ডেভিলস গার্ল,প্রথম পর্ব

0
6463

ডেভিলস গার্ল,প্রথম পর্ব
Tasmima Yeasmin

আকাশ জুড়ে ঝুম বৃষ্টি নেমেছে। হাসিব তার স্ত্রী নীলাকে আড়কোলে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে। বৃষ্টির তোড়ে নীলার কমলা পাড়ের সবুজ শাড়ি শরীরের ভাজের সাথে মিশে একাকার। চোখের কোনে কাজল লেপ্টে গেছে। কাঁচাহলুদ ঠোঁটের আশেপাশে বিন্দু বিন্দু পানি জমেছে। কপালের কালো টিপটা খানিকটা ডানপাশে সরে গেছে। নীলাকে দেখতে একদম অপ্সরীর মত লাগছে। সেই সাথে নীলা একটু পড়পড় কাঁপছে। হাসিব নীলাকে আরো জোড়ে বুকের সাথে জাপ্টে ধরে। নীলার গরম নিঃশ্বাস হাসিবের ঘাড়ে এসে পড়ছে। হাসিব একটু মাথাটা নিচু করে নীলার ঠোঁটের পাশের একফোটা পানি নিজের ঠোঁটে ছুইয়ে দিলো। পড়ন্ত বিকেলের এ বৃষ্টিতে ছোট্ট একটা উঠোনে দুজন মানব মানবী বৃষ্টিস্নাত ভালোবাসার মাঝে নিজেকে ডুবিয়ে দিচ্ছে।
স্যার একজন আপনার সাথে দেখা করতে আইছে। সাথে মনেহয় রুগীও আছে। অ্যাসিস্ট্যান্টের কথায় ঘোর কেটে যায় হাসিবের। এখন তার রুগী দেখার সময় নয়। এই অসময়ে বৃষ্টির মাঝে কে এলো। হাসিবের মেজাজটা হালকা খারাপ হয়ে যায়। এইতো একটু আগেও প্রায় আটবছর আগের নীলার সাথে কাটানো কিছু মূহুর্তের স্মৃতি তার মনকে ভিজিয়ে দিচ্ছিল। জানালার কাছ থেকে চেয়ারে বসতে বসতে হাসিব তার অ্যাসিস্ট্যান্ট জামালকে বললো ঠিকআছে পাঠিয়ে দাও। ডেস্কের ড্রয়ার খুলতেই একটা কালো ফ্রেমে নীলার হাস্যোজ্জল ছবিটা ভেসে ওঠে। হাসিব আবারো নীলার ভাবনার মাঝে ডুবে যায়।
.
.
.
আবিদ আর রীমির একমাত্র মেয়ে রুহি। রুহি এবার ক্লাস ফাইভে। কিছুদিন যাবৎ রুহির মাঝে কিছু অস্বাভিকতা দেখা দিয়েছে। রুহি একাথাকলেই নিজের হাত পা কেটে ফেলে। এর কারন জিজ্ঞেস করলে বলে ওর নিজের হাত পা ওর কাছে ঠিক ভালো লাগে না। রক্ত দেখতে ওর ভীষন ভালো লাগে। রক্তের রং কতো সুন্দর। রীমি রুহির হাতের কাছ থেকে ছুরি, কাচি, ব্লেড, বটি সব সরিয়ে রাখে কিন্তু তারপরেও রুহিকে থামানো যায়না। নিজের হাত পা নিজেই কামড়ে রক্তাক্ত করে ফেলে। এঅবস্থায় আবিদের অফিসের এক কলিগ একজন সাইকোলজিস্টের কাছে রুহিকে নিয়ে যেতে বলে। সেইসাথে শহরের বিখ্যাত সাইকোলজিস্ট হাসিবুর রহমানের একটি কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বলে, উনার কাছে যেয়ে দেখতে পারেন। আমার এক কাজিনের এরকম প্রব্লেম ছিল। ওনার চিকিৎসা নিয়ে এখন নরমাল লাইফ লিড করছে। আবিদ পরেরদিনই রুহিকে নিয়ে এই হাসিব সাহেবের কাছে আসে। যদিও রুহি এখন কিছুটা সুস্থ।
