#ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল
#পর্ব_২৩
লেখিকা : আফরোজা আক্তার
আজ ইরফান সন্ধ্যার পর পরই বাসায় চলে আসছে । এসেই তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নেয় । আজ আর কফির কথা বলেনি সে , তবুও বেলী নিজ থেকেই কফি করে আনে । বেলীর হাতে কফি দেখে ইরফান বেশ অবাক হয় ।
– আমি তো কফি চাই নাই ,
– আমিই বানালাম ,
– ওহ ,
– আজ এত তাড়াতাড়ি চলে আসলেন , শরীর খারাপ নাকি ?
– নাহ , একটু কাজ আছে , তাই ।
– ওহ ,
– কয়েকজন লোক আসবে একটু পর ।
– কে , রান্না করা লাগবে নাকি ?
– নাহ নাহ , তেমন কিছু না , তুমি এই রুমেই থাকো ।
– নাহ , এখানে না আমি আমার রুমেই যাই ,
– ওই রুমেই কাজ আছে , এক কাজ করো গেস্ট রুমে চলে যাও ,
– আচ্ছা ।
বেলী সাধারণত বাহিরের লোকদের সামনে যায় না । এইসব ব্যাপারে সে একটু সচেতন । যার তার সামনে যেতে অনিচ্ছা তার । তাই ইরফানও জোর করে না । কিছুক্ষণ পরই দরজায় কলিংবেল পড়ে , আর বেলীও তাড়াতাড়ি ভেতরে চলে যায় । ইরফান নিজেই গিয়ে দরজা খুলে ।
আসলে আসার সময় ইরফান ফার্নিচার এর দোকান থেকে কিছু ফার্নিচার কিনে রেখেছিল , তারাই এসেছে সেট করার জন্যে । বেলীর রুমটা বরাবরই খালি ছিল । বেলীর জন্যে ইরফান তেমন ভাবে কিছুই করেনি কখনো । তাই আজ সব কিনে এনেছে । লোকদের সাথে ইরফানও সাহায্য করেছে সাথে মিনুও ছিল । ইরফান মিনুর অনেক কাছের মানুষ এখন । একদম নিজের বোনের মতই কথা বলে মিনুর সাথে সে । মিনুও যথেষ্ট সম্মান দেয় তবে বকাঝকা করে ইরফানের আড়ালে । প্রায় ঘন্টাখানেক বাদে লোকজন চলে যায় । মিনু তখন ইরফানকে বলে ,
– ভাই এক্কেরে ভালা কাম করছেন । এহন ঘরডা পুরা পুরা লাগে ।
– সুন্দর হয়েছে ?
– হ হ অনেক ফছন্দ হইছে আমার ।
– বেলীর হবে কিনা জানি না ?
– হেতির কি-ই বা বালা লাগে , হেতির আবার ফছন্দ ।
– কেন , কি হয়েছে ?
– আইজ্জাও কতক্ষন ছোড ভাবীর লাই আফসোস করছে , আমি বুঝি না সতীনের লাই এত কইলজা পুড়ে কিত্তে সেতির । ওইডা তো একছার বদমাইশ মাতারি , ওইডার লাই অন্তর পুড়াইয়া লাভ আছে কোন ?
মিনুর মুখে আসলেই লাগাম নেই কার সামনে দাঁড়িয়ে কি যে বলে তার ঠিক নেই । ইরফান মিনুর মুখের দিকে চেয়েই আছে , আর অথচ মিনু বলেই যাচ্ছে তো বলেই যাচ্ছে ।
– খবিশ মাতারি একডা , শয়তাইন্না বেডি । এক ওয়াক্ত নামাজ কালাম তো পড়েই না , শয়তানের মত চলাফেরা করে এইডার লাই কিসের মায়া মহব্বত , উষ্টা ১০০ টা মারলে কি অয় এইডারে ।।
মিনুর কথা গুলো চুপচাপ শুনার পর ইরফান গলা ঝাড়া দেয় ।
– উহুম উহুম , মিনু ?
– জ্বে ভাই ,
– আমি তো তোর সামনে দাঁড়িয়ে আছি , তুই কার সামনে দাঁড়িয়ে কি সব বলিস ।
এই এতক্ষণে মিনুর হুশ আসে সে কার সামনে কি বলতেছিল । পিছন দিকে ফিরে জিহবায় কামড় দিয়ে নিজেকে ১০০ গালাগাল দেয় সে । পরে চুপ করে থাকে ।
ইরফানও বুঝতে পারে যে রুবিকে মিনুর একদম পছন্দ না । তাই আবারও মিনুকে ডেকে বলে ,
– রুবিকে যেহেতু তোর এত অপছন্দ তাহলে তো তুই আমাকেও দেখতে পারিস না , তাই না ?
