ডার্ক সিক্রেট,পর্ব-৩ শেষ পর্ব
সাইবা চৌধুরী
ডাঃ আনোয়ারের কথা শুনে সোফিয়া খান্না বিরাট এক দ্বিধায় পড়ে যান।
মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করেন,
সাহাবের আবার কি এমন সিক্রেট আছে!
যা হতে পারে আমার জন্য বিপদজনক?
সোফিয়া খান্না সিদ্ধান্ত নেন তিনি ডাঃ আনোয়ারের সাথে দেখা করবেন।
তৎক্ষনাৎ গাড়ি ঘুরিয়ে ডাক্তারের সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
যেভাবেই হোক সাহাবের সম্পর্কে সবকিছু জানতে হবে তার।
প্রায় 30 মিনিট পরে সোফিয়া খান্না ডাক্তার আনোয়ারের চেম্বারের যান।
চেম্বারে কেউ না থাকায় আজ আর তার অপেক্ষা করতে হয় না। ডাক্তারের অনুমতি নিয়ে তিনি ভেতরে প্রবেশ করেন।
সোফিয়া খান্না কে দেখে ডাক্তার আনোয়ার বুঝে যান, আজ তার এখানে আসার আসল উদ্দেশ্য কি!
এই মুহূর্তে তাকে দেখে তিনি একটু থতমত খেয়ে যান, কারণ সোফিয়া খান্না যেটা জিজ্ঞাসা করতে এসেছে সেটা তার পক্ষে কোন ভাবেই বলা সম্ভব না। সোফিয়া খান্না কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই ডাক্তার আনোয়ার বলে ওঠেন,
-আপনি এখানে কেন এসেছেন সেটা আমি জানি মিস সোফিয়া, আমার পক্ষে কোনভাবেই অন্য রোগীর কোন সিক্রেট উন্মোচন করা সম্ভব না।
আপনাকে আমি ফোনেও বলেছি এবং এখনও বলছি আপনি শুধু সাহাবের থেকে দূরে থাকুন এবং আপনার কোন সিক্রেট তাকে বলা থেকে বিরত থাকুন এতেই আপনি বিপদমুক্ত অন্য কিছু আপনার না জানলেও চলবে।
সাহেবের সিক্রেট সম্পর্কে জানার জন্য সোফিয়া খান্না হাজার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলেন।
এতো চেষ্টা করা সত্ত্বেও কোনো কিছু জানতে না পারলেও তিনি হাল ছাড়লেন না।
ডাক্তার আনোয়ার এর থেকে একটি কথা বের করার জন্য তিনি নানা কৌশল অবলম্বন করলেন।
কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হলো।
কিছু বলা সম্ভব না বলার পরেও সোফিয়া খান্নার এমন আচরণ দেখে বেশ রেগে গেলেন ডাক্তার আনোয়ার। রেগে গিয়ে তিনি সোফিয়া খান্নার উদ্দেশ্যে বললেন,
-এখন তো মনে হচ্ছে আপনাকে সতর্ক করাটাই আমার ভুল ছিল।
একজন ডাক্তার হিসেবে আমার যতটুকু কর্তব্য ছিল আমি ততটুকু করেছি এর থেকে বেশি কিছু করা আমার পক্ষে সম্ভব না।
আপনি এখন আসতে পারেন। ডাক্তার আনোয়ারের এমন আচরনে সোফিয়া অনেক আশাহত হলেন।
তিনি আর কিছু না বলে ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে যান, মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন যেভাবেই হোক সাহাবের সব সিক্রেট তিনি জেনে নিবেন এবং সেটা আজকেই।
ভাবামাত্রই তিনি গাড়িতে উঠে বসেন। সাহাবের ঠিকানা তিনি জানেন না।
না তো আছে মোবাইল নাম্বার তাহলে এই মুহূর্তে তার সাথে দেখা করবে কিভাবে!
বিরাট এক টেনশনে পড়ে যান তিনি।
তবে মনে মনে একটা আশা রাখেন,
তার জীবনের সব সিক্রেট এখনো সাহাবকে বলা হয়নি।
সাহাবকে যতোটা জেনেছে সে,তাতে বোঝা যায়,
তার সম্পর্কে সবকিছু না জেনে সাহাব চুপ করে বসে থাকার মতো নয়। অবশ্যই বাকিটা জানতে সাহাব সোফিয়া খান্নার সাথে দেখা করতে আসবেই।
তখন কৌশলে তার জীবনের সিক্রেটও জেনে নেওয়া যাবে।
.
