টপ টেন মডেল,পর্ব: ৪

0
2335

টপ টেন মডেল,পর্ব: ৪
ঋতু_পান্না

-“বাহ! তনিমা..কি চমৎকার প্ল্যান করেছ তুমি!”
আমাকে সরিয়ে দিয়ে আমার জায়গায় নিজে পারফর্ম করতে চলে এলে। হোয়াট অ্যা ব্রিলিয়ান্ট আইডিয়া!”

মাইক হাতে ঝাঁঝালো কণ্ঠে তনিমাকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলল শবনম। কথাগুলো শুনে খুবই অবাক হলো সে। সমস্ত লাইট, ক্যামেরা এখন শবনমের মুখপানে। সাংবাদিকদের একের পর এক প্রশ্ন। পুরো অডিটোরিয়াম জুরে চেঁচামেচি শুরু হয়ে গেল। সবাই সুপার মডেলের মুখ দেখতে চেয়ে একরকম ঝামেলা বাঁধিয়ে দিল। আয়োজক কমিটিও মডেলের মুখ দেখার জন্য মডেলকে জোর করতে থাকল। তনিমা কিছু বলতেও পারছিল না। শবনম এসে তনিনার মুখ থেকে মাক্স সরিয়ে দিতেই সবাই দেখল এটা তিন বছর আগে ব্যান হয়ে যাওয়া মডেল তনিমা। এরপর ই সকলে বাজে বাজে মন্তব্য করতে শুরু করে দিল। সাংবাদিক সহ উপস্থিত সকলের মনেই প্রশ্ন সো শুরু হওয়ার আগে মডেল শবনম কোথায় ছিলেন! এখনই বা কোথা থেকে আসলেন!
আবির তখনও নিশ্চুপ।
শবনম আবারও বলতে লাগল,
-“আপনারা এটাই জানতে চান তো সো শুরুর আগে আমি কোথায় ছিলাম! আর আমার জায়গায় এই মডেল কেন?”
-“জ্বি ম্যাম। আমরা জানতে চাই এরকম একটি ঘটনার কারন কি? বলুন ম্যাম বলুন।” সাংবাদিক সহ সকলেই সমস্বরে জানতে চাইল।
-“সো শুরু আগে আমি আমার মেকআপ রুমে রেডি হচ্ছিলাম। তখন কেউ আমার মুখে কিছু একটা স্প্রে করল আর আমি সেন্সলেস হয়ে যায়। তারপর আর আমার কিছু মনে নেই।”
অনেকটা কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল শবনম।

সকলের মধ্যে আবারও কোলাহল সৃষ্টি হল। সাংবাদিকরা আবারও প্রশ্ন করল,
-“ম্যাম আপনি কীডন্যাপ হওয়ার ফলে তনিমা ম্যাম আপনার এই ইন্টারন্যাশনাল সো করার সুযোগ পাচ্ছে। তাহলে কি আপনার মনে হচ্ছে না, আপনার অপহরণ হওয়ার পিছনে তনিমা ম্যাডামের হাত আছে।”
এক সাংবাদিক কথাটি বলে উঠল।
-“হ্যা ম্যাডাম আপনার কি মনে হচ্ছে না এতে তনিমা ম্যামের হাত আছে।”
আরেকজন সাংবাদিক বলে উঠল।

এবার ন্যাকামি সুরে শবনম জানাল,
-“দেখুন আমি জানি না কে বা কারা আমার সাথে এমনটা করেছে। আমি কিছুই ভাবতে পারছি না। আমার মনে হয় না তনিমা এমনটা করতে পারে আবার সব পরিস্থিতি অনুসারে মনে হচ্ছে করতেও পারে।”

তনিমা যেন শকের উপর শক খাচ্ছে। ওর এটা ভেবে বেশী কষ্ট লাগছে আবির কিছু বলছে না।

আবির তখনও নিশ্চুপ। দর্শক এবার বলতে লাগল,
-“হ্যা, হ্যা এই ব্যানড মডেল ই এই কাজ করেছে।”
আবার কেউ কেউ বলল,
-“অন্যের ক্ষতি করে কেউ কোনদিন সাকসেস হয় না।”

-” এই ব্যানড মডেল তনিমা শবনম ম্যামের পজিশন খারাপ করতে চাই।”
-“হ্যা, অন্যায় পথ বেছে নিয়ে মডেল শবনমের পজিশন খারাপ করতে চাই এই থার্ডক্লাস মডেল।”

