ডাকপাড়ি #পর্ব_২১,২২

0
216

#ডাকপাড়ি
#পর্ব_২১,২২
#আফনান_লারা
২১
________
লেভেন ঢেউয়ের সাথে হারিয়ে যাচ্ছিল আর একটুর জন্য।সজীব না থাকলে ওকে বাঁচানো যেতোনা কখনও।সজীবেরই অনেক কষ্ট হয়েছে লেভেনকে কিণারায় নিয়ে আসতে।লেভেন জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল ততক্ষণে।সজীব ওকে তুলে বাসায় নিয়ে এসে ডাক্তারকে কল করে।কারণ তখনও লেভেনের জ্ঞান ফিরছিল না।লেভেন এমন পাগলামো এর আগেও করেছে।যখনই সজীবকে সে খুব করে চায় আর না পায় তখন সে এমন পাগলামি করে।এর আগে রাগ করে হিল ক্লাইম্বে চলে গেছিলো।প্রতিবার তো সজীব থাকেনা ওকে বাঁচানোর জন্য।একবার সত্যি সত্যি লেভেনের এক্সিডেন্ট হয়ে গেছিলো। হাসপাতালে ছিল দশ দিন।তাও ওর এই পাগলামির শেষ নেই।সজীবকে সে নিজের করার যুদ্ধে নেমেছে।কে জানে নিয়তি কোন দিকে নিয়ে যায়।এতগুলো বছর একই জায়গায় থেকেও সে সজীবের ঠোঁট অবধি ছুঁতে পারেনি আর কবেই বা পারবে!
———
পূর্ণতা ফারাজের জন্য চা বানিয়েছে টাংকির পানি দিয়ে।বানানো শেষে দাঁত কেলিয়ে সে কাপটা নিয়ে ফারাজের কাছে এসে হাজির।
ফারাজ বইটা রেখে একটু চোখ বন্ধ করে রেখেছিল।ঘুমানোর জন্য না,এমনিতেই চোখকে বিশ্রাম দিতে।মাঝে মাঝে চোখের ক্লান্তি দূর করতে ঘুম না আসলেও চোখটা বন্ধ করে রাখা উচিত।
পূর্ণতা কাপ সামনে ধরে বললো,’আমি কারোর জন্য কোনোদিন চা বানাইনি,আমার নিজের জন্য বানাতেই আলসেমি লাগে।কিন্তু আপনি এত করে বললেন,ফেলতে পারলাম না।আপনাদের বাড়িতে থাকি আপনাদের কথা তো শুনতেই হবে। ঐ যে বলেনা “দুধ দেয়া গরুর লাথিও ভাল”

তাই আপনাকে মান্য করতেই তো হতো’

ফারাজ কাপটা হাতে নিয়ে ভাল ভাবে দেখে বললো,’আপনার কাজ দেখে আমি সন্তুষ্ট হলাম ভীষণ।চা বরং আপনিই খান।’

পূর্ণতা চোখ বড় করে বললো,’ না না।আমি সকালে খালি পেটে চা খাইনা।আপনি খান’

‘তা কি করে হয়?একটা বিসকিট খেয়ে তারপর নাহয় খান।’

‘না না।আমি খাব না।সকালে চা খেলে আমার দুইদিন ধরে বমি বমি ভাব লাগে’

ফারাজ হঠাৎ কাপটা নিয়ে উঠে দাঁড়ালো মুখে দুষ্টু হাসি নিয়ে।পূর্ণতা ধীরে ধীরে পিছোচ্ছে আর ফারাজ এগোচ্ছে।পূর্ণতা বুঝে গেছে ফারাজ ধরে ফেলেছে চা কোন পানি দিয়ে বানানো এবং সে এখন জোর করে খাওয়াবে ওকে।
তাই সে দিলো এক দৌড়।কিন্তু ফারাজ ওকে ঠিক সময়ে ধরে ফেলেছে।টান দিয়ে সামনে এনে সে পূর্ণতার মুখ টিপে ধরলো তারপর হেসে হেসে বললো,’চা তো খেতেই হবে।এত যত্ন করে বানিয়েছেন,এটা তো ফেলে দেয়া যায়না।আপনি একটু হলেও খাবেন।নিন হা করেন ‘

‘না না আমি খাব না।’

ফারাজ পূর্ণতাকে ঝাপটে ধরে জোর করে খাওয়াচ্ছিল ঠিক সেসময় দাদাজানের আগমন ঘটে।
তিনি ওদের দুজনের কাছে এসে বললেন,’কি হচ্ছে এখানে?’

