#ডাহুক_নদীর_তীরে,পর্ব-১৬,১৭
#হালিমা রহমান
১৬
লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন
পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাদগ্রস্ত প্রেমিক পুরুষ বিজয়,ছলছল চোখে চেয়ে আছে তার প্রাণপ্রিয় রমনীর দিকে।এলোমেলো চুলগুলো নামমাত্র খোপায় বেধেছে তার প্রেয়সী।খোপায় তার শুকনো বকুলের মালা জড়ানো।চোখে-মুখে ভীষণ কাঠিন্যের ছাপ।বিজয়ের প্রেয়সীকে দেখতে ঠিক কাঠখোট্টা সন্ন্যাসীনীর মতো লাগছে।মনে হচ্ছে এইমাত্র হিমালয় থেকে আরাধনা করে সাধারণ মানুষদের মাঝে পা রেখেছে।বিজয় দু’পা এগিয়ে যায় তার প্রেয়সীর দিকে।গলায় একরাশ আকুলতা ঢেলে বলেঃ” তুমি আমার জীবনে দেখা শ্রেষ্ঠ রমনী।আমার তুচ্ছ প্রাণের চাইতেও তোমায় বেশি ভালোবাসি, রানু।আমি নিঃস্ব ফকিরের মতো তোমার প্রেম প্রার্থণা করছি।তুমি ফিরিয়ে দিও না আমায়। ওগো হৃদয়রানী, গ্রহণ করো আমার হৃদয় নিংরানো ভালোবাসা।তোমার সুগন্ধমাখা আঁচল ছোঁয়ার অধিকার আমায় দাও।কথা দিচ্ছি, তোমার মুখের একটুখানি হাসির জন্যে জীবন দিতেও দ্বিধা করব না।”
ফিরেও তাকায় না রানু।শরীরে জড়ানো ধবধবে সাদা শাড়ির আঁচলের একাংশ মাথায় টেনে দেয়।দৃঢ় কন্ঠে বলেঃ” আমাকে যেতে দিন বিজয়বাবু।আপনি আমায় অপমান করছেন।আপনি কি ভুলে গেছেন, আমি বিধবা?আপনার এসব কথায় আমার মন গলে না।পরপুরুষের মুখ থেকে এসব কথা শোনাও পাপ।”
রানুর সামনে দু-হাত মেলে তার পথ আটকায় বিজয়।শক্ত কন্ঠে বলেঃ” অবিনশ্বর স্রষ্টার শপথ,আজ আমাক গ্রহণ করতেই হবে ।হয় আমায় গ্রহণ করো, নাহয় নিজমুখে আমার মৃত্যু কামনা করো।প্রেমহীন জীবনের চাইতে মৃত্যু শ্রেয়।”
এমন সময় সেখানে আসে উচ্ছল কিশোরী মিতালী।সে বিজয়ের পিছনে দাঁড়িয়ে বিস্মিত কন্ঠে প্রশ্ন করেঃ” আপনি এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেন ছোট জমিদার? আর রানু তুই কেন ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস?”
_”কাট” —উচ্চশব্দে বলে উঠেন ডিরেক্টর আখতার হোসেন।রানুবেশী তথা, বিজয়বেশী শাফিন ও মিতালীবেশী পুনম এতোক্ষণে অভিনয় ছেড়ে বাস্তবে ফিরে আসে।পুনম শাড়ির আচঁলটাকে পাখার মতো ব্যবহার করে বাতাস করে।ইশ! এতো বড় কাপড় গায়ে জড়ানো যায়?শরীরটা মনে হচ্ছে সিদ্ধ হয়ে যাবে।ডিরেক্টর ব্যস্ত পায়ে এগিয়ে আসেন পুনমের দিকে।নরম সুরে বলেনঃ”পুনম ছোট জমিদার নয়, বিজয়বাবু বলবে।আর রানু ক্যারেক্টারটা তোমার চাইতে বয়সে বড়।তাই তুমি তাকে তুই নয় তুমি করে বলবে।যেমন-আর রানু বুবু,তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন?এরকম। ঠিক আছে?”
পুনম মাথা নাড়ে।সে পুরোপুরি বুঝতে পেরেছে।
_” তথা,তোমার চেহারায় অতিরিক্ত কাঠিন্য চলে আসছে।এতোটা চলবে না।মনে রাখবে,তুমি বিজয়ের বাড়ির আশ্রিতা।তাই এতো কঠিনভাবে কথা বলবে না।বুঝতে পেরেছো?”
