইনা।
বলে ফারহান এক মূহুর্ত অপেক্ষা না করে চলে গেল। বোন আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
— এটাই বাকি ছিল আর। খুব খুশি হয়েছিস নিশ্চয়ই!
আমার ভালো তুই আসলে কখনো ই চাসনি। তোর জন্য আমার ক্ষতি ই হয়ে গেল শুধু।
আমি চুপ করে রইলাম। বুঝতেই পারছিনা কি করা উচিত আমার। নিজেকে অনেক অসহায় লাগছে। কখনো ভাবিনি আমার একটা সিদ্ধান্ত এভাবে কাল হয়ে দাঁড়াবে আমার জন্য। এমন পরিস্থিতিতে আমি কি করা উচিত!
বাসায় ঢুকে দেখলাম ফারহান শুকনো মুখে ব্যাগ গোছাচ্ছে। আমি দরজায় কড়া নেড়ে বললাম,
— আসতে পারি?
— আপনি! হ্যা আসুন, আপনাদের বাসার রুমে আপনারা ঢুকতে অনুমতি নিবেন কেন?
— আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।
— ক্ষমা চাচ্ছেন কেন? দোষটা আমার ই ছিল। আমার এটা করা উচিত হয়নি। আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।
— আমি আপনাকে ওভাবে বলতে চাইনি।
আসলে ব্যপারটা আমার কাছে খুব ই সেনসিটিভ। তাই আমি এমন রিয়েক্ট করে ফেলেছি।
আপনি যদি এখন চলে যান, আমার ই খারাপ লাগবে। নিজেকে অপরাধী মনে হয়।
তাই বলছিলাম কি! এসব ভুলে যান। আমাকে ক্ষমা করে দিন।
— এভাবে বলবেননা।
— দয়া করে, আপনি যাবেননা। বোন আমাকে অনেক বড় ভুল বুঝবে। আমার এই অনুরোধটি রাখুন।
— ঠিক আছে, আমি যাচ্ছিনা।
আমার খুব ক্ষুধা লেগেছে, খাওয়া তো ঠিক মত হয় ই নি।
কিছু খাওয়ানো যাবে এই পেটুকটাকে?
আমি চোখ মুছে বললাম,
— কি খাবেন বলুন?
— যা কিছু একটা হলেই হবে।
— ঠিক আছে। আমি নিয়ে আসছি।
রুমে এসে শাড়ি চেঞ্জ করে রান্নাঘরে এলাম। এখন মনটা একটু হালকা লাগছে। ছেলেটার ই বা কি দোষ! সব দোষ আমার ভাগ্যের। শুধু শুধু তার সাথে খারাপ ব্যবহার করা আমার উচিত হয়নি।
রান্নাবান্না শেষ করে বোন আর ফারহানকে খেতে ডাকলাম। বোন খেতে খেতে বলল,
— তুই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, তোর স্বামীর কাছে ফিরে যা।
এসব অতিরিক্ত প্যারা নেওয়ার সাধ্য আর আমার নেই।
— ম্যাম, এভাবে বলছেন কেন?
উনার ই বা কি দোষ! গ্রামের মানুষগুলোর মানসিকতা খারাপ ছিল।
— এতকিছু ঘটে যাওয়ার পরও তুমি মুশুকে সাপোর্ট করছো ফারহান? ওর দোষ তো অবশ্যই আছে। যখন জানে ই পালিয়ে বিয়ে করে স্বামীর সংসার করতে পারবেনা, তো এত নাটক করে গেল ই বা কেন!
আর ফিরে আসার ই কি প্রয়োজন ছিল।
ওর জন্য গায়ের লোকের কাছে কতটা অপদস্থ হতে হয়েছে।
রোজ রোজ এসব নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
আমি নির্লিপ্তভাবে বললাম, আমাকে কয়েকটা দিন সময় দে, আমি চলে যাব। তুই এত প্রেশার নিসনা।
আমার জন্য তোর যথেষ্ট অপমানিত হতে হয়েছে। আর হতে হবেনা।
তাকিয়ে দেখলাম ফারহান মুখ গোমড়া করে প্লেটের ভাত নাড়াচাড়া করছে। কিছুই খাচ্ছেনা।
— আপনাকে কিছু দেব ফারহান?