– হ ভাই হ , আপনেও খবিশ কম আছিলেন না , এহন কেমতে কেমতে ভালা হইছেন আল্লাহ পাকই জানে । আপনে আমার বেলী ভাবীরে কম ফিডান নাই , আপনেও ওই শয়তানের লগে থাইকা শয়তান হয়ে গেছিলেন ।
ইরফান চোখ বড় বড় করে মিনুর দিকে তাকিয়ে আছে । মিনু সত্যিটাই বলেছে আর তা সবার সামনই । কিন্তু বেচারি এক্সাইটমেন্টে সব গুলিয়ে ফেলছে । তাই ইরফানের সামনে ইরফানকেই যা তা বলে দিছে ।
ইরফান মিনুর কথা কানে নেয় নি । পরে কথা ঘুরিয়ে দিয়েছে । এছাড়া আর কম করার । তার বিরুদ্ধে মিনুর বলা কথা গুলো তেতো হলেও সত্যিই ছিল । যার জন্যে সে আর বেশি কিছু বলেনি ।
– মিনু বেলীকে পাঠিয়ে দে , যাহ
– আইচ্ছা ভাই ,
কিছুক্ষণ পর বেলী নিজের রুমে আসে । সে নিজের রুমকে চিনতেই যেন পারে না । ওই রুম থেকে বোঝা যাচ্ছিলো যে বাসায় কিছু একটা আনা হয়েছে । কিন্তু লোক থাকায় দেখতে পারেনি সে । এখন বুঝতে পারছে যে এইসব আনা হয়েছে । হা করে তাকিয়ে নিজের রুম দেখছিল বেলী । বেশ খানিকটা সিম্পল এর মাঝে অনেক সুন্দর একটা খাট সাথে অন্যান্য ফার্নিচার তার রুমে । এরপর ইরফানের দিকে তাকায় বেলী ।
– এত কিছু কিসের জন্যে ?
– আমার বউয়ের জন্যে , কেন কোন সমস্যা ?
ইরফানের মুখ থেকে বউ শব্দটা বেলীর বুকের ঠিক মাঝে গিয়ে লাগে । বউ ডাকটা এত সুন্দর লাগলো শুনতে যে বার বার শুনতে মন চাইছিল বেলীর । কিন্তু নিজেকে দমিয়ে রেখে আবার বলা শুরু করে সে ,
– এত টাকা খরচ করার কি দরকার ছিল , এই রুমে যা ছিল তাতেই হতো আমার ।
– হ্যাঁ , কত হতো বুঝা গেছে৷, একটা খাট আর একটা আলনায় অনেক কিছুই হয় ।
– এত দামী জিনিস দিয়ে কি করবো যদি মানুষটাই আমার না হয় ??
কথাটা আচমকাই বেলীর মুখ থেকে বেরিয়ে যায় । যা ইরফানও শুনে নেয় , তখন হালকা হাসি দিয়ে বেলীর সামনে এসে দাঁড়ায় । বেলীর বাম গালে নিজের ডান হাতের আলতো পরশ দিয়ে বলে ,
– মানুষটা তোমার কাছেই কাছে । খুজে দেখতে হবে শুধু ।
ইরফানের হাতের ছোয়াটা বড্ড বেশি আদরের ছিল । মায়া ভরা দু’নয়নে তাকিয়ে আছে বেলী ইরফানের দিকে ।
– এইভাবে দেখো না , প্রেমে পড়ে যাবে তো ?
ইরফানের এমন কথায় লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয় বেলী । তখন ইরফান তার এক জোড়া হাত বেলীর ঘাড়ের পেছনে নিয়ে নেয় । বেলীকে আরেকটু কাছে নিয়ে আসে সে ।
– এইভাবে চোখ সরালে আমার বুকের ভেতরটা কিন্তু বেলীফুলকে আরও কাছে চাইবে , তখন আমি কি করবো ? আমায় থামাবে কে তখন , হু ?
