ঝর_বর্ষায়
পর্বঃ ৬ ও শেষ পর্ব
Writer: #Warina_Jyoti
.
.
.
.
.
প্রীতির বিয়ে হয়েছে আর সেই ছবিগুলো ফেসবুকে আপলোড দিয়েছে।
কিন্তু প্রীতির পাশে বর বেশে এই ছেলেটা কে? প্রীতির তো উজানকে বিয়ে করার কথা ছিল। কিন্তু যে ছেলেটার সাথে প্রীতির বিয়ে হয়েছে সে তো উজান নয়।তাহলে উজান কোথায়?
কিছু না ভেবে আমি প্রীতির নম্বরে কল করলাম।
হ্যালো প্রীতি?
না আমি ইশিতা বলছি, প্রীতি আমার ভাবি। ওনি গোসল করতে গেছেন। আপনি কে?
আমি ওর বান্ধবী। আমার নাম জয়া। প্রীতি আসলে ওকে কল দিতো বলো একটু আমাকে।
ঠিক আছে আপু। আল্লাহ হাফেজ।
আমার মাথায় এখন অনেকগুলো প্রশ্ন ঘুর পাক খাচ্ছে।
কিন্তু এর উত্তর আমার কাছে নেই। আমাকে জানতেই হবে আমি চলে আসার পর ওখানে কি হয়েছিল।
প্রীতি কল দিয়েছে।
কিরে কেমন আছিস?? তোর সাথে কতবার যোগাযোগ করার চেস্টা করেছি আমি, কিন্তু পারিনি। (প্রীতি)
ভালো আছি। আচ্ছা ফেসবুকে তোর সাথে যার পিক দেখলাম সে কে আর তোর কার সাথে বিয়ে হয়েছে?
প্রীতি যা বলল তা শুনে আমার পায়ের তলার মাটি সরে যেতে লাগলো। আমি এতো বড় ভুল করলাম কিভাবে?
কি বলছিস এইসব তুই প্রীতি? তোর তো উজানকে বিয়ে করার কথা ছিল।
হ্যাঁ ছিল। তুই সেদিন চলে যাবার পর আমি উজানের কাছে যাই। কিন্তু ও যা বলল সেটা শুনার পর আমার খুব আপসোস হচ্ছিল জানিস? ইচ্ছে করছিল নিজেকে শেষ করে দি। (প্রীতি)
মানে? আমি তোর কথাগুলো ঠিক বুঝলাম না। কি এমন বলেছিল উজান?
উজান আমাকে বলেছিল। ও তোকে ভালোবাসে। ও আমাকে কখনোই ভালোবাসে নি।(প্রীতি)
কি বলছিস কি? উজান আমাকে ভালোবাসে?
হ্যাঁ তোকে ভালোবাসে। খুব ভালোবাসে।
ও তোকে যেদিন প্রথম দেখেছিলো সেদিন থেকেই তোকে ভালোবেসে ফেলেছিল।
আর ও যে তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করতো সবটাই ছিলো লোক দেখানো। তোকে কাঁদয়ে তুই যতটুকু না কষ্ট পেতি তার অনেক বেশি কষ্ট ও পেত।
তুই নেচেছিল বলে ও তোর শাড়ি ছিঁড়ে দিয়েছিল কেন জানিস?