— না ধন্যবাদ। আমার আর খেতে ইচ্ছে করছেনা, আমি উঠছি।
— আপনি তো কিছুই খেলেননা।
— যা খেয়েছি যথেষ্ট।
আমি চুপচাপ ফারহানের চলে যাওয়া দেখলাম। ছেলেটাকে ঠিক বুঝতে পারিনা। তবে খুব ভালভাবে সবকিছু হ্যান্ডেল করার দক্ষতা তার আছে।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে বারান্দায় এসে বসলাম। বুড়িমা ফিরেছেন একটু আগে, আমাকে খুজতে এসে একা বসে থাকতে দেখে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
— এখানে একা বসে আছিস কেন মুশু? মন খারাপ?
— তেমন কিছুনা বুড়িমা।
— আমি বুঝতে পারিরে মুশু। একটা কথা কি জানিস, যারা খারাপ তারা খারাপ কথা বলবেই। তাদের তুই আয়কাতে পারবিনা।
তবে তোর নিজেকে এমনভাবেই গড়ে তুলতে হবে যাতে তারা খারাপ কিছু বলার সুযোগ না পায়।
— আমার হাতে কিছু নেই বুড়িমা।
যা হচ্ছে সব উপরওয়ালার ইচ্ছেতেই হচ্ছে। উনি কখন কি করছেন তা উনি ই জানেন।
— মুশু নাতজামাই এর সাথে সব ঠিক করে নিলে হত না! এভাবে আর কত কষ্ট ভোগ করবি, দাতে দাত চেপে সবার অপমান হজম করবি।
— সেই উপায় নেই বুড়িমা। আমার কপালে আল্লাহ হয়ত তোমার নাতজামাইকে লিখে রাখেননি।
— তাহলে আমি একটা কথা বলি। সেটা একটু ভেবে দেখিস, তোর খারাপ হবেনা।
— বলো।
— আজ এতগুলো লোকের খারাপ কথা থেকে ফারহান তোকে খুব আগলে রেখে বাচিয়ে দিয়েছে। তোর উপর হওয়া প্রতিটি অন্যায় এর সঠিক জবাব দিয়েছে।
তখন মনে হয়েছিল তোকে আগলে রাখার জন্য তোর জীবনে এমন ফারহানের খুব প্রয়োজন।
— বুঝতে পারলামনা।
— বলছিলাম, পুরোনো জীবনের কথা ভুলে নতুন ভাবে বাচার চেষ্টা কর নতুন পরিচয় নিয়ে। ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্ন, ভালোবাসা দিয়ে নতুন একটা সম্পর্ক গড়ে তোল।
ফারহান ছেলেটা সত্যিই তোর জন্য আল্লাহর রহমত স্বরুপ। তুই ওকে বিয়ে করে নে, দেখবি ও তোকে খুব ভালো রাখবে। সবসময় তোকে আগলে রাখবে। ভালো করে ভেবে দেখ একবার।
— বুড়িমা!! তুমি জানো তুমি কি বলসো?
এই কখনোই হয়না। আমি বিবাহিত, আমার মেহেদীর রঙ্গ এখনো পুরোপুরি মুছে যায়নি। আর তুমি বলছো আমি আমার স্বামীকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করে নিব।
— তোর সেই স্বামীর জন্য আজ তোর এই অবস্থা!
তারপরো কিসের আশায় তুই তাকে স্বামী মানবি!
— সে যাই করুক, এটাই সত্য যে সেই আমার স্বামী। তাকে ছাড়া অন্য কাউকে স্বামী হিসেবে মানা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
এসব কথা আর কখনো তুমি আমাকে বলবেনা।
রুমের চলে আসার সময় ফারহানকে আমার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললাম,
— কিছু বলবেন?
— নাহ তেমন কিছুনা। আপনি কি সত্যি ই এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবেন??
— আমার জীবন নষ্ট হয়ে গেছে বলে তো নিজের বোনের জীবনটাও নষ্ট করতে পারিনা।
বলে ফারহানের মুখের উপর দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম। বারবার এসব কি পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমাকে? আর কত সহ্য করা যায় তার চেয়ে আমাকে মৃত্যু দিতে
আল্লাহ। এত প্রেশার আমি সত্যিই আর নিতে পারছিনা।
দম বন্ধ হয়ে আসে আমার!!
