ডিভোর্স পেপার,Part : 5
Write : Sabbir Ahmed
-আমি তো আপনার জন্য অপেক্ষা করে আছি (সুস্মিতা)
-খেয়ে নাও যাও(অভ্র)
-আপনিও একটু খাবেন চলুন
-বললাম না খেয়ে আসছি, কথা কানে যায় না?? যাও খেয়ে নাও(অভ্রর ধমকে সুস্মিতা বেশ ভয় পেয়ে যায়)
,,
মেয়েটা সকাল সকাল আর কিছু খায় না। দুপুরের দিকে বাসায় মেহমান আসে আর সন্ধ্যায় চলে যায় এই সময় টুকু অভ্র বাড়িতে ছিলো আর সন্ধ্যা হতেই রুমে আলাদ ভাবে রেডি হচ্ছে। সেটা আবার সুস্মিতা দেখে ফেলে…
-কোথাও যাচ্ছেন??(সুস্মিতা)
-হ্যা (অভ্র)
-কখন ফিরবেন??
-ঘন্টা দুয়েক পর
-ওহহ দেখে যাইয়েন আর সবধানে থাকবেন
-হুমমমম
,,
অভ্র বাসা থেকে বেড়িয়ে পরে, কোথায় যাচ্ছে না যাচ্ছে সুস্মিতাকে কিছুই বলল না। অভ্র মাঠে এসে তাদের আড্ডা দেওয়া এক জায়গায় বসে আছে। দূরে কিছু ছেলে ব্যাটমিন্টন খেলছে।
,,
একসময় রিনি আসলো…
-কখন আসছিস?? (রিনি)
-এই তো একটু আগে (অভ্র)
,,
রিনি অভ্রর পাশে বসে বলল..
-সকালে যে কাজ টা করছিস ঠিক হয়নি (রিনি)
-তুই কি মাইন্ড করেছিস??(অভ্র)
-তো কি করব??
-আটকালি না তো
-এমম আচ্ছা কফি চলবে??
-কিচ্ছু খাবো না এখন। আর শোন
-কি??
-ভালবাসি
-এসব পাগলামো ছাড়, আর যেটা করছিস তুই ওইরকমই করবি না আমি প্রথমবার কিছু বলিনি, দ্বিতীয় বার মাফ নাও করতে পারি
-…(অভ্র একটু মন খারাপ করলো)
,,
অভ্রর মন খারাপ দেখে রিনি বলল..
-এমন করা ঠিক না রে (রিনি)
-কি করব আমি? তুই ছাড়া কিছু মাথায় আসে না (অভ্র)
-চোপপপ। শোন আমি ক্লান্ত বাসায় যেতে হবে
-যা
-তুই যাবি না?
-তোকে যেতে বলেছি যা
-ঠিক আছে
,,
রিনি চলে গেলো। অভ্র রাগি ভাব নিয়ে বাসায় ফেরে আর সব রাগ সুস্মিতার উপর ঝাড়া শুরু করে…
-এ তুই আমার সামনে থেকে যা (অভ্র)
-এমন করছো কেনো? আমি কি করলাম??(সুস্মিতা)
-তুই কিচ্ছু করিস নাই তবুও তুই আমার চোখের সামনে থেকে যা।
,,
অভ্রর রাগি মেজাজ দেখে সুস্মিতা আর কথা বাড়ালো না। সে বেলকনিতে এসে দাঁড়ালো। সুস্মিতা ভাবছে গ্রাম থেকে এসেই অভ্রর মাঝে অনেক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে যেটা সে কখনো আসা করেনি। সুস্মিতা ভাবছে এমন ব্যাবহার তো তার সাথে করার কথা না।
,,
সুস্মিতা আবার রুমে আসে। অভ্র শুয়ে আছে সুস্মিতা ভয়ে ভয়ে তার পাশে শুয়ে পড়লো আর দেখলো অভ্র চোখ বন্ধ করে ঘুমাচ্ছে।
-সরি (অভ্র চোখ বন্ধ করেই বলল)
-হুমমম কি হয়েছে আপনার বলবেন একটু??(সুস্মিতা)
-কিছু না ঘুমাও তুমি
-আমরা কি একটু গল্প করতে পারবো না?