_” জ্বি,স্যার।”
_” শাফিন,তোমার চুল নষ্ট হয়ে গেছে।ধুতির এদিকটাও নষ্ট হয়ে গেছে।ঠিক করো।”
মেকাপম্যান দৌড়ে আসে শাফিনের দিকে।তার মুখের সামনে আয়না ধরে চুলে চিরুনি চালায়। এলোমেলো হয়ে যাওয়া ধুতির কুঁচিগুলো ঠিক করে দেয় আরেকজন।তথা ও পুনম মেকাপ ঠিক করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।তথার চোখের কাজল লেপ্টে গেছে।টিস্যু দিয়ে মুছে নেয় তা।অভিনয়কে যতটা সহজ ভেবেছিল,ততোটা সহজ এটা নয়।দশ মিনিট শুটিং করেই জান বেরিয়ে যাচ্ছে।
পুরোদমে শুটিং চলছে।ডিরেক্টরের চেয়ারে বসে আখতার হোসেন সব ঠিকঠাক করছেন,একে-ওকে ফরমায়েশ দিচ্ছেন।সোনালী,মালিহাসহ সব মেয়েরা একপাশে দাঁড়িয়ে শুটিং দেখছে।সোনালী বাদে বাকি সবাই অবাক চোখে দেখছে সবকিছু।এসব তাদের জন্য একদম নতুন।আর সোনালী? সে অলসচোখে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে।মুখে তার অবজ্ঞার হাসি।এই অভিনয় সত্যিকারের অভিনয় বটে।এতোগুলো মেয়ের চোখে ধুলো দিচ্ছে এরা। ভাবা যায়?নিঃসন্দেহে আখতার হোসেন জাত অভিনেতা।আচ্ছা,এখানে কেউ কেন বুঝতে পারছে না যে এটা অভিনয় নয় ছেলেখেলা?আশ্চর্য! এরা কি কখনো এফডিসিতে যায়নি?কখনো সামসামনি কোনো সিনেমার শুটিং দেখেনি? কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই একটা অচেনা লোকের সাথে এতোদূর চলে এলো?অবাক না হয়ে পারে না সোনালী।মেয়েগুলো এতো বোকা কেন?
শুটিং হচ্ছে নিচতলায় ড্রয়িংরুমে।দোতলার বারান্দার রেলিংয়ে দু-হাতের ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইউসুফ।তার দৃষ্টি নিচে দাঁড়িয়ে থাকা তথার উপরে।ধবধবে সাদা শাড়ির সাথে কালো রঙের ফুলহাতা ব্লাউজ। বেশ মানিয়েছে মেয়েটাকে।একদম স্নিগ্ধ,সতেজ,পবিত্র লাগছে।সাধে কি আর ইউসুফ তাকে কামিনী ফুল বলে?ইউসুফের মনে পড়ে যায় দেড় মাস আগের সেই দিনের কথা,যেদিন তথাকে প্রথম দেখেছিল। আখতার হোসেনের অফিসে যাওয়ার আগেও সে ভাবেনি একটা সাধারণ বাঙালি মেয়ের মাঝেই আটকে যাবে।একগুচ্ছ অনুভূতি জন্ম নেবে এই বোকাসোকা মেয়েটাকে ঘিরে।তথা তো বোকাই।বোকা না হলে পঞ্চগড় অবধি আসে? প্রথম দেখায় কোনো আড়ম্বরতা ছিল না। ইউসুফের সাথে ডিরেক্টরের খুব ঝামেলা হয়েছিল বছর দুয়েক আগে।সেবার এই জ্ঞানহীন ডিরেক্টরের জন্য প্রায় ধরাই পড়তে যাচ্ছিল।আগে ইউসুফের কাজ চলতো ঢাকায়।ঢাকা থেকে অবৈধ মালগুলো চট্টগ্রামে চলে যেত।সেখানে আলাদা আরেকটা টিম ছিল।সেই টিম সেগুলো পাচার করতো অন্যান্য দেশগুলোতে।দীর্ঘদিন এভাবেই ব্যবসা চলেছে ইউসুফের। এই স্বাভাবিক নিয়মগুলোর মাঝেই ভাঙন ধরে দু’বছর আগে।ডিরেক্টরের সাথে নারী পাচার সম্পর্কিত একটা ডিল করেছিল ইউসুফ। ডিরেক্টরের কাজ হলো বিশটা মেয়ে জোগার করে দেওয়া।ঠিক সেবারেই ব্যবসায় ধরা খেয়েছে সে।ইউসুফের অগোচরে পুলিশ বিভাগ ডিরেক্টরকে ধরেছিল।পেট থেকে ইউসুফের ব্যবসা সংক্রান্ত সব কথা বের করে হানা দিয়েছিল ইউসুফের আস্তানায়।ইউসুফের ভাগ্য খুব ভালো বলা যায়।কারণ খুব বেশি প্রমাণ পুলিশ পায়নি সেদিন।তবে এই ডিরেক্টরের কারণে ক্ষতি হয়েছে খুব।