ডিভোর্স পেপার,Part : 6

0
2714

ডিভোর্স পেপার,Part : 6
Write : Sabbir Ahmed

-বলার মতো কিছু নেই, তুমি বাসায় যাও(রিনি)
-ডাকলে কেনো??(অভ্র)
-কিছু পাওয়ার জন্য
-তো চেয়ে নাও
-আমি দেখতে পাচ্ছি জিনিসটা আমি হারিয়েছি
-…(অভ্র চুপ)
-কথা বলছিস না কেনো??
-কি বলব??
-তো চলে যা
-গতকাল সন্ধ্যায় কি বলেছিলি?? মনে আছে??
-কি বলছিলাম??
-তোর কাছে যেতেই মানা করেছিস
-ওহহ হ্যা দেখ আমারই মনে নেই। তো রাগা রাগি বাদ দে চল আজ ঘুরতে যাই
-কোথায়?
-জানিনা যেদিকে দুচোখ যায় যাবো
-তো আমি রেডি হয়ে আসি
-লাগবে না যেমন আছিস এরকমই
-গাড়ি তো লাগবে
-আমার বাবার টা আছে
-তো রেডি হয়ে নে
-তুই বাইরে গিয়ে বস আমি আসছি
-ঠিক আছে
,,
ঘন্টা খানেক পর রিনি আর অভ্র বাসা থেকে বের হয়। রিনি তার বাবার গাড়ি নিয়ে আজ ঘুরতে যাচ্ছে।
-অফিস বাদ দিয়ে এইরকম ঘুরাঘুরি (অভ্র)
-ভালো লাগছে না বুঝি??(রিনি)
-না ভালো লাগছে
-তো সুস্মিতার সাথে কতটুকু পরিচয় হয়েছে??
-ওর সাথে আবার কিসের পরিচয়?
-আরে হাঁদারাম নতুন করে পরিচয়, কিছু হয়নি তোদের মধ্যে?
-না
-কিহহহ!!! কেনো
-এমনি তুই অন্য কথা বল এসব বলিস না
-বুঝি বুঝি সবই বুঝি। প্রেম করবেন আগে তাই তো?
-না
-তাহলে
-তাকে বলেছি ডিভোর্স এর কথা
-ডিভোর্স এর কথা মানে! তোর মাথা ঠিক আছে?
-ঠিক নেই সেই জন্য তো বলেছি
-ডিভোর্স দিয়ে কি হবে??
-তোকে বিয়ে করবো
-আরে পাগলা আমি বললাম না আমি বিয়ে করবো না।
-না করলি একা থাকবো তবুপ ডিভোর্স দিবো
-এমনটা করিস না মেয়েটার জীবন শেষ হয়ে যাবে
-….(অভ্র চুপ)
-অভ্র আমি জানি তুই আমার জন্য এসব করতেছিস। শোন আমি আগেই একটা ডিসিশন নিয়ে ফেলেছি
-কি??
-আমি বিদেশ যাচ্ছি আমার বড় চাচার বাসায়
-কেনো??
-ওখানেই জীবন গড়বো, এই দেশে ভালো লাগছে না
-তাই বলে আমাকে ফেলে?
-জীবন সবসময় এক রকম থাকে না বাস্তবতা বুঝতে সেখ
-আরে আমি তোর জন্য…
-থাম এসব শুনতে ভালো লাগে না, আমি বাবাকে বলেছি। বাবাও রাজি হয়েছে।
-তো কবে যাচ্ছিস??
-শুনলে তোর খারাপ লাগবে তবুও বলছি কাল সন্ধ্যায় যাবো। সেই জন্য আজ তোকে নিয়ে বের হইছি। সারাদিন এর এই লং ড্রাইভ সারাজীবন মনে রাখবো
,,
দুজন চুপ। রিনির কথাটা শুনে অভ্রর বেশ রাগ হচ্ছিলো। অভ্র তার রাগটা আর চেপে রাখতে পারলো না। হঠাৎ খুব জোড়ে চেঁচিয়ে উঠে বলল..
