টপ_টেন_মডেল,পর্বঃ ০৯
ঋতু_পান্না
কিছুক্ষণ পর কয়েকজন সাংবাদিক রাজের রুমে ঢুকে গেল। প্রথমে তারা ঢুকতে ইতস্তত করলেও শবনম তাদের এমন করে বুঝিয়েছে যেন সেখানে বেআইনি কোনো কারবার চলতাছে। অগত্যা রুমে ঢুকে তো সবাই হতবাক! এখানে হচ্ছেটা কী! রাজ চৌধুরির বুকের উপর শুয়ে আছে মডেল তনিমা সেন। ততক্ষণে সবাই রুমে এসে উপস্থিত হয়ে গেল। রীতিমত হৈইচৈই শুরু হয়ে গেল। সাংবাদিকরা একের পর এক তাদের ঘনিষ্ঠ অবস্থার ছবি উঠানো শুরু করল।
শবনম বিষয়টা সবাইকে এমন ভাবে বোঝাল যেন সে দেখেছে তনিমা রাজের রুমে ঢুকেছে আর এখানে এরকম বিশ্রী কিছু ঘটবে সে ভাবতেও পারিনি। সকলের চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে যায় তনিমার। পিটপিট করে চোখ খুলতেই সে নিজেকে অচেনা একটা রুমে আবিষ্কার করল। তার মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণা হতে হচ্ছে। বিছনায় উঠে বসে সে নিজে মাথা চেপে ধরে রাখল কয়েক সেকেন্ড। শুনতে পেল কেউ তাকে খুব জঘন্য কিছু কথা বলছে। সাথেসাথেই চোখ সামনে তুলে দেখল পার্টিতে আসা বেশ কয়েকজন মানুষই তার সামনে। সাথে সাংবাদিক, শবনম আর আবিরও আছে। সে কিছুই বুঝতে পারছে না কিছু বলতে যাবে তার আগেই,
-“ছি! ছি! তনিমা। তুমি নিজের রুপ দেখিয়ে মিস্টার রাজ চৌধুরির মতো একজন মানুষকে এবইউজ করতে চাইছ? আমরা সবাই জানি তুমি খুব সুন্দরি কিন্তু রাজ স্যারের সাথে এটা কী করতে এসেছিলে!”
সবাই শবনমের সুরে সুর মিলিয়ে তনিমাকে খারাপ খারাপ কথা বলতে লাগল। তনিমা তো কিছুই বুঝতে পারছে না। মাথা চেপে ধরে কিছুক্ষণ আগের সব ঘটনা মনে করতে লাগল। ছাদ থেকে নেমে ডিঙ্কস নিল, তারপর মাথাটা কেমন চক্কর দিল তারপর আর কিছু মনে নেই। হঠাৎ সে নিজের পাশে শুয়ে থাকা মানুষটির দিকে তাকাল। তনিমার চক্ষু চড়কগাছ তার মানে সে এতসময় রাজের পাশে শুয়ে ছিল। আবার রাজের বুকে, মুখে লিপস্টিকের দাগ। দেখে মনে হচ্ছে, না না সে এটা কিভাবে করতে পারে!
রাগে, ঘৃণায় মাথাটা ফেটে যাচ্ছে তার!
তনিমা ভেঙে ভেঙে আড়ষ্ট গলায় বলল,
-“দেখুন আমি জানি না আমি এখানে কিভাবে এলাম। পার্টিতে আমি..”
তনিমাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে শবনম বলে উঠল,
-“দেখো তনিমা, এখানে যা কিছু হয়েছে তা আমরা সবাই দেখেছি। তাই তুমি আর শুধু শুধু মিথ্যা বলে নাটক করো না।”
তনিমা আবারও কিছু বলতে যাবে তার আগেই উপস্থিত লোকজন বলতে লাগল,
-“এই মেয়ের চরিত্র ভালো না। সিনে এন্টারটেইনমেন্ট এর বসের সাথে নোংরামি করতে আসছিল।”
-“এই মেয়ে একজন সুযোগসন্ধানী। রাজ স্যারের মতো একজনকে নিজের রুপের জালে ফাঁসাতে এসেছিল!”
লোকজন এই রকম নোংরা কথাগুলো শুনে তনিমার নিজেকে খুব অসহায় লাগছিল। তার কাছে তো কোনো প্রমাণও নেই যে সে প্রমাণ করবে সে নিজ ইচ্ছায় এখানে আসেনি।
ততক্ষণে শবনম আর আবিরের মুখ দেখে আর বুঝতে বাকী রইল না এটা কার কাজ। কিন্তু তার কাছে কোনো প্রমাণও নেই যে তাদের দোষারোপ করবে।
নাহ, সে আর সহ্য করতে পারবে না! এইসব কথা সে আর শুনতে পারবে না। তখনই রাজ ঘুম থেকে জেগে উঠল। ততক্ষণে সবাই একদম চুপ হয়ে গেছে। সবাই তার রিয়েকশন দেখার অপেক্ষায় আছে। স্লিপিং পিল খাওয়ার ফলে এতক্ষণ এখানে কি হয়েছে সেটা সে টেরও পাইনি। কিন্তু সামনে এত মানুষ আর পাশে তনিমাকে গুটিসুটি মেরে বসে থাকতে দেখে নিমেষেই তার ঘুম উধাও হয়ে গেল।
-“হোয়াট হ্যাপেন দেয়ার?”