ফারাজ পূর্ণতা দুজনে আলাদা হয়ে গেছে দাদাকে দেখে।
দাদাজান চোখ বড় করে দুজনকে দেখছেন।ভাল করে দেখা শেষে বললেন,’তোমরা নাকি বিয়েতে রাজিনা?’

” জ্বী”

‘জ্বী’

‘তবে এরকম চিপকাইয়া কি করতেছিলা?অবিবাহিত যুবক যুবতি ভোরবেলা একা একটা রুমে কি করে??মানুষ কি বলবে?তোমরা যদি দুজন দুজনকে পছন্দই না করো তবে সবসময় চিপকাই থাকো কেন?আমাকে জবাব দাও’

ফারাজ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। পূর্ণতা মুখ ফুটে কিছু বলতে যাবার আগে ফারাজ ওর আঁচল টেনে ইশারা করে চুপ থাকতে বললো।
দাদাজান ওদের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে চলে গেছেন আর কিছু বলেননি।উনি যেতেই পূর্ণতা কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,’আপনার দোষ সব। আমার হাত ধরে জোরাজুুরি না করলে দাদাজান এত সব বলতেন না’

‘তুমি ঝামেলা না করলে তোমাকে আমি চা খাওয়াতে জোর করতাম?’

‘চা তে কি সমস্যা? ‘

‘চা কোন পানি দিয়ে বানাইছো ভাবছো আমি জানিনা?’

পূর্ণতা মাথা চুলকে পালানোর চেষ্টা করে, ফারাজ আবার ওকে ধরে ফেললো।বললো আজ ওকে চা খেতেই হবে।অমনি দাদাজান আবার আসলেন,এবারও ওদের একই অবস্থায় দেখে বললেন,’ফারাজ!আজকের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাবে, তুমি ঠিক কাকে বিয়ে করতে চাও।এসএসসি পাশ,ইন্টার ফেইল নাকি অনার্স ফাইনাল ইয়ার কে’

এই কথা বলে দাদাজান চলে গেছেন।পূর্ণতা হাত ছাড়িয়ে বললো,’মগেরমুলুক!!! আমার মতামত কেউ জানতে চাইছেনা কেন!আমি এই বদমেজাজি লোককে বিয়ে করবোনা।এটা আমার শেষ কথা’

‘আপনাকে কে বিয়ে করবে?আমি না।এটা আমার শেষ কথা’
———
আনাফ বসে বসে একটা রোগীর ফাইল দেখছিল।সেসময় মা আবারও হাজির হলেন একটা মেয়ের ছবি নিয়ে।
ছবিটা আঁচলের তলায় লুকিয়ে শুরুতে আনাফের সাথে তিনি কুশল বিনিময় শুরু করে দিলেন।আনাফ বেশ বুঝতে পারছে মা এমন কেন করছেন।
তিনি আনাফকে স্বাভাবিক দেখে একটা টুল টেনে ওর পাশে বসে দাঁত কেলিয়ে ছবিটা এগিয়ে ধরলেন।আনাফ ছবিটা না দেখেই বললো,’মা আমার একজন পছন্দ করা আছে।তুমি আর কষ্ট করে খুঁজোনা’

মা যেন আকাশ থেকে পড়লেন।ইয়া বড় হা করে বললেন,’কিহহহ।আগে বলিসনি কেন?মেয়ে কিসে পড়ে?বংশ কেমন?দেখতে কেমন?’