চট্টগ্রামের কর্মীদেরকে সরাতে হয়েছে, সেখান থেকে ব্যবসা গুটাতে হয়েছে,দু’দিনের মাঝে দেশ ছাড়তে হয়েছে।এরপর অনেকদিন দেশে আসতে পারেনি ইউসুফ।এবারে প্রায় দেড় বছর পর দেশে ফিরেছে সে।অদ্ভূত ব্যাপার হলো, দেশে আসার পর ইউসুফ দ্বিতীয় ডিলটাই করেছে এই ডিরেক্টরের সাথে।এর পিছনেও একটা ঘটনা আছে।ব্যবসার বিরাট ক্ষতির কথা ভুলেনি ইউসুফ।দেড় মাস আগে বৃষ্টিময় এক বিকালে স্থির করলো সে প্রতিশোধ নেবে।হারামজাদা ডিরেক্টরের মাথায় ছয়টা বুলেট পুরে দেবে একবারে।যেই ভাবা সেই কাজ।হুট করেই হাজির হয় ডিরেক্টরের অফিসে।ডিরেক্টর অবশ্য তখনো দেখেনি ইউসুফকে।সেখানে কোনো একটা নাটকের জন্য স্ক্রিনটেস্ট চলছিল তখন।সবার সামনে তো আর মানুষ খুন করা যায় না।তাই নিতান্ত অনাহূতের মতো একপাশে দাঁড়িয়ে ছিল ইউসুফ।তখনই তথার সাথে দেখা।সিএনজি থেকে নেমে বৃষ্টির ভয়ে একটা ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে ছিল।শরীরের সাদা জামার একাংশ ভিজে গিয়েছিল বৃষ্টির ছাটে।পুরোটা সময় মেয়েটার দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে ছিল ইউসুফ।এতো এতো সুন্দরী রমনীদের মাঝে কিভাবে যেন এই মেয়েটাতেই আটকে গেল ইউসুফ।মনে হচ্ছিল মেয়ে নয় একটা বৃষ্টিভেজা কামিনী ফুল দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে।সৌন্দর্য, সুগন্ধে একদম পরিনত ফুলটা। শুধু ছোঁয়ার অপেক্ষা মাত্র। হুট করে প্রেমে পড়লো ইউসুফ। তার দুর্বলতাকে প্রথম দর্শনের প্রেমের কাতারেই ফেলা যায়।ভালো লাগার পর আর দেরি করেনি ইউসুফ।প্রেয়সীকে নিজের কাছে আনার জন্য যা করার দরকার তাই করেছে।তথার সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়েছে,দু’দিন অনুসরণ করেছে,লুকিয়ে ছবি তুলেছে,আখতার হোসেনের সাথে আবার নতুন করে চুক্তি করেছে।এই দেড় মাসে ইউসুফের কাজের রুটিন পুরোপুরি বদলে গেছে।নিজেকেই এখন চিনতে পারে না সে।এখনকার ইউসুফ এবং আগের ইউসুফের মাঝে বেশ খানিকটা পার্থক্য রয়েছে। আগে ইউসুফ ছিল কেবল অপরাধী। সবসময় নিজের কথাই চিন্তা করতো।অন্যদিকে এখনকার ইউসুফ একইসাথে অপরাধী এবং প্রেমিক।সে এখন নিজের চাইতে প্রেয়সীর কথা বেশি চিন্তা করে।এখন আর আগের মতো চিন্তা-ভাবনা করতে পারে না।কোনো কাজ করার আগে তথার কথা মাথায় আসে।একটা ভয় কাজ করে সবসময়।যদি তথা জানতে পেরে যায়? কি আশ্চর্যের কথা! এককালের বেপরোয়া ইউসুফও এখন এক সাধারণ মেয়েকে ভয় পায়।প্রেমে পড়লে বোধহয় এভাবেই চিন্তাধারা বদলে যায়।
_” স্যার,স্যার।”
মামুনের কন্ঠে ইউসুফের ভাবনা রাজ্যে ভাঙণ ধরে।ঘাড় ঘুরিয়েই মামুনকে দেখতে পায়।তার দু’হাত দূরেই দাঁড়িয়ে আছে মামুন।
_” বলো মামুন।”
_” শেঠজি ফোন করেছিল একটু আগে।”
_” কোন শেঠ?”
_” মহেন্দ্র শেঠ,কলকাতার ব্রোথেল ম্যানেজার।”
_” কি বলল?”
_” ফোন দিয়ে খুব চোটপাট করলো।এ মাসের মাঝামাঝি নাকি মেয়েগুলোকে পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল ”
মামুনের কথা শুনে সোজা হয়ে দাঁড়ায় ইউসুফ।বিরক্তিতে কপাক কুঁচকে আসে তার।
_” মাত্র পাঁচ তারিখ আজকে।মাসের মাঝামাঝি হয়েছে এখনো?”