সকালবেলা বাহিরে থেকে চিৎকার-চেচামেচির আওয়াজ শুনে বেরিয়ে এলাম। এসে দেখি কালকের নিলর্জ্জ ফুপু গ্রামের গণ্যমান্য লোকসহ সাধারণ মানুষজন কে নিয়ে আমাদের বাড়ীতে ঢুকে পড়েছেন।
বোনের সাথে খুব তর্কাতর্কি হচ্ছে তাদের। এমনসময় ফারহান ও বাহিরে বেরিয়ে এল। ও ঠিক বুঝতে চেষ্টা করছে ব্যাপারটা কি হচ্ছে! আমার দিকে তাকিয়ে ইঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে?
আমি মাথা নাড়িয়ে বুঝালাম আমিও ঠিক জানিনা।
ফারহান তাদের সামনে এগিয়ে এসে বলল,
— আপনি এখানে?? এত লোকজন জড়ো করেছেন কেন?
মহিলাটি পানের পিক ফেলে বলল,
— এই হচ্ছে আসল কালপ্রিট। যে গাছেরও খায়, তলার ও কুড়ায়। নিজে একটা ফালতু ছেলে হয়ে, আমাদেরকে আসে জ্ঞান দিতে।
— ঠিক করে কথা বলুন। কেন এসেছেন এখানে?
— তুমি তো নিজেকে মুশায়রার স্বামী বলে জাহির করেছো! তোমরা নাকি স্বামী-স্ত্রী।
ফারহান একনজর আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
— হ্যা বলেছি। আর এটাও বলেছি আপনারা যদি সেটা বিশ্বাস না করেন তাতে আমাদের কিছু আসে যায়না।
— তোমাদের আসে যাবে কেন? তোমরা তো নিচে নামতে নামতে এতটাই নেমে গেছো, যে সম্মান বলতে কিছুই নেই তোমাদের।
— কি বলতে চাইছেন আপনি?
— বলতে চাইছি এটাই কাল আমাকে মুশায়রার স্বামী সেজে এত অপমান করলে। তুমি যে মুশায়রার স্বামী সেটা আমরা বিশ্বাস করব কি করে!
আমি তো জেনেছি তোমার সাথে আফরার খুব মাখোমাখো সম্পর্ক। আফরার সাথে নাকি তোমার তলে তলে খুব চলছে। খুব শীঘ্রই তোমরা বিয়েও করতে যাচ্ছো।
— মুখ সামলে কথা বলুন। এসব কথা আপনাকে কে বলেছে?
— কেন? আফরাহ ই তো বলল।
ফারহান বোনের দিকে তাকাতে ও আমতা আমতা করতে করতে বলল, এসব বলেছি তোমাকে মিথ্যা কথার জাল থেকে বের করতে। আর মিথ্যা বলোনা উনাদের। স্বীকার করে নাও তুমি মুশায়রার স্বামী নও।
কেবল মুশায়রাকে বাচানোর জন্যই ওসব বলেছো।
আমি উনাদের সব সত্যিটা বলেই দিয়েছি, এখন উনারা মুশায়রার যা ব্যবস্থা করার করবেন। তুমি আর এসব নিয়ে মাথা ঘামিও না।
মহিলা আবারো পানের পিক ফেলে বলল,
— মুশায়রার মত নষ্টা মেয়েকে গ্রামে রেখে আমরা অন্য মেয়েদের কে তো খারাপ বানাতে পারিনা। ও একটা খারাপ মেয়ে যে পরপুরুষের সাথে যিনা করে গ্রামে ফিরে এসেছে।
পঞ্চায়েতের বিচার অনুযায়ী ওর শাস্তি হচ্ছে জনসম্মুখে অর্ধনগ্ন শরীরে তিনশ ঘা চাবুক। নাক খত দিতে দিতে গ্রামের সীমানার বাহিরে যাওয়া।
এমন শাস্তির কথা শুনে আমার অন্তর আত্মা কেপে উঠল। এত নিম্নমানের শাস্তির চেয়ে মৃত্যুদন্ড দেওয়াটা ভাল।
আমি করজোড়ে তাদের উদ্দেশ্যে বললাম, আপনাদের কাছে হাত জোড় করে বলছি এমন শাস্তি আমাকে দিবেন না। আমি যদি সত্যিই খারাপ হই, দরকার হলে আমাকে মৃত্যুদন্ড দিন তাও এমন শাস্তি দিবেননা।
মহিলাটি বিষমাখানো হাসি হেসে বলল,
— এটাই তোর শাস্তি। এটাই তোকে পেতে হবে। বলতে বলতে মহিলাটির চোখ চকচক করে উঠল। এবার তার গায়ের জ্বালা জুড়াবে, কাল এক গা লোকের সামনে মুশায়রার জন্য তাকে অনেক হেনেস্তা হতে হচ্ছে।
