ঝর_বর্ষায়
পর্বঃ ৫
Writer: #Warina_Jyoti
.
.
.
.
.
.
উজান এভাবে চলে গেল কেনো? বুঝতে পারলাম না কিছুই।
পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি খাবার এখনও টেবিলে ওইভাবেই পরে আছে।
তাহলে কি উজানও কাল রাতে কিছু খায়নি। উজানকে ডাকতে গিয়ে কোথায়ও পেলাম না।
কোথায় গেল উজান?
দুপুরে উজান বাসায় আসলো। আমি ওকে জিজ্ঞেস করতেই যাব কোথায় গেছিলো?
তার আগেই উজান আমাকে কিছু কাগজ হাতে ধরিয়ে দিল। হ্যাঁ এগুলো হলো আমাদের ডিভর্স পেপার। পেপারটা হাতে নিতেই দেখলাম উজান সই করে দিসে।
আমার কেন জানিনা খুব কষ্ট হচ্ছে ডিভর্স পেপারে সাইন করতে।
কিন্তু এরকম কেন হচ্ছে? আমি কি তাহলে উজানকে ভালোবেসে ফেলেছি??
না এটা সম্ভব নয়, উজান প্রীতিকে ভালোবাসে।
উজান আর আমি খেতে বসেছি। এমন সময় উজানের ফোনে একটা কল এলো।
ও খাবার টেবিল থেকে উঠে রুমে চলে গেলো। ওর এই আচরন অদ্ভুত লাগলো আমার। ওর কি সমস্যা হচ্ছিলো আমার সামনে কথা বললে??
আচ্ছা আমি এতো রাগছি কেনো? আমি তো চলেই যাব ১ মাস পর। কোর্ট আমাদের ১ মাস সময় দিয়েছে। এর মধ্যে আমাদের একসাথে থাকতে হবে।
উজান কথা বলা শেষ করে ডাইনিং এ আসলো।
আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, কে কল দিয়েছিলো??
আম্মু কল করেছিল। তোমার সাথে কথা বলতে চাইছিল। (উজান)
মামুনি কল করেছিল তো আমার সামনে বসে কথা বললে কি ক্ষতি হতো?? আর মামুনি আমার সাথে কথা বলতে চাইলো যখন আপনি আমার সাথে কথা বলালেন না কেনো??
তুমি তো চলেই যাবে, তোমাকে চাইলেও তো আমি আটকে রাখতে পারবো না।আর যখন চলে যাবে, তখন তো আম্মুর সাথে কথা আমাকে একাই বলতে হবে। তাই এখন থেকে অভ্যাস করছি।(উজান)
আমি কিছু বলতে পারলাম না। খুব কষ্ট হচ্ছিল উজানের কথায়।
কিন্তু মামুনি কি কোনো বিশেষ কারনে আমার সাথে কথা বলতে চাইছিল?? মামুনি একটা কল করতে হবে।
আর শোনো, আমার খালাতো বোন অরণীর বিয়ে, আমাদের ওখানে যেতে বলেছে। আমি আম্মুকে বলে দিয়েছি আমরা যেতে পারবো না। আমি জানি তুমি যেতে না তাই আগেই বলে দিয়েছি আমার অফিসে কাজ আছে। (উজান)
কেনো আমরা যেতে পারবো না?? আমি কি আপনাকে একবারও বলেছি আমি যাবো না? আপনি এতো বেশি বুঝেন কেনো?? আমরা যাবো। আপনি মামুনিকে বলুন যে আমরা যাচ্ছি।
ঠিক আছে।(উজান)
আমরা উজানের খালাতো বোন অরণীর বিয়েতে এসেছি। অনেক ভালো লাগছে। সবার সাথে দেখা হয়ে।
অরণীর গায়ে হলুদে আমি একটা লাল রঙের শাড়ি পরেছি, চোখে কাজল, ঠোঁটে হাল্কা লাল লিপস্টিক। চুলগুলো খোঁপা করেছি।
সবাই খুব মজা করছে। উজানকেও অনেক খুশি লাগছে।
জয়া,
হু?
খোঁপায় লাল গোলাপ গুজলে আরও সুন্দর লাগবে বলে দুইটা গোলাপ আমার চুলে গুজে দিল।
পরেরদিন সবই মিলে বিয়েতে অনেক মজা করলাম।
ভাবি ভাইয়া তোমাকে খুব ভালোবাসে, তাই না??(অরণী)
আমি কিছু বললাম না। মুচকি একটা হাসলাম। কারন উজান আমাকে ভালো না বাসলেও এই ১মাসে আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি।
আমি কিন্তু জানি ভাবি ভাইয়া তোমাকে অনেক ভালোবাসে, কাল কিন্তু আমি সব দেখে ফেলেছি!(উজান)
কি দেখেছো তুমি??
গোলাপ গুঁজে দিতে তোমার খোঁপায়।(অরনি)
আমি জোরে হেসে উঠলাম। আমার হাসি দেখে অরনি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো।
এতো হাসচ্ছো কেন ভাবি??(অরণী)
না এমনি।
আমার খুব টেনশন হচ্ছে ভাইয়া যেমন তোমাকে ভালোবাসে তেমনি কি আমার হাসবেন্ড আমাকে ভালোবাসবে?(অরণী)
কি যে বলো না তুমি?? তোমার হাসবেন্ড তোমাকে অনেক ভালোবাসবে। দেখে নিও।
কিরে ভাবি আর ননদের মধ্যে কি কথা চলছে??(উজান)
যাই কথা হোক না কেনো তোমাকে কেনো বলবো?(অরণী)
হু বুঝিতো এখন তো ভাইয়ের থেকে ভাবি আপন হয়ে গেলো।(উজান)
হু।(অরণী)
অরণীর বিয়ে হয়ে গেলো। আমরাও বাসায় ফিরে আসলাম।
কোর্ট আমাদের যে সময় দিয়েছিলো সেটা আজ শেষ।
আমি আজ চলে যাচ্ছি এই বাসা থেকে। যেতে ইচ্ছে না করলেও যেতে হবে।
প্রীতিকে কল করে জানিয়ে দিলাম আমাদের ডিভর্সএর কথা।
প্রীতির কথা শুনে বুঝলাম ও অনেক খুশি, যাক এখন অনেক ভালো লাগছে।
চলে আসার সময় উজানকে বললাম, আর এই পেত্নীটাকে সহ্য করতে হবে না তোমাকে। আমি চলে যাওয়ার পর তুমি আবার প্রীতিকে বিয়ে করো।
উজান আমাকে বলল আজ হঠাৎ আমাকে তুমি বলছো যে?