_” আমি এটাই বলেছি স্যার।পরে রাগ করে কল কেটে দিয়েছে।”
_” হারামী একটা।এরপর আর ওই শেঠের সাথে কাজ করা যাবে না।নিম্ন পর্যায়ের অসভ্য একটা লোক।”
ইউসুফ আবারো নজর দেয় তথার দিকে।স্ক্রিপ্ট পড়ছে মেয়েটা।তথার খোপায় দেওয়া শুকনো বকুলের মালাটা টেনে ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে ইউসুফের। একটা সতেজ ফুলের মাঝে নেতানো ফুলগুলো দৃষ্টিকটু লাগছে খুব।মাঝে মাঝে ডিরেক্টরকে ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করে ইউসুফের।সে না থাকলে তথাকে এ পর্যন্ত টেনে আনা কঠিন হতো।
_” মামুন,তথা খুব আকর্ষণীয় তাই না?আমার বউ হিসেবে ওকে খুব মানাবে। ”
_” আমি ম্যাডামের দিকে খুব বেশি একটা তাকাই না স্যার।”
মামুনের দিকে চেয়ে সন্তুষ্টির হাসি হাসে ইউসুফ।ছেলেটা খুব বিশ্বস্ত।তার উপর চোখ বন্ধ করে সব কাজ ফেলে রাখা যায়।
_” তোমার চাহিদা খুব কম,মামুন।তোমার মতো এমন মানুষ আমি খুব কম দেখেছি।”
_” প্রয়োজনের বাইরে কোনোকিছু চাইতে আমার লজ্জা করে, স্যার।”
_” তোমাকে একটা পুরষ্কার দেব।এতো বিশ্বস্ততা অবশ্যই পুরষ্কারের যোগ্য। ”
_” তাহলে পুরষ্কারটা এখন দিয়েন না স্যার। সময় করে একদিন আমিই কিছু একটা চেয়ে নেব।”
_” কি চাও তুমি?”
_” এখন বলব না স্যার।এখনো সময় হয়নি।তবে আমার জীবনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ পুরষ্কারটা আপনার থেকে চেয়ে নেব আমি।”
_” ঠিক আছে ,চেয়ে নিও। আমিও অপেক্ষায় থাকব।”
মামুন চোখ ফিরায় নিচের দিকে।ঐ তো মেয়েটাকে দেখা যাচ্ছে।একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে সামনের দিকে।মেয়েটার দিকে তাকালেই মামুনের সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়।শরীর ভেঙে আসে।মেয়েটার হাসির শব্দ মামুনের হৃদয়ে কাঁপন ধরায়।তার গলার স্বরে মামুন অপ্রস্তুত হয়।আচ্ছা,এটাই কি সর্বগ্রাসী প্রেম?
***
আজ রাতেও বেরিয়েছে সোনালী।তার আনাগোনাই এখন রাতে।দিনের বেলা এদিক-ওদিক ঢু মারার সুযোগ হয় না।কেউ না কেউ পিছনে লেগেই থাকে।আজ মোবাইলটাও নেই সাথে।তাই একটু চিন্তায় আছে সোনালী।অন্ধকার রাতে পুরো বাড়িতে চক্কর দেওয়ার জন্য আলোর দরকার।এই আলোরই অভাব এখানে।বিশাল বিশাল ডালপালা এড়িয়ে, ঝোঁপঝাড় এড়িয়ে পথ চলতে খুব কষ্ট হয়। বাড়ির পিছনে কতগুলো কাঁটাগাছ আছে।হাত-পায়ের অনেক জায়গায় কাঁটার সাথে ব্যাথা পেয়েছে সে।আজকে শরীরটা খুব একটা ভালো নেই সোনালীর।মাথা ব্যাথা করছে খুব।হাত-পায়ের আঘাতের জায়গাগুলো জ্বলছে।কোথাও যাওয়ার ক্ষেত্রে মনটাও সায় দিচ্ছে না।আজ আর সদর দরজা দিয়ে বেরোয় না সোনালী।কেন যেন ভিতরে খুব অস্থিরতা কাজ করছে। মনে হচ্ছে পিছনে কেউ আছে।কেউ চুপিচুপি অনুসরণ করছে তাকে।সোনালী ঘাড় ঘুরিয়ে আশেপাশে তাকায়।না কেউ নেই।পুরো বারান্দাটা খালি।বড় এক দম নেয় সোনালী।খানিকটা থু থু ছিটিয়ে দেয় বুকে।মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে ডাকতে বারান্দা দিয়ে হেঁটে চলে। আজ হাম্মামখানার জানলা টপকে বাইরে বের হবে।তবে খুব বেশি দূর যেতে পারে না।আবছা আলোয় কারো ছায়া পড়ে সোনালীর সামনে। মুহূর্তেই ব্রেইন কাজ করা বন্ধ করে দেয়।সোনালী দম আটকে দাঁড়িয়ে থাকে।পিছন ফিরে তাকায় না।পিছন থেকে
যেকোনো সময় আঘাত আসতে পারে।সোনালী জিন্সের পকেটে হাত ঢুকিয়ে রিভলবারটাকে চেপে ধরে।কয়েক সেকেন্ড অতিবাহিত হওয়ার পরেও কোনো আঘাত না পেয়ে অবাক হয় সোনালী ।ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকানোর আগেই কানে আসে মামুনের শীতল কন্ঠস্বর।
_” কোথায় যাচ্ছেন, ছোট্ট মেয়ে?”
চলবে….