সেটার প্রতিশোধ তোলার জন্য ই আজ তার এতকিছু করা।
এমনসময় ফারহান চেচিয়ে উঠে বলল,
— একটা নিষ্কলংক মেয়েকে আপনারা এত বড় অপবাদ দিতে পারেননা। এসব পাপ আল্লাহ সহ্য করবেননা।
— তুমি চুপ থাকো ছেলে।
আফরার মুখের দিকে তাকিয়ে ছেড়ে দিচ্ছি বলে এটা ভেবোনা তুমি যাতা বলবে আর আমরা সহ্য করব। আর কোনো কথা যদি তুমি বলো তাহলে আমি আর আফরার কথা চিন্তা করব না।
— আপনারা যা ইচ্ছে করতে পারেন, কিন্তু এটা আমি কিছুতেই হতে দিতে পারবনা। দরকার হলে আপনাদের সামনে আমি মুশায়রাকে বিয়ে করব।
এই কথা শুনে আমি চমকে উঠে ফারহানের মুখের দিকে তাকালাম। এসব কি বলছেন উনি! উনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেল!
উনি জানেন আমি বিবাহিতা তারপরও এই কথা টা বলতে উনার বিবেকে একটুও বাধলনা।
— বলা যত সহজ, করা তত সহজ না।
ঠিক আছে, যদি তুমি মুশায়রাকে এক্ষুনি বিয়ে করয়ে পারো তবে মুশায়রার শাস্তি মওফুক হবে এবং সম্মানের সহিত ও এই গ্রামে থাকতে পারবে।
এখন তোমার মত জানাও।
— আমি রাজি, আপনারা ব্যবস্থা করুন।
আমি আর এক মূহুর্ত সেখান না দাঁড়িয়ে রুমে চলে এলাম। আমার পিছু পিছু ফারহান এল। আমি রেগে গিয়ে বললাম,
— এসব কি মশকরা করছেন আমার সাথে?
আপনি জানেন আমি বিবাহিতা।
— এই ছাড়া আমার কাছে আর পথ খোলা নেই আপনাকে বাচানোর। আপনি ভেবে দেখুন এরকম শাস্তি দিলে আপনার নিজের কেমন বোধ হবে?
হাজারটা লোকের সামনে আপনাকে অর্ধনগ্ন করে চাবুক মারবে এবং সেই অবস্থায় আপনাকে নাকে খত দিয়ে বের করে দিবে।
— আমার পক্ষে আপনাকে স্বামী হিসেবে মানা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
— মানতে হবেনা। আমি আপনার কাছে স্বামীর অধিকার চাইবনা। মিথ্যে ভেবে এই বিয়েটা করে নিন, কিছুদিন পার হলে এই বিয়েটা ভেঙ্গে দিব।
আমি শুধু আপনাকে শাস্তির হাত থেকে বাচাতে চাচ্ছি। কথা দিলাম এই বিয়েটা কেবল মিথ্যে একটা লোক দেখানো বিয়ে হবে। কোনো অধিকার খাটানো হবেনা এবং কিছুদিন পরেই এই বিয়েটা আপনি ভেঙ্গে দিতে পারেন। এখন আপনি ভেবে সিদ্ধান্ত নিন। বলে ফারহান চলে গেল।
আমি অসহায়ের মত মেঝেতে বসে পড়ে ভাবতে লাগলাম।
.
(চলবে)
জ্বীনবর_৫?
পর্বঃ২৩
লেখিকাঃ আস্থা রাহমান শান্ত্বনা
আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যাই হয়ে যাক, আমি কিছুতেই ফারহান বিয়ে করবনা। এটা কখনো সম্ভব নয়। এক বিয়ে বিচ্ছেদ হওয়ার আগে কোনো মুসলিম মেয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারেনা।
আমি সবাইকে বারণ করে দিব, যেকোনো শাস্তি আমি মাথা পেতে নিব তাও এত বড় পাপ আমি করতে পারবনা। এমনসময় বোন আমার রুমে ঢুকে আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। আমি বোনের চোখে পানি টলমল করতে দেখলাম।
উঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
— বোন তুই কাদছিস কেন?
