টক্সিক_রিলেশনশীপ,১২,১৩

0
1385

টক্সিক_রিলেশনশীপ,১২,১৩
ঈপ্সিতা শিকদার
১২

“বড় সাহেব খান বাড়িতে না কি কে বা কারা যেন এসেছে গতকাল? খুব সম্ভবত নিয়াজ খান আর নুসরাত মোস্তফার একমাত্র ছেলেই। এমন কী তাদের মাঝে দুটো মেয়েও ছিল সাথে। আরেকটা কথা খান বাড়ি থেকেই মনে হয় একটা গাড়ি সদর হাসপাতালে গেছে। আর সেই গাড়িতে থাকা এক মেয়ের বাচ্চা হয়েছে সেই হাসপাতালে।”

রাগ প্রকাশে টেবিলে শব্দ করে এক থাপ্পড় মারেন অজানা মধ্যবয়স্ক লোকটি। তাঁর চোখে-মুখে তীব্র আক্রোশ।

“এমন তো নয় নিয়াজের ছেলে ফাজের সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে। তাহলে তো খুব বড় ক্ষতি হতে চলেছে আমার! এটা আটকাতে পারে একমাত্র মৃত্যু। আমার রাস্তায় যে আসবে তার মৃত্যুই কাম্য।”

কথার মাঝেই অলঙ্কৃত কালচে লাঠিতে ভর দিয়ে এক বৃদ্ধা প্রবেশ করে কক্ষে। মধ্যবয়স্ক পুরুষটির মুখশ্রীতে রাগের মাঝেই বিনয়ী ও নম্র ভাব ফুটে উঠে।

“আম্মা আপনি আসতে গেলেন কেন? কিছু লাগলে আমাকে বলতেন।”

“বলি বাঁচবি কয়দিন ব্যাটা? হিসাব দিতে পারবি তো সব অপকর্মের উপরওয়ালার কাছে? ওরা তো তোরই আপন জন, পর না।”

মধ্যবয়স্ক পুরুষটির চোখে-মুখে বিরক্তি দেখা গেল, তবুও মুখে কিছু বললেন না। এই নারীটি যে তাঁর জীবনে সবচেয়ে বেশি সম্মানিত।

___

“আমাদের বের হতে হবে এখান থেকে যত দ্রুত সম্ভব। তুই গাড়ি বাইর কর, আমি চৈতালি, নাহিবা বাবু আর বাসন্তীকে নিয়ে আসছি।”

অস্থির চিত্তে বলল নায়িম। অনিমেষ তার কথার আগা-মাথা বুঝে উঠতে পারল না। সবই তো ঠিক ছিল, হুট করে কী হলো এই ছেলের?”

“বাবুর নাম নাহিদা রাখলি কখন? আর এককটা দিন তো ভাবীকে অবজার্ভেশনে রাখা দরকার। এত তাড়া কীসের?”

“যা বলছি তা কর তো। গ্যাঁজাইস না!”

ধমকিয়ে উঠে নায়িম। তাকে বেশ চিন্তিত ও গুরুগম্ভীর দেখাচ্ছে। বন্ধুর মুখশ্রীর ভাব ও বচন ভঙ্গি দেখে অনিমেষ আর কিছু বলে না। মাথা দুলিয়ে গাড়ি বের করতে বের হয়।

নায়িম দ্রুত এনআইসিইউ থেকে নাহিবাকে নিয়ে চৈতালির কোলে দেয়, আর অর্ধচৈতন্য বাসন্তীকে নিজের কোলে তুলে নিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে গাড়িতে চড়ে বসে।

চৈতালি নিজের কোলে থাকা ছোট্ট শিশুটিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। মনে ছোট ছোট রঙিন স্বপ্ন বুনে ফেলছে।

“কী ছোটো ছোটো হাত-পা, রক্তিম দুটো অধর! ইশ! আমার যদি এমন একটা বাচ্চা থাকত!” নিজের খামখেয়ালি ভাবনার সাথে বাস্তবতাও মনে পড়ে যায়। চেহারায় আঁধার নেমে আসে, আঁখি জোড়ার সম্মুখে এক ঝাঁক শূণ্যতা।

গাড়িটা ধীরেধীরে এগিয়ে চলেছে নিজের পথে। নায়িম জানালা দিয়ে হাসপাতালের দিকে তাকালে পঞ্চাশ-ষাট জন গুণ্ডাপাণ্ডা ঢুকছে হাসপাতালে, কারো হাতে হকি তো কারো হাতে ধারালো ছুড়ি। শব্দ করে এক শ্বাস ফেলে নায়িম।

