ঝিলের_ওপারে_পদ্মফুল,১৬,১৭

0
299

#ঝিলের_ওপারে_পদ্মফুল,১৬,১৭
তন্বী ইসলাম
১৬

“আপনার মেয়ে কিন্তু দুইজনই সুন্দর। তবে আমাদের শাপলা মাশাল্লাহ বলার মতো সুন্দরী, আপনার ছোট মেয়ে সুন্দর হলেও মাশাল্লাহ বলার মতো তেমন সুন্দরী না। মোটামুটি গোছের, যেমন চলবে এমন আরকি।
কথাটা কানে ঢুকতেই ভীষণ রেগে গেলো পদ্ম। কোমড়ে হাত রেখে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে আপন মনে বাকিদের উদ্দেশ্যে বললো
“যারে বিয়া নিতে আইছেন, সে যদি মাশাল্লাহ হয় তাইলেই হইবো। বাকিদের দিকে নজর দেওয়ার কি দরকার শুনি।
পদ্ম’র কথা শুনে নিরবে মুচকি মুচকি হাসছে শাপলা। আলেয়া চোখমুখ শক্ত করে চাপা স্বরে বলল
“পদ্ম, সম্মান দিয়া কথা বল। উনারা তোর মুরুব্বি।
পদ্ম মায়ের কথা মেনে নিয়ে মাথা নাড়িয়ে বিড়বিড় করে বললো
“ওকে আম্মা।

শাপলার মা আর তার চাচীর কাছে অনেক কথাবার্তাই বললো ছেলের বাড়ির মহিলারা। উনাদের ইচ্ছে বিয়েটা খুব তারাতাড়িই করানোর। ছেলেও যেহেতু মেয়েকে পছন্দ করেছে, আর তাছাড়া এমন সুন্দরী মেয়েকে যত তারাতাড়ি সম্ভব বিয়ে করিয়ে নিজেদের করিয়ে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। পরে হাতছাড়াও হয়ে যেতে পারে। শাপলা পর্দার ওপাশের বিছানায় বসে সব শুনছিলো, পদ্মও ছিলো সাথে। শাপলার মনে কি চলছে তা খুব মনোযোগ সহকারে বুঝার চেষ্টা করছে পদ্ম। কিন্তু ফলাফল শুন্য, কিছুই বুঝা যাচ্ছে না। কথায় আছে, মৌনতাই সম্মতির লক্ষন। পদ্ম বুঝে নিলো বাকিটা। বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করবেন বাড়ির পুরুষেরা। তারা দু’এক দিনেই মধ্যেই আসেবন পাকা কথা বলতে। শাপলার মায়ের দিক থেকেও কোনো আপত্তি ছিলো না বিধায় ভদ্রমহিলারা বেশ খুশি মনেই বিদেয় নিলেন।

পরের দিনগুলোতে শাপলাকে আর কলেজে যেতে দেওয়া হলো না। আলেয়ার স্পষ্ট কথা, বিয়ের কথা একরকম ঠিকঠাক, এমন অবস্থায় মেয়েদের কিছুতেই বাইরে যাওয়াটা ঠিক না। বদ নজর লাগতে পারে। আর বদ নজর বেশ ভয়ানক জিনিস। শাপলাও মায়ের কথা বিনাবাক্যে মেনে নিলো।
বেশ ফুরফুরে মেজাজেই স্কুলের পথে পা বাড়ালো পদ্ম। যদিও শাপলার সাথে যাওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু তার বিয়ে বিধায় সে যাবেনা। কিছুটা সামনে এগুতেই পদ্ম খেয়াল করলো মোড়ের মাথায় শ্রাবণ ভাই দাঁড়িয়ে আছে। শ্রাবণ ভাইকে দেখে মৃদু হাসলো পদ্ম, বেশ ভালোই লাগে শ্রাবণ ভাইকে দেখতে তার। কিছুক্ষণ বাদে শ্রাবণের দৃষ্টিও তার পদ্মফুলের দিকে এলো। মুখে হাসির ফোয়ারা টেনে সে দু কদম এগিয়ে এলো পদ্ম’র দিকে। এতোক্ষন সে পদ্ম’র জন্যই এখানে অপেক্ষা করছিলো। পদ্ম শ্রাবণের কাছাকাছি আসতেই শ্রাবণ ঠোঁটের হাসিটাকে প্রসারিত করে বলল
“অনেক্ষন অপেক্ষা করিয়েছিস রে পদ্মফুল।
“কেন অপেক্ষা করলা? আমি কি তোমারে অপেক্ষা করার জন্য বলছি? লাজুক মুখে মিহি গলায় বললো পদ্মফুল।
শ্রাবণ পদ্ম’র কাঁধ থেকে ব্যাগটা টেনে নিয়ে সামনের দিকে চলতে চলতে বললো
“কেন অপেক্ষা করি তুই জানিস না পদ্মফুল? জেনেও না জানার মতো ভান ধরিস কেন?
পদ্ম আবারও লাজুক হাসি হেসে বললো
“জানিনা।
শ্রাবণ অদ্ভুত ভাবে তাকালো তার পদ্মফুলের দিকে। তার পদ্মফুলের মুখপানে তাকিয়ে থাকা অবস্থাতেই হঠাৎ বুকের মাঝে কিঞ্চিৎ ব্যাথা অনুভব করলো সে। এ ব্যাথার কারণ অজানা তার। কিছুটা সময় দুজনেই নিরবে হাঁটতে লাগলো। স্কুলের কাছাকাছি পৌঁছেই ব্যাগটা পদ্ম’র হাতে ধরিয়ে দিয়ে শ্রাবণ বললো
“আজ সন্ধ্যায় আমাকে চলে যেতে হবে রে পদ্মফুল।
পদ্ম হঠাৎ চমকে উঠলো। বিচলিত গলায় বললো
“কেন? কেন চইলা যাবা শ্রাবণ ভাই?
খানিকটা সময় নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে শ্রাবণ মলিন গলায় বললো
“পরশু থেকে আমার এক্সাম শুরু।
“ওহ! নির্জীব কন্ঠে ছোট্র করে বললো পদ্ম।।