‘সব ঠিক আছে।একটা সমস্যা চলতেছে পরিবারে।সেটা শেষ হলেই বিয়ের তারিখ ফেলবো।তুমি আপাতত চিল করো’

‘চিল করে কেমনে!আমাকে তো আর চিল থাকতে দিলিনা।মেয়ের ছবি দেখা আমায়।নাহলে আজ রাতে ঘুমাতে পারবোনা ‘

আনাফ মুচকি হেসে ফাইলের পৃষ্ঠা উল্টে বলে,’চোখ ধাঁধালো সুন্দরী‍’

‘পড়ালেখা কেমন?’

‘ শিক্ষিত। আমার সব দিক দিয়েই ভাল লেগেছে ওরে।ঝামেলা শেষ হলেই বিয়েটা করে নিব’

‘কেমন ঝামেলা?’

‘তোমার ওসব জেনে কাজ নেই।গরম গরম কফি এনে দাও।
সকালে কফি না খেলে কাজে মন বসাতে পারিনা জানো তো।’
———–
সারথি চোখ খুলার পর থেকে বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছিলনা।শরীর প্রচণ্ড ব্যাথা করছিল।কাল যে দখল গেছে।বাসায় ফেরার পর থেকে বারবার মনের কাছে সে জানতে চাইলো কেন সে মরতে গিয়েও মরেনা।বারবার কেন বেঁচে যায়।সে মরে গেলে হয়ত সব ঠিক হয়ে যেতো।
এভাবে থেমে থাকলে হবেনা,আবারও মরার চেষ্টা চালাতে হবে।এবার এমন জায়গায় চেষ্টা করতে হবে যেন আনাফ ধারের কাছেও না থাকে। এবার সুইসাইড করলে কেউ আর বাঁচাতে আসবেনা।

মাথার ভেতর এসব চিন্তাভাবনা নিয়ে সারথি বিছানা ছেড়ে নামে।তারপর ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো সে।
বাইরে বের হতেই অর্কের সাথে ধাক্কা লাগলো সেসময়।অর্ক হেঁটো হেঁটে পড়ছিল।সারথিকে দেখে সে ফিসফিস করে বললো,’জানো ফুপ্পি! ফারাজ চাচ্চু আর পূর্ণতা ম্যামের বিয়ের কথা চলছে,বড় বাবাকে বলতে শুনলাম।ডিসিশান পেন্ডিং।আজ রাতে জানানো হবে’
——-
পূর্ণতা দাদাজানের রুমের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে অনেকক্ষণ। সাহস পাচ্ছেনা ভেতরে যাওয়ার।শেষে অনেক কষ্টে সাহস কুলিয়ে বুক ফুলিয়ে ভেতরে ঢুকলো স।
কেড়কেড় করে একটা আওয়াজ হলো।কেমন যেন ভূতুড়ে ফিলিংস।
ভেতরে পা রেখে আবার ধপ করে পড়লো সে।ভেতরটা একেবারে নিচে ছিল।
ঠিকঠাক হয়ে দাঁড়িয়ে মাথা তুলে দেখলো দাদাজান ধ্যান করছেন।পূর্ণতা ধীরে ধীরে কাছে এসে বললো,’দাদা আপনাকে কিছু কথা বলার ছিল’

“শুনি”

‘ফারাজ ভাইয়া ভাল মানুষ।কিন্তু ওনাকে আমার পছন্দ না।আমি কদিন পর বাবার কাছে চলে যাব।আপনি অন্য একটা মেয়ে খুঁজে ভাইয়ার বিয়ে দেন, তাছাড়া ভাইয়াও আমায় পছন্দ করেননা’

‘তবে তোমাদের দুজনের একসাথে থাকাকে কি হিসেবে ধরতাম?’