“তুমি বড়ও হওনি তাতেই তোমার এত ক্ষতিসাধনের প্রচেষ্টা। এ-ই প্রমাণ প্রিন্সেস তুমি আমার চেয়েও নিষ্ঠুর ও কঠোর জীবন পেতে চলেছো। কিন্তু আমি তা হতে দেব না, তার জন্য যতটা নিষ্ঠুর হতে হয় আমার, আমি হব। তুমি দূরে থাকো, তবুও ভালো থাকো এটাই এই নিষ্ঠুর, পাষাণ বাবার কামনা।”

বাসন্তীর অর্ধচৈতন্য মুখখানার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সে। কপাল হতে গাল অবধি কলমের বল পেনে আঁকা বাঁকা দাগের মতোন পড়ে থাকা কালো চুলটি সরিয়ে দেয়।

“আমার তোমাকে কষ্ট দিতে হতে পারে, বসন্ত। খুব বেশিই কষ্ট এবং লাঞ্ছনা লাগাতে পারি আমি। ভেবেছিলাম কোনোদিন কাউকে ভালোবাসব না। জীবনের এ পর্যায়ে এসে মনে হচ্ছে ভালোবেসে ফেলেছি আমি প্রথম সাক্ষাতেই। তবে তোমাকে নয়, আমার ছোট্ট অস্তিত্বকে। ভালোবাসা সবচেয়ে দামী, জীবনরত্নের চেয়েও। যদি ভাগ্য অনুকূলে না হয় তাহলে রাজকন্যাকে বাঁচাতে যেয়ে রাজ্যের রাণীই নিঃস্ব হোক।”

পৈশাচিকতা ফুটে উঠে নায়িমের মুখশ্রীতে। অনুভূতিহীন চুমু খায় নিজের বসন্ত কুমারীর ললাটে।

___

সকাল নয়টায় ঘুম ভাঙে তাহজিবের। ঘুম থেকে জেগেই বেশ তেষ্টা পায় তার, তবে তা ক্যাফেইন কিংবা পানির নয়, নিকোটিনের ধোঁয়ার৷ চেইন স্মোকার যে সে।

বেডের পাশের ছোট্ট টেবিল থেকে সিগরেট আর লাইটার নিয়ে সিগরেট জ্বালিয়ে দুই ঠোঁটের ফাঁকে রাখে সে৷ আজ মন বেশ সতেজ তার, হাসি হাসি মুখ খানা। তার চোখজোড়া উৎসুক হয়ে আছে নায়িমের বিষয়ে ছাপানো খবরটি পড়ার জন্য।

কিন্তু এ কী এক অবস্থা! ফেসবুকে ঢুকে দেখে নামি-দামি সব পেজের কোথাও নায়িম সম্পর্কিত কোনো পোস্ট নেই। ‘গায়ক নায়িম’ লিখে সার্চ দেয় সে। দুয়েকটাই নিউস পায় নিজের কাঙ্ক্ষিত, কিন্তু তা অত্যন্ত নিম্ন মানের ও নতুন নিউস চ্যানেল থেকে পোস্ট করা হয়েছে।

মোবাইলটা ঠাশ করে মেঝেতে ফেলে “ড্যাম ইট!” বলে চেঁচিয়ে উঠে সে।

“কেন? কেন? কেন? কেন সবসময় নায়িম বেঁচে যায়? কীভাবে? মিডিয়াকে কন্ট্রোল করার শক্তি ও কই পায়? কই!”

তার কণ্ঠ ক্রমশ জোরালো হচ্ছে, একই হারে বাড়ছে রাগ, যা ঝড়ছে সে ঘরের জিনিসপত্রের উপর। কয়েক মিনিটেই পুরো বেডরুম লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। বেডের সামনে রাগে ফোঁস ফোঁস করতে বসে পড়ে তাহজিব।

___

ধানমণ্ডি ফেরার পথে একের পর এক ম্যাসেজ নটিফিকেশন আসতে শুরু করে। ব্যাপারটা উপেক্ষা ফোন জ্যাকেটের পকেটে রাখে সে। এরপর কল আসে এক প্রডিউসার।

“তুমি কোথায় নায়িম? এসব কী শুনছি তোমার ব্যাপারে?”

একটু ঘাবড়ে যায় সে। তবুও দৃঢ়তা বিদ্যমান তার মাঝে।

“আমি তো বাসার বাহিরে। কেন?”