স্কুলের গেইট দিয়ে ঢোকার আগ মুহূর্তে পদ্ম’কে উদ্দেশ্য করে শ্রাবণ কিঞ্চিৎ চিৎকার করে বলে উঠলো
“ছুটির পর একা একা চলে যাস না যেনো। আমি এখানেই থাকবো, তোর জন্য অপেক্ষায় থাকবো। আমার পদ্মফুলকে সাথে করে নিয়েই আমি বাড়ির দিকে পা বাড়াবো।
শ্রাবণ ভাইয়ের কথায় হাসিমুখে পিছু ফিরে তাকালো পদ্ম। এরপর চওড়া হাসি হেসে বললো
“আচ্ছা শ্রাবণ ভাই।

আজ ক্লাসে মন বসছে না পদ্ম’র। স্যার অনবরত লেকচার দিয়েই যাচ্ছে, তবে স্যারের কোনো কথায় পদ্ম’র মস্তিষ্ক পর্যন্ত যাচ্ছে না। শ্রাবণ ভাই আজ চলে যাবে, ভাবতেই কান্না পাচ্ছে। এতোক্ষন বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক মি. সাইদ আহমেদ খুব মনোযোগ সহকারে পদ্ম’র ক্লাসের প্রতি অমনোযোগীর বিষয়টা লক্ষ করলেন। অনেকটা সময় কেটে যাবার পরেও যখন পদ্ম’র মনোযোগ ফিরে এলো না তখন তিনি চটে গেলেন। বরাবরই তিনি ভীষণ রাগী আর কড়া স্বভাবের মানুষ। ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরা তাকে একপ্রকার যমের মতোই ভয় পায়। উনার ক্লাসে অমনোযোগী হওয়া একদমই এলাও না। পদ্ম’র যখন তার শ্রাবণ ভাইকে নিয়ে ভাবনায় মশগুল ছিলো, ঠিক সেই মুহূর্তে পিঠের মধ্যে তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করলো সে। তীব্র যন্ত্রণায় আহ করে শব্দ করেই সামনের দিকে তাকালো পদ্ম। মুহুর্তেই গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো তার। সাইদ স্যার তীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। হাতে সরু একটা বেত। পদ্ম’র বুঝতে আর বাকি রইলো না পিঠে সে কিসের ব্যথা অনুভব করেছিলো। সাইদ স্যারের ইশারায় পদ্ম উঠে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করলো।

ঝিলের সামনের জলপাই গাছের নিচের মাচাটায় বসে আছে শাপলা। হাতের মুঠোয় বাটন ফোন, দৃষ্টি একদম সামনের দিকে। সামনের সে বাড়িটায়, যে বাড়িতে আরহাম নামের ছেলেটির সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়েছে। শাপলার চোখমুখ একদম স্থির। তাতে না আছে কোনো দুশ্চিন্তার ছাপ আর না আছে কোনো অস্থিরতা। শাপলা হাতের আঙ্গুল দিয়ে বার বার ফোনটাকে এদিক ওদিক নাড়াচাড়া করছে। এমন সময় ফোনটা কেঁপে উঠলো। ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই ঠোঁটের কোনে ক্ষীণ হাসির রেশ ভেসে আসলো তার। কলটা রিসিভ করে কানে ঠেকিয়ে ছোট্র করে বললো
“হ্যালো।

