টপ_টেন_মডেল,পর্বঃ ১০,১১

0
2422

টপ_টেন_মডেল,পর্বঃ ১০,১১
ঋতু_পান্না
পর্বঃ ১০

বাসর ঘরে বউ সেজে বসে আছে তনিমা। কিছুসময় আগেই দুইটা সিগনেচারের মাধ্যমে রাজ এবং সে নিজেদের স্বামী স্থী হিসাবে গ্রহণ করেছে। হ্যাঁ, রায়হান চৌধুরি অবশেষে তাদের বিয়েটা দিয়েই দিলেন। তনিমাকে একটা টকটকে লাল রঙের লেহেঙ্গা পরিয়ে খুব সিম্পল ভাবে সাজিয়ে বিয়ের জন্য রেডি করানো হয়েছে। ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটে দুইটা সইয়ের মাধ্যমে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হলো তাদের। রাজ ভেবেছিল হয়তো তনিমা বিয়েতে অমত করবে। সে বারবার তনিমার মুখের দিকে তাকিয়ে তার মনের অবস্থা বুঝতে চাইছিল। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে তনিমা বিয়ের কাবিননামায় সিগনেচার করে দিল। তনিমার তরফ থেকে শুধু অন্বেষাকে আনার ব্যাবস্হা করা হয়েছিল। রাজ নিজে তার বেস্ট ফ্রেন্ড রাহাতকে পাঠিয়েছিল অন্বেষাকে নিয়ে আসতে। রাজের একমাত্র শ্যালিকা বলে কথা! রাহাত ছেলেটি যেন একদেখায় গোল ফ্রেমেস চশমা পরিহিতা অন্বেষাকে পছন্দ করে ফেলেছিল। যাকে বলে লাভ এ্যাট ফার্স্ট সাইড। গাড়িতে বসে রাহাত অন্বেষাকে রাগানোর জন্য বলে উঠল,

-“আচ্ছা মিসেস.. হোয়াটএভার আপনার ছেলেমেয়ে কেমন আছে?”
অন্বেষার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। রাগ দেখিয়ে বলে উঠল,
-“এই যে মিস্টার আমাকে কী বাচ্ছাকাচ্চার মা মনে হয়! কোন এঙ্গেল থেকে আমাকে ম্যারিড মনে হয়! হ্যাঁ..!”
রাহাত নিজের হাসি চাপতে পারছিল না। কোনোরকম সামলে আবারও বলে উঠল,
-“আচ্ছা আপনি হানিমুনে কোথায় গিলছিলেন? ব্যাংকক নাকী সুইজারল্যান্ড!”
অন্বেষার এবার নিজের মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে। বিড়বিড় করে বলতে লাগল,
-“ওহ গড, কার পাল্লায় ফেললে আমায়! তাড়ছ্যাড়া একটা আমি কী বলি আর সে কী বলে!”
-“আচ্ছা আপনার হাজবেন্ডের কি ভুঁড়ি আছে?”

এরকমই আজগুবি সব প্রশ্নে জ্বালিয়ে মারছিল সে। অন্বেষা শুধু সহ্য করেই গেল। ও’কে রাগিয়ে বেশ মজাই পাচ্ছিল রাহাত।

অবশেষে তারা এসে রাজের বাড়িতে পৌঁছাল। তনিমা রাজের ব্যাপারে সবটা ওকে খুলে বলল। সে বিয়েতে রাজি হওয়ার জন্য তনিমাকে একটা হাগ করল আর মনে মনে রাগ থাকলেও শবনমকে একটা ধন্যবাদ দিতে ভুল করল না। ভাগ্যিস সে এই ভুলটা করেছে যার ফলে তনিমা এখন মিসেস চৌধুরি। ইন্ড্রাসির বসের একমাত্র লাভিং ওয়াইফ!