“তোমাকে কী সব নিউস ছেপেছে দুয়েকটা নিউস চ্যানেল! সবাই উড়া-ধুরা শেয়ার দিচ্ছে নিউসটা। ‘বাংলাদেশ টাইম’ (ছদ্মনাম) তুমি তাড়াতাড়ি নিউস চেক করো।”

“গায়ক নায়ক নায়িমের গাড়ি দেখতে পাওয়া গেছে সদর হাসপাতালের সামনে, সাথে ছিল এক অন্তঃসত্ত্বা নারী”

পড়তেই নায়িমের কপাল বেয়ে সূক্ষ্ম ঘাম বেয়ে পড়ে। বস্তুত, নিউস চ্যানেলটা এবং পেজটা নতুন ও ছোট সদস্য সংখ্যার হলেও নায়িমের নাম জুড়ে যাওয়ায়, অনেক শেয়ার করা হচ্ছে এবং রিচও বেশ বাড়ন্ত পোস্টটির। এবার তবে কী করবে নায়িম? আড়ালে রাখতে পারবে তো সত্য না কি ভেঙে পড়বে তার মিথ্যের রাজপ্রাসাদ!”

চলবে…

#টক্সিক_রিলেশনশীপ
||১৩তম পর্ব||
-ঈপ্সিতা শিকদার
চৈতালি, বাসন্তী ও নাহিবাকে ধানমণ্ডির এপার্টমেন্টে রেখে নায়িম অনিমেষকে সাথে নিয়ে নিজের গুলশানের বাসার দিকে অগ্রসর হয়। পৌঁছে গাড়ি থেকে নামার আগে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে নেয় কেউ আছে কি না। নিশ্চিত হয়ে তাড়াতাড়ি নেমে বাসায় ঢুকে।

লিভিং রুমে বসে গভীর চিন্তায় ডুবে পড়ে সে। অনিমেষ যুবকের অবস্থা দেখে বেশ বিরক্ত হয়েই প্রশ্ন করে,

“কিছুই বুঝলাম না তোর কাহিনী! হাড়তাড় করে হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসলি নাহিদা, আবার ওদের ঐ বাসায় একা রেখে আসলি। সমস্যা কী তোর?”

নায়িম ফোনে তার সম্পর্কিত নিউসটি বের করে এগিয়ে দেয় অনিমেষের কাছে। সাথে শুধায়,

“আমার মেয়ের নাম নাহিদা না, নাহিবা! আরেকবার আমার মেয়েকে ভুলভাল নামে ডাকলে খবর আছে তোর?”

রাগান্বিত কণ্ঠ শুনে শুকনো ঢোক গিলে অনিমেষ। তারপর ফোনটা হাতে নিয়ে সংবাদটি পড়তে শুরু করে। তার মাথায় হাত, বিপুল হতাশ সে, হার মেনে ফেলেছে ইতিমধ্যেই। অথচ, নায়িম কী আয়েশ করে রাজকীয় ভঙ্গিমায় বসে আছে।

“এখন কী হবে রে! সব তো বলে দিতে হবে। তোর ইমেজ নষ্ট হয়ে যাবে!”

“ওমন কিছুই হবে না। উলটো এমন ব্যবস্থা করব যেন যে মানুষগুলো ইতিমধ্যে হায় হায় করছে তারাই বাহবা দিবে।”

নায়িমের বাঁকা হাসি আর বাঁকা কথা উভয়ের অর্থই ধরতে পারল না অনিমেষ। চেহারায় অসহায়ত্বের ছাপ এনে বসে রইল।

___

বাসন্তীর পুরোপুরি জ্ঞান ফিরতেই আশেপাশে কাউকে না দেখে এবং নিজেকে হুট করেই বেডরুমে দেখে উত্তেজিত হয়ে গেল। তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়াতে যেয়ে সেঁলাইয়ের স্থানে চাপ লাগল।

“আহ্! মা গো!” অদম্য ব্যথায় আর্তনাদ করে আবার আগের মতোই শুয়ে পড়ল সে।

চৈতালি সেই মুহূর্ত নাহিবাকে কোলে নিয়ে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছিল। সে দ্রুত পদচারণায় বাসন্তীর ঘরে এল।

“বাসন্তী কী হলো তোমার? লেগেছে কোথাও? নায়িমকে কল দিব?”