বিকেলে স্কুলে ছুটির ঘন্টা পরতেই বেশ তরিঘরি করে সবার আগে বেরিয়ে পরলো পদ্ম। শ্রাবণ ভাই তার জন্য স্কুলের বাইরে অপেক্ষা করছে, কথাটা বার বার তার মস্তিষ্কে নাড়া দিচ্ছে। কারো অপেক্ষা না করে এক দৌড়ে গেইটের কাছে চলে যায় পদ্ম। স্কুলের গেইট দিয়ে বরোতে বেরোতে আশেপাশে দু’একবার চোখ বুলায় সে। শ্রাবণ ভাইকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। পদ্ম’র কপালে খানিক ভাজ পরলো। মনে মনে ভাবলো, ‘শ্রাবণ ভাই কি তাহলে চলে গেছে? আমাকে শুধু শুধু বলে গেলো সে আমার জন্য অপেক্ষা করবে? পদ্ম’র মলিন মুখটা আরো বেশি মলিন হয়ে গেলো। ম্লান মুখে আরো কয়েকবার এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে এগুতে লাগলো সামনের দিকে। আশেপাশে শত শত ছেলে মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে, সবাই তার স্কুলের ছাত্রছাত্রী। মাঝেমাঝে দুই একজন আউট লোকও দেখা যাচ্ছে। তাদের মাঝেই পদ্ম তার শ্রাবণ ভাইকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।

পদ্ম আরো দু কদম এগুলো। ঠিক তখনই আকস্মিক ওর পিঠ থেকে ব্যাগ টা কেউ দুরুম করে ছিনিয়ে নিলো। হতবিহ্বল হয়ে পেছনে ফিরে তাকালো পদ্ম। শ্রাবণ ভাইকে দেখে যেনো ধরে প্রাণ ফিরে পেলো সে। লম্বা লম্বা নিশ্বাস ছাড়ছে সে। শ্রাবণ হাসিমুখে বললো
“তোকে না বলেছিলাম আমার জন্য অপেক্ষা করতে? আমাকে ফেলে চলে যাচ্ছিলি কেন পদ্মফুল?
পদ্ম সামনের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে লাগলো। চোখমুখ এমন করলো যেনো সে ভীষণ রেগে আছে। শ্রাবণ পদ্ম’র হাতে ধরে টান দিলো। পদ্ম থামলো ঠিকই, তবে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। আশেপাশে অনেক অনেক মানুষ, সেটা বোধহয় ভুলেই গিয়েছে শ্রাবণ। সে শুধু তার পদ্মফুলকে দেখতে ব্যস্ত৷ বেশ বুঝতে পারলো তার পদ্মফুল তার সাথে অভিমান করেছে। শ্রাবণ তার হাতজোড় দিয়ে পদ্মর গালে স্পর্শ করলো। কেঁপে উঠলো পদ্ম, সারা শরীরে এক শীতল ধারা বয়ে গেলো তার। শ্রাবণ মৃদু হেসে পদ্ম’র গালে হাত বুলাতে বুলাতে বললো
“রেগে আছিস কেন পদ্মফুল?
“কই গেছিলা তুমি? আমি অনেক খুজলাম তোমারে, পাইলাম না।
“আমি এখানেই ছিলাম পদ্মফুল, তোর অপেক্ষায়। এক বন্ধুর সাথে কথা বলতে গিয়ে একটু আঁটকে পরেছিলাম।
“বন্ধু!!
“হ্যাঁ, আরহাম। যার সাথে তোর বোনের বিয়ের কথা হচ্ছে।
“ওহ!

এবার একটু স্বাভাবিক হলো পদ্ম। শ্রাবণ একহাতে পদ্ম’র একটি হাত ধরে রেখেই হাঁটছে। মানুষ জন একটু আঁড়চোখে দেখছে তাদের, তবে কেউই কিছু বলছে না। কিছুটা দূর এগুতেই পদ্ম বললো
“তোমার বন্ধুর সাথে কি কি কথা বললা শ্রাবণ ভাই?
শ্রাবণ পদ্ম’র দিকে তাকিয়ে মৃদুহেসে বললো
“তুই জেনে কি করবি?
“না, কিছুই করমু না। তবে জানতে ইচ্ছা হইতাছে।
মৃদু হাওয়া বইছে, রোদের দাপট কমে গিয়ে গায়ে মিষ্টি রোদের পরশ ঠেকছে। ভালোই লাগছে। শ্রাবণ পদ্ম’র মুখপানে তাকালো, পদ্ম’ও তাকালো শ্রাবণের দিকে। পদ্ম’র চোখের গভীরতা মাপতে লাগলো শ্রাবণ। এ চোখের গভীরতা ঠিক কতখানি তা ঠাহর করতে পারেনা শ্রাবণ। শুধু জানে, এ চোখের গভীরে সে সারাজীবনের জন্য হারিয়ে গেলে ফিরে আসার পথ খুঁজবে না, পথ খুজে পেলেও ফিরে আসতে চায় না সে। পদ্ম শ্রাবণ ভাইকে এভাবে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ক্ষীণ লজ্জা পেলো। লজ্জায় মাথা নোয়ালো সে, বললো
“কি দেখো?
“আমার পদ্মফুল’কে দেখি।
পদ্ম আবারও লাজুক হাসি হাসলো। বললো
“আজ তো চইলা যাইবা। তারপর কেমনে দেখবা?
“মন দিয়ে দেখবো।
“সিনেমার ডায়লগ।
শ্রাবণ হেসে বললো
“সত্যিকারের সিনেমা। তবে সে সিনেমার নায়ক নায়িকা হলাম গিয়ে তুই আর আমি।।
পদ্ম হাসলো।