#ডাহুক_নদীর_তীরে (পর্ব-১৭)
#হালিমা রহমান
মামুনের শীতল কন্ঠে সোনালীর হৃৎপিন্ডের গতি তীব্র হয়। মেরুদণ্ড বেয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে যায়।হাত-পা কাঁপে থরথর। এই কঠিন মুহূর্তেও মাথা ঠান্ডা রাখে সোনালী।কঠিন পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার অদ্ভূত ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছে মেয়েটা।বড় এক দম নেয় সোনালী।বুকে হাত দিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে।ক্ষনিকের মাঝে মুখে প্লাস্টিকের হাসি ঝুলিয়ে মামুনের দিকে ফিরে তাকায়।
_” এভাবে পিছু নেয় মানুষ? ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন আমাকে।”
সোনালীর কথায় মামুনের কোনো ভাবান্তর হয় না।কপাল কুঁচকে প্রশ্ন করেঃ” ওদিকে কোথায় যাচ্ছিলেন আপনি?”
_” হাম্মামখানায়।আর কোথায় যাব।ওখানে আর কিছু আছে নাকি?”
_” এতো রাতে হাম্মামখানায়?আশ্চর্য! ”
_” কেন? ওখানে খালি দিনের বেলায় যাওয়া যায়?রাতের বেলায় যাওয়ার নিয়ম নেই নাকি?”—খানিকটা কঠিন শোনায় সোনালীর কন্ঠ।
_” না তা বলছি না।কিন্তু এতো সেজেগুজে কে হাম্মামখানায় যায়?আপনার বেশভূষায় রীতিমতো অবাক হচ্ছি আমি।”
আলগোছে নিজের দিকে একবার নজর বুলায় সোনালী।শার্ট-জিন্স-কেডস।চুলগুলো মাথার উপর উঁচু করে বাঁধা।সোনালী যে অন্যকোথাও যাচ্ছিল তা পাগলেও বুঝবে।তবে দমে গেলে চলবে না।যখন আত্মরক্ষার জন্য সহজলভ্য কোনো অস্ত্র থাকে না তখন গলাবাজি করতে হয়।এই নীতিটা সবসময় মেনে চলে সোনলী। এই বিপদের সময়ও সেই মোক্ষম অস্ত্রটাই ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিলো সে।গম্ভীর গলায় বললঃ” আপনি কি আজকাল মেয়েদের পোশাক নিয়ে গবেষণা করা শুরু করেছেন? ”
_” না।কিন্তু চোখের সামনে উল্টা-পাল্টা কিছু দেখলে অবশ্যই আমি প্রশ্ন তুলব।আমার মনে হচ্ছে আপনি অন্যকোথাও যাচ্ছিলেন।”
_” হাম্মামখানা ও কয়েকটা দেওয়াল ছাড়া কি আছে সেখানে?আমাকে ভূত মনে হয় আপনার?দেয়ালের মাঝ দিয়ে ভ্যানিশ হয়ে যাব?তাছাড়া,এই রাত-বিরেতে কোথায় যাব আমি?অথবা,ধরুন আমি অন্যকোথাও গেলাম।তাতে আপনার কি?এখানে আছি আমি।যেখানে ইচ্ছা সেখানে যেতেই পারি।আমরা তো আর এখানে বন্দী নই।আমি দেশের স্বাধীন নাগরিক। যেখানে ইচ্ছে সেখানে যাব ।ইচ্ছে হলে রাতের বেলায় চাঁদ দেখতে ছাদে যাব।আপনার কি হ্যাঁ? আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করার কে?আর প্রশ্ন করলেই কি আমি আপনায় কৈফিয়ত দেব?এতো সোজা-সাপ্টা,লুতুপুতু মেয়ে আমি নই।বুঝলেন?”–একটানা এতোগুলো কথা বলে হাঁপিয়ে উঠে সোনালী।কথার শেষে বড় এক নিঃশ্বাস ছাড়ে।চোরের উপর বাটপারি করতে সে ভালোই জানে।
_” সবই বুঝলাম।কিন্তু লুতুপুতু মানে আবার কি?”
_” জানি না।মুখে এসেছে বলে ফেলেছি।আমি এতো ভাবনা-চিন্তা করে,অর্থ বুঝে কথা বলতে পারি না।আর আপনিই এতো রাতে কি করছেন এখানে?এটা তো আপনার বাড়ি না।এটা আমার ক্রাশের বাড়ি।তাহলে আমিও আপনাকে প্রশ্ন করতে পারি,আপনি কেন এতো রাতে ঘুরঘুর করছেন?এতো রাতে আপনার কি কাজ?”