বোন আমাকে সজোরে একটা ধাক্কা দিল। ধাক্কা খেয়ে টাল সামলাতে না পেরে আমি আলমিরার সাথে কপালে আঘাত পেলাম। বোন আমাকে টেনে কয়েকটা চড় মারল। শক্ত করে আমার ডান হাত মোচড়ে ধরে বলল,
— এই ছিল তোর মনে মনে?
— বোন আমার খুব ব্যথা লাগছে। কি হয়েছে? তুই এমন করছিস কেন?
— এভাবে সব কেড়ে নিবি আমার থেকে! এটাই ভেবে রেখেছিলি?
— বোন, আমি কি করেছি?
বোন আমার হাত ছেড়ে দিয়ে গাল চেপে ধরে বলল,
— জিজ্ঞেস করছিস কি করেছিস তুই! ভালো অভিনয় করিস তুই।
— বোন আমার খুব ব্যথা লাগছে, তোর পায়ে পড়ি আমাকে ছাড়। কোনো ভুল করে থাকলে বল আমি তা শুধরে নিব।
— শুধরে নিবি! আমার ফারহানকে তুই আমার কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছিস, আজ তোকে আমি মেরেই ফেলব।
তোর জন্য আমি প্রতিটি পদে পদে অবহেলিত। আজ তুই আমার শেষ সম্বল ও কেড়ে নিচ্ছিস।
— তোর ফারহান?
— হ্যা ফারহান আমার। ওকে আমি খুব ভালোবাসি, ওকে ঘিরে নতুন জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেছি।
আর তুই আমার স্বপ্নটা নষ্ট করে দিচ্ছিস!
বলে বোন কাদতে শুরু করল। আমার যেন দম বন্ধ হয়ে আসছিল এতক্ষণ। বোনের কাধে হাত রেখে বললাম,
— আমি তোর ফারহানকে কেড়ে নিতে চাইনা। ফারহানের প্রতি আমার কোনো আগ্রহ নেই। আমার স্বামী আছে, আর তাকেই আমি ভালোবাসি।
আমি এই বিয়েটা কিছুতেই করবনা, যা শাস্তি হওয়ার হোক আমার। দরকার হলে আমি মরে যাব, তাও এই বিয়েতে সম্মতি দিবনা। ফারহান আমাকে বাচানোর জন্য যা ই করতে চায় না কেন আমি তাতে সায় দিচ্ছিনা।
তোর ভালোবাসা তোর ই থাকবে।
— তুই আমাকে মিথ্যে সান্ত্বনা দিচ্ছিস?? ভুলবনা আমি এসব কথায়। তুই ও মনে মনে ফারহানকেই বিয়ে করতে চাস।
— আমি তোকে কথা দিচ্ছি, এই বিয়েটা আমি করবনা।
চল আমার সাথে। আমি এক্ষুনি সবাইকে বলে দিব।
আমি বোনের হাত ধরে বাহিরে চলে গেলাম। উঠানে গোল হয়ে গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বসে আছেন মহিলাটার সাথে। কেউ কেউ তাড়া দিচ্ছে কাজীর আসতে এত দেরী হচ্ছে কেন!
আমি সরাসরি গিয়ে তাদেরকে বললাম,
— আমার পক্ষে এই বিয়েটা করা সম্ভব নয়। এরজন্য আপনারা আমাকে যা শাস্তি দিবেন আমি তাই মাথা পেতে নিব।
ফারহান ছুটে এসে বলল, এসব আপনি কি বলছেন মুশায়রা?