পার্টিতে আসা সকলেই বিয়েটা এনজয় করেছিল। মিডিয়াকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বিয়ের আগে এই বাড়িতে কী কী হয়েছে সেটা যেন বাইরের কেউ না জানে! আবির আর শবনম সেসময়ই চৌধুরি ভিলা থেকে বেরিয়ে এসেছিল। অতঃপর রাজ এবং তনিমার বিয়েটা হয়েই গেল।
এখন রাত প্রায় সাড়ে বারোটা, তনিমার বসে থাকতে থাকতে কোমড় লেগে যাচ্ছে। আসলে রুমটা কোনো ফুল দিয়ে ফুলশয্যার মতো করে সাজানো ছিল না রাজের রুমটাই এমন করে সাজানো থাকে যেন মনে হয় আলাদা করে সাজানো গোছানো রুম। রুমটা ফুলশয্যার মতো করে সাজানো ছিল না বলে তনিমা বেশ খানিকটায় অবাক হয়েছিল। তনিমার খুব ঘুম পাচ্ছিল। সারাদিনের এত ঝামেলার পর তার খুব ঘুম আসছে কিন্তু সে রাজের সাথে সরাসরি কিছু কথা বলে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিবে তাই সে রাজের অপেক্ষায় বসে আছে।
হঠাৎ রুমে কেউ প্রবেশ করতেই সে উঠে দাঁড়াল। বুঝতে পারল বাইরে কারা যেন খুব হাসা হাসি করছে। হয়তো রাজের বন্ধুরা হবে। ওরাই ঢেলে ওকে এই রুমে পাঠিয়েছে। রাজ রুমের দরজা লক করে দিল। সামনে এগিয়ে এসে তনিমার সামনে দাঁড়াল। কয়েক সেকেন্ড দুজনের মুখেই নীরবতা। তনিমা মুখ নিচু করে লেহেঙ্গায় নিজের আঙুল মোড়াচ্ছিল। আর রাজ সে তো তনিমাকে দেখতেই ব্যাস্থ। রাজই প্রথম নীরবতা ভেঙে বলে উঠল,
-“আমি জানি না এই বিয়েতে তুমি খুশি হয়েছ কি না। আমি কিন্তু খুব খুশি হয়েছি। ভাবিনি এত তাড়াতাড়ি তোমাকে সবসময় দেখতে পাওয়ার সুযোগ পাব।” বলেই মুচকি হাসল।
-“তুমি এটাই ভাবছ তো আজকে আমাদের ফার্স্ট নাইট অথচ রুমে কোনো ফুলশয্যার ডোকেরেশন নেই কেন?”
তনিমা অবাক হয়ে এবার রাজের দিকে চোখ তুলে থাকালেও মুখে কিছুই বলল না।

-“আরে অবাক হইও না। আমার মনে হয় বিয়েতে তুমি খুশি নও বা আমাকে হয়তো তুৃমি মেনে নিতে পারছ না। নো প্রবলেম! আমরা এক রুমে থাকলেও আমাদের মধ্যে কোনো হাজবেন্ড ওয়াইফ রিলেশন হবে না। এর মধ্যে আমি তোমাকে ছোঁয়াও চেষ্টা করব না। যেদিন তুমি আমাকে মেনে নিবে সেদিনই আমি তোমার কাছে আসব।”
-“যদি কোনো দিনও মন থেকে মেনে না নিই তবে ..? ”
রাজ কয়েক সেকেন্ডের জন্য চুপ হয়ে গেলেও আত্নবিশ্বাসের সাথে বলে উঠল,
-“আমার ভালোবাসা এত সস্তা নই ম্যাডাম। আমি জানি আমার ভালোবাসা দিয়ে তোমার ঐ সুন্দর মনটাকে জয় করে নিব।”

তনিমা কিছু বলল না। রাজই আবার বলে উঠল,
-“এসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দাও। দু’দিন পর তোমার টপ টেন ফাইনাল, আমি বলব আপনি আগে সেটাতেই ফোকাস করেন ম্যাম।”