এরকম আরো অনেক খারাপ খারাপ কথা বলে তনিমাকে অপমান করা হল। তনিমা কিছু বলার সুযোগও পাচ্ছে না। তার নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছিল। এসময় অন্বেষা থাকলে পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দিতে পারত। কিন্তু সে অন্বেষাকে কোত্থাও দেখতে পাচ্ছিল না।
এবার আবির স্টেজে উঠে আসল। তনিমা ভাবল এবার হয়তো আবির সত্যিটা বলবে যে সে নিজ ইচ্ছায় সো’টা করতে চাইছিল না। বাধ্য হয়ে তাকে সো’টা করতে হচ্ছিল। কিন্তু ওর সেই আশায় জল ঢেলে দিয়ে আবির সকলের উদ্দেশ্যে বলল,
-“দেখুন এমনটা কি করে হল, তা আমি বা আমার কোম্পানির অজানা।”
আবিরের মুখে এমন কথা শুনে তনিমা কিছু বলার মতো ভাষা হারিয়ে ফেলল। করুণ দৃষ্টিতে আবিরের দিকে তাকাতেই আবির নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নিল।
এবার অর্গানাইজার কোম্পানির ডিরেক্টর মিস্টার খান রেগে গিয়ে বললেন,
-“মিস্টার আবির, এখানে কি হয়েছে না হয়েছে সেটা আমাদের জানার দরকার নেই। আমরা আপনার এন্টারটেইনমেন্ট এর নামে হাইকোর্টে প্রতারণার মামলা করব।”

আবির এবার কিছুটা বিপাকে পড়ে গেল। তার কোম্পানির কোনো দোষ নেই, যা হয়েছে তা মডেল তনিমার ইচ্ছা মতোই হয়েছে।
এটা বোঝানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল সে। আর তনিমা একের পর এক শক খাচ্ছিল। তার বলার মতো কিছুই নেই।
-“কিন্তু মিস্টার আহমেদ মডেল তনিমা কিন্তু স্বীকার করেন নি যে, মডেল শবনমের কীডন্যাপিং এর পিছনে তারই হাত রয়েছে। তার মানে আমরা ধরেই নিতে পারি যেটা হলো সেটা সম্পর্কে আপনার কোম্পানি আগে থেকেই অবগত ছিল।”

মিস্টার খানের মুখে এমন কথা শুনে আবির তনিমাকে সাইডে নিয়ে গিয়ে অনুরোধের স্বরে বলল,
-“প্লিজ তনিমা তুমি স্বীকার করে নাও যে এটা তুমি করেছ। প্লিজ তনিমা প্লিজ!”
-“আবির!… হতবাক হয়ে গেল তনিমা।
-“প্লিজ তনিমা আমাদের কোম্পানি আর শবনমের ক্যারিয়ার এখন তোমার হাতে। প্লিজ ডু সামথিং!”
-“আবির তুমি আমার কথাটা একটু ভেবে দেখ। সবাই আমাকে ভুল ভাবতেছে।”
-“তনিমা তোমাকে ভুল বুঝলেও কিছু যাবে আসবে না। আমরা তো কিছুদিনের মধ্যেই বিয়ে করে নিব।” তনিমার গালে আলতো হাত রেখে বলল আবির।
তনিমা আর কিছু বলল না। কয়েক সেকেন্ড আবিরের মুখের দিকে তাকিয়ে আবারও স্টেজে ফিরে আসল।

দর্শক আবারও বাজে কথা বলা শুরু করে দিল। সাংবাদিক এবং গার্ডদের মধ্যে একপ্রকার ঝামেলা শুরু হয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে দর্শক তনিমাকে খারাপ খারাপ কথা বলতে ভুল করছিল না।
তনিমা আর সহ্য করতে পারছিল না। সকলের উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
-“হ্যা আমি! আমি তনিমা সেনই মডেল শবনম ফারিহাকে কীডন্যাপ করেছিলাম। তার জায়গায় নিজে সো’তে চান্স পাওয়ার জন্য।”
কথাগুলো বলার সময় তনিমার চোখ চিকচিক করছিল। সেটা আর কেউ বুঝতে না পারলেও একজনের চোখ সেটা এড়াল না। আর তিনি হলেন রাজ চৌধুরি। লাইভ টেলিকাস্টে তনিমাকে দেখে সে ভীষণ অবাক হয়েছিল। তারপর থেকেই তনিমার প্রতিটা মুভমেন্ট সে খুব ভালো মতো পর্যবেক্ষণ করছিল।

