ডেভিলস গার্ল,৪র্থ পর্ব

0
2999

ডেভিলস গার্ল,৪র্থ পর্ব
Tasmima Yeasmin

হাসিব খেয়াল করে একটা লোক ওকে দেখে দৌড় দিচ্ছে। হাসিবও লোকটার পিছু পিছু দৌড় দিলো এবং তাকে থামতে বললো। হাসিবের কন্ঠস্বর শুনে লোকটা দাড়ালো বটে কিন্তু যথেষ্ট দূরত্ব নিয়ে। হাসিবকে জিজ্ঞেস করলো আপনি কি ভুত? হাসিব তো এতকিছুর মধ্যেও হেসেই আকুল। ওরে ব্যাটা আমি কেন ভূত হতে যাবো। হাসিব হেসে হেসেই উত্তর দেয়।
তাহলে আমি স্পষ্ট দেখলাম যে আপনি ঐ ভূতের বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন। লোকটা আবারো বলে। তার চোখেমুখে শঙ্কা আর ভয়ের ছাপ স্পষ্ট।
হাসিব বললো আরে আমি তো এসেছিলাম এবাড়িতে একজনার খোঁজে। মাত্রই ঢুকলাম। দেখি কেউ নেই। হাসিব সন্তর্পনে রাতের কাহিনী এড়িয়ে গেল। এলোক তো এম্নিই ভয় পেয়েছে। রাতের কাহিনী শুনলে কি করে আল্লাহ জানে। হাসিব মনে মনে ভাবলো তারপর জিজ্ঞেস করলো এ বাড়িতে যারা থাকতো তারা কই গেছে আপনি জানেন? একথা শুনে লোকটা যেন ভয়ে কুকড়ে গেল। ও বাড়িতে তো সাক্ষাত শয়তান থাকতো। ওরা কেউ গেছে আমি জানিনা। আপনি এসব নিয়ে ঘাটাঘাটি করছেন কেন। যেখান থেকে এসেছেন সেখানে চলে যান। নাহলে আপনিও মারা পড়বেন। আমার কাজ আছে আমি যাই। লোকটা বলেই হনহন করে হাঁটা দিলো। হাসিব পিছন থেকে লোকটাকে বার দুই ডাক দিলো কিন্তু তিনি ফিরেই তাকালেন না। হাসিব আরো কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করলো কিন্তু প্রত্যেকেই কোন না কোন অযুহাত দেখিয়ে ঠিকঠাক উত্তর দিলোনা। কিন্তু হাসিবকে তো নীলার বাবা মাকে খুঁজে বের করতেই হবে। তাছাড়া হাসিব আন্দাজ করছে রুহির সাথেও নিশ্চয়ই খারাপ কিছু ঘটছে।
.
.
.
হাসিব চায়ের দোকানে বসে অপেক্ষা করছে ভীড় কমার। দোকানিও লক্ষ করছে হাসিব তাকে কিছু একটা বলতে চায় কিন্তু দোকান একেবারে ফাঁকা হচ্ছে না। চারজন লোক এক বিশাল আলোচনা জুড়ে দিয়েছে থামার কোন নামগন্ধ নেই। দুনিয়ার যত আড্ডা আর যত কাহিনী সব এসে আলোচনা হয় এই চায়ের দোকানে। হাসিব ভেবে রেখেছে অপরিচিত কেউ তাকে নীলাদের খোঁজ দেবেনা বরং চেনা কাউকে জিজ্ঞেস করা দরকার। কিন্তু চেনা কাউকে খুঁজেই পেলনা হাসিব। মাত্র কয়েক বছরের ব্যাবধানে গ্রামটা যেন অপরিচিত লোকে ভরে গেছে কিংবা পরিচিত মানুষজন হারিয়ে গিয়েছে। শেষমেশ হাসিব এই চায়ের দোকানীকে খুঁজে পেল এবং দোকানীও তাকে চিনে ফেললো। তিনি দেখেই বললো, তুমি ভালোআছো বাজান। ম্যালা দিন পর গ্রামে আইলা। আমিতো ভাবছিলাম আর কোনদিন আইবা না।”
দুপুর শেষ হয়ে প্রায় বিকেল গড়িয়ে এলো। হাসিব এবার দোকান ফাঁকা পেয়ে নীলাদের কথা জিজ্ঞেস করলো। নীলার কথা শুনেই দোকানদারের হাসি মুখ মলিন হয়ে গেল। কি আর কমু বাজান তুমি তো সবই জানতা। নীলার বাপে একটা শয়তান আছিলো। কালো জাদু করতো আর শয়তানের উপাসনা করতো। শেষমেশ হে এতডাই খারাপ হইছে যে গ্রামের বাচ্চাগুলানরেও ধইরা নিয়া পাঠাবলির মত বলি দিত শয়তানের উদ্দেশ্যে। খালি তাই না হের নিজের ছোটমাইয়া শিলুরেও তো বলি দিছে রাক্ষসটা। মানুষজন যহন হের এই কথা জানতে পারছে তহন নীলার বাপ এজায়গা ছাইড়া পলাইয়া গেছে।