বেলী আর সেখানে থাকতে পারে নি , ইরফানের কাছ থেকে ছুটে দৌড়ে বাহিরের রুমে চলে যায় সে । আর ইরফান সেখানেই দাড়িয়েই থাকে । একটা জিনিস হঠাৎ তার মাইন্ডে আসে । কিছুর একটা স্মেল নাকে আসছে তার । অনেক গাঢ় একটা স্মেল । পরক্ষনেই ইরফান নিজের হাত দুটো তার নাকের কাছে নেয় । হ্যাঁ , ইরফানের হাত থেকেই আসছে স্মেলটা । কিন্তু এতক্ষন তো এই স্মেলটা ছিলোই না হঠাৎ কিভাবে এলো ? ভাবতে ভাবতে মাথায় আসে সে শুধু বেলীর কাধেই তার দু’হাত রেখেছে । তাহলে কি স্মেলটা বেলীর শরীর থেকেই এসেছে ?
নিজের রুমে যায় ইরফান । সোফায় বসে কিছুক্ষণ চিন্তা করে সে । বেলীর কাছে যাওয়ার পর থেকে কেমন জানি লাগছে তার । এ যেন এক অন্য রকম অনুভূতি । রুবির কাছে বহুবার গিয়েছে সে , কিন্তু এমন অনুভূতি তার হয়নি । এ যেন অন্য রকম ভালো লাগা তার । বেলী যেন তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে । ভালোবাসার এ যেন এক নতুন অধ্যায় । যা ইরফানকে আঁকড়ে ধরেছে শক্ত করে । ইরফানের মনটা বড্ড বেশি বিচলিত । বার বার বেলীর দিকে ধাবিত হচ্ছে । রুবির সাথে তার সম্পর্ক স্বামী স্ত্রী হলেও কোথাও যেন এক অসম্পূর্ণতা ছিল । আর যেই বেলীকে সে এত অবহেলা এত অবজ্ঞা করতো সেই বেলীর মাঝেই সে সম্পূর্ণতা খুজে পায় । যদিও দূরত্ব অনেক তাদের মাঝে ।
ভাবনার মাঝেই মিনুর ডাক ,
– ভাই তাত্তারি খাইতেন আইয়েন , কতক্ষন বইয়া থাকুম ?
– আসতেছি যা তুই ।
মিনু খুব চঞ্চল । সব কিছুতেই তার তাড়াহুড়ো । সে যেন তাড়াহুড়ো না করলে কিছুই পারে না । ইরফান ঘড়িতে চেয়ে দেখে প্রায় সাড়ে ১০ টা বাজতে চললো , হয়তো বেলী সব কিছু সার্ভ করেই মিনুকে পাঠিয়েছে । ইরফান আর দেরি না করে ডাইনিংয়ে চলে যায় ।
বেশ কয়েকদিন পর ইরফান বেলী এক টেবিলে আবার । মিনু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাতের প্লেটে হাত দেয় । এইদিকে বেলী তাকে ইশারায় বার বার বসতে বলছিল কিন্তু মিনুর সেইদিকে খেয়াল নেই । অথচ ইরফান দাঁড়িয়ে খাওয়া পছন্দ করে না । তারপর সুযোগ বুঝে বেলী মিনুকে নাড়া দিয়ে ইশারায় বসে খেতে বলে । বেলীর ইশারায় মিনুও নিচে বসে যায় ভাতের প্লেট নিয়ে । যা এইবার ইরফানের চোখে লাগে ।
– মিনু,,,,,,,,,,,?
– জ্বে ভাই ,
– ভাই ডাকিস আবার ভাইয়েরই বাদায় নিচে বসে খাচ্ছিস ?
– বুঝবার পারলাম না ভাই
– টেবিলে আয় , টেবিলে বসে খা ।
– আমি কামের মানুষ , আমি টেবিলে কেমনে খাইতাম ।
– কাজের মেয়ে শুধু বেলীর সাথে বসেই খেতে পারে আমার সাথে পারে না তাই না ?
এইবার বেলী বুঝতে পারে যে ইরফান কোন ভাবে বুঝতে পেরেছে যে মিনু বেলীর সাথে বসে খেয়েছিল । সেটার কথাই এখানে তুলে দিয়েছে । পরে ইরফান আবারও বলে ,
– নাকি তুই-ও তোর বেলী ভাবীর মত আমায় খারাপ ভাবিস , যে আমার সাথে এক টেবিলে বসে খাওয়া যায় না , কোনটা রে ?
