ডিভোর্স পেপার,পর্ব-১
Write : Sabbir Ahmed
-দেখো অভ্র আমরা কখনো তোমাকে কোনো কিছুতে মানা করিনি। যখন যা চেয়েছো আমরা সাধ্য মতো দেওয়া চেষ্টা করেছি। মন চাইলে এদেশ যাচ্ছে ওদেশ যাচ্ছো। এখন আমাদের এই কথাটা তোমার রাখতে হবে (অভ্রর বাবা অভ্রকে সামনে দাঁড় করিয়ে কথা গুলো বলছে)
,,
অভ্র চুপচাপ আছে কোনো উত্তর করছে না। অভ্রর বাবা অভ্রকে একটা বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে সেটা হলো তার চাচাতো বোন সুস্মিতার সাথে।
-কি হলো কিছু বলো (বাবা)
-বাবা আমি এখন বিয়ে করতে চাচ্ছি না (অভ্র)
-এ কথা তো গত দুবছর হলো শুনছি
-আমি এখন এসব ভাবছি না
-বড় হয়েছো ঠিকই, তবে জ্ঞান বুদ্ধি কিছুই হয়নি। তোমার মা বা আমি কেউ তোমার কথা শুনবো না। সুস্মিতার সাথে তোমার বিয়ে
-সুস্মিতা! মানে হারুন চাচার মেয়ে!!(অভ্র অবাক হয়ে বলল)
-হ্যা তোর হারুন চাচার মেয়ে (অভ্রর মা)
-সে তো গ্রামের মেয়ে (অভ্র)
-তো কি হয়েছে?? আমি হারুন ভাই এর সাথে কথা বলেছি সে রাজি। তুমি প্রস্তুতি নিয়ো।
অভ্রর বাবা কথাটা বলে উঠে গেলেন। অভ্র হতাশ হয়ে তার মায়ের দিকে তাকালো।
-এই আমার দিকে এইভাবে তাকাবি না, আমি তোর বাবার সিদ্ধান্তের উপর কথা বলতে পারবো না। (মা)
-আমিও তো পারবো না (অভ্র)
-তো আর কি করবি! তৈরি হ বিয়ের জন্য
,,
অভ্র বাসা থেকে বেড়িয়ে খোলা মাঠে এসে বসে। সেখানে এসে রিনি কে ফোন করে। রিনি অভ্রর বেস্ট ফ্রেন্ড। দিনে চব্বিশ ঘন্টায় দুজনের মধ্যে কেউ বিপদে পড়লে একে অন্যজনের জন্য ছুটে আসে।
-কই রে তুই??(অভ্র)
-বেবি আমি তো ঘুমাচ্ছি (রিনি)
-ঐ চুন্নি এখন বারোটা বাজে ওঠ আর মাঠে আয়
-আমি গোসল করবো লেট হবে
-ভাই খুব বিপদে পড়ছি আয় না
-খুব জরুরি??
-হুমম
-দোস্ত তুই পাঁচ মিনিট ওয়েট কর আমি এক ঘন্টার মধ্যে আসতেছি.. (কথাটা বলে রিনি কল টা কেটে দিলো)
-হারামীর বাচ্চা টা…
,,
অভ্র রাগ করে ফোন টা পকেটে রাখলো। অভ্র লেখাপড়া শেষ করেছে। কাজ বলতে কিছুই করেনা সারাদিন ঘুরাঘুরি আর আড্ডা। বয়সো সাতাশ এর মতো হয়েছে। তার এমন অগোছালো জীবন এর দিকে তাকিয়ে বাবা মা ঠিক করে তাকে বিয়ে করাবে। তার বাবা মায়ের ধারনা বিয়ে করালেই অভ্র ঠিক হয়ে যাবে।
আর এই বিয়ে আটকানোর জন্য পরামর্শ নিতে রিনি কে ডাকা হইছে।
,,
ঘন্টা খানেক পর রিমি চলে আসে।
-সরি সরি সরি অনেক লেট করে ফেললাম। এই দেখ চুল গুলো এখনো শুকোয়নি (রিনি)
অভ্র অভিমানী মুড নিয়ে একবার রিনির দিকে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে ফেলে।
-বেবি সরি বললাম তো (রিনি)
-তোর বেবি তোর কাছে রাখ আমার তো মৃত্যু দন্ড হয়ে যাচ্ছে (অভ্র)
-মানে!
