ডেভিলস গার্ল,২য় পর্ব
Tasmima Yeasmin
হাসিব কাঁপাকাঁপা হাতে আবিদকে টেক্সট করে জামালকে নিয়ে ভিতরে আসতে। দুই মিনিট পরেই আবিদ জামালকে নিয়ে এসে পড়ে। হাসিব নিজেকে কন্ট্রোল করে জামালকে বলে রুহিকে একটু রাইট সাইডের গার্ডেনটা দেখিয়ে আনোতো জামাল।
যাও মামনি আংকেলের সাথে ঘুরে এসো। আবিদ রুহির দিকে তাকিয়ে বলে। রুহি মিষ্টি করে হেসে আচ্ছা বলে জামালের হাত ধরে বাগান দেখতে যায়। আবিদ সেদিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে।
.
.
.
ডক্টর কি মনে হলো আপনার। আমার মেয়ে সুস্থ হবে তো? আমার ফুলের মতো মেয়েটা এরকম করছে কেন?
-রুহি আসলে অ্যাপটেমনোফিলিয়ায় আক্রান্ত। এটা একধরনের সাইকোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার। এধরনের রোগীর মাঝে নিজের শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে ফেলার জন্য প্রবল ইচ্ছা কাজ করে। অ্যাপটেমনেফিলিয়াকে অনেকসময় ‘বডি ইন্টেগ্রিটি ডিসঅর্ডার’ বা ‘অ্যামপিউটি আইডেন্টিটি ডিসঅর্ডার’ ও বলা হয়। এটি একটি ভয়ানক মানসিক সমস্যা, যার ফলে আক্রান্ত ব্যাক্তিটির সর্বদা নিজের সুস্থসবল অঙ্গগুলোকে কেটে ফেলে দিতে ইচ্ছা করে। বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, মস্তিষ্কের ডান প্যারাইটাল লোবে কোনো আঘাত বা সংক্রমণের সাথে এই রোগটির সম্পর্ক রয়েছে। বেশিরভাগ ডাক্তারই কোনো কারণ ছাড়া শুধুমাত্র কারো ইচ্ছার উপর ভিত্তি করে তার সুস্থ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে ফেলে দিতে রাজি হবেন না। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায়, রোগী নিজেই নিজের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কাটা শুরু করে, যা আরো ভয়ানক। এভাবে হাত-পা কেটে ফেলে দেবার পর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীদের মাঝে এ নিয়ে কোনো অনুতাপ দেখা যায় না। বরঞ্চ এ বিষয়ে তাদের বেশ খুশিই দেখা যায়। রুহির মাঝেও একই প্রব্লেম বিদ্যমান। আচ্ছা ছোটবেলায় কি রুহি কখনো মস্তিষ্কে কোন গুরুতর আঘাত পেয়েছিলো?
-না তো। আচ্ছা ডক্টর হাসিব এর কি কোন সলিউশন নেই? আমার মেয়েটা ভালো হবে তো?
অবশ্যই ভালো হবে। আপনি ঘাবড়াবেন না। রোগ শনাক্ত করা গেলে তার নিরাময়ের ব্যাবস্থাও আছে। আপাদত থেরাপির কোন দরকার নেই। আমি কিছু মেডিসিন সাজেস্ট করে দিচ্ছি। রুহির মেবি ইনসমোনিয়া আছে। ওকি রাতে একা ঘুমায়?
-আগে একা ঘুমাতো। এই অবস্থার পড়ে রিমি মানে আমার ওয়াইফ ওর সাথে ঘুমায়।
ওকে। আচ্ছা আপনি কি আমার স্ত্রী নীলাকে চিনতেন?
-না ডক্টর। আমিতো আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে আপনার ঠিকানা পেয়েছি। তার আগে আপনাকেই চিনতাম না। কেন বলুন তো?
না এমনি। ঠিকাছে। আপনি দিন পনেরো পরে আমার সাথে দেখা করবেন। রুহির অবস্থা অবশ্যই আমাকে জানাবেন।
-ঠিকাছে ডক্টর আজকে উঠি। ধন্যবাদ।
আদিব বের হয়ে রুহিকে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। এদিকে হাসিব গভির ভাবনায় ডুবে যায়।
.
.
.
হাসিব চেম্বার থেকে বাসায় যাচ্ছিল পথেই রুহির সাথে দেখা। রুহি রিকশা থেকে নেমে ধীর পায়ে হাটছিলো। হাসিব সাইড ক্রস করে রুহির সামনে গিয়ে দাড়ালো। আরে মামনি কেমন আছো?
-জ্বী আংকেল ভালো আপনি ভালো আছেন?
হ্যা ভালো তা একাএকা কোথায় যাচ্ছো?
-বাসায়। প্রাইভেট থেকে ফিরছিলাম।
ওহ আচ্ছা। চলো সামনের রেস্টুরেন্টে বসি। সময় হবে তোমার?