প্রচণ্ড ব্যথায় কথা বলার শক্তি যেন হারিয়ে ফেলেছে বাসন্তী। কোনোরকম ইশারায় না বলল। বাচ্চা জন্ম দেওয়াটা একটুও সহজ কথা নয়, তা নর্মালেই জন্ম দেওয়া হোক বা সিজারেই। এ নিয়ে তুলনা করাটাই বরং পাপ।

আস্তে আস্তে ব্যথা কমল বাসন্তীর। মুখ খুলল সে,

“বাবুকে একটু কাছে আনবে? আমি দেখব ওকে।”

অত্যন্ত ক্ষীণ তার গলা, পুরোপুরি বোধগম্য হলো না চৈতালির। তবুও কীভাবে যেন বুঝে এগিয়ে দেয় ছোট্ট জানটিকে। বাসন্তী পরম মমতায় নয়ন ভরে দেখে শিশুটিকে। যদিও নবজাতকের চেহারার গঠন বুঝা খুবই মুশকিল, ময়-মুরব্বিরা তো বলে থাকেন জন্মের চল্লিশ দিনে চল্লিশ রকম গঠন খেয়াল করা যায় নবজাতকের। তবুও কেন যেন বাসন্তীর মনে হচ্ছে বাচ্চাটি তার রঙ পেলেও চেহারা সম্পূর্ণ বাবার। বিশুদ্ধ সুখে তার দুই চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।

“সোনামণি, তোকে পেয়ে আমি যে কতটা সুখ বোধ করছি তা মুখে প্রকাশের মতোন না। তুই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমার সাথে থাক, ভালো থাক, সুখী থাক এটুকুই চাওয়া আল্লাহর নিকট।”

___

অনিমেষের ডান পায়ে ব্যান্ডেজ, নায়িমের মাথাও সাদা ব্যান্ডেজ দিয়ে বাধানো। সামনে বসে আছে সুনামধন্য গণমাধ্যমের সব সাংবাদিকেরা।

“মি. নায়িম, আপনার আর আপনার লইয়ারের এই অবস্থা কী করে?”

“আর ভিডিও ফুটেজে থাকা ঐ দুটো মেয়ের সাথেই বা আপনার কী সম্পর্ক?”

“আপনার নীরবতা কিন্তু মানুষের মনের উঠতি ভাবনাতে সম্মতি দান। তবে কী আমরা ধরে নিব অন্তঃসত্ত্বা মেয়েটি আপনারই সঙ্গি এবং তার গর্ভের সন্তানও আপনারই।”

এমন নানা ধরনের মন্তব্য আসছে সাংবাদিকদের কাছ থেকে। নায়িম আস্তে করে আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। সবাই সচকিত হয়ে তার পানে তাকায়।

“আপনারা যেহেতু আমাকে কথা বলার সুযোগই দিচ্ছেন না, তাহলে এখানে বসে থেকে লাভ নেই। বরং, আমি চলে যাই, আপনার নিজেদের মতোন গ্যাস করতে থাকুন।” নায়িমের বাঁকা কথা সবার মাথায় সূক্ষ্ম তীর হয়ে থাকে। সকলে অনুরোধ করতে শুরু করে নায়িমকে সেখানে থাকার।

নায়িম আলতো হাসে। অত্যন্ত শান্ত কণ্ঠে বলে,

“বাঙালি আসলে তিলকে তাল কী করে বানাতে হয় খুব ভালো করেই জানে। গতকাল আমি একটু আমার উকিল সাহেব, মানে আমার বেস্টু অনিমেষকে নিয়ে ঢাকার বাইরে লং ড্রাইভে গিয়েছিলাম।

মিডিয়ার মানুষ আমি, সর্বক্ষণই ব্যস্ততা। আজকাল তো ছুটিই পাই না এই যান্ত্রিক জীবন থেকে। গতকাল একটু ফ্রী সময় ছিল তাই বের হলাম। ড্রাইভ করার সময় গাড়ি মিসব্যালেন্স হয়ে দু’জন নারীর সাথে হালকা ধাক্কা লেগে গাছের সাথে লাগে। আমিও মাথায় বাড়ি খাই৷ অনিমেষ গাড়ির দরজা খুলে ছিটকে বাহিরে পড়ে পায়ে ব্যথা পায়।

আর এই মেয়েরাই ভিডিওর দুজন নারী। একজনের ডেলিভারির সময় হয়ে গিয়েছিল, সে চেঁচাচ্ছিল। আমরা তাড়াতাড়ি মেয়ে দুটোকে কাছের হাসপাতালে নিয়ে যাই। এখন বলতে পারেন তাহলে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে আসলেই তো হতো। আমার যাওয়ার কী দরকার ছিল?