-গাড়ি থামা (অভ্র)
-…(রিনি গাড়ি ব্রেক করলো)
,,
অভ্র গাড়ি থেকে নেমে গেলো। রিনি একবারের জন্যও ডাকলো না। কারন সে এমনটাই চেয়েছিলো। সে চেয়েছিলো অভ্রর মনে তার জন্য রাগ ঘৃণা সৃষ্টি করবে আর সেই সুযোগে রিনি তার জীবন থেকে চলে যাবে।
,,
ঠিক তাই হলো। পরদিন রিনি বিদেশ চলে গেলো। অভ্র আর তার সাথে কোনো যোগাযোগ আর থাকলো না। এক প্রকার বলাই যায় অভ্রর জীবন থেকে রিনির অধ্যায় শেষ।
,,
মাস খানেক পার হলো অভ্র এখন নিয়মিত তার বাবার ব্যাবসা দেখাশোনা করছে। তার অযথা আড্ডা দেওয়া অযথা সময় নষ্ট করা সব কিছু ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে গেছে। কিন্তু সুস্মিতার সাথে তার সম্পর্ক সেই আগের মতোই। সুস্মিতা অনেক চেষ্টা করছে তার মন গলাতে কিছুতেই পারছে না এইতো সেদিন সকাল বেলা…
-সবার সকাল কতো সুন্দর যায়, আর আমার সকাল বেলা! বাবারে বাবা, চোখ খুলতেই কারও গোমরা মুখ চোখে পরে আর….(সুস্মিতা কে থামিয়ে দিলো অভ্র)
-চুপপ কি হইছে সকাল সকাল বক বক শুরু করছেন কেনো??(অভ্র)
-আমি বাড়িতে যাবো
-তো যান
-বিয়ের পর কেউ একা যায়?
-তো কাউকে সাথে নিয়ে যান
-বর কে নিয়ে যেতে হয়
-আমার কাজ আছে
-চলুন না অনেকদিন হলো বাবা মা কে দেখি না খুব দেখতে ইচ্ছে করছে
-না
,,
এবার সুস্মিতা একটু রাগের সুরে বলল..
-অফিস থেকে বাসায় ফেরার সময় ডিভোর্স পেপার নিয়ে আসবেন। সেটাতে সাইন করেই আমি বাড়ি চলে যাবো
-আরও পাঁচ মাস লাগবে তার আগে হবে না
-মেয়ে হয়ে দেইখেন কেমন লাগে, বাবা মার থেকে এতদিন দূরে থাকা তাদের না দেখে যে কেমন লাগে আপনারা ছেলেরা তো বুঝবেন না
-আমি কি আপনাকে যেতে মানা করেছি
-নিজে যাবে না। এটার মানে বুঝি আমাকেও যেতে দিবে না
,,
অভ্র আর কথা না বলে অফিসের জন্য বের হয়ে গেলো।
-আর যান যান ছয় মাস পর একবারেই চলে যাবো। গোমরা মুখো কোথাকার
,,
কথাটা মনে হয় অভ্র বাইরে থেকে একটু হলেও শুনছিলো। তাই সে আবার ফিরে আসলো। আর এসেই বলল..
-বিশ মিনিট এর মধ্যে রেডি হবেন (অভ্র)
-আমি কোথাও যেতে পারবো না। গ্রামে যাবো আগে (সুস্মিতা)
-জ্বি সেখানেই
-সত্যি!!!!!
-হ্যা
-একটু দাঁড়ান আমি রেডি হয়ে নেই
,,
সুস্মিতা মহাখুশি কি থেকে কি করবে বুঝতেই পারছে না। অভ্র দাঁড়িয়ে কান্ড দেখছিলো। সুস্মিতার কাপড় গোছানো শেষ। এখন সে রেডি হবে। জি যেন এক সমস্যা নিয়ে সুস্মিতা অভ্রর কাছে হাজির..
-শুনুন না (সুস্মিতা)
-কি হয়েছে আবার? (অভ্র)
-আমি শাড়ি পড়তে পারি না
-অন্য কোনো ড্রেস পড়ে চলুন
-নাহহ বিয়ের পরে প্রথম বাবার বাড়ি যাচ্ছি শাড়ি পড়তে হবে
-আমি মা কে ডেকে দিচ্ছি
-এই না
-কেনো?
