টপ টেন মডেল,পর্বঃ০২,৩
ঋতু পান্না
পর্বঃ০২
-“আমাকে বিয়ে করবেন? আমার মনে হয় আপনি যাকে বিয়ে করতে এসেছেন, সে আসিনি। আর আমি যাকে বিয়ে করতে এসেছিলাম সে অন্য একটি মেয়ের সাথে পালিয়েছে। আমরা দু’জনেই একই পরিস্থিতির শিকার। তাই এখানে আজ আমরা বিয়ে করে নিতে পারি না?”
খুব শান্তভাবে রাজের চোখে চোখ রেখে কথাগুলো বলল তনিমা।
বিয়ের সাজে একটি মেয়েকে এমন কথা বলতে দেখে রাজ ভীষণই অবাক হল। রাজের এসিস্ট্যান্ট তো রীতিমত হতবাক। বলে কি এই মেয়ে! এই মেয়ের এত সাহস!
-“কিন্তু মিস…হোয়াটএভার আমাকে বিয়ে করে আপনার ফায়দাটা ঠিক কি?” চোখের সানগ্লাসটা খুলে ভ্রু কুঁচকে জানতে চাইল রাজ।
তনিমা চোখ মুখ শক্ত করে জানাল,
-“আমার সাথে যে বিশ্বাসঘাতকা করেছে তাকে উচিত শিক্ষা দিতে চাই। বিশ্বাস আর স্বপ্ন ভঙ্গের জন্য ওকে শাস্তি পেতেই হবে। বাট ডিসিশন ইজ ইয়োর্স।”
রাজ নিজের এসিস্ট্যান্টকে নির্দেশ দিল এই মেয়েটির সমস্ত ইনফরমেশন দিতে। গুগলে তনিমার নাম লিখে সার্চ দিতেই তার সমস্ত তথ্য চলে এল। কয়েক সেকেন্ড ইনফরমেশনগুলো দেখে রাজের চোয়াল শক্ত হয়ে এল। সেখানে তনিমার তিন বছর আগের সমস্ত তথ্যই ছিল। আর তনিমার ক্যারিয়ার নষ্ট হওয়ার পিছনে কারন হিসাবে লেখা ছিল ‘পরী এন্টারটেইনমেন্ট’-এর সিইও আবির আহমেদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের কথা। মূলত এটি দেখে রাজের চোয়াল শক্ত হয়ে গিয়েছিল।
খুব শান্তভাবে ট্যাপটি এসিস্ট্যান্টের হাতে দিয়ে রাজ তনিমাকে বলল,
-“আপনাদের মতো চিপ, থার্ডক্লাস মডেলরা নিজেদের কি মনে করেন বলুন তো! আসলে আপনাদের মতো মডেলের জন্যই আমাদের এন্টারটেইনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রির আজ এ অবস্থা। নিজেদের রুপ দিয়ে কোটিপতি ছেলেদের মাথা নষ্ট করে দেন। রাবিশ! নাও গো টু হ্যাল! থার্ডক্লাস মডেল!
রাগ দেখিয়ে চিৎকার করে কথাগুলো বলে গাড়িতে উঠে চলে গেল রাজ। তনিমা কিছু বলার সুযোগও পেল না।
তনিমার এবার খুব কান্না পাচ্ছে। সাথে ভীষণ রাগও হচ্ছে তবে রাগটা আবিরের উপর নাকী এই রাজ চৌধুরির উপর বেশি হচ্ছে তা ঠিক বুঝতে পারল না সে।
নিজের ভালোবাসাকে তো নিজের করে পেলই না তার উপর সেই ভালোবাসার জন্যই নিজের সবটা হারাল।
নিজের পরিবার,সম্মান, ক্যারিয়ার সবটা হারাল।
তনিমা ভাবল না এভাবে হেরে গেলে চলবে না।আবিরকে তার বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি পেতে হবে। নিজের হারানো সম্মান সবটাই আবার অর্জন করবে সে। তিন বছর আগে যে তনিমা ইন্ডাস্ট্রি থেকে মুছে গিয়েছিল সে আবার ফিরবে তবে অন্য রুপে। সে প্রমাণ করে দিবে তনিমা সেনরা কখনো হারিয়ে যায় না।
নিজেকে কোনোরকম সামলে ট্যাক্সি নিয়ে বাড়ি ফিরল সে। এই সময় তার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন অন্বষাকে।
অন্বেষা হল তনিমার ম্যানেজার। তার চাইতেও বড় পরিচয় সে তনিমার খুব ভালো ফ্রেন্ড।
-“হঠাৎ বাড়িতে ডাকলে! কোনো সমস্যা হয়েছে কি, তনিমা?”