খানিক বাদে সে বললো
“তোমার বন্ধুর সাথে কি আলাপ করলা কইলা না তো?
“আজ বোধহয় শাপলার বিয়ের ডেইট পাকা করবে। ওর বাবা আর চাচা যাবে আমাদের বাড়ি।
পদ্ম অবাক হয়ে বললো
“আজকেই?
“হুম।
“এতো তাড়া কেন তাদের?
“তোর বোনকে ভালোবাসে ফেলেছে আমার বন্ধুটা। তার ভালোবাসে নিজের কাছে নেবার জন্যই এতো তাড়া। তোর তো খুশির হবার কথা।
পদ্ম ভ্রু বাকিয়ে বললো
“কেন?
“ওর বিয়েটা হয়ে গেলেই তো আমাদের পথ ক্লিয়ার।
শ্রাবণের কথায় মুখ তুলে তাকানোর সাহস পর্যন্ত হলো না পদ্ম’র। লজ্জায় মাথা নত করা অবস্থাতেই হাঁটতে লাগলো সে। শ্রাবণ তার লাজুক পদ্মফুলকে দেখছে আর হাসছে। তার পদ্মফুল যখন যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন, বেশ ভালো লাগে দেখতে।

সন্ধ্যার পরপরই আরহামদের বাড়ি থেকে তিনজন লোক এলো। উদ্দেশ্য শাপলার সাথে আরহামের বিয়ের পাকা কথা। শাপলাকে খাটের এক কোনে গুটিশুটি মেরে বসে থাকতে দেখা গেলো। আলেয়া আর জুবেদা দুই জায়ে মিলে রান্নাবাড়া সেড়ে নিয়েছে বেশ কিছুক্ষণ আগেই। পদ্ম রান্নাঘরের আশেপাশে কয়েকবার উঁকিঝুঁকি মেরেছে। সুযোগ পেলে দু’টুকরো গরুর মাংস পেটে চালান করবে সেই আশায়। তবে সুযোগই পাচ্ছেনা। বাইরের দিকে একটা পুরোনো দিনের বৈঠক ঘর ছিলো। ঘরটা এতোদিন বেশ জরাজীর্ণ ভাবেই পরে ছিলো। আজ সেলিম আর তার বাবা মিলে ঘরটাকে সাড়িয়েছে।
আরহামদের বাড়ি পাশেই বিধায় বিকেলে আসার কথা ছিলো, কিন্তু আরহামের চাচা একটা কাজে আঁটকে যাওয়ায় সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। ওদিকে শ্রাবণও তৈরি হচ্ছে বেরিয়ে পরার জন্য। ভেবেছিলো শাপলার বিয়ের কথাবার্তা ফাইনাল হবার পরেই সে বেরোবে।কিন্তু ওদের আসতে দেরি হওয়ায় সেটা আর সম্ভব হলো না। আর দেরি করা যাবে না শ্রাবণের, এখনই বেরোতে হবে। নইলে রাতের ট্রেনটা মিস করবে সে।

বেরিয়ে যাবার আগ মুহূর্তে পদ্ম’কে এক পলক দেখার আশায় আলেয়াদের ঘরে ঢুকলো শ্রাবণ। বাংলা ঘরে বিয়ের আলাপ চলছে। রান্নাঘরের বেড়ার ফাঁক দিয়ে বাংলা ঘরের দিকে উঁকি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আলেয়া আর জুবেদা। বুঝার চেষ্টা করছে ভিতরে কি কথা হচ্ছে। শাপলার পাশেই শুয়ে থেকে ফোন চাপছে পদ্ম। শ্রাবণ সামান্যই গলা খাকাড়ি দিলো। শাপলা নড়েচড়ে উঠলো। শ্রাবণ ভাইকে দেখে মুচকি হেসে পদ্ম’র দিকে তাকিয়ে বললো
“তোর ডাক পরেছে পদ্ম।
পদ্ম অবাক হয়ে বসে শাপলা কে উদ্দেশ্য করে বললো
“কে ডাকে আমারে?
“তোর শ্রাবণ ভাই।

চলবে…..