মামুন এক-ভ্রু তুলে চেয়ে থাকে কেবল।মুখে কিছুই বলে না।সোনালী আড়চোখে তাকায় একবার মামুনের দিকে।সে বোধহয় মনে মনে কিছু ভাবছে।অথবা সোনালীকে সন্দেহ করছে।এই মামুনকেও দেখতে পারে না সোনালী।খারাপের সাথে কি আর ভালো মানুষ চলে?মামুনও খারাপ।সেও ইউসুফের মতো পঁচা আপেল।সোনালী বিরক্ত হয় খুব।এই লোক এখন আবার কি প্রশ্ন করবে আল্লাহ মালুম।
_” আপনি না হাম্মামখানায় যাবেন?তো দাঁড়িয়ে আছেন কেন? যান।”
_”এখন আর যাব না।বিরক্ত বানিয়ে ফেলেছেন আপনি আমায়।এতো কথা বলেন আপনি।”
বোকার মতো চেয়ে থাকে মামুন।বিস্মিত কন্ঠে বলেঃ” আমি বেশি কথা বললাম! আমি?আশ্চর্য মানুষ আপনি ছোট্ট মেয়ে।কথা তো বললেন আপনি।বেশি কথা বলে আমার কানের পোকা বের করে ফেলেছেন।”
_” রাস্তা ছাড়ুন।রাত-বিরেতে মেয়েদের পিছু নেওয়া খুবই বাজে স্বভাব।আমি নিতান্ত ভালো মেয়ে বলে কিছু বললাম না।আমার জায়গায় অন্যকেউ হলে আজকে খবর ছিল আপনার।”
মামুনকে অতিক্রম করার পর হাঁফ ছাড়ে। ভাগ্য ভালো থাকায় আজ ধরা পড়েনি।মনে মনে আল্লাহকে ধন্যবাদ দেয়।
_” আর কখনো এতো রাতে বাইরে বের হবেন না, ছোট্ট মেয়ে।আর কখনো যাতে না দেখি।কথাটা মনে রাখবেন।”— খুব কঠিন শোনায় মামুনের কন্ঠ।মনে হচ্ছে সে শাসন করছে সোনালীকে।সোনালীর পা থেমে যায়।মুহূর্তেই রাগ উঠে যায় মামুনের কথা শুনে।হারামজাদা বেয়াদব।সবকিছুতে তোর নাক গলাতে হবে কেন ?” মূর্তিমান শয়তান”—বিরবির করে মামুনকে গালি দিয়ে ধুপধাপ পা ফেলে ঘরে চলে যায় সোনালী।তা দেখে মুচকি হাসে মামুন।ডানহাতের মুঠোতে রাখা ছোট্ট কাগজটাকে কয়েক টুকরো করে একপাশে ফেলে দেয়।ফিসফিসিয়ে বলেঃ” আল্লাহর কসম,আপনাকে আমি বাঁচাব ছোট্ট মেয়ে।অন্য কারো জন্য নয়,নিজের জন্য বাঁচাব আপনাকে।জীবনের বাকি সকালগুলো আপনার সাথেই দেখব, প্রিয়তমা। আপনার ও আমার মাঝে কোনো পর্দা নেই।আপনি যেমন আমার সবকিছু জানেন, তেমনি আমিও আপনার সবটাই আমি।আপনাকে আমি পোষ মানিয়েই ছাড়ব।”
বারান্দায় দাঁড়িয়ে অন্ধকার আকাশের দিকে চেয়ে থাকে মামুন।শত্রুর সাথে নিজের জীবন জড়াতে চাইছে সে।মামুনের জন্য সোনালীর অপর নাম মৃত্যু। সোনালীকে ছোঁয়া মানে নিজের ধ্বংসকে সাদরে আহ্বান করা।তবুও সেটাই করবে মামুন।হুট করেই সোনালী নামের চোরাবালিতে আটকে গেছে সে।এখানে থেকে উপরে উঠার রাস্তা আছে কিনা তা জানে নেই।জানার ইচ্ছেও নেই।প্রেমের মহাসমুদ্রে ডুবে যেতে চায় মামুন।হাত বাড়িয়ে স্পর্শ করতে চায় মৃত্যুসম ভয়ংকর কিছু অনুভূতিকে।
***
পেটের ভিতর কেমন যেন শব্দ হচ্ছে।মেঘ ডাকলে যেমন গুড়গুড় শব্দ হয়,ঠিক তেমন।নাভীর কাছটায় ব্যাথা হচ্ছে খুব।তলপেটটা ভারী লাগছে আবার।মনে হচ্ছে একটা বিশাল পাথর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে সেখানে।তথা দম খিচে শুয়ে রইলো।দু-হাতে আকঁড়ে ধরলো বিছানার চাদর।তবে শেষ রক্ষা হলো না আর।আবার পেট মোচড় দিয়ে উঠলো।মনে হচ্ছে যেন পেটের ভিতর ভয়ংকর এক ভূমিকম্প হচ্ছে।কয়েক সেকেন্ড পরেই অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হল পুরো পেটে। আর সহ্য করতে পারলো না তথা।দূর্বল শরীরের ভার দুটো পায়ের উপর ছেড়ে দিয়ে বহুকষ্টে ওয়াসরুমে গেল।সকাল থেকে এ নিয়ে পনেরো বার বাথরুমে ছুটতে হয়েছে।তথার শরীর আর চলছেই না।