তনিমা নিষ্প্রাণ গলায় উওর দিল,
-“আমি আবির আর শবনমকে তাদের প্রতারণার শাস্তি দিতে চাই।”
অন্বেষার চোখ চকচক করে উঠল। উওেজিত হয়ে বলল,
-“সত্যিই! সত্যিই তুমি ওদের শাস্তি দিবে। আমি আছি তোমার পাশে। তোমার স্বপ্ন ভঙ্গের দায় ওদের নিতে হবে। কিন্তু তুমি এগুলো জানলে কিভাবে?”
তারপর তনিমা ওকে গতরাতের ঘটনা সবটা খুলে বলল।
-“আমার তোমার হেল্প লাগবে অন্বেষা। তুমি কি থাকবে আমার পাশে?”
তনিমার হাতের উপর নিজের হাত রেখে আশ্বাসের সুরে অন্বেষা বলল,
-“আমি সসবসময় তোমার পাশে আছি। কিন্ত তুমি কি কিছু প্ল্যান করেছে? তুমি কি পরী এন্টারটেইনমেন্ট ছেড়ে দিবে?”
বাঁকা হেসে তনিমা বলল,
-“না! পরী আমি ছাড়ব না। ওদের সাথে থেকে ওদের বিপক্ষে খেলব আমি। যে টপ টেন মডেল হওয়ার জন্য শবনম এত কিছু করল। ওকে আমি সেটার কাছে পৌঁছাতে দিব না।”
শবনমকে হসপিটাল থেকে বাড়িতে শিফট করা হয়েছে। কারন পরশু ওর সো আছে। এই ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির পরপর দুইটা সো। সো’গুলোতে সবার মন জয় করতে পারলে ওর টপ টেন মডেলের ফাইনালে যাওয়া কেউ আটকাতে পারবে না।
তনিমা পরদিন সকালে খুব স্বাভাবিক ভাবেই শবনমের সাথে দেখা করতে আসে। সেখানে আবিরও উপস্থিত ছিল। তনিমাকে দেখে শবনমের মুখে বিশ্বজয়ের হাসি ফুটে উঠল। টুকটাক কথাবার্তা হল তাদের। কিন্তু কেউই তাদের বিয়ের ব্যাপারে কোনো কথা বলল না।
পরদিন সন্ধ্যায় আবির, তনিমা, শবনম এবং তার ম্যানেজার সো’তে এসে উপস্থিত হল। শবনমের মুখে বিশ্বজয়ের হাসি। ও ওর স্বপ্নের খুব কাছে। সে আজ নিজেকে উজাড় করে মেলে ধরবে। অন্যদিকে, তনিমার মুখে ডেভিল স্মাইল।
-“আমাদের প্ল্যান রেডি তো?
ফোনের ওপাশ থেকে,
-“ইয়েস মিস..
বলেই ডেভিল স্মাইল দিল লোকটি।
আর একটু পরেই সো শুরু হবে। কিন্তু সো শুরু কিছুক্ষণ আগে হঠাৎ শবনমকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
ঠিক ঐই সময় একটি ফোন আশে তনিমার কাছে। কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে উওেজিত হয়ে,
-“তনিমা, আমাদের ফিট করা লোক শবনমকে তুলে আনতে পারেনি।”
-“হোয়াট! তাহলে শবনম কোথায়?”
বিস্ময় নিয়ে বলল তনিমা।
বিষয়টি খুব ভাবাচ্ছে তনিমাকে। কে করতে পারে এই কাজ! কে! কে এমন থাকতে পারে যে শবনমের সাথে এটা করল! উফ্, আর ভাবতে পারছে না তনিমা।
ওদিকে, আবিরের প্রায় পাগল পাগল অবস্থা । শবনমকে না পেলে এখন কি হবে? আজ শবনমকে না পেলে তার কোম্পানি শেষ! সে কি করবে এখন..
চলবে..