‘ওটা তো খুনসুটি ‘

‘আমাকে বোঝাও??আমি পাঁচ যুগ পার করে এসেছি।আমাকে তুমি খুনসুটি আর প্রেমের তফাৎ সেখাও? বয়স কত তোমার?দুই যুগ?? আর আমি পাঁচ যুগ পার করা লোক।আমি বেশি বুঝি, কোনটা ভাল আর কোনটা খারাপ।
ঠিক আছে, যদি তোমাদের একজন আরেকজনকে পছন্দ নাই হয় তবে আমি একটা কথা বলে রাখি।আর একদিন ও যদি তোমাদের একসাথে দেখেছি ঐদিনই হুজুর ডেকে বিয়ে পরিয়ে দিব।এটা আমার শেষ কথা’

পূর্ণতা ঢোক গিলে চলে গেলো ওখান থেকে।খুব জলদি এই বাড়ি ছেড়ে পালাতে হবে, নাহলে দাদাজানের যে দাপট!ধরে বিয়ো পরিয়ে দিবে সত্যি সত্যি।রিস্ক নেয়া যাবেনা

পূর্ণতা বের হবার পর এবার ফারাজ এসেছে।দাদাজান সবে ধ্যানে আবার বসছিলেন, ফারাজকে দেখে থামলেন,ওর মুখের দিকে চেয়ে রইলেন কথার শোনার আশায়।

‘দাদাজান,আমি তো পূর্ণতাকে পছন্দ করিনা।আমাদের মাঝে কিছু নেই।আপনি শুধু শুধু সন্দেহ করছেন।আপনি বরং একটা মেয়ে পছন্দ করে দিন।আমি ওরেই বিয়ে করবো তাও পূর্ণতা না’

দাদাজান ফোন বের করে কাকে যেন কল করলেন।যাকে কল করলেন তাকে অনুরোধ করলেন আজকে বিকালে আসতে।ফারাজ ভয়ে ভয়ে জানতে চাইলো কাকে আসতে বলেছে দাদা।

‘তোমার জন্য যে মেয়ে ঠিক করেছি তার বাবা মা আসবেন তোমায় দেখতে’

‘আগে তো ছেলেরা দেখতে যায়’

‘মেয়েকে আমার দেখা আছে।সুতরাং তারা দেখতে আসবেন।বকবক না করে গোসল করে আসো।আজ সাদা পাঞ্জাবি পরবেনা,রঙিন দেখে পরবা।যাও”

ফারাজ গাল ফুলিয়ে চলে আসলো।একে বলে “আকাশ থেকে পড়ে খেজুর গাছে আটকানো।

পূর্ণতার সাথে বিয়ে ক্যানসেল করে এখন আরেক মেয়েকে বিয়ে করতে হ্যাঁ বলেছে সে।
‘ধুর ধুর!”

মিসেস সোনালী নানান পদের পিঠা বানাচ্ছেন ফারাজের হবু শ্বশুর শাশুড়ির জন্য।তার ধারণা এখানেই বিয়ে হয়ে যাবে।আর দেরি না করে আয়জনে নেমে পড়েছেন তিনি।পূর্ণতাও হাত লাগিয়েছে,কারণ তিনি একা পারছিলেন না।
——
‘আচ্ছা ভাই,হাবিজাবি বাড়ির মানুষরা কেমন জানেন?আমার মেয়ে বিয়ে দিব তো।তাই খবর নিতে চাচ্ছি’

চায়ের দোকানদার চা কাপে ঢেলে গটগট করে চামচ দিয়ে নাড়তে নাড়তে বললেন,’নাম যেমন মানুষও তেমন,কাম ও তেমন’

জনাব হাবিবুল্লাহ টুলে বসে একটু এগিয়ে বললেন,’কেন?কি সমস্যা?খুলে বলেন’

‘ সেন্টু গেঞ্জি খুলে বলবো নাকি সাথে সব খুলে বলতে হবে ?’