-আপনি একটু পড়িয়ে দিন না
-আমি পারি না
-ইউটিউব এ সার্চ করে ভিডিও দেখে নিন
-বেশি কথা বললে যাওয়া এখানেই ক্যান্সেল
-না না যাবো আমি এখনি শাড়ি পড়ছি
,,
সুস্মিতা একটু দুষ্টামি করলো। তবে তাতে তার কোনো লাভ হলো না। শেষমেশ নিজেই রেডি হয়ে বেড়িয়ে পরে। অভ্র বাবা মাকে জানিয়ে গাড়ি নিয়ে বের হলো।
,,
এখন তারা গ্রামের খুব কাছাকাছি।
কিছু একটা দেখে সুস্মিতা চেঁচিয়ে উঠলো।
-দাঁড়ান দাঁড়ান (সুস্মিতা)
-কি??(অভ্র)
-এই যে পুকুর টা দেখছেন না?
-হুমম
-স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় গরমের দিনে এখানেই আমরা গোসল করেছি অনেক ছোটবেলা
-বড় হওয়ার পর ও কি একই কাজ করেছেন?
-ছিহ কি বলেন! বাচ্চা থাকতেই করেছি তবে খুব কম। বই গুলো এক বান্ধবীর কাছে দিয়ে গোসল করে বাড়ি গিয়েছি
-আর বাড়িতে গিয়ে চাচীর হাতের মায়ের খাইছেন তাই না?
-একদম ঠিক বলেছেন প্রচুর মাইর খাইছি
-হুমমম
-জায়গাটাতে একটু দাঁড়াই অনেক সুন্দর জায়গা টা আপনারাও ভালো লাগবে
,,
অভ্র আর কিছু বলল না সে গাড়ি থেকে নামলো। দুজন গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
-চাঁদনি রাতে এই জায়গা দেখতে বেশ দারুণ লাগে। খেয়াল করেন এটাই এই গ্রাম এর শেষ পুকুর এরপর শুধু মাঠ আর মাঠ (সুস্মিতা)
-হুমমম দেখছি আগেও (অভ্র)
-হ্যা আপনি তো কয়েকবার আসছেন এখানে
-হুমম চলুন যাই এখন যাই
-ওকে
,,
গাড়িতে উঠতে উঠতে সুস্মিতা অভ্রকে বলল..
-আপনি যে আমাকে আপনি করে বলেন আমার বেশ হাসি পায়
-ভালো
-সত্যি হাসি পায় আবার খুব ভালো লাগে আপনি আমাকে কত সম্মান করেন
-….(অভ্র আড় চোখে তাকালো)
-সুস্মিতা বেশ জোড়েই হেসে উঠলো আর বলল..
-এভাবে তাকাইয়েন না গাড়ি চালান
,,
সুস্মিতা বাড়িতে পৌঁছে মাকে জড়িয়ল ধরে সে কি কান্নাকাটি। তার বাবার সাথেও একই রকম কান্না। কান্নার পর্ব শেষ হওয়ার পর তারা জামাই এর খোঁজ খবর নেয়।
,,
দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা। মেয়ের জামাই এর জন্য পিঠা তৈরি হচ্ছে। পিঠা গুলো নিজ হাতে বানাচ্ছে সুস্মিতা। অভ্র চেয়ার নিয়ে পাশে বসে আছে। অভ্র রুমে ছিলো বাইরে আসতে চাইছিলো না কিন্তু সুস্মিতা তাকে ছাড়েনি জোর করেই নিয়ে আসছে।
এবার সুস্মিতা অভ্রকে খোচা মেরে কথা বলা শুরু করলো…
-আমি আমার ভালোবাসার মানুষকে পিঠা তৈরি করে খাওয়াচ্ছি। উনি কি এই কাজ পাড়তো? আমার তো মনে হয় সে রান্নাই জানে না। রান্না ছাড়া কি ভালবাসা জমে??? (সুস্মিতা)
-এই আপনি কি আমাকে উদ্দেশ্য করে কিছু বললেন?(অভ্র)
-কতজন এখন বুঝে না বোঝার ভান ধরে থাকবে
-আপনি রিনির কথা বলছেন তাই না??
-মশাই এতক্ষণে বুঝেছে
-ওর কথা টানতেছেন কেনো?
-কই টানলাম? আপনা আপনি চলে আসে। বাদ দেন দেখুন কত সুন্দর করে পিঠা বানাচ্ছি। আপনার ফোন দিয়ে একটা পিক উঠান তো
-পারবো না.. (অভ্র উঠে চলে গেলো)
-রাত টা হোক এই শীতের হিমশীতল পানিতে আপনাকে চুবানো হবে.. (দাঁত কিড়মিড় করে কথা বলো বলল সুস্মিতা)

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here