#ঝিলের_ওপারে_পদ্মফুল
তন্বী ইসলাম -১৭

সন্ধ্যার আলো মিলিয়ে সবেমাত্র আঁধার নামতে শুরু করেছে। নাম জানা না জানা পাখিরা বাইরের কোলাহল থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়ে নিজ নিজ বাসায় এসে আশ্রয় নিয়ে চুপটি মেরে বসে আছে। দূরে বাঁশের ঝাড় টা থেকে ভেসে আসছে অগণিত ঝিঁঝি পোকার আর্তনাদ। কত করুণ স্বরে ডেকে যাচ্ছে তারা। কানে তালা দেবার উপক্রম।। এমনই একটা মুহূর্তে ঘরের পেছন দিকে শ্রাবণ ভাইয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে পদ্ম। শ্রাবণ ভাই চলে যাচ্ছে, সেজন্য পদ্ম’র মন খারাপের যেনো অন্ত নেই। শ্রাবণ মৃদুস্বরে বেশ কয়েকবার পদ্ম’কে ডাকলো। মন খারাপে কন্ঠ ভারী হয়ে থাকায় সে ভারী গলা দিয়ে কিছু বলতে পারলো না পদ্ম। শ্রাবণেরও আজ মন খারাপ। পদ্মফুলকে এভাবে রেখে যেতে তার ভালো লাগে না মোটেও। শ্রাবণ মনে মনে ভাবলো, ‘একবার শাপলার বিয়েটা হয়ে যাক শুধু। এরপর দুই ফ্যামিলিকে যে করেই হোক রাজি করিয়ে তার পদ্মফুলকে বিয়ে করে নিজের করে নিবে। এরপর একটা ছোটখাটো চাকরি নিয়ে পদ্ম’কে নিয়ে পাড়ি দেবে শহরে, এরপর শুরু করবে তার পদ্মফুলকে নিয়ে ভালোবাসার সংসার।

শ্রাবণ মৃদুস্বরে আবারও পদ্মকে ডাকলো
“পদ্মফুল!
“হু।
“আমি চলে যাচ্ছি তো।
“জানি।
মলিন গলায় বললো পদ্ম।
শ্রাবণ দুহাতে পদ্মকে জড়িয়ে ধরলো। তাতেও পদ্ম’র ভাবাবেগ হলো না। সে এখনও নির্জীব হয়েই দাঁড়িয়ে আছে৷ শ্রাবণ ক্ষীন হেসে বললো
“এভাবে মন খারাপ করে আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে আমি যাবো কি করে বল? শেষে আমার এক্সামটাও খারাপ হবে। রেজাল্ট খারাপ হলে কি চাচী তোকে আমার হাতে দিবে?
“তুমি যাও শ্রাবণ ভাই। আমারে নিয়া এতো চিন্তা করা লাগবে না।
শ্রাবণ মৃদু হেসে পদ্ম’কে আরেকটু শক্ত করে নিজের সাথে ধরলো। বললো
“এক্সামটা শেষ হলেই আমি চলে আসবো পদ্মফুল। তুই মন খারাপ করে থাকিস না প্লিজ।
পদ্ম মাথা উঁচিয়ে শ্রাবণের মুখপানে ধীরে ধীরে তাকালো। শ্রাবণ এক দুই কিছু না ভেবে হুট করে পদ্ম’র কপালে একটা শুকনো চুমো দিয়ে বসলো। মুহুর্তেই স্থির হয়ে গেলো পদ্ম। যেনো নিজ যায়গাতেই জমে গেছে সে। দুই মিনিট পর পদ্ম বিস্ময়ে বললো
“কি করলা এটা?
শ্রাবণ হেসে বললো
“ভালোবাসা দিলাম।
পদ্ম যতদ্রুত সম্ভব শ্রাবণের বাহু থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলো। কিন্তু শ্রাবণ তার পদ্মফুলকে নিজের বাহুবন্ধনে এতটাই শক্ত করে ধরে রেখেছে যে পদ্ম নিজের কাজে সফল হতে পারলো না। এদিকে বেশ লজ্জাও পাচ্ছে সে। শ্রাবণ ভাইয়ের মুখের দিকে তাকাতেও তার দ্বিধা হচ্ছে বেশ। পদ্ম এবার শ্রাবণের বাহুডোরে থেকে লজ্জামাখা মুখটা নিচের দিকে নোয়ালো। ঠোঁট চেপে খুবই ধীরে ধীরে হাসতে লাগলো। শ্রাবণ খেয়াল করলো সবটাই। ওর ঠোঁটের কোনেও হাসির রেশ।