.
.
এরপর কেটে যায় বেশ অনেকগুলো দিন। সাহাবের কোন খোঁজ খবর পাওয়া যায়না৷ সোফিয়া খান্না প্রায় ভুলেও গেছিলো সাহাবের কথা৷
হঠাৎ একদিন আবারো বাড়ির সামনে সাহাবকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে
পুরোনো সব কথা মনে পড়ে যায় তার।
মনে মনে খুব খুশি হন সোফিয়া।
সাহাবের সামনে গাড়ি থামিয়ে সাহাবকে গাড়িতে উঠে বসতে বলেন তিনি।
সাহাবও কিছু না বলে খুশিমনে গাড়িতে উঠে বসে।
সোফিয়া সাহাবকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
-বলো কোথায় যাবে। প্রথমবারে তো আমার মনমতো জায়গায় তোমাকে নিয়ে গেছি এখন না হয় তোমার পছন্দের কোথাও যাওয়া যাক।
সাহাব সোফিয়া খান্নার কথা শুনে অনেক খুশি হয়। খুশিমনে তার পছন্দের একটা জায়গার কথা জানায়।
প্রায় দেড় ঘন্টা গাড়ি চলার পরে একটা মফস্বল এলাকায় গিয়ে পৌঁছায় তারা।
সাহাব সোফিয়া খান্নাকে গাড়ি থেকে নেমে আসতে বলে।
গাড়ি থেকে নেমে চারদিকে তাকিয়ে সোফিয়া অবাক হয়ে যান।
আশেপাশে পুরোনো আমলের বেশ কয়েকটা বাড়ি। বাড়িগুলোর চারপাশে সবুজের সমারোহ।
সবুজের বুক চিড়ে সরু পাকা একটা রাস্তা এগিয়ে গেছে। ইট বালুর শহর পেরিয়ে এমন একটা জায়গায় এসে সোফিয়া খান্নার অনেক ভালো লাগে।
প্রকৃতির সৌন্দর্য মন ভরে উপভোগ করেন তিনি।
এভাবে বেশ কিছুক্ষন সময় কেটে যায়।
সাহাবের চোখে তাকিয়ে দেখেন সাহাব তার দিকেই তাকিয়ে আছে। সোফিয়া সাহাবের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলেন,
-ধন্যবাদ সাহাব আমাকে এমন একটা জায়গায় আনার জন্য। কিন্তু এই জায়গাটার সাথে তোমার সম্পর্ক কি?
সোফিয়ার প্রশ্নের জবাবে সাহেব বলে,
এখানেই কেটেছে আমার ছেলেবেলার পুরোটা সময়। ওই যে বাড়িটা দেখছেন ওটা ছিলো আমার দাদা বাড়ি। ছোট থেকে এ বাড়িতে বড় হয়েছি আমি। কিন্তু বাবার শহরে চাকরি হওয়ার কারণে আমরা শহরে শিফট হয়ে যাই।
দাদা-দাদী এই বাড়ীটা দেখাশোনা করত কিন্তু তারা মারা যাওয়ার পরে বাড়িটিতে অযত্নের ছাপ পড়ে যায়।
এখন আর আমাদের এখানে আসা হয়না কিন্তু আমার একটা টান এ বাড়ি জুড়ে রয়ে গিয়েছে।
তাই মাঝে মাঝেই ছুটে আসি এখানে।
আজ আপনি আমার পছন্দের জায়গার কথা জিজ্ঞাসা করলেন তাই ভাবলাম এখানে আপনাকে নিয়ে আসি আপনি চাইলে আমি আপনাকে বাড়িটি ঘুরে দেখাতে পারি ।
সোফিয়া খান্না সাহাবের কথায় সম্মতি জানিয়ে বাড়িটার দিকে এগিয়ে যান। বাড়ির চারপাশ ঘুরে ভালোই লাগে তার কিন্তু বাড়ির ভেতরের স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে গা গুলিয়ে ওঠে। বাহির থেকে বাসাটা যতোটা সুন্দর মনে হয় ভেতরে তার থেকেও জঘন্য। মেঝেতে শ্যাওলা জমে পিচ্ছিল হয়ে আছে। চারপাশে শত শত পোকামাকড়ের আনাগোনা। মাকড়সার জাল পুরো বাড়িটা দখল করে নিয়েছে। শ্যাওলা থেকে আগাছা জন্মে জানালা ও দেওয়াল গুলো ঘিরে রেখেছে।
সোফিয়া খান্নার দিকে তাকিয়ে তার অস্বস্তির বিষয়টা ধরতে পেরে সাহাব বলে,
-আসলে কয়েকবছর ধরে বাড়িতে কেউ আসে না তো! তাই এই অবস্থা। আমি আসলে চিলেকোঠায় বসি মাঝে মাঝে। সেখান থেকে পরিবেশটা অনেক সুন্দর লাগে আপনি আসুন আমার সাথে।
সাহাব সোফিয়াকে কথাগুলো বলে সামনের দিকে হাঁটা শুরু করে, সোফিয়াও কিছু না বলে তাকে অনুসরণ করেন।
.