কোথায় গেছে আপনি জানেন? হাসিব জানতে চাইলো।
হ বাজান জানি। নীলার বাপরে জঙ্গলের মইধ্যে দেইখা একদিন পিছেপিছে গেছিলাম। ম্যালা দূর বাবা।
আচ্ছা নীলার বাবাকে কোনদিক দিয়ে যেতে দেখেছেন বলেন।
তুমি যাইবা বাবা? আমি বাঁধা দিমুনা তয় সাবধান।
.
.
.
হাসিব রাস্তা দেখে নিয়ে রহনা হয়। ততক্ষনে সূর্যের আলো প্রায় পড়ে গিয়েছে। গভীর জঙ্গলের দুর্গম পথ। বড়বড় গাছের মধ্যে দিয়ে হাসিব হেটে চলছে। আবছা অন্ধকার আর ঝিঝি পোকার শব্দ। মোবাইলটা বের করে দেখে চার্য খুব অল্প আর নেটওয়ার্ক ও নেই। হাসিব বেশ কিছুদূর যাওয়ার পরে একটা গাছের নিচে বসে পড়ে। পকেট থেকে ছোট টর্চটা বের করে একবার জ্বালিয়ে আবার বন্ধ করে দেয়। এতদ্রুত চার্য শেষ করে ফেলা যাবেনা। হাসিবের ভীষন ক্লান্ত লাগছে। ও গাছের সাথে হেলান দিয়েই ঘুমিয়ে পড়ে। আপনাকে এখানে আসতে নিষেধ করেছিলাম না। তারপরো আপনি কেন এসেছেন? হাসিবের সামনে দাড়িয়ে রুহি কথাগুলো বলছে। রুহির চোখগুলো অত্যধিক লাল যেন রাগ ফুলকি হয়ে ঠিকরে বের হতে চাইছে। রুহি হাওয়ায় ভাসছে। লাল রঙা একটা জামা পড়নে। লম্বা চুলগুলো হাওয়ায় উড়ছে। হাসিব এতক্ষন পরে খেয়াল করলো ও একপায়ে দাড়িয়ে আছে একটা উচুঁ পাহাড়ের চূড়ায়। জায়গাটা এত সংকীর্ন যে আরেকটা পা রাখার জায়গা নেই। ও নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে সমুদ্র। এখান থেকে পড়ে গেলে মৃত্যু নিশ্চিত।
রুহি আবারো বলে বলুন আপনি ফিরে যাবেন। তাহলে আপনার কোন ক্ষতি হবেনা।
না আমি সামনেই এগিয়ে যাবো। হাসিব দৃঢ় কন্ঠে জবাব দিলো।
এত কিউরিসিটি ভালো না। রুহি হাসিবকে একটা ধাক্কা দিলো। এইসময়েই তার ঘুমটা ভেঙে গেলো। ও একটা জঙ্গলের মাঝে গাছের নিচে শুয়ে আছে। চারদিকে প্রচন্ড অন্ধকার নিজের হাতটাও পর্যন্ত দেখা যায় না। নিশ্চয়ই এখন গভীর রাত। এত রাতে এই গহীন জঙ্গলে হাসিব একা ভাবতেই ওর ভয় লাগছে। সাইকোলজির স্টুডেন্ট হওয়াতে ও অনেক জায়গায় ঘুরেছে কিন্তু এত রহস্যময় কোন ঘটনাই ঘটেনি। হাসিব প্যারানরমল কিছুতে কখোনই পুরোপুরি বিশ্বাস করে না। স্বপ্নটা তাহলে কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছিলো ও স্পষ্টভাবে বুঝতে পারে। কিন্তু ও এই রহস্য বের করেই ছাড়বে।
.
.
.
সকালবেলা রুহিকে ডাকতে এসে রিমি দেখে রুহি বিছানায় নেই। ওয়াশরুম, অন্যান্য রুম ও ছাদ চেক করেও রুহিকে পায়না রিমি। আবিদ তখনো ঘুমিয়ে আছে। রিমি আবিদকে ধাক্কা দিয়ে ঘুম থেকে উঠায়। এই রুহিকে কোথাও দেখছিনা। কোথায় গেল মেয়েটা?
আবিদ চোখ কচলাতে কচলাতে বলে আছে কোথাও ছাদেটাদে হাঁটতে গেছে বোধহয়।
আরে না আমি সবজায়গায় খুজেঁছি। কোথায় গেল আমার মেয়ে। রিমি কান্না শুরু করে দেয়।
আবিদ এবার উঠে বসে। রুহি না বলে কোথাও যায়না এমনকি বাসার ছাদেও না। তাহলে ও কই গেলো। আবিদ কাছাকাছি কয়েকজন আত্মীয়কে কল করে জানতে পারে রুহি যায়নি তাদের বাসায়। আবিদ পুলিশে ডায়েরী করে আসে। কিন্তু সম্ভাব্য কোন যায়গায় রুহিকে পাওয়া যায় না।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here