রাজের এই প্রশ্নে কেউ কিছু বলার সাহস পেল না। একজন সাহস করে বলে উঠল,
-“স্যার প্লিজ লুক এট ইয়োরসেলফ। ”
রাজ এবার নিজের দিকে তাকাল। দেখল তার শার্টের, বুকে, মুখে লিপস্টিকের দাগ। খুব শান্ত গলায় প্রশ্ন করল।
-“সো হোয়াট?”
রাজের এরকম প্রশ্নে সবাই থতমত খেয়ে গেল। এসব দেখেও উনি কিছু বললেন না! শবনম তড়িঘড়ি করে উওর দিল,
-“স্যার, এই তনিমা আপনাকে ইউজ করতে চাইছিল। ও আপনার সাথে আপনার সাথে ফিজিক্যাল রিলেশন করতে এসেছিল। নিজেকে আপনার গার্লফ্রেন্ড বানাতে এসেছিল। তার আগেই প্রেস এসে ও’কে এই অবস্থায় পাই।
-“এনাফ ইজ এনাফ।” খানিকটা চেঁচিয়ে বলে উঠল রাজ। রাজের আর বুঝতে বাকী রইল না এখানে এতক্ষণ কি হয়েছে। তাই সে সকলের উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
-“মিস তনিমা সেন আমার গার্লফ্রেন্ড। আমরা খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চলেছি। আর হ্যাঁ, আমিই ওকে এখানে এনেছি। আর কারো কোনো কোশ্চেন আছে?”
রাজের এই রকম জবাবে সবাই হতবাক হয়ে গেল। আর কারো কিছু বলার সাহস হলো না। তনিমা এতসময় চুপচাপ থাকলেও রাজের এমন কথায় সে রাজের দিকে পলকহীনভাবে তাকিয়ে রইল। সে ভাবতেও পারিনি সকলের সামনে সে ও’কে নিজের হবু বউ হিসাবে পরিচয় দিবে। আর এই সময়টাতেই যখন তার পাশে ওকে খুব প্রয়োজন। আর এই মুহূর্তে তার এই পরিচয়টা খুব দরকার ছিল কেননা এখানে যে স্ক্যান্ডেল হতে যাচ্ছে তার জন্য তার চরিত্রে দাগ পড়তে দু’সেকেন্ড সময়ও লাগত না। তাই সে রাজকে মনে মনে একটা ধন্যবাদ দিল।
শবনম আর আবির তো শকের পর শক খাচ্ছে। তারা ভাবতেও পারিনি রাজ তনিমাকে এই ভাবে, এই ভাবে রক্ষা করবে! তনিমা রাজের গার্লফ্রেন্ড এটা তো তাদের ধারণারও বাইরে।
এবার রাজ আবারও বলে উঠল,
-“আমি জানি না এখানে এতক্ষণ কি কি হয়েছে। বাট খুব ভালো মতোই গেইস করতে পারছি কি হয়েছে। সো আমার হবু স্ত্রীকে অপমান করার দুঃসাহস দেখিয়েছেন তাই সবাই এখন তনিমার কাছে ক্ষমা চাইবে।”
যেহেতু রাজ চৌধুরি ক্ষমা চাইতে বলেছেন সেহেতু তাদের আর কিছু করার নেই। অগত্যা তাদের সবাইকেই সরি বলতে হলো।
-“মিস শবনম! আপনি বাদে সকলেই আমার উড বি ওয়াইফের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। নাও ইট’স ইয়োর টার্ন, সে সরি!”
চিৎকার করে বলে উঠল রাজ। সকলেই তার চিৎকারে আঁতকে উঠল। বাধ্য হয়ে শবনম দাঁতে দাঁত চেপে কিড়মিড় করে হাসি মুখে,
-“সরি তনিমা! তোমাকে আমরা ভুল বুঝেছিলাম। এক্সট্রিমলি সরি।”
বলেই রাগটা সামলাতে না পেরে রুম থেকে বের হয়ে এলো। সাথেসাথেই আবিরও রুম ত্যাগ করল। ওরা বের হয়ে যেতেই রুমে ঢুকলেন রায়হান চৌধুরি। তাকে দেখে রাজ গিয়ে তাকে একহাতে আলতো করে জড়িয়ে ধরে তনিমার সামনে এনে দাঁড় করাল। তনিনা ততক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়েছিল। তাকে ছেড়ে রাজ তনিমা গাঁ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বলে উঠল,
-“দাদু লুক, ও আমার উড বি ওয়াইফ। দেখো আমার বউ কত্ত সুন্দর দেখতে! আর এখানে আসলে..”
রাজ পুরো বিষয়টা বলতে যাবে তার আগেই দাদু তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,
-“দাদুভাই, আর কিছু বলতে হবে না। আমি সবটা আকাশের কাছ থেকে শুনেছি।”
রাজের বলা ‘ওয়াইফ’ শব্দটাই তনিমা বেশ লজ্জা পেয়ে গেল। লজ্জায় মাথাটা নামিয়ে নিল সে।
দাদু তনিমার লজ্জামাখা মুখটির দিকে তাকিয়ে তনিমার থুতনি ধরে হাসি মুখে বলে উঠল,
-“দাদুভাই আমার বিবিকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে!”
দাদুর এরুপ কথায় উপস্থিত সকলেই হেসে উঠল। তনিমাও ঠোঁট টিপে হাসল। এবার দাদু যা বললেন তা শোনার জন্য রাজ বা তনিমা কেউই প্রস্তুত ছিল না। সকলের উদ্দেশ্যে উনি বলে উঠল,
-“আজকে এখানে এই মুহূর্তে আমার দাদুভাইের বিয়ে হবে তনিমা দাদুমণির সাথে। এন্ড দিস ইজ মাই ফাইনাল ডিসিশন।”
চলবে…