শ্রাবণ বেশ আলতোভাবে পদ্ম’র থুতনিতে হাত রাখলো। পদ্ম’র লজ্জা আগের তুলনায় আরো কয়েকগুণ বেড়ে গেলো। শ্রাবণ বেশ ধীরে ধীরে ওর থুতনি ধরে মুখটা সামনের দিকে তুলতে লাগলো, ঠিক যেনো নতুন বউ এর চাঁদ মুখটা দেখার আশায় সদ্য বিবাহিত বর আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। শ্রাবণ অপলকভাবে দেখে যাচ্ছে তার পদ্মফুলকে, তবুও আশ মিটছে না। পদ্মফুলকে দেখার হাজার বছরের তৃষ্ণা শ্রাবণের বুকে জেকে বসেছে। শ্রাবণের নজর গেলো এবার পদ্ম’র ঠোঁটজোড়াতে। অনবরত কাঁপছে সেগুলো। শ্রাবণ শুকনো ঢোক গিললো এবার। অজানা এক লোভ শ্রাবণের মনে হানা দিলো, নিজের উপর থেকে যেনো ধীরে ধীরে কন্ট্রোল হারিয়ে ফেললো লাগলো সে। শ্রাবণ পদ্ম’র ঠোঁট বরাবর এগিয়ে যেতে লাগলো। পদ্ম’ও সবকিছু ভুলে তার প্রাণপ্রিয় শ্রাবণ ভাইয়ের নিকট নিজেকে সঁপে দিতে লাগলো। যখনই শ্রাবণ আর পদ্ম’র ঠোঁট যুগল একসঙ্গে মিলিত হবে ঠিক তখনই কারো কাশির শব্দ পেয়ে দুজন ছিটকে গেলো দু’দিকে। পদ্ম লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়ালো বেশ কিছুটা দূরে। জোরে জোরে হাপাচ্ছে সে। শ্রাবণ খেয়াল করলো বেশ কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে শাপলা। ওর দৃষ্টি তাদের দিকেই। শ্রাবণ নিজেও খানিক লজ্জা পেয়ে গেলো।

শাপলা এগিয়ে এলো এবার। পদ্ম’র কাছে এসে ওর কান টেনে ধরে চাপা হাসি আঁটকে রেখে ক্ষীন কড়া গলায় বললো
“এদিকে প্রেম করা হচ্ছে। প্রেম যখন করবিই একটু আড়ালে গিয়েও তো করতে পারিস।
পদ্ম মুখ তুলে তাকালো না। এবার শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে শাপলা বললো
“তখন কে যেনো বলেছিলো তার ট্রেন মিস যাওয়ার সম্ভাবনা আছে?
শ্রাবণের হুশ এলো এবার। সত্যিই তো তার দেরি হয়ে যাচ্ছে। পদ্ম’কে কাছে পেয়ে সে ভুলেই গিয়েছিলো সেটা। শ্রাবণ তরিঘরি করে দৌঁড়াতে লাগলো। পদ্ম’র কাছাকাছি গিয়ে আবারও থমকে দাঁড়ালো সে। একপলক দেখে ফিসফিস করে বললো
“আমি খুব শীঘ্রই চলে আসবো পদ্মফুল। আমার জন্য অপেক্ষায় থাকিস।

প্রায় দু’ঘন্টা বাদে বিয়ে সংক্রান্ত আলোচনা শেষ করে বৈঠক ঘর থেকে বেরিয়ে এলো সকলেই। সবার মুখেই হাসি হাসি রব। ছেলের বাড়ির তিনজন আর মেয়ের বাড়ির দুজন। সেলিম আর তার বাবা। তাদের পাঁচজনের মুখেই খুশির রেশ। মহিলারা ভেতর ঘরে গিয়ে পর্দার আড়ালে দাঁড়ালো। শাপলাও এবার নিজেকে গুটিয়ে বেশ জড়োসড়ো হয়ে খাটের কোনায় বসলো। পদ্ম তার পাশে বসেই অপেক্ষা করছে বিয়ের তারিখটা কবে শোনার জন্য। সেলিমের বাবা আলেয়াকে খুঁজতে খুঁজতে জুবেদাকে উদ্দেশ্য করে বললো
“আলেয়া কই?
“ভেতর ঘরে।
“একটু ডাকো তারে।
জুবেদা ক্ষীন গলায় আলেয়াকে ডাকলে বেশ লম্বা করে ঘোমটা টেনে তিনি বেরিয়ে এলেন ভাসুরের সামনে। আদবের সহিত তিনি বললেন
“দিন তারিখ ঠিক হইছে ভাইজান?
সেলিমের বাবা হেসে বললেন
“জানবা জানবা। আগে খাওন দাওয়ানের ব্যবস্থা করো।তারা যাওনেগার লাইগা পাগল হইয়া গেছে।

আলেয়া জুবেদার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে তাড়া দিয়ে বললেন
“আপা, আসেন খাওন দাওন বাড়াগোড়া করি।
জুবেদা বিনা বাক্যে আলেয়ার সঙ্গে রান্নার ঘরে গিয়ে ঢুকলো।

