ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল #পর্ব_১৪,১৫

0
370

#ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল
#পর্ব_১৪,১৫
লেখিকা : আফরোজা আক্তার
১৪

সকাল বেলা প্রায় ৯ টায় ইরফানের ঘুম ভাঙে তাও বেলীর ডাকে । বেলী কয়েকবার ডাকে ইরফানকে । ঘুম থেকে উঠে ভ্যাবলার মত বেলীর দিকে তাকিয়ে থাকে ইরফান । কাল রাতের স্বপ্নটা এখন অবদি তার মস্তিষ্কে ঘুরপাক খাচ্ছে । ইরফানকে এমন দেখে বেলী প্রশ্ন করে ,

– কি হইছে ,
-………..
– এই যে , কি হইছে , এইভাবে তাকিয়ে আছেন যে ?
-…………
– এই যে , কি হলো ? উঠেন , নাস্তা বাড়ছি
– তু,,,তুমি যাও , আমি উঠতেছি ।

বেলী ইরফানের কথায় চলে যায় । আর ইরফান খাটে বসে কাল রাতের স্বপ্নটা নিয়ে ভাবতে থাকে । এটা কি স্বপ্ন ছিল , এমন ভয়াবহ স্বপ্ন তাও বেলীকে নিয়ে । এর আগে কখনো দেখে নি ইরফান । প্রায় ১০ মিনিট পর সে বিছানা থেকে নামে । কল পার গিয়ে দেখে বেলী আগে থেকে ইরফানের জন্যে ব্রাশ , পানি , টাওয়াল সব এনে রাখছে । ইরফান শুধু গিয়ে মুখ ধুবে । বেলীর সব কাজ কেন জানি ইরফানের খুব ভালো লাগে । কিন্তু স্বপ্নের কথা আবারও মনে পড়ে যায় তার ৷ তবুও নিজেকে শক্ত রেখেছে সে । হাত মুখ ধুয়ে ঘরে গিয়ে বসে ইরফান । বেলী নাস্তা দিয়ে রাখছে আর নিজেও সেখানে দাঁড়িয়ে আছে । ইরফান নাস্তা খেতে বসেছে ।

– তুমি খেয়েছো ?
– হু
– বাবা কই ?
– বাজারে গেলো দেখলাম ।
– আচ্ছা শুনো সব গুছাও , বিকেল ৪ টার গাড়িতে যাবো আমরা ।
– সব গুছানোই আছে ।
– ওকে , এটা কি রান্না করছো ?
– দই পেতেছিলাম ।
– কখন আমি যে দেখলাম না ?
– রাতেই পেতে রাখছিলাম ।
– ওহ , এত গুন পাও কই ?
– তবুও মন পাওয়ার গুন নাই,,,,,,,,,,

বেলীর কথাটা আস্তে আস্তে বললেও ইরফানের কানে ঠিকই গেছে । ইরফানের কান হচ্ছে হরিণের কানের মত । খাড়া খাড়া কান তাই তো আস্তে কথাও কানে যায় । বেলী সব কিছু গুছিয়ে রেখে রান্নাঘরের দিকে যায় । ওইদিকে কাজের মহিলাটাও চলে আসে । বেলী তার সাথে কথায় লেগে যায় ।

– কেমন আছেন খালা ?
– আলহামদুলিল্লাহ ভালা আছি , তুমি কিরাম আছ ?
– আমিও ভালো , খালা আপনাকে কি বাবা বেতন কম দেয় ?
– না তো ,
– তাহলে খালা ঘরবাড়ি এত নোংরা রাখেন কেন ? আমি কাল এসে দেখি এই অবস্থা । আজকে সকালে বাবার রুমের , ইরফানের রুমের , সামনের রুমের চাদর পর্দা সব ধুয়ে দিছি । মাকরসার বাসা গুলাও পরিষ্কার করেন না । বাবার বয়স হইছে খালা । আপনার ভরসায় তো তার ছেলে তারে এইখানে রাখছে তাই না ?
– আমি তো সব করি-ই ।
– আপনি সব করলে আমাকে সব করতে হইতো না খালা । বয়স্ক মানুষ একটু দেখে শুনে রাখবেন খালা ।
– আইচ্ছা , আর কি কি কাম আছে কও আমি কইরা দিয়া যাই ।
– আজকে আর কোন কাজ নাই , সব কাজ শেষ করে ফেলছি আমি ।
– এত তাড়াতাড়ি ?
– আমি সেই ভোরে থেকে সব কিছু করছি খালা , আমরা আজকে চলে যাবো । আপনি বাবাকে দেখে রাইখেন খালা , আর কাল থেকে আইসেন ।
– আইচ্ছা , তাইলে আমি যাইগা ।
– আচ্ছা , যান ।

জানালা দিয়ে সবটা শুনে নেয় ইরফান । বেলী সব দিক দিয়েই সম্পূর্ণা । কাজে কর্মে , আচার ব্যবহারে । কেন যেনো আগে বেলীকে মনে ধরলো না ইরফানের । এটা ভেবেই ইরফান এখন মাথা ফাটায় । সবাই ঠিকই বলে বেলী আসলেই ফুল । সদ্য কলি থেকে ফোঁটা এক নিষ্পাপ ফুল , এক নিষ্পাপ বেলীফুল ।