জবাব হাবিবুল্লাহ আরেকটু এগিয়ে ফিসফিস করে বললেন,’গোটা চামড়াটাই খুলে বলেন।আমার ছোট মেয়ে।বড়ই আদরের।খবর নেয়া ছাড়া তো বিয়ে দিব না।ভেতরের খবর জানা জরুরি’

‘আমি কিন্তু ভাই গীবত করিনা।মরা ভাইয়ের গোশত খাইতে চাইনা।যা বলতেছি সত্য বলতেছি।আপনি আবার বলিয়েননা যে গীবত করতেছি।শুনেন ভাই,প্রথম কথা, ওরা এক নম্বরের খাচ্চর।এই খাচ্চর দুনিয়াতে নাই রে ভাই।কি আর বলবো!’

চলবে♥

#ডাকপাড়ি
#পর্ব_২২
#আফনান_লারা
________
জনাব হাবিবুল্লাহ আশ্চর্য হয়ে বসে আছেন চা দোকানদারের কথা শুনে।এটা কি বললো তা ভাবতে গিয়ে মাথার ভেতর রফাদফা হয়ে যাচ্ছে।বেলায়েত আঙ্কেলের মতন একটা লোকের বাড়ির মানুষজন বুঝি এমন??তা কি করে হয়?মনে হাজারটা প্রশ্ন নিয়ে তিনি আবার জানতে চাইলেন খাচ্চর বলার কারণ কি।

দোকানদার চায়ের কাপ এগিয়ে ধরে বললেন,’ওদের টাংকির পানিতে কি থাকে জানেন?’

‘কি?’

‘ওদের বাচ্চাদের মুত।ছিঃ ছিঃ!আমি একদিন নিজের এই দুই চোখে দেখেছি জানেন?সিয়াম নামের পোলাডা প্যান্ট খুলে সরাসরি করতেছে।ছিছি!ঐ পানি ওরা খায়।আমি ভাবছিলাম হয়ত একদিন এমন করে।ওমা পোলা দেখি প্রতিদিন বিকাল চারটা দুই মিনিটে টাংকিতে উঠে হিসু করে।ছিছি!!’

জনাব হাবিবুল্লাহ চোখ বড় করে রেখেছিলেন।এসব শুনে এবার বললেন,’আর কি কি সমস্যা? ‘

‘আরে ভাই সমস্যা তো ওটাই।ঐ পানি দিয়ে দুনিয়ার সব কাজ করে।খাওয়া হইতে দৈনন্দিন যত কাজ আছে।সব!!’

‘গোসল ও?’

‘না,শুধু গোসলটা পুকুরে গিয়ে করে হয়ত।ঠিক জানিনা’

‘আর কোনো সমস্যা আছে?’

‘যে ছেলের সাথে আপনার মেয়ের বিয়ে ঠিক করছেন,ছেলের যে অন্ধ জমজ বোন আছে জানেন?’

‘হুম’

‘ঐ মেয়ে যে শ্বশুর বাড়ি থেকে চলে এসেছে।আর যাবেনা শুনলাম।সে খবর জানেন?

‘তাতে আমার কি?’

‘তাতে আপনার কি মানে!মেয়ে যে এখন ভাইয়ের ঘাড়ে বসে খাবে সেটা ভাবছেন?তারপর বলি মেইন ছেলের কথা।ছেলে কি ভাল চাকরি করে আপনি যে ডেং ডেং করে বিয়ে দিতে আসছেন?’

‘ছেলের চাকরি আসলে আমরা দেখছিনা।পরিবার ভাল বলেই এগোলাম।ছেলে তো যাই কামাই করে তা যথেষ্ট বলে মনে হলো আমার কাছে’

‘কি কামাই করে?সারাদিন বান্দরের মতন ঘুরফিরে।তারপর ছবি আঁকে সেটা বেচে আবার বান্দরের মতন ঘুরে।’

জনাব হাবিবুল্লাহ উঠে দাঁড়ালেন,হাতের ঘড়িতে চেয়ে দেখলেন চারটা বাজে।আর দুই মিনিট পর সিয়াম টাংকির পানির বারোটা বাজাতে আসবে সেটা তিনি স্বচক্ষে দেখার জন্য চললেন সেদিকে ।