রাত মোটামুটি গভীর। সকলে খেয়ে দেয়ে শুয়ে গেছে বেশ অনেক্ষণ আগেই। হয়তো ঘুমিয়েও গেছে। পদ্ম’ও ঘুমিয়ে গেছে সবেমাত্রই। শাপলা শুয়ে থেকে ফোন নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে। একবার ফোনের স্ক্রিন অন করছে, আবার এভাবেই রেখে দিচ্ছে। যখন ফোনের স্ক্রিন অটোমেটিক অফ হয়ে যাচ্ছে তখন আবারও স্ক্রিনের আলো জ্বালিয়ে দিচ্ছে শাপলা। যেনো ছোট বাচ্চাদের মতো ফোন নিয়ে খেলা করছে। এভাবে প্রায় বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেলো, তবুও ঘুম এলো না তার চোখে। রাত তখন প্রায় বারোটা। শাপলা ফোনটা বালিশের পাশে রেখে ঘুমোতে যাবে ঠিক তখনই মেসেজ টোনটা বেজে উঠলো। তরিঘড়ি করে ফোনটা হাতে নিয়ে মেসেজটা ওপেন করলো সে। তবে মুখের অবয়ব দেখে বুঝা গেলো সে কিছুটা হতাশই হয়েছে। নাম্বারটা একটা আননোন নাম্বার। শাপলা ফোনটা রেখে দিতে গিয়েও রাখলো না। মেসেজটা ওপেন করে দেখলো সেখানে গুটিগুটি অক্ষরে লিখা আছে, “আসসালামু আলাইকুম।”

রাত দুপুরে কে তাকে সালাম দিলো ভেবে পেলো না শাপলা। নাম্বারটাও অপরিচিত। এটা কার নাম্বার হতে পারে? আরহামের? তবে সে নাম পরিচয় না দিয়ে মেসেজ করলো কেন? আর সালামই বা দিলো কেন? ছোট ছোট প্রশ্ন গুলো তার মাথায় কিলবিল করে ঘুরপাক খেতে লাগলো।

কয়েক সেকেন্ড বাদে আবারও একই নাম্বার থেকে মেসেজ এলো। মেসেজে লিখা, ‘কি করছো?

বেশ রাগ লাগলো এবার। এতো রাতে কেউ কি করে এটা যে কারোরই জানার কথা। এতো ন্যাকামি করে প্রশ্ন করার কি আছে। শাপলা কি যেনো মনে করে রিপ্লাই করলো
“এতো রাতে মানুষ কি করে? নিশ্চয়ই নাচানাচি করে না। এটা ঘুমানোর সময়, স্বভাবতই আমিও ঘুমোচ্ছি।

পরক্ষণে আবারও মেসেজ এলো, ‘যদি ঘুমিয়েই থাকো, তাহলে আমার প্রশ্নের উত্তর দিলে কি করে?

শাপলা এবার মাথা খাটালো। ঠিকই তো, সে তো ঘুমোচ্ছে না। আর এই মানুষটাই বা কে? প্রশ্ন টা মনে উঁকি দিতেই সে আবারও মেসেজ করলো
“কে আপনি?
কয়েক সেকেন্ড পর রিপ্লাই এলো
“কে হলে খুশি হবে?
শাপলার রাগ হলো এবার। এতো ঘুরিয়ে পেচিয়ে বলার কি আছে। আর রিপ্লাই করবে না সে। যে হবার হোক। ফোনটা একপাশে রেখে শুয়ে ডান কাত হয়ে শুয়ে পরলো শাপলা। আরো কয়েকবার মেসেজ টোন বেজে উঠলো। তবে শাপলা আর মাথা ঘামালো না। কে না কে রাত দুপুরে মজা করছে, তার সাথে ফাউ কথা বলার মন মানসিকতা তার নেই। এক দুই তিন মিনিট করে প্রায় পাঁচ মিনিট কেটে গেলো। ঠিক তখনই ফোনের ভাইব্রেশন কাঁপিয়ে কেউ কল দিলো। শাপলা চোখেমুখে বিরক্তি নিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো এতোক্ষণ যে নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে, কলটাও সে নাম্বার থেকেই এসেছে। প্রথমে ভাবলো রিসিভ করবে না, পরক্ষণে মানুষটা কে সেটা জানার আগ্রহ থেকে কল রিসিভ করলো সে। প্রথমে কয়েক সেকেন্ড কানে ঠেকিয়ে কোনো কথা বললো না শাপলা। ওপাশের মানুষের কন্ঠস্বরের অপেক্ষায় আছে সে। কিন্তু দুর্ভাগ্য বসত ওপাশ থেকেও কেউ কিছু বলছে না।