দুপুর প্রায় ১২ টা নাগাদ রুবির ফোন । ইরফান তখন পুকুর ঘাটে বসা , রুবির ফোনগুলো সে দেখতে পাচ্ছে কিন্তু আজকে ইচ্ছে করেই ফোন ধরছে না সে । তার ভালো লাগছে না রুবির সাথে কথা বলতে তাই সে ফোন ধরে নি । প্রায় ৭/৮ টা ফোন দেয় রুবি । ইরফান তখন ফেসবুকে ছিল , রুবি ফোন দেয়ার পর ফেসবুক লগ ইন করে ইরফানকে এক্টিভ দেখতে পায় । ঢাকায় বসা রুবির মাথায় আগুন ধরে যায় । উলটাপালটা টেক্সট করতে থাকে ইরফানকে সে ।

– আমি ফোন দিলে তুমি ফোন ধরো না কেন ?
– আমাকে এখন মজা লাগে না তাই না ?
– লাগবে কিভাবে , এখন তো বউ আরেকটা কাছে আছে , তাই না ?
– গ্রামে বসে থেকে কার বাল ফালাও ?
– বেলী এত ভালো কিভাবে হলো , এইনা ওরে দেখতে পারতা না ?
– ওহ বুঝতে পারছি , বিছানায় ভালো ঝড় তুলতে পারে , তাই না ?
– তা কেমন এঞ্জয় করো , ও-কে যখন খাও ?
– তুমি তো দারুণ খেলোয়াড় , এক সাথে দুইটারেই খেতে পারো , ক্ল্যাপ হবে তোমার জন্য ।
– গাছেরও খাও তলার টাও কুড়াও , বাহ ।
– তোমার সেক্স পাওয়ারের তারিফ করতে হয় , ট্রাস্ট মি । দারুণ পাওয়ার তোমার । ওরে প্রেগন্যান্ট করেই ঢাকাতে নিয়ে এসো , কেমন ?

রুবির মুখ থেকে এমন অশ্লীল আর নোংরা ভাষাগুলো আর সহ্য হয় নি ইরফানের । একজন উচ্চ শিক্ষিত মেয়ের মুখ থেকে এইসব নোংরা মানসিকতার অশ্লীল ভাষা কিভাবে আসে এটাই সন্দেহের । ইরফানের শরীর তখন রাগে কাঁপতে থাকে , এই মুহুর্তে যদি রুবি তার সামনে থাকতো তাহলে সে রুবিকে জবাই দিতো । ইরফান সাথে সাথে ফোন দেয় রুবিকে । রুবিও ফোন রিসিভ করে । ইরফান রুবিকে হ্যালো বলারও সুযোগ দেয় নি । ফোন ধরার সাথে সাথে শুরু করে ইরফান ,

– তুই কি মানুষের বাচ্চা ?
– ওই খবরদার ,
– এই চুপ , জানোয়ার মেয়ে , বেয়াদব মেয়ে কাকে কি বলস তুই , কাকে কি বলস ?
– তোকেই বলি , বুঝোস না তুই ?
– ওয়াও , তুই এখন আমাকে তুই তুকারিও করস ?
– করবো না , তুই করস কেন ? আমাকে কি বেলী পাইছস নাকি তুই ?
– ভাগ্যিস , ভাগ্যিস তুই বেলী না । কারণ তুই বেলীর পায়েরও যোগ্য না ।
– খবরদার ইরফান মুখ সামলাও ,
– এই আমার নাম মুখে নিবি না তুই , তুই এইসব কি লিখছিস , তোর মুখ এত নোংরা কেন ? তুই না ইংলিশে গ্রেজুয়েশন করছিস , তোর মুখ এত খারাপ কেন ?
– তো আমি এত খারাপ এখন ?
– আলবাত খারাপ , শুধু খারাপ না তুই স্বার্থপর মহিলা । তুই কেমন মেয়ে হলে কিভাবে নিজের স্বামীর সেক্স পাওয়ার নিয়ে কথা বলিস , ছিহ !
– ও বলাতে এখন খারাপ হয়ে গেছি ?
– এটা কি ভালো কথা ছিল , কসম আল্লাহর তুই আমার সামনে থাকলে এতক্ষনে তুই জবাই হয়ে যাইতি রে । শুকুর আদায় কর তুই ।
– আমার গায়ে হাত তুলে দেখো খালি একবার , হাতটা মুচড়ে ভেঙে দিতে ক মিনিটও লাগবে না আমার ।
– এতেই বোঝা যায় তুই কত ভালো । কেন এখন হাত ভেঙে দিবি কেন , আমি যখন তোর কথায় বেলীকে মারতাম তখন খুব মজা লাগতো তাই না ?
– বড্ড বেশি বেলী বেলী করতেছো ? আমিও দেখবো কয়দিন এই বেলী থাকে ?
– যে মেয়ের মুখ থেকে এত নোংরা ভাষা বের হয় সে আরও জঘন্য হতে পারে । আর হ্যাঁ , রুবি শুন , বেলী বড্ড বেশিই বোকা না হয় এতদিনে আমি আর তুই জেলে থাকতাম । কারণ আমিই সব থেকে বেশি অপরাধী ওর কাছে । আর যেই পাওয়ারের কথা বললি না তুই ? তাহলে শুন আমি এই ইরফান আহমেদ এখন অবদি শুধু তোকেই ছুয়েছে । আর রইলো কথা সেক্সের , ওইটাও তোর সাথেই করছি তুই ব্যাতিত এখন অবদি অন্য কারো সাথে আমার কিছুই হয় নাই না হয়েছে আমার বিবাহিত বউ বেলীর সাথে না হয়েছে অন্য কারো সাথে । তোর মুখ এত খারাপ এত খারাপ যা ভাবতেও অবাক লাগে । আপাতত আমাকে না করবি ফোন আর না করবি ম্যাসেজ , ভালো থাক ।