,,
অভ্রর জ্ঞান একটু ফিরলো আর ভাবতে লাগলো, সুস্মিতা তার বিয়ে করা বউ ওর সাথে এমন ব্যাবহার করা ঠিক হয়নি।
-হ্যা গল্প করা যেতেই পারে (অভ্র)
-কিভাবে যে শুরু করি আচ্ছা শুনুন আমার অনেক স্বপ্ন আছে সেগুলো আপনার মাধ্যমে পূরণ হবে (সুস্মিতা)
-মানে??
-মানে আমার একটা স্বপ্ন ছিলো আমার উনি মানে আপনি আমাকে অনেক ভালবাসবেন আর আপনার থেকে আমি আপনাকে বেশি ভালবাসবো
-হুমমমম
-আপনি কি সেই সুযোগ দিবেন??
,,
এবার অভ্র শোয়া থেকে উঠে বসলো আর বলল..
-আমার ডিভোর্স চাই(অভ্র)
-হা হা হা মজা করতেছেন তাই না? আমি এমনই চেয়েছিলাম আমার বর আমার সাথে অনেক মজা করবে (সুস্মিতা)
-সত্যি ডিভোর্স চাই
,,
এবার সুস্মিতার মনে একটু খটকা লাগলো। ভয়ে সে ঘামতে শুরু করলো কোনো প্রশ্ন করার ও সাহস পাচ্ছিলো না। একসয়ম অভ্রই নিজে থেকে বলল…
-আমি রিনি কে ভালবাসি। আমাদের বন্ধুত্ব টা ছয় বছরের…(অভ্র সবকিছু সুস্মিতা কে বলল)
-….(সুস্মিতা চুপ)
-আমি জানিনা ওকে কিভাবে আমি ভালবেসে ফেলছি। ওর আগের একটা সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও ভালবেসে ফেলছি
-হুমমম বুঝেছি আর বলতে হবে না
-…(অভ্র চুপ)
-আচ্ছা আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেলে কি আপনি তাকে বিয়ে করবেন??
-ও তো রাজি না তবে চেষ্টা করবো
-আর বিয়ে যদি না করতে পারেন
-তাহলে একাই থাকবো কাউকে লাগবে
-ওহহ এই কথা! তাহলে আপনাকে আমি ছাড়ছি না
-মানে?
-মানে আবার কি, আপনাকে আমি ভালবাসি লাভ ইউ
-আমার সাথে মজা করো তাই না?
-জ্বি না শুনুন। কাল আপনি ঘুমিয়ে যাওয়ার পর আপনার খুব কাছে যাই। আপনার ঘুমন্ত মুখটার উপর দৃষ্টি পড়তেই আপনার প্রতি কেমন যেন একটা মায়া কাজ করা শুরু করলো। সেখান থেকে ভাললাগা ভালবাসা প্রেম, মানে যত যা আছে সব একসাথে কাজ শুর করে দিছে
-বেশি বেশি হচ্ছে কিন্তু
-কথাটা আগে শেষ করতে দিন
-বলো
-আমি আপনার কাছে গিয়ে আপনার নাক ধরে টেনেছি
-কিহহহ!!!
-জ্বি আপনার নাকটা আমার খুব ভালো লাগে একটা চুমুও খেয়েছি
-ওই
-কি গরম দেখান আমার উপর তাই না? আমি আপনার লিগাল বউ আর ওইটা থাক বললাম না। জোর করে কিছু নিবো না ভালবাসা দিয়েই সব আদায় করার চেষ্টা করবো। না পারলে ডিভোর্স পেপার দিয়ে চলে যাবো
-আমার খুব তাড়াতাড়ি লাগবে
-আমার তো লাগবে না
-আমি কিন্তু
-শক্তির ভয় দেখাবেন না, শক্তি আমারও আছে
-আপনি ঘুমিয়ে পড়েন কথা বইলেন না তো
-ভয়ে তুমি থেকে আপনিতে চলে গেছেন
-আমি ভয় পাবো কেন??
-একটু থ্রেট দিতেই তো ঘেমে গেছেন
-এমনি ঘামছি আপনি ঘুমান
-আমি তো আপনার পাশে কখনো ঘুমাবো না বিশ্বাস নেই আপনাকে…(সুস্মিতা কথাটা বলে একটা বালিশ হাতে নিয়ে বিছানা থেকে নামলো)
-বিশ্বাস নেই মানে? কি বলতে চান আপনি?
-ছেলে মানুষ বোঝেনই তো কি কি করতে পারেন সুযোগ নিয়ে..