— দয়া করে, আপনি আর কোনো কথা বলবেননা। অনেক করুণা করেছেন আমার উপর, আর নয়। দয়া করে আমার জীবনের সিদ্ধান্ত আমাকেই নিতে দিন। আমার জন্য আপনি অনেক করেছেন তার জন্য আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ।
এইবার আমাকে আমার মত চলতে দিন।
ফারহান দুঃখী মুখ করে আমাকে বলল,
— এত বড় সিদ্ধান্ত টা আপনি নিয়ে ভুল করছেন। আমি আপনাকে কথা দিয়েছিলাম, একটা বার ভালো করে ভেবে দেখতেন।
— আমার ভাবা হয়ে গেছে। ফুপু আমাকে অর্ধনগ্ন করে চাবুক মারুন তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই, কিন্তু পুরো গ্রামের লোকের সামনে মারবেন না। এতে আমার বাবাকে অপমান করা হবে, আমার বাবা তো সারাজীবন আপনাদের উপকার করে এসেছেন।
অন্তত তার মেয়ে হিসেবে আমাকে এইটুকু ছাড় দিন। আপনারা যা শাস্তি দিবেন আমি তাই মাথা পেতে নিব কিন্তু দয়া করে আমাকে এত বড় অপমান করবেন না।
মহিলাটা বলল, হুম তোর বাবা আমাদের উপকার করেছেন সেটা আমরা মানি। কিন্তু এর জন্য তোর অন্যায়ের শাস্তি আমরা মওফুক করতে পারিনা।
ঠিক আছে, তোকে অর্ধনগ্ন করার ব্যাপারটায় ছাড় দিলাম। সবার সামনে আমার পায়ে ধরে ক্ষমা চাইবি, ২৫ ঘা চাবুকের বাড়ি খেয়ে তোদের পুরো বাড়ি চারপাশ ঘুরে নাক খত দিবি।
আমার বড্ড দয়ার শরীর তাই তোকে অনেক বেশী ছাড় দিলাম। নাক খত দেওয়াতে দেওয়াতে গ্রাম থেকে বের করে দিলামনা। কি বলেন সবাই? এই শাস্তি ঠিক আছেনা!
গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সবাই মহিলার কথায় সায় দিল। আমি চোখের পানি মুছে মহিলার পায়ের কাছে বসলাম।
কোনো অন্যায় করা ছাড়া আজ আমাকে কারো পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতে হচ্ছে, আল্লাহ আপনি কি করতে চান আপনিই ভাল জানেন।
ফারহান আরেকবার ডেকে বলল, মুশায়রা আপনি কোনো অন্যায় না করেও এসব শাস্তি ভোগ করবেন?
কি হত আমার কথাটা মেনে নিলে?
— ফারহান, একজন বিবাহিত মেয়ের কাছে এসব শাস্তি ওই বড় বেচে যাওয়ার উপায় থেকে কম যন্ত্রণাদায়ক।
আপনি আর ব্যাঘাত ঘটাবেননা। আমাকে আমার শাস্তি পেতে দিন।
— আপনি চুপ করে থাকবেন আফরাহ ম্যাম?
— আমার হাতে কিছুই নেই ফারহান। যা হচ্ছে হতে দাও, অন্তত আমার বোন অত বড় অপমান থেকে বেচেছে এটাই অনেক।
আমি মহিলাটার পা জড়িয়ে কাদতে কাদতে বললাম,
— আমাকে ক্ষমা করে দিন। আপনার সাথে যে বেয়াদপি করেছি তার জন্য আমি খুব লজ্জিত। আমার অন্যায়ের জন্য আমি আপনার পায়ে ধরে ক্ষমা চাচ্ছি।
মহিলাটা হেসে হেসে বলল,
— আরো নম্র ভাবে ক্ষমা চাইতে হবে। এতে আমার মন গলছেনা। ক্ষমা চাইতে শিখিস নি নাকি!
ফারহান নাক-মুখ খিচে মহিলাকে কিছু বলতে উদ্ধত হলে আফরাহ আটকে দিয়ে বলল,
— তুমি এখন খারাপ আচরণ করে মুশুর শাস্তিটা দ্বিগুণ করোনা। আমার বোনের সাথে এমনিতে কম খারাপ হচ্ছেনা।
আমি আবার উনার পায়ে ধরতে গেলে পিছন থেকে আমাকে ডাকল, মুশায়রা।
ডাক শুনে পিছনে ফিরে দেখি মেহরাব দাঁড়িয়ে আছে। অবাক হয়ে দেখতে লাগলাম উনাকে। উনি এখানে কেন এসেছেন? মেহরাব এগিয়ে এসে আমাকে মাটি থেকে উঠায়। তারপর উনার হাত দিয়ে আমার চোখের পানি মুছে দিল।
মহিলা নাক-মুখ খিচিয়ে বলল,
— আপনি কে? এখানে নাক গলাতে এসেছেন কেন??
— আমি কে জানার আগে এটা বলুন, আপনারা যে অন্যায় টা করতে যাচ্ছিলেন সেটার জন্য কি শাস্তি আপনাদেরকে দেওয়া উচিত!
— কি বললেন? আমরা অন্যায় করছি!
