ঝর_বর্ষায়
পর্বঃ ৩
Writer: #Warina_Jyoti
.
.
.
.
.
.
আমার আবার পুরনো কথা গুলো মনে পরতে থাকলো।
আমাদের ভার্সিটির এক অনুষ্ঠানে আমি, ছানিয়া, ছায়াসহ আরও কয়েকটা মেয়ে নেচেছিলাম রবিন্দ্র সংগীতে। শুধু প্রীতি বাদে। আমি সাদা আর সোনালি রঙের একটা সীল্কের শাড়ি পরেছিলাম। উজানও এসেছিলো সেখানে। ও হলুদ রঙের একটা পাঞ্জাবী পড়েছিল। নাচ শেষে আমি মেকাপ রুমে এসেছিলাম প্রীতিকে ডাকতে, ওর শরীর খারাপ লাগছিল বলে ও মেকাপ রুমে বসে ছিল।
আমি এসে দেখি প্রীতি আর উজান আর আমার ফ্রেন্ডরা কথা বলছে, আমি প্রীতিকে গিয়ে বললাম তোর শরীর এখন কেমন?
এখন মোটামোটি ভালো। (প্রীতি)
ওহ!
আমি মেকাপ রুম থেকে বের হতে যাব এমন সময় উজান আমাকে ডাকে,
এই মেয়ে শোনো(উজান)
আমি বললাম, জি ভাইয়া বলেন।
এতো সেজেছো কেনো? না সাজলে হয়না?
ছেলেদের দেখানোর জন্য সেজেছে নিশ্চয়?
আমি আর কিছু বলতে পারলাম না! চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম ওখানে।
তুমি আর এইভাবে সাজবে না, দেখতে তো একদম পেত্নীর মতো লাগছে। প্রীতিকে দেখছো? ওকি তোমার মত সেজে মঞ্চে উঠে ধেই ধেই করে নাচছে?? ওকে দেখেও তো কিছু শিখতে পারো।(উজান)
আমি শান্ত স্বরে বললাম দেখুন ভাইয়া এবার কিন্তু আপনি আমাকে অপমান করছেন!
অপমান বোধ আছে তোমার?? থাকলে এইভাবে নাচতে নাহ। তোমার নাচ বন্ধ বলে একটা ছুরি নিয়ে এসে আমার শাড়িটা কেটে দিল উজান।
আমি কিছু বলতে পারলাম না। আমি যেন অপমানে মাটির সাথে মিশে যাচ্ছিলাম। কান্না পাচ্ছিল খুব কিন্তু কোনো মতে নিজেকে সামলে নিলাম।
চুপচাপ ওখান থেকে চলে আসলাম। তার পর থেকে আমি উজান এর সামনে কম যেতাম। ওকে ইগনোর করতাম।
প্রীতির ডাকে আমার ঘোর কাটলো।
কিরে! ভালোই তো সেজেছিস দেখছি! (প্রীতি)
সরি প্রীতি! আমি সত্যিই জানতাম না যে আমার সাথে উজান ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে।
আমি জানি সেটা জয়া। সবাই তোকে ঠকাইছে। (প্রীতি)
যাক প্রীতি আমাকে অন্তত ভুল বুঝেনি। নিজের মনের মধ্যে একটা শান্তি অনুভব করলাম।
প্রীতি আবার আমাকে বলল,
তুই আমাকে নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড দাবি করিস না?
আমি বললাম, হ্যাঁ অবশ্যই।
আমার একটা কথা রাখবি?? (প্রীতি)
কি এমন বলবে আমাকে প্রীতি?? ভাবতেই বুকের মধ্যে মোচর দিয়ে উঠলো।
তবুও বললাম, বল কি কথা??