-আমার ঠ্যাকা পড়ছে।
-ও মুখে যত যাই বলেন যেদিন থেকে আমাকে ভালবাসবেন শুধু বিছানায় নয় ঐ বুকের মধ্যে থাকবো
-কখনই না। আমি চাই ও না
-মুখ দেখলেই বোঝা যায় কে কি চায়(সুস্মিতা মিটিমিটি হাসছে)
,,
অভ্র অন্যদিকে মুখ ঘুড়িয়ে শুয়ে পড়লো।
পরদিন ভোরে..
কিছুক্ষণ আগে ফজরের আজান দিয়েছে। সকাল সকাল সুস্মিতা উঠে অভ্রকে ডাকছে…
-ঐ উঠেন (সুস্মিতা)
-কে??(অভ্র ঘুমের ঘোরে)
-আমি আপনার বউ
-কি হয়েছে??
-উঠেন ওজু করে নামাজে যান
-সকালে যাবো
-ঐ একটু পর নামাজ শুরু উঠেন
-….(অভ্র ঘুমাচ্ছে)
,,
সুস্মিতা ফ্রিজ থেকে একটা বোতল বের করে অভ্রর গালে ধরলো। অভ্র লাফ দিয়ে উঠলো…
-আরে কি করেন, কি হয়েছে? কি সমস্যা আপনার?? (অভ্র)
-আপনাকে ডাকছে (সুস্মিতা)
-কে ডাকছে??
-আল্লাহ ডাকছে উঠেন নামাজ পড়তে যান
-এখন
-তো কখন উঠেন আমি কি ওজুর পানি গরম করে দিবো? নাকি ঠান্ডা পানি দিয়ে ওজু করবেন
-কিছু করতে হবে না আপনাকে আমি যাচ্ছি
,,
অভ্র নামাজ পড়তে যায়৷ সুস্মিতা খুব খুশি কারন অভ্র তার কথা শুনেছে। সুস্মিতাও নামাজ পড়ে নিলো।
অভ্র নামাজ পড়ে রুমে আসলো।
এসে দেখে সুস্মিতা জানালায় পাশে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।
,,
অভ্র একটু শব্দ করতেই সুস্মিতা ঘুরে দাঁড়াল।
-আ আপনি কি এখন কিছু খাবেন? কিছু দিবো (সুস্মিতা)
-না (অভ্র)
-হুমমম
,,
হঠাৎ অভ্রর ফোনে একটা ফোন আসলো। ফোনটা রিনি করেছে অভ্র ফোন ধরতেই..
-তুমি ঘুম থেকে উঠেছো??(রিনি)
-হ্যা কেনো??(অভ্র)
-বাসায় আসো
-এখন??
-হুমমম আসতে পারবে না?
-পারবো
-তো আসো, খুব মিস করতেছি তোমাকে
,,
সুস্মিতা দাঁড়িয়ে অভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে। সুস্মিতার চোখে পানি চলে আসছে কারন বুঝতে পারছে যে ফোনটা রিনি করেছে। ফোনে কথা বলা শেষে সুস্মিতা বলল…
-আপনি কি ওদের বাসায় যাবেন?? (সুস্মিতা)
-কি কাজ এর জন্য ডেকেছে (অভ্র)
-আমাকে মিথ্যা বলতে হবে না আপনি এমনি যেতে পারেন
,,
অভ্র চলে যায় রিনির কাছে। গতদিনের মতো আজও একই কথা রিনির মাকে বলে সে রিনির রুমে যায়।
অভ্র রুমে ঠুকতেই…
-আজ আর আমার ঘুম ভাঙাতে হবে না আমি আগেই উঠেছি। পাশে এসে বসো তো..(রিনি)
,,
অভ্র বিছানায় গিয়ে বসে তবে রিনির থেকে অনেকটা দূরে।
-আজ দূরে বসলে কেনো??(রিনি)
-এমনি কি বলবা বলো (অভ্র)
-বিরক্ত?
-না বিরক্ত হবো কেন?
-কাছে আসছো না কেনো
-দূর থেকেই কথা বলি
-আজ তোমার হয়েছেটা কি?? বউ কি যাদু করলো নাকি তোমাকে??
-তুমি কি বলবা বলো
-বলার মতো কিছু নেই, তুমি বাসায় যাও
-ডাকলে কেনো?
-কিছু পাওয়ায় জন্য
-তো চেয়ে নাও
-আমি দেখতে পাচ্ছি জিনিসটা আমি হারিয়েছি….
চলবে