-বিয়ে
-কার??
-আমার
-ইয়াহুউউউ দোস্ত দোস্ত আমারে দাওয়াত দিস সাথে একটা শাড়ী ও দিস
-রিনি আমি তোকে দাওয়াত এর জন্য ডাকি নি কিভাবে বিয়েটা ভাঙা যায় সেই পরামর্শ করতে ডাকছি
-আমি এসব কুপরামর্শ দিতে পারবো না
-মানে?
-এসব বিয়া ভাঙা ভাঙির পরামর্শের মধ্যে আমি নাই। একটা পবিত্র সম্পর্ক ভাঙতে চাই না
-আরে চুন্নি আমি কি বিয়ে করেছি? যে সম্পর্কটা পবিত্র হইছে?? আমি বলতেছি যে….
-বিয়ে করতে চাসনা তাই তো?
-হ্যা
-বয়স তো অনেক হলো বিয়ে তো করতেই হবে
-হ্যা কিন্তু বাবা যার সাথে ঠিক করেছে আমার পছন্দ না
-কার সাথে?
-আমাদের গ্রামে যে চাচা আছে
-আপন চাচা?
-না আব্বুর চাচাতো ভাই
-হুমম তারপর
-তার মেয়ে সুস্মিতার সাথে বিয়ে
,,
রিনি আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল
-ওয়াও মেয়েটাতো দারুন দেখতে (রিনি)
-তুই ফাজলামি শুরু করছিস তাই না? ওরে কখনো দেখছিস তুই??(অভ্র)
-নাম শুনেই মনে হচ্ছে ঝাক্কাস কিছু হবে
-এসব কমেন্ট করা বাদ দে কাজের কথা বল
-আংকেল কি বলে??
-উনি তো ফাইনাল কথা আমাকে বলে দিয়েছে
-দেখ আংকেল এর কথার উপর কিছু বলার সাহস আমারও নেই। আমি গিয়ে যদি বুঝাই শেষমেশ আমাকে ধমক দিলে তো সেখানেই অজ্ঞান হয়ে যাবো
,,
অভ্র এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিনির দিকে..
-এই এভাবে কি দেখতেছিস??(রিনি)
-তোর চুল গুলো এখনো অনেক ভেজা বাষ্প হয়ে পানি গুলো হাওয়া হয়ে যাচ্ছে
-তুই তো বেটা বিয়ের আগেই পাগল হইছোস। বিয়ের পর বউ এর জ্বালায় দুই দিন পর মারাই পরবি
-আমি তোমাতে মরিতে চাই
-ওই মুখ থেকে এসব কি বের হয় হ্যা?
-বিয়েটা আটকা এবার আমি তুই দূর দেশে ঘুরতে যাবো
-বিয়ে আটকিয়ে আমার লাভ?
-বললাম তো দুজন হারিয়ে যাবো
-যাহহ এসব আবেগ মাখানো কথা বাদ দে। বিয়ে কবে সেটা বল
-তুই কি চাস আমি বিয়ে টা করি?
-অবশ্যই বয়স তো আর কম হলো না
-আমি তোর চোখে অন্য কিছু দেখতে পাচ্ছি
,,
রিনি এবার ভয়ে ভয়ে বলল
-কি দেখতে পাচ্ছিস?? (রিনি)
-তোর চোখের পাপড়ি গুলো আমাকে বার বার বলতেছে অভ্র বিয়েটা করিস না বিয়েটা করিস না (অভ্র)
-দেখ এমনি একটা বলবি না। আর বয়স হয়ে যাচ্ছে বিয়ে করতে হবে তো
-তুই কি তাহলে হ্যা বলছিস??
-হুমমম
-আটকাবি না?
-না
-ভালো খুব ভালো। তো বাসা থেকে কিছু খেয়ে আসছিস??