শেষে এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে সে ফিসফিস করে বললো
“কে? কে বলছেন?
এবার ওপাশ থেকে এক সুমিষ্ট কন্ঠধারী ছেলের উত্তর এলো। বেশ নম্রভাবে বললো
“আমি আরহাম।
আরহাম নামটা শুনেই কলিজাটা ছ্যাৎ করে উঠলো তার। এই আরহামের সাথেই তো আজ তার বিয়ে ঠিক হয়েছে। আজ থেকে পুরো সাতদিন পর তাদের বিয়ে। বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়েছে শ্রাবণের পরীক্ষার দিন শেষ হবার উপর নির্ভর করে। শ্রাবণ ভাইয়ের ইনকোর্স এক্সাম শেষ হবার পরদিনই বিয়ে। তাদের যে উৎসাহ এ বিয়ে নিয়ে, শ্রাবণ ভাইয়ের এক্সাম না থাকলে বোধহয় আরো আগেই ডেট দিয়ে দিতো।

শাপলাকে নিরব দেখে ওপাশ থেকে আবারও আরহাম নামের সেই সুমিষ্ট কন্ঠধারী ছেলেটি বলে উঠলো
“কথা বলছো না কেন শাপলা?
শাপলা কাঁপা কাঁপা গলায় ফিসফিস করে বললো
“এতো রাতে কেন ফোন করলেন?
“বিরক্ত হচ্ছো?
“নাহ। একটা লম্বা নিশ্বাস ছেড়ে বললো শাপলা।
ওপাশ থেকে মৃদু হাসির আওয়াজ পেলো শাপলা। জানতে ইচ্ছে করলো কেন সে হাসছে। কিন্তু প্রশ্ন টা আর করলো না সে। আরহাম আবারও বললো
“তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চাই শাপলা।
শাপলা ভদ্রতাসূচক কন্ঠে উত্তর দিলো
“আগামীকাল নাহয় কথা বলি আমরা। অনেক রাত হয়ে গেছে আজ।
“আচ্ছা। শুভ রাত্রি।
“হুম।
শাপলা ফোন কেটে দেওয়ার আগ মুহূর্তে আরহাম আবারও বলে উঠলো
“তারাতাড়ি ঘুমিয়ে পরো। নয়তো শরীর খারাপ করবে, চেহারা নষ্ট হয়ে যাবে রাত জাগলে।
“চেহারা নষ্ট হলে কি বিয়ে ভেঙ্গে দিবেন?
শাপলার কথায় হাসলো আরহাম। বললো
“প্রশ্নই আসে না।।

শাপলা আর কোনো কথা না বাড়িয়ে ফোন রেখে দিয়ে ঘুমের জগতে পাড়ি দিলো।

একটা দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভাংলো পদ্ম’র। দেখলো গোধুলি বেলায় বিশাল এক সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। সমুদ্রে বিশাল বড় বড় ঢেউ বইছে। পাশেই দাঁড়িয়ে আছে শ্রাবণ ভাই। শ্রাবণ ভাই তার হাতটা শক্ত করে ধরে আছে। পদ্ম সমুদ্রের ঢেউ দেখছে আর শ্রাবণ দেখছে তার পদ্মফুলকে। সাগরের পাশে ঠান্ডা শীতল বাতাস ওদের দুজনের গা ভেদ করে চলে যাচ্ছে, শরীরে এক ঝংকারের সৃষ্টি হচ্ছে। ধীরে ধীরে শ্রাবণ পদ্মকে তার কাছে টেনে নিচ্ছে। ঠিক তখনই তীব্র এক ঢেউ এসে হানা দিলো তাদের। তীব্র আঘাতে দূরে গিয়ে আঁচড়ে পরলো শ্রাবণ। বিশাল ঢেউ তার জলের কোলে করে টানতে টানরে নিয়ে যেতে লাগলো পদ্ম’কে। পদ্ম ফিরে আসার চেষ্টা করছে, কিন্তু পারছে না। শ্রাবণ দৌড়ে এসে পানিতে ঝাপিয়ে পরলো তার পদ্মফুলকে ঢেউ থেকে ফিরিয়ে আনার। তবে তার আগেই সব শুন্য। বিশাল জলরাশির বুকে পদ্ম হারিয়ে গেলো।

এমন একটা উদ্ভট স্বপ্ন দেখে নিজের উপর নিজেই ক্ষীপ্ত সে। মনে মনে বির বির করে সেই বাজে স্বপ্নটাকে বকতে লাগলো পদ্ম। শাপলা সেটা খেয়াল করে বললো
“একা একা কি করিস?
পদ্ম মুখ ফুলিয়ে বললো
“স্বপ্ন দেখি।
“কি স্বপ্ন?
“বলবো না। পরে স্বপ্নে এসেও তুই আমাদের ভালোবাসায় বেগড়া দিবি।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here