কারন কিছু ছেলে তোকে নিয়ে বাজে কথা বলেছিল। এই জন্য ও তোকে শাড়ি পড়তে নিষেধ করেছিল।
আর আমাদের সবাইকে ওদের বাসায় নিয়ে যাওয়ারও একটাই উদ্দেশ্য ছিল, তোকে ওর বাবা মার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া।
যদিও ওর মা তোকে প্রথম বার দেখেই পছন্দ করে নেই কিন্তু ওর বাবা তোদের বিয়েতে মত দিচ্ছেলেন না,
তাই উজান প্লান করে তোকে রাগিয়ে দিয়ে নিজের বাবার মন জয় করিয়ে নেয়।
আর ও তোকে রাগাতে খুব ভালোবাসতো তাই সবসময় আমার কথা বলতো। ও আসলে আমাকে কখনো ভালোবাসেনি। তুই ওর জীবনের প্রথম আর শেষ ভালোবাসা। (প্রীতি)
প্রীতির কলটা কেটে দিয়ে আমি আর এক মুহুর্ত দেরি করলাম না।
উজানের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। আম্মুকে কল দিয়ে সবটা বললাম।
আম্মু সবটা শুনে বলল, ইশ আমরা জামাইকে কতো ভুল বুঝেছি।
তুই তাড়াতাড়ি জামাইয়ের বাসায় যা।(আম্মু)
হুম আম্মু।
আমার খুব অনুশোচনা হচ্ছে এটা ভেবে যে আমি উজানকে এতোদিনেও চিনতে পারিনি। উজানের ভালোবাসার কাছে আমি হেরে গেছি।
আমি উজানের বাসায় আসলাম। এসে জানতে পারলাম উজান বাসায় নেই, অফিসে গেছে। আমার শশুর শাশুড়ি আমাকে দেখি খুব খুশি হয়েছেন।
আমারও খুব ভালো লাগছিল। আমি ভেবেছিলাম উনারা কেউ আমাকে কখনো মেনে নিবে না।
কিন্তু ওনারা যে আমাকে এতো ভালো বাসে আমি জানতাম না।
দুপুরে একসাথে লাঞ্চ করলাম। উজান এখনো আসেনি।
উজানের ফোনে কল দিচ্ছিলাম কিন্তু কল কেউ রিসিভ করছিল না।
মামুনি বলল, মন খারাপ করো না মা! তুমি চলে যাবার পর ও অনেক কষ্ট পেয়েছে।
আমি উজানকে কষ্ট দিতে চাইনি মামুনি।
আমি জানি মা। তুই উজানকে অনেক ভালোবাসিস। আর তুই এখন চলে এসেছিস না?? দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।(মামুনি)
মামুনিকে জড়িয়ে ধরে আমি কাঁদতে শুরু করলাম।
ধুর পাগলি কাঁদছিস কেনো?? চল তোকে সাজিয়ে দি আজ আমার ছেলের মনের মতো করে।
ঠিক আছে মামুনি।
মামুনি আমাকে একটা নীল রঙের শাড়ি পড়িয়ে দিল। খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিল।
আমি উজানের রুমে গিলাম।
ওখানে গিয়ে একটা ডায়রি পেলাম যেখানে পুরুটাই আমাকে নিয়ে লেখা।
ডায়রির শেষ পাতায় লিখা ছিলো জয়া জানোতো এখন বর্ষাকাল। বাহিরে অনেক বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির দিন গুলোতে তোমাকে অনেক মিস করি। তুমি কই আমাকে মিস করো??
আচ্ছা তুমি কি ভিজবে আমার সাথে এই ঝর বর্ষায়?? মিশে যাবে আমার সাথে বৃষ্টির গভীরতায়?? তুমি কি আর কখনো ফিরে আসবে আমার কাছে??
আমি এসেছি উজান তোমার কাছে। তুমি কখন আসবে? আমি যে তোমার অপেক্ষায় বসে আসি।
আমার ফোনে অচেনা নম্বর থেকে একটা কল আসে।
হ্যালো কে বলছেন?
আপনি কি জয়া বলছেন?
জি! আপনি কে?
আমি হসপিটাল থেকে বলছি।
আমার বুকের মধ্যে মোচর দিয়ে উঠল। আমি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম মানে? কার কি হয়েছে? আর আপনি আমার নম্বর কই পেলেন?
আপনি ই কি উজানের বউ।
জি হ্যাঁ। কি হইছে উজানের?
এক্সিডেন্ট! অফিস থেকে আসার সময় একটা ট্রাক এসে উজানের গাড়িকে ধাক্কা দেয়।
কথাটা শুনে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল।
তবে কি আর উজানের সাথে ঝর বর্ষায় ভেজা হবে না? আমি কি উজানের হতে পারবো না? যখন উজান আমাকে ভালোবাসতো তখন আমি ওকে ভুল বুঝেছিলাম আর আজ যখন জানতে পারলাম উজান আমাকে ভালোবাসে তখন আমি উজানকেই হারিয়ে ফেললাম!!
কয়েক বছর পর…
আজ আমাদের মেয়ে মোহরের ৫ বছর হলো।
ওর আজ জন্মদিন।
হ্যাঁ আমাদের মেয়ে, আমার উজানের মেয়ে।
সেদিনএর এক্সিডেন্টএ উজান বেঁচে গেলেও ওর পা দুটো কেটে ফেলতে হয়।
আব্বু আম্মু চেয়েছিল আমি যেন উজানকে ডিভর্স দিয়ে চলে আসি কিন্তু আমি উজানকে ছেড়ে যাইনি, ওর পাশে থেকে লড়াই করে গেছি। কারন আমি যে উজানকে খুব ভালোবাসি।
আসলে এরপরের প্রতিটি ঝর বর্ষায় উজানের সাথে ভেজার লোভটা সামলাতে পারলাম না। থেকে গেলাম উজানের সাথে।
[এভাবেই বেঁচে থাকুক আমদের সত্তিকারের ভালোবাসাগুলো।]
(সমাপ্ত)