.
.
.
এক্সকিউজ মি। বসবো?
কারো কথায় হাসিব সামনের দিকে তাকায়। তার আশেপাশের বয়সী একজন ভদ্রলোক একটা নয় কি দশবছরের বাচ্চামেয়ের হাত শক্ত করে ধরে আছে। চেহারায় হতাশার ছাপ স্পষ্ট। হাসিব অনুরোধের সুরে বললো ইয়েস প্লিজ সিট ডাউন। ভদ্রলোক সামনের চেয়ারে বসে পড়লেন। সাথের বাচ্চা মেয়েটা পাশের চেয়ারে না বসে ভদ্রলোকের কোলে বসলেন। বাচ্চাটার হাতের কয়েকজায়গায় ছোট ছোট ব্যান্ডেজ। চেহারা মলিন যেন ফুলদানিতে ভিজিয়ে রাখা বাসি ফুল। একধ্যানে টেবিলের উপরের রক্তরঙা ওয়েট পেপারটার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ভদ্রলোক বলতে শুরু করলেন আমি আবিদ। কাল আপনাকে টেলিফোন করেছিলাম।
আবিদ আগেরদিনই হাসিবকে ফোন করে সব জানিয়েছিলো রুহির ব্যাপারে। হাসিবের এইবার সব মনে পড়লো। হাসিব ঠোটের কোনে হাসি ধরে রেখে বললো আপনাকে তো চিনলাম। আর এই মামনিটা, নাম কি তোমার?
-জ্বী রুহি। রহি শান্তগলায় বললো।
কেমন আছো তুমি?
-জ্বী ভালো।
হাসিবও ঠান্ডা গলায় রুহির সাথে ভাব জমাতে চাইলো।
তা মামনি তোমার হাতে কি ব্যাথা পেয়েছো?
-জ্বী না কিছুই হয়নি।
মামনি এ ওয়েট পেপারটা কি তোমার পছন্দ হয়েছে?
-জ্বী এটা খুব সুন্দর। একদম টুকটুকে লাল।
এটা নেবে তুমি?
-না। এই প্রথম রুহি হাসিবের দিকে সরাসরি তাকায়। রুহির চোখদুটো টকটকে লাল। হাসিবের মনে হলো রুহির সাথে একটু একা কথা বলা দরকার। তিনি আবিদকে বললেন আপনি একটু আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট জামাল সাহেবকে ডেকে দিন। রুহি মামনি এখানে বসুক। চোখের ইশারায় বললেন বাইরে যেতে। আবিদ বের হয়ে যেতেই হাসিব রুহিকে প্রশ্ন করলো তুমি কোন ক্লাসে পড়ো মামনি?
-ক্লাস ফাইভ।
আচ্ছা মামনি আমি যে এত বকবক করি তুমি আমাকে কিছু বলবেনা। রুহি মাথা উপরে নিচে ঝাঁকায়। তাহলে বলো কিছু।
-আপনি নীলা আন্টির কথা ভেবেভেবে অযথা কষ্ট পাবেন না। তিনি মারা যাননি।
মানে কি বলছো তুমি। আবিদ শকড খেয়ে যায়।
-হ্যা এবং আমার ব্যাপারেও এক্সট্রা কৌতুহল দেখবেন না ডক্টর। আমাকে আমার মত করে থাকতে দিন। রুহি শক্ত মুখে জবাব দেয়।
আবিদ বড়োশড়ো একটা ধাক্কা খায়। এইটুকুন বাচ্চা মেয়ে তাকে কমান্ড করছে। তাছাড়া এই মেয়ে নীলাকে কিভাবে চেনে। নীলাতো আরো ছয়বছর আগে মারা গেছে। হাসিবের মাথার প্রতিটা নিউরন যেন এলোমেলো হয়ে যায়।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here