কাল রাতে মন ভরে নারিকেলের নাড়ু খেয়েছিল তথা।এ বাড়িতে রানাবান্নার কাজ করেন রোকসানা নামের একজন মহিলা।কিভাবে যেন রান্না করেন তিনি। রান্নাগুলো এতো ভালো হয়!প্রতিবেলা খাবার শেষে দশ মিনিট হাতের আঙুল চাটে তথা।মাঝে মাঝে রোকসানা খালার হাতটাও চেটে ইচ্ছে করে তার।কাল রাতে নারিকেলের নাড়ু বানিয়েছিলেন তিনি।নাড়ু তো নয় যেন অমৃত। গোটা বিশেক নাড়ু খেয়েছে তথা। রাতটুকু ভালোই কেটেছে।কিন্তু সকাল হতেই তথার পেটের অবস্থা পাল্টে গেল।ওয়াসরুমে ছুটতে ছুটতে প্রাণ যাওয়ার জোগাড়।এর মাঝে বমিও করেছে বার তিনেক।সব মিলিয়ে তথা এখন চোখে শুধু অন্ধকার দেখেছে।
এবাড়িতে ইউসুফের ঘর ছাড়া আর কোনো ঘরে এটাচড বাথরুম নেই।মেয়েদের জন্য আছে দুইতলার হাম্মামখানা এবং ছেলেদের জন্য আছে নিচ তলার হাম্মামখানা। রুম থেকে বেরিয়ে হাম্মামখানা অবধি যাওয়ার সামর্থ্য নেই তথার। তাই তার ঠাই মিলেছে স্বয়ং আহমেদ ইউসুফের শোবার ঘরে।
টানা পনেরো মিনিট পর বাথরুম থেকে বের হলো তথা।পেটে আর কোনো খাবার নেই বোধহয়।হুড়হুড় করে পানি বেরোচ্ছে কেবল।রুমে পা দিতেই সোনালী ও মালিহাকে চোখে পড়লো তার।সোনালী।চিন্তিত মুখে খাটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে, মালিহা স্যালাইন বানাচ্ছে।তথাকে দেখতে পেয়ে সোনালী ছুটে যায় তার কাছে।তথার হাত টেনে ধীরে ধীরে খাটের কাছে নিয়ে আসে।চিন্তিত সুরে বলেঃ ” এ নিয়ে কতবার?”
_” পনেরো।”
_” আল্লাহ! রক্ত-টক্ত যায় নাকি?”
তথা মাথা নেড়ে না বলে।কথা বলার শক্তি ফুরিয়ে গেছে তার।
_” তথা আপু,মাথাটাকে একটু উপরে তুল।একটু স্যালাইন খাও।হা করো দেখি।এই তো আরেকটু, আরেক চুমুক।”
বেশ যত্ন সহকারে তথাকে স্যালাইন খাওয়ায় মালিহা।একটু একটু করে পুরো একগ্লাস স্যালাইন ঢেলে দেও তথার মুখে।স্যালাইন না খেলে শক্তি হবে কেন?
_” তথা আপু,পা সোজা করো।একটু তেল মালিশ করে দেই।ভালো লাগবে।”—কোথা থেকে যেন একটা সরিষার তেলের বোতল জোগাড় করেছে সোনালী।
তথা বিব্রত হয়।ইশারায় মাথা নেড়ে বলে ঃ”প্রয়োজন নেই।”
_” বেশি কথা বলো তুমি।প্রয়োজন নাকি অপ্রয়োজন তা জানতে চেয়েছি আমি?”
জোর করে তথার পায়ে তেল মালিশ করে দেয় সোনালী।মালিহা আলতোহাতে তার চুলে বিলি কেটে দেয়।আরামে ঘুম চলে আসে তথার।এই মেয়ে দুটো না থাকলে কি যে হতো আজ!
_” এক্সকিউজ মি,আমি একটু ভিতরে আসব?”
দরজার বাইরে থেকে ইউসুফের কন্ঠ পেয়ে ত্বড়িৎ গতিতে উঠে দাঁড়ায় মালিহা।মেয়েটা ইউসুফকে অকারণেই ভয় পায়।সোনালীও উঠে দাঁড়ায়।ইউসুফকে দেখে কপাল কুঁচকে ফেলে।এর ছায়া দেখলেও জ্বিভের আগায় গালি চলে আসে মেয়েটার।সোনালী গলা বাড়িয়ে বলেঃ” তথা আপু এখানে শুয়ে আছে।আপনি একটু পরে আসুন।”
ইউসুফ কিন্তু পাত্তাও দিলো না সোনালীর কথায়।হাতে একটা স্যালাইন ও কিসব ঔষধের বোতল নিয়ে ঢুকে পড়লো ঘরের ভিতর।তার পিছন পিছন মামুনও ঢুকলো।তার হাতে খাবারের প্লেট। সোনালী একবার উঁকি দিয়ে দেখলো। কাঁচকলার খিচুড়ির মতো কি যেন আছে সেখানে। হাতের জিনিসগুলো টেবিলের উপর রেখে সোনালীর দিকে শান্ত চোখে একবার তাকায় ইউসুফ।শক্ত কন্ঠে বলেঃ” এতোক্ষণ ওর খেয়াল রাখার জন্য ধন্যবাদ।আপনাকে আর প্রয়োজন হবে না মিস।আপনি আসতে পারেন এখন।”
_” মানে কি?আপনি এখন থাকবেন এঘরে!”