#টপ_টেন_মডেল
#ঋতু_পান্না
#পর্বঃ৩
তনিমা এটা ভেবেই কূল পাচ্ছে না, শবনমের ক্ষতি ঠিক কে চাইতে পারে! পিছন থেকে অন্বেষা বলে উঠল,
-“তনিমা এটা কি হল বুঝলাম না? তুমি কি এত ভাবছ বলতো?”
-“আমি ভাবছি, আমি ভাবছি আমরা ছাড়া আর কে হতে পারে যে শবনমের ক্ষতি চাই!”
-“আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। ও তুমি যে ডকুমেন্টস গুলো কালেক্ট করতে বলেছিলে, সেটা করতে পেরেছি।”
-“গুড, এবার রেডি থেকো। এরপর কি হবে সেটা আমি জানি!”
বলেই ডেভিল স্মাইল দিল তনিমা।
অন্যদিকে,
-“স্যার, আজকে শবনম ম্যাম সো’টা না করলে আমাদের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। আমাদের কোম্পানির নামে ওরা মামলা করতে পারে। লাস্ট মোমেন্টে এসে সুপার মডেল নিখোঁজ, এটার জন্য আমাদের খুব ভুগতে হবে স্যার!”
ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে,
-“আচ্ছা তনিমা এখন কোথায়?”
-“তনিমা ম্যাম তো বাইরের করিডোরে দাঁড়িয়ে আছেন।”
-“ও-কে বল আমি ডাকছি। ”
নিজের পারসোনাল এসিস্ট্যান্ট সাদিককে আদেশ দিয়ে আবির আবারও ভাবনায় মগ্ন হয়ে গেল।
-“তনিমা, প্লিজ আজকে শবনমের জায়গায় সো’টা তুমি কভার কর।”
বিস্ময়ের একটা ভাব নিয়ে তনিমা উওর দিল,
-“হোয়াট! শবনম এটা কখনো মেনে নিবে না। ও ফিরে আসলে আমাকে দোষ দিবে।”
আবির একটু কাতর স্বরে বলল,
-“দেখ, শবনম আসলে কি হবে সেটা পরে দেখা যাবে! আপাতত আমাদের কোম্পানি বাঁচাতে হবে।”
-“আমি এটা করতে পারব না আবির। সরি! শবনমের কত বছরের আকাঙ্ক্ষা, ও টপ টেন মডেল হবে। আমি ওর স্বপ্ন ভাঙ্গতে পারব না।” কিছুটা অবুঝের মতো করে কথাগুলো বলল তনিমা।
এবার খানিক আদেশের সুরে আবির জানাল,
-“আমি চাই তুমি আজকে শবনমের সো’টা কভার কর।”
-“আমাকে অর্ডার করছ নাকী ভালবাসার দাবী এটা!”
-“দেখ সেটা তোমার যা ইচ্ছা ভাবতে পার।
বাট প্লিজ ডু সামথিং।”
শবনমের কস্টিউম, জুয়েলারি সবকিছু দিয়ে রেডি করা হল তনিমাকে। অতঃপর যথারীতি সো শুরু হলে স্টেজে সুপার মডেল এন্ট্রি নিল। ঠোঁটে মিষ্টি হাসি। সমস্ত লাইট, ক্যামেরার ফোকাস এখন সুপার মডেল। মুখে ফেস মাক্স থাকার কারনে কেউ জানতেও পারল না মাক্সের আড়ালে আসলে কে রয়েছে।
এটা প্রথমবার না। এর আগেও অনেক বার শবনমের হয়ে তনিমা সো করেছে। আবিরের ভালোবাসার দোহায় দিয়ে ওরা দুজনে তনিমাকে দিয়ে বহুবার কাজ হাসিল করে নিয়েছে।
তবে এবার তনিমার মাথায় অন্য কিছু চলছিল। তার প্ল্যান মোতাবেক অন্য কিছু হতে চলেছে। এখন শুধু সো শেষ হবার অপেক্ষা। আজকে তনিমা আর অন্বেষা মিলে ধামাকা কিছু করতে চলেছে।
তনিমা নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে নিজেকে মেলে ধরেছে। অডিটোরিয়ামে উপস্থিত সকল অতিথি, আর্টিস্ট, দর্শক এবং ফটোগ্রাফার সকলেই মুগ্ধ। একের পর এক এক্সপ্রেশন দেখিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছিল তনিমা। এত সুন্দর মডেলিং! অবাক করার মতই। অর্গানাইজার কোম্পানির আর্টিস্টরা শবনমের এই পারফর্মেন্স নিয়ে বেশ আশাবাদী। তারা ‘পরী এন্টারটেইনমেন্ট’-এর সাথে ডিল ফাইনাল করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন।
এটা যেহেতু ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির অনেক বড় একটি সো ছিল তাই নিজের অফিসে বসে এই প্রোগ্রামের লাইভ টেলিকাস্ট দেখছিল রাজ। পরশু এই কোম্পানির দ্বিতীয় যে সো’টা আছে সেটাতে সে-ও ইনভাইটেড। সুপার মডেলের এত আকর্ষণীয় পারফর্মেন্স দেখে সে-ও ভীষণ অবাক হল। এরকম রত্নও তার ইন্ডাস্ট্রিতে আছে তা তার অজানা।
-“আকাশ, এই সুপার মডেলটির নাম কি?”