-“আমি চাই না আমার মডেলিং এ আপনি কোনোভাবে হস্তক্ষেপ করুন। আমি নিজ যোগ্যতায় যদি ঐ সম্মানের যোগ্য হয় তাহলে আমি জিতব না হলে না।”
-“আমি বিশ্বাস করি তুমি কারো রেফার ছাড়াই চ্যাম্পিয়ন হবে।”

-“আর যতদিন না আমি নিজেকে আপনার জন্য পারফেক্ট মনে না করি, ততদিন আমি আমার বাড়িতেই থাকব।”

এটা শুনে রাজের মুখে অন্ধকার নেমে আসল। তবুও সে হাসি মুখে জানাল,
-“অ্যাজ ইয়োর উইশ ম্যাম।”
-“ধন্যবাদ।”

-“আচ্ছা এখন ঘুমিয়ে পড়ো। তুমি বেডে ঘুমাও আমি সোফায় ম্যানেজ করে নিব।”

তনিমা কিছু না বলেই বিছানার একপাশে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পরল। রাজ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওয়াশ রুমে চলে গেল। ফ্রেশ হয়ে এসে সোফায় শুতে গেলেই বিছানার দিকে তার চোখ আটকে গেল। তনিমা ততক্ষণে ঘুমিয়ে কাঁদা। এই হুরপরীটা এখন তার ওয়াইফ! লাভিং ওয়াইফ! এত সুন্দর কী করে হতে পারে কোনো মেয়ে!” তনিমার মাথায় পাশে হাটু গেড়ে বসে আনমনেই কথাগুলো বলে ফেলল রাজ।

তনিমার কপালে দু’সেকেন্ডর জন্য নিজের ঠোঁট ছোঁয়াতে ভুল করল না সে। নিজেকে সামলে সোফায় শুয়ে তনিমাকে দেখতে দেখতেই ঘুমের দেশে হারিয়ে গেল সে।

সকালে ঘুম থেকে উঠতে অনেকটা দেরী হয়ে গেছে তনিমার। বিছানা থেকে উঠতে যাবে তখনই খেয়াল করল রুমের একসাইডের দেয়ালে কতগুলো ছবি টাঙিয়ে রাখা। ছবিগুলো সহজেই কারো চোখে পড়বে না। শুধুমাত্র বিছানায় শুয়া অবস্থাতেই ছবিগুলো চোখে পড়বে। তনিমার বিভিন্ন অ্যালবামের বিভিন্ন পোস্টার ছবি। আনমনেই হাসি ফুটে উঠল তার মুখে।

ছবি থেকে চোখ সরাতেই সে দেখল সোফায় গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে একজন সুদর্শন পুরুষ। তনিমা এবার খুব কাছ থেকে রাজকে পর্যবেক্ষণ করল। তার নাক, মুখের গঠন, মুখে ছাপ দাঁড়ি ফর্সা মুখটায় ভাসিয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে, ঘুমানোর ফলে চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে, পরনে সাদা টিশার্ট, স্যান্ডসাম বডি ফিটনেস সবকিছুই যেকোনো মেয়েকে ঘায়েল করার জন্য যথেষ্ট। দেখে মনে হচ্ছে রাজ যেন কোনে শিল্পীর খুব যত্নে গড়া প্রতিমূর্তি। কিছুসময় পর্যবেক্ষণ করে সে ওয়াশ রুমে চলে। সেখানে এসে আরেক দফা অবাক হওয়ার পালা।