আমার আর উজানের মাঝে থেকে সরে যেতে পারবি?(প্রীতি)
আমি আবাক হয়ে প্রীতির দিকে তাকিয়ে রইলাম। তারপর বললাম কি বলছিস এইসব? মামুনি, বাবা এসব জানলে খুব কষ্ট পাবে।
দেখ জয়া! উজান তোকে ভালোবাসে না। ও শুধু আমাকে ভালোবাসে।আর তুই বললেই পারতিস তোর উজানকে ভালোলেগে গেছে অযথা ওর বাবা মার দোহাই দিচ্ছিস কেনো?(প্রীতি)
আমি যেন কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেললাম।
আমার চুপ করে থাকা দেখে প্রীতি বলল আসলে কি জানিস তো তুই কখনো আমাকে বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবিস নি। ভালো থাকিস আল্লাহ হাফেজ।
প্রীতি চলে গেলো।
আমি নিরব দৃষ্টিতে প্রীতির চলে যাওয়া দেখলাম।
প্রীতির বলা কথাগুলো বারবার মনে পড়ছে, এখন আমার কি করা উচিত?? আচ্ছা প্রীতি তো ভুল কিছু বলে নি। এসবই তো প্রীতির প্রাপ্য ছিল, আর উজান তো প্রীতিকে ভালোবাসে, তাহলে আমার তো কোনো অধিকার নেই দুজন মানুষের ভালোবাসার মানুষের পথের কাঁটা হওয়া। আর তাছাড়া নিজেকে নির্দোষ প্রমান করতে হলে উজানকে ডিভর্স দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
আমি প্রীতিকে কল দিলাম।
হ্যালো প্রীতি!
হুম বল(প্রীতি)
আমি তোর আর উজানের মাঝে থেকে সরে যাব। তুই ঠিকি বলেছিলি উজান আমাকে ভালোবাসে না, ও তোকে ভালোবাসে।
কি বলতে চাইছিস তুই?(প্রীতি)
আমি উজানকে ডিভোর্স দিবো।
সত্যি বলছিস তুই?? (প্রীতি)
হুম দিবো।
আমি জানতাম তুই আমার কথা ফেলতে পারবি না। তুই সত্তিই আমার ব্রেস্ট ফ্রেন্ড।(প্রীতি)
প্রীতির সাথে কথা বলা শেষে আমি নিজের রুমের দিকে পা বাড়াই।
রুমে ঢুকতেই উজান বলল, কোথায় গেছিলে তুমি? আমি কতো টেনশন করছিলাম তোমার জন্য।
আমি একটু ছাঁদে গেছিলাম। আর আমাকে নিয়ে আর টেনশন করতে হবে না তোমাকে। মুক্তি দিচ্ছি তোমাকে!
মানে? কি বলতে যাচ্ছো। তোমার কথা ঠিক বুঝলাম নাহ! পরিষ্কার করে বলো। (উজান)
মানে আমি তোমাকে ডিভর্স দিব।
ডিভর্সএর কথা শুনে উজান বিছানার ওপর বসে পরলো।
আচ্ছা উজান কি আমাকে ডিভর্স দিতে রাজি হবে? হবেই না বা কেনো? ও তো প্রীতিকে ভালোবাসে। তাহলে তো ওর কোনো প্রব্লেম হওয়ার কথা না। আমি ওকে মুক্তি দিলেই তো ও ভালো থাকবে।
উজান আমাকে ডিভর্স দিতে রাজি হয়েছে। আর হবে নাই বা কেনো ও তো প্রীতিকে ভালোবাসে।
আমার শাশুড়ি আমার রুমে এসেছেন। আমার সাথে গল্প করছেন।
আমার শাশুড়ি আমাকে বলল জানো তো মা, উজান তোমাকে খুব ভালোবাসে, সেটা ওকে দেখলেই বুঝা যায়।
মামুনির এসব কথা আমার একদম শুনতে ইচ্ছে করছে না। উজান যে আমাকে ভালোবাসে না, আমাকে ডিভর্স দিয়ে দিবে এইটা মামুনি জানে না, জানলে কি হবে??
উজান রুমে প্রবেশ করেই মামুনিকে বলল, মামুনি আমি জয়াকে নিয়ে আলাদা বাসায় থাকবো।
ওর এই কথায় যতটা না মামুনি অবাক হয়েছেন তার থেকে অনেক বেশি অবাক হইছি।
উজান তো আমাকে ডিভর্স দিবে বলে কথা দিয়েছিল কিন্তু এখন কেনো এসব বলছে?
তবে কি ও ওর মত পরিবর্তন করে ফেললো??
চলবে…