দোকানদারের কথামতন ছাদে তিনি সিয়ামকে দেখলেন।প্যান্ট খুলে সে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।

পুরো দৃশ্য নিজের চোখে দেখে কপাল মুছতে মুছতে জনাব হাবিবুল্লাহ সোজা হেঁটে চলে গেছেন।
আর এই এলাকাতে পা রাখবেননা বলে শপথ ও করেছেন।
ওদিকে মিসেস সোনালী,পূর্ণতা সব তৈরি করে মেয়েপক্ষের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে।সেসময় দাদাজানের কাছে ফোন আসলো ওনারা নাকি আসবেননা।তিনি জানতে চাইলেন কেন আসবেনা।উত্তরে জনাব হাবিবুল্লাহ জানালেন তাদের পরিবার ওনার পছন্দ হয়নি।লোকজনের মুখ থেকে পজিটিভ কিছু শোনেননি,যা শুনেছেন তার সবটাই নেগেটিভ।

বেলায়েত হোসেন বেজায় রেগে বসে আছেন।তিনি যতদূর অনুমান করেন তার পরিবার নিয়ে কেউ খারাপ বলতেই পারেনা।এত নামকরা বংশ তাদের।তবে কেন এভাবে বিয়ে ভেঙ্গে গেলো?নিশ্চয় ফারাজ পূর্ণতাকে নিয়ে লোকমুখে বাজে মন্তব্য শুনেছে তারা।
রাগে ক্ষোভে চুপ করে থাকলেন তিনি।সময়ের অপেক্ষাতে আছেন কেবল।
ফারাজ কান পেতে সব শুনেছিল দাদাজান যখন ফোনে কথা বলছিলেন।
সব শুনে মনের আনন্দে ধেইধেই করতে করতে চলে গেছে সে।ফারাজকে লাফিয়ে লাফিয়ে নিজের রুমে যেতে দেখে পূর্ণতা ভাবছে কি এমন হলো যে এই ব্যাটা এত খুশি!প্রতিমার চেয়েও সুন্দর মেয়ে পাইছে বাকি!
তারপর ভাবলো বিয়েটা মনে হয় হবেনা।তবে কেন হবেনা? নাহলে তো আবার পূর্ণতার ঘাড়ে এসে পড়বে। সেই চিন্তায় পূর্ণতার মন গেলো খারাপ হয়ে।
মিসেস সোনালী সব গুছিয়ে সোজা দাদাজানের রুমের দিকে গেছেন ওনারা কখন আসবেন তা জানার জন্য।
———–
আনাফ শুয়ে শুয়ে সারথির একটা
ছবি দেখছিল।সারথির একটা সমস্যা আছে বলেই কি সৃষ্টিকর্তা ওকে আরেক দিক দিয়ে এত দিলেন?কেন যেন আমার কাছে ওর দূর্বলতা সামনে আসেনা।সবার আগে সামনে আসে এই মায়াবী মুখ।নাহলে ডাক্তার হয়ে একজন বিবাহিত,অন্ধ মেয়েকে বিয়ে করা সমাজ অন্য চোখে দেখবে।বন্ধুবান্ধবরা হাসাহাসি করবে।এতসব পেরিয়েও সে সারথিকে বিয়ে করতে প্রস্তুত। সারথি হয়ত ভাববে দয়া দেখাচ্ছে আসলে কিন্তু তা নয়।সারথিকে ১ম দিন দেখার পর থেকেই আনাফের মনে ওর জন্য আলাদা অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছিল। ধীরে ধীরে কথা বলতে বলতে মনে হলো মেয়েটার মন স্বচ্ছ।ভুল জায়গায় পড়েছে মেয়েটা,হয়ত তার কপাল খারাপ সে জন্য এমনটা হলো ওর জীবনের সাথে।।