.
.
সিঁড়ি বেয়ে দু’জনেই ছাদে ওঠে।
সিঁড়ির পাশেই রয়েছে একটা চিলেকোঠা।
সাহাব চিলেকোঠার ভেতরে প্রবেশ করে একটা চেয়ার টেনে সোফিয়া খান্নাকে বসতে দেয়।
আমি আপনার জীবনের বাকি কথাগুলো জানতে চাই। কি হয়েছিলো তারপর!
আপনার বাচ্চাকে মেরে ফেলার পরে কিভাবে এই পর্যন্ত এলেন?
সাহাবের কথার প্রতি উত্তরে সোফিয়া খান্না বলেন,
-আমি সবকিছু তোমাকে খুলে বলতে রাজি আছি তবে আমার একটা শর্ত তোমার রাখতে হবে।
সোফিয়া খান্নার কথা শুনে অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে সাহাব বলে,
-শর্ত!
কিন্তু কিসের শর্ত থাকতে পারে আপনার?
-আমার সবকিছু বলার পরে তোমার কাছে তোমার সম্পর্কে আমি কিছু প্রশ্ন রাখবো যেগুলোর উত্তর তোমাকে দিতে হবে। যদি রাজি থাকো তাহলে আমি আমার সবকিছু তোমাকে জানাবো।
সাহাব সোফিয়া খান্নার শর্তে রাজি হয়।
সোফিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করে,
-বাচ্চা টাকে ওভাবে রেখেই বিছানার উপর রেখে যাওয়া টাকাগুলো তুলে নিয়ে আমি বাড়ি থেকে গোপনে বের হয়ে আসি।
তারপর অনেক খুঁজে আমার বর্তমান বাসাটা ক্রয় করি। বাকি টাকা একটা ব্যাবসার কাজে ইনভেস্ট করি।
খুব অল্পদিনের মধ্যেই অনেক লাভবান হই।
টাকা পয়সা,বিলাসিতা কোনোকিছুরই অভাব ছিলো না কিন্তু যা ছিলো না আমার কাছে, সেটা হলো “শান্তি! ”
নিজের ভেতর সমসময় অপরাধবোধ কাজ করতো। নিষ্পাপ একটা বাচ্চাকে মেরে ফেলার অপরাধবোধ।
হতে পারে সে কারও জঘন্য পাপের ফল কিন্তু সে তো পাপী নয়!
আমি রাগ ও ঘৃণার বসে ঘৃণ্যতম একটা অপরাধ করে ফেলেছি যেটা আমাকে একমুহূর্তও ভালো থাকতে দিতো না।
সবকিছু মিলিয়ে আমি মানসিকভাবে অনেক ভেঙে পরি।
অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি কিছুই হয়নি। এক পর্যায়ে পাগলের মতো আচরণ করা শুরু করি। একটা সময় আমি বুঝতে পারি আমার করনীয় কি!
নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করে আমি জানোয়ারটাকে কঠোর শাস্তি দেওয়ার চিন্তাভাবনা করি। ওকে নিজ হাতে শাস্তি দিতে পারলে অনেক হালকা লাগবে আমার।
আমি জানতাম সে অনেক লোভী ছিলো তাই বড় অংকের টাকার একটা ডিল করার কথা বলে চাচাকে গোপনে আমার বাসায় এসে দেখা করতে বলি। সেও বোকার মতো রাজি হয়ে যায়। সেই যে আমার বাসায় ঢুকলো আর বের হলো না৷
ওকে বন্দী করে শুরু করে দেই আমার কুৎসিত অত্যাচার।একটা অন্ধকার রুমের চেয়ারে বন্দি করে রাখি ওকে৷
যখনই আমার খারাপ লাগতো, বা ভেতরে পাপ বোধ বেড়ে উঠতো,
ওকে কঠোর শাস্তি দিতাম। মারতাম।
প্রায় ৬ মাস এভাবেই জানোয়ারটাকে তিলে তিলে কষ্ট দিয়েছি। দিনে একবার একটা রুটি খেতে দিতাম ওকে। সাথে চড় থাপ্পড়, লাথি এবং থুঁথুও। ওকে দেওয়া প্রতিটি শাস্তি আমার উপর ঔষধের মত কাজ করতো। ওকে মেরে আমি ভালো থাকতাম। এভাবে ভালোই যাচ্ছিল আমার দিনগুলো।
কিন্তু বিপত্তি ঘটে কিছুদিন আগে।রাগের মাথায় বিদ্যুতের শক দিতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবেই আমার হাতে খুন হয়ে যান উনি।
মৃত্যু হয়েছে এতে আমার মাঝে খারাপ লাগা কাজ করেনি একটুও। কিন্তু আমি ধীরে ধীরে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি। বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়ে যায়।
ভেবেছিলাম আত্মহত্যা করব কিনা। কিন্তু আমার মৃত্যু হবে এটা মেনে নেয়া আমার জন্য সহজ ছিলো না।
আমি কয়েকটা এতিমখানা চালাচ্ছি।
সময়মতো তাদের কাছে টাকা না পৌঁছালে অনেকগুলো প্রাণ কষ্ট পাবে।
ডাক্তারের কাছে সব সত্যি খুলে বলতে পারি না কারণ আমার চাচা একজন বড় ব্যবসায়ী ছিলো,কোনোভাবে খবরটা লিক হয়ে গেলে আমার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড নিশ্চিত।
তোমার মাঝে কিছু তো আছে যার কারণে প্রথমবার আমি সব সত্যি বলার মতো সাহস করলাম।
সোফিয়ার কথা শুনে সাহাব মৃদু হেঁসে বললো,
আরেকটা প্রশ্ন করতে চাই যদি কিছু মনে না করেন,
আপনার জিহ্বা এমন কালো হওয়ার পেছনে কারণটা কি?
-ছোটবেলায় আমার কালোজ্বরের পাশাপাশি ভয়ংকর এক অসুখ হয়েছিলো যার কারণে আমার জিহ্বা এমন কালো হয়ে যায়। ডাক্তার দেখিয়েছি অনেক তারা বললো এটারে নিরাময় আর সম্ভব না। তখন থেকেই সবসময় আমি মাস্ক পড়ে থাকি।
যাইহোক আমার কথা তো সব শুনলে এখন আমি কিছু প্রশ্ন করতে পারি কি?
সাহাব মাথা ঝুলিয়ে হ্যা সূচক জবাব দেয়।
-ডাঃ আনোয়ার তো একজন সাইকোলজিস্ট।
তার কাছে তোমার যাওয়ার কারণ কি? মানে আমি তোমার সমস্যা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি।
সোফিয়া খান্নার কথা শুনে সাহাব এক অদ্ভুত হাসি দিয়ে একটা চেয়ার টেনে তার মুখোমুখি বসে।
বেশ অনেকক্ষণ যাবত সোফিয়া খান্নার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
একটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
-আপনার জীবনে খুব কষ্ট তাই না!
কোনো ডাক্তারও আপনার কোনো চিকিৎসা করতে পারছে না। কতোটা মানসিক অশান্তিতে আছেন আমি সেটা বুঝতে পারছি। আমি কি চাই জানেন?
পৃথিবীর এমন কষ্ট থেকে সবার মুক্তি মিলুক।
কেউ মনে চাপা কষ্ট নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কারো সম্পর্কে এমন কিছু আমি জানলেই খুব খারাপ অবস্থা হয় আমার। নিজের নিজেই সেই মানুষটার জন্য কষ্ট পেতে থাকি।
নিজের সবটা দিয়ে চেষ্টা করি ঐ মানুষটাকে মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে।
এটা আমার একটা জটিল রোগ।
এ কারণেই আমার ডাঃ আনোয়ারের সাথে দেখা করা।
সাহাবের কথা শুনে সোফিয়া খান্না বলেন,
-তোমার কথার কোনো আগামাথা আমি বুঝতে পারছি না। মানুষের কষ্ট তোমাকে কষ্ট দেয় বুঝলাম, কিন্তু তার জন্য তোমার ডাক্তারের শরণাপন্ন কেন হতে হবে?