আসলে আমার মনুষ্যত্ব বোধ আমাকে সায় দেয়নি চলে আসতে। মেয়েটার আর্তনাদ আমাকে বাধ্য করে থাকতে, আমার গাড়ির সমস্যার জন্যও তো… মেয়েটা সুস্থ হলেই আমি হাসপাতাল ছাড়ি।

এখন কে বা কারা সেই ঘটনা রেকোর্ড করে মিডিয়ায় দিয়েছে আমি জানি না। হয়তো ব্যপারটা আমাকে বদনাম করার জন্যই। বাট আই ডোন্ট মাইন্ড, নিন্দুক আমার মান খারাপ করতে পারবে, কিন্তু আমার ভাগ্য তো নিতে পারবে না।”

নায়িমের কাছে সবটা শুনে সবাই সন্তুষ্ট। মূলত তারা নায়িমের ইমেজ পরিস্কার হবে এমন কিছু শুনার জন্যই এসেছিল। কিন্তু সেখানে একজন তাহজিবের টাকা খাওয়া লোকও ছিল। টাকা যেহেতু খেয়েছে সে তো আর এমনে এমনেই চলে যাবে না।

“আমরা কী করে বিশ্বাস করব আপনার কথা? হতেও তো পারে ইমেজ রক্ষার্থে আপনি এসব কাহিনী রচনা করছেন। হতেও তো পারে আপনার এসব ক্ষতগুলো নিছকই নাটকীয়তা।”

নায়িমের মুখশ্রীতে তার রহস্যময় বাঁকা হাসি ফুটে উঠে। কিছু না বলেই নিজের মাথার সাদা পট্টিটা ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করে। পুরোটা খুলে কপালের বাম পাশ থেকে তুলোটা সরাতেই রক্তে জলজল করতে থাকা ক্ষতটা বেড়িয়ে আসে।

সাংবাদিকের মুখে তালা লেগে যায়। বাকিরা খচাখচ ছবি তুলে নেয়, ভিডিও তো করা হচ্ছেই। নায়িম ধীর পায়ে হল রুম ত্যাগ করে। বাকি কথোপকথন সাড়ে অনিমেষ।

ঘণ্টা তিনেক আগে,

“মানে কী? তুই কী করতে যাচ্ছিস?”

নায়িম কিছু না বলে টেবিলে রাখা শক্ত কাঠের শোপিজ দিয়ে নিজের কপালে বেশ জোরেশোরে আঘাত করে।

“আরে, আরে, পাগল হলি না কি?” বলে তাড়াতাড়ি পকেট থেকে রুমাল বের করে তার কপালে চেপে ধরে।

নায়িম রুমাল সরিয়ে তাকে সব পরিকল্পনা খুলে বলল। সাথে বলল,

“তুই এমনেই পায়ে একটা ব্যান্ডেজ প্যাঁচিয়ে শর্ট প্যান্ট পড়ে নে।”

বর্তমানে,

নায়িম রকিং চেয়ারে দোল খেতে খেতে ভাবছে,

“মি. তাহজিব এহসান অনেক মাথায় চড়ে থেকেছেন। এবার আছড়ে ফেলার পালা। ভেবেছিলাম নিজে থেকেই সরে যাবে, কিন্তু না, অনেক বাড় বেড়েছে তার।”

“এই শোন! তোর লোক ফোন করেছে!”

অনিমেষের ডাকে ভাবনার সুতো কাটে নায়িমের।
“কী জন্য?”

“ঐ দুই হারামি, আই মিন মৈত্রী আর মৈত্রীর জামাইয়ের কী করবে জানতে?”

“এই দুটো বাহিরে বের হলে খুব জ্বালা হবে। কারণ ওরা জানে বাসন্তী আমার বউ, এবার তো আমার ক্ষমতাও দেখেছে। বল ঐ দুটোকে বিক্রি করে দিতে অন্য লোকদের কাছে বা বিদেশে দাস হিসেবে বিক্রি করে দিতে, যেটা ইচ্ছা। তবে মুখ খুলার অবস্থায় বা এদেশে যেন না থাকে।”

“হোয়াট? স্লেভারি? তুই এই ধরনের মানুষদের কী করে চিনিস?”

“যা বলছি তা কর। প্রশ্ন করিস না দয়া করে।”

_

তাহজিবের বাসায় একটা ফুলের তোড়া পাঠিয়েছে কে যেন। তাহজিব তোড়াটা পেয়ে খেয়াল করে তাতে একটা চিরকুট গুঁজা, নিয়ে পড়তে শুরু করে সে।

“যে মানুষ ইমেজ বাঁচাতে নিজেকে রক্তাক্ত করতে পারে, সে তোমার কী অবস্থা করতে পারে ভেবো একবার।”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here