কাল সারথি যখন হাসপাতালের বিছানায় অজ্ঞান অবস্থায় শুয়ে ছিল তখন ছবিটা তুলেছে আনাফ।ওকে একা একা দেখার জন্যই এই কাজ করা।এমনিতে তো সহজে দেখা হয়না তাদের।
কিন্তু মেয়েটাকে চোখে চোখে রাখতে হবে।সুইসাইডের চিন্তা যার মাথায় একবার ঢুকে তার থেকে ঐ চিন্তা বের করা মুশকিল হয়ে পড়ে।আবারও চেষ্টা করতে পারে।

‘ যদি আসার সময় ওর পরিবারকে বলে আসতাম ওকে চোখে চোখে রাখার জন্য।কি ভুল হলো!কাল একবার যাবো?না থাক!ওনারা আবার কি ভাববেন!’
——–
লেভেনের জ্ঞান ফিরেছিল অনেক আগেই।কিন্তু সে ইচ্ছে করেই চোখ খুলছেনা।ঠিক করে রেখেছে সারাদিনেও খুলবেনা।সজীবের বেডরুমে, ওর কাছাকাছি থাকার এই সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া করা যাবেনা।
সজীব ভাল ডাক্তার একজনকে কল করে আসতে বলেছে।চিন্তা হচ্ছে লেভেনের জন্য।বেশি দেরি হলে আবার ক্ষতি না হয়ে যায়।কল দেয়া শেষে কাছে এসে ওর হাত ধরে সব চিন্তা করছিল সে,তখনই ও টের পেলো লেভেনের ঠোঁটে হাসি।অজ্ঞান হওয়া মানুষ তো হাসতে পারেনা।এবার সজীবের সন্দেহ হলো।সে বুঝে গেছে লেভেন নাটক করছে।তাই একটা বুদ্ধি বের করলো হাতেনাতে ধরার জন্য।তাই
লেভেনকে শুনিয়ে শুনিয়ে সারথিকে সে কল করে।আসলে সে কল করেনি।ওকে শুনিয়ে কথা শুরু করলো নিজে নিজেই।বললো,’সারথি আমার একা লাগে।আমার একটু তোমার সঙ্গ চাই সারথি।প্লিজ সারথি! আমাকে আর দূরে ঠেলে দিওনা’

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সজীব এসব বলছিল।তখনই দেখলো লেভেন উঠে বসে গাল ফুলিয়ে চেয়ে আছে এদিকে।সজীবের মুখে হাসি ফুটলো ওকে দেখে।হাসতে হাসতে সে পেছনে ফিরে বললো,’সারথি আজ রাখছি।আমার ভালবাসার মানুষের জ্ঞান ফিরেছে’
———–
ফারাজ মনের আনন্দে একটা ছবি আঁকতে বসেছিল, সেসময় দাদাজান হাজির হলেন ওর রুমে।সে তখনও টের পায়নি।মুখে হাসি ফুটিয়ে মন দিল লাগিয়ে ছবি আঁকছে।
দাদাজান অনেকক্ষণ ধরে ওর আঁকা ছবি দেখছিলেন।একটা গ্রামের দৃশ্য আঁকছে ফারাজ।যদি এটা হতো পূর্ণতার ছবি তাহলে দাদাজান ধরে বিয়ে করিয়ে দিতেন।তার সন্দেহ ছিল ফারাজ নিশ্চয় পূর্ণতার ছবি আঁকছে।কারণ ওর মুখে যে হাসি ছিল এমনটা ভাবারই কথা।
পরে গ্রামের দৃশ্য দেখে তিনি হালকা কেশে জানান দিলেন তিনি এসেছেন।ফারাজ ঘাড় ঘুরিয়ে দাদাকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো।

‘কিছু বলবেন দাদা?’

‘তোমার এত আনন্দে থাকার কারণ কি জানতে পারি?’

‘কিসের আনন্দ?’

‘আমি জানতাম তুমি ছবি আঁকার সময় দাঁত কেলাও না।তবে আজ কেলাচ্ছিলে কেন?’

‘কই না তো!’