এত বড় সাহস আপনার? আমরা কোনো অন্যায় করছি না আমরা কেবল ন্যায়বিচার করছি। ওর মত মেয়ে যা করেছে সেটার মাশুল ই দিচ্ছে সে।
— আপনারা ন্যায়বিচার করার কে! কোথাকার শাসক-রাজা আপনারা!
— এই ছেলে, কথা কম বলো। এত জ্ঞান না দিয়ে বলো তুমি কে? কোথা থেকে উড়ে এসেছো! মুশু কি তোমার সাথেও…
— মুখ সামলে কথা বলবেন। নিচে নামা ভাল, কিন্তু এতটা নিচে নামা ভাল নয়।
আমি মুশায়রার আসল স্বামী। আমার নাম মেহরাব, মুশায়রার সাথে আমার ই বিয়ে হয়েছিল।
— মুশায়রার কয়টা স্বামী? এক একেক জন এক একেক বার মুশায়রার স্বামী হিসেবে নিজেকে দাবী করছে।
— আমি ই ওর আসল স্বামী। সেটা মুশায়রা নিজের মুখেই বলবে। মুশায়রা আমার পরিচয়টা দাও।
আমি কোনোরকম কেপে কেপে বললাম,
— উনিই আমার স্বামী মেহরাব। উনার সাথে বিবাহ হয়েছে আমার, আল্লাহর কালাম স্বাক্ষী রেখে উনাকে আমি কবুল বলেছি।
— এবার আপনাদের বিশ্বাস হল তো! আপনারা এখন নিজেদের শাস্তি নিবেন?
— আমরা বিশ্বাস করব কিভাবে যে তোমরা সত্যি বলছো!
— আপনাকে বিশ্বাস করাতে আমরা যাব কেন?
আমি বরং পুলিশকে ফোন দিই। উনারা আসুক আমরা প্রমাণ দেখাই। তারপর যদি আপনাদেরকে মানহানির মামলার আসামী করে হাজতবাস করায় আমাকে কিন্তু দোষারোপ করতে পারবেননা।
এখন আপনাদের প্রমাণ লাগবে!
সবাই মূহুর্তেই চুপ হয়ে গেল। মহিলাটার মুখ শুকিয়ে গেছে ভয়ে, আমতা আমতা করে বলল,
— পুলিশ কেন?
— আপনারাই তো প্রমাণ চাচ্ছেন। আমি তাদের দ্বারা ই আপনাদেরকে প্রমাণ দেখাব। প্রমাণ চাই?
— নাহ প্রমাণ দরকার নেই, আমরা বিশ্বাস করেছি।
সবাই চলো এখান থেকে। মুশায়রার আসল স্বামী ফিরে এসেছে তাই আমি ওকে ক্ষমা করে দিলাম।
— এই যে ফুপুজি। এভাবে পালালে তো হবেনা।
আপনি ওকে যেভাবে হেনস্তা করেছেন, সেটার ফয়দা তো তুলে দিতে হবে নাকি!
এখন সবার সামনে আপনি মুশায়রার কাছে ক্ষমা চাইবেন।
— অসম্ভব।
— চাইবেননা তো?
— কখনোই না।
আমি মেহরাবকে থামানোর চেষ্টা করলে উনি বলেন,
— আমাকে আমার কর্তব্য পালন করতে দাও। উনি তোমাকে এত বড় অপমান করে পার পেয়ে যাবে এটা তো হয়না। উনার কাছে কোনো প্রমাণ আছে যে তুমি খারাপ বা তুমি পালিয়ে গিয়ে খারাপ কাজ করেছো।
সেসব প্রমাণ ছাড়া উনি তোমাকে এত বড় শাস্তি দেওয়ার সাহস কি করে দেখায়! হয়ত উনি এক্ষুনি তোমার কাছে ক্ষমা চাইবেন নয়ত আমি উনাকে হাজতবাস করাব।
ফুপু আম্মা, আপনার কাছে এখন দুটো উপায় আছে। এক্ষুনি মুশায়রার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিবেন নতুবা মিথ্যে অপবাদ দায়ের করে মানহানি করার জন্য হাজতবাস করবেন।
একটা বেছে নিন।
মহিলা কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমার হাত ধরে হাউমাউ করে কাদতে কাদতে বলল,
— আমাকে ক্ষমা করে দে মুশু। এই ছেলেটার অপমানজনক কথা শুনে তোর উপর আমার ভীষণ রাগ উঠেছিল। তাই এসব করে আমি প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলাম।
আমার ভুল হয়ে গেছেরে… আমাকে ক্ষমা করে দে তাও পুলিশের হাতে দিসনা।
— ঠিক আছে ফুপু, ছাড়ো এসব। তোমরা বাড়ি চলে যাও। আমি এসব ভুলে গেছি, তোমাদের উপর কোনো অভিযোগ নেই আমার।
সবাই আস্তে আস্তে বাড়ী থেকে বেরিয়ে চলে গেল।
মেহরাব আমার দিকে তাকাতেই আমি চোখ সরিয়ে বাড়ীর ভেতরে চলে এলাম। বুঝতে পারছিনা উনি এখানে কেন এসেছেন? মেহরাবের এভাবে আমাকে আগলে রাখায় খুব ভালো লাগছিল আমার, কিন্তু ভেতরের চাপা অভিমান টা আবার জেগে উঠেছে।
ঠিক বুঝতেই পআরছিনা উনার সাথে আমার কেমন আচরণ করা উচিত। বোন এসে বলল,
— মুশু, সত্যি করে বল তো!