ইরফানের এমন কথায় বেলী আরও চুপ হয়ে যায় সাথে মিনুও । তাই মিনুও তাড়াতাড়ি উঠে এসে টেবিলে বসে যায় ওদের সাথে । এমনিতেই আজকে অনেক ভালো মন্দ বলে ফেলেছে সে ইরফানকে । এখানে অন্য কেউ হলে সোজা বের করে দিতো বাসা থেকে । তবে যেখানে ইরফান দোষী তাই সে চুপ করে যায় । খাওয়ার টেবিলে কেউ আর কোন কথা-ই বলে নি । বেলীও একদম অল্প কিছু খাবার খেয়ে উঠে যায় । ইরফান চলে যাওয়ার পর মিনু বেলীর কাছে আসে ।
– ভাবী ,,,,, ও ভাবী !!
– হু ,
– ভাইয়ের জানি কি হইছে ?
– কি ?
– এইযে , কেমন জানি চুপচাপ হইয়া গেছে , কথাও কম কয় । তয় ভাবী আমি একটা কাম কইরা ফালাইছি ।
– কি করলা আবার ?
– খুশির ঠ্যালায় রুবি শয়তানির নামে বদনাম করতাম গিয়া ভাইয়ের নামেও কইয়া ফালাইছি তাও ভাইয়েরই সামনে ।
– হায়রে মিনু তোমায় কত বার বললে তুমি ঠিক মত কাজ করবে ?
– কিচ্চি আমি ,
– কি দরকার অন্যের সমালোচনা করা , যে আমাদের সামনেই নেই তাকে নিয়ে সমালোচনা করা গীবত গাওয়া এক মিনু , এইসব আর করো না ।
– আইচ্ছা ।
– যাও শুয়ে পড়ো ,
– হুমু ডা কই ?
– কোথায় শুবে মানে ?
– মেহমান রুমে হুইতাম ?
– আমি নিজেও জানি না ।
– আপনের লাই ভাইয়ে কত কিছু আনছে । আপনেরে এহন ভাইয়ে অনেক ভালাবাসে গো ভাবী ।
– জানি না মিনু , আমার কপালে তো আবার বেশি সুখ সয় না ।
– সইবে ভাবী সইবে , ভাইয়ে জানি কেমনেই আপনের দিকে চায় । আপনের এই ভালা ব্যবহার খানা-ই ভাইয়েরে পাল্টাইয়া দিছে ভাবী ।
-……………
– আল্লাহ পাক কইছে ধৈর্য ধরতে , আপনেও ধরছেন , ফলও পাইতাছেন ভাবী । আমি দোয়া করি আপনি যেন এইভাবেই ভালা থাকেন ভাবী ।
– গেষ্ট রুমেই ঘুমাও তুমি , কেমন ?
– আইচ্ছা ,
মিনুকে গেষ্ট রুমে শুতে বলার হয়তো কারণ ছিল । সে জানতো হয়তো ইরফান আসবে । কারণ ইরফান জানে বেলী ওই রুমে যাবে না । তাই ইরফান নিজেই বেলীর রুমে আসে । হয়তো আজকেও আসবে । এইসব ভেবেই মিনুকে সেখানে শুতে বলেছে বেলী ।
সব কাজ শেষ করে নিজের রুমে যায় বেলী । দরজাটা পুরো না লাগিয়ে আলগা করে রাখে সে । রুমের ফার্নিচার গুলো দেখছে সে । যেই রুমটা আজ সকালেও খালি ছিল সেই রুমটা এখন ভরাট করে দেয়া হয়েছে । বার বার ইরফানের কথা মনে হচ্ছিল বেলীর । ইরফান কেন তাকে এত মায়ায় ফেলে দিচ্ছে । সে যে এমনিতেই ইরফানের প্রতি দুর্বল । ইরফান এমন করে তাকে আরও দুর্বল করে দিচ্ছে ।
– মানুষটার মনের মধ্যে যে কি চলে তা কেবল মানুষটাই জানে । আমায় এইভাবে মায়ায় কেন যে জড়াচ্ছে সে-ই ভালো জানে ।
বেলীর একা একা কথা বলাটা ইদানীং অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে । যখন একা থাকে তখনই একা একা কথা বলে তাও শুধু ইরফানকে নিয়ে ।
– মানুষটার মনের মধ্যে একজনের চলাচল চলে । আর মানুষটা তোমাকে মায়ায় জড়ায় নাই তুমিই মানুষটাকে জড়িয়ে নিয়েছো তোমায় মায়ার মাঝে ।
ইরফানের কন্ঠস্বর শুনে বেলী পিছনে তাকায় । ইরফান সেদিনের মত আবারও রুমে দাঁড়িয়ে আছে । আর আজও বেলীর কথা গুলো শুনে নেয় । বেলীর দিকে হা করে তাকিয়ে থাকা ইরফানকে দেখে বেলীর ভিষণ লজ্জা লাগছিল । বেলীর মন তখন একটা কথাই বলছে ,
– এমন টা কেন হয় , যখন আমি একা কথা বলি আর উনিই এসে শুনে নেয় । আমি আর কখনও একা একা কিছু বলবো না ।
ইরফান তখন বেলীর সামনে গিয়ে দাঁড়ায় । বেলীর হাত ধরে বেলীকে বিছানায় বসায় সে । তাকিয়ে আছে বেলীর দিকে এক দৃষ্টিতে । বেলীও চুপচাপ , তেমন কিছুই বলে নি সে । তখন ইরফানই বেলীর বাম হাত টা ধরে নেয় ।
– বেলী,,,,,,,,?