নিজের এসিস্ট্যান্টকে ডেকে জানতে চাইল সে।
-“স্যার, উনি হলেন মডেল শবনম ফারিহা। ‘পরী এন্টারটেইনমেন্ট’-এর একজন রেগুলার মডেল। বর্তমানে উনার ডিমান্ড বেশ হাই।”
-“সি ইজ জাস্ট ওয়াও! নেক্সট দিন উনার প্রোগ্রামে উনার সাথে মিটিং ফিক্সড কর। আমাদের নেক্সট মডেল উনি।”
আকাশ ওকে স্যার বলে বাইরে চলে গেল। আর রাজ খুব আগ্রহ নিয়ে আবারও সো দেখতে লাগল।
সো প্রায় শেষের দিকে, অন্বেষা তনিমার ইশারার অপেক্ষায় বসে আছে। কিন্তু হঠাৎ এমন কিছু ঘটে যাবে সেটা তনিমা বা অন্বেষা কল্পনাও করতে পারিনি। কেননা হলরুমের মেইন গেইটে আর কেউ নই স্বয়ং শবনম দাঁড়িয়ে আছে। সে জোরে জোরে হাততালি দিয়ে স্টেজের দিকে এগিয়ে আসছে। যেটা দেখে তনিমা তো প্রায় অবাকের শেষ সীমায় পৌঁছে গেল। আবিরও খুব অবাক হল।
সে নিজের মনেই বলে উঠল,
-“শবনম এখন এখানে কি করে থাকতে পারে!”
শুধু ওরা নই। পুরো অডিটোরিয়াম জুরেই দর্শকের ঝামেলা শুরু হয়ে গেল। নানারকম কথাবার্তা উঠতে লাগল। সবাই একবার শবনমের দিকে তাকাচ্ছে তো আবার স্টেজের সুপার মডেলের দিকে তাকাচ্ছে। সবার মনেই একটা প্রশ্ন মডেল শবনম এখানে থাকলে স্টেজে কে! মুহূর্তেই একটা বিশ্রী পরিস্থিতির সৃষ্টি হল।
সবাই সুপার মডেলের মুখ দেখার জন্য একপ্রকার ঝামেলা শুরু করে দিল। সবাই তাকে ফেস মাক্স খুলার জন্য নানারকম বিশ্রী ভাষা ব্যবহার করতে শুরু করল। তনিমাও সেটাই চেয়েছিল। আজ পুরো দুনিয়ার সামনে সে নিজেকে শবনম নই বরং তনিমা বলে পরিচয় দিবে। এর আগেও যেসকল সো’তে সে শবনমের হয়ে সো করেছিল সেসকল সো’র ডকুমেন্ট ম্যানেজার অন্বেষাকে কালেক্ট করতে বলেছিল।কিন্তু শবনমের উপস্থিতি সবটাই পাল্টে দিল।
আবির বা তনিমা কেউই ভাবতে পারেনি এইরকম একটা মুহূর্তে শবনম এখানে উপস্থিত হতে পারে।
এতসময় শবনম চুপ থাকলে এখন সে স্টেজে উঠে আসল। একটি মাইক হাতে নিয়ে তনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,-
“বাহ! তনিমা বাহ! কি চমৎকার প্ল্যান করতে পারো তুমি!”
শবনমের এমন কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে এল তনিমার। কি চাইছেটা কি সে!
চলবে..