ওয়াশ রুমের দেয়ালে কয়েকটি ফ্রেম টাঙানো। তবে ফ্রেমে কোনো ছবি ছিল না। সেখানে কিছু লেখা ছিল। ‘ভাবনার আড়াল তুমি, তোমাতে বিভোর আমি’ ‘খুব যতনে রাখব তোকে, আগলে আমার এই বুকে’ ‘প্রিয়তমা, কবে আসবে সেদিন যেদিন তোমার কোলে মাথা রেখে ভালোবাসি কথাটি বলব’ এমনই শতশত ছন্দের আড়ালে বিভোর হয়ে রইল তনিমা। মুচকি হেসে নিজের মনেই বলে উঠল পাগল একটা। তবে মানুষটা সত্যিই অন্যরকম!
ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুলে চিরুনি বুলাতে বুলাতে সোফায় রাজের দিকে তাকিয়ে দেখল সে বারবার এপাশ ওপাশ করছে। তনিমা বুঝতে পারল হয়তো সোফায় রাতে ঠিকমত ঘুমাতে পারিনি। একবার ভাবল ও’কে ডেকে বিছানায় ঘুমাতে বলবে আবার কি ভেবে যেন সেটা আর করল না। রুম থেকে বের হতে দরজা খুলতে যাবে তখনই হাতে কারো আচমকা টান পেয়ে নিচে পড়ে গেল। তবে সে ফ্লোরে না বরং রাজের বুকের উপর পড়ল।
দুজনেই দুজনের দৃষ্টিতে আবদ্ধ হয়ে রইল কিছুসময়। তনিমা যখন বুঝল সে রাজের বুকের উপর তখন তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে প্রশ্ন করল,
-“আরে! আপনি আমাকে এভাবে পিছন থেকে টেনে ধরলেন কেন?”
-“আরে তুমি জানো না?” ইতস্তত করে বলল সে।
-“অদ্ভুত তো, আপনি কী জানার কথা বলছেন!”
-“তুমি জানো না, ফার্স্ট নাইটের পর..”

চলবে..

#টপ_টেন_মডেল
#ঋতু_পান্না

#পর্বঃ ১১

-“তুমি জানো না, ফার্স্ট নাইটের পর হাজবেন্ড আর ওয়াইফকে শাওয়ার নিতে হয়।”
-“কিন্তু আমাদের মাঝে তো সেরকম কিছুই… ”
তনিমা আর কথাটি শেষ করল না। তার আগেই লজ্জায় তার গাল লাল বর্ণ ধারণ করল।
রাজ মুচকি হেসে বলে উঠল,
-“জ্বি ম্যাডাম, নিচে তো সবাই রয়েছে ওরা কী ভাববে!”
কথাটা বলতে বলতে রাজ আলমিরা থেকে একটা শাড়ি, ব্লাউজ আর পেডিকোট তনিমার হাতে ধরিয়ে দিল। সে চুপ করে শাড়ি নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল। আর রাজ জোরে জোরে হাসতে হাসতে রুম থেকে বের হয়ে এলো।

-“শবনম তোমার কি এখনও মন খারাপ?”

খুব শান্ত গলায় প্রশ্ন করল আবির। কাল সন্ধ্যায় পার্টি থেকে বের হয়ে রাগে, দুঃখে খুব কেঁদেছে শবনম। সে কোনোদিন ভাবতেও পারিনি তার প্ল্যান এভাবে তনিমার জন্য ভালো হয়ে যাবে! হেডলাইনের পাতায় পাতায় শুধু রাজ চৌধুরি আর তনিমা সেনের বিয়ের খবর।
এখন তারা আবিরের রুমে বসে আছে। আবির শবনমের পাশে বসে তার হাতে নিজের হাত রেখে বলতে লাগল,
-“শবনম আমার মনে হয় যা হয়েছে ভালোই হয়েছে। দেখো সেই কলেজ লাইফ থেকেই তো তনিমা আমাদের কম ফেভার করিনি। ও আমাদের দুজনকে সবসময় হেল্প করে এসেছে। আমি তোমাকে ভালোবাসি। বিশ্বাস করো তোমার প্রতি আমার যে ফিলিংস সেটা পৃথিবীর আর কোনো মেয়ের উপর আসে না। তাই তোমাকে খুশি রাখার জন্য তনিমাকে তো আর কম ঠকায়নি। ও তো আমাদেরকে নিশ্বাঃর্থভাবে ভালোবেসে এগুলো করেছে। দেখো না, আমাকে ভালোবেসে নিজের হাই ক্লাস ফ্যামিলি ছেড়ে আমার কাছে চলে এসেছে। কিন্তু ও’কে আমি কখনোই ভালোবাসতে পারিনি।”