– আর কিছু চাই তোমার ?
– উহু ,
– কিছুই চাই না ?
– উহু ,
– আমাকেও চাই না তোমার ?
ইরফানের মুখ থেকে ঠান্ডা আমেজে বেরিয়ে যাওয়া কথাটা বেলীর ভেতরটাকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দেয় । মাথা তুলে ইরফানের দিকে তাকায় সে । মন অনেক জোরে জোরে বলছে তাকে ,
– বেলী বলে দেও , হ্যাঁ আমার তোমাকে চাই ।
বেলীর মুখ থেকে যেনো কথা আসে না । গলা অবদি কথা এসে আটকে আছে তার । সে কি বলবে কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না । অন্যদিকে বেলীর নিরবতাতে ইরফান তার দোষের প্রমাণ খুজে পায় । ইরফান বেলীকে ঘুমিয়ে পড়ো বলে উঠে চলে যেতে নিলে বেলী ডেকে দেয় তাকে ,
– শুনেন ,,,,,,,?
বেলীর মুখের শুনেন শব্দটা ইরফানকে আটকে দেয় ।
– হ্যাঁ বলো ,
বেলী তখন মাথা নিচু করেই বলে ,
– আমার দুইটা জিনিস চাই ।
– কি জিনিস বলো ?
– একটা সাদা শাড়ি আর একটা ফুলের মালা , মালাটা হতে হবে বেলীফুলের । সেই মালাটা খোঁপায় দিবো
বেলীর চাওয়া জিনিসগুলো অনেকটা স্বস্তা মনে হচ্ছিল । কারণ একটা সাদা শাড়ি সর্বোচ্চ হাজার টাকা , আর মালাটার দাম সর্বোচ্চ ৫০ কি ১০০ টাকা । বেলীর চাওয়া জিনিস গুলোর নাম শুনে অবাক নয়নে বেলীর দিকে তাকিয়ে থাকে ইরফান ।
– সাদা শাড়িই লাগবে ?
– হ্যাঁ , সাদা রঙটা অনেক ভালো লাগে ।
– তাই ?
বেলী উঠে গিয়ে জানালার পাশে দাঁড়ায় , আর ইরফানের প্রশ্নের উত্তর দেয় ।
– হু , সাদা মানেই স্নিগ্ধতা । সাদা মানেই পবিত্রতা । সাদা মানে কাফনের কাপড় যাতে মানুষ শেষ শায়িত হয় ।
– মানে ?
– মানে সাদা পরতে মন চায় । আপনি আমার জন্যে সাদা শাড়ি আর মালা আনবেন । আর কিছু চাই না ।
-………………..
– আমি স্বর্ণ গয়না চাই না , এইসবের প্রতি লোভ কিংবা মোহ নেই । শুধু ওইটুকুনই চাই । দিবেন না বেলীফুলকে একটা সাদা শাড়ি আর একটা বেলীফুলের মালা । রক্তে মাংসে গড়া এই বেলীফুল যে শুধু ওইটুকুনই চায় ।
বেলীর এমনভাবে চাওয়ার দিকে ইরফান একটু হলেও ভড়কে যায় । এমন না যে সে এনে দিবে না । কিন্তু বেলীর চাওয়া জিনিস গুলো একদম অদ্ভুত লাগছিল তার কাছে । কেমন যেনো হচ্ছিলো তার ভেতরে । বেলী কি বোঝাতে চাইছে কিংবা কি করতে চাইছে তার কিছুই সে এই মুহুর্তে বুঝতে পারছে না । এরই মাঝে বেলী তখন দূর আকাশে পূর্নিমার চাঁদের দিকে তাকিয়ে আবারও বলে ওঠে ,
– বেলী একটা সাদা শাড়ি আর একটা বেলীফুলের মালা চায় । দিবেন না আমায় ?
.
.
চলবে………………..