তনিমার এমন উওর শুনে আবির এবং রাজ খুবই অবাক হল। তনিমা যে এত বোকা সেটা আবির আবারও প্রমাণ পেল। আর অন্যদিকে শবনমের মুখে বাঁকা হাসি ফুটে উঠল।
মুখে বিস্ময়ের ভাব নিয়ে সে বলল,
-“ছি! তনিমা ছি! আমি এটা কল্পনাও করতে পারিনি তুমি আমার সাথে এমন বিশ্বাসঘাতকা করতে পারলে!”
তনিমা এবার আর কিছু বলল না। সে ঠোঁট কামড়ে নিজের চোখের জল আটকে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল।
দর্শক মহল থেকে একজন বলে উঠল,
-“শবনম ফারিহার মতো একজন নামী মডেলের সাথে এমন করার শাস্তি তাকে পেতে হবে। এই চিপ মডেলকে মডেল শবনমের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।”
ঐ লোকটির সাথে তাল মিলিয়ে প্রায় সকলেই বলে উঠল,
-“হ্যা, তনিমাকে মডেল শবনমের কাছে ক্ষমা চাইতেই হবে। আমাদের সকলের সামনে তাকে ক্ষমা চাইতে হবে।”
একজন মডেল হয়ে আরেকজন মডেলের কাছে ক্ষমা চাওয়া যে কতটা কষ্টের সেটা তনিমা হারে হারে টের পাচ্ছিল। সে আবিরের দিকে তাকিয়ে নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করছিল। আবির হাতে অঙ্গভঙ্গিতে বোঝাল,
-“আমাদের বাঁচাতে তোমাকে ক্ষমা চাইতেই হবে তনিমা। প্লিজ তনিমা প্লিজ!”
তনিমা নিজের ঠোঁট কামড়ে ঘাড় কয়েকবার উপর নিছ করে খানিকটা সামনে এগিয়ে এসে,
-“শবনম আমাকে ক্ষমা করে দাও। তোমার সাথে এমনটা করা আমার উচিত হয়নি।”
প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শবনম ন্যাকামি সুরে বলল,
-“না, না তনিমা! তোমাকে আমার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে না। আমার ভাবতেই কষ্ট লাগছে তুমি আমার সাথে এমনটা করতে পারলে!”

তনিমা আর সহ্য করতে পারল না। দৌড়ে স্টেজ থেকে নেমে চলে আসল। সাথে সাথেই শবনমের মুখে রহস্যময় হাসি ফুটে উঠল।

সবাই মডেল শবনমের নামে জয় জয়কার করতে লাগল। তনিমার মতো অপরাধীকে ক্ষমা করে সে যে কত বড় মনের পরিচয় দিল। এতে তার ফ্যান ফলোয়ার স্বাভাবিক ভাবেই অনেক বেড়ে গেল। মিস্টার খানও নিজের ভুল বুঝতে পেরে। এর পরের সো’টা শবনমের সাথে করতে রাজি হয়ে গেলেন। শবনমের মুখে তখনও রহস্যময় হাসি সাথে আবিরেরও।

এদিকে কাঁদতে কাঁদতে হলরুম থেকে বের হয়ে ট্যাক্সিতে উঠে তনিমা একের পর এক অন্বেষাকে কল দিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু ফোন বন্ধ দেখাচ্ছিল। তনিমা এবার ভাবতে লাগল তাহলে অন্বেষাও কি তার সাথে বিশ্বাসঘাতকা করল!

-“আমি বুঝলাম না শবনম তুমি এমনটা কেন করলে?” শবনমের রুমে এসে জানতে চাইল আবির।
মুখে বিস্ময়ের ভাব নিয়ে,

-“কোনটা?” বলেই খুব জোরে হেসে ফেলল শবনম।
আবির এবার সোজা হয়ে বসে,

-“আমি বুঝলাম না, তুমিই নিজেই নিজেকে কীডন্যাপ করালে আবার সো’র মাঝে হুট করে চলেও এলে!”

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here