আমি নিজেও জানিনা। তবু বললাম বলতে ইচ্ছে করছিল তাই। তোমার বুঝি আমার মুখে তুমি ডাক শুনতে ভালো লাগছে না?
না সেরকম কোনো ব্যাপার না। (উজান)
আমি চলে যাচ্ছি উজান।
এখুনি যাবে? (উজান)
হু!
যাও, তোমাকে আটকানোর অধিকার তো আমার নেই। চলেই যাও। (উজান)
হু! কেন জানিনা ইচ্ছে করছিল উজানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে আর বলতে একবার বলো থেকে যাও, আমি কোথায়ও যাবো না।
আমি চলে আসলাম উজানের বাসা থেকে।
৬ মাস হয়ে গেলো আমি একটা নতুন বাসায় উঠেছি, পড়াশুনাটাও আবার শুরু করেছি। আর একটা চাকুরীও করছি।
এই ৬ মাসে আমি কারো সাথে কনো যোগাযোগ করিনি। ফোন বন্ধ করে রেখেছিলাম।
আব্বু, আম্মু, মামুনি, বাবার কথা খুব মনে পড়ে।
ওনারা হয়তো এতোদিনে জেনেও গেছে আমার আর উজানের ডিভর্সএর কথা!
আমাকে হয়তো সবাই দোষী ভাবছে, কিন্তু আমার কিছু করার ছিলো না প্রীতি আর উজানের জন্যই আমি উজানকে ডিভর্স দিয়েছিলাম। আমার এখন উজানকে খুব মনে পড়ে।
ওর ছোট ছোট কেয়ারগুলোর কথা মনে হলে বুকটা কষ্ট ফেটে যায়। এতোদিনে হয়তো প্রীতির আর উজানের বিয়ে হয়ে গেছে। ওরা হয়তো সুখে শান্তিতে সংসার করছে। আচ্ছা উজানের কি আমার কথা মনে পরে একটাবারও?
এখন বেশির ভাগ সময়গুলো কাটাই গল্পের বই আর উজানের স্মৃতি নিয়ে।
আজ ফোনটা চালু করলাম। তারপর আম্মুকে একটা কল করলাম।
হ্যালো, কে বলছেন?
আমি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলাম, আমার চুপ করে থাকা দেখে আম্মু কলটা কেটে দিল।
আমি আবার কল করলাম।
কে বলুন তো আপনি? এইভাবে বারবার কল দিয়ে কথা বলছেন না??(আম্মু)
আমি কান্না জড়িত কন্ঠে বললাম, আম্মু! কেমন আছো? আব্বু কেমন আছে?
জয়া, তুই? কেমন আছিস মা?? আমরা ভালো আছি। কোথায় আছিস তুই? একবার আমাদের তো জানাতে পারতি জামাই তোর সাথে ভালো ব্যবহার করতো না? তোকে অত্যাচার করতো?(আম্মু)
আম্মুর কথা শুনে আমি পুরাই অবাক। আম্মুকে বললাম এসব তোমাদের কে বলেছে?
আম্মু বলল, জামাই নিজে এগুলো স্বীকার করেছে। আমরা ভুল করেছি মা। তাই বলে তুই আমদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিবি?? আমরা কি তোর কেউ না।
আমি আর আম্মুর সাথে কথা বলতে পারলাম না। কলটা কেটে দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লাম। একটা মানুষ কতোটা মহান হলে এরকমটা বলতে পারে।
প্রীতি সত্তিই খুব ভাগ্যবতী যে উজানকে পেয়েছে। আমি ভুল বুঝেছিলাম উজানকে, ওর মতো মানুষই হয় না। ওর মহত্ব মাপার আমার কোনো ক্ষমতা নেই।
আজ অনেক দিন পর ফেসবুকে লগ ইন করলাম। ইনবক্সে অনেক মেসেজ জমা হয়ে আছে। আমি মেসেজগুলো সিন না করে নিউজফিড পড়ছিলাম।
হঠাৎ একটা ছবি দেখে আমার যেন আমার মাথাটা ঘুরছিলো। এটা আমি কি দেখছি? আমি হঠাৎ মাথা ঘুরে পরে গেলাম।
বিছানায় শুয়ে আছি। ডাক্তার এসেছেন। আমাকে চেকাপ করছে, কিন্তু আমাকে বিছানায় কে নিয়ে এলো আর ডাক্তারকে কে ডাকলো!
এতো কিছুর মধ্যে আমি এটাই ভুলে গেছিলাম এই বাসায় তো আমি একা থাকি না। আমার সাথে কাজের মেয়েও থাকে।
কিন্তু আমি যেটা দেখলাম সেটা কি ছিল? প্রীতির বিয়ে হয়েছে আর সেই ছবিগুলো ফেসবুকে আপলোড দিয়েছে। কিন্তু প্রীতি….
চলবে…..