‘আমার চোখে আমি এখনও ভাল দেখি।মিথ্যে প্রমাণ করবেনা ‘

‘মনোরম এক দৃশ্য দেখে মন থেকেই এমন হাসি আসে,আপনি দেখুন, আপনারো হাসি আসবে’

‘থামো!এসব আজগুবি লজিক আমাকে দেখাতে আসিওনা।আমি বেশ বুঝতে পারছি তুমি কেন এত খুশি।কারণটা সহজ।সেটা হলো হাবিবুল্লাহ তোমাকে দেখতে আসছেনা,বিয়ে ক্যানসেল করে দিয়েছেন সেই খুশিতে তুমি এমন লাফাচ্ছো’

‘আরেহ না।ডাহা মিছা কথা।আমি তো জানতাম ও না। বিয়ে যে ভেঙে গেছে তা মাত্র শুনলাম’

‘শুধু একবার তোমার সাথে পূর্ণতা সম্বন্ধীয় কিছু শুনি তারপর দেখিও কি করি’
———-
পূর্ণতা বাগানে গিয়ে হেঁটে হেঁটে বাদাম খাচ্ছিল সেসময় খেয়াল করলো গেটের বাইরে এক লোক দাঁড়িয়ে বারবার করে কি যেন দেখছেন।বাদামের খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে পূর্ণতা একটু এগিয়ে আসলো লোকটার দিকে।তারপর সালাম দিয়ে জানতে চাইলো ওনার কি চাই।লোকটা আর কেউ নয়, হাবিবুল্লাহ।চায়ের দোকানদার তো বাইরের লোক।বাইরের লোকের কথা ধরে বিয়ে ভাঙ্গা তার কাছে ভাল লাগেনি বলে আরও একবার যাচাই করতে চলে আসলেন।

‘তুমি এই বাড়ির কে হও মা?’

‘আমি বেড়াতে এসেছি।আমার বাবা এই বাড়িতে আগে থাকতেন।সেই সূত্রে আমার সাথে ওনাদের ভাল সম্পর্ক’

‘আচ্ছা তুমিও তো নতুন।তোমার কাছে এই বাড়ির মানুষদের কেমন লেগেছে?আমি শুনলাম ওনারা নাকি অপরিষ্কার? ‘

পূর্ণতা থতমত খেয়ে গেলো।তাও সব দিক বিবেচনা করে সে বললো,’ততটাও না।টাংকি ময়লা হলে পরিস্কার করানো হয়।এটা কোনো বড় ব্যাপারনা’

‘মনের দিক দিয়ে কেমন?’

‘বেশ ভাল।প্রতিটা মানুষ দারুণ মনমানসিকতা বহন করেন,আমার বেশ ভাল লাগছে ওনাদের সাথে থাকতে।’

‘ছেলে কেমন?’

পূর্ণতার মন চাইছিল সব সত্যি বলে দিতে কিন্তু ফারাজের বিয়ে হলে তো ওরই লাভ।নাহলে ফারাজ অবিবাহিত থাকলে ওর আর ফারাজের বিয়ে হবার ঝুঁকি আছে।তাই সে দাঁত কেলিয়ে বললো,’ওনার মতন ভাল ছেলে এই টলাকায় আর একটা নাই।এত ভাল এত ভাল!আপনার মেয়ে একদিনে পাগল হই যাবে’

‘পাগল হই যাবে মানে!’

‘মানে এত ভাল যে তাই।খুশিতে পাগল হই যাবে’

‘কিরকম ভাল?’

‘ ভদ্র ছেলে।মেয়েদের দিকে তাকায়না।ভাল বংশের ছেলে।আর কি লাগবে আপনার? ‘

‘তোমার প্রতি ওর ইন্টারেস্ট কেমন?’

‘আমাকে তো সহ্যই করতে পারে না।এটাই তো ভাল তাই না?’

‘তাহলে আমার মেয়েকে সহ্য করবে কিভাবে?’

‘আপনার মেয়ে তো আমার মতন বেড়াতে আসবেনা,বউ হয়ে আসবে তখন তারে সহ্য তো করতেই হবে’

চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here