আবির ভেবেছিল তার এরকম কথায় শবনম রাগ করবে, চেঁচামেচি করবে কিন্তু সে কিছুই বলল না বরং তাকে দেখে মনে হলো সে খুব উদাস।
তাই আবির আবারও বলতে লাগল,

“তোমার মনে আছে শবনম, একবার তোমার মায়ের এক্সিডেন্ট হয়েছিল। আর তার ইমার্জেন্সি ব্লাড প্রয়োজন ছিল। আর তনিমা নিজের শরীরের রক্ত দিয়ে তোমার মা’কে বাঁচিয়েছিল। এভাবে তো সবসময়ই আমাদের হেল্প করে এসেছে আর আমরা..”

আবির আর কিছু বলল না, তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে আফসোস করতে লাগল। শবনম ডুব দিল অতীতের অতলে। ওর মা’কে বাঁচানোর জন্য তিন ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন ছিল। খুব প্রয়োজন ছিল। কোনোভাবেই ইমার্জেন্সি ব্লাড ম্যানেজ করা যাচ্ছিল না। তনিমা খবর পেয়ে ছুটে এসেছিল এবং একাই তাকে দু’ব্যাগ রক্ত দিয়ে বাঁচিয়ে ছিল। তনিমা তার নিজের আর শবনমের জন্য কোনো ড্রেস বা গিফট আনলে সবসময় শবনমকে আগে নিজেরটা পছন্দ করে নিতে বলত। অবশিষ্ট যেটা থাকত সে সেটাই নিত। এমনও অনেক সময় হয়েছে দুইটা ড্রেস আনলে দুইটাই শবনমের পছন্দ হয়ে গেছে তনিমা মুচকি হেসে দুইটাই তাকে দিয়ে দিত। আর আবির! আবিরকেও তো তনিমা পছন্দ করত তাই সে তাকেও তনিমার কাছ থেকে কেড়ে নিল। আবিরও তো তার জন্য ঐ মেয়েটাকে ঠকিয়ে এসেছে দিনের পর দিন। কিছু মনে পড়তেই সে আবিরের চোখে চোখ রেখে বলল,
-“আচ্ছা আবির, তুমি আমাকে সত্যিই ভালোবাসো তো?”

শবনমের এমন প্রশ্নে আবির কিছুটা অবাকই হলো বটে। ও’র আঙুলের ভাঁজে নিজের আঙুল ঢুকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
-“তাতে তোমার কী কোনো সন্দেহ আছে নাকী! আমি তোমাকে নিজের চাইতেও বেশি ভালোবাসি! তুমি আমার অনাগত সন্তানের মা তোমাকে কি না ভালোবেসে থাকা যায়? তোমার আর আমাদের সন্তানের জন্য আমি সব করতে পারি। তোমরাই তো এখন আমার সব। আমার যা কিছু আছে সব তোমাদের।” শবনমের পেটে হাত রেখে বলল আবির।

আবিরের এই আবেগময়ী কথায় তাকে জড়িয় ঝাঁপটে ধরে শবনম। আর হাউমাউ করে কাঁদতে লাগে। তবে এই কান্না কষ্টের না আনন্দের কান্না। আবির তাকে বুক থেকে তুলে কপালে একটা ভালোবাসার পরশ দিল।