-ঠিকাছে চলুন।
হাসিব লক্ষ্য করছে রুহি অনেক শান্ত হয়ে গেছে। সেদিনের মতো ছটফটানি ভাবটা নেই বরং চেহারায় একটা কোমলতা। আগের থেকে অনেক বেশি স্বাভাবিক লাগছে। হাতের বেশ কিছু জায়গায় শুকিয়ে যাওয়া কাটা দাগ। কি খাবে মামনি? হাসিব চেয়ার টেনে বসতে বসতে জিজ্ঞেস করে।
-আইসক্রিম। ব্ল্যাক ফরেস্ট।
হাসিব আইসক্রিম আর কফি অর্ডার করে। রুহি এক চামচ আইসক্রিম মুখে দিয়ে বলে আমি জানি আপনি আমাকে কেন ডেকেছেন। নীলা আন্টির কথা কিভাবে জেনেছি সেটা জানতে তাইতো। হাসিব হ্যা সূচক মাথা নাড়ালো।
-সরি ডক্টর আংকেল। এটা আপনাকে বলা যাবে না।
নীলা যদি বেচেই থাকে তাহলে সে কোথায় আছে। তুমি নিশ্চয়ই জানো।
-ইয়েস। বাট আমার বলার রাইট নেই। আপনি নীলা আন্টির মৃত্যুর কথা ভেবে কষ্ট পান তাই আপনাকে সত্যিটা জানাতে এসেছিলাম। এর বেশি আপনি কিছু জানতে চাইবেন না। আর এসব নিয়ে ঘাটাঘাটি করলে আপনারই ক্ষতি। তাই বাবা মায়ের সামনে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করি যাতে বাবা আপনার সাথে যোগাযোগ বন্ধ রাখেন। তাই বলে কাটাকুটি বন্ধ করিনি। রুহি এবার হাসিবের সামনে কিছুটা ঝুঁকে আসে। দয়া করে নিজেকে ঝামেলার মধ্যে জড়াবেন না। যেভাবে আছেন সেভাবে থাকুন। রুহির মুখে অদ্ভুত এক শয়তানি হাসি। হাসিব খেয়াল করলো রুহির ঠোঁটটা একদম হঠাৎই কাঁচা হলুদ রং ধারন করেছে। ঠিক যেরকম ছিলো নীলার ঠোঁটের রং। হাসিব এবার সিওর এই মেয়ের সাথে নীলার কোন যোগসূত্র আছে। অবশ্যই আছে। এতক্ষনে রুহিও চোখের আড়াল হয়ে গেছে। মেয়েটাকে বোঝা ভারী কঠিন। কখন এর মনে কি চলছে বোঝা দায়। হাসিব মানসিক সমস্যার চিকিৎসা করতে শিখেছে কিন্তু কেউ যদি মানসিক রোগের অভিনয় করে তার ঔষধ তার কাছে নেই।
.
.
.
দুইদিন যাবৎ হাসিব ভাবছে কিভাবে রুহি নীলাকে চিনতে পারে। সম্ভাব্য সব যুক্তিও সে দাড় করিয়ে ফেলেছে। নীলা যখন মারা গেছে রুহির বয়স চার। চারবছরের একটা বাচ্চা মেয়ে নীলাকে চিনে থাকলেও এতবছর পরে তার স্বামীকে সে কিভাবে চিনবে। এদিকে রুহি বলছে নীলা মারা যায়নি এমনকি নীলা কোথাও আছে তাও সে জানে। কিন্তু হাসিব নিজ চোখে নীলার লাশ দেখেছে। নীলা যদি বেচেঁই থাকতো এত বছরেও কি তার সামনে আসতো না। আবার রুহির বিরুদ্ধেও কোন স্টেপ নেয়া যাবে না। তাহলে তাকে এতসব প্রশ্নের উত্তর কে দিবে। উত্তর দিতে পারে একমাত্র নীলার পরিবার।
.
.
.
হাসিব স্টেশনে বসে জামালের জন্য অপেক্ষা করছে। এই ছেলেটা কখনো লেট করেনা কিন্তু আজ এত লেট করছে কেন। হাসিব তিনচারবার ফোন দিয়ে দেখেছে সুইচড অফ। একটু পড়েই গম্ভীর মুখে জামাল এলো। দেরী হওয়ার কারন হিসেবে জানালো আসার পথে মোবাইল মানিব্যাগ ছিনতাই হয়ে গেছে। তাই বাসায় গিয়ে আবার আসতে হয়েছে।
ঠিকাছে আমি টিকিট কেটে রেখেছি। দ্রুত আসো। হাসিব জামালকে তাড়া দেয়। । ওরা বাসে উঠে নিজেদের সীটে বসে। উদ্দেশ্য মধুপুর। যেখানে জমে আছে হাসিবের নীলার সাথে কাটানো পাঁচ বছরের স্মৃতি।
চলবে…