ইরফান লাইনটা কেটে দেয় । তার প্রচুর পরিমাণ রাগ উঠেছে । তাই যতটুকু পেরেছে আপাতত ফোনে ঝেড়েছে বাকিটা ঢাকাতে গেলে ।

[ বিঃদ্রঃ কথায় আছে শিক্ষাই আদর্শ , কিন্তু বর্তমানে শিক্ষিত মানুষরাই পশুর মত আচরণ করে । একজন মেয়ে তার উপর শিক্ষিত কিন্তু তার মুখ থেকেই বেরিয়ে আসে যত রকমের নোংরা আর অশ্লীল ভাষা তাও নিজের স্বামীর প্রতি । বর্তমান যুগে এইসব কিছু মেয়ে/মহিলা আছে যাদের শিক্ষার অভাব নেই কিন্তু মনুষ্যত্বের বড় বেশি অভাব । কারণ এরা দম্ভের চোটে নিজেদের অনেক বড় কিছু মনে করে । আর এদের সাথে মিলেও তেমন । ইরফানের মত পুরুষরা পরে এইভাবেই ধরা খায় । নিজে বেশি বুঝলে এইরকম হওয়াটাই অনিবার্য ]

ইরফান পুকুর ঘাট থেকে বাড়ির ভেতরে এসে দেখে তার পাশের বাড়ির চাচাতো ফুফাতো বোনেরা সবাই মিলে বেলীকে ধরেছে । বেলীকে খেলতে বলতেছিল সবাই ।

– ভাবী আসো খেলি ?
– কি খেলবো ?
– কিত কিত ,
– নাহ গো , একটু পরে আজান দিবে আর বাবাও চলে আসবে । গোসল করবো , নামাজ পড়বো ,
– আজান দিতে এহনও এক ঘন্টা বাকি ,
– তোমরা খেলো আমি দেখি ,
– আগে তো খেলতা ভাবী , ঢাকা যাইয়া পাল্টাইয়া গেছো ।
– এমন কিছুই না গো ,
– তাইলে খেলো ,
– আচ্ছা তাড়াতাড়ি করো , বাবা আসার আগে । ৯ এর ঘর বানাও
– চারকোণা খেলবা নাকি ক্রস খেলবা ভাবী ?
– চারকোণা টাই বানাও ,
– আইচ্ছা

বেলীর এক ননদ কিত কিতের ঘর বানিয়ে ফেলেছে । ইরফান দূর থেকেই সব দেখছিল । ইরফান আর সামনে এগিয়ে যায় নি । কারণ সে জানতো তাকে দেখলে বেলী আর খেলবে না । তাই সে দূরেই দাঁড়িয়ে আছে আর দেখছে বেলী কিভাবে খেলে ।

– এই শুনো আমি আগে খেলবো কিন্তু ,
– কেন ভাবী ,
– কি কেন , আমিই আগে খেলবো ,
– তাইলে তো আমরা হাইরা যামু , তুমি তো একেবারেই সব শেষ দেও ।
– আউটও হইতে পারি ?
– তুমি আর আউট ,
– আমিই আগে খেলবো , দেও ।

তারপর বেলী গুটি নিয়ে খেলা শুরু করে । এক্কা দোক্কা তিনকা এক এক করে নয় পর্যন্ত খেলে দেয় । বেলী বরাবর এইধরনের গ্রাম্য খেলা ভালো খেলতে পারে । ওড়নাটাকে পেচিয়ে খুচে তারপর খেলে সে । খেলার সময় লাফানোর জন্য চুল গুলো খুলে যায় বেলীর । তখন তাকে একদম গায়ের মেয়ের মত লাগছিল । ইরফান আর এক মুহুর্তের জন্যেও দেরি করে নি । তাড়াতাড়ি মোবাইলটা বের করে বেলীর কয়েকটা ছবি তুলে । মুগ্ধ নয়নে বেলীর ছেলে মানুষী দেখছে ইরফান । এক সময় আজান পড়ে যায় আর তাদের খেলাও শেষ হয়ে যায় । বেলী তাড়াতাড়ি মাথায় কাপড় দিয়ে ঘরে চলে যায় । লাফানোর কারণে পানির পিপাসা পেয়ে যায় তার । তাই পানি খাওয়ার জন্যে ঘরে যায় সে ।
ইরফান তখন ঘরে গিয়ে বেলীর দিকে চেয়ে আছে । দিনের পর দিন এ যেন এক নতুন বেলী তার সামনে ধরা পড়ছে । তার সামনে এই বেলীফুল একদম চুপচাপ শান্ত কিন্তু অন্যদের সাথে এই বেলীফুল একদম অন্যরকম । দুই জায়গায় দুই রকম চরিত্র তার । ইরফানকে চেয়ে থাকতে দেখে বেলী তাকে ডাক দিয়ে উঠে ।