নিচে ড্রয়িংরুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে রাজের দাদু, রাহাত আর অন্বেষা। আড্ডা বললে ভুল হবে রাহাত তো অন্বেষাকে জ্বালিয়ে মারতেই ব্যাস্থ। কী অসহ্য লোক রে বাবা! কী আবোল তাবোল কথা বলে! বাড়িতে এখন ওরা পাঁচজন ছাড়া আর কেউই নেই, অবশ্য জনা দশেক কাজের লোক আছে। রাজ এসে উপস্থিত হলে তারা টুকটাক কথা বলে। কিছুসময় পরই তনিমা এসে অন্বেষার পাশে বসে পড়ল। রাজ যেন চোখ সরাতেই পারছে না। বারবার আড়চোখে ও’কে দেখছে কারন তনিমা শাড়ি পড়েছে। অপূর্ব লাগছে! একদম বাঙালি বাড়ির বড়! ততক্ষণে দাদু টুকটাক কথা বলে উপরে নিজের রুমে চলে গেছেন। ওদের চোখাচোখি দেখেই অন্বেষা আর রাহাত মিটিমিটি হাসতে লাগল।

রাহাত রাজের কানে কানে ফিসফিস করে বলল,
-“কী ভাই! ফার্স্ট নাইট কেমন কাটল?”
অন্বেষারও তনিমার কাছে এসে,

-“সকাল সকাল শাওয়ার নিয়েছ, তার মানে তো, ডালমে কু্ঁচ কালা হ্যায়! গলা খাঁকারি দিয়ে চাপা হাসি হেসে বলে উঠল সে।
তনিমা এবার লজ্জায় পেল বটে সাথে রাজকে মনে মনে চারটে গালি দিতে ভুল করল না। কী দরকার ছিল এখন গোসল করতে বলার! শুধু শুধু লজ্জায় পড়তে হলো।

কিছুসময় পর তারা একসাথে ব্রেকফাস্ট করতে বসে গেল। নাস্তা শেষ করে তনিমা জানাল সে এখনই বের হয়ে যাবে যেহেতু তাকে টপ টেন ফাইনাল প্যারিসে হবে। তাই রাজও আর আপত্তি করল না।
আবির ফোন করে তাকে বিয়ের জন্য শুভেচ্ছা জানাল। তনিমা মনে মনে খুব হাসল, কোথায় সে আর কোথায় রাজ চৌধুরি! ও’কে এও জানাল টপ সিক্সটিনে তার এবং শবনমের নাম এসেছে। তাদের খুব তাড়াতাড়ি ভেন্যু অর্থাৎ প্যারিসে ল্যান্ড করতে হবে।

রাজ এবং রাহাত দুজনে মিলে তনিমা আর অন্বেষাকে এয়ারপোর্টে ছেড়ে আসল। রাজ তাদের সাথে যেতে চাইলেও তনিমা তাকে রিকুয়েস্ট করেছে সে অন্তত এই বিষয়ে তার ফেভার চাই না। এয়ারপোর্টে তনিমা এবং শবনমকে উইশ করতে অনেক ফ্যানই এসেছিল। মূলত সেখানে তনিমার ফ্যানই ছিল বেশি। গার্ডদের সাহায্য নিয়ে তারা ফ্লাইটে উঠে পরল।
যতদূর পর্যন্ত তনিমাকে দেখা গেছে ততদূর পর্যন্ত রাজ তাকিয়ে ছিল আর মনে মনে প্রার্থনা করছিল যেন সে খুব তাড়াতাড়ি তাকে সারাজীবনের মতো নিজের করে পাই।