_” মামুন,খাবারটা এখানে রেখে এদেরকে নিয়ে চলে যাও এখন।মেয়েটা একটু ঘুমাচ্ছে। মিস সোনালীর গলার আওয়াজে ওর ঘুম ভেঙে যাবে।”
সোনালীকে এবারেও পাত্তা দেয় না ইউসুফ।মামুনকে আদেশ দিয়ে তথার ঔষধ-পত্র তৈরি করে।তথার পাশে বসে পড়ে আস্তে করে।
_” চলুন ছোট্ট মেয়ে।এখানে আর কাজ নেই আপনার।”—হতভম্ব সোনালীকে একপ্রকার টেনেটুনে রুম থেকে বের করে মামুন।মালিহা বেরিয়ে গেছে অনেক আগেই।
চোখটা লেগে এসেছিল তথার।খাটের পাশে খুটখুট আওয়াজ পেয়ে চোখ মেলে তথা।হাতের কাছেই ইউসুফকে দেখতে পেয়ে ভূত দেখার মতো চমকে উঠে। তড়িঘড়ি করে উঠতে যেয়ে খাটের পাশের টেবিলের সাথে হাতে ব্যাথা পায়।
_” আস্তে, কামিনী ফুল।”
_” আপনি এখানে কেন? মালিহা,সোনালী কোথায়?”
_” ওদেরকে দিয়ে কি হবে?রোগীর দরকার ডাক্তারকে।তাই আমি আছি।”
_” আপনি ডাক্তার?”
_” পুরোপুরি সার্টিফিকেট পাওয়া ডাক্তার নই।ডাক্তারি পড়া শুরু করেছিলাম।শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যাইনি।কাটা-ছেড়া ভালো লাগে না আমার।”
অত্যন্ত অস্বস্তি হচ্ছে তথার। ইউসুফ একদম কাছেই বসে আছে।বড়জোড় আধ-হাতের দুরূত্ব দুজনের মাঝে। তথার দম আটকে আসে।মনে হয় যেন,ইউসুফ নামক কঠিন এক দেয়ালের একপাশে চাপা পড়ে আছে।তথা মাথা উঠানোর চেষ্টা করে।দূর্বল গলায় বলেঃ” আপনি একটু সরে বসুন।”
কপাল কুঁচকায় ইউসুফ। খিচুড়ির প্লেটটাকে কোলের উপর রেখে প্রশ্ন করেঃ” কেন?”
_” অস্বস্তি হচ্ছে আমার।ডাক্তারি করা লাগবে না।আপনি সরুন।আমি এমনিই ভালো হব।”
তথার কথায় কিছুই বলে না ইউসুফ। প্রেয়সীর ঘাড়ের নিচে আলতোভাবে হাত দিয়ে তথাকে বসতে সাহায্য করে।উত্তেজনায় পুরো শরীর কাঁপে তথার।রাগে তার দূর্বল শরীরটা কাঁপে থরথর।নিজের দূর্বল হাত দিয়ে ইউসুফের হাত সরিয়ে দেয় তথা।শীর্ণ কন্ঠে বলেঃ” আপনি এখন এখান থেকে চলে যাবেন।আমার ভালো লাগছে না এসব।”
এবারেও ইউসুফ কিছু বলে না।কোলের উপর থেকে খাবারের প্লেট আবারো টেবিলের উপর রেখে দেয়।তথার দিকে শান্ত চোখে চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ।কয়েক সেকেন্ড পরে হুট করেই তথার কপালে ঠোঁট বুলায় ইউসুফ। তথার হাতদুটো এক হাত দিয়ে আঁটকে ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দেয় প্রাণপ্রিয় রমনীর কপালে।ফিসফিসিয়ে বলেঃ” আনা বেহিবাক,কামিনী ফুল।আনা বেহিবাক।”
কিছুই বুঝতে পারলো না তথা।বুঝার চেষ্টাও করলো না।জীবনে প্রথম কোনো পুরুষের স্পর্শ পেয়ে চোখ বেয়ে দু-ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো তথার।পেটের ভিতর আবারো গুড়গুড় করছিল।অনেকক্ষণ যাবৎ একদলা বমি আঁটকে ছিল গলার কাছে।এদিক-ওদিক তাকায় না তথা।চোখ বন্ধ করে বমি করে দেয়।ভাসিয়ে দেয় ইউসুফের গলা ও বুকের একাংশ।
চলবে….