ঝর_বর্ষায়
পর্বঃ ১
Writer: #Warina_Jyoti
আজ আমার বিয়ে হয়েছে, আমি এখন বাসরঘরে বউ সেজে বসে আসি। কিন্তু যে মানুষটার সাথে আমার বিয়ে হইছে তাকে আমি কখনো মেনে নিতে পারব না, কারন সে হলো আমার বেস্ট ফ্রেন্ডএর ভালোবাসা। আমি বিয়ের আগের দিন পর্যন্ত জানতাম না আমার কার সাথে বিয়ে হতে চলেছে। যখন জানতে পারলাম যার সাথে আমার বিয়ে হতে চলেছে সে আর কেউ না আমারই বেস্ট ফ্রেন্ডএর ভালোবাসা তখন আমার আর কিছু করার ছিল না! ততক্ষণে আমাদের বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। এখন আমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের সামনে কোন মুখে দাঁড়াবো?? আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আমাকে কখনো ক্ষমা করবে না। কিন্তু এই ছেলেটা কেনো আমাকে বিয়ে করলো?? নিজের বাবা-মার কথা রাখতে?? নাকি অন্য কোনো কারন আছে এর পেছনে। নাকি আমার ওপর প্রতিশোধ নিতে! আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
আসতে পারি? উজানের ডাকে সব ভাবনা থেকে বের হয়ে আসলাম। উজান হলো আমার হাসবেন্ড। আপনারই তো রুম,, যখন খুশি আসতে পারেন, আমার থেকে পারমিশন নিচ্ছেন কেনো?
রুমটাতো এখন আমার একার নয়, তোমারও তাই তোমার মতামতএর একটা ব্যাপার আছে তো।(উজান)
আমি না বললে কি রুমে আসবেন না?
না। (উজান)
এতো ভালো সাজার দরকার নেই। ভেতরে আসুন, বিয়ের আগে তো আমার মতামত নেয়ার চেস্টা করেন নি, তাই এখন এত নাটক করার দরকার নেই।
তুমি আমাকে ভুল বুঝছো জয়া!(উজান)
আমি আপনাকে একদম ঠিক বুঝেছি, আপনাকে আর নতুন করে বোঝাতে হবে না। কথাগুলো বলে চুপচাপ বিছানার একপাশে শুয়ে পরলাম। এই মানুষটাকে আমি একদম সহ্য করতে পারছি না।
উজান বিছানা থেকে ওর বালিশটা নিয়ে সোফায় চলে গেল।
আমি কিছু বললাম না। আমার খুব কান্না পাচ্ছে! আমি কি আমার বাবা মার ওপর এতোটাই বোঝা হয়ে গেছিলাম যে তারা এইভাবে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিল?
আমার ঘুম আসছে না, ৩ বছর আগের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। আমি তখন অনার্স ১ম বর্ষে একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এডমিশন নিছি। তখনই আমাদের পরিচয় হয় উজানের সাথে। ও বুয়েটে পরতো। আমাদের ওপর ব্যাচের এক ভাইয়া একটা গোপন মিশনের ব্যাপারে আমাদের বলেন। সেখানে আমি, আমার বেস্ট ফ্রেন্ড প্রীতি, ছায়া আর ছানিয়া যোগ দেই, আমাদের সাথে আমাদের ক্লাশমেট নিবিড়, সুজয়, তাসরিফ, আর মেহু ভাইয়া ছিলো। আমাদের লিডার ছিল উজান। উজানকে দেখে আমার ব্রেস্ট ফ্রেন্ড প্রীতি ক্রাশ খেয়ে যায়। উজানকে দেখতে ফর্সা, খুব একটা লম্বা না, চুলগুলো সোজা, ঠোঁটটা চিকন। খুব সহজেই যেকোনো মেয়ে ক্রাশ খেয়ে যাবে। উজান অনেক ভদ্র টাইপের ছেলে ছিল, ও খুব কমই আমাদের সাথে কথা বলতো। যেসব কারনে প্রীতির উজানকে ভালো লেগে যায়। আমরা আমাদের গোপন মিশনের জন্য অনেক খাটছি। আমরা সবাই একটা হোটেলে ছিলাম মিশনের জন্য। অনেক মজা করতাম আমরা।আড্ডা দিতাম বিকেলে, শুধু উজান পড়াশুনো নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। ও কেন জানিনা আমাদের সাথে কম মিশতো। এর মধ্যে প্রীতি আর উজানের ফ্রেন্ডশিপ হয়। কিন্তু উজান আমাকে একদম সহ্য করতে পারতো না। সবসময় আমাকে অপমান করে কথা বলতো। কিন্তু সেই উজান কেন আমাকে বিয়ে করলো?? এগুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম বুঝতে পারিনি। সকালে উজানের ডাকে ঘুম থেকে উঠলাম। কিন্তু ঘুম থেকে উঠে ওর মুখ দেখায় অসহ্য লাগছিল।
কি হলো উঠো, আম্মু তোমাকে ডাকছে! (উজান)
মামুনি কেনো ডাকছে?
কাল আমাদের বিয়ে হয়েছে, আর আজ যে তোমার বউভাত সেটা কি ভুলে গেছো?(উজান)
নাহ! ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম ৯টা বাজে।
নতুন বউ এতো পরে ঘুম থেকে উঠছে, সবাই যে কি ভাবছে! কথাটা বলে উজান একটা দুস্টু হাসি দিল।
ওর হাসি দেখে আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছে। বিছানা থেকে উঠে গোসল করতে গেলাম। এসে দেখি উজান…
চলবে…