সোফিয়া খান্নার প্রশ্নের উত্তরে সাহাব ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি টেনে বলে,
-কারণ, আমার কাছে এমন মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র সমাধান হচ্ছে- খুন। মৃত্যু সবাইকে সব ধরণের কষ্ট থেকে মুক্তি দেয়৷ আপনাকেও দিবে।
সাহাবের কথা শুনে সোফিয়া খান্না কেঁপে ওঠেন।
ডাঃ আনোয়ারের কথাগুলো এখন খুব মনে পড়ছে তার। জেনেশুনেই হয়ত বিপদে ঝাঁপ দিয়ে ফেলেছে সে।
কম্পিত শরীরে সোফিয়া চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান।
দাঁড়িয়ে তিনি সিঁড়ির দিকে দৌড় দিতেই খপ করে ধরে বসে সাহাব।
কাছে এনে গলা টিপে ধরে বলে,
-আপনি কি এই কষ্ট থেকে মুক্তি চান না!আমি আপনাকে আজ মুক্তি দেবো, চিরমুক্তি।
কথাগুলো বলে সাহাব সোফিয়া খান্নাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। সোফিয়া কান্নামাখা কন্ঠে হাতজোড় করে সাহাবের কাছে অনুরোধ করতে থাকেন তাঁকে যেন না মারে।
সাহাব তার কোনো কথা কানে না নিয়ে পাশে থাকা চেয়ার দিয়ে জোড়ে আঘাত করে সোফিয়া খান্নাকে।
চেয়ার ভেঙে চারপাশে ছিটে পড়ে যায়।
সোফিয়া খান্নার মাথা ফেটে গলগল করে রক্ত পড়তে থাকে।
সাহাব ভাঙা চেয়ারের ছুঁচালো একটা টুকরো নিয়ে সোফিয়া খান্নার দিকে এগিয়ে যায়।
তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে চেয়ারের টুকরোটি পেট বরাবর ঢুকিয়ে দেয়।
টুকরোটা পেট থেকে তুলে আবারও আঘাত করে এভাবে বারংবার আঘাত করতে করতে একসময় নিরব হয়ে বসে পরে সাহাব।
সোফিয়া খান্নার রক্তেভেজা দেহ টা পরে থাকে পাশেই।
.
.
.
.
ডাঃ আনোয়ারের সামনে বসে আছে সাহাব।
সাহাব ডাঃ আনোয়ারকে সবকিছু খুলে বলে।
ডাঃ সবকিছু শুনে বলেন,
-তোমার সমস্যাটা অনেক খারাপ রূপ নিচ্ছে ধীরে ধীরে তবে তুমি চিন্তা করো না খুব শীঘ্রই তুমি সুস্থ হয়ে যাবে। আজ একটা ইনজেকশন দিয়ে দিচ্ছি দেখবে অনেকটা ভালো অনুভব করবে।
ডাঃ আনোয়ার,
সাহাবের শরীরে একটা ইনজেকশন পুশ করে দেন।
সাহাব সেদিনের মতো বিদায় নিয়ে চেম্বার থেকে বের হয়ে যায়।
সাহাব বের হতেই ডাঃ আনোয়ার ধপাস করে চেয়ারের উপর বসে পড়ে। চোখ থেকে চশমাটি খুলে টিস্যু দিয়ে চোখ মুছে মনে মনে বলেন,
-আমাকে ক্ষমা করে দিও সাহাব। তোমার মানসিক সমস্যাটা এমন পর্যায়ে গিয়েছে যেখান থেকে কোনোভাবেই তোমাকে সারিয়ে তোলা সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়ে আজ আমাকে এটা করতে হলো, মাত্র দু’ঘন্টা বাকি আছে তোমার হাতে।
যে ক্যামিকেলটা তোমার শরীরে পুশ করেছি সেটা আর দু’ঘন্টাই তোমাকে বাঁচিয়ে রাখবে।
একজন নাগরিক হিসেবে সমাজের ভালোর জন্য এটা আমার করতেই হলো।
আমি সত্যিই তোমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
ডাক্তার হয়ে রোগীকে খুন!!
তোমার জীবনের ডার্ক সিক্রেটটা আজ আমার জীবনে ডার্ক সিক্রেটে পরিণত হয়ে গেলো।
.
(সমাপ্ত)