— উনি তোর স্বামী?
— হুম।
— তার মানে উনি জ্বীন!!!
দেখে একবারের জন্য ও বুঝা যায়না। তোর এত সুন্দর স্বামী থাকতে তুই এখানে পড়ে আছিস। সাদা শার্ট-কালো জিন্সের ফরমাল লুকে আমি তো ভেবেছি উনি মানুষ।
জীবনে ভয়ানক চেহারার জ্বীন ছাড়া এমন জ্বীন দেখলামনা।
সত্যিই উনি জ্বীন তো!
বোনের কথা শুনে আমার হাসি পেল। সারাজীবন জ্বীন নিয়ে স্টাডি করে, তাদের সাথে লড়াই করেও আজ সে জ্বীন দেখে আতঙ্কিত।
— কি ভাবছিস তুই!
— এসব নিয়ে উনার সামনে কিছু বলার দরকার নেই। তুই তো জ্বীন সম্পর্কে আমার থেকে বেশী জানিস তুই না হয় বের করে নিস উনি আসলেই জ্বীন কিনা!
বলে বের হয়ে আসতেই মেহরাব আমাকে টেনে দেয়ালের সাথে ঠেসে ধরে বলল,
— এমন পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছো কেন?
— কই না তো।
— আমার দিকে তাকাও। আমি আসায় তুমি খুশি হওনি।
— জানিনাহ। কেন এসেছেন এখানে??
এমনসময় ফারহান এসে বলল, মুশায়রা আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল মানে, আমার একটা সাহায্য দরকার ছিল, যদি একটু আসতেন।
— জ্বী আসছি। মেহরাব আপনি ফ্রেশ হয়ে একটু বিশ্রাম নিন। পরে আমরা এসব নিয়ে কথা বলব।
আমি ফারহানের পিছু পিছু চলে আসলাম।
— কি বলবেন ফারহান?
— উনি কি সত্যিই আপনার স্বামী হন?
উনাকে দেখে আমার কেমন জানি বোধ হচ্ছে। উনি একটু অন্যরকম।
ফারহানের কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম। ফারহান কি বুঝতে পেরেছে মেহরাব একজন জ্বীন। উনি যদি বুঝতে পেরে যায় সেটা মেহরাবের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাড়াবেন না। এমনিতেই ফারহানের হাবভাব আমার ভাল ঠেকে না।
না ফারহানকে বুঝতে দেওয়া যাবেনা এসব।
একটু কড়া করে কথা শুনিয়ে দেই যাতে উনি আর কখনো মেহরাবকে নিয়ে কিছু বলতে না পারে।
— হ্যা উনি আমার স্বামী। আপনার এত সমস্যা কি সেটাই বুঝতে পারছিনা। দেখুন, যা হওয়ার হয়েছে আমাকে নিয়ে আপনি আর না ভাবলে আমি খুশি হব।
আমার স্বামী যদি এসব বুঝে উনার খারাপ লাগবে। আর দয়া করে আমার স্বামীর ব্যাপারে কিছু বলতে আসবেননা।
তাহলে কিন্তু আমি আপনার সাথে খারাপ বযবহার করতে বাধ্য হব। আসি।
.
(চলবে)