– কিছু বলবেন ?
-…………
– এই যে ,,
– হু ,
– কিছু বলবেন ?
– এক্কা দোক্কা তো ভালোই খেলতে পারো ।

ইরফানের কথায় থতমত খেয়ে যায় বেলী , তার মানে ইরফান তার খেলা দেখে ফেলছে । তাই তাড়াতাড়ি করে সেইখান থেকে উঠে যায় সে ।

– কল পাড়ে আপনার জন্য পানি তুলে দিতেছি আপনি গোসল করতে আসেন ।

এই বলে বেলী উঠে যায় , তখনই ইরফান হাতটা ধরে নেয় বেলীর ।

– এই বেলীফুল সবার সামনে এত প্রাণবন্ত আর চঞ্চলা তাহলে আমার সামনে এত নুয়ে থাকে কেন ?

বেলী কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে তারপর মাথা তুলে ইরফানের দিকে তাকায় । বেলী অত্যন্ত শান্ত নজরে ধীর গলায় বলে উঠে ,

– এই বেলীফুল আগে হেসে উঠতো , আর এখন এই বেলীফুল প্রতিনিয়ত ঝরে যাচ্ছে । ঝরতে ঝরতে এক সময় হয়তো ঝরেই যাবে । কারণ এই বেলীফুল আর সতেজ নেই এই বেলীফুল হলো ঝরে যাওয়া বেলীফুল ।

.
.
চলবে……………….

#ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল
#পর্ব_১৫
লেখিকা : আফরোজা আক্তার

গাড়ি আপন গতিতে ছুটে চলছে । শরীরটা তো সাথে যাচ্ছে কিন্তু মনটা গ্রামে মায়ের কাছে পড়ে আছে বেলীর । মায়ের সাথে শুধু একটা রাতই থাকতে পারলো মেয়েটা । আবার সেই ঢাকা শহরের ইট পাথরের মাঝে থাকতে হবে তাকে । বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত ৮ টা ৯ টা বেজে যাবে । বেলীর চুপচাপ বসে থাকা দেখে ইরফানও কিছু বলেনি । সেও হয়তো বুঝতে পেরেছে বেলীর মন খারাপ । তাই সেও বোবার মত বসে আছে বেলীর পাশে । রাস্তার পাশে গাছপালা আর মানুষজন গুলো ছুটে চলছে গাড়ির সাথে । একটু পরেই মাগরিবের আজান পড়ে গিয়ে সন্ধ্যা নামবে চারপাশে । প্রকৃতি তার দিনের আলো ভুলে গিয়ে গোধূলীর আলোয় নিজেকে মাতাবে আপনভাবে ।
হঠাৎই রাজুর কথা মনে পড়ে যায় বেলীর । রাজু মানুষটা এলো তো এলো এমন সময় এলো যেখানে সব কিছুই হাতের বাহিরে । রাজুকে খুব করে মনে পড়ছে বেলীর । রাজুর সাথে তার দেখা সে যখন ইন্টারে পড়ে । রাজু তখন শহরেই থাকতো , মানুষটা কাছে থেকেও দূরে চলে গেলো । ইরফানের ডাকে রাজুর ধ্যান থেকে বেরিয়ে যায় বেলী ।

– বেলী,,,,,,,,,?
– জ্বি
– কিছু খাবা ?
– নাহ ,
– কিছুই খাবা না ?
– উহু

ইরফান আর জোর করেনি তাকে । বেলী চলাচলের পথে কখনোই কিছু খায় না । ইরফান আবার নিজ থেকেই বলা শুরু করে ,

– মন খারাপ ?
– নাহ
– তাহলে চুপচাপ যে ?
– মায়ের কথা মনে পড়তেছে ।
– আবার যাইও এক সময় ,
– হু , রুবি আপু কি আজকে আসবে ?
– জানি না ,
– ফোন দেয় নাই ?
-…………..
– সে আপনার বউ , মান অভিমান ভুলে যান ।
– আর তুমি ?
– আমি তো আজ আছি কাল নেই । ঝরে যাওয়া ফুল কখনো আপন হয় না ।
– মানে ,,,,,,,,,,?
– কিছু না , আপনারা নিজেদের মান অভিমান মিটিয়ে নিন ।

বেলীর কথা শুনে ইরফান আর কথা বাড়ায় নি । বেলীর সব কিছুই ইদানীং অন্যরকম লাগে তার কাছে । আগের বেলী আর এখনকার বেলীর মাঝে অনেক পরিবর্তন । তবে আগের বেলী চুপচাপ ছিল এখনকার বেলীও চুপচাপ তবে এখনকার বেলী চুপচাপ থেকে এমন কথা বলে যা বুকের এপাশে ঢুকে ওপাশ দিয়ে বেরিয়ে যায় । বেলী আবারও চুপ হয়ে যায় , তাই সেও চুপ হয়ে যায় । নিজেকে ঘৃণিত পুরুষ মনে হয় তার এখন , এই শান্তু মেয়েটাকে সে এতদিন এত মারধর করেছে । অন্যায় তো অনেক করা হলো , এখন না হয় প্রায়শ্চিত্ত করা হোক । এইসব ভাবতে ভাবতে ইরফানের সময় কাটছে । আর অন্যদিকে গাড়ি ছুটে চলছে তার আপন গন্তব্যে ।