-তো চল কিছু খাই
-আমি বাসায় গিয়ে খাবো
-না আমার সাথে খাবি, চল আজ কাচ্চি খাবো
-সত্যি
-সত্যি চল উঠি
-এই টেনে তোল আমাকে হারামী।
,,
,,
রিনি অভ্রকে ভালবাসে। অভ্র তার প্রতি অনেকটাই দূর্বল। কিন্তু কেউ কারও ভাললাগার কথা প্রকাশ করে না। রিনির সাথে অভ্রর পরিচয় হয় ছয় বছর আগে ভার্সিটির প্রথম দিনে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত সম্পর্ক টা বন্ধুত্বেই টিকে আছে। ওদের মাঝে শুধু কেয়ারিং শেয়ারিং আর ঝগড়া চলে। দুজনের বোঝাপড়া টা বেশ ভালো।
,,
দুজন একটা রেস্টুরেন্টে খাওয়া শেষ করে যার যার বাসায় চলে আসে। রাতে অভ্রর বাবা অভ্রকে জানায় কালই তারা গ্রামে যাবে মেয়ে দেখতে সাথে অভ্রকেউ নিয়ে যাবে।
,,
অভ্র কথাটা শুনে রিনিকে কল করে..
রিনি কল ধরতেই..
-এই শোন আমরা দুদিন এর জন্য গ্রামে যাচ্ছি (অভ্র)
-তো যা (রিনি)
-তুই ও যাচ্ছিস
-আমি!! আমি কেনো?
-আমি বলেছি তাই
-আরে ভাই আমার অফিস আছে
-আমি কিছু জানি না, আমার সাথে যেতে হবে মা বাবা দুজনকেই রাজি করিয়েছি
-আমারও তো বাবা মা আছে তাদের রাজি করাতে হবে এত তাড়াতাড়ি কিছু হয়
-এই সামান্য গ্রামে যাচ্ছি এর জন্য এত বেশি প্রস্তুতি নিতে হবে না। আংকেল আন্টি কে বল আমার সাথে যাচ্ছিস আমার পাত্রি দেখতে
-ওকে বলে দেখি যেতে দেয় কি না
-তুই না গেলে আমি যাবোই না
-তোর ঢং এর কথা বাদ দে। আমি দেখি রাজি করাবো
-হুমম মনে থাকে যেনো
-থাকবে
-এখনই সব গুছিয়ে নে সকালে সময় পাবি না
-ওকে ওকে এত কথা বলতে হবে না ফোন রাখ
,,
,,
পরদিন সকাল বেলা..
অভ্র আর তার বাবা মা রেতি হচ্ছে গ্রামে যাওয়ার জন্য। রেডি হওয়া শেষে অভ্র বলে..
-বাবা (অভ্র)
-কিছু বলবা?
-গাড়ি দুটো নেই?
-দুটো কেনো?
-তুমি আর মা একটাতে যাও, আমি আর রিনি একটাতে যাই..
-ঠিক আছে
,,
অভ্র তো মহাখুশি। ঝটপট একটা গাড়ি বের করে রিনির বাসার সামনে এসে হাজির। রিনি বাসা থেকে বের হলো তার বাবাকে বিদায় জানিয়ে গাড়িতে বসলো।
-আন্টি আংকেল কই?? (রিনি)
-উনারা অন্য একটাতে করে যাবে (অভ্র)
-গ্রামে যেতে দুইটা গাড়ি! একটাতে চার জন যেতাম খুব মজা হতো
-না
-ব্যাপার টা কি বলতো?
-কিছু না চুপ থাক
,,
অভ্র তার বাসায় চলে আসলো। তারপর ওরা রওনা হলো। সামনের গাড়িতে অভ্রর বাবা মা আর পেছনে অভ্র আর রিনি। গ্রামে যেতে ঘন্টা তিনেক সময় লাগবে। গাড়ি চলতে চলতে পথের মাঝখানে বৃষ্টি ধরলো…
-এই নভেম্বরে বৃষ্টি হতে হয়! (রিনি)
-এটা নিম্নচাপ এর বৃষ্টি (অভ্র)
-যে চাপের বৃষ্টি হোক তাই বলে এই অসময়ে!
-কিছু জিনিস অসময়ে বেশ ভালো লাগে
-যেমন??
-তুই
-আমি!!! তাও তোর অসময়ে??
-হুমম
-সেটা কখন কখন?
-সকালে ঘুম থেকে উঠে আর রাতে ঘুমাতে যেতে
-আর?
-বাথরুমে যেতে
-কুত্তাআআআআ….
চলবে