তারা যখন ফ্রান্সের মাটিতে ল্যান্ড করল তখন প্রায় সন্ধ্যা। তাদের জন্য আগে থেকেই হোটেল হায়ার করা ছিল তাই তারা সেখানেই আগে পৌঁছাল। এতসময় তনিমা আর শবনমের মধ্যে কোনো কথা হয়নি। আবির দরকারি দু চারটে কথাই বলেছে শুধু। শবনমকে কেমন উদাস লাগছিল হয়তো সে কোনোকিছু নিয়ে খুব টেনশনে আছে। তনিমাও আগ বাড়িয়ে কোনো কথা বলতে যায়নি। হোটেল এসে যে যার রুমে চলে গেল।
ফ্রেস হয়ে বের হতেই দেখে তার ফোনে ‘আমরা’ নামে সেইভ করা নাম্বার থেকে একটা মেসেজ আসছে।
তনিমার ব্ভু কুঁচকে এলো। ‘আমরা’ এটা সে কখন সেইভ করল। আর ‘আমরা’ মানে হলো ‘ভালোবাসা’ এটি একটি ইতালিয়ান শব্দ। তনিমার আর বুঝতে বাকী রইল না এটা কার কাজ!

তাড়াতাড়ি মেসেজটা ওপেন করে পড়তে লাগল। রাজ লিখেছে,
-“হোটেলে পৌঁছে, ফ্রেশ হয়ে, কিছু খেয়ে আমাকে কল দিবে। হেভ আ সেইফ জার্নি। ভালোবাসি!”
মেসেজটি পড়েই তার মুখে এক ঝলক হাসির দেখা মিলল। কিন্তু রাজ যে বলল ও’কে কল দিতে! তনিমা এবার টেনশনে পড়ে গেল।
-“নো নো আমি কল দিতে পারব না!” বলেই কি যেন বিড়বিড় করতে লাগল।

হঠাৎ কল আসতেই তাড়াতাড়ি কল রিসিভ করে কানে ধরল। নাহ! রাজ নই, আবির কল দিয়েছে! সে তাকে নিচে আসতে বলল।

কিছুক্ষণ বাদে নিচে গিয়ে দেখে সবাই বসে আছে। সবার উপস্থিতিতে আবির সবাইকে কিভাবে, কখন, কি করতে হবে সে বিষয়ে নিদর্শনামূলক কিছু কথা বলল। শবনম খুব প্রয়োজন ছাড়া খুব একটা কথা বলেনি।

অতঃপর কথা শেষ হলে সবাই ডিনার করে রুমে চলে এলো। অন্বেষা তনিমার রুমে এসে তাদের দরকারি কিছু কথা সারল।

-“তনিমা শবনমের প্রেগন্যাসি রিপোর্টগুলো কি ভাইরাল করে দিব?”

তনিমা কয়েক সেকেন্ড ভেবে বলল,
-“আমিও সেটাই ভাবছি! কিন্তু শবনমের এখন যা মেন্টাল কন্ডিশন তাতে মনে হয় না ও আমার ক্ষতি চাইবে।”
-“তাহলে কি করবে ভাবছ? ”

-“আমাকে আজকে রাতটা ভাবার জন্য টাইম দাও। সকালে তোমাকে ডিসিশন জানাচ্ছি তবে তুমি সবকিছু রেডি রেখো।”

-“ওকে। বাই দা ওয়ে, বস কী ফোন করেছিল!”

এটা বলতেই তনিমা খানিকটা অস্বস্তিতে পড়ে গেল তা দেখে অন্বেষা কেশে বলল,
-“বুঝি বুঝি, সবই বুঝি। আমাদের বস যা রোমান্টিক! আচ্ছা তোমরা প্রেমালাপ করো আমি যায়। আর হ্যাঁ তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যেও। গুড নাইট।”

তনিমা বিছানায় এসে ফোনের দিকে তাকিয়ে রইল এই আশায় যে হয়তো রাজই কল দিবে। বসে থাকতে থাকতে তার রাগ উঠে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ ফ্যানেদের সাথে আড্ডা দিল। কিন্তু রাজ কল দিচ্ছে না। রাজের গলাটা শুনতে তার খুব ইচ্ছে করছে।
-“ধূর ব্যাটা রাজ! নিজের বউকে একটা কলও দিতে পারিস না। এই তার ভালোবাসা.. ওহ গড, আমি এসব কী বলছি!”

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here