রাত প্রায় ৯ টা নাগাদ বাস স্ট্যান্ডে বাস এসে থামে । বেলীকে আস্তে আস্তে ডাকে ইরফান । বেলীর এই এক দোষ জার্নি করতে আসলে তার ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই জার্নি শেষ হয় । গাড়িতে উঠে এক ঘুম দেবে আর সেই এক ঘুমেই গন্তব্যস্থলে এসে সজাগ হয় । এর মাঝে গাড়ি তাকে পাতাল কিংবা স্বর্গে নিয়ে গেলেও সে বলতে পারবে না । ইরফানের ডাকে ঘুম ভেঙে এদিক ওদিক তাকায় বেলী ।

– নামবা না ? নাকি ঘুমাতে থাকবা ?
– ঢাকা চলে আসছি ?
– হুম , নামো । ঘুমালে আর কিছুই খেয়াল থাকে না তোমার ।
– এত ঘুম যে কই থেকে আসে আল্লাহ জানে ।
– নামো তাড়াতাড়ি ,
– হু ,

গাড়ি থেকে নেমে একটা সি এন জি ধরে ইরফান এক টানে বাসায় চলে আসবে বলে ।

– বেলী রাত ৯ টা ৩০ বাজে , এখন গিয়ে রান্না করবা কখন , এখানে কোথাও একটা খেয়ে নিলে ভালো হতো না ?
– বাসায় গিয়ে রান্না করেই খাওয়া যাবে ।
– তা যাবে কিন্তু আমি খুব ক্লান্ত , তোমার খাবার রান্নার আশায় বসে থাকবো না আমি ।
– আচ্ছা আপনি যা ভালো বুঝন ।
– হু

ইরফান ইচ্ছে করেই বলেছে কথা গুলো যাতে বেলী এই ব্যাপারে না করতে না পারে । তার শখ জেগেছে বেলীকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে খাবে আর যা রুবির সামনে কখনোই সম্ভব না । তবে সমস্যা ছিল বেলী এর আগে রেস্টুরেন্টে কখনো যায় নি । তবুও ইরফান চেয়েছে আজ সে যাক । তাই বেলীকে নিয়ে street 11 এ চলে যায় ইরফান । সেখানে লিফট ছিল , ইরফান ভেবেছে বেলী লিফটে চড়তে জানে না । তাই সে সিড়ি দিয়েই উঠতে চেয়েছিল । কিন্তু বেলী ইরফানকে চমকে দিয়ে লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে যায় ।

– এখানে দাড়ালে যে ?
– উপরে যাবেন না ?
– হুম , কিন্তু এটা তো লিফট ?
– জানি আমি এটা লিফট , আমি আরও একবার লিফটে চড়ছিলাম ।
– কোথায় ?
– ঢাকাতেই ফুফুর বাসায় আসছিলাম একদিন বাবার সাথে । ফুফাতো ভাই বোন আমাকে নিয়ে কই জানি গেছিল সেখানে এমন ঘরের মত ছিল । তখন জানছিলাম এটা লিফট । আসেন এটায় করেই যাই উপরে ।

ইরফান বেলীর কথায় বেলীকে নিয়ে লিফটে চড়ে যায় । কয়েক সেকেন্ড পর লিফটের দরজা খুলে যায় । রেস্টুরেন্টটা একদম লিফটের দরজা বরাবরই । ইরফান বেলীকে নিয়ে রেস্টুরেন্টের ভেতরে ঢুকে যায় । পাশেই দুজনের একটা টেবিল রাখা আছে ।

– এখানের খাবার অনেক টেস্ট হয় , খেয়ে দেখো , ভালো লাগবে ।
– ওহ , আচ্ছা ।
– কি খাবা বলো ,
– আপনি যা খাবার আনাবেন তাই-ই খাবো ।
– খাবার আনায় না , অর্ডার করতে হয় ।
– ওহ তাহলে করেন ।
– তো কি খাবা বলবা না তুমি ?
– আমি তো জানি না কি পাওয়া যায় ?
– চাইনিজ খাবার , নাম শুনছো কখনো ?
– হ্যাঁ , শুনছি ।
– ওইটার সেট ম্যানু অর্ডার করি ?
– করেন ।

ইরফান দুটো সেট ম্যানু অর্ডার করে দেয় । বেলী রেস্টুরেন্টে হয়তো আসে নি তবে এইসব চাইনিজ , থাই , বাংলা , নাম জানে । কারণ সে ইন্টারমিডিয়েট অবদি পড়াশোনা তো করেছে । তাই ততটা সমস্যা হয় না ।

– তুমি চামচ দিয়ে খেতে পারবা ?
– চামচ দিয়ে খেতে হয় ?
– হ্যাঁ , চাইনিজ খাবার গুলো চামচ দিয়েই খেতে হয় ।
– ওহ ,
– পারবা খেতে , না হয় হাত দিয়েই খেও ।
– সবাই চামচ দিয়েই তো খায় তাহলে আমিও খাবো , সমস্যা নাই ।
– আচ্ছা ।

বেলী আবারও চুপচাপ হয়ে যায় । কিছুক্ষণ পর ওয়েটার পানি নিয়ে আসে । আর বেলীও পানি খেতে শুরু করে দেয় । ইরফান দেখে বুঝে যায় যে বেলীর হয়তো খুব পিপাসা পেয়েছে ।

– এত পানি খাচ্ছো কেন ?
– তেষ্টা পেয়েছিল ?
– গাড়িতে বললেই পারতা ?
-…………

ইরফানের এই কথার জবাব নেই বেলীর কাছে তাই সে চুপ করে বসে আছে । প্রায় ১৫ মিনিট পর ওয়েটার এসে খাবার দিয়ে যায় । বেলী প্লেটের দিকে তাকিয়ে আছে । একপাশে ভাত এর মত কি যেনো আছে , অন্যপাশে সবজি , এক পাশে মুরগীর বড় একটা টুকরো , আর সাথে ঝোল ঝোল কি যেন আছে । তাকিয়েই আছে প্লেটের দিকে সে । মনে মনে বলতে থাকে ,

– এর থেকে ভালো ছিল ভাত মাছ একটা ভর্তা আর ডাল নিলে । পেট ভরে খাইতে পারতাম ।

বেলীর মনে মনে বলতে থাকা শান্তু চোখের চাহনিতে দেখে ইরফান পুরোটা বুঝিয়ে দেয় বেলীকে ।

– এটার নাম ফ্রাইড রাইস , অনেকটা ভাতের মতই , এটা ভেজিটেবল মানে সবজি , এটা মুরগীর একটা তরকারি এটাকে মাসালা চিকেন বলে আর এইযে বড় পিস টা আছে এটার নাম চিকেন ফ্রাই । চামচ দিয়ে খেতে পারলে খাও না হয় হাত দিয়ে খাও , কোন সমস্যা নাই ।
– হু ,

হু বললেও অনেকটা আন-ইজি ফিল হচ্ছিল তার । পরে দেখলো ইরফান চামচ দিয়ে খাচ্ছে । তাই বেলীও কাঁপা কাঁপা হাতে একটা চামচ তুলে নেয় । তারপর ইরফানকে অনুসরণ করে খাওয়া শুরু করে । এক চামচ মুখে দেয়ার পর বেশ ভালো স্বাদ পায় বেলী । খুব মজার ছিল খাবার টা । তাই ইরফানকে দেখে দেখে সবটা খাবার শেষ করে বেলী । ফ্রাই টা হাত দিয়েই খায় সে । তার পক্ষে চামচ দিয়ে খাওয়া সম্ভব না । খেয়ে হাতটা টিস্যু দিয়ে মুছে নেয় সে । ইরফানই বলেছিল মুছতে তাই সেও মুছে নেয় । হাত মুছার পর ইরফান বেলীকে কোক এর গ্লাসটা এগিয়ে দেয় । বেলীও একটু একটু করে কোক খায় । এর ফাঁকে ওয়েটার এসে বিল দিয়ে যায় । বেলী দেখলো ইরফান ১০০০ টাকার একটা নোট বের করে বিল বইয়ের ভেতরে দিয়ে ওয়েটারকে ডাক দেয় ।

– এক্সকিউজ মি,,,,,,,
– ইয়েস স্যার ,
– এখানে বিল দেয়া আছে উইথ টিপস ।
– থ্যাংকস স্যার ।
– হু ,

ওয়েটার বিল নিয়ে চলে যায় । বেলী অনেকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে । তার ভাবতে কষ্ট হচ্ছে যে দুইজন মানুষ খেলো আর তার বিল ১০০০ টাকা কিভাবে হয় । অথচ বেলী তো জানে না এইসব খাবারের দাম এমনই । ওইদিকে ইরফান তাড়া দিচ্ছে তাকে ।

– তাড়াতাড়ি কোক টা শেষ করো , সাড়ে ১০ টা বাজে অলরেডি ।
– তাহলে আর খাবো না ।
– কেন ?
– আর খাবো না ।
– আচ্ছা তাহলে উঠো ।
– জ্বি ,

ইরফান টেবিল ছেড়ে উঠতে উঠতে একটা কথা ভাবছিল যে , বেলী নিজেকে সব জায়গায় খাপ খাওয়াতে না পারলেও অন্যদের ছোট করে না বা নিজেও ছোট হয় না । মেয়েটার বুদ্ধি আছে ।
অন্যদিকে বেলী টেবিল থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পিছনে ঘুরতেই একজনকে দেখতে পায় । সেই একজনকে দেখে বেলীর পায়ের তলার থেকে মাটি সরে যায় । ভদ্রলোক ওইপাশের একটা টেবিলে বসা আছেন৷ প্রায় ৪ জনের মত সাথে । প্রায় এক বছর পর বেলী আজ তাকে দেখতে পেলো । কলিজাটা মুহুর্তের মধ্যেই মুচড়ে উঠেছে বেলীর । এটা কেমন পরিস্থিতি , বেলী যে এখানে এইভাবে তাকে দেখবে
তা সে একবারের জন্যে ভাবে নি । মুখ থেকে আচমকাই বের হয় যায় ,

– রাজু ভাই,,,,,,,,,,,,?

ভাগ্যটা ভালো মুখ দিয়ে আওয়াজ টা আস্তে বের হয়েছে । তাড়াতাড়ি মুখ টা সরিয়ে নিয়ে সে । একটু আগেই যাকে কল্পনা করলো যার কথা মনে করে চোখের কোণায় পানি এলো সেই মানুষটাই এখন তার চোখের সামনে । হ্যাঁ ওই টেবিলে রাজু বসা আছে । বেলী কোন রকম তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসে সেখান থেকে । বেলী চায় নি রাজু তাকে দেখে ফেলুক । তাই সে সেখান থেকে সরে যায় ।

[ বিঃদ্রঃ পৃথিবীটা গোল , এখানে কারো সাথে কখনো না কখনো একবার না একবার দেখা হয়েই যায় । হোক সে শত্রু কিংবা হোক সে বন্ধু অথবা হোক সে একবার চোখের দেখা কোন একজন । পৃথিবীতে এমন অনেক সময় হয়ে যায় যেখানে যাদের সাথে দেখা না হওয়ার দোয়াটা কখনোই পূরণ হয় না । একবার না একবার দেখা হয়েই যায় । এটাই পৃথিবীর নিয়ম । আর এখানে রাজুর সাথে দেখা হওয়াটাও ঠিক ওইরকমই একটা ঘটনা মাত্র , যদিও রাজু বেলীকে এখনও দেখেনি । দেখলে হয়তো সেখানে ঘটনাটা অন্য রকম হতো , এইবার আসি রেস্টুরেন্টের বিষয়ে৷, আমাদের সমাজে এমন অনেকেই আছেন এখন অবদি রেস্টুরেন্টে যান নি । নিম্ন মধ্যবিত্তদের মাঝে যাদের অবস্থান তারা তো একেবারেই যান না । আর যারা যান তারা অনেক সময় নিজেকে সেখানে খাপ খাওয়াতে পারেন না বলে নিজের কাছেই নিজে লজ্জাবোধ করেন , কিন্তু না এখানে লজ্জার কিছু নেই । জরুরী নয় যে আপনাকে সব টা শিখতে হবে , আপনি যেমন আছেন তেমন টাই থাকার চেষ্টা করবেন । আপনি হাত দিয়ে খেতে অভ্যস্ত তাহলে অন্যের জন্যে অভ্যাস কেন পরিবর্তন করবেন । আপনি হাত দিয়েই খাবেন কারণ সব থেকে বড় কথা আপনি বাঙালি । বাঙালিয়ানায় নিজেকে রাখা ভালো , মাছে ভাতে বাঙালি যেমন হয় তেমন হাত দিয়ে খাওয়াই বাঙালির এক ঐতিহ্য ]

ইরফান আর বেলীর বাসায় আসতে আসতে রাত প্রায় ১১ টা বেজে যায় । বেলী সেই তখন থেকেই দম ধরে আছে । এইভাবে হঠাৎ রাজুকে দেখতে পাবে ভাবে নি সে । সে বাসায় এসেও একদম চুপচাপ হয়েছিল । ইরফান নিজের রুমে চলে যায় । বেলী কোন রকম তাড়াতাড়ি বোরখাটা খুলে পুরো বাসা ঝাড়ু দিয়ে ফেলে । ইরফানের রুমে এসে দেখে ইরফান ওয়াসরুমে । ইরফান তখন গোসল করছিল । বেলী তাড়াতাড়ি ইরফানের রুমের সব ঝেড়ে মুছে পরিষ্কার করে দেয় । তিন দিন পুরো বাসা বন্ধ থাকাতে হালকা ভাবসা গন্ধ হয়ে গেছে তাই বেলী পুরো বাসায় স্প্রে করে দেয় । এইসব কাজ করতে বেলী সময় নেয় ২০/২৫ মিনিট । বেলী কাজ খুব দ্রুত করতে পারে । ওইদিকে ইরফান গোসল করে বের হয়ে এসে দেখে তার রুম পুরো ফিটফাট । তার বুঝতে এক সেকেন্ডও লাগে নি এইসব বেলী করে গেছে । ইরফানের নিজেকে কেন জানি বেলীর আশেপাশে রাখতে ইদানীং খুব ভালো লাগে । বেলীকে কাছে পেতেও খুব ইচ্ছা করে কিন্তু স্বপ্নটা এখনও মাথায় জেকে বসে আছে । ইরফান টাওয়াল টা বিছানার উপর রেখে বেলীর রুমের দিকে যায় । আর বেলী সব কাজ শেষ করে ওয়াসরুমে ঢুকে যায় গোসলের জন্যে । ইরফানের টাইমিংটা বিফলে যায় । ইরফান রুমে আসার এক মিনিট আগেই বেলী ওয়াসরুমে ঢুকে যায় । ইরফান এসে পুরো রুম খালি দেখে ওয়াসরুমের দরজার দিকে তাকায় । বুঝতে পারে বেলী ওয়াসরুমে গোসল করতেছে । তাই সেও বসে পড়ে বিছানায় । আজ যদি ভেজা শরীরে বেলীকে একবার দেখা যায় ক্ষতি কি ? ইরফান বেলীর রুমের আশপাশ টা ভালো মত খেয়াল করে । বেলী তার এই বাসায় বিগত ৭ মাস যাবত আছে কিন্তু ইরফান একদিনের জন্যেও খোঁজ খবর নেয় নি বেলী কেমন আছে কিংবা বেলীর কিছু লাগবে কিনা । যা চাওয়ার তাও চাইতো বহু কষ্টে । বেলীর রুমে তেমন কিছুই নেই একটা খাট , তাতে স্বস্তা একটা তোশক আর দুইটা বালিশ , একপাশে একটা আলনা রাখা । আলনাটা এই বাসাতেই রাখা ছিল , আগের ভাড়াটিয়াদের ছিল , সে বেলীর জন্যে কিছুই আনে নি কখনো , এ নিয়ে বেলীরও কোন অভিযোগ ছিল না । এইখানেই বেলীর দোষ , বেলী নিজের জন্য কখনো কিছু দাবী করে না , আর ইরফানের কাছে তো কখনোই না ।

প্রায় ১৫ মিনিট পর বেলী ওয়াসরুম থেকে বের হয় । বের হয়ে খাটে ইরফানকে বসা দেখে অনেকটাই অবাক সে । রাত ১২ টা বেজে গেছে । অথচ ইরফান এখনও ঘুমায় নি কাল তো তার অফিস । অন্যদিকে ইরফান বেলীর দিকে তাকিয়ে আছে , গোসল করে বেলীকে একদম স্নিগ্ধ আর পবিত্র মনে হচ্ছে । এক দৃষ্টিতে এইভাবে ইরফানের তাকিয়ে থাকাটা বেলীকে ভেতর থেকে গ্রাস করে দিচ্ছিল । তাই ইরফানের সামনে থেকে সরে যায় বেলী । আলনার কাছে এসে কাপড় গুছাতে গুছাতে কথা বলা শুরু করে বেলী ,

– ঘুমান নাই এখনও , কাল না অফিস আপনার ?
– হু ,
– তাহলে ঘুমিয়ে পড়েন ।
– কেন তোমার সমস্যা হচ্ছে নাকি ?
– উহু ,

ইরফান উঠে বেলীর কাছে যায় । দুই হাত দিয়ে বেলীর কাধে হাত রাখে সে । ইরফানের এইভাবে স্পর্শ করায় কেঁপে ওঠে বেলী ।

– অন্যায়ের পাল্লা টা কি খুব বেশিই ভারী বেলী ?
-……………….
– কি হলো বলো ?
– আমরা তো এখন ঢাকাতে , আপনি তুই করেই বলেন

ইরফানের মেজাজটা সাথে সাথে বিগড়ে যায় । সাথে সাথে সে বেলীকে ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে দেয় । বেলীও হালকা স্মিত হেসে তাকায় ইরফানের দিকে ।

– বলেছিলাম না আবেগ দিয়ে সব চলে না , দেখলেন তো । মুহুর্তেই আমার জন্যে নিজের মনে কিভাবে ঘৃণার জন্ম হয় । কাল হয়তো রুবি আপু আসলে এই ধাক্কাটাই লাথিতে রুপ নিবে । আমি নিজেকে মানিয়ে নিছি । আপনি যান ঘুমিয়ে পড়েন ।

চোখে পানি আর ঠোঁটে হালকা হাসি রেখে ইরফানের দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলে দেয় বেলী । ওই মুহুর্তে বেলীকে দেখে ইরফানের ভেতরটা ফেটে যাচ্ছিলো । বেলীকে তখন একদম অন্য রকম লাগছিল । মনে হচ্ছিলো আল্লাহ পাক যেন তাকে নিজ হাতে গড়ে ইরফানের সামনে দাড় করিয়ে দিয়েছে । ইরফান সোজা রুম থেকে বেরিয়ে যায় । আর নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেয় , সেই দরজাতেই নিজের হাত দিয়ে এক ঘুষি মারে , বেলীকে এই হাত দিয়েই ধাক্কা মারলো আবার সে । কেন যে রাগটা বশে থাকে না তার । অন্যদিকে বালিশে মুখ চেপে কাঁদে বেলী । একে তো এই পরিস্থিতি তার উপর আজকে এতদিন পর রাজুকে দেখা , আর এখন আবার ইরফান । সব মিলিয়ে বেলী পাগল প্রায় ।

– বাবা দেখতেছো তো তোমার বেলীফুলের কত কষ্ট এখানে । ও বাবা , বাবা আমায় নিয়ে যাবা তোমার কাছে ? তুমি আর তোমার বেলীফুল একসাথে থাকবে বাবা । আর পারি না বাবা , আর পারি না । বেলীফুলের শান্তি নাই বাবা , বেলীফুলের শান্তি নাই ।

এইভাবেই কাঁদছি আর বিলাপ করছে বেলী । তারপর একে টা সময় ঘুমিয়ে যায় বেলী । এই ঘুমটাই এখন তার সঙ্গী । ঘুমে থাকলেই সে সব ভুলে থাকে । তাই হয়তো একেবারেই ঘুমাতে